আরিফ মেহমুদ ॥ কুষ্টিয়ার ইবি থানায় যৌতুকের দাবীতে স্ত্রীকে শ্বাসরোধ ও পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় আদালত যৌতুকলোভী পাষান্ড স্বামীকে ফাঁসীর রায় প্রদান করেছেন। গতকাল বুধবার বিকেলে এক জনাকীর্ণ আদালতে কুষ্টিয়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যাল আদালতের বিজ্ঞ বিচারক আফজাল হোসেন এ রায় প্রদান করেন। ফাঁসীর আসামীর নাম সাজেদুর রহমান সাবু। সে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ইবি থানার মনোহরদিয়া ইউনিয়নের ছয়ঘোরিয়া গ্রামের সোহরাব হোসেন পান্নার ছেলে। রায় ঘোষনার সময় আসামী আদালতে উপস্থিত ছিল। মামলা এজাহার সুত্রে জানা যায়, ২০১১ সালের প্রথম দিকে একই গ্রামের রেজাউল করিমের মেয়ে রূবাইয়া খাতুন রেশমার সাথে সাজেদুর রহমান সাবু প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। বিষয়টি উভয় পক্ষের পারিবারিকভাবে জানা জানি হলে কেউই তাদের সম্পর্ক মেনে নিতে রাজি ছিল না। এক পর্যায়ে সাবু নানান অজুহাত দেখিয়ে রেশমাকে তার সাথে বিয়ে করাতে রাজি করে। একদিন সবার অজান্তে সাজেদুর রহমান সাবু ভালবেসে বিয়ে করে রূবাইয়া খাতুন রেশমাকে। মেয়ের সুখের কথা ভেবে তাদের বিয়ে মেনে নেয় রেশমার বাবা রেজাউল করিম। কথায় বলে অভাব দুয়ারে ঢুকলে ভালবাসা জানালার ফাক দিয়ে পালায়। কিন্তু সাবুর ক্ষেত্রে হয়েছে ভিন্ন। কয়লা ধুলে যায়না ময়লা। সাবু-রেশমার দুজনের সুখের সংসারে মাত্র ৬ মাসের মাথায় নেমে আসে যৌতুকের অভিশাপ। ভালবাসার বিয়ে যৌতুকের অবস্থান শুন্য হলেও পারিবারিক চাপে সাবু স্ত্রীর কাছে মোটা অংকের টাকা যৌতুক দাবী করে। রেশমা বাবার অবস্থা ও নিজেদের পছন্দে বিয়ে করার কথা মাথায় রেখে যৌতুকের টাকা দিয়ে অপারগতা প্রকাশ করে। যৌতুকলোভী সাবু যৌতুকের টাকার জন্য প্রায়ই রেশমার উপর শারীরিক নির্যাতন চালাতো। এ নিয়ে উভয় পরিবারের মধ্যে অশান্তি দেখা দিলে রেশমা মাঝে মধ্যে রাগ করে বাবার বাড়ী চলে যেত। ঘটনার দিন গত ০৫-০৭-২০১১ ইং তারিখে স্বামী আবারো যৌতুকের টাকা চেয়ে রেশমার উপর শারীরিক নির্যাতন চালাতে থাকে। এক পর্যায়ে সাবু তার বাবা মায়ের সহযোগিতায় রেশমাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। বিষয়টি ধামা চাপা দিতে মৃত রেশমার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দিয়ে রেশমা আত্মহত্যা করেছে বলে আত্মচিৎকার দিতে থাকে। সাবু ও তার পরিবারের চিৎকারে প্রতিবেশিরা তাদের বাড়িতে ছুটে এসে রেশমা আগুনে জ্বলছে দেখতে পায়। এখবর দ্রুত রেশমার বাবা রেজাউল করিমের পরিবারে পৌছালে বাবা রেজাউল করিম ছুটে আসে সাবুদের বাড়ীতে। সাবু রেশমার উপর নির্যাতন চালিয়ে তাকে হত্যা করে ঘটনাটি সাজানো নাটক সাজিয়েছে জানতে পারে।এঘটনায় ওই দিনই রূবাইয়া খাতুন রেশমার বাবা রেজাউল করিম বাদী হয়ে ইবি থানায় রেশমাকে হত্যা করা হয়েছে মর্মে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়। যা পরে নারী ও শিশু নির্যাতন ২৯৫/১১ নং মামলায় নথিভূক্ত হয়ে বিচার কাজ শুরু হয়। রাষ্ট্র পক্ষের একাধিক স্বাক্ষীর স্বাক্ষ্য গ্রহন শেষে আসামী সাজেদুর রহমান সাবুর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমানতি হওয়ায় আদালত তাকে ফাঁসীতে ঝুলিয়ে মুত্যুদণ্ড কার্যকর করার রায় প্রদান করেন। রাষ্ট্র পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন পিপি এ্যাড.আকরাম হোসেন দুলাল ও আসামী পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন সিনিয়র আইনজীবী এ্যাড.মিয়া মোহাম্মদ রেজাউল হক।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন