শুক্রবার, ৬ এপ্রিল, ২০১২

কুষ্টিয়ায় সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে ঘুষ ছাড়া কাজ হয় না,অবৈধ সমিতির নিকট জিম্মি ক্রেতা-বিক্রেতারা

এ.এইচ.এম.আরিফ ॥ কুষ্টিয়ার রেজিষ্ট্রি অফিস গুটিকয়েক দলিল লেখকদের নিকট জিম্মি হয়ে পড়েছে। অবৈধ সমিতির নামে প্রতিদিন আদায় করা হচ্ছে হাজার হাজার টাকা। অতিরিক্ত টাকা ছাড়া কোন কাজ হয়না কুষ্টিয়া রেজিষ্ট্রি অফিসে। মতাসীন সহযোগী সংগঠনের কয়েকজন নেতা ও পুলিশকে ম্যানেজ করে ক্রেতা-বিক্রেতা সাধারন লোকজনের পকেট কাটছে কথিত সমিতির নেতারা। এর আগে একাধিক বার পুলিশ অভিযান চালিয়ে আটক করে কয়েকজনকে। বন্ধ হয়ে যায় সমিতির কার্যক্রম। সরেজমিন কুষ্টিয়া রেজিষ্ট্রি অফিস ঘুরে ভুক্তভোগীদের সাথে কথা হলে তারা নানা অনিয়ম দূর্নীতির চিত্র তুলে ধরেন। কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বিত্তিপাড়া থেকে জমি রেজিষ্ট্রি করতে আসা আতাহার মিয়া জানান, কোন জমি রেজিষ্ট্রি করতে হলে সমিতির নামে লাখে ৪ হাজার টাকা জমা দেয়া লাগে। এক টাকা কমেও জমি রেজিষ্ট্রি হয়না। সমিতির নেতাদেও দাপটে সাধারন দলিল লেখকরা অসহায় বলে জানান তিনি। প্রতিদিন জমি রেজিষ্ট্রি করতে আসা শত শত মানুষ এখানে এসে নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। সরকারী নিয়মনীতিকে উপাে করে মনগড়া ভাবে অতিরিক্ত ২ থেকে ৪ গুন ফি গ্রাহকদের কাছ থেকে আদায় করা হয়।  ওই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে গেলে তাদের থানাপাড়া এলাকার ক্যাডার বাহিনী দিয়ে হুমকিও দেয়া হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক সাধারন দলিল লেখক জানান, জমি রেজিষ্ট্রি করার জন্য সরকার নির্ধারিত ফিস থাকলেও তা অনেকেই মানেন না।  সাধারন দলিলে সরকারী ফিস সর্বসাকুল্যে ১২৫ টাকা নির্ধারন করা হলেও এখানে আদায় করা হয় ৪৩৫ টাকা। হেবা দলিলে সরকারী ফিস ২২৫ টাকা হলেও আদায় করা হচ্ছে বিঘাপ্রতি এক হাজার টাকা। খারিজ পচড়া না থাকলে অতিরিক্ত আরও ৫’শ টাকা নেয়া হয়। সার্টিফাই কপির জন্য ৭০ টাকা ফি ধার্য করা থাকলেও নেয়া হচ্ছে ৮’শ থেকে দেড় হাজার টাকা। কপিষ্টদের কাছ থেকেও উৎকোচ আদায় করা হচ্ছে। জমি রেজিষ্ট্রি করার সময় দাতা উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও টাকার বিনিময়ে দাতার অনুপস্থিতিতে রেজিষ্ট্রি করা হচ্ছে দলিল। এেেত্র ঘুষ নেয়া হয় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। অফিসের কয়েকজন দূর্ণীতিবাজ কর্মকর্তা সমিতির নেতাদের যোগসাজসে এসব অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছে। কুষ্টিয়া রেজিষ্ট্রি অফিসের কথিত সমিতির সাথে বেশির ভাগ সাধারন দলিল লেখকদের কোন সম্পর্ক নেই। তবে ভয়ে তারা মুখ খুলতে সাহস পান না। মতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের এক নেতার ভাইসহ তিন জনের সিন্ডিকেট এখানকার নিয়ন্ত্রক। কথিত সমিতির সভাপতি জয়নাল ও কোষাধ্যা নাসির উদ্দিন ও নেতার ভাই সমিতি পরিচালনা করেন। গত তত্বাবধায়ক সরকার আমলে সেনাবাহিনী অভিযান চালিয়ে সমিতির কার্যক্রম স্থগিত করে দেন। এরপর আওয়ামী লীগ সরকার মতায় আসলে নেতাদের সহযোগীতায় ফের চালু হয় অবৈধ সমিতি। বিগত সময়কার পুলিশ সুপার শাহাবুদ্দিন খান অভিযান চালিয়ে কয়েকজন আটক করেন। ফের বন্ধ করে দেন সমিতির কার্যক্রম। তবে তিনি বদলি হওয়ার পর আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠে সমিতির নেতারা। দলিল লেখক সমিরি নেতারা সরকারি নিয়ম মানেন না। তাদের আলাদা তালিকা রয়েছে। সেই তালিকা অনুযায়ী তারা টাকা আদায় করেন। দলিল লেখকরা সরকারী ফিস ছাড়াও ৫০ হাজার টাকা দলিলে ৩ হাজার টাকা, ১ ল টাকার দলিলে ৬ হাজার টাকা, ২ ল টাকার দলিলে ১৫ হাজার টাকা হারে সমিতির চাঁদার নামে অতিরিক্ত টাকা আদায় করেন। কোন কোন েেত্র সুযোগ বুঝে আরও বেশি টাকা হাকছেন তারা। দলিল লেখক সমিতির সীলযুক্ত টোকেন ছাড়া কোন দলিল রেজিষ্ট্রি করতে দেয়া হয় না। ফলে সাধারন ক্রেতা-বিক্রেতা জমি রেজিষ্ট্রি করতে এসে পড়ছেন মহা বিপাকে। দলিল লেখক সমিতির নিয়োগকৃত দালালদের দাপটে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পান না।
কয়েকজন দলিল লেখক জানান, এখানে দিনে-দুপুরে ডাকাতি করা হচ্ছে। দলিল লেখক সমিতির নেতারা মনগড়া একটি ফিসের তালিকা তৈরী করে সকল দলিল লেখকদের হাতে ধরিয়ে দিয়েছেন। এতে সাধারন দলিল লেখকদের কোন লাভ হচ্ছে না। কয়েকজন দলিল লেখক কাজ না করেও হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। অবৈধ দলিল লেখক সমিতির সভাপতি জয়নাল জয়নালের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। সাধারন সম্পাদক লাইজুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে সভাপতি ভাল বলতে পারবে। কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ এর সাখে মোবাইলে কথা হলে জানান, কেউ যদি অবৈধ সমিতির নামে চাঁদা আদায় করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন