আরিফ মেহমুদ ॥ সরকারী ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের আবাসন সমস্যা সমাধানে জন্য নির্মিত কুষ্টিয়ার গণপূর্ত বিভাগের বাসা টাইপ কোয়ার্টারগুলোতে বসবাস করছে এরা কারা? এসব কোয়ার্টারে সরকারী বে-সরকারী মিলে লোকজন বসবাস করলেও সন্ধার পর এখানে নেমে আসে এক অজানা ভূতুড়ে পরিবেশ। একটু রাত বাড়লেই কোয়ার্টারগুলো থেকে বেরিয়ে আসা অতি পরিচিত সুগন্ধি আর ঝাঝালো ধূয়ায় জনসাধারণের চলাচল দায় হয়ে ওঠে। তবুও পথ চলা। আমার ঘরে বসত করে কয়জনা,মন জানো না। এগুলোকে ঘিরেই নতুন করে গড়ে উঠেছে মাদকদ্রব্য বেচাকেনার স্পট। এমন কিছু নেই যা মিলে না এখানে। এমনই তথ্য মিলেছে গতকাল সরেনজমিন কুষ্টিয়া সরকারী কলেজের পিছনের ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের জন্য বরাদ্দকৃত বাসা টাইপ কোয়ার্টারগুলোর খোজ-খবর নিতে যেয়ে। কুষ্টিয়ার গণপূর্ত বিভাগের দায়িত্বশীল সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, সেই দেশ ভাগের কয়েক বছর পর ১৯৫৪ সালে তৎকালীন মহাজের জণগোষ্ঠির ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের আবাসন সমস্যা সমাধানে ও পূনর্বাসনের জন্য কুষ্টিয়া কোর্ট ষ্টেশন ভিত্তিক কোর্টপাড়ায় প্রায় সাড়ে তিন একর জমির উপর গড়ে উঠে ৩৪ টি বাসা টাইপ কোয়ার্টার। সেকেলের নির্মানাধীণ টিনসেডের এই আধা-পাকা বিল্ডিংগুলো সংস্কারের অভাবে বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠলেও সে দিকে খেয়াল নেই কর্তপরে। দেশ স্বাধীন হবার পরে সামান্য রিপেয়ারিং করে বসবাস শুরু করে ৩৪ টি পরিবার। সামান্য বৃষ্টি হলেই ঘরের মধ্যে থাকা দায়। পুরাতন টিনসেড মরিচার জং ধরে অসংখ্য ফুটো আর বড় ছিদ্র হয়ে ঘরের চালার ছাউনির অবস্থা এতটাই দূরাবস্থা যে মনে কোন কৃত্রিম ঝর্না। বাসা টাইপে বসবাসকারীদের মধ্যে নাম প্রকাশে অনুচ্ছিক অনেকেই জানিয়েছেন, আমাদের বেতন বেসিকের ৫০ ভাগ দিতে হয় এই বাসা ভাড়া বাবদ। বর্তমান বেসিক অনুসারে এসব কোয়ার্টার প্রতি প্রায় ২ হাজার টাকা কাটে ভাড়া হিসেবে। ভাড়ার তুলনায় বাসা টাইপ কোয়ার্টারগুলো একেবারেই বসবাসের অযোগ্য। অল্প বেতনের কর্মচারী হিসেবে আমাদের জন্য এই ভাড়া দেয়া কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘ দিন থেকে এই কোয়ার্টারগুলো ভেঙ্গে আধুনিক মান সম্পন্ন রি-মডেলিং কোয়ার্টার নির্মানের জন্য শুধু ঘোষনায় শুনে আসছি, বাস্তবে এর কোন দিক নির্দেশনা বা নির্দেশ আদো হবে কি না জানি না। ফলে বাসা টাইপ কোয়ার্টারগুলোর আবাসন রি-মডেলিং প্রকল্প স্বপ্নই রয়ে গেলো, আলোর মুখ দেখবে কবে কে জানে। গণপূর্ত বিভাগের সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায় আবাসন বোর্ডের সভাপতি জেলা প্রশাসক আর সাধারণ সম্পাদক গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী। জেলা আবাসন কমিটির সভায় এসব কোয়ার্টারগুলো ভেঙ্গে রি-মডেলিং প্রকল্প হিসেবে বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত বার বার গ্রহণ করা হলেও এর কোন বরাদ্দ পাওয়া যায়নি আজো। বাসা টাইপ কোয়ার্টারগুলোকে রি-মডেলিং করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপরে কাছে অনেকবার বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করেও কোন কাজ হয়নি। সুতরাং বাসা টাইপ কোয়ার্টারগুলোকে রি-মডেলিং করার প্রকল্প বাস্তবায়ন সুদূরপ্রসারী রয়ে গেল। কুষ্টিয়ার কৃতি সন্তান এলজিইডি’র সাবেক প্রধান প্রকৌশলী প্রয়াত কামরুল ইসলাম সিদ্দিক সেকেলের নির্মানাধীণ টিনসেডের কোয়ার্টারগুলো ভেঙ্গে আধুনিক মান সম্পন্ন রি-মডেলিং কোয়ার্টার নির্মানের উদ্দ্যোগ গ্রহণ করেন। সে সময় কোয়ার্টারগুলোর মধ্যে পূর্ব দিকের ৩টি এবং পশ্চিম পাশের ২টি ভেঙ্গে মসজিদ ও মাদ্রাসা নির্মাণ করেন। বর্তমানে ২৯ টি বাসা টাইপ কোয়ার্টারের প্রতিটিই সরকারী ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের নামে বরাদ্দ থাকলেও কয়েকজন কর্মচারী পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করলেও অধিকাংশই দখল করে রেখেছে বে-সরকারী লোকজন। অভিযোগ রয়েছে কতিপয় সরকারী কর্মচারী তাদের নিজের নামে কোয়ার্টার বরাদ্দ নিয়ে অন্যকে ভাড়া দিয়েছে। আবার কেউ কেউ স্থানীয় ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের কাছে জিম্মি হয়ে সেচ্ছায় বাসা ছেড়ে দিয়েছে এদের কাছে। এব্যাপারে গণপূর্ত বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম জিয়াউদ্দিন হায়দর অনেকটা দায় স্বীকার করে জানান, বরাদ্দপ্রাপ্ত কর্মচারীরা যদি তার বাসায় বসবাস না করে তাহলে নিরাপত্তার কারনেও অনেক সময় বাইরের লোক এখানে বসবাসের সুযোগ করে নিচ্ছে। তবে এদের তালিকা তৈরী করে খুব শীঘ্রই কোয়ার্টার থেকে এদের দখলমুক্ত করা হবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন