বুধবার, ২৫ এপ্রিল, ২০১২

কুষ্টিয়ায় সরকারী বিধি নিষেধ উপেক্ষা করে ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম চালাচ্ছে!

আরিফ মেহমুদ ॥ সরকারী বিধি নিষেধ উপেক্ষা ও এনজিও ব্যুরোর মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরী অথরিটির সনদ ছাড়াই কুষ্টিয়ার নিবন্ধন বাতিলকৃত ৩টি এনজিও’র বিরুদ্ধে ক্ষুদ্র ঋণের নামে অবৈধ আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে। তালিকায় রয়েছে আরো ১৩টি এনজিও প্রতিষ্ঠান। সমাজসেবা অধিদপ্তর নিবন্ধ বাতিলকৃত বিলুপ্ত এনজিওগুলোর তালিকায় নাম থাকলেও নানা অনিয়ম দুর্নীতি সহ ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণের মাধ্যমে অবৈধ লেনদেন চালিয়ে যাচ্ছে জেলার সুরমা সেচ্ছাসেবী সংস্থা, নিউ জনউন্নয়ন সংস্থা ও সোসাল এন্টিগ্রেট সংস্থা সহ অনেক এনজিও। তাদের দেয়া অধিক সুদের ঋণের জালে প্রতিনিয়ত গ্রামাঞ্চলের খেটে খাওয়া মানুষ নিঃস্ব হলেও দেখার কেউ নেই। এসব এনজিওগুলোর বিরুদ্ধে একাধিক বার ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণের নামে অবৈধ লেনদেনের মাধমে অধিক সুদ আদায় ও সরকারের নিয়মনীতি উপেক্ষা করে ঋণ কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগ উঠায় কুষ্টিয়ার ২৬১ এনজিও’র নিবন্ধন বাতিল করেছে সমাজসেবা অধিদপ্তর। এসব এনজিও’র পরিচালকরা দীর্ঘদিন ধরে ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণের মাধ্যমে অবৈধ লেনদেন চালিয়ে অধিক সুদ আদায় করে ফুলে ফেঁপে উঠছে। সরকারী বিধি নিষেধ উপেক্ষা ও এনজিও ব্যুরোর মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরী অথরিটির সনদ ছাড়াই ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ বন্ধে জেলা প্রশাসক নির্দেশ নিদের্শ দিলেও তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনে সমাজসেবা অধিদপ্তরের রয়েছে ধীর গতি। বিলুপ্ত ঘোষণাকৃত এনজিওগুলো কোন প্রকার আইনের তোয়াক্কা না করেই দাপটের সাথে মাঠকর্মী, হিসাব রক্ষক ও ফিল্ড সুপারভাইজার নিয়োগ দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের কার্যক্রম। খোজ নিয়ে জানা যায় এসব এনজিও’র নির্বাহী পরিচালকের স্থায়ী ঠিকানার সাথে কার্যালয়ের ঠিকানার কোন মিল নেই। এক ঠিকানা দেখিয়ে জেলা সমাজসেবা দফতর থেকে ক্ষুদ্র ঋণ বা মাইক্রোক্রেডিট কার্যক্রম পরিচালনা করবো না মর্মে নিবন্ধন গ্রহণ করলেও বাস্তবে ওই ঠিকানায় কার্যালয়ের কোন অস্তিত্ব নেই। আইনের তোয়াক্কা না করেই নিবন্ধন শর্ত ভঙ্গ করে সেচ্ছায় সেবা দান ভুলে গিয়ে মোটা অংকের সুদে ক্ষুদ্র ঋণ বা মাইক্রোক্রেডিট কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। জেলা এনজিও সমন্বয় পরিষদের মাসিক সভা কিংবা জরুরী কোন সভায় ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করবো না বলে নির্বাহী পরিচালকরা একাধিকবার প্রতিশ্র“তি দিলেও বাস্তবে কোন দিন তা বাস্তবায়ন করেননি তারা। বরং তাদের এই মোটা অংকের সুদের কারবার চালিয়ে যেতে বেছে নিচ্ছে নতুন নতুন পদ্ধতি। পুরুষ কর্ম ব্যস্ত থাকার অজুহাতে জেলার বিভিন্ন এলাকায় মহিলাদের নিয়ে সমিতি গঠন করে সদস্যদের সঞ্চয় জমা নেয়ার নামে কেউ কেউ হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এছাড়াও এসব এনজিও তাদের দেয়া ঋণের মূলধন পরিশোধ করতে সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের নামে ১৫/২০ পার্সেন্ট সুদ হারে সাপ্তাহিক ৪৬ কিংবা ৪৮ কিস্তিতে কালেকশন করছেন। ঋণ প্রদানের সময় সদস্যদের জমানো সঞ্চয় থেকে ৬ পার্সেন্ট হারে ঋণের মূল টাকা থেকে কেটে রাখা হয়। যা পাশ বইয়ে সঞ্চয় হিসেবে জমা থাকে ওই এনজিও’র তহবিলেই। আর এসব কালেকশন আদায়ে পুরুষ কর্মীর চেয়ে মহিলা কর্মীদের বেশি করে নিয়োগ দিচ্ছে তারা। এদিকে এসব এনজিও’র কার্যক্রম বন্ধে জেলা এনজিও সমন্বয় পরিষদ বার বার সতর্ক করলেও কোন এক অজানা শক্তির দাপটে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে তারা। জেলা এনজিও সমন্বয় পরিষদ সভাপতি জেলা প্রশাসক বনমালী ভৌমিক জানান, এধরনের অপরাধে কুষ্টিয়ার ২৬১ এনজিও’র নিবন্ধন বাতিল করেছে সমাজসেবা অধিদপ্তর, প্রয়োজনে এসব এনজিও’র এসব এনজিও’র নিবন্ধন বাতিলের জন্য জেলা সমাজসেবা দফতর থেকে সমাজসেবা অধিদফতরের পরিচালক (কার্যক্রম) বরাবর চিঠি পাঠানো হবে।সেকেলে এনজিও নিয়ন্ত্রণ আইন দিয়ে তাদের কার্যক্রম কোন ভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে অবশেষে পুরাতন আইন সংশোধন করে বৈদেশিক সহায়তাপুষ্ট এনজিও নিয়ন্ত্রণে নতুন আইন তৈরি করছে সরকার। এব্যাপারে মুঠোফনে কথা বলার জন্য সুরমা সেচ্ছাসেবী সংস্থা, নিউ জনউন্নয়ন সংস্থা ও সোসাল এন্টিগ্রেট সংস্থার নির্বাহী পরিচালকদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাদের অনেকের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। কথা হয় নিউ জনউন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী রায়হান আলীর সাথে ক্ষুদ্র ঋণ বা মাইক্রোক্রেডিট কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এনজিও ব্যুরোর মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরী অথরিটির সনদ বা অনুমতি আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান কোন সনদ বা অনুমতি নাই। কেন এ মোটা সুদের কারবার চালাচ্ছেন, তিনি বলেন আমার মত অনেক এনজিও শুরু থেকেই ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। দৌলতপুর, ভেড়ামারা ,মিরপুর কুষ্টিয়া সদর উপজেলা সহ জেলার সব উপজেলায় এমন অনেক এনজিও আছে যারা শুধুমাত্র ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম চালিয়ে অল্প দিনেই কোটিপতি হয়ে উঠছে। আমরা তো মানুষের উপকার করছি, ক্ষতির কিছু নেই। সংশি¬ষ্ট সূত্র জানায়, অবৈধ লেনদেন বিশেষ করে ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণের মাধ্যমে অধিক সুদ আদায় করে এ জেলার বেশ কয়েকটি এনজিও ফুলেফেঁপে উঠেছে। সরকারের নিয়মনীতি উপেক্ষা করে ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য সমাজসেবা দফতর থেকে জেলায় আবারো নিবন্ধিত ১৩টি এনজিওকে তালিকাভুক্ত করেছে। সূত্রমতে শহর সমাজসেবা কর্মকর্তা তদন্ত করে প্রতিবেদন তৈরি করেছেন। প্রতিবেদনে ১৩ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে মর্মে উলে¬খ করা হয়েছে। এদিকে নিবন্ধন বাতিল করা ঠেকাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে সংশ্লিষ্ট এনজিওগুলো। বিশেষ সূত্রমতে প্রায় ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে এসব প্রতিষ্ঠান। এ ধরনের ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য সরকারি কোন অনুমোদন তাদের নেই বলে সমাজসেবা দফতর দাবি করেছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন