বৃহস্পতিবার, ১২ জুলাই, ২০১২

সরকারী নির্দেশ উপেক্ষিত,হুমকির মুখে মাতৃস্বাস্থ্য কর্মস্থলে থাকে না উপজেলার পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কর্মকর্তারা

আরিফ মেহমুদ ॥ দীর্ঘদিন ধরে সরকারী নির্দেশ উপেক্ষা করে কুষ্টিয়ার পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপজেলা কর্মকর্তারা কর্মস্থলের বাইরে অবস্থান করছেন। বিভাগটির উপজেলা পর্যায়ের মোট ১২জন কর্মকর্তার মধ্যে বর্তমানে কর্মস্থলে অবস্থান করেন মাত্র ৪ কর্মকর্তা। বাকি ৮জন কর্মকর্তাই থাকেন কর্মস্থলের বাইরে। বছরের পর বছর ধরে উপজেলা কর্মকর্তারা কর্মস্থলের বাইরে অবস্থান করলেও জেনেশুনেও কোন ব্যবস্থা নেন না কুষ্টিয়ার পরিবার পরিকল্পনা বিভোগের সংশিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তা। দায়িত্বশীল পদে থাকা উপজেলার মাঠ পর্যায়ে এসব কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক কর্মস্থলে অবস্থান না করায় হুমকির মুখে মাতৃস্বাস্থ্য। ঝিমিয়ে পড়ছে জেলার পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম। অকার্যকর হয়ে উঠছে অধীক জন্ম নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশ অনুসারে উপজেলা কর্মকর্তাদের কর্মস্থলে অবস্থান করা বাধ্যতামূলক হলেও এ নির্দেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ইচ্ছামাফিক চলছেন কুষ্টিয়া জেলার পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে কর্মরত উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তারা। কুষ্টিয়া জেলার ৬ উপজেলায় পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে উপজেলা পর্যায়ে বর্তমানে মোট ১১জন কর্মকর্তা রয়েছেন। এর মধ্যে কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় কর্মরত মেডিকেল অফিসার (এমসিএইচএফপি) ডা. ফেরদৌসি সুলতানা, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের (মাতৃসদন) মেডিকেল অফিসার (ক্লিনিক) ডা. আযম খান এবং পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রেজাউল করিম ছাড়া অন্য উপজেলা কর্মকর্তারা কর্মস্থলে অবস্থান করেন না। কর্মকর্তাদের বেশিরভাগই থাকেন জেলা শহরে। দু’একজন অবস্থান করেন পাশ্ববর্তী উপজেলায়। সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, খোকসা উপজেলায় মেডিকেল অফিসার নাই। ভারপ্রাপ্ত মেডিকেল অফিসারের দায়িত্বে রয়েছেন উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোজাম্মেল করিম। তিনি ২০০৬ সালের অক্টোবর থেকে প্রায় ছয় বছর যাবত জেলার খোকসায় কর্মরত। তবে তিনি তার কর্মস্থলে অবস্থান করেন না। তার বাসা কুষ্টিয়া শহরের ঈদগাহপাড়া সংলগ্ন নারিকেল তলায়। খোকসাতে যোগদানের পর থেকেই তিনি কুষ্টিয়া শহরে বাসা নিয়ে আছেন। কুমারখালী উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সাজেদুল হক ২০০৯ সালের জুলাই মাসে যোগ দেন কুমারখালীতে। তিনি প্রায় ৩ বছর ভারপ্রাপ্ত মেডিকেল অফিসারের দায়িত্বও পালন করেছেন। পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সাজেদুল হক অবস্থান করেন কুষ্টিয়া শহরের থানাপাড়া এলাকায় নিজের বাড়িতে। বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত মেডিকেল অফিসার হিসেবে ডাঃ মাসুদ-উজ-জামান দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি মেডিকেল অফিসার (এমসিএইচএফপি) হিসেবে ২০০৮ সালের জুলাইতে যোগ দেন মিরপুর উপজেলায়। তখন থেকেই তিনি বাস করেন কুষ্টিয়া শহরের থানাপাড়ার আদদ্বীন হাসপাতাল এলাকায়। জানা গেছে, তিনি সপ্তাহে মাত্র দু’দিন বন্ধ্যাকরণ অপারেশন ক্যাম্প পরিচালনার জন্য মিরপুর ও কুমারখালী যান। তার পূর্বের কর্মস্থল ভেড়ামারায় নিয়মিত প্রাইভেট প্রাকটিস করেন তিনি। ভেড়ামারা থানার সামনে একটি ফার্মেসীতে বসেন তিনি। কামরুল ইসলাম মিরপুর উপজেলায় পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন ২০০৯ সালের মাঝা মাঝিতে। তিনি থাকেন কুষ্টিয়া শহরের কোর্টপাড়া এলাকায়। তবে ঝামেলা এড়াতে তিনি মিরপুর উপজেলা ডরমিটরীতে সিট বরাদ্দ নিয়ে রেখেছেন। ডাঃ নওয়াব আলী ভেড়ামারা উপজেলা মেডিকেল অফিসার (এমসিএইচএফপি) এবং ভারপ্রাপ্ত উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। তিনি মাঝে মধ্যে নিজের স্টেশনে অবস্থান করেন। তবে নিয়মিত প্রাইভেট প্রাকটিস করেন কুষ্টিয়া শহরের হাসপাতাল রোডের একটি ক্লিনিকে। তিনি থাকেন কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল কোয়ার্টারে। ডাঃ আবু সাঈদ মেডিকেল অফিসার (এমসিএইচএফপি) হিসেবে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে যোগ দেন ২০০৯ সালের মে মাসে। এরপর থেকেই তিনি বাস করেন ভেড়ামারায় নিজের বাড়িতে। সেখানে তার নিজের নামে ক্লিনিক রয়েছে। জানা যায়, তিনিও সপ্তাহে দুই দিন কর্মস্থলে যেয়ে শুধু বন্ধ্যাকরণ অপারেশন ক্যাম্প পরিচালনা করেন। উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নাসিরা খাতুন ২০০৭ সালের এপ্রিলে দৌলতপুরে যোগ দেন। তিনি থাকেন শহরের হাউজিং এস্টেট সি ব¬কের সম্প্রসারণ এলাকায় নিজের বাড়িতে। একটি সুত্র জানিয়েছে কুষ্টিয়ার পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক ডাঃ জেসমিন আখতার নিজের প্রাইভেট প্রাকটিসের সুবিধার্থে এবং নিজের অনুগত রাখতে কোন কর্মকর্তাকেই কর্মস্থলে থাকতে নির্দেশ দেন না বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। জেলার এসব কর্মকর্তাদের কর্মস্থলের বাইরে অবস্থান করায় হুমকির মুখে মাতৃস্বাস্থ্য। ঝিমিয়ে পড়ছে জেলার পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম। এধরনের অভিযোগের বিষয়ে কুষ্টিয়ার পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক জেসমিন আখতারের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, গত রবিবার মাসিক মিটিংয়ে প্রত্যেক উপজেলা মেডিকেল অফিসার ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাবে নিজের কর্মস্থলে অবস্থান করার জন্য জরুরীভাবে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এরপরও যদি কোন কর্মকর্তা কর্মস্থলের বাইরে অবস্থান করে তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।   

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন