আরিফ মেহমুদ ॥ কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক (যুগ্ম সচিব) বনমালী ভৌমিক বলেছেন দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আদমশুমারির গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। খাদ্য,শিক্ষা,চিকিৎসা,জনপ্রশাসন,সরকারি নিয়োগ ও জাতীয় নির্বাচনসহ সকল ক্ষেত্রে আদমশুমারির তথ্য ব্যবহার হয়ে থাকে। আদমশুমারির রির্পোটে একটি দেশের আর্থ সামাজিক সার্বিক চিত্র প্রকাশিত হয়। তাই আদমশুমারি একটি দেশের জন্য অপরিহার্য। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালে প্রথম আদমশুমারি ও গৃহ গণনা অনুষ্ঠিত হয়। জাতি সংঘের সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে মন্ত্রিপরিষদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক বাংলাদেশে ৫ম আদমশুমারি ও গৃহগণনা ২০১১ সালের মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত হয়। ২০১১ সালের ১৫-১৯ মার্চ পর্যন্ত দেশের সকল সাধারণ থানা , প্রতিষ্ঠানিক থানা, হোটেল, হাসপাতালও অনান্য আবাস স্থালে অবস্থানকারী লোকজনকে গণনাভুক্ত করা হয়। রেলওয়ে স্টেশন, বাস স্টেশন,ফেরীঘাটও ফুটপাথ ইত্যাদি স্থানে অবস্থানকারী ভাসমান লোকজনকেও গণনাভুক্ত করা হয়েছে। সফলভাবে এই আদমশুমারি অনুষ্ঠানের লক্ষে এবং শুমারি তথ্যের মান নিশ্চিত করার লক্ষে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে গঠিত জেলা শুমারি কমিটি অত্যান্ত দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করে। গতকাল কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে দুপুরে কুষ্টিয়ার আদমশুমারি ও গৃহগণনা ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড.মহিউদ্দিনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মুহঃ ফজলুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) খন্দকার আজিম আহমেদ, জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ তরুণ কান্তি হালদার, কুষ্টিয়া সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ বদরুদ্দোজা, কুষ্টিয়া সরকারী মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ড.প্রফেসর জমির উদ্দিন, সোনালী ব্যাংকের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার স্বপন কুমার সাহা, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ বেগম, খোকসা পৌরসভার মেয়র আনোয়ার আহম্মেদ খান তাতারী, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জাহিদুল ইসলাম, মিরপুর উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা আবুল হোসেন। প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে আরো বলেন, সিটি কর্পোরেশন ,পৌরসভা,উপজেলা এবং ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিদের নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট শুমারি কমিটি দক্ষতার সাথে কার্যক্রম পরিচালনা করে। তিনি জেলা শুমারি কমিটির সকল সদস্যসহ অনান্য শুমারি কমিটির সদস্যগণকে তাদের উপর অপিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের জন্য ধন্যবাদ জানান। সংবাদ মাধ্যম সমুহের গঠনমুলক ভূমিকা ও অত্র জেলার জন সাধারণের সক্রিয় অংশগ্রণে শুমারি সুষ্ঠভাবে সম্পাদনা সম্ভব হয়েছে। এজন্য সকলকে নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আদমশুমারি ও গৃহগণনার ফলাফল ৩ টি পর্যায়ে প্রকাশ করা হয়েছে। ১ম পর্যায়: টালিশীটের উপর ভিক্তি করে প্রাথমিক ফলাফল ২য় পর্যায়: প্রশ্নপত্র হতে কম্পিউটারে তথ্য ধারনের পরে গণনাকৃত জনসংখ্যা ৩য় পর্যায়: গণনাকৃত জনসংখ্যার সাথে গণনা পরবর্তী যাচাই জরিপ এ প্রাপ্ত তথ্য সমন্বয়পূর্র্বক চূড়ান্ত জনসংখ্যা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো কর্তৃক শুমারি অনুষ্ঠানের পর সরকারের আন্য একটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা (বিআইডিএস) কর্তৃক স্বাধীনভাবে গণনা পরবর্তী যাচাই জরিপ পরিচালনা করা হয়।বিআইডিএস এর হিসাব অনুযায়ী গণনা হতে বাদ পড়ার হার (ঁহফবৎ পড়ঁহঃ) ৩.৯৭%। অত্যাধুুনিক প্রযুুক্তি ব্যবহার করে দ্রুততম সময়ে বাংলাদেশে পরিসংখ্যান ব্যুরো শুমারির এ সকল রির্পোট প্রস্তুত করা হয়। এছাড়া এ শুমারি কাজে প্রথমবারের মত জিআইএস (এওঝ) ডিজি ম্যাপ ব্যবহার করা হয় এবং প্রায় চার লক্ষ গণনাকারী ও সুপারভাইজারগণের মধ্যে শতকরা ৫০ ভাগের বেশী ছিল মহিলা যা প্রশংসনীয়। আদমশুমারি ও গৃহগণনা ২০১২ সালের ১৬ জুলাই পর্যন্ত কুষ্টিয়া জেলার লোকসংখ্যা ২০,৪৬,১৮৪ জন। তন্মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ১০,২৩,১৮৪জন এবং মহিলার সংখ্যা ১০২২৯৩৬ জন। সে হিসবে পুরুষ ও মহিলার অনুপাত ১০০:১০০। জেলার মোট খানার সংখ্যা ৪৭৭২৮৯ এবং খানা প্রতি গড় জনসংখ্য ৪.০৬ জন। আদমসুমারি ও গৃহগণনা আনুযায়ী ১৫ মার্চ ২০১১ তারিখে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ছিল ১৪,৯৭,৭২,৩৬৪ জন এর মধ্যে পুরুষ ৭,৪৯,৮০,৩৮৬ জন ও মহিলা ৭,৪৭,৯১,৯৭৮ জন। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.৩৭%। প্রজেক্টরের মাধ্যমে এই ফলাফল প্রকাশ করা হয়। অনুষ্ঠানটি সার্বিক পরিচালনা ও উপস্থাপনা করেন জেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা ইফতেখাইরুল করিম।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন