শনিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১২

আবারও অশান্ত হয়ে উঠেছে কুষ্টিয়া ॥ ৩১ বছরে ২০ চেয়ারম্যান ও রাজনীতিবিদ খুন

আরিফ মেহমুদ ॥ চরমপন্থিদের স্বর্গরাজ্য হিসেবে খ্যাত কুষ্টিয়া আবারও অশান্ত হয়ে উঠেছে। হঠাৎ করেই ফের তারা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। মঙ্গলবার দুপুরে কুমারখালীর পদ্মা নদীতে খোকসার আমবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা কৃষক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল ইসলাম এবং তার দুই সঙ্গী আনসার আলী ও ভুট্টোকে ফ্লিমি স্টাইলে গুলি ও জবাই করে হত্যা করেছে চরমপন্থি সন্ত্রাসীরা। শুধু তাই নয় চেয়ারম্যানের মাথা কেটে নিয়ে উল্লাস করেছে তারা। এতে নতুন করে জনমনে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এ ধরনের লোমহর্ষক ঘটনা প্রথম নয়, এর আগেও ঘটেছে একাধিকবার। জেলায় ৩১ বছরে ২ উপজেলা চেয়ারম্যানসহ ২০ জন চেয়ারম্যান এবং প্রায় অর্ধশতাধিক ইউপি সদস্য চরমপন্থি ও সন্ত্রাসীদের হাতে নির্মমভাবে খুন হয়েছেন। সূত্রে জানা গেছে, সন্ত্রাসী অধ্যুষিত কুষ্টিয়ায় জনপ্রতিনিধিদের উপর চরমপন্থি ও সন্ত্রাসীরা ক্ষুব্ধ। যে সব চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য খুন হয়েছেন তাদের অনেকেই চরমপন্থি-সন্ত্রাসীদের মদদ দাতা কিংবা গডফাদার। একটি নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে প্রতিপক্ষ গ্রুপের রোষানলে পড়ে জীবন হারাতে হয়েছে তাদেরকে। আবার কেউ কেউ চরমপন্থি-সন্ত্রাসীদের কর্মকাণ্ডে বাধা দেওয়ায় আক্রোশের শিকার হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে বেশ কিছু চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সরাসরি চরমপন্থি গ্রুপ পরিচালনা ও চরমপন্থিদের সাহায্য করেছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। সূত্রমতে, এ অঞ্চলে ৮টি চরমপন্থি গ্রুপ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে। কোনো জনপ্রতিনিধি এক গ্রুপকে সমর্থন করলে অন্য গ্রুপের টার্গেটে পরিণত হন। যাকে টার্গেট করা হয় প্রথমে তার কাছে ধার্য করা হয় মোটা অঙ্কের টাকা। দিতে ব্যর্থ হলে ঘোষণা করা হয় মৃত্যুদণ্ড। গত ৩১ বছরে জেলায় যে ২০ জন চেয়ারম্যান চরমপন্থি-সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হয়েছেন তারা হলেন, কুষ্টিয়া ইবি থানার আব্দালপুর ইনিয়নের চেয়ারম্যান খোদাদাত হোসেন মৃধা। ১৯৭৮ সালে গণবাহিনীর হাতে তিনি নিহত হন। জাসদ নেতা মুক্তিযোদ্ধা চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী দলীয় কোন্দল ও ব্যক্তি আক্রোশের শিকার হয়ে ১৯৮২ সালের ২২ মার্চ ইউনিয়নের চরপাড়া গ্রামে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন। কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার চেয়ারম্যান জাসদ নেতা মুক্তিযোদ্ধা মারফত আলী চরমপন্থিদের হাতে নিহত হন ১৯৯১ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি। ১৯৯৪ সালে গণবাহিনীর হাতে নিহত হন ইবি থানার ঝাউদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান ডা. আবদুল আজিজ। আওয়ামী লীগ নেতা চেয়ারম্যান আলী আকবর ১৯৯৭ সালে সদর উপজেলা চত্বরে চরমপন্থিদের গুলিতে নিহত হন। ১৯৯৮ সালে কুষ্টিয়া সার্কিট হাউসের সামনে গুলি করে হত্যা করা হয় ইউপি চেয়ারম্যান ও জাসদ নেতা আমিরুল ইসলাম আমুকে। ১৯৯৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি দৌলতপুর উপজেলার কালিদাসপুর স্কুল মাঠে চরমপন্থিরা ব্রাশফায়ার করে হত্যা করে কেন্দ্রীয় জাসদ নেতা মুক্তিযোদ্ধা কাজী আরেফ আহমেদসহ ৫ নেতাকে। এর মধ্যে ছিলেন দৌলতপুর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান জাসদ নেতা অ্যাড. ইয়াকুব আলী। ২০০০ সালের ১১ জুলাই সন্ত্রাসী গ্রুপ কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হাটশ হরিপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদ হোসেন সাচ্চুকে গুলি করে। পরে ১৪ জুলাই তিনি মারা যান। ২০০০ সালের ৫ নভেম্বর ঝাউদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান জাসদ নেতা আজিবর রহমানের বড় ভাই খয়বর আলীকে হত্যা করে চরমপন্থিরা। ২০১০ সালের ২৫ জুলাই কুমারখালীর কয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা জামিল হোসেন বাচ্চু সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হয়। সর্বশেষ মঙ্গলবার কুমারখালীর পদ্মা নদীতে চরমপন্থিরা গুলি করে হত্যা করেছে খোকসার আমবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান ও কৃষক লীগ নেতা নুরুল ইসলাম এবং তার দুই সঙ্গী আনসার আলী ও ভুট্টোকে। স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, নুরুল ইসলাম প্রথমে নিষিদ্ধ ঘোষিত চরমপন্থি সংগঠন বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির আঞ্চলিক নেতা হিসেবে কাজ করলেও পরে শ্রমজীবী মুক্তি আন্দোলনে যোগ দেন। কয়েক বছর আগে তিনি নিজ নামে বাহিনী গড়ে তোলেন। অপর একটি সূত্র জানায়, দুই বছর আগে নুরুল ইসলামের প্রতিপক্ষ গ্রুপের ক্যাডার মোতালেব মোল্লা ক্রসফায়ারে নিহত হয়। এর পিছনে নুরুল ইসলামের ইন্ধন ছিল বলে জনশ্রুতি রয়েছে। তার প্রতিশোধ নিতেই নুরুল ইসলামকে খুন করা হয়েছে বলে সূত্রের দাবি। এ হত্যা মিশনে মোতালেব মোলার ভাই তোফা ও রফি নেতৃত্ব দেন বলে জানা গেছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন