শনিবার, ৭ জুলাই, ২০১২

সামনে রোজা, বাজার নিয়ন্ত্রণে অকার্য্যকর টিসিবি, অধিকাংশ ডিলারেরই পণ্য বিক্রির দোকান নেই

আরিফ মেহমুদ ॥ পণ্যের অস্থিতিশীল বাজারদর নিয়ন্ত্রণে রাখা সহ সমানে রোজাতে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখতে সরকারের নেয়া টিসিবি (ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ) কুষ্টিয়ায় অকার্য্যকর হয়ে পড়েছে। জেলায় ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) অধিকাংশ ডিলারেরই পন্য বিক্রি করার কোন দোকান নেই। হাতে গোনা কয়েকজন ডিলারের দোকান থাকলেও তাতে ‘টিসিবির পণ্য বিক্রির কোনো সাইনবোর্ড টানানো নেই। কোথাও চোখেও পড়েনি। বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য টিসিবি যেসব পণ্য ডিলারের মাধ্যমে বিক্রি করে থাকে সেগুলো সাধারণ ক্রেতারা কোথায়, কার কাছ থেকে কিনবে তা খুঁজে পায় না। তাদের পণ্য বিক্রির স্থানও ক্রেতারা খুঁজে পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় রমজানে যাতে বাজার অস্থিতিশীল না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক অবস্থা গ্রহন করলেও কুষ্টিয়ার এক শ্রেণীর ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে অধিক মুনাফা অর্জনে বাজারগুলোতে বাজারদর অস্থিতিশীল করেই চলেছে দেখার কেউ নেই। ব্যবসায়ীদের নানান ফন্দি ফিকির ও কুট চালে সরকারের নেয়া ব্যবস্থা কোন কাজেই আসছেনা এ জেলায়। বড় এলাকার স্থানীয় ক্রেতা আব্দুল মান্নান ও চাকুরিজীবী মিজানুর রহমান বাজার করতে যেয়ে জানান, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষপত্রের বাজারের অগ্নি মূল্যের হাত থেকে কিছুটা সাশ্রয় পেতে সরকারের টিসিবি’র দোকান খুজছি। কিন্তু ‘টিসিবির পণ্য বিক্রির কোনো সাইনবোর্ড কোথাও চোখে পড়েনি। আমরা কার কাছ থেকে মাল কিনব তাও জানি না। উপজেলাগুলোর বাজারের টিসিবির পণ্য বিক্রির চিত্র তো আরো ভয়াবহ। উপজেলার ক্রেতা সাধারণ টিসিবি কর্তৃক সরকারের এধরণের ন্যায্য মুল্যে পণ্য বিক্রির উদ্যোগের খবর জানেও না। কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের টিসিবি সংশ্লিষ্ট বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, জেলার ৬ উপজেলায় ৩২ জন ডিলার রয়েছেন। কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় আছেন ১৪ জন। এর মধ্যে পৌরসভা ও শহরেই রয়েছেন আছেন ১২ জন। কুমারখালী উপজেলায় ২, খোকসা উপজেলায় ৩, দৌলতপুরে ২, ভেড়ামারায় ৩, মিরপুর উপজেলায় ৮ জন সর্বমোট ৩২ জন টিসিবি ডিলার রয়েছেন। গত মে থেকে অষ্টম দফায় পণ্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ দফায় প্রতি ডিলারের জন্য দুই টন চিনি, ৬০০ লিটার সয়াবিন তেল ও ২০০ কেজি মসুর ডাল বরাদ্দ রয়েছে। তবে এ মাসে ডাল সরবরাহ কিছুটা কম। ডিলাররা প্রতি কেজি চিনি ৫০ টাকা, সয়াবিন লুজ প্রতিকেজি ১১৫, বোতলজাত প্রতিলিটার ১২১ ও মসুর ডাল ৭০ টাকায় ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করার কথা। শহরের ডিলাররা কেজি ও লিটার প্রতি কমিশন পান তিন টাকা। আর উপজেলার ডিলাররা পান চার টাকা। গতকাল বুধবার সরেজমিনে শহরের রাজারহাট, কবি আজিজুর রহমান সড়ক, আড়–য়াপাড়া, কেনি রোড, এনএস রোড, চেম্বার মার্কেট, স্টেশন রোড, চৌড়হাস ফুলতলা, ও হাউজিং সহ বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ১০টির অধিক টিসিবির ডিলারের কোনো দোকান কিংবা বিক্রয় প্রতিষ্ঠান বা বন্ধ দোকানের সাইন বোর্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এলাকায় যে টিসিবির পণ্য বিক্রির দোকান রয়েছে তা এসব এলাকার লোকজনও তেমন একটা জানেন না। ডিলারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, টিসিবির পণ্য বিক্রি করে তেমন কোনো লাভ হয় না। তাই তারা পণ্য উত্তোলন করে তা পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দেন। এক্ষেত্রে দৌলতপুরের বড়গাংদিয়া বাজারের ব্যবসায়ী মেসার্স ছাদেকুজ্জামান’র স্বত্ত্বাধিকারী ছাদেকুজ্জামান কোন দিনই টিসিবির পণ্য বিক্রির জন্য বড়গাংদিয়া বাজারের নিয়ে আসেনি।    পণ্য উত্তোলন করে তা পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে মোটা মুনাফার জন্য বিক্রি বরে দেন। এব্যাপারে ছাদেকুজ্জামানের সাথে মুঠোফোনে কয়েকবার যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি। এনএস রোডের চেম্বার মার্কেটের আরেক ডিলার মেসার্স মোকাররম ষ্টোরের স্বত্ত্বাধিকারী বড় বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোকাররম হোসেন মোয়াজ্জেম জানান, বাজারের পন্য থেকে টিসিবি পণ্যের তেমন কোনো পার্থক্য নেই। লাভ হয় কম। তা ছাড়া পণ্যের গুণগতমান খুব একটা ভালনা তাই তিনি এখন আর পণ্য উত্তোলন করেন না। আসন্ন রমজানে ভাল মালামলা সরবরাহ করবে বলে টিসিবি কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে। তবে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে গুনগত পন্য বিক্রির যোগ্য মালামাল সরবরাহ করলে বাজার দর নিয়ন্ত্রণ রাখতে অবশ্যই পণ্য উত্তোলন করে সরকারের এই মহৎ উদ্যোগকে সহযোগিতা করবো। টিসিবি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানান, অধিকাংশ ডিলার পণ্য উত্তোলন করেন। লোকজন খোলাবাজার থেকে এসব পণ্য কিনলেও টিসিবির দোকান থেকে কিনেন না। টিসিবির পণ্য বিক্রির প্রচারণা কম বলে বাজারের এমন চিত্র দেখা যায়। দ্রব্যমূল্যের লেলিহান শিখা দেশের জেলা শহর থেকে শুরু করে উপজেলা পর্যায়ের ছোট-বড় বাজারগুলোতে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য দিনের পর দিন লাগামহীন পাগলা ঘোড়ার মত বেড়ে চললে, সরকার আমদানীকৃত,স্থানীয় ভাবে ক্রয়কৃত পণ্যাদি ন্যায্য মূল্যে,সাশ্রয়ীমুলে বিক্রি করতে এবং বাজারদর নিয়ন্ত্রণ রাখতে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত টিসিবি ডিলার নিয়োগ করলেও কুষ্টিয়ার এক শ্রেণীর ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে অধিক মুনাফা অর্জনে বাজারগুলোতে বাজারদর অস্থিতিশীল করেই চলেছে দেখার কেউ নেই। ব্যবসায়ীদের নানান ফন্দি ফিকির ও কুট চালে সরকারের নেয়া ব্যবস্থা কোন কাজেই আসছেনা এ জেলায়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন