সোমবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১২

জোড়াতালি দিয়ে চলছে কুষ্টিয়ার ডাক বিভাগ,আধুনিকায়নের সুফল পাচ্ছে না সাধারন মানুষ

আরিফ মেহমুদ ॥ কুষ্টিয়া জেলায় ডাক বিভাগের সেবা চলছে জোড়াতালি দিয়ে। অচল যাবনাহন, লোকবল ও বাজেট সংকটের কারনে কাঙ্খিত সেবা দিতে পারছে না কুষ্টিয়ার ডাক বিভাগ। অনেক ক্ষেত্রে সুবিধা বাড়লেও সাধারন সেবা গ্রহীতাদের অসুবিধায় পড়তে হয় বেশি। যার কারনে আধুনিকায়নের সুফল পাচ্ছে না লোকজন। গ্রামের ব্রাঞ্চ পোষ্ট অফিস গুলো চলছে কাচারি বাড়ি, মুদি দোকান সহ বাসা বাড়ীর বারান্দায়। কোন কোন ক্ষেত্রে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার ছোট্ট কামরায়। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, জেলা ও উপজেলা পোষ্ট অফিস গুলোতে কিছুটা কাজকর্ম হলেও ইউনিয়ন পর্যায়ের ব্রাঞ্চ পোষ্ট অফিস গুলো খুঁজে পাওয়া মুসিকল। চুরি হয়ে গেছে অধিকাংশ পোষ্ট বক্স। চাউলের দোকান, মুদিখানাসহ কোথাও কোথাও কাচারি বাড়িতে ব্রাঞ্চ পোষ্ট অফিসের কাজ চলছে। বাইরে থেকে মাঝে মধ্যে চিঠি আসলেও পোষ্ট করলে তা আর পৌঁছায় না। কুষ্টিয়া শহরের ৬ রাস্তার মোড়ের পোষ্ট অফিসে এক সময় সরগরম থাকলেও এখন প্রতি মাসেও কয়েকটি চিঠি পোষ্ট হয় বলে জানা গেছে। এ পোষ্ট অফিসটি এক রকম বন্ধ হওয়ার পথে। কুষ্টিয়া প্রধান ডাকঘরের এক কর্মকর্তা জানান, কিছু কিছু সেবা বাড়লেও লোকবলের অভাবে সাধারান মানুষের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি বলেন কুষ্টিয়া পোষ্টাল ডিভিশনে ৪টি জেলা রয়েছে। পাকিস্থান আমলের পরিবহন দিয়ে কাজ চালাতে হয়। বেশির ভাগ পরিবহন অকোজ। রাস্তার মাঝেও অনেক সময় নষ্ট হয়ে পড়ে থাকে। কুষ্টিয়া পোষ্টালে সব মিলিয়ে সাড়ে ৩০০ বেশি পোষ্ট অফিস রয়েছে সব অফিসে লোক সংকট রয়েছে। খোকসা উপজেলার ৯৯টি গ্রামের মানুষের সেবা নিশ্চিত করতে কাগজে কলমে ২টি পোষ্ট অফিস ও ১২ টি ব্র্ঞ্চা পোষ্ট অফিস চালু থাকলেও কয়েকটি ব্র্ঞ্চা অফিসের অস্তিত্ব নেই। উপজেলা সদর থেকে তিন কিলোমিটার দুরের গ্রাম শিমুলিয়াতে একটি চিঠি বিলি হতে সময় লাগে এক মাস। ২/১ টি ব্র্ঞ্চা পোষ্ট অফিস ছাড়া বেশীর ভাগ অফিসেরই নিজস্ব ভবন নেই। পোষ্ট মাষ্টার অফিস করে নিজের বাড়ির বৈঠক খানা অথবা নিকটবর্তী কোন মুদি দোকানে। উপজেলা সদর থেকে ৫ কিলোমিটার দুরে একতারপুর বাজার। প্রায় ৩০ বছর আগে এ বাজারে ব্র্ঞ্চা পোষ্ট অফিস খোলা হয়। প্রথম দিকে পোষ্ট মাষ্টার কিংকর বিশ্বাস সরকারী জমিতে খড়ের ঘরে তুলে অফিস করতো। কিন্তু ঘর ও জমি বেদখলে চলে যাওয়ার পর থেকে তিনি অফিস করেছেন বাঞ্চা রামের মুদি দোকানে। ডাক পরিদর্শক (প্রশাসন) মতিউর রহমান জানান, লোকবল সংকট প্রকট। গ্রামীন পোষ্ট অফিস উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ব্র্ঞ্চা পোষ্ট অফিস গুলো ঠিক করার ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে । তবে জমি পাওয়া যাচ্ছে না। তবে এতকিছুর পরও পোষ্ট অফিসের কয়েকটি সেবা দারুণ সাড়া ফেলেছে ব্যবসায়ী ও সাধারন লোকজেনর মাঝে। বিশেষ করে পোষ্ট অফিসের মোবাইল মানি অর্ডার, পোষ্টাল ক্যাশকার্ড সিস্টেম। এছাড়া সঞ্চয়পত্র, পেনশন সঞ্চয়পত্র, পরিবার সঞ্চয়পত্র, ৩ মাস অন্তর মুনাফা বৃদ্ধি সঞ্চয় পত্র কার্যক্রম পূর্বের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে পুরানো যানবাহন এখন গলার কাটা। পোষ্ট অফিসারদের গাড়ী গুলোও সেকেলে। একজন কর্মকর্তা আক্ষেপ করে বলেন, ডেপুটি পোষ্ট মাষ্টারের ব্যবহৃত জিপটি পাকিস্থান আমলের লক্কড়-ঝক্কড়। যা আধুনিকায়কে কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিক বার লেখা হয়েছে। ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী না থাকায় সেবা দিতে বিপাকে পড়ছে  ডাক বিভাগ। তারপরেও সেবা দিতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। পোষ্ট অফিসের কার্যক্রম বৃদ্ধি ও ডিজিটাল হলেও অফিসের আসবাবপত্র সে আমলেরই রয়ে গেছে।
রানার ইয়ার আলী জানান, পোষ্ট অফিসে পর্যাপ্ত রানার না থাকায় তাকে একাই ৩টি কখনও ৪টি লাইনের কাজ করতে হচ্ছে। পোষ্টম্যান দেলোয়ার হোসেন জানান,পূর্বের তুলনায় কাজের চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। সে তুলনায় কর্মচারী সংকট থাকায় গ্রাহকদের যথাসময়ে সঠিক ভাবে সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তারপরেও সেবা দিতে কোনরকম কারপূর্ণ করা হচ্ছে না। এক কথায় ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী নেই বললেই চলে। ফলে অল্প সময়ের কাজ বেশী সময় লেগে যাচ্ছে। ভেড়ামারা উপজেলা পোষ্ট মাষ্টার মনিরুজ্জামান জানান, লোকবল সংকট থাকায় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।  দ্রুত লোকবল নিয়োগ না দিলে ডাক বিভাগ থেকে গ্রাহকদের সেবা দিতে বিড়ম্বনার মধ্যে পড়তে হবে বলে জানান। কুষ্টিয়া পোষ্টাল ডিভিশনের ডেপুটি পোষ্ট মাষ্টার জেনারেল মো: আমান উল্যাহ মজুমদার জানান, যানবাহন, লোকবল ও বাজেট না বাড়ালে পোষ্ট অফিস থেকে মানুষ পুরো সেবা পাবে না। তারপরও জোড়াতালি দিয়ে আগের তুলনায় বেশি কাজ করা হচ্ছে। পোষ্ট অফিসের অনেক সেবার কথা সাধারন মানুষ জানে না। কাজও বেড়েছে। নতুন কিছু সেবা চালু করায় আবারও পোষ্ট মুখী হচ্ছে লোকজন।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন