আরিফ মেহমুদ ॥ কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের সরোয়ার কয়েক মাস আগে নতুন মোটর সাইকেল কিনে গতকাল কুষ্টিয়া শহরে ঢোকার সময় পুলিশ হঠাৎই বাধ সাধে তার গাড়ীর গতিতে। থামুন, গাড়ীর কাগজপত্র দেখান, ড্রাইভিং লাইসেন্স, আর ইন্স্যুরেন্স দেখান। এমন অনেক প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে তাকে অনেকটা বিব্রতকর অবস্থায়। কিছুই নেই তার, আগামীতে কাগজপত্র করবে শর্তে কোন রকম কাছে থাকা শিক্ষা নবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখিয়ে এ যাত্রায় পার। এমনই চিত্র গত কয়েক দিনের পুলিশী অভিযানে রেজিষ্ট্রেশন বিহীন মটর সাইকেল চালকদের। গ্রাম কিংবা শহরের মধ্যবিত্ত ও উচ্চমধ্যবিত্ত পরিবারের দ্রুতযান খ্যাত মোটর সাইকেল কেউ শখ করে আবার কেউ কেউ ব্যবসায়ী ও অতি প্রয়োজনে নগদ মুল্যে কিনেও শো’রুমের কাগজপত্র বিলম্বে পাওয়ায় পড়ছেন বিপাকে। নগদ মূল্যে গাড়ী কিনেও শো’রুমের কাগজপত্র না পেয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হচ্ছে গ্রাহকদের। পুলিশী তৎপরতায় এ যেন গলার কাটা, সমস্যার অন্ত নেই, পাহাড়সম। এরপর তো রয়েছে কিস্তিতে মোটর সাইকেল কেনার আরেক তিক্ত অভিজ্ঞতা। কিস্তি, নগদ মূল্যে আর কিছু বাকীতে বেচা-বিক্রি সব মিলিয়ে কুষ্টিয়া শহরের ও শহরতলীর ৮টি মোটর সাইকেল শো’রুমের ব্যবসা জমজমাট। বিভিন্ন শো’রুমের বিক্রয় তালিকার পরিসংখ্যানে জানা যায়, প্রতিদিন ৭/৮টি মোটর সাইকেল বেচা-বিক্রি হচ্ছে। একারনে কুষ্টিয়ার অর্থনৈতিক অবস্থার কিছুটা হলেও পরিবর্তন এসেছে। পরিবর্তন এসেছে মোটর সাইকেল রেজিষ্ট্রেশন প্রদান পদ্ধতিতেও। আগে যেখানে শো’রুমের কাগজপত্র সহ প্রয়োজনীয় তথ্যাদি দিয়ে আবেদন করে ১-৩ মাসেও বিআরটিএ কুষ্টিয়া অঞ্চল অফিস থেকে মোটর সাইকেল রেজিষ্ট্রেশন নম্বর পাওয়া সহজ সাধ্য ছিল না। বর্তমানে সহকারী পরিচালক শেখ আশরাকুর রহমান বিআরটিএ কুষ্টিয়া অঞ্চল অফিসে যোগদানের পর থেকে শো’রুমের কাগজপত্র সহ প্রয়োজনীয় তথ্যাদি দিয়ে আবেদন করলেই ৪৮ ঘন্টার মধ্যেই রেজিষ্ট্রেশন নম্বর পাওয়া যাচ্ছে। বিলম্বে শো’রুমের কাগজপত্র পাওয়ায় গ্রাহকরা এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত ও বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে। কুষ্টিয়া জিলা স্কুলের সামনে নিউ কুষ্টিয়া মোটরস’র চাইনা ডাউন, জনসন, টিভিএস অটো’র টিভিএস আইটেমের সব গাড়ী, ডিসকভারী, ডিসকভারী পালসার, হিরো হোন্ডা, হনসন, জনসন ও ইয়ালিন, রয়েল অটো, ভেনাস ও নিউ মোটর সাইকেল মাঠ শো’রুমের ডায়াং, জনসন, টিভিএস, পাঁচ রাস্তার মোড় আজমেরী মটরস ও স্বস্তি অটো’র বাজাজ, ডিসকভারী, পালসার, ও জনসন ব্যান্ডের আকর্ষণীয় মডেলের ৫০ সিসি থেকে শুরু করে ২৫০ সিসি পর্যন্ত মটর সাইকেল পাওয়া যাচ্ছে। এগুলোর মূল্য ৬৫ হাজার থেকে ২ লাখ ২৫ হাজার পর্যন্ত। এসব শো’রুমের রকমারী ও আকষর্ণীয় ডিজাইনের নতুন নতুন মডেলের মটর সাইকেল হরহামাসায় ক্রেতা সাধারণকে কাছে টানছেই প্রতিনিয়ত। এদের মধ্যে বেশি বিক্রি হচ্ছে হিরো হোন্ডা ও বাজাজের বিভিন্ন মডেলের মোটর সাইকেলগুলো। আবার অনেক সৌখিন ক্রেতাদের নতুন মডেলের মোটর সাইকেলের প্রতি ঝোক বেশি। তাদের গাড়ী বদলানো যেন নেশায় পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে এক শ্রেণীর ঠকবাজ ক্রেতাও রয়েছে। তারা বিভিন্ন শো’রুম থেকে অল্প টাকায় কিস্তিতে গাড়ী কিনে টাকা পরিশোধে বিপাকে ফেলে বিক্রয় প্রতিনিধিদের। এদের সংখ্যা একেবারে কম নয়। নগদ মূল্যে মোটর সাইকেল কিনে ৫/৬ মাস পর্যন্ত গাড়ীর কাগজপত্র না পাওয়ায় বিড়ম্বনার শিকার হওয়া কয়েকজন অন টেষ্ট লেখা অথবা অন্যকিছু সংকেত লেখা মোটর সাইকেল আরোহীর সাথে কথা হলে মোটর সাইকেলের উপজেলা খ্যাত দৌলতপুরের ডাংমড়কা বাজারের শাজাহান জানান, নগদ টাকা পরিশোধ করেও শো’রুম থেকে নানান অজুহাতে গাড়ীর কাগজ আজ দিচ্ছি কাল দিচ্ছি করে প্রায় ৬/৭ মাস লেগেছে কাগজপত্র দিতে। অভিযোগ আছে শো’রুমের নিজেদের লোক দিয়ে ক্রেতাদের গাড়ীর রেজিষ্ট্রেশন করে দেয়ার জন্য ইচ্ছে করেই কাগজপত্র দিতে এই বিলম্ব করে। না এ ধরনের অভিযোগ সত্যি না। বিভিন্ন বড় বড় কোম্পানী’র এজেন্ট রানার, এটলাস, টিভিএস ও উত্তরা মটরস’র মত এজেন্সী থেকে বিক্রয় শো’রুম গুলোতে মশুক-১১ ফরম ও গেট পাশ দিয়ে মোটর সাইকেল পাঠিয়ে দেয়। বিক্রির অনেক পরে পাঠায় চালানের কপিসহ মূল কাজগপত্র ফলে দু’এক মাস গাড়ীর কাগজপত্র ডেলিভারী দিতে বিলম্ব হয়। আমরা ইচ্ছে করে বিলম্ব করি না,এমন তথ্যই জানালো বেশ কয়েকটি মোটর সাইকেল শো’রুমের সত্বাধিকারীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শো’রুমের বিক্রয় প্রতিনিধিরা জানান, এক শ্রেণীর ঠকবাজ ক্রেতা বিভিন্ন শো’রুম থেকে অল্প টাকায় কিস্তিতে গাড়ী কিনে টাকা পরিশোধে বিপাকে ফেলে আমাদের। এজন্য একটি চাবী রেখে দেয়া হয়। কিস্তি পরিশোধ হলে ওই চাবী ও গাড়ীর মূল কাগজপত্র দেয়া হয় তাদের। যদি কিস্তি ফেল করে সে ক্ষেত্রে কিভাবে টাকা পরিশোধ হয় জানতে চাইলে বলে, এক কিস্তি ফেল করলে ক্রেতাকে সতর্ক করে দিয়ে ২য় কিস্তি ফেল করলে মোটর সাইকেল শো’রুমে এনে রাখা হয় এবং ওই গাড়ী বিক্রয় না হওয়া পর্যন্ত তাকে জমাকৃত টাকা ফেরত দেয়া হয় না।
মোটর সাইকেল রেজিষ্ট্রেশন করার নিয়ম
উত্তরমুছুন