আরিফ মেহমুদ ॥ নির্মাণ আর স্থাপত্য নির্দশনের এক অপুর্ব সৃষ্টি কুষ্টিয়া কুমারখালী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শ্রী শ্রী গোপীনাথ দেব বিগ্রহ মন্দিরটি আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। সম্পত্তি দখল করতে ভূমি দশ্যু কর্তৃক সেক্রেটারীকে অপহরণের চেষ্টা করা হয়েছে। চেষ্টা ব্যর্থ হলে মন্দির কমিটির সেক্রেটারী শংকর কুমার বিশ্বাসকে বেদম প্রহার করে মন্দিরের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় কুমারখালী থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলা নম্বর ১৯১। মামলার এজাহার সূত্রে জানাগেছে, মন্দিরের সম্পত্তি অবৈধভাবে ভোগদখল করার উদ্দেশ্যে ওই এলাকার জালাল (২৬), বাবু (২৬), জব্বার মন্ডল (৫০), নওয়াব আলী (৪৫)সহ বেশ কয়েকজন মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক শংকর কুমার বিশ্বাসকে অস্ত্রের মুখে মটরসাইকেলে করে তুলে নিয়ে যেতে চায়। ধস্তাধস্তি আর চিৎকারে লোকজন ছুটে আসলে অপহরণকারীরা পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ কুষ্টিয়া জেলা শাখার সভাপতি ও শ্রী শ্রী গোপীনাথ দেব বিগ্রহ মন্দির কমিটির সহ-সভাপতি এ্যাডঃ অনুপ কুমার নন্দী। তিনি অবিলম্বে আসামীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টিান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান। শিলাইদহ কুঠিবাড়ি থেকে মাত্র এক কিঃ মিঃ পুর্ব-দক্ষিণে এক ছায়া ঢাকা পাখি ডাকা পরিবেশে অবস্থিত এ মন্দিরটি। প্রায় ৫শ বছর পুর্বে নির্মিত এ মন্দিরটি নিয়ে এলাকায় নানা কল্প কাহিনী প্রচলিত রয়েছে।
সরজমিনে কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের খোরশেদপুর গ্রামে অবস্থিত গোপীনাথ মন্দিরে যেয়ে দেখা যায় নানা চিত্র। এর স্থাপত্য কারুকার্য কাছে যেয়ে না দেখলে বোঝার উপায় নেই এর শিল্পনৈপূর্ণ কত মাধুর্যময়। পুরাতন ফাটকের কাছে যেয়ে দেখা যায় চুন-সুড়কির গাঁথুনিতে নির্মিত এ ৫শ বছরের ভবনটি। এর স্থাপত্য-নির্দশন দেখে মনে হয় এটি মুঘল সম্রাটের আমলে নির্মিত। এর গায়ে বিভিন্ন পশু-পাখি, ফুলসহ বিভিন্ন ডিজাইনের কারুকার্য। এর মধ্যে হাতি, ঘোড়া, গরু, পাখি, গোল আকৃতির বিভিন্ন ডিজাইনের ফুলসহ নানা কারুকার্য দৃষ্টি কাড়ে। এই প্রাসাদ সম বাড়িটির ভেতরে প্রবেশ করে কয়েক মিনিটের মধ্যে পুরো ঘুরে আসা সম্ভব নয়। লাগবে বেশ সময়। ফাটকের ভেতরে প্রবেশ করতেই বামে কয়েকটি ছাদবিহীন পরিত্যক্ত ঘর নজরে পড়লো। মূল ভবনের প্রবেশদ্বারেই রয়েছে একটি বিশাল মঠ। অন্ধকার রাতে দুর থেকে এটি দেখলে মনে হয় এ যেন কোন দানব। প্রধান ফাটক দিয়ে প্রবেশ শেষে ডান পাশে ঘুরে ডান দিকে রয়েছে একটি অতিথিশালা। এর সামনে নারকেল গাছ, তাল গাছ, জবা ফুল গাছ ও ডালিম গাছ রয়েছে। অতিথি শালাটি ৬ রুম বিশিষ্ট। ১ টি বড় হল রুম ও ৫ টি বেড রুম রয়েছে এ অতিথি শালায়। বর্তমানে এ মন্দিরের দেখা শুনাই নিয়োজিত পুরোহিত দিপক চক্রবর্তী ও তার পরিবারসহ হল রুমে থাকেন। প্রধান গেট দিয়ে প্রবেশ করে এর সামনে রয়েছে সীতারামের মঠটি।
ভবনের অধিকাংশ জায়গায় ইটগুলির কিছু কিছু ক্ষয় হয়ে গেছে। মঠের উপরে নিম গাছসহ বিভিন্ন গাছ জন্মে গেছে। মঠের পূর্বদিকে মঠে প্রবেশের গেট রয়েছে। মঠের প্রবেশ মুখটি প্রায় ভেঙ্গে পড়ার মত হয়েছে। মঠের ভিতরে প্রবেশ করে দেখা যায় মঠের নিচে কিছু পুরাতন ইট পড়ে আছে। পূর্ব-উত্তর দিকে মঠের সাথে বিগ্রহ রাখার ছোট প্রায় প্রদীপ আকৃতির স্থান রয়েছে। মঠের ভিতরে উপরের দিকে মিনারের দিকে তাকালে মনে হচ্ছে নিচের দিকে ইট খুলে পড়তে পারে। সীতারাম রায়ের মঠটি অযতœ আর অবহেলার কারণে প্রায় ধ্বংসের পথে। প্রাচীন এ মঠটি অত্যন্ত জরাজীর্ন অবস্থায় রয়েছে। এর চুড়া, কোণ, সম্মুখ ভাগ ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ। কয়েক যুগ ধরে পরিত্যক্ত থাকায় এর উপরিভাগ গাছ, লতাপাতায় আচ্ছাদিত হয়ে এবং মানুষের উপদ্রুপে ধবংস অবস্থায় উপণিত হয়েছে। শিলাইদহের মন্দিরটির প্রায় পশ্চিম দিকে গোপীনাথ দেব বিগ্রহর মন্দির। এ মন্দিরে প্রবেশের মাঝখানে ফুলের দৃশ্য। পাশে ২টা পরীর ভাষ্কর্য। মাঝে লোহার গ্রীল। গ্রীল পেরুলে বাম পাশে কাঠের রথ রয়েছে। আর ডান পাশে রয়েছে কাঠের সিংহাসন। ভিতরে রয়েছে গোপীনাথের মূল বিগ্রহটি। এর পশ্চিম পাশে বেশ উচু ঢিপ রয়েছে। এখানকার বাসিন্দা করুণা রাণী অধিকারী জানায়, এখানে দৌল পূজায় আবির খেলা হত। আবির খেলার মন্দিরটি মাটির তলায় গেড়ে গেছে। মাঝ খানে রয়েছে নাট মন্দির। এটি অবশ্য ঘোল ঢালা মন্দির নামে পরিচিত। আষাঢ়ের মাসে এখানে এ পুজাকে কেন্দ্র করে মেলা বসে। শত শত নারী-পুরুষেরা ঘট ভর্তি ঘোল আর নানা রকম প্রসাদ নিয়ে হাজির হয় এখানে। মন্দিরের প্রায় পূর্ব দিকে রয়েছে দূর্গা মন্দির। ১০ সেপ্টেম্বর ২০০৪ সালে তৎকালীন কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক সৈয়দ আহসানুল হক শ্রী শ্রী দুর্গা মাতার মন্দিরের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। এ ভবনে দূর্গা মন্দিরসহ কালী মন্দির, শীব লিঙ্গও রয়েছে।
মূল মন্দিরের বাহিরে পশ্চিম দিকে রয়েছে শ্রী শ্রী গোপীনাথ দেবের স্নান বেদী। পাশে শিলাইদহ প্রতীমা সরকারী বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয়। স্নান বেদীতে বিগ্রহ রেখে ঘোল ঢালা হয়। এ বেদীতে হাতির শুর’র ভাস্কর্য্য রয়েছে। উপরে মাঝখানে বিগ্রহ রেখে চারপাশে ঘুরে ঘোল ঢালা হয়। শিলাইদহের গোপীনাথ মন্দির নিয়ে এলাকায় অনেক কিংবদন্তী রয়েছে। এলাকায় প্রচলিত রয়েছে, খোরশেদ পুরের তাঁতী কল্যাণী রায় একদিন স্বপ্নে দেখতে পান, তার বাড়ির আঙ্গিনায় শ্রী কৃষ্ণ এসে বাঁশি বাজাচ্ছেন। হটাৎ তার ঘুম ভেঙ্গে যায়। পরদিন সকালে এ কথা তার মাকে বলে। মা তাকে পরামর্শ দেন এই কথা বলে, ভগবান শ্রী কৃষ্ণ তোমার কল্যাণ চায়। তুমি তার জন্য বাড়ির আঙ্গিনায় একটি মন্দির নির্মাণ কর। সে কথা শুনে তিনি বাড়ির আঙ্গিনায় কল্যাণ চন্দ্র রায় বাড়ির আঙ্গিনায় একটি মন্দির নির্মাণ করেন নাম রাখেন গোপীনাথ মন্দির। এ প্রসঙ্গে বোধদয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক এ্যাডঃ লালিম হক জানায়, কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের খোরশেদপুর গ্রাম। খোরসেদ-উল-মূলক নামে এক পীরদরবেশের নাম থেকে এই স্থানের নামকরণ করা হয়। এখানে আছে এই পীরের আস্তানা ও মাজার। মাজারের পাশে নাটোরের রাণী ভবানী খনিত জলাশয়। এখানকার হাটের কাছে দক্ষিণ দিকে প্রাচীর বেষ্টিত অঙ্গনে একটি পোড়ামাটির ভাস্কর্য মন্ডিত বাংলা চালারীতির চারচালা মন্দির এখন ভগ্ন, বিধ্বস্ত ও পরিত্যক্ত। মন্দিরটির আকার দৈর্ঘে-প্রস্থে ২০ ফুট ও উচ্চতায় প্রায় ৩০ ফুট। লালিম হক আরও জানায়, প্রবেশ দ্বারের উপরে বাঁকানো কার্ণিশের নিচে দুই সারিতে ও দুই পাশে দুই সারিতে মোট ৬২টি কুলুঙ্গিতে পোড়ামাটির মূর্তি-ভাস্কর্য ছিল, যার অধিকাংশই কুষ্ণলীলা বিষয়ক। এ ছাড়া, তিন দিকে নানা অলঙ্করণ। মূর্তি-ভাস্কর্য অধিকাংশই বিনষ্ট। মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত ছিল গোপীনাথ বিগ্রহ। এ মন্দিরটি বিধ্বস্ত হলে পাশেই পাঁচটি ফুলকাটা খিলানের দুটি সারি সংযুক্ত প্রশস্ত পঙ্খ-অলঙ্কত দালান মন্দির নাটোরের রাণী ভবানী কর্তৃক নির্মিত হয়, সেখানেই গোপীনাথ বিগ্রহ ছিলেন। ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতাযুদ্ধকালে পাক-সেনারা নাকি বিগ্রহটিকে ধবংস করে।
এদিকে আরও জানাগেছে, রাণী ভবানী এ সময় কুষ্টিয়া অঞ্চলে বেশকিছু মন্দির ও পুকুর খনন করে। শিলাইদহ গোপীনাথ মন্দির এর মধ্যে অন্যতম। জানাগেছে পরবর্তীতে বিক্রমপুরের ভাগ্যকুলের মান্ডু জমিদার মন্দিরটি ক্রয় করেন। এরপর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দাদা প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর জমিদারী কেনার কারণে মন্দিরের মালিকানা লাভ করে। তারপর সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গোপীনাথ বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ করেন। জানাগেছে, ঠাকুর বাড়ি জমিদারী বিলুপ্তির পর কালী কৃষ্ণ অধিকারী মন্দিরটির দেখাশোনা করে।
তবে ৫শ বছরের এই ঐতিহ্যবাহী গোপীনাথ মন্দিরটিতে শুধু প্রাচীন বাঙ্গালী কৃষ্টি, সংস্কৃতিই বহন করে না। এর স্থাপত্য-নিদর্শনও মনে করিয়ে দেয় আমাদের হাজার বছরের বাঙ্গালী ঐতিহ্য। এটি সংস্কার করে যথাযথ ভাবে সংরক্ষিত করা খুবই জরুরী। তবে ভূমি দশ্যূসহ নানা কারণে মন্দিরের সম্পত্তি আজ হুমকির সম্মুখীন। এব্যাপারে প্রশাসনের পক্ষে পদক্ষেপ নেয়া জরুরী। নয়লে এ ঐতিহ্যবাহী মন্দিরটি বিলুপ্তি হওয়ার আশংকা রয়েছে।
সরজমিনে কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের খোরশেদপুর গ্রামে অবস্থিত গোপীনাথ মন্দিরে যেয়ে দেখা যায় নানা চিত্র। এর স্থাপত্য কারুকার্য কাছে যেয়ে না দেখলে বোঝার উপায় নেই এর শিল্পনৈপূর্ণ কত মাধুর্যময়। পুরাতন ফাটকের কাছে যেয়ে দেখা যায় চুন-সুড়কির গাঁথুনিতে নির্মিত এ ৫শ বছরের ভবনটি। এর স্থাপত্য-নির্দশন দেখে মনে হয় এটি মুঘল সম্রাটের আমলে নির্মিত। এর গায়ে বিভিন্ন পশু-পাখি, ফুলসহ বিভিন্ন ডিজাইনের কারুকার্য। এর মধ্যে হাতি, ঘোড়া, গরু, পাখি, গোল আকৃতির বিভিন্ন ডিজাইনের ফুলসহ নানা কারুকার্য দৃষ্টি কাড়ে। এই প্রাসাদ সম বাড়িটির ভেতরে প্রবেশ করে কয়েক মিনিটের মধ্যে পুরো ঘুরে আসা সম্ভব নয়। লাগবে বেশ সময়। ফাটকের ভেতরে প্রবেশ করতেই বামে কয়েকটি ছাদবিহীন পরিত্যক্ত ঘর নজরে পড়লো। মূল ভবনের প্রবেশদ্বারেই রয়েছে একটি বিশাল মঠ। অন্ধকার রাতে দুর থেকে এটি দেখলে মনে হয় এ যেন কোন দানব। প্রধান ফাটক দিয়ে প্রবেশ শেষে ডান পাশে ঘুরে ডান দিকে রয়েছে একটি অতিথিশালা। এর সামনে নারকেল গাছ, তাল গাছ, জবা ফুল গাছ ও ডালিম গাছ রয়েছে। অতিথি শালাটি ৬ রুম বিশিষ্ট। ১ টি বড় হল রুম ও ৫ টি বেড রুম রয়েছে এ অতিথি শালায়। বর্তমানে এ মন্দিরের দেখা শুনাই নিয়োজিত পুরোহিত দিপক চক্রবর্তী ও তার পরিবারসহ হল রুমে থাকেন। প্রধান গেট দিয়ে প্রবেশ করে এর সামনে রয়েছে সীতারামের মঠটি।
ভবনের অধিকাংশ জায়গায় ইটগুলির কিছু কিছু ক্ষয় হয়ে গেছে। মঠের উপরে নিম গাছসহ বিভিন্ন গাছ জন্মে গেছে। মঠের পূর্বদিকে মঠে প্রবেশের গেট রয়েছে। মঠের প্রবেশ মুখটি প্রায় ভেঙ্গে পড়ার মত হয়েছে। মঠের ভিতরে প্রবেশ করে দেখা যায় মঠের নিচে কিছু পুরাতন ইট পড়ে আছে। পূর্ব-উত্তর দিকে মঠের সাথে বিগ্রহ রাখার ছোট প্রায় প্রদীপ আকৃতির স্থান রয়েছে। মঠের ভিতরে উপরের দিকে মিনারের দিকে তাকালে মনে হচ্ছে নিচের দিকে ইট খুলে পড়তে পারে। সীতারাম রায়ের মঠটি অযতœ আর অবহেলার কারণে প্রায় ধ্বংসের পথে। প্রাচীন এ মঠটি অত্যন্ত জরাজীর্ন অবস্থায় রয়েছে। এর চুড়া, কোণ, সম্মুখ ভাগ ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ। কয়েক যুগ ধরে পরিত্যক্ত থাকায় এর উপরিভাগ গাছ, লতাপাতায় আচ্ছাদিত হয়ে এবং মানুষের উপদ্রুপে ধবংস অবস্থায় উপণিত হয়েছে। শিলাইদহের মন্দিরটির প্রায় পশ্চিম দিকে গোপীনাথ দেব বিগ্রহর মন্দির। এ মন্দিরে প্রবেশের মাঝখানে ফুলের দৃশ্য। পাশে ২টা পরীর ভাষ্কর্য। মাঝে লোহার গ্রীল। গ্রীল পেরুলে বাম পাশে কাঠের রথ রয়েছে। আর ডান পাশে রয়েছে কাঠের সিংহাসন। ভিতরে রয়েছে গোপীনাথের মূল বিগ্রহটি। এর পশ্চিম পাশে বেশ উচু ঢিপ রয়েছে। এখানকার বাসিন্দা করুণা রাণী অধিকারী জানায়, এখানে দৌল পূজায় আবির খেলা হত। আবির খেলার মন্দিরটি মাটির তলায় গেড়ে গেছে। মাঝ খানে রয়েছে নাট মন্দির। এটি অবশ্য ঘোল ঢালা মন্দির নামে পরিচিত। আষাঢ়ের মাসে এখানে এ পুজাকে কেন্দ্র করে মেলা বসে। শত শত নারী-পুরুষেরা ঘট ভর্তি ঘোল আর নানা রকম প্রসাদ নিয়ে হাজির হয় এখানে। মন্দিরের প্রায় পূর্ব দিকে রয়েছে দূর্গা মন্দির। ১০ সেপ্টেম্বর ২০০৪ সালে তৎকালীন কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক সৈয়দ আহসানুল হক শ্রী শ্রী দুর্গা মাতার মন্দিরের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। এ ভবনে দূর্গা মন্দিরসহ কালী মন্দির, শীব লিঙ্গও রয়েছে।
মূল মন্দিরের বাহিরে পশ্চিম দিকে রয়েছে শ্রী শ্রী গোপীনাথ দেবের স্নান বেদী। পাশে শিলাইদহ প্রতীমা সরকারী বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয়। স্নান বেদীতে বিগ্রহ রেখে ঘোল ঢালা হয়। এ বেদীতে হাতির শুর’র ভাস্কর্য্য রয়েছে। উপরে মাঝখানে বিগ্রহ রেখে চারপাশে ঘুরে ঘোল ঢালা হয়। শিলাইদহের গোপীনাথ মন্দির নিয়ে এলাকায় অনেক কিংবদন্তী রয়েছে। এলাকায় প্রচলিত রয়েছে, খোরশেদ পুরের তাঁতী কল্যাণী রায় একদিন স্বপ্নে দেখতে পান, তার বাড়ির আঙ্গিনায় শ্রী কৃষ্ণ এসে বাঁশি বাজাচ্ছেন। হটাৎ তার ঘুম ভেঙ্গে যায়। পরদিন সকালে এ কথা তার মাকে বলে। মা তাকে পরামর্শ দেন এই কথা বলে, ভগবান শ্রী কৃষ্ণ তোমার কল্যাণ চায়। তুমি তার জন্য বাড়ির আঙ্গিনায় একটি মন্দির নির্মাণ কর। সে কথা শুনে তিনি বাড়ির আঙ্গিনায় কল্যাণ চন্দ্র রায় বাড়ির আঙ্গিনায় একটি মন্দির নির্মাণ করেন নাম রাখেন গোপীনাথ মন্দির। এ প্রসঙ্গে বোধদয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক এ্যাডঃ লালিম হক জানায়, কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের খোরশেদপুর গ্রাম। খোরসেদ-উল-মূলক নামে এক পীরদরবেশের নাম থেকে এই স্থানের নামকরণ করা হয়। এখানে আছে এই পীরের আস্তানা ও মাজার। মাজারের পাশে নাটোরের রাণী ভবানী খনিত জলাশয়। এখানকার হাটের কাছে দক্ষিণ দিকে প্রাচীর বেষ্টিত অঙ্গনে একটি পোড়ামাটির ভাস্কর্য মন্ডিত বাংলা চালারীতির চারচালা মন্দির এখন ভগ্ন, বিধ্বস্ত ও পরিত্যক্ত। মন্দিরটির আকার দৈর্ঘে-প্রস্থে ২০ ফুট ও উচ্চতায় প্রায় ৩০ ফুট। লালিম হক আরও জানায়, প্রবেশ দ্বারের উপরে বাঁকানো কার্ণিশের নিচে দুই সারিতে ও দুই পাশে দুই সারিতে মোট ৬২টি কুলুঙ্গিতে পোড়ামাটির মূর্তি-ভাস্কর্য ছিল, যার অধিকাংশই কুষ্ণলীলা বিষয়ক। এ ছাড়া, তিন দিকে নানা অলঙ্করণ। মূর্তি-ভাস্কর্য অধিকাংশই বিনষ্ট। মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত ছিল গোপীনাথ বিগ্রহ। এ মন্দিরটি বিধ্বস্ত হলে পাশেই পাঁচটি ফুলকাটা খিলানের দুটি সারি সংযুক্ত প্রশস্ত পঙ্খ-অলঙ্কত দালান মন্দির নাটোরের রাণী ভবানী কর্তৃক নির্মিত হয়, সেখানেই গোপীনাথ বিগ্রহ ছিলেন। ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতাযুদ্ধকালে পাক-সেনারা নাকি বিগ্রহটিকে ধবংস করে।
এদিকে আরও জানাগেছে, রাণী ভবানী এ সময় কুষ্টিয়া অঞ্চলে বেশকিছু মন্দির ও পুকুর খনন করে। শিলাইদহ গোপীনাথ মন্দির এর মধ্যে অন্যতম। জানাগেছে পরবর্তীতে বিক্রমপুরের ভাগ্যকুলের মান্ডু জমিদার মন্দিরটি ক্রয় করেন। এরপর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দাদা প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর জমিদারী কেনার কারণে মন্দিরের মালিকানা লাভ করে। তারপর সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গোপীনাথ বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ করেন। জানাগেছে, ঠাকুর বাড়ি জমিদারী বিলুপ্তির পর কালী কৃষ্ণ অধিকারী মন্দিরটির দেখাশোনা করে।
তবে ৫শ বছরের এই ঐতিহ্যবাহী গোপীনাথ মন্দিরটিতে শুধু প্রাচীন বাঙ্গালী কৃষ্টি, সংস্কৃতিই বহন করে না। এর স্থাপত্য-নিদর্শনও মনে করিয়ে দেয় আমাদের হাজার বছরের বাঙ্গালী ঐতিহ্য। এটি সংস্কার করে যথাযথ ভাবে সংরক্ষিত করা খুবই জরুরী। তবে ভূমি দশ্যূসহ নানা কারণে মন্দিরের সম্পত্তি আজ হুমকির সম্মুখীন। এব্যাপারে প্রশাসনের পক্ষে পদক্ষেপ নেয়া জরুরী। নয়লে এ ঐতিহ্যবাহী মন্দিরটি বিলুপ্তি হওয়ার আশংকা রয়েছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন