শনিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১২

কুষ্টিয়ায় এরাইজ উচ্চ ফলনশীল ধান চাষে সাফল্য

আরিফ মেহমুদ ॥ কুষ্টিয়ায় নতুন জাতের ‘গোল্ড’ ধানের পর উচ্চ ফলনশীল ‘এরাইজ ধানির’ চাষে সাফল্য এনে দিয়েছে কৃষকদের মাঝে। বিঘা প্রতি ফলন ৩০ মন। রোপা আমন মৌসুমে অভাবনীয় ফলন হয়েছে। এই ফলনে কৃষকসহ ধান চাষের সাথে সংশি¬ষ্ট সকলে আনন্দিত। প্রদর্শনী প্লটের মাধ্যমে এই ধানের সফল চাষে সকলের মাঝে আশার সঞ্চার করছে। চাষীরা এই ধানের আবাদ করে অধিক পরিমান ধান উৎপাদনে সক্ষম হবে। গতকাল সকালে নবান্নের শুরুতে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বৃত্তিপাড়ায় পরীক্ষামুলকভাবে উৎপাদনকৃত এই ধান কাটার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ কৃমিন্ত্রণালয়ের যশোর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক আব্দুল মান্নান। স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারন বিভাগের কর্মকর্তারা মনে করছেন এই নতুন প্রজাতির ধান চাষে চাষীরা উপকৃত হবেন। সেই সাথে এলাকায় বিপুল পরিমান ধান উৎপাদন হবে। জানা যায়-কুষ্টিয়ার চাষীরা উচ্চ ফলনশীল নতুন জাত ‘এরাইজ ধানির’ ধান চাষে পরিচিত নন। তবে এবার জনতা ব্যাংকের সিআরসি কর্মসূচীর সহায়তায় এখানকার কৃষকরা পরীক্ষামূলক এই ধান উৎপাদন শুরু করেছে। গীতাঞ্জলী এ্যাগ্রো সোসাইটির তত্বাবধানে কুষ্টিয়া শহরতলীর বিত্তিপাড়ায় কয়েক বিঘা জমিতে পরীক্ষামূলক ধান চাষ করা হয়। সিস্টেম অব রাইস ইন্টেন্সিফিকেশন (এসআরআই) পদ্ধতিতে গীতাঞ্জলী এ্যাগ্রো সোসাইটির চাষ করা এই ধানের ফলন আদ্রতা বাদ দিয়ে হেক্টর প্রতি ৮.৭৫ মেট্রিক টন ও বিঘা প্রতি ৩০ মন। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যাংকের সিএসআর খাত হতে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। গতকাল ধান কেটে কৃষকরা এই পরিমান ধান উৎপাদনের রেকর্ড সকলের সামনে তুলে ধরেন। এছাড়াও ফসল কর্তন অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে যশোর বিএডিসি’র যুগ্ম পরিচালক মোস্তাক আহমেদ, কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তর কুষ্টিয়ার উপ-পরিচালক লুৎফর রহমান,যশোর অঞ্চলের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ফিরোজ আহমেদ, রিজিওনাল ফিল্ড অফিসার পরেশ কুমার রায়,কুষ্টিয়া সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল আমিন, বীজ প্রত্যায়ন এজেন্সির ফিল্ড কর্মকর্তা কামরুল হক মিয়া, গীতাঞ্জলী এ্যাগ্রো সোসাইটির প্রধান নির্বাহী আজিজার রায়হান, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অশোক কর্মকার ও সংশ্লিষ্ট ব্লকের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী কৃষি অফিসার আসারুল হক। জনতা ব্যাংক বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালিত করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় দেশের কৃষিখাতে অসহায় ও বর্গা চাষীদের সহযোগিতার মাধ্যমে স্বাবলম্বী করে তোলা এবং দেশের খাদ্য ঘাটতি মেটাতে বিপুল পরিমান খাদ্য উৎপাদনে অংশীদার হওয়ার এমন লক্ষ্য নিয়েই এই খাতে সহযোগিতা করার জন্য এগিয়ে এসেছে। জনতা ব্যাংক এ ধরনের সৃজনশীল উদ্যোগে সহায়তা তথা সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে অগ্রাধিকার প্রদান করছে। নতুন এই ধান দেশের কৃষি বিপ্লবে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। সংশ্লিষ্ট ব্লকের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী কৃষি অফিসার আসারুল হক জানান, এ ধান চাষে রোগবালাই ও কীট-পতঙ্গের আক্রমনও তুলনামূলক কম। প্রথম দিকে এ ধান চাষে শ্রমিক, বীজ, সার, কীটনাশক ও আনুসঙ্গিক ব্যয় কিছুটা বেশি হলেও পরে কৃষকদের ব্যবস্থাপনায় চাষ শুরু হলে বিঘা প্রতি ব্যয় কমার বিপরীতে উৎপাদন বাড়ার সাথে সাথে আনুষাঙ্গিক খরচ কম হবে। তিনি জানান-ব্যতিক্রমধর্মী এই নতুন জাতের ধান ভাল ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সফলতার মুখ দেখতে পেলাম। তিনি আরো জানান-এই ধান জুলাই মাসের দ্বিতীয়ার্ধে ১২ থেকে ১৪ দিনের চারা রোপন করে ১০৫দিনে এই ধানটি কাটা হলো। কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক লুৎফর রহমান বলেন, প্রচলিত আমন ধানের জাতের চেয়ে এই ধানের উৎপাদন অনেক বেশি। তাছাড়া এই ধান চিকন ধানের অভাব মেটাবে। ফলে সকলের নিকট এই ধানের চাহিদা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাবে। তাছাড়াও এই ধানের গ্রোথ ভাল, অর্গানিক ফার্টিলাইজার বা জৈব সার ব্যবহার করে রাসায়নিক সারের ক্ষতি থেকে মুক্ত রাখা হয়েছে। যা মাটির গুনাগুন ধরে রাখতে সহায়ক হবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন