বুধবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১২

কুষ্টিয়ায় পুলিশি গ্রেপ্তার নাটকে প্রসুতির মৃত্যু

আরিফ মেহমুদ ॥ কুষ্টিয়ায় পুলিশি গ্রেপ্তার নাটকে পড়ে এক প্রসুতির মৃত্যু হয়েছে।  পুলিশি হয়রানির কারনে স্বামী হাসপাতালে পড়ে থাকা অসুস্থ স্ত্রীর কাছে যেতে পারেননি। ফলে সময়মতো স্ত্রীর শরীরে প্রয়োজনীয় রক্ত না দেওয়ার কারনে পরিণতিতে মৃত্যু ঘটে সদ্য মা হওয়া স্ত্রী রোকেয়া খাতুনের। পুলিশের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তুলেছেন কুষ্টিয়া শহরতলি মোল¬াতেঘরিয়া এলাকার ওয়াসিম শেখ। এ ঘটনায় মোল¬াতেঘরিয়া এলাকায় এখন শোকের মাতম। বিকেলে ওয়াসিমের স্ত্রী রোকেয়া খাতুনের লাশ নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও করেছে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। মোল¬াতেঘরিয়ার স্বামী ওয়াসিম শেখ জানান, গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে তাঁর স্ত্রী রোকেয়া খাতুনের প্রসব বেদনা ওঠে। তাৎক্ষনিকভাবে তাঁকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসবের কথা জানালে তিনি প্রয়োজনীয় ওষুধ কিনে দিয়ে বাড়ী ফিরে আসেন। স্ত্রীর পাশে রেখে আসেন প্রতিবেশী তাসলিমাকে। রাত দেড়টার দিকে ফোন দিয়ে তাঁকে জানানো হয়, তাঁর ছেলে হয়েছে। তাঁর স্ত্রীর জন্য রক্ত লাগবে। ওয়াসিম তখন দ্রুত হাসপাতালের উদ্দেশে হেঁটে রওনা হন। ওয়াসিম শেখ অভিযোগ করেন, রাত দুইটার দিকে পথে জেলখানা মোড় এলাকায় পুলিশ তাঁর পরিচয় ও বাইরে বের হওয়ার কারণ জানতে চায়। তিনি তাঁর স্ত্রীর কথা বলার পরও পুলিশের এসআই ওবাইদুর রহমান তাঁর কথায় কোনো গুরুত্ব না দিয়ে তাঁকে গাড়িতে তুলে নেন। তাঁকে ছেড়ে দিতে তিনি বারবার মিনতি করলেও পুলিশের সদস্যরা তাঁকে চুপ করে বসে থাকতে বলেন। প্রায় দুই ঘণ্টা শহরের বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে মজমপুর এলাকায় গাড়ি থামে। এরপর এক পুলিশ সদস্যের সঙ্গে রিক্সায় করে ওয়াসিমকে হাসপাতালে পাঠান ওই এসআই। এ সময় হাসপাতালের বিছানায় রক্তক্ষরণে যন্ত্রণায় ছটফট করছিলেন রোকেয়া খাতুন। রোকেয়ার পাশে থাকা তাসলিমা খাতুন জানান, রক্তের জন্য হাসপাতালের সেবিকারা ছুটোছুটি করছেন। ভোর চারটার দিকে হাসপাতালে পৌঁছে ওয়াসিম কোথাও রক্ত না পেয়ে নিজের ‘এ’ পজেটিভ রক্ত হাসপাতালে জমা দিয়ে ‘বি’ পজেটিভ রক্ত গ্রহণ করেন। ততক্ষণে রোকেয়া অচেতন হয়ে পড়েন। পাঁচটা ২০ মিনিটে রোকেয়াকে রক্ত দেওয়া হয়। আজ সকাল আটটার দিকে তিনি মারা যান। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে রাতের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসা কর্মকর্তা আরজ উল¬াহ জানান, প্রসবের পরপরই প্রসূতির রক্তক্ষরণ শুরু হয়। তাৎক্ষনিকভাবে সেবিকাদের রক্ত সরবরাহ করতে বলা হয়। কিন্তু সেবিকারা রোগীর কোনো লোককে খুঁজে পাননি। জরুরি অবস্থায় ব¬াড ব্যাংক থেকে রক্ত দেওয়ার বিধান আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে তাঁর জানা নেই। হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা তাপস কুমার সরকার বলেন, সাধারণত রোগীর লোকজনই রক্ত সরবরাহ করে থাকেন। রক্তের প্রয়োজন হলে রোগীর স্বজনের কাছ থেকে রক্ত নেওয়া হয়। না থাকলে তাঁদের কাছ থেকে রক্ত নিয়ে ব¬াড ব্যাংকে জমা রেখে প্রয়োজনীয় রক্ত দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া মডেল থানার এসআই ওবাইদুর রহমান জানান ‘ছেলেটাকে (ওয়াসিম) ভালো মনে হয়নি। তাই তাঁকে গাড়িতে ওঠানো হয়। শহরের কাস্টমস মোড় হয়ে মজমপুর রেলগেট এলাকায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।’ তিনি দাবি করেন, রাত তিনটা ১৫ মিনিটের দিকে মজমপুর রেলগেট থেকে ওয়াসিমকে রিক্সায় করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে জানতে পারেন তাঁর (ওয়াসিমের) স্ত্রী রক্তক্ষরণে মারা গেছেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন