আরিফ মেহমুদ ॥ জীবনের মায়া ত্যাগ করে আর বুক ভরা আশা নিয়ে ১৯৭১’র এ দিনে মেহেরপুর মহাকুমার (বৌদ্যনাথতলা) মুজিবনগর আম্রকাননে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকারকে দূর্জয় সাহস নিয়ে ১২ জন আনসার গার্ড অব অনার প্রদান করলেও ইতোমধ্যেই নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে, অনাহারে-অর্ধাহারে ৮ জন নিরাশায় প্রস্থান করেছেন পরপারে। নিরাশার দোলা চেপে বেঁচে আছেন মাত্র ৪জন। সেই অকুতভয় ১২ জন আনসারের পরিবার পরিজন আজ ভালো নেই। তারা কোনমতে খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছেন। শাসক গোষ্টির হাত থেকে রক্তিম সুর্য্য ছিনিয়ে আনার আমরণ লড়াইয়ে যারা রণাঙ্গনে পিছপা না হয়ে অকুতভয় সৈনিকের মত নির্ভিক দায়িত্ব পালন করেছেন আজ তারা এক প্রকার নিরাশায় নিরবে চোখের জল ফেলছেন। স্বাধীনতার পর দেশের অনেক পরিবর্তনের সাথে ১৪ কোটি মানুষ স্বাধীনতার সুফল ভোগ করলেও তাদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয়নি আজো। মুজিবনগর অস্থায়ী সরকারের গার্ড অব অনার প্রদানকারী (ফাস্ট স্যালুট) সেই ১২ জন আনসার ও তাদের পরিবারের খোঁজ খবর নিতে গেলে এমন চিত্রই পরিলক্ষিত হয়েছে।
৭১-এর রনাঙ্গণের অকুতভয় সূর্য্য সৈনিক ১২ জন আনসার পরিবারের দিন চলে এখন অনাহারে-অর্ধহারে স্বাধীনতার ৪০ বছরেও তাদের খোঁজ রাখেনি কেউ। ১২ জন সূর্য্য সৈনিক আনসারদের মধ্যে থেকে ইতোমধ্যে নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে এক রকম বিনা চিকিৎসায় দিনের পর দিন ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যু বরণ করেছেন ৮ জন। ১৯৭০ সালের নির্বাচিত আওয়ামীলীগ সরকারকে স্বীকৃতি দেয়ার বিষয় নিয়ে ৭১-এর ১০ এপ্রিল কুষ্টিয়া জেলার চুয়াডাঙ্গায় এক সমাবেশে মিলিত হন তৎকালীন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। সেখানে সিদ্ধান্ত গৃহিত হয় অপেক্ষাকৃত নিরাপদ স্থান হিসাবে ১৭ এপ্রিল তৎকালীন মেহেরপুর মহাকুমার বৈদ্যনাথতলা ভবেরপাড়া (মুজিবনগর) আম্রকাননে স্বাধীন স্বার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকার আনুষ্ঠানিক ভাবে আত্ম প্রকাশ করবে এবং শপথ গ্রহন করবেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রস্তুতি। চারিদিকে স্বাধীনতা যুদ্ধের ডামাডোল। মা মাটি মানুষের মুক্তির জন্য বাংলার দামাল ছেলেরা শত্র“ সেনাদের বিরুদ্ধে লড়ে যাচ্ছে। দেশব্যাপী চলছে পাকসেনাদের বাংলার মানুষের উপর নির্মম অত্যাচার, অগ্নিসংযোগ, লুট-পাট, হত্যা ও গণধর্ষনের মত মানবতা বিরোধী অপরাধের কর্মকান্ড। এরই মধ্যে উপর মহল থেকে তৎকালীন মেহেরপুর মহাকুমার এসডিও তৌফিক এলাহী চৌধুরী ও মুক্তিযুদ্ধের ৮ নং সেক্টর কমান্ডার আবু ওসমান চৌধুরী’র কাছে নির্দেশ আসে অস্থায়ী সরকারের মন্ত্রী পরিষদের সদস্যদের বরণ করে নেয়ার। সেক্টর কমান্ডার আবু ওসমান চৌধুরী গার্ড অব অনার দেয়ার জন্য মেহেরপুরের পুলিশ, ইপিআর ও আনসারদের সাথে আলাপ করে। দেশের এই ভয়াবহ পস্থিতিতে পুলিশ ও ইপিআর গার্ড অব অনার প্রদানে অপারোগতা জানায়। সেদিন মা মাটি আর মানুষের মুক্তির কথা ভেবে একটি স্বাধীন দেশের স্বপ্নে স্বাধীনতার অকুতভয় সূর্য্য সৈনিক ১২ জন আনসার জীবনের মায়া ত্যাগ করে মন্ত্রী পরিষদকে গার্ড অব অনার প্রদানে রাজি হয়েছিলেন। তৎকালীন মেহেরপুরের পুলিশ অফিসার মাহবুবুর রহমানের (এসপি মাহবুব) নেতৃত্বে পিসি ইয়াদ আলী, আনসার সদস্য আজিমুদ্দিন শেখ, সিরাজুল ইসলাম, অস্থির মল্লিক, হামিদুল ইসলাম, সাহেব আলী, লিয়াকত আলী, নজরুল ইসলাম, ফকির মোহাম্মদ, মহিউদ্দিন, কেসমত আলী ও মফিজ উদ্দিন অস্থায়ী সরকারের মন্ত্রী পরিষদের সদস্যদের গার্ড অব অনার প্রদান করেন। দেশে ভয়াবহ অবস্থার মধ্যেও যারা নিজের জীবনকে বাজী রেখে ৭১-এর ১৭ এপ্রিল প্রথম সরকার প্রধানকে গার্ড অব অনার প্রদান করেছিলেন সেসব সূর্য্য সৈনিকরা কেমন আছে, কিভাবেই বা কাটছে তাদের জীবন-সংসার, দেখতে সরজমিন মুজিবনগরের ভবেরপাড়া গ্রামে পৌছালে দেখা যায় তাদের নানা দুর্দশার চিত্র। ৭১-এর ১৭ এপ্রিল’র পুরো দিন, পুরো পরিবেশটিকে যে অস্থির করে রেখেছিল, কথা হয় সে সময়ের তরুন সিরাজুল ইসলাম ও আজিমুদ্দিন শেখের সাথে। তারা জানান, যে উদ্দেশ্যে যুদ্ধে গিয়েছিলাম তা আজো পুরন হয়নি। মনে করেছিলাম মা, মাটির মানুষের জন্য যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করে সুখে থাকবো। কিন্তু যুদ্ধের পর কেউ কারো কোন খবর রাখেনি। আমরা এখন বৃদ্ধ হয়েছি, হাপানী ও অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত রোগী। চিকিৎসার জন্য কোন টাকা নেই। দুটো গরু বিক্রি করে সেই টাকা দিয়ে কিছু চিকিৎসা এবং খেয়ে পরে বেঁচে আছি। সরকার বদল হয় আর আমাদের অনেক কিছু দেবে বলে প্রতিশ্র“তি ও আশ্বাস দিলেও স্বাধীনতার ৪০ বছরে বাস্তবে কিছুই পাইনি। কথা হয় আরেক অকুতভয় সূর্য্য সৈনিক মৃত মফিজ উদ্দিনের স্ত্রী সকিনা বেগমের সাথে, তিনি জানান, স্বাধীনতার পর অভাবের টানা-টানি সংসারের কারনে ছেলে মেয়েদের লেখা পড়া করাতে পারেনি। সংসারে এতই অভাব ছিল যে, টাকার অভাবে নিজের বাড়ীর জমির খাজনা না দিতে পারায় জমি খাস হয়ে যায়। ২ ছেলে ও ১ মেয়ে রেখে তিনি ২০০৬ সালের ৪ অক্টোবর মৃত্যু বরণ করেন। বর্তমানে বড় ছেলের ভ্যান চালানো আয়ের টাকা দিয়ে সংসার চলে। সেদিনকার ঘটনার জন্য সে ১৯৯৫ সালে স্বাধীনতা পুরুস্কার হিসাবে রুপার একটি মেডেল পেয়েছিলেন। স্ত্রী সকিনা বেগম আক্ষেপ করে বলেন, যে মানুষটি সংসার ছেলে-মেয়ের কথা চিন্তা না করে জীবনের বাজী রেখে স্বাধীনতা যুদ্ধে গিয়েছিল। অথচ সেই যুদ্ধের পর টাকার অভাবে ঠিক মত সংসার চলাতে পারনি। এ জন্যই কি যুদ্ধ করেছিল? সরকারী অনুদান তেমন একটা পায়নি। তার মৃত্যুর পর পরিবারের লোকজন একটি দু’রুম বিশিষ্ট ঘর অল্প দিনে বুঝে পেয়েছেন। কাগজে কলমে ৫০ শতক খাস জমি বরাদ্দ পেলেও দখল পায়নি আজো। আজ সেই ভয়াবহ স্মৃতিময় ১৭ এপ্রিল। গার্ড অব অনার প্রদারকারী দলের আজিমুদ্দিন শেখ, সিরাজুল ইসলাম, হামিদুল ইসলাম ও লিয়াকত আলী বেঁচে থাকলেও আমাদের মাঝে বেঁচে নেই মহিউদ্দিন (মৃত্যু-১৯৮৬ সালের ২০ ডিসেম্বর) পিসি ইয়াদ আলী (মৃত্যু-১৯৯৩) কেসমত আলী (মৃত্যু-১৯৯৩ সালের ৭ নভেম্বর) নজরুল ইসলাম (মৃত্যু-২০০৪ সালের ২ ফেব্র“য়ারী) ফকির মোহাম্মদ (মৃত্যু-২০০৪ সালের ৯ জুন) মফিজ উদ্দিন(মৃত্যু-২০০৬ সালের ৪ অক্টোবর) সাহেব আলী (মৃত্যু-২০০৮ সালের ২৯ আগষ্ট) ও সে সময়ের অস্থির টগবগে যুবক অস্থির মল্লিক অনেকটাই অনাদরে ও বিনা চিকিৎসায় ২০১০ সালের ২৪ মার্চ মৃত্যু বরণ করেন। স্বাধীন স্বার্বভৌম দেশ পাওয়ার সুবাদে ও রাজনৈতিক পালা বদলের সাথে সাথে অনেকের ভাগ্যের চাকা ঘুরেছে ঠিকি কিন্তু রাজনৈতিক পালা বদলের এই খেলায় ও ক্ষমতাসীন দলের আদর্শের সাথে মত পার্থক্য অথবা পছন্দের না হওয়ায়,স্বাধীন স্বার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতিকে গার্ড অব অনার প্রদানকারী ১২ জন সূর্য্য সৈনিক আনসারের ভাগ্যের চাকা আজো ঘুরেনি। কেবল অনাদরে আর অবহেলায় দিন কাটছে তাদের বেঁচে থাকা ৪ জন সহ তাদের পরিবারের লোকজনের। স্বাধীনতার ৪০ বছরে তারা সরকারী অনুদান তেমন একটা পায়নি বললেই চলে। সরকার যায় সরকার আসে হয়তোবা কিছু অনুদান পাবো এ ধরনের আশায় বুক বেঁধে দিনের পর দিন কত যে অপেক্ষায় থেকেছে তারা তার কোন হিসেব নেই আমাদের সভ্য দেশের ইতহাসে। যারা জীবনের মায়া ত্যাগ করে মা,মাটির মানুষের মুক্তির জন্য যুদ্ধ করে এ দেশকে স্বাধীন করেছিল, জাতি তাদের অবদানের কথা কোন দিন ভূলতে পারবেনা। শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে তাদের। স্বাধীনতা যুদ্ধে এই ১২ জন সূর্য্য সৈনিক আনসার যুদ্ধ করলেও বিনিময়ে নিজেদের অবদানের জন্য স্বাধীনতার ৪০ বছরেও পায়নি তেমন একটা স্বীকৃতি। আজকের দিনে তাদের ও রেখে যাওয়া পরিবারের দাবী,অন্তত মহান স্বাধীনতায় তাদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে যথাযোগ্য মর্যাদা দেয়া হোক। ব্যবস্থা করা হোক তাদের সু-চিকিৎসা এবং বাড়ানো হোক তাদের মাসিক সম্মানী ভাতা। বেঁচে থাকা ৪ সূর্য সৈনিক আনসার সদস্যরা দাবী জানিয়েছে, তাদের মৃত্যুর পর অন্তত তাদের পরিবারকে সরকারী সাহায্য সহযোগীতা করলে আত্মা প্রশান্তি পাবে। এই ক্ষুদ্র প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছে সেদিনের ১২ সৈনিকের পরিবার ও বেঁচে থাকা ৪ সূর্য সৈনিক আনসার। আজকের এই দিনে তাদের সে আশা যেন পুরণ হয় সে প্রত্যাশাই করেছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে।
৭১-এর রনাঙ্গণের অকুতভয় সূর্য্য সৈনিক ১২ জন আনসার পরিবারের দিন চলে এখন অনাহারে-অর্ধহারে স্বাধীনতার ৪০ বছরেও তাদের খোঁজ রাখেনি কেউ। ১২ জন সূর্য্য সৈনিক আনসারদের মধ্যে থেকে ইতোমধ্যে নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে এক রকম বিনা চিকিৎসায় দিনের পর দিন ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যু বরণ করেছেন ৮ জন। ১৯৭০ সালের নির্বাচিত আওয়ামীলীগ সরকারকে স্বীকৃতি দেয়ার বিষয় নিয়ে ৭১-এর ১০ এপ্রিল কুষ্টিয়া জেলার চুয়াডাঙ্গায় এক সমাবেশে মিলিত হন তৎকালীন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। সেখানে সিদ্ধান্ত গৃহিত হয় অপেক্ষাকৃত নিরাপদ স্থান হিসাবে ১৭ এপ্রিল তৎকালীন মেহেরপুর মহাকুমার বৈদ্যনাথতলা ভবেরপাড়া (মুজিবনগর) আম্রকাননে স্বাধীন স্বার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকার আনুষ্ঠানিক ভাবে আত্ম প্রকাশ করবে এবং শপথ গ্রহন করবেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রস্তুতি। চারিদিকে স্বাধীনতা যুদ্ধের ডামাডোল। মা মাটি মানুষের মুক্তির জন্য বাংলার দামাল ছেলেরা শত্র“ সেনাদের বিরুদ্ধে লড়ে যাচ্ছে। দেশব্যাপী চলছে পাকসেনাদের বাংলার মানুষের উপর নির্মম অত্যাচার, অগ্নিসংযোগ, লুট-পাট, হত্যা ও গণধর্ষনের মত মানবতা বিরোধী অপরাধের কর্মকান্ড। এরই মধ্যে উপর মহল থেকে তৎকালীন মেহেরপুর মহাকুমার এসডিও তৌফিক এলাহী চৌধুরী ও মুক্তিযুদ্ধের ৮ নং সেক্টর কমান্ডার আবু ওসমান চৌধুরী’র কাছে নির্দেশ আসে অস্থায়ী সরকারের মন্ত্রী পরিষদের সদস্যদের বরণ করে নেয়ার। সেক্টর কমান্ডার আবু ওসমান চৌধুরী গার্ড অব অনার দেয়ার জন্য মেহেরপুরের পুলিশ, ইপিআর ও আনসারদের সাথে আলাপ করে। দেশের এই ভয়াবহ পস্থিতিতে পুলিশ ও ইপিআর গার্ড অব অনার প্রদানে অপারোগতা জানায়। সেদিন মা মাটি আর মানুষের মুক্তির কথা ভেবে একটি স্বাধীন দেশের স্বপ্নে স্বাধীনতার অকুতভয় সূর্য্য সৈনিক ১২ জন আনসার জীবনের মায়া ত্যাগ করে মন্ত্রী পরিষদকে গার্ড অব অনার প্রদানে রাজি হয়েছিলেন। তৎকালীন মেহেরপুরের পুলিশ অফিসার মাহবুবুর রহমানের (এসপি মাহবুব) নেতৃত্বে পিসি ইয়াদ আলী, আনসার সদস্য আজিমুদ্দিন শেখ, সিরাজুল ইসলাম, অস্থির মল্লিক, হামিদুল ইসলাম, সাহেব আলী, লিয়াকত আলী, নজরুল ইসলাম, ফকির মোহাম্মদ, মহিউদ্দিন, কেসমত আলী ও মফিজ উদ্দিন অস্থায়ী সরকারের মন্ত্রী পরিষদের সদস্যদের গার্ড অব অনার প্রদান করেন। দেশে ভয়াবহ অবস্থার মধ্যেও যারা নিজের জীবনকে বাজী রেখে ৭১-এর ১৭ এপ্রিল প্রথম সরকার প্রধানকে গার্ড অব অনার প্রদান করেছিলেন সেসব সূর্য্য সৈনিকরা কেমন আছে, কিভাবেই বা কাটছে তাদের জীবন-সংসার, দেখতে সরজমিন মুজিবনগরের ভবেরপাড়া গ্রামে পৌছালে দেখা যায় তাদের নানা দুর্দশার চিত্র। ৭১-এর ১৭ এপ্রিল’র পুরো দিন, পুরো পরিবেশটিকে যে অস্থির করে রেখেছিল, কথা হয় সে সময়ের তরুন সিরাজুল ইসলাম ও আজিমুদ্দিন শেখের সাথে। তারা জানান, যে উদ্দেশ্যে যুদ্ধে গিয়েছিলাম তা আজো পুরন হয়নি। মনে করেছিলাম মা, মাটির মানুষের জন্য যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করে সুখে থাকবো। কিন্তু যুদ্ধের পর কেউ কারো কোন খবর রাখেনি। আমরা এখন বৃদ্ধ হয়েছি, হাপানী ও অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত রোগী। চিকিৎসার জন্য কোন টাকা নেই। দুটো গরু বিক্রি করে সেই টাকা দিয়ে কিছু চিকিৎসা এবং খেয়ে পরে বেঁচে আছি। সরকার বদল হয় আর আমাদের অনেক কিছু দেবে বলে প্রতিশ্র“তি ও আশ্বাস দিলেও স্বাধীনতার ৪০ বছরে বাস্তবে কিছুই পাইনি। কথা হয় আরেক অকুতভয় সূর্য্য সৈনিক মৃত মফিজ উদ্দিনের স্ত্রী সকিনা বেগমের সাথে, তিনি জানান, স্বাধীনতার পর অভাবের টানা-টানি সংসারের কারনে ছেলে মেয়েদের লেখা পড়া করাতে পারেনি। সংসারে এতই অভাব ছিল যে, টাকার অভাবে নিজের বাড়ীর জমির খাজনা না দিতে পারায় জমি খাস হয়ে যায়। ২ ছেলে ও ১ মেয়ে রেখে তিনি ২০০৬ সালের ৪ অক্টোবর মৃত্যু বরণ করেন। বর্তমানে বড় ছেলের ভ্যান চালানো আয়ের টাকা দিয়ে সংসার চলে। সেদিনকার ঘটনার জন্য সে ১৯৯৫ সালে স্বাধীনতা পুরুস্কার হিসাবে রুপার একটি মেডেল পেয়েছিলেন। স্ত্রী সকিনা বেগম আক্ষেপ করে বলেন, যে মানুষটি সংসার ছেলে-মেয়ের কথা চিন্তা না করে জীবনের বাজী রেখে স্বাধীনতা যুদ্ধে গিয়েছিল। অথচ সেই যুদ্ধের পর টাকার অভাবে ঠিক মত সংসার চলাতে পারনি। এ জন্যই কি যুদ্ধ করেছিল? সরকারী অনুদান তেমন একটা পায়নি। তার মৃত্যুর পর পরিবারের লোকজন একটি দু’রুম বিশিষ্ট ঘর অল্প দিনে বুঝে পেয়েছেন। কাগজে কলমে ৫০ শতক খাস জমি বরাদ্দ পেলেও দখল পায়নি আজো। আজ সেই ভয়াবহ স্মৃতিময় ১৭ এপ্রিল। গার্ড অব অনার প্রদারকারী দলের আজিমুদ্দিন শেখ, সিরাজুল ইসলাম, হামিদুল ইসলাম ও লিয়াকত আলী বেঁচে থাকলেও আমাদের মাঝে বেঁচে নেই মহিউদ্দিন (মৃত্যু-১৯৮৬ সালের ২০ ডিসেম্বর) পিসি ইয়াদ আলী (মৃত্যু-১৯৯৩) কেসমত আলী (মৃত্যু-১৯৯৩ সালের ৭ নভেম্বর) নজরুল ইসলাম (মৃত্যু-২০০৪ সালের ২ ফেব্র“য়ারী) ফকির মোহাম্মদ (মৃত্যু-২০০৪ সালের ৯ জুন) মফিজ উদ্দিন(মৃত্যু-২০০৬ সালের ৪ অক্টোবর) সাহেব আলী (মৃত্যু-২০০৮ সালের ২৯ আগষ্ট) ও সে সময়ের অস্থির টগবগে যুবক অস্থির মল্লিক অনেকটাই অনাদরে ও বিনা চিকিৎসায় ২০১০ সালের ২৪ মার্চ মৃত্যু বরণ করেন। স্বাধীন স্বার্বভৌম দেশ পাওয়ার সুবাদে ও রাজনৈতিক পালা বদলের সাথে সাথে অনেকের ভাগ্যের চাকা ঘুরেছে ঠিকি কিন্তু রাজনৈতিক পালা বদলের এই খেলায় ও ক্ষমতাসীন দলের আদর্শের সাথে মত পার্থক্য অথবা পছন্দের না হওয়ায়,স্বাধীন স্বার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতিকে গার্ড অব অনার প্রদানকারী ১২ জন সূর্য্য সৈনিক আনসারের ভাগ্যের চাকা আজো ঘুরেনি। কেবল অনাদরে আর অবহেলায় দিন কাটছে তাদের বেঁচে থাকা ৪ জন সহ তাদের পরিবারের লোকজনের। স্বাধীনতার ৪০ বছরে তারা সরকারী অনুদান তেমন একটা পায়নি বললেই চলে। সরকার যায় সরকার আসে হয়তোবা কিছু অনুদান পাবো এ ধরনের আশায় বুক বেঁধে দিনের পর দিন কত যে অপেক্ষায় থেকেছে তারা তার কোন হিসেব নেই আমাদের সভ্য দেশের ইতহাসে। যারা জীবনের মায়া ত্যাগ করে মা,মাটির মানুষের মুক্তির জন্য যুদ্ধ করে এ দেশকে স্বাধীন করেছিল, জাতি তাদের অবদানের কথা কোন দিন ভূলতে পারবেনা। শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে তাদের। স্বাধীনতা যুদ্ধে এই ১২ জন সূর্য্য সৈনিক আনসার যুদ্ধ করলেও বিনিময়ে নিজেদের অবদানের জন্য স্বাধীনতার ৪০ বছরেও পায়নি তেমন একটা স্বীকৃতি। আজকের দিনে তাদের ও রেখে যাওয়া পরিবারের দাবী,অন্তত মহান স্বাধীনতায় তাদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে যথাযোগ্য মর্যাদা দেয়া হোক। ব্যবস্থা করা হোক তাদের সু-চিকিৎসা এবং বাড়ানো হোক তাদের মাসিক সম্মানী ভাতা। বেঁচে থাকা ৪ সূর্য সৈনিক আনসার সদস্যরা দাবী জানিয়েছে, তাদের মৃত্যুর পর অন্তত তাদের পরিবারকে সরকারী সাহায্য সহযোগীতা করলে আত্মা প্রশান্তি পাবে। এই ক্ষুদ্র প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছে সেদিনের ১২ সৈনিকের পরিবার ও বেঁচে থাকা ৪ সূর্য সৈনিক আনসার। আজকের এই দিনে তাদের সে আশা যেন পুরণ হয় সে প্রত্যাশাই করেছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন