নিজ সংবাদ ॥ যক্ষ্মা একটি জীবাণুঘটিত রোগ যা মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকুলোসিস নামক জীবাণুর আক্রমণ দ্বারা হয়ে থাকে। যক্ষ্মার জীবাণু খাবারের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে না এটা বাতাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে। যক্ষ্মা হলে রক্ষা নেই এ কথার ভিত্তি নেই। যক্ষ্মা রোগ বর্তমানে আতঙ্কের নয়, এটি নিয়মিত চিকিৎসা করে ওষুধ খেলে সম্পূর্ণ ভাল হয়। যক্ষ্মা একটি সংক্রামক রোগ, বিশেষ করে ফুসফুসের যক্ষ্মা সহজেই একজন থেকে আরেক জনের মধ্যে ছড়ায়। ফুসফুসের যক্ষ্মার আক্রান্ত রোগী বিনা চিকিৎসায় থাকলে তার হাঁচি-কাশির মাধ্যমে যক্ষ্মার জীবাণু বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। যা শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে সুস্থ্য ব্যক্তিকে আক্রান্ত করে। গতকাল বুধবার সকালে কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সভাকক্ষে স্বাস্থ্য বিভাগ ও ব্র্যাকের আয়োজনে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম সর্বস্তরের অংশগ্রহন শীর্ষক গোল টেবিল বৈঠকে বক্তারা এ সব কথা বলেন। কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন ডাঃ তরুণ কান্তি হালদারের সভাপতিত্বে গোল টেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়া জেলা শিক্ষা অফিসার নিখিল রঞ্জন চক্রবর্তী। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ তাপস কুমার সরকার, কুষ্টিয়া বক্ষ্মব্যাধি হাসপাতালে সহকারী মেডিকেল অফিসার ডাঃ হালিমা খুতুন, সিভিল সার্জন অফিসের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ আব্দুল হালিম, ব্র্যাক খুলনা কর্মকর্তা প্রীতি রঞ্জন দত্ত, কুষ্টিয়া জেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ডাঃ জেসমিন আখতার, জেলা তথ্য অফিসার তৌহিদুজ্জামান প্রমুখ। বক্তারা আরো বলেন,বিনামূল্যে যক্ষ্মা রোগ নির্ণয়ের জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে¬ক্স, বক্ষব্যাধি ক্লিনিক, বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, বিভাগীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, আরবান ক্লিনিক, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সামরিক হাসপাতাল, জাতীয় বক্ষব্যাধি ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল, জেলা সদর হাসপাতালে ইপিজেড, বিজিএমইএ, অন্যান্য শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং জেলাখানায় কফ পরীক্ষা করানো যাবে এবং রোগের চিকিৎসা সেবা সহ ওষুধ পাওয়া যাবে। যক্ষ্মা রোগ সনাক্ত হলে অবিলম্বে চিকিৎসা শুরু করতে হবে। নিয়মিত, সঠিকমাত্রায় এবং পূর্ণ মেয়াদে স্বাস্থ্যকর্মী কিংবা সেবীকার সামনে ওষুধ সেবন করতে হবে। এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, কুষ্টিয়া জেলাতে কফ সংগ্রহ কেন্দ্র প্রতিমাসে ১৭৬ টি, ল্যাবরেটরির সংখ্যা ১২ টি, স্বাস্থ্য সহকারীর সংখ্যা ২০৩ জন,স্বাস্থ্য কর্মীর সংখ্যা (ব্র্যাক) ৯৮৭ জন, চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা ১৩০১ জন। সভাপতির বক্তব্যে সিভিল সার্জন ডা.তরুণ কান্তি হালদার বলেন, কুষ্টিয়াতে ৯ জন শিশু আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা চলছে। ইতিমধ্যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বিড়ি-সিগারেট কারখানায় নারী ও শিশু শ্রমিক নিয়োগ করা যাবে না। এই মর্মে কারখানা মালিকদেরকে লিখিত ভাবে চিঠি দেয়া হয়েছে। এ পরও কোন কারখানা মালিক তার প্রতিষ্ঠানে নারী ও শিশু শ্রমিক নিয়োগ করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। গোল টেবিল বৈঠকে কুষ্টিয়ার স্থানীয় দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক, টিভি ও জাতীয় দৈনিক পত্রিকার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
বুধবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১২
কুষ্টিয়া র্যাবের সাথে সাংবাদিকদের মতবিনিময়
নিজ সংবাদ ॥ র্যাব-১২ কুষ্টিয়া ইউনিটের উপ-পরিচালকের সাথে কুষ্টিয়ার সর্বস্তরের সাংবাদিকদের এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বুধবার সকালে কুষ্টিয়া র্যাব ক্যাম্পে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এসময় র্যাব-১২ কুষ্টিয়া ইউনিটের নয়া উপ-পরিচালক লেঃ কমান্ডার কেএম তানভীর আনোয়ার বলেন, সাংবাদিকরা জাতির বিবেক, সমাজের দর্পণ। সাংবাদিকদের লেখনির মাধ্যমে জাতি সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার দিক নির্দেশনা পায়। মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আইন শৃংখলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত বাহিনী সর্বদা প্রস্তুত থাকে। দেশব্যাপী অপরাধ দমনে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন ‘র্যাব’ নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। অপরাধ দমনে এ বাহিনী আপোষহীন। মানুষের মধ্যে সচেতনতা বোধ জাগ্রত করতে সাংবাদিকরা গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে থাকে। অপরাধ দমনে সাংবাদিকদের সার্বিক সহযোগিতা করার আহবান জানান তিনি। মতবিনিময় সভায় জেলার সর্বস্তরের প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকগণ উপস্থিত ছিলেন।
কুষ্টিয়ায় পুলিশি গ্রেপ্তার নাটকে প্রসুতির মৃত্যু
আরিফ মেহমুদ ॥ কুষ্টিয়ায় পুলিশি গ্রেপ্তার নাটকে পড়ে এক প্রসুতির মৃত্যু হয়েছে। পুলিশি হয়রানির কারনে স্বামী হাসপাতালে পড়ে থাকা অসুস্থ স্ত্রীর কাছে যেতে পারেননি। ফলে সময়মতো স্ত্রীর শরীরে প্রয়োজনীয় রক্ত না দেওয়ার কারনে পরিণতিতে মৃত্যু ঘটে সদ্য মা হওয়া স্ত্রী রোকেয়া খাতুনের। পুলিশের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তুলেছেন কুষ্টিয়া শহরতলি মোল¬াতেঘরিয়া এলাকার ওয়াসিম শেখ। এ ঘটনায় মোল¬াতেঘরিয়া এলাকায় এখন শোকের মাতম। বিকেলে ওয়াসিমের স্ত্রী রোকেয়া খাতুনের লাশ নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও করেছে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। মোল¬াতেঘরিয়ার স্বামী ওয়াসিম শেখ জানান, গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে তাঁর স্ত্রী রোকেয়া খাতুনের প্রসব বেদনা ওঠে। তাৎক্ষনিকভাবে তাঁকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসবের কথা জানালে তিনি প্রয়োজনীয় ওষুধ কিনে দিয়ে বাড়ী ফিরে আসেন। স্ত্রীর পাশে রেখে আসেন প্রতিবেশী তাসলিমাকে। রাত দেড়টার দিকে ফোন দিয়ে তাঁকে জানানো হয়, তাঁর ছেলে হয়েছে। তাঁর স্ত্রীর জন্য রক্ত লাগবে। ওয়াসিম তখন দ্রুত হাসপাতালের উদ্দেশে হেঁটে রওনা হন। ওয়াসিম শেখ অভিযোগ করেন, রাত দুইটার দিকে পথে জেলখানা মোড় এলাকায় পুলিশ তাঁর পরিচয় ও বাইরে বের হওয়ার কারণ জানতে চায়। তিনি তাঁর স্ত্রীর কথা বলার পরও পুলিশের এসআই ওবাইদুর রহমান তাঁর কথায় কোনো গুরুত্ব না দিয়ে তাঁকে গাড়িতে তুলে নেন। তাঁকে ছেড়ে দিতে তিনি বারবার মিনতি করলেও পুলিশের সদস্যরা তাঁকে চুপ করে বসে থাকতে বলেন। প্রায় দুই ঘণ্টা শহরের বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে মজমপুর এলাকায় গাড়ি থামে। এরপর এক পুলিশ সদস্যের সঙ্গে রিক্সায় করে ওয়াসিমকে হাসপাতালে পাঠান ওই এসআই। এ সময় হাসপাতালের বিছানায় রক্তক্ষরণে যন্ত্রণায় ছটফট করছিলেন রোকেয়া খাতুন। রোকেয়ার পাশে থাকা তাসলিমা খাতুন জানান, রক্তের জন্য হাসপাতালের সেবিকারা ছুটোছুটি করছেন। ভোর চারটার দিকে হাসপাতালে পৌঁছে ওয়াসিম কোথাও রক্ত না পেয়ে নিজের ‘এ’ পজেটিভ রক্ত হাসপাতালে জমা দিয়ে ‘বি’ পজেটিভ রক্ত গ্রহণ করেন। ততক্ষণে রোকেয়া অচেতন হয়ে পড়েন। পাঁচটা ২০ মিনিটে রোকেয়াকে রক্ত দেওয়া হয়। আজ সকাল আটটার দিকে তিনি মারা যান। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে রাতের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসা কর্মকর্তা আরজ উল¬াহ জানান, প্রসবের পরপরই প্রসূতির রক্তক্ষরণ শুরু হয়। তাৎক্ষনিকভাবে সেবিকাদের রক্ত সরবরাহ করতে বলা হয়। কিন্তু সেবিকারা রোগীর কোনো লোককে খুঁজে পাননি। জরুরি অবস্থায় ব¬াড ব্যাংক থেকে রক্ত দেওয়ার বিধান আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে তাঁর জানা নেই। হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা তাপস কুমার সরকার বলেন, সাধারণত রোগীর লোকজনই রক্ত সরবরাহ করে থাকেন। রক্তের প্রয়োজন হলে রোগীর স্বজনের কাছ থেকে রক্ত নেওয়া হয়। না থাকলে তাঁদের কাছ থেকে রক্ত নিয়ে ব¬াড ব্যাংকে জমা রেখে প্রয়োজনীয় রক্ত দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া মডেল থানার এসআই ওবাইদুর রহমান জানান ‘ছেলেটাকে (ওয়াসিম) ভালো মনে হয়নি। তাই তাঁকে গাড়িতে ওঠানো হয়। শহরের কাস্টমস মোড় হয়ে মজমপুর রেলগেট এলাকায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।’ তিনি দাবি করেন, রাত তিনটা ১৫ মিনিটের দিকে মজমপুর রেলগেট থেকে ওয়াসিমকে রিক্সায় করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে জানতে পারেন তাঁর (ওয়াসিমের) স্ত্রী রক্তক্ষরণে মারা গেছেন।
সোমবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১২
কুষ্টিয়ার সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে সৈয়দ বেলাল হোসেন কথা নয়, কাজের মধ্য দিয়ে সব মানুষের মন জয় করতে চাই
আরিফ মেহমুদ ॥ কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেন বলেছেন, কথা নয়, কাজের মধ্যে দিয়ে সবার মন জয় করতে চাই। আমি বলছি না যে, সব কাজ একবারে করে দেব। অনেক সীমবদ্ধতা নিয়ে কাজ করতে হয়। আমার চেয়ারে বসলে আপনারাও হয়ত পারবেন না। তবে বড় সমস্যা চিহিৃত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা করব। এক্ষেত্রে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে আপনারায় আমাকে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করতে পারেন। গতকাল সোমবার সকালে জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে জেলা প্রশাসন আয়োজিত জেলার সর্বস্তরের সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বক্তবের আগে বিভিন্ন ঘটনায়-দূর্ঘটনায় নিহত শহীদ সাংবাদিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ও সম্প্রতি ঢাকা আশুলিয়ার মর্মান্তিক দূর্ঘটনায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ১মিনিট দাড়িয়ে নিরবতা পালন করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্কিব ড.মোল্লা মাহমুদ হাসান, নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট এসএম জামাল আহমেদ ও নবী নেওয়াজ। নয়া জেলা প্রশাসক এ সময় সাংবাদিকদের সার্বিক সহযোগিতা চেয়ে বলেন,সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই আমরা যার যার অবস্থানে থেকে দেশ ও জাতির উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। কাজ করলে তার সমালোচনা থাকবে। তবে সেটি যেন নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি ও সামাজিক ভাবমুর্তি বিনষ্ট না করে সেদিকে লক্ষ রেখে সমাজ তথা দেশ ও জাতির কল্যাণে গঠনমূলক সমালোচনা হতে হবে। একে অপরের দোষ ত্র“টি না ধরে পেশাগত মানোন্নয়নে নিজেদের মধ্যে সহাবস্থান ও সৌহার্দ্যপূর্ণ মনোভাব উত্তরোত্তর বৃদ্ধি করতে হবে। কারো পক্ষ নিয়ে নিজেদের মধ্যে দুরত্ব তৈরী করবেন না এবং কাজের নামে তোষামোদি করে অচথা মূল্যবান সময় নষ্ট করার চেষ্টা করবেন না। সাংবাদিক মহল সমাজের দর্পন। তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য অনেক। পেশাদারিত্বের অর্পিত দায়িত্ব পালন করলেই সমাজের সঠিক চিত্র উঠে আসবে। আমরা অনেক পিছিয়ে গেছি। সবার সার্বিক সহযোগিতা নিয়ে জেলার উন্নয়নে সামনে এগিয়ে যেতে চাই। আমি আমার কাজের মধ্য দিয়েই জেলাবাসী তথা সব মানুষের মন জয় করতে চাই। সভায় উম্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন প্রবীন সাংবাদিক সাপ্তাহিক ইস্পাত পত্রিকার সম্পাদক আলহাজ্ব ওয়ালিউল বারী চৌধুরী, আইএনবির স্টাফ রিপোর্টার মজিবুল শেখ, সংবাদের জেলা প্রতিনিধি মিজানুর রহমান লাকী, এনটিভির স্টাফ রিপোর্টার ফারুক আহমেদ পিনু, দৈনিক কুষ্টিয়া বার্তার সম্পাদক খাদিমূল ইসলাম, আরশীনগর সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম বিপ্লব্, ইত্তেফাকের জেলা প্রতিনিধি মুস্তাফিজুর রহমান মঞ্জু, নয়া দিগন্ত প্রতিনিধি আফম নুরুল কাদের, ইন্ডিপেনডেন্ট পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি মীর আরেফিন বাবু, খবর পত্রের জেলা প্রতিনিধি শেখ আহমেদ আলী, দৈনিক ইনকিলাবের স্টাফ রিপোর্টার আলী আহসান পান্না, কুষ্টিয়ার খবরের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক লুৎফর রহমান কুমার, চ্যানেল টুয়েন্টি ফোরের স্টাফ রিপোর্টার ও বাংলানিউজ প্রতিনিধি শরীফ বিশ্বাস, সমকালের জেলা প্রতিনিধি সাজ্জাদ রানা, প্রথম আলো প্রতিনিধি তৌহিদী হাসান, দৈনিক আজকের সুত্রপাতের সম্পাদক আক্তার হোসেন ফিরোজ, কুষ্টিয়া প্রতিদিনের সম্পাদক ও জিটিভি প্রতিনিধি সোহেল রানা, সময় টিভি প্রতিনিধি এমএ রাশেদ, জনতা প্রতিনিধি শরীফ মাহমুদ। সাংবাদিকরা এ সময় তাদের কুষ্টিয়ার বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন। পেশাগত দায়িত্ব পালন কালে সার্বিক সহযোগিতা চান জেলা প্রশাসকের নিকট।
এ সময় সাংবাদিকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, আন্দোলনের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও চ্যানেল আইয়ের প্রতিনিধি আনিসুজ্জামান ডাবলু, বাংলা বাজার পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি এ.এইচ.এম. আরিফ, একুশে টিভি ও বাংলাদেশ প্রতিদিনের জেলা প্রতিনিধি জহুরুল ইসলাম, মাটির পৃথিবী সম্পাদক এম এ জিহাদ, সময়ের কাগজের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক নরুন্নবী বাবু, হাওয়ার ব্যবস্থপনা সম্পাদক ও মাইটিভি প্রতিনিধি আব্দুর রাজ্জাক বাচ্চু, বিডি নিউজ প্রতিনিধি হাসান আলী, সকালের খবরের জেলা প্রতিনিধি পিএম সিরাজ, আরটিভির স্টাফ রিপোর্টার শেখ হাসান বেলাল, দিগন্ত টিভি প্রতিনিধি খালিদ হাসান সিপাই, কুষ্টিয়ার খবরের সম্পাদক এএম জুবায়েদ রিপন, মোহনা টিভি প্রতিনিধি মওদুদ রানা, দেশটিভি প্রতিনিধি নিজাম উদ্দিন, দৈনিক বর্তমানের সম্পাদক অভিজিৎ সিংহ রায় পাপ্পু, দেশতথ্যের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক এনামূল হক, ব্যবস্থপনা সম্পাদক নেওয়াজ চৌধুরী মিতুল, নির্বাহী সম্পাদক মোমেছুর রহমান, কুষ্টিয়ার খবরের ব্যবস্থপনা সম্পাদক সেলিম রেজা, করতোয়া প্রতিনিধি এনামূল হক, আজকের আলোর বার্তা সম্পাদক দেবাশীষ দত্ত, নবরাজের জেলা প্রতিনিধি এসএম আকরাম, বাংলার চোখের প্রতিনিধি সুজন কর্মকার, টেলিভিশন ক্যামেরাম্যান এসোসিয়েশনের সভাপতি নিয়ামূল হক ও সাধারন সম্পাদক আশিফুজ্জামান সারফু প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, কুষ্টিয়ার মত একটি বড় জেলার উন্নয়নে কাজ করতে গেলে ভুল ত্র“টি হয়তো থাকবে। কোন কিছু তুলে ধরার আগে আমাকে ভুল সংশোধনের সুযোগ দিবেন। আমার কর্মকান্ড দিয়েই আমার যোগ্যতা জেলাবাসীর কাছে প্রমান করতে চাই। আগের কিংবা পরের ব্যক্তির কর্মকান্ডের সাথে মিলবে না। কারণ প্রত্যেকেরই নিজ নিজ স্বাতন্ত্র কর্মপরিধি থাকে। জিলা স্কুলে ভর্তি, হাউজি খেলার অর্থবণ্টন, জেলা ক্রীড়া সংস্থা, লালন একাডেমি সহ জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তার দূর্নীতি সহ সকল প্রকার সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বন্ধে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসায়ীরা কোন গোষ্ঠী ও দলের হতে পারে না। হুশিয়ারি উচ্চারণ করে জেলা প্রশাসক বলেন, এদের সাথে কোন আপোষ হবে না। সাংবাদিকদের মধ্যে পেশাগত দায়িত্ব পালনে যে দুরত্ব তৈরী বা সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে তার সমাধানের চেষ্টা করবো। আপনার জেলা প্রশাসনের কর্মকান্ড নিয়ে গঠন মূল সমালোচনা করলে সে সকল সমস্য সমাধানে ব্যবস্থা নেয়া সহজ হবে। আমার কর্মকান্ড ও ব্যর্থতা নিয়ে আমি দায়িত্বে থাকাকালিন সমালোচনা করবেন। আমাকে বেশি বেশি ব্যস্ত রাখবেন। তাহলে সব কাজ সহজ হয়ে যাবে। আপনাদের লেখনির মাধ্যমে সঠিক সমালোচনা আমার চলার পথের পাথেয় হয়ে থাকবে।
এ সময় সাংবাদিকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, আন্দোলনের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও চ্যানেল আইয়ের প্রতিনিধি আনিসুজ্জামান ডাবলু, বাংলা বাজার পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি এ.এইচ.এম. আরিফ, একুশে টিভি ও বাংলাদেশ প্রতিদিনের জেলা প্রতিনিধি জহুরুল ইসলাম, মাটির পৃথিবী সম্পাদক এম এ জিহাদ, সময়ের কাগজের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক নরুন্নবী বাবু, হাওয়ার ব্যবস্থপনা সম্পাদক ও মাইটিভি প্রতিনিধি আব্দুর রাজ্জাক বাচ্চু, বিডি নিউজ প্রতিনিধি হাসান আলী, সকালের খবরের জেলা প্রতিনিধি পিএম সিরাজ, আরটিভির স্টাফ রিপোর্টার শেখ হাসান বেলাল, দিগন্ত টিভি প্রতিনিধি খালিদ হাসান সিপাই, কুষ্টিয়ার খবরের সম্পাদক এএম জুবায়েদ রিপন, মোহনা টিভি প্রতিনিধি মওদুদ রানা, দেশটিভি প্রতিনিধি নিজাম উদ্দিন, দৈনিক বর্তমানের সম্পাদক অভিজিৎ সিংহ রায় পাপ্পু, দেশতথ্যের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক এনামূল হক, ব্যবস্থপনা সম্পাদক নেওয়াজ চৌধুরী মিতুল, নির্বাহী সম্পাদক মোমেছুর রহমান, কুষ্টিয়ার খবরের ব্যবস্থপনা সম্পাদক সেলিম রেজা, করতোয়া প্রতিনিধি এনামূল হক, আজকের আলোর বার্তা সম্পাদক দেবাশীষ দত্ত, নবরাজের জেলা প্রতিনিধি এসএম আকরাম, বাংলার চোখের প্রতিনিধি সুজন কর্মকার, টেলিভিশন ক্যামেরাম্যান এসোসিয়েশনের সভাপতি নিয়ামূল হক ও সাধারন সম্পাদক আশিফুজ্জামান সারফু প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, কুষ্টিয়ার মত একটি বড় জেলার উন্নয়নে কাজ করতে গেলে ভুল ত্র“টি হয়তো থাকবে। কোন কিছু তুলে ধরার আগে আমাকে ভুল সংশোধনের সুযোগ দিবেন। আমার কর্মকান্ড দিয়েই আমার যোগ্যতা জেলাবাসীর কাছে প্রমান করতে চাই। আগের কিংবা পরের ব্যক্তির কর্মকান্ডের সাথে মিলবে না। কারণ প্রত্যেকেরই নিজ নিজ স্বাতন্ত্র কর্মপরিধি থাকে। জিলা স্কুলে ভর্তি, হাউজি খেলার অর্থবণ্টন, জেলা ক্রীড়া সংস্থা, লালন একাডেমি সহ জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তার দূর্নীতি সহ সকল প্রকার সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বন্ধে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসায়ীরা কোন গোষ্ঠী ও দলের হতে পারে না। হুশিয়ারি উচ্চারণ করে জেলা প্রশাসক বলেন, এদের সাথে কোন আপোষ হবে না। সাংবাদিকদের মধ্যে পেশাগত দায়িত্ব পালনে যে দুরত্ব তৈরী বা সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে তার সমাধানের চেষ্টা করবো। আপনার জেলা প্রশাসনের কর্মকান্ড নিয়ে গঠন মূল সমালোচনা করলে সে সকল সমস্য সমাধানে ব্যবস্থা নেয়া সহজ হবে। আমার কর্মকান্ড ও ব্যর্থতা নিয়ে আমি দায়িত্বে থাকাকালিন সমালোচনা করবেন। আমাকে বেশি বেশি ব্যস্ত রাখবেন। তাহলে সব কাজ সহজ হয়ে যাবে। আপনাদের লেখনির মাধ্যমে সঠিক সমালোচনা আমার চলার পথের পাথেয় হয়ে থাকবে।
বৃহস্পতিবার, ২২ নভেম্বর, ২০১২
ডিসি সৈয়দ বেলাল হোসেন জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের প্রত্যাশা পুরণে কাজ করে যাব
আরিফ মেহমুদ ॥ কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেন বলেছেন, আমাদের মহান স্বাধীনতার জন্য পাকহানাদারদের সাথে ৯ মাস সশস্ত্র রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে করে স্বাধীনতা অর্জন করেছে দেশের সূর্য্য সন্তান মুক্তিযোদ্ধারা। দেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিবক ৭মার্চের আহবানে সাড়া দিয়ে বাংলার দামাল ছেলেরা মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে বুকের তাজা রক্ত দিয়ে এদেশ থেকে চিরশুত্র“ পাকিস্তানী হানাদারদের উৎখাত করে প্রিয় মাতৃভূমিকে মুক্ত করেছিল। বিগত দিনে সেই মহান মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস আজকের প্রজন্মের কাছে তুলে না ধরার কারনে সেদিন তারা যে আশা ও প্রত্যাশা নিয়ে এদেশ স্বাধীন করেছিল তা পুরণ হয়নি আজো। কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক হিসেবে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের দাবী-দাওয়া বাস্তবায়নে ও তাদের আশা-প্রত্যাশা পুরণে কাজ করে যাব। জেলা প্রশাসকের সাথে দেখা করতে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কোন অনুমোতি লাগবেনা থাকবেনা কোন সময় সূচী আমার অফিসের সামনে। কুষ্টিয়া জেলার সাধারণ জনগণসহ মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আমার দুয়ার খোলা থাকবে সব সময়। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে কুষ্টিয়া জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড ইউনিটের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। শহীদদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ১মিনিট দাড়িয়ে নিরবতা পালনের মধ্য দিয়ে মতবিনিময় সভার কাজ শুরু করা হয়। ৬ উপজেলা কমান্ডার ও ডেপুটি কমান্ডারগণ নবনিযুক্ত জেলা প্রশাসককে একে একে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা দিয়ে বরন করে নেন কুষ্টিয়া সদর, কুমারখালী, মিরপুর, দৌলতপুর, কুষ্টিয়া পৌর আহবায়কবৃন্দ। সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আশরাফুল ইসলাম, কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোল্লা মাহমুদ হাসান, কুষ্টিয়া জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড ইউনিটের কমান্ডার নাছিম উদ্দিন আহমেদ, ডেপুটি কমান্ডার আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম, হাজী রফিকুল আলম টুকু, কুষ্টিয়া সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবু তৈয়ব, ডেপুটি কমান্ডার মোশাররফ হোসেন, দৌলতপুর উপজেলার ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার আনারুল ইসলাম, ডেপুটি কমান্ডার নাজমুল হুদা, ভেড়ামারা উপজেলা কমান্ডার এ্যাড.আলম জাকারিয়া টিপু, ডেপুটি কমান্ডার মাহাবুবুল ইসলাম, মিরপুর উপজেলা কমান্ডার আফতাব উদ্দিন খান, ডেপুটি কমান্ডার ডাঃ চাঁদ আলী, খোকসা উপজেলা কমান্ডার ফজলুল হক, ডেপুটি কমান্ডার আলাউদ্দিন, কুমারখালি উপজেলা কমান্ডার আমিরুল ইসলাম, ডেপুটি কমান্ডার চাষী ভাইসহ সকল উপজেলা ও ইউনিয়নের নির্বাচিত মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও ডেপুটি কমান্ডারগণ। জেলা প্রশাসক তার বক্তব্যে আরো বলেন,স্বাধীনতার পর আজো দেশের সূর্যসৈনিক মুক্তিযুদ্ধারা যে ভাবে মর্যাদাবান হওয়ার কথা ছিল,সেভাবে মর্যাদা পাননি হননি সম্মানিত। মুক্তিযুদ্ধাদের সঠিকভাবে কোন সরকারই মূল্যায়ন করেনি কিংবা রাষ্ট্রকর্তৃক মূল্যায়িত হয়নি। স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্যা কন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা’র সরকার সূর্যসৈনিক মুক্তিযুদ্ধাদের যথাযথ মর্যাদার সাথে মূল্যায়ন করে চলেছেন এবং আগামীতে তাদের উত্তরসূরী পরিবারকে মূল্যায়নের ঘোষনা দিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধারা স্বাধীন দেশ প্রতিষ্ঠা করেছিল বলেই আজ আমার মত মুক্তিযোদ্ধার সন্তান জেলা প্রশাসক হতে পেরেছি। স্বাধীনতার কারনে বাঙালি জাতিসত্বার বিকাশ ঘটেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে যে সমস্ত কাজ করা প্রয়োজন আমি তা আন্তরিকভাবে করব।
মঙ্গলবার, ২০ নভেম্বর, ২০১২
কুষ্টিয়া প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময়ে সৈয়দ বেলাল হোসেন
আরিফ মেহমুদ ॥ কুষ্টিয়ার নবনিযুক্ত জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেন বলেছেন, অন্যের কাজের সমালোচনা না করে আমরা নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যেন নিষ্ঠার সাথে পালন করি। কর্মক্ষেত্রে একে অপরের প্রতিদ্বন্দী না হয়ে পরস্পর সহযোগি বন্ধু হয়ে উঠতে হবে। নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের প্রতি গুরুত্ব বাড়াতে হবে। আপনার ব্যবহারে জেলা প্রশাসনে সেবা নিতে আসা জনগণ যেন কোনভাবেই হয়রানীর শিকার না হয়। জনগণের জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছি। তাই জেলা প্রশাসকের সাথে দেখা করা কোন সময় সূচী আমার অফিসের সামনে থাকবে না। কুষ্টিয়া জেলার সাধারণ জনগণ তথা জেলা প্রশাসনের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আমার দুয়ার খোলা থাকবে সব সময়। জেলা প্রশাসনের কর্মকর্র্তা-কর্মচারীরা আমার আপন ঘরের লোক। আমার কাছে সকল কর্মকর্র্তা-কর্মচারীর সমান গুরুত্ব পাবেন। জেলা প্রশাসনের সুনাম রক্ষা করা আমার আপনার সবার দায়িত্ব সমান। যে কোন সমস্য আমরাই সমাধান করে সামনের দিকে এগিয়ে যাব। প্রশাসনের ভাবমূর্তি নষ্ট করলে সেটির জবাবদিহিতা তাকে করতে হবে। প্রজাতন্ত্রের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর দায়িত্ব জনগণের সেবা নিশ্চিত করা। জনগণের দোরগড়ায় জেলা প্রশাসনসহ সকল উপজেলা প্রশাসন সার্বক্ষনিক জনকল্যাণে সেবা পৌছে দিতে নিবেদিত থাকবে। প্রত্যেক অফিস কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দেশ ও জাতির কল্যাণে নিজেদেরকে সব সময় সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করতে হবে। মনে রাখতে হবে সততায় সর্বকৃষ্ট পন্থা। গত মঙ্গলবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব) আশরাফুল ইসলাম। সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নবনিযুক্ত কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোল্লা মাহমুদ হাসান, কুষ্টিয়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ বেগম, ভেড়ামার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজিবুল ইসলাম, মিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মঞ্জুর হাফিজ, দৌলতপুর উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা ইকবাল আখতার, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নবী নেওয়াজ, এসএম জামাল আহমেদ, মাহমুদা পারভীন, মৌসুমি আফরেদি, জেলা ত্রাণ ও পূনর্বাসন কর্মকর্তা বিশ্বনাথ পাল সহ কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ। আলোচনা শুরুর আগে কুষ্টিয়ার নবনিযুক্ত জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেন কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে কুশল বিনিময় করেন ও পরিচিত হন। তিনি জেলার উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এবং পিছিয়ে পড়া কুষ্টিয়াকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে সংশ্লিষ্ট যে সকল দপ্তর অধিদপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ অংশীদারিত্ব করছেন তাদের আরো সক্রিয় ভূমিকা রাখার আহবান জানান ও সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।
রবিবার, ১৮ নভেম্বর, ২০১২
দৌলতপুরে বৃত্তি প্রদানে বক্তারা,জাতিকে সমৃদ্ধ করতে শিক্ষার কোন বিকল্প নাই
আরিফ মেহমুদ ॥ একটি জাতিকে সমৃদ্ধ করতে হলে শিক্ষার কোন বিকল্প নাই। আজকের মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের পড়া লেখা শেষ করে সমাজের আদর্শ মানুষ হিসেবে দেশ ও জাতির কল্যাণে নিজেদেরকে আত্মনিয়োগ করতে হবে। সমাজের প্রতি এ প্রজন্মের মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের দায়িত্ব অনেক। আমরা সবাই দেশ ও জাতির কাছে দায়বদ্ধ। সেই দায়িত্ব বোধ থেকেই আজকে আরমা ওয়েলফেয়ার সোসাইটি মেধাবী অথচ গরীব ছাত্র-ছাত্রীরা যাতে অকালেই ঝরে না পড়ে, সে দিকে লক্ষ্য রেখেই তাদের পড়া-লেখায় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। আগামী দিনের নেতৃত্ব দানকারী আজকের কমলমতি মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদেরকে আধুনিক প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানসম্মত শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে। আগামী প্রজন্মদেরকে সু-শিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারলেই ডিজিটাল বাংলাদেশ ও দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব হবে এবং তারা সমাজ ও রাষ্ট্রের কল্যাণ বয়ে আনবে। গতকাল রবিবার দুপুরে দৌলতপুর উপজেলা অডিটরিয়াম মিলনায়তনে আরমা ওয়েলফেয়ার সোসাইটির আয়োজনে মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের আব্দুর রাজ্জাক শিক্ষা বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলা চেয়ারম্যান হারেজ উদ্দিন এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে অতিথিদের ফুলের তোড়া দিয়ে বরণ করে নেন আব্দুর রাজ্জাক শিক্ষা বৃক্তিপ্রাপ্ত মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরা।কোরআন তেলওয়াতের মধ্যে দিয়ে মূল অনুষ্ঠান শুরু করা হয়। দৌলতপুর উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা ইকবাল আখতারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ডোনার স্পিকার হিসেবে বক্তব্য রাখেন আরমা গ্র“প অব কোম্পানীজ ও আরমা ওয়েলফেয়ার সোসাইটির চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন দৌলতপুর থানার ওসি জাহির হোসেন, দৌলতপুর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ফজিলাতুন নেছা, জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের ডেপুটি কমান্ডার আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম গেরিলা। এতে বক্তব্য রাখেন জাসদ নেতা আজিবর রহমান, বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ও সাংবাদিক আবুল কালাম আজাদ, সাংবাদিক শরীফুল ইসলাম। অভিভাবকদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন মথুরাপুর পিপলস ডিগ্রী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধক্ষ্য আবু সাইদ মোহাম্মদ আজমল হোসেন। প্রাথমিক শিক্ষকদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন শিক্ষক নেতা ফিরোজ খান নুন, মাধ্যমিক শিক্ষকদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন মাষ্টার মজিবর রহমান ও বিডিএস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইয়াকুব আলী। বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে বক্তব্য রাখে বৈভব সরকার ও আব্দুল্লাহ আল মাসুম প্রমুখ। ডোনার স্পিকার হিসেবে আরমা গ্র“প অব কোম্পানীজ ও আরমা ওয়েলফেয়ার সোসাইটির চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক তার বক্তব্যে বলেন, শিক্ষা আমাদের মৌলিক অধিকার। যে সব দেশ আজ উন্নতির শিখরে অবস্থান করছে তার ভিত্তিমুলে কিংবা নেপথ্যে রয়েছে শিক্ষা। তাই দেশ ও জাতির কল্যানে শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা প্রশ্নাতীত। আগামী দিনের নেতৃত্ব দানকারী আজকের কমলমতি মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদেরকে আধুনিক প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানসম্মত শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে। আগামী প্রজন্মদেরকে সু-শিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারলেই ডিজিটাল বাংলাদেশ ও দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব হবে এবং তারা সমাজ ও রাষ্ট্রের কল্যাণ বয়ে আনবে। আজকের পৃথিবীতে ডিজিটাল বাংলাদেশ নামে এ দেশের উন্নতি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির চরম পরাকাষ্ঠে যে বিষয়টি উল্লে¬খযোগ্য তাহলো এ দেশের ছাত্র-ছাত্রীদের মেধাকে সম্পদে পরিণত করতে হবে। আরমা ওয়েলফেয়ার সোসাইটি মেধাবী অথচ গরীব ছাত্র-ছাত্রীরা যাতে অকালেই ঝরে না পড়ে, সে দিকে লক্ষ্য রেখেই তাদের পড়া-লেখায় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। মেধাবী গরীব ছাত্র-ছাত্রীদের মেধাকে আগামীতে ধরে রাখতে এই উদ্যোগ নিয়েছে। বৃত্তির টাকা সামান্য কিন্তু উদ্যোগ মহৎ ও বড়। এই সামান্য অনুদান নিয়েই তোমাদেরকেই গড়তে হবে আগামীর প্রযুক্তির পৃথিবী। আলোচনা শেষে প্রধান অতিথি সহ অন্যান্য অতিথিবৃন্দ পঞ্চম শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণীর বৃত্তিপ্রাপ্ত ১৩৬ জন মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে বৃত্তির অনুদান হিসেবে ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা ও বিশেষ সম্মাননা হিসেবে আরমা ওয়েলফেয়ার সোসাইটির চেয়ারম্যান স্বাক্ষরিত একটি সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। উল্লেখ্য, শিক্ষার গুনগত মান উন্নয়নে ও দারিদ্রতা শিক্ষা ক্ষেত্রে কোন বাধা নয় এই শ্লোগানকে বাস্তবায়নে আরমা ওয়েলফেয়ার সোসাইটি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর ভেড়ামারা ও মিরপুর উপজেলার গোন্ডি ছাড়িয়ে রাজশাহী জেলার চারঘাট, বাঘা ও নাটোর জেলার লালপুর উপজেলার দরিদ্র অথচ মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝেও বিশেষ সম্মাননা ও বৃত্তি প্রদান করে আসছে। স্বাস্থ্য খাতে দিনাজপুরের অরবিন্দ মা ও শিশু হাসপাতালে অনুদান প্রদান করছেন। কুষ্টিয়া শিশু হাসপাতালে আব্দুর রাজ্জাক নামে একটি ওয়ার্ড রয়েছে। এছাড়াও প্রতি বছর গরীব অথচ মেধাবী ৫০ জন ছাত্র-ছাত্রীর সমস্ত পড়া-লেখার ব্যয়ভার বহন করেন আরমা ওয়েলফেয়ার সোসাইটির চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক। অনুষ্ঠানটি সার্বিক উপস্থাপনা ও পরিচালনা করেন দৌলতপুর ডিগ্রি কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম সরকার।
শনিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১২
আবারও অশান্ত হয়ে উঠেছে কুষ্টিয়া ॥ ৩১ বছরে ২০ চেয়ারম্যান ও রাজনীতিবিদ খুন
আরিফ মেহমুদ ॥ চরমপন্থিদের স্বর্গরাজ্য হিসেবে খ্যাত কুষ্টিয়া আবারও অশান্ত হয়ে উঠেছে। হঠাৎ করেই ফের তারা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। মঙ্গলবার দুপুরে কুমারখালীর পদ্মা নদীতে খোকসার আমবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা কৃষক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল ইসলাম এবং তার দুই সঙ্গী আনসার আলী ও ভুট্টোকে ফ্লিমি স্টাইলে গুলি ও জবাই করে হত্যা করেছে চরমপন্থি সন্ত্রাসীরা। শুধু তাই নয় চেয়ারম্যানের মাথা কেটে নিয়ে উল্লাস করেছে তারা। এতে নতুন করে জনমনে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এ ধরনের লোমহর্ষক ঘটনা প্রথম নয়, এর আগেও ঘটেছে একাধিকবার। জেলায় ৩১ বছরে ২ উপজেলা চেয়ারম্যানসহ ২০ জন চেয়ারম্যান এবং প্রায় অর্ধশতাধিক ইউপি সদস্য চরমপন্থি ও সন্ত্রাসীদের হাতে নির্মমভাবে খুন হয়েছেন। সূত্রে জানা গেছে, সন্ত্রাসী অধ্যুষিত কুষ্টিয়ায় জনপ্রতিনিধিদের উপর চরমপন্থি ও সন্ত্রাসীরা ক্ষুব্ধ। যে সব চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য খুন হয়েছেন তাদের অনেকেই চরমপন্থি-সন্ত্রাসীদের মদদ দাতা কিংবা গডফাদার। একটি নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে প্রতিপক্ষ গ্রুপের রোষানলে পড়ে জীবন হারাতে হয়েছে তাদেরকে। আবার কেউ কেউ চরমপন্থি-সন্ত্রাসীদের কর্মকাণ্ডে বাধা দেওয়ায় আক্রোশের শিকার হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে বেশ কিছু চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সরাসরি চরমপন্থি গ্রুপ পরিচালনা ও চরমপন্থিদের সাহায্য করেছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। সূত্রমতে, এ অঞ্চলে ৮টি চরমপন্থি গ্রুপ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে। কোনো জনপ্রতিনিধি এক গ্রুপকে সমর্থন করলে অন্য গ্রুপের টার্গেটে পরিণত হন। যাকে টার্গেট করা হয় প্রথমে তার কাছে ধার্য করা হয় মোটা অঙ্কের টাকা। দিতে ব্যর্থ হলে ঘোষণা করা হয় মৃত্যুদণ্ড। গত ৩১ বছরে জেলায় যে ২০ জন চেয়ারম্যান চরমপন্থি-সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হয়েছেন তারা হলেন, কুষ্টিয়া ইবি থানার আব্দালপুর ইনিয়নের চেয়ারম্যান খোদাদাত হোসেন মৃধা। ১৯৭৮ সালে গণবাহিনীর হাতে তিনি নিহত হন। জাসদ নেতা মুক্তিযোদ্ধা চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী দলীয় কোন্দল ও ব্যক্তি আক্রোশের শিকার হয়ে ১৯৮২ সালের ২২ মার্চ ইউনিয়নের চরপাড়া গ্রামে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন। কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার চেয়ারম্যান জাসদ নেতা মুক্তিযোদ্ধা মারফত আলী চরমপন্থিদের হাতে নিহত হন ১৯৯১ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি। ১৯৯৪ সালে গণবাহিনীর হাতে নিহত হন ইবি থানার ঝাউদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান ডা. আবদুল আজিজ। আওয়ামী লীগ নেতা চেয়ারম্যান আলী আকবর ১৯৯৭ সালে সদর উপজেলা চত্বরে চরমপন্থিদের গুলিতে নিহত হন। ১৯৯৮ সালে কুষ্টিয়া সার্কিট হাউসের সামনে গুলি করে হত্যা করা হয় ইউপি চেয়ারম্যান ও জাসদ নেতা আমিরুল ইসলাম আমুকে। ১৯৯৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি দৌলতপুর উপজেলার কালিদাসপুর স্কুল মাঠে চরমপন্থিরা ব্রাশফায়ার করে হত্যা করে কেন্দ্রীয় জাসদ নেতা মুক্তিযোদ্ধা কাজী আরেফ আহমেদসহ ৫ নেতাকে। এর মধ্যে ছিলেন দৌলতপুর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান জাসদ নেতা অ্যাড. ইয়াকুব আলী। ২০০০ সালের ১১ জুলাই সন্ত্রাসী গ্রুপ কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হাটশ হরিপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদ হোসেন সাচ্চুকে গুলি করে। পরে ১৪ জুলাই তিনি মারা যান। ২০০০ সালের ৫ নভেম্বর ঝাউদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান জাসদ নেতা আজিবর রহমানের বড় ভাই খয়বর আলীকে হত্যা করে চরমপন্থিরা। ২০১০ সালের ২৫ জুলাই কুমারখালীর কয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা জামিল হোসেন বাচ্চু সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হয়। সর্বশেষ মঙ্গলবার কুমারখালীর পদ্মা নদীতে চরমপন্থিরা গুলি করে হত্যা করেছে খোকসার আমবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান ও কৃষক লীগ নেতা নুরুল ইসলাম এবং তার দুই সঙ্গী আনসার আলী ও ভুট্টোকে। স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, নুরুল ইসলাম প্রথমে নিষিদ্ধ ঘোষিত চরমপন্থি সংগঠন বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির আঞ্চলিক নেতা হিসেবে কাজ করলেও পরে শ্রমজীবী মুক্তি আন্দোলনে যোগ দেন। কয়েক বছর আগে তিনি নিজ নামে বাহিনী গড়ে তোলেন। অপর একটি সূত্র জানায়, দুই বছর আগে নুরুল ইসলামের প্রতিপক্ষ গ্রুপের ক্যাডার মোতালেব মোল্লা ক্রসফায়ারে নিহত হয়। এর পিছনে নুরুল ইসলামের ইন্ধন ছিল বলে জনশ্রুতি রয়েছে। তার প্রতিশোধ নিতেই নুরুল ইসলামকে খুন করা হয়েছে বলে সূত্রের দাবি। এ হত্যা মিশনে মোতালেব মোলার ভাই তোফা ও রফি নেতৃত্ব দেন বলে জানা গেছে।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ফের সংগঠিত হচ্ছে চরমপন্থিরা
আরিফ মেহমুদ ॥ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে ফের সংগঠিত হচ্ছে চরমপন্থি সংগঠনগুলো। সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা সহ বিভিন্ন সূত্রে খবর পাওয়া গেছে, আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে নতুনভাবে সংগঠিত হচ্ছে ৯টি চরমপন্থি সংগঠন। ’৯৬ মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে চরমপন্থিদের আত্মসমর্পণ এবং র্যাব-পুলিশের অব্যাহত অভিযান ও ক্রসফায়ারে শীর্ষ চরমপন্থি নেতারা নিহত হওয়ায় কোণঠাসা হয়ে পড়ে চরমপন্থি সংগঠনগুলো। শীর্ষ নেতাদের একটি অংশ ক্রসফায়ারে নিহত হয়? আরেকটি অংশ আত্মগোপন করে পাশ্বর্র্বতী দেশের সীমান্ত এলাকায়। তবে দেশের ভেতরে অক্ষত থেকে যায় তাদের বিশাল ক্যাডার বাহিনী ও অস্ত্রভাণ্ডার। বিভিন্ন সময় দেখা গেছে, চরমপন্থিদের অভিযানগুলোতে ব্যবহৃত হয়েছে একে-৪৭ রাইফেল সহ বড় বড় অস্ত্র। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে র্যাব-পুলিশের হাতে একে-৪৭ রাইফেল সহ চরমপন্থিরা গ্রেপ্তার হয়েছে অন্যদিকে ক্রস ফায়ারে নিহত চরমপন্থিদের কাছ থেকে র্যাব-পুলিশের অস্ত্র উদ্ধার বলতে গেলে শূন্যের কোঠায়। সূত্রমতে এখনও ওই এলাকার চরমপন্থিদের কাছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়ে গেছে বিশাল অস্ত্রভাণ্ডার পাশাপাশি আছে তাদের ক্যাডার বাহিনী। বিগত এক বছরে দেখা গেছে খুলনা, যশোর, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া ও মেহেরপুর জেলায় র্যাব-পুলিশের ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছে প্রায় অর্ধশত চরমপন্থি ক্যাডার, ঘটেছে কয়েক ডজন চরমপন্থি হামলা। বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে এক শ’র বেশি। দিনে দিনে চরমপন্থিরা আবার বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সীমান্ত গলিয়ে আসছে অস্ত্র। সে অস্ত্র পৌঁছে যাচ্ছে দেশের অভ্যন্তরে চরমপন্থি ক্যাডারদের হাতে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চরমপন্থি সংগঠনগুলোর নিয়ন্ত্রণ এখন প্রকাশ্য রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর হাতে। ওই অঞ্চলে প্রচলন আছে, এখানে দিনে আওয়ামী লীগ-বিএনপি রাতে চরমপন্থি। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলার কোনটাতেই আওয়ামী লীগ-বিএনপি তাদের পূর্ণাঙ্গ জেলা-উপজেলা কমিটি গঠন করতে পারে না। কমিটি গঠনের সময় দলের পদ-পদবি উল্লেখ করে নামের তালিকা দেয়া হয় চরমপন্থিদের পক্ষ থেকে। আওয়ামী লীগ-বিএনপির অনেক নেতাই গোপনে চরমপন্থিদের নেতৃত্ব দেন। সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তা জানলেও তাদের কিছু করার থাকে না। র্যাব-পুলিশের কাছে ওই সব সন্ত্রাসীর অপরাধ কর্মকাণ্ডের দীর্ঘ ফিরিস্তি থাকার পরও তাদেরকে হাত গুটিয়ে বসে থাকতে হয়।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর কুষ্টিয়া, যশোর ও খুলনার একাধিক চরমপন্থি সন্ত্রাসীকে দলের পদ-পদবি দিয়ে দলে নেয়া হয়েছে। র্যাব-পুলিশের তালিকাভুক্ত ওই সন্ত্রাসীরা এখন দলীয় পরিচয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। সূত্রমতে আগামী নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলের গডফাদাররা মাঠ দখল করতে আগেভাগেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা চরমপন্থিদের সংগঠিত করছে। দীর্ঘদিন ধরে দেখা গেছে, চরমপন্থিরা তাদের সংগঠিত হওয়ার খবর জানান দেয় যে কোন বড় ধরনের একটি হত্যা অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে। গত ২৮শে আগস্ট কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার আমবাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম ও তার দুই সঙ্গীকে হত্যার মধ্য দিয়ে চরমপন্থিরা তাদের নবরূপে সংগঠিত হওয়ার খবর জানান দিয়েছে বলে মনে করছেন ওই এলাকার সচেতন মহল।
সূত্র জানায়, চরমপন্থিরা বর্তমান পর্যায়ে সংগঠিত হতে জোর দিচ্ছে নারী সংগঠনের ওপর। র্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত চরমপন্থি নেতাদের স্ত্রীরা মাঠে নেমে ক্যাডারদের সংগঠিত করছে। এছাড়াও কৌশল বদলে চরমপন্থিরা এখন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে তাদের দলে অন্তর্ভুক্ত করছে মিডিয়ার পরিচয়ধারী কিছু লোককে। তাদের দায়িত্ব, র্যাব-পুলিশ ও সরকারি গোয়েন্দা বিভাগের লোকদের গতিবিধি আগেভাগেই চরমপন্থিদের জানিয়ে দেয়া। একটি গোয়েন্দা সূত্র নিশ্চিত করেছে, কুষ্টিয়াতে তিনজন কথিত সাংবাদিক এখন কাজ করছে চরমপন্থিদের মিডিয়া উইংয়ে। তাদের মাধ্যমে চরমপন্থিদের সঙ্গে প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের যোগসূত্র গড়ে উঠছে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একাধিক জেলা থেকে জানা গেছে, প্রতিহিংসা আর চাঁদাবাজিতে মেতে উঠেছে আন্ডারওয়ার্ল্ডের একাধিক সংগঠন। পলাতক ক্যাডাররা এলাকায় ফিরতে শুরু করেছে। দলে রিক্রুট করা হচ্ছে কিশোর, যুবক ও মহিলাদের। চরমপন্থি সংগঠনের নিহত নেতাদের স্ত্রী ও স্বামী পরিত্যক্ত মহিলাদের কাজে লাগানো হচ্ছে। বিস্তীর্ণ এলাকার অধিবাসীরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলায় ৯টি চরমপন্থি সংগঠনসহ অন্তত শতাধিক গ্যাং-গ্রুপে রয়েছে প্রায় ১০ হাজারেরও বেশি অস্ত্রধারী। এদের অনুসারী রয়েছে আরও দেড় হাজারের মতো। এগুলো হচ্ছে- পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টি (এমএল), জনযুদ্ধ, মাওবাদী কংগ্রেস, লালপতাকা, শ্রমজীবী মুক্তি আন্দোলন, বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টি, গণবাহিনী, বাংলার কমিউনিস্ট ও দুখু বাহিনী। এছাড়াও সেভেন স্টার, ফোর স্টার, মান্নান বাহিনী উল্লেখযোগ্য। নানা নামে নানা মতে গড়ে ওঠা চরমপন্থি দলগুলো পরস্পরবিরোধী সংঘাতের কারণে রক্তের হোলি খেলায় মেতে উঠেছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, মেহেরপুরের গাংনী, ঝিনাইদহের শৈলকুপা, হরিণাকুণ্ডুু সদর, কুষ্টিয়ার ইবি, সদর, আলমডাঙ্গা, চুয়াডাঙ্গার জীবননগর, মাগুরার শ্রীপুর, নড়াইল, রাজবাড়ীর পাংশা, খুলনার ফুলতলা, সাতক্ষীরার চুকনগর, যশোরের কেশবপুর, শার্শা, ঝিকরগাছা এলাকায় চরমপন্থিদের তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। পুলিশের তালিকায় নাম নেই এমন সব যুবক-যুবতী আন্ডারগ্রাউন্ড পার্টির নেতৃত্ব দিচ্ছে। এখন পর্যন্ত মোস্ট ওয়ানটেডের তালিকায় রয়েছে যারা তাদের মধ্যে মেহেরপুরের গাংনীর বেতবাড়িয়ার মতি মোল্লা, মকবুল চেয়ারম্যান, সুমন, মহিলা নেত্রী বাথান পাড়ার কুমকুম, কুষ্টিয়ার শাহিন-মুকুল, দৌলতপুরের ফারুক চেয়ারম্যান, বিপুল চৌধুরী এবং পিচ্চি মনিরুল, মহিলা ক্যাডার সুমিসহ ১৬ জন। কুষ্টিয়ার গণমুক্তি ফৌজের শাহীন, মুকুল বর্তমানে আছে ভারতের কারাগারে। এলাকার চরমপন্থিদের সংগঠিত করতে ভারত-বাংলাদেশ আসা যাওয়া করছে গণবাহিনীর আনোয়ার হোসেন আনু, গণমুক্তি ফৌজের লিপ্টন ও জাসদ গণবাহিনীর কালু। কুষ্টিয়ায় মহিলা চরমপন্থির সংখ্যা বেশি। ইতিমধ্যে কুষ্টিয়ায় অন্তত একডজন মহিলা চরমপন্থি ধরা পড়েছে। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার অব্যাহত রয়েছে বলে একজন পুলিশ অফিসার জানান।
ঝিনাইদহে পুরনোদের মধ্যে কুদ্দুস, দেবু, বিধানের নাম রয়েছে পুলিশের তালিকায়। এছাড়াও বাইরের সন্ত্রাসীরাও এ অঞ্চলে অবস্থান করছে। একটি গোয়েন্দা বিভাগ বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। গ্রাম্য বিবাদ, ক্ষমতাসীন দলের নিপীড়ন, পাওনা থেকে বঞ্চিত হওয়া নানা ইস্যুতে নতুন-পুরনো মিলিয়ে আন্ডারগ্রাউন্ড পার্টিতে নতুন নতুন মুখ যোগ হচ্ছে এবং ভেতরে ভেতরে শক্তিশালী হচ্ছে তারা। চরমপন্থি দল চাঙ্গা করতে শক্তিশালী মহিলা সিন্ডিকেট মাঠে রয়েছে। নয়া কৌশল হিসেবে চরমপন্থিদের কয়েকটি সংগঠন মহিলাদের কাজে লাগাচ্ছে। স্বজন হত্যার প্রতিশোধ আর সংসার নির্বাহ করতে ঝুঁকি জেনেও অস্ত্রধারী দলে যোগ দিচ্ছে মহিলারা। বর্তমানে গ্রামগঞ্জে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা পুলিশ ক্যাম্পগুলোতে ছদ্মবেশে মহিলারা অঘটন ঘটিয়ে ফেলতে পারে এমন আশঙ্কা পুলিশের অনেক সিনিয়র কর্মকর্তার। বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে দেড়শতাধিক চরমপন্থি বন্দুক যুদ্ধ ও গণপিটুনিতে নিহত হয়। অনেকে আটক রয়েছে কারাগারে। কারাগারে থাকা দাদাদের পরামর্শে জামিন প্রাপ্তদের সঙ্গে নাতি চরমপন্থিরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
২০১২-এর বিগত ছয় মাসে অস্ত্রের যে ক্ষুদ্রাংশ ধরা পড়েছে তার মধ্যে ৪ঠা জানুয়ারি মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার আড়পাড়া গ্রাম থেকে একটি এলজি শাটারগান ও এক রাউন্ড গুলিসহ নজিবুল (৩০) নামের এক চরমপন্থি সন্ত্রাসীকে আটক করে গাংনী থানা পুলিশ। সে চরমপন্থি সংগঠন লাল পতাকার তপন মালিথা গ্রুপের সক্রিয় সদস্য। ১৫ই জানুয়ারি গাংনী থেকে দু’টি তাজা বোমা উদ্ধার করে র্যাব। ২৮শে জানুয়ারি শুক্রবার দিবাগত মধ্য রাতে মেহেরপুরে পৃথক দু’টি স্থান থেকে ৪টি বোমা, ১টি এলজি শাটারগান ও ১ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে পুলিশ। ৮ই ফেব্রুয়ারি চরমপন্থি সংগঠন বিপ্লবি কমিউনিস্ট পার্টি (এমএল) জনযুদ্ধের আঞ্চলিক নেতা মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার তেরাইল গ্রামের দাউদ হোসেন (৪৫) ও তার সহযোগী খলিল উদ্দীন (৩৫)-কে আটক করে র্যাব। আটকের সময় তাদের কাছ থেকে ১টি এলজি শাটারগান, ২টি বোমা, ২টি তলোয়ারও উদ্ধার করা হয়। ১২ই ফেব্রুয়ারি র্যাব-পুলিশ যৌথ অভিযানে মেহেরপুরের গাংনী থেকে অস্ত্র গুলি ও বোমাসহ ৪ চরমপন্থিকে আটক করে। তাদের কাছ থেকে ২টি এলজি শাটারগান, ২ রাউন্ড গুলি, ৪টি তাজা বোমা ও ২টি ধারালো অস্ত্র (রামদা ও ছুরি) উদ্ধার করা হয়। ১৮ই ফেব্রুয়ারি মেহেরপুর গাংনী উপজেলার কাজিপুর গ্রাম থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় ৪টি শক্তিশালী তাজা বোমা উদ্ধার করে পুলিশ। ২৪শে ফেব্রুয়ারি গাংনী থেকে অস্ত্র, বোমা, গুলিসহ এক চরমপন্থিকে আটক করে র্যাব ৯ই মার্চ একই দিন গাংনী উপজেলার বেতবাড়ীয়া গ্রাম থেকে ১টি এলজি শাটারগান, ১ রাউন্ড গুলিসহ উকিল মিয়া নামের এক সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
ঝিনাইদহতে বর্তমানে পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টি (এমএল), জনযুদ্ধ, জাসদ গণবাহিনী, হক গ্রুপের ক্যাডারদের তৎপরতা রয়েছে। চাঁদাবাজি, রাহাজানি, মানুষ হত্যাই যেন চরমপন্থিদের এখন বড় কাজ। এ অঞ্চলের সচেতন পর্যবেক্ষণ মহলের দাবি, শুধু চরমপন্থি নেতারা নির্মূল হলেই এ এলাকা থেকে চরমপন্থি দূর হবে না। স্থায়ীভাবে চরমপন্থি সন্ত্রাসীদের তৎপরতা বন্ধ করতে হলে আগে দরকার এদের মদতদাতাদের খুঁজে বের করা। তাদেরকে খুঁজে নির্মূল না করা গেলে চরমপন্থিদের নির্মূল কোনভাবেই সম্ভব হবে না। গত মাসের গোড়ার দিকে ঝিনাইদহে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে গণমুক্তি ফৌজের চার ক্যাডার। জানা গেছে তারা নতুন করে দল সংগঠিত করতে মাঠে নেমেছিল। যশোরে একের পর এক ঘটছে গোপন হত্যাকাণ্ড। রাজনৈতিক অস্থিরতা কাজে লাগিয়ে যশোরের চরমপন্থিরা ফের তৎপর হয়ে উঠেছে নিজ এলাকায়। রাজনৈতিক নেতাদের ভাড়াটে খুনি হিসেবে একের পর এক ঘটিয়ে চলছে হত্যাকাণ্ড। ওই সব চরমপন্থিদের আশ্রয় দিচ্ছে রাজনৈতিক নেতৃত্ব। সূত্রমতে চরমপন্থিদের নতুন করে সংগঠিত করতে খরচ যোগাচ্ছে কতিপয় নির্বাচনমুখী রাজনৈতিক নেতা।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর কুষ্টিয়া, যশোর ও খুলনার একাধিক চরমপন্থি সন্ত্রাসীকে দলের পদ-পদবি দিয়ে দলে নেয়া হয়েছে। র্যাব-পুলিশের তালিকাভুক্ত ওই সন্ত্রাসীরা এখন দলীয় পরিচয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। সূত্রমতে আগামী নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলের গডফাদাররা মাঠ দখল করতে আগেভাগেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা চরমপন্থিদের সংগঠিত করছে। দীর্ঘদিন ধরে দেখা গেছে, চরমপন্থিরা তাদের সংগঠিত হওয়ার খবর জানান দেয় যে কোন বড় ধরনের একটি হত্যা অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে। গত ২৮শে আগস্ট কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার আমবাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম ও তার দুই সঙ্গীকে হত্যার মধ্য দিয়ে চরমপন্থিরা তাদের নবরূপে সংগঠিত হওয়ার খবর জানান দিয়েছে বলে মনে করছেন ওই এলাকার সচেতন মহল।
সূত্র জানায়, চরমপন্থিরা বর্তমান পর্যায়ে সংগঠিত হতে জোর দিচ্ছে নারী সংগঠনের ওপর। র্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত চরমপন্থি নেতাদের স্ত্রীরা মাঠে নেমে ক্যাডারদের সংগঠিত করছে। এছাড়াও কৌশল বদলে চরমপন্থিরা এখন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে তাদের দলে অন্তর্ভুক্ত করছে মিডিয়ার পরিচয়ধারী কিছু লোককে। তাদের দায়িত্ব, র্যাব-পুলিশ ও সরকারি গোয়েন্দা বিভাগের লোকদের গতিবিধি আগেভাগেই চরমপন্থিদের জানিয়ে দেয়া। একটি গোয়েন্দা সূত্র নিশ্চিত করেছে, কুষ্টিয়াতে তিনজন কথিত সাংবাদিক এখন কাজ করছে চরমপন্থিদের মিডিয়া উইংয়ে। তাদের মাধ্যমে চরমপন্থিদের সঙ্গে প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের যোগসূত্র গড়ে উঠছে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একাধিক জেলা থেকে জানা গেছে, প্রতিহিংসা আর চাঁদাবাজিতে মেতে উঠেছে আন্ডারওয়ার্ল্ডের একাধিক সংগঠন। পলাতক ক্যাডাররা এলাকায় ফিরতে শুরু করেছে। দলে রিক্রুট করা হচ্ছে কিশোর, যুবক ও মহিলাদের। চরমপন্থি সংগঠনের নিহত নেতাদের স্ত্রী ও স্বামী পরিত্যক্ত মহিলাদের কাজে লাগানো হচ্ছে। বিস্তীর্ণ এলাকার অধিবাসীরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলায় ৯টি চরমপন্থি সংগঠনসহ অন্তত শতাধিক গ্যাং-গ্রুপে রয়েছে প্রায় ১০ হাজারেরও বেশি অস্ত্রধারী। এদের অনুসারী রয়েছে আরও দেড় হাজারের মতো। এগুলো হচ্ছে- পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টি (এমএল), জনযুদ্ধ, মাওবাদী কংগ্রেস, লালপতাকা, শ্রমজীবী মুক্তি আন্দোলন, বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টি, গণবাহিনী, বাংলার কমিউনিস্ট ও দুখু বাহিনী। এছাড়াও সেভেন স্টার, ফোর স্টার, মান্নান বাহিনী উল্লেখযোগ্য। নানা নামে নানা মতে গড়ে ওঠা চরমপন্থি দলগুলো পরস্পরবিরোধী সংঘাতের কারণে রক্তের হোলি খেলায় মেতে উঠেছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, মেহেরপুরের গাংনী, ঝিনাইদহের শৈলকুপা, হরিণাকুণ্ডুু সদর, কুষ্টিয়ার ইবি, সদর, আলমডাঙ্গা, চুয়াডাঙ্গার জীবননগর, মাগুরার শ্রীপুর, নড়াইল, রাজবাড়ীর পাংশা, খুলনার ফুলতলা, সাতক্ষীরার চুকনগর, যশোরের কেশবপুর, শার্শা, ঝিকরগাছা এলাকায় চরমপন্থিদের তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। পুলিশের তালিকায় নাম নেই এমন সব যুবক-যুবতী আন্ডারগ্রাউন্ড পার্টির নেতৃত্ব দিচ্ছে। এখন পর্যন্ত মোস্ট ওয়ানটেডের তালিকায় রয়েছে যারা তাদের মধ্যে মেহেরপুরের গাংনীর বেতবাড়িয়ার মতি মোল্লা, মকবুল চেয়ারম্যান, সুমন, মহিলা নেত্রী বাথান পাড়ার কুমকুম, কুষ্টিয়ার শাহিন-মুকুল, দৌলতপুরের ফারুক চেয়ারম্যান, বিপুল চৌধুরী এবং পিচ্চি মনিরুল, মহিলা ক্যাডার সুমিসহ ১৬ জন। কুষ্টিয়ার গণমুক্তি ফৌজের শাহীন, মুকুল বর্তমানে আছে ভারতের কারাগারে। এলাকার চরমপন্থিদের সংগঠিত করতে ভারত-বাংলাদেশ আসা যাওয়া করছে গণবাহিনীর আনোয়ার হোসেন আনু, গণমুক্তি ফৌজের লিপ্টন ও জাসদ গণবাহিনীর কালু। কুষ্টিয়ায় মহিলা চরমপন্থির সংখ্যা বেশি। ইতিমধ্যে কুষ্টিয়ায় অন্তত একডজন মহিলা চরমপন্থি ধরা পড়েছে। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার অব্যাহত রয়েছে বলে একজন পুলিশ অফিসার জানান।
ঝিনাইদহে পুরনোদের মধ্যে কুদ্দুস, দেবু, বিধানের নাম রয়েছে পুলিশের তালিকায়। এছাড়াও বাইরের সন্ত্রাসীরাও এ অঞ্চলে অবস্থান করছে। একটি গোয়েন্দা বিভাগ বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। গ্রাম্য বিবাদ, ক্ষমতাসীন দলের নিপীড়ন, পাওনা থেকে বঞ্চিত হওয়া নানা ইস্যুতে নতুন-পুরনো মিলিয়ে আন্ডারগ্রাউন্ড পার্টিতে নতুন নতুন মুখ যোগ হচ্ছে এবং ভেতরে ভেতরে শক্তিশালী হচ্ছে তারা। চরমপন্থি দল চাঙ্গা করতে শক্তিশালী মহিলা সিন্ডিকেট মাঠে রয়েছে। নয়া কৌশল হিসেবে চরমপন্থিদের কয়েকটি সংগঠন মহিলাদের কাজে লাগাচ্ছে। স্বজন হত্যার প্রতিশোধ আর সংসার নির্বাহ করতে ঝুঁকি জেনেও অস্ত্রধারী দলে যোগ দিচ্ছে মহিলারা। বর্তমানে গ্রামগঞ্জে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা পুলিশ ক্যাম্পগুলোতে ছদ্মবেশে মহিলারা অঘটন ঘটিয়ে ফেলতে পারে এমন আশঙ্কা পুলিশের অনেক সিনিয়র কর্মকর্তার। বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে দেড়শতাধিক চরমপন্থি বন্দুক যুদ্ধ ও গণপিটুনিতে নিহত হয়। অনেকে আটক রয়েছে কারাগারে। কারাগারে থাকা দাদাদের পরামর্শে জামিন প্রাপ্তদের সঙ্গে নাতি চরমপন্থিরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
২০১২-এর বিগত ছয় মাসে অস্ত্রের যে ক্ষুদ্রাংশ ধরা পড়েছে তার মধ্যে ৪ঠা জানুয়ারি মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার আড়পাড়া গ্রাম থেকে একটি এলজি শাটারগান ও এক রাউন্ড গুলিসহ নজিবুল (৩০) নামের এক চরমপন্থি সন্ত্রাসীকে আটক করে গাংনী থানা পুলিশ। সে চরমপন্থি সংগঠন লাল পতাকার তপন মালিথা গ্রুপের সক্রিয় সদস্য। ১৫ই জানুয়ারি গাংনী থেকে দু’টি তাজা বোমা উদ্ধার করে র্যাব। ২৮শে জানুয়ারি শুক্রবার দিবাগত মধ্য রাতে মেহেরপুরে পৃথক দু’টি স্থান থেকে ৪টি বোমা, ১টি এলজি শাটারগান ও ১ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে পুলিশ। ৮ই ফেব্রুয়ারি চরমপন্থি সংগঠন বিপ্লবি কমিউনিস্ট পার্টি (এমএল) জনযুদ্ধের আঞ্চলিক নেতা মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার তেরাইল গ্রামের দাউদ হোসেন (৪৫) ও তার সহযোগী খলিল উদ্দীন (৩৫)-কে আটক করে র্যাব। আটকের সময় তাদের কাছ থেকে ১টি এলজি শাটারগান, ২টি বোমা, ২টি তলোয়ারও উদ্ধার করা হয়। ১২ই ফেব্রুয়ারি র্যাব-পুলিশ যৌথ অভিযানে মেহেরপুরের গাংনী থেকে অস্ত্র গুলি ও বোমাসহ ৪ চরমপন্থিকে আটক করে। তাদের কাছ থেকে ২টি এলজি শাটারগান, ২ রাউন্ড গুলি, ৪টি তাজা বোমা ও ২টি ধারালো অস্ত্র (রামদা ও ছুরি) উদ্ধার করা হয়। ১৮ই ফেব্রুয়ারি মেহেরপুর গাংনী উপজেলার কাজিপুর গ্রাম থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় ৪টি শক্তিশালী তাজা বোমা উদ্ধার করে পুলিশ। ২৪শে ফেব্রুয়ারি গাংনী থেকে অস্ত্র, বোমা, গুলিসহ এক চরমপন্থিকে আটক করে র্যাব ৯ই মার্চ একই দিন গাংনী উপজেলার বেতবাড়ীয়া গ্রাম থেকে ১টি এলজি শাটারগান, ১ রাউন্ড গুলিসহ উকিল মিয়া নামের এক সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
ঝিনাইদহতে বর্তমানে পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টি (এমএল), জনযুদ্ধ, জাসদ গণবাহিনী, হক গ্রুপের ক্যাডারদের তৎপরতা রয়েছে। চাঁদাবাজি, রাহাজানি, মানুষ হত্যাই যেন চরমপন্থিদের এখন বড় কাজ। এ অঞ্চলের সচেতন পর্যবেক্ষণ মহলের দাবি, শুধু চরমপন্থি নেতারা নির্মূল হলেই এ এলাকা থেকে চরমপন্থি দূর হবে না। স্থায়ীভাবে চরমপন্থি সন্ত্রাসীদের তৎপরতা বন্ধ করতে হলে আগে দরকার এদের মদতদাতাদের খুঁজে বের করা। তাদেরকে খুঁজে নির্মূল না করা গেলে চরমপন্থিদের নির্মূল কোনভাবেই সম্ভব হবে না। গত মাসের গোড়ার দিকে ঝিনাইদহে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে গণমুক্তি ফৌজের চার ক্যাডার। জানা গেছে তারা নতুন করে দল সংগঠিত করতে মাঠে নেমেছিল। যশোরে একের পর এক ঘটছে গোপন হত্যাকাণ্ড। রাজনৈতিক অস্থিরতা কাজে লাগিয়ে যশোরের চরমপন্থিরা ফের তৎপর হয়ে উঠেছে নিজ এলাকায়। রাজনৈতিক নেতাদের ভাড়াটে খুনি হিসেবে একের পর এক ঘটিয়ে চলছে হত্যাকাণ্ড। ওই সব চরমপন্থিদের আশ্রয় দিচ্ছে রাজনৈতিক নেতৃত্ব। সূত্রমতে চরমপন্থিদের নতুন করে সংগঠিত করতে খরচ যোগাচ্ছে কতিপয় নির্বাচনমুখী রাজনৈতিক নেতা।
কুষ্টিয়াকে সুরের মায়াজালে মুগ্ধ করলেন মিতা হক
আরিফ মেহমুদ ॥ যার সুরের যাদু নিজ দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশের মাটিতে ভিন্ন ভাষাভাষি দর্শক শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছে। সুনাম কুড়িয়েছে বহু খ্যাত সঙ্গীত সন্ধ্যায় ও মঞ্চে পরিবেশন করে। আশির্বাদ পেয়েছে সঙ্গীজ্ঞ ওস্তাদ, পন্ডিত ও গুনিজনের। সেই রবীন্দ্র সঙ্গীতের প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী মিতা হকের গাওয়া গানের সুরের মায়াজালে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে মুগ্ধ, সিক্ত হলেন কুষ্টিয়ার হাজারো সঙ্গীতপ্রেমী ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা। রবীন্দ্রনাথের পূজা, প্রেম ও প্রকৃতি ,সন্ধ্যা পর্বের নানান সঙ্গী পরিবেশন করেন তিনি। আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে আছে, আমার ভাঙ্গা পথের রাঙা ধুলোয় ইত্যাদি গান সহ প্রার্থনা পর্বের সব চমৎকার গান গেয়ে শুনান। তার গাওয়া গানের সুথে দর্শক শ্রোতারা মিলে মিশে একাকার হয়ে যায়। কখনো করতালি দিয়ে শিল্পকলা মিলনায়তনকে মুখোর করে তুলে আবার কখনো নিস্তব্ধ নিরবতা মগ্ন হয়ে থাকে। যেন শিল্পীর গাওয়া গানের সুরে দর্শক-শ্রোতারা আবদ্ধ হয়ে যায়। মনের অজান্তে হারিয়ে যায় স্মৃতিময় দিনগুলিতে। জাতীয় রবীন্দ্র সম্মিলন পরিষদ এ সঙ্গীত সন্ধ্যার আয়োজনে শুরুতেই রবীন্দ্র সম্মিলন পরিষদ কুষ্টিয়া শাখার শিল্পীরা সুচনা সঙ্গীত পরিবেশন করেন। এরপর আমন্ত্রিত শিল্পীরা গান শুরু করেন। সন্ধ্যা সাতটায় অনুষ্ঠান শুরু হয়ে সঙ্গীত পরিবশন চলে গভীর রাত পর্যন্ত। এর আগে সকালে শিল্পী মিতা হক ও রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী তৃপ্তি খান, এটিএম জাহাঙ্গীর জাতীয় রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ কুষ্টিয়া জেলা শাখার আয়োজনে কুষ্টিয়ায় দুই দিনব্যাপী রবীন্দ্র সঙ্গীতে বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মশালায় স্থানীয় শিল্পীদের রবীন্দ্র সঙ্গীতের উপর তালিম দেন। সঙ্গীত সন্ধ্যায় জাতীয় রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ কুষ্টিয়া জেলা শাখার সভাপতি ম.মনিরুজ্জামন, সাধারণ সম্পাদক অশোক সাহা, জাতীয় পর্যায়ের রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী তৃপ্তি খান, এটিএম জাহাঙ্গীর, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতার শিল্পী রীনা বিশ্বাসসহ বিভিন্ন শিল্পী বৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সঙ্গীত সন্ধ্যায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়ার বিদায়ী জেলা প্রশাসক বনমালী ভৌমিক। এসময় অশোক সাহা বলেন, জাতীয় রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ কুষ্টিয়া জেলা শাখার এ আয়োজন তখন সার্থক হবে। যখন জাতীয় পর্যায়ের কুষ্টিয়ার স্থানীয় শিল্পীরা রবীন্দ্র সঙ্গীতের সফলতা অর্জন করবে। আমাদের প্রত্যাশা আজকের এই প্রশিক্ষণার্থী শিল্পীরা একদিন দেশের মুখ উজ্জল করবে। বনে আনবে দেশের সুনাম।
কুষ্টিয়ায় এরাইজ উচ্চ ফলনশীল ধান চাষে সাফল্য
আরিফ মেহমুদ ॥ কুষ্টিয়ায় নতুন জাতের ‘গোল্ড’ ধানের পর উচ্চ ফলনশীল ‘এরাইজ ধানির’ চাষে সাফল্য এনে দিয়েছে কৃষকদের মাঝে। বিঘা প্রতি ফলন ৩০ মন। রোপা আমন মৌসুমে অভাবনীয় ফলন হয়েছে। এই ফলনে কৃষকসহ ধান চাষের সাথে সংশি¬ষ্ট সকলে আনন্দিত। প্রদর্শনী প্লটের মাধ্যমে এই ধানের সফল চাষে সকলের মাঝে আশার সঞ্চার করছে। চাষীরা এই ধানের আবাদ করে অধিক পরিমান ধান উৎপাদনে সক্ষম হবে। গতকাল সকালে নবান্নের শুরুতে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বৃত্তিপাড়ায় পরীক্ষামুলকভাবে উৎপাদনকৃত এই ধান কাটার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ কৃমিন্ত্রণালয়ের যশোর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক আব্দুল মান্নান। স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারন বিভাগের কর্মকর্তারা মনে করছেন এই নতুন প্রজাতির ধান চাষে চাষীরা উপকৃত হবেন। সেই সাথে এলাকায় বিপুল পরিমান ধান উৎপাদন হবে। জানা যায়-কুষ্টিয়ার চাষীরা উচ্চ ফলনশীল নতুন জাত ‘এরাইজ ধানির’ ধান চাষে পরিচিত নন। তবে এবার জনতা ব্যাংকের সিআরসি কর্মসূচীর সহায়তায় এখানকার কৃষকরা পরীক্ষামূলক এই ধান উৎপাদন শুরু করেছে। গীতাঞ্জলী এ্যাগ্রো সোসাইটির তত্বাবধানে কুষ্টিয়া শহরতলীর বিত্তিপাড়ায় কয়েক বিঘা জমিতে পরীক্ষামূলক ধান চাষ করা হয়। সিস্টেম অব রাইস ইন্টেন্সিফিকেশন (এসআরআই) পদ্ধতিতে গীতাঞ্জলী এ্যাগ্রো সোসাইটির চাষ করা এই ধানের ফলন আদ্রতা বাদ দিয়ে হেক্টর প্রতি ৮.৭৫ মেট্রিক টন ও বিঘা প্রতি ৩০ মন। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যাংকের সিএসআর খাত হতে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। গতকাল ধান কেটে কৃষকরা এই পরিমান ধান উৎপাদনের রেকর্ড সকলের সামনে তুলে ধরেন। এছাড়াও ফসল কর্তন অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে যশোর বিএডিসি’র যুগ্ম পরিচালক মোস্তাক আহমেদ, কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তর কুষ্টিয়ার উপ-পরিচালক লুৎফর রহমান,যশোর অঞ্চলের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ফিরোজ আহমেদ, রিজিওনাল ফিল্ড অফিসার পরেশ কুমার রায়,কুষ্টিয়া সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল আমিন, বীজ প্রত্যায়ন এজেন্সির ফিল্ড কর্মকর্তা কামরুল হক মিয়া, গীতাঞ্জলী এ্যাগ্রো সোসাইটির প্রধান নির্বাহী আজিজার রায়হান, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অশোক কর্মকার ও সংশ্লিষ্ট ব্লকের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী কৃষি অফিসার আসারুল হক। জনতা ব্যাংক বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালিত করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় দেশের কৃষিখাতে অসহায় ও বর্গা চাষীদের সহযোগিতার মাধ্যমে স্বাবলম্বী করে তোলা এবং দেশের খাদ্য ঘাটতি মেটাতে বিপুল পরিমান খাদ্য উৎপাদনে অংশীদার হওয়ার এমন লক্ষ্য নিয়েই এই খাতে সহযোগিতা করার জন্য এগিয়ে এসেছে। জনতা ব্যাংক এ ধরনের সৃজনশীল উদ্যোগে সহায়তা তথা সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে অগ্রাধিকার প্রদান করছে। নতুন এই ধান দেশের কৃষি বিপ্লবে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। সংশ্লিষ্ট ব্লকের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী কৃষি অফিসার আসারুল হক জানান, এ ধান চাষে রোগবালাই ও কীট-পতঙ্গের আক্রমনও তুলনামূলক কম। প্রথম দিকে এ ধান চাষে শ্রমিক, বীজ, সার, কীটনাশক ও আনুসঙ্গিক ব্যয় কিছুটা বেশি হলেও পরে কৃষকদের ব্যবস্থাপনায় চাষ শুরু হলে বিঘা প্রতি ব্যয় কমার বিপরীতে উৎপাদন বাড়ার সাথে সাথে আনুষাঙ্গিক খরচ কম হবে। তিনি জানান-ব্যতিক্রমধর্মী এই নতুন জাতের ধান ভাল ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সফলতার মুখ দেখতে পেলাম। তিনি আরো জানান-এই ধান জুলাই মাসের দ্বিতীয়ার্ধে ১২ থেকে ১৪ দিনের চারা রোপন করে ১০৫দিনে এই ধানটি কাটা হলো। কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক লুৎফর রহমান বলেন, প্রচলিত আমন ধানের জাতের চেয়ে এই ধানের উৎপাদন অনেক বেশি। তাছাড়া এই ধান চিকন ধানের অভাব মেটাবে। ফলে সকলের নিকট এই ধানের চাহিদা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাবে। তাছাড়াও এই ধানের গ্রোথ ভাল, অর্গানিক ফার্টিলাইজার বা জৈব সার ব্যবহার করে রাসায়নিক সারের ক্ষতি থেকে মুক্ত রাখা হয়েছে। যা মাটির গুনাগুন ধরে রাখতে সহায়ক হবে।
বৃহস্পতিবার, ১৫ নভেম্বর, ২০১২
কুষ্টিয়া ছাত্রকল্যাণ ফাউন্ডেশনের বৃত্তি প্রদানে বনমালী ভৌমিক
আরিফ মেহমুদ ॥ কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক বনমালী ভৌমিক বলেছেন, শিক্ষা আমাদের মৌলিক অধিকার। যে সব দেশ আজ উন্নতির শিখরে অবস্থান করছে তার ভিত্তিমুলে কিংবা নেপথ্যে রয়েছে শিক্ষা। তাই দেশ ও জাতির কল্যানে শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা প্রশ্নাতীত। আগামী দিনের নেতৃত্ব দানকারী জাতীর শ্রেষ্ঠ সন্তান আজকের কমলমতি মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদেরকে আধুনিক প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানসম্মত শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে। আগামী প্রজন্মদেরকে সু-শিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারলেই ডিজিটাল বাংলাদেশ ও দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব হবে এবং তারা সমাজ ও রাষ্ট্রের কল্যাণ বয়ে আনবে। আজকের পৃথিবীতে ডিজিটাল বাংলাদেশ নামে এ দেশের উন্নতি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির চরম পরাকাষ্ঠে যে বিষয়টি উল্লে¬খযোগ্য তাহলো এ দেশের ছাত্র-ছাত্রীদের মেধাকে সম্পদে পরিণত করতে হবে। তোমাদেরকেই গড়তে হবে আগামী প্রযুক্তির পৃথিবী। গতকাল সোমবার দুপুরে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে কুষ্টিয়া ছাত্রকল্যাণ ফাউন্ডেশনের আয়োজিত বার্ষিক বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড.মহিউদ্দিন, কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আশরাফুল ইসলাম, খোকসা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহেল হাসান, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এনডিসি আবুল কালাম. জেলা সমবায় কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়া ছাত্রকল্যাণ ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক সিরাজুল হক। বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়া ছাত্রকল্যাণ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী সদস্য ও আজীবন সদস্য সাপ্তাহিক ইস্পাত পত্রিকার সম্পাদক প্রবীণ সাংবাদিক আলহাজ্ব ওয়ালিউল বারী চৌধুরী, কুষ্টিয়া ছাত্রকল্যাণ ফাউন্ডেশনের যুগ্ম সম্পাদক ডাঃ তৌহিদুল ইসলাম জামাল, বৃত্তিপ্রাপ্ত ছাত্র-ছাত্রীদের পক্ষে অমিত হাসান ও বর্ষা প্রমুখ। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কুষ্টিয়া ছাত্রকল্যাণ ফাউন্ডেশনের আজীবন সদস্য আশরাফউদ্দিন নজু, আলহাজ মোজাফফর রহমান, গাজী গোলাম মোস্তফা ও খন্দঃ আব্দুল্লাহ প্রমুখ। সভাপতি তার বক্তব্যে আরো বলেন, দেশ ও জাতির উন্নয়নে নিরক্ষরমুক্ত দেশ গড়তে শিক্ষার কোন বিকল্প নাই। একটা সময় ছিল কুষ্টিয়ার শিক্ষার হার এক জায়গায় দাড়িয়ে ছিল দীর্ঘদিন। জেলার দায়িত্ব নেয়ার পর সক্ষম হয়েছি এটি পরিবর্তনে ধাক্কা দিতে। পরিবর্তন এসেছে কুষ্টিয়ার শিক্ষার মান উন্নয়নে। মনে রাখতে হবে শিক্ষা যেন আমাদের সেই শিক্ষা দেয়, আমরা যেন শিক্ষিত হয়ে মা বাবা সহ দেশ ও জাতির কল্যাণে নিবেদিত হতে পারি। এসব মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরা অকালে যাতে ঝরে না যায় সে জন্য কুষ্টিয়া জেলার শিক্ষার মান উন্নয়নে কুষ্টিয়া ছাত্রকল্যাণ ফাউন্ডেশন গরীব মেধাবি ছাত্র-ছাত্রীদের পাশে থেকে সহায়তা করছে আগামীতেও করবে। আমি যেখানেই থাকিনা কেন এই ফাউন্ডেশনের বৃত্তি প্রাপ্ত ছাত্র-ছাত্রী সহ কুষ্টিয়া জেলাবাসীর প্রতি আমার দায়িত্ব থাকবে অকৃত্রিম। শ্রদ্ধাভরে ভালবাসবো,স্মরণ রাখবো চিরকাল। আলোচনা শেষে সভাপতি সহ অন্যান্য অতিথিবৃন্দ জেলার ৩৬ জন মেধাবি ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে ২ হাজার টাকার বৃত্তির চেক তুলে দেন। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন কুষ্টিয়া ছাত্রকল্যাণ ফাউন্ডেশনের দপ্তর সম্পাদক অধ্যাপক ওবায়দুর রহমান আবুল।
বুধবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১২
কুষ্টিয়ায় স্ত্রী হত্যার দায়ে পাষান্ড স্বামীর ফাঁসী
আরিফ মেহমুদ ॥ কুষ্টিয়ার ইবি থানায় যৌতুকের দাবীতে স্ত্রীকে শ্বাসরোধ ও পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় আদালত যৌতুকলোভী পাষান্ড স্বামীকে ফাঁসীর রায় প্রদান করেছেন। গতকাল বুধবার বিকেলে এক জনাকীর্ণ আদালতে কুষ্টিয়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যাল আদালতের বিজ্ঞ বিচারক আফজাল হোসেন এ রায় প্রদান করেন। ফাঁসীর আসামীর নাম সাজেদুর রহমান সাবু। সে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ইবি থানার মনোহরদিয়া ইউনিয়নের ছয়ঘোরিয়া গ্রামের সোহরাব হোসেন পান্নার ছেলে। রায় ঘোষনার সময় আসামী আদালতে উপস্থিত ছিল। মামলা এজাহার সুত্রে জানা যায়, ২০১১ সালের প্রথম দিকে একই গ্রামের রেজাউল করিমের মেয়ে রূবাইয়া খাতুন রেশমার সাথে সাজেদুর রহমান সাবু প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। বিষয়টি উভয় পক্ষের পারিবারিকভাবে জানা জানি হলে কেউই তাদের সম্পর্ক মেনে নিতে রাজি ছিল না। এক পর্যায়ে সাবু নানান অজুহাত দেখিয়ে রেশমাকে তার সাথে বিয়ে করাতে রাজি করে। একদিন সবার অজান্তে সাজেদুর রহমান সাবু ভালবেসে বিয়ে করে রূবাইয়া খাতুন রেশমাকে। মেয়ের সুখের কথা ভেবে তাদের বিয়ে মেনে নেয় রেশমার বাবা রেজাউল করিম। কথায় বলে অভাব দুয়ারে ঢুকলে ভালবাসা জানালার ফাক দিয়ে পালায়। কিন্তু সাবুর ক্ষেত্রে হয়েছে ভিন্ন। কয়লা ধুলে যায়না ময়লা। সাবু-রেশমার দুজনের সুখের সংসারে মাত্র ৬ মাসের মাথায় নেমে আসে যৌতুকের অভিশাপ। ভালবাসার বিয়ে যৌতুকের অবস্থান শুন্য হলেও পারিবারিক চাপে সাবু স্ত্রীর কাছে মোটা অংকের টাকা যৌতুক দাবী করে। রেশমা বাবার অবস্থা ও নিজেদের পছন্দে বিয়ে করার কথা মাথায় রেখে যৌতুকের টাকা দিয়ে অপারগতা প্রকাশ করে। যৌতুকলোভী সাবু যৌতুকের টাকার জন্য প্রায়ই রেশমার উপর শারীরিক নির্যাতন চালাতো। এ নিয়ে উভয় পরিবারের মধ্যে অশান্তি দেখা দিলে রেশমা মাঝে মধ্যে রাগ করে বাবার বাড়ী চলে যেত। ঘটনার দিন গত ০৫-০৭-২০১১ ইং তারিখে স্বামী আবারো যৌতুকের টাকা চেয়ে রেশমার উপর শারীরিক নির্যাতন চালাতে থাকে। এক পর্যায়ে সাবু তার বাবা মায়ের সহযোগিতায় রেশমাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। বিষয়টি ধামা চাপা দিতে মৃত রেশমার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দিয়ে রেশমা আত্মহত্যা করেছে বলে আত্মচিৎকার দিতে থাকে। সাবু ও তার পরিবারের চিৎকারে প্রতিবেশিরা তাদের বাড়িতে ছুটে এসে রেশমা আগুনে জ্বলছে দেখতে পায়। এখবর দ্রুত রেশমার বাবা রেজাউল করিমের পরিবারে পৌছালে বাবা রেজাউল করিম ছুটে আসে সাবুদের বাড়ীতে। সাবু রেশমার উপর নির্যাতন চালিয়ে তাকে হত্যা করে ঘটনাটি সাজানো নাটক সাজিয়েছে জানতে পারে।এঘটনায় ওই দিনই রূবাইয়া খাতুন রেশমার বাবা রেজাউল করিম বাদী হয়ে ইবি থানায় রেশমাকে হত্যা করা হয়েছে মর্মে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়। যা পরে নারী ও শিশু নির্যাতন ২৯৫/১১ নং মামলায় নথিভূক্ত হয়ে বিচার কাজ শুরু হয়। রাষ্ট্র পক্ষের একাধিক স্বাক্ষীর স্বাক্ষ্য গ্রহন শেষে আসামী সাজেদুর রহমান সাবুর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমানতি হওয়ায় আদালত তাকে ফাঁসীতে ঝুলিয়ে মুত্যুদণ্ড কার্যকর করার রায় প্রদান করেন। রাষ্ট্র পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন পিপি এ্যাড.আকরাম হোসেন দুলাল ও আসামী পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন সিনিয়র আইনজীবী এ্যাড.মিয়া মোহাম্মদ রেজাউল হক।
মঙ্গলবার, ১৩ নভেম্বর, ২০১২
কুষ্টিয়ায় পুলিশের গাড়িতে সেচ্ছাসেবকলীগের হামলা : আসামী ছিনতাই
আরিফ মেহমুদ ॥ কুষ্টিয়ায় ডিবি পুলিশের গাড়িতে হামলা চালিয়ে এক সন্ত্রাসীক ছিনিয়ে নিয়েছে সেচ্ছাসেবকলীগ ক্যাডাররা। আজ সোমবার সাড়ে ১২টার দিকে শহরের মজমপুর গেটে ডিবির গাড়িতে হামলা চালায় তারা। এ সময় গাড়িতে থাকা আকবর হোসেন নামের এক সন্ত্রাসীকে তারা গাড়ি থেকে বের করে দিয়ে পালিয়ে যেতে সাহায্য করে। ডিবি পুলিশ জানায়, আজ সকাল ১২টার দিকে শহরের সাদ্দাম বাজার মোড় এলাকা থেকে আকবর নামের এক সন্ত্রাসীক দেশীয় অস্ত্রসহ গ্রেফতার করে ডিবির এএসআই মনির হোসেন। ওই সন্ত্রাসীকে ডিবির একটি মাইক্রোবাসে তুলে পুলিশ লাইনে নিয়ে যাচ্ছিল তারা। মাইক্রোবাসটি শহরের মজমপুর গেটে আসার পর পরই সেচ্ছাসেবক লীগের ২০ থেকে ২৫জন ক্যাডার লাঠি সোটা নিয়ে গাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর করে। সেচ্ছাসেবক লীগ ক্যাডাররা মাইক্রো থেকে সন্ত্রাসী আকবরকে টেনে বের করে নেয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। গাড়িতে থাকা ডিবির এক সদস্য বলেন, আচমকা সেচছাসেবক লীগ নেতা সবুজের ক্যাডাররা তাদের বহনকারী মাইক্রোবাসের উপর হামলা করে। এতে কয়েকজন সামান্য আহত হয়েছে। হামলা করে সন্ত্রাসীকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করে বলে তিনি জানান। হামলার সময় মজমপুর গেটে সেচ্ছাসেবক লীগের আয়োজনে জামাত বিরোধী একটি বিক্ষোভ সমাবেশ চলছিল। তাতে সেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান লাবু ও সাধারন সম্পাদক পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী সবুজ উপস্থিত ছিল। বিপুল সংখ্যাক পুলিশের সামনেই সেচ্ছাসেবক লীগ ক্যাডাররা ডিবির গাড়িতে হামলা করে আসামীকে পালাতে সাহায্য করে। ভাংচুরকৃত মাইক্রোবাসটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। হামলার বেশ কিছু সময় পর সেচ্ছাসেবক লীগ নেতা লাবু ও সবুজ ঘটনাস্থলে আসে। ঘটনার জন্য সবুজ পুলিশের নিকট ক্ষমা চেয়ে নেন। একই সাথে দোষীদের খূজে বের করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়ার অঙ্গীকার করে ঘটনাস্থল থেকে নেতা-কর্মী নিয়ে চলে যান। এ ব্যাপারে ডিবির ওসি মুরাদ জানান, সেচ্ছাসেবক লীগ ক্যাডাররা মজমপুর গেটে তাদের গাড়িতে হামলা চালিয়ে এক সন্ত্রাসীকে ছিনিয়ে নিয়েছে। ওই সন্ত্রাসীকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জয়নুল আবেদীন বলেন, ডিবির একটি মাইক্রোতে সেচ্ছাসেবক লীগের সমাবেশ থেকে হামলা করা হয়েছে। এ সময় এক সন্ত্রাসী পালিয়ে যায়। সেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান লাবুর সাথে মোবাইলে কথা হলে তিনি জানান, পুলিশের গাড়িতে হামলার ঘটনায় তাদের কোন সদস্য জড়িত নয়। কে বা কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। এ বিষয়ে তিনি বেশি কিছূ জানেন না বলে জানান। এব্যাপারে থানায় মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এঘটনায় কোন পুলিশ সদস্য আহত হয়নি এবং কাউকে আটক করতে পারেনি।
সোমবার, ৫ নভেম্বর, ২০১২
কুষ্টিয়া শহর রক্ষা বেড়িবাঁধ অবৈধ দখলদারদের দখলে রাস্তার জমি চলছে বেচা-বিক্রি:দেখার কেউ নেই
আরিফ মেহমুদ ॥ কুষ্টিয়ার শহর রক্ষা প্রায় ৩ কিঃ মিঃ বেড়িবাঁধের রাস্তা অবৈধ দখলদারদের দখলে। ভেস্তে যেতে বসেছে যানজট নিরসনে অন্যতম এক বিকল্প সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের কাজ। বাঁধের এ রাস্তাটি উদ্ধারে কিংবা রক্ষা করতে পাকা সড়ক নির্মাণ অতি জরুরী হয়ে পড়েছে। অবৈধ দখলদাররা দিনের পর দিন বাঁধের রাস্তার জমি দখল করছে, সেই জমি মোটা টাকাতে চলছে বেচা-বিক্রিও দেখার কেউ নেই। জানা গেছে, কুষ্টিয়া শহরকে নদী ভাঙ্গন থেকে রক্ষা করার জন্য তৈরী করা হয় শহর রক্ষা বেড়িবাঁধ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় প্রায় ৩২ কোটি টাকা বরাদ্দে ২০১০-১১ অর্থ বছরে বাঁধের কাজ শুরু হয়ে প্রায় ২৬ কোটি টাকা ব্যায়ে বাঁধের কাজ শেষ হয়। কুষ্টিয়া শহরের থানাপাড়ার পুরাতন বাঁধ থেকে কুষ্টিয়া মহাশশ্মান পর্যন্ত ২.৬৫ কিমি লম্বা এ বাঁধটি। এর চওড়া ৫ মিটার বার্মসহ ১১ মিটার চওড়া। যা কুষ্টিয়া প্রধান সড়ক এন এস রোডের যানজট নিরসনে এটি হতে পারে অন্যতম এক বিকল্প সড়ক। বিশেষ করে থানাপাড়া পুরাতন বাঁধ থেকে বড় বাজারের ঘোড়ার ঘাট পর্যন্ত রিক্সা-ভ্যান, অটোরিক্সাসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করতে পারে। এতে করে শহরের প্রধান সড়কের যানজট অনেকটাই নিরসন হতে পারে। বিশেষ করে বড় বাজার এলাকায় প্রায় সময়ই যানজট লেগে থাকে। দিনের বেলায় ট্রাকে করে মালা-মাল লোড-আনলোড করা হয়। এ সময় বড় বাজার এলাকার বারোয়ারীতলা রোড এবং এসসিবি রোডে তীব্র যানজট লেগে থাকে। অনেক সময় রিক্সা-ভ্যান চলাচল করতে পারে না। এসব অবস্থার সমাধান করতে অচিরেই কুষ্টিয়ার শহর রক্ষা প্রায় ৩ কিমি বেড়িবাঁধের রাস্তা পাঁকা করা অতি জরুরী হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে বেড়িবাঁধের রাস্তা পাঁকা করে যদি শহরের দিকে বেড়িবাঁধের রাস্তা সংলগ্ন করে গাছ লাগিয়ে দেয়া যায়, তাহলে অবৈধ দখলদারদের দখল থেকে রক্ষা পেতে পারে এ বাঁধের রাস্তাটি। অন্যথায় দিন দিন বাঁধের রাস্তাটি পুরোটাই অবৈধ দখলদাররা দখল করে নিতে পারে। এর আগে ড্রেজার দিয়ে নদী খনন করা হয়। এ সময় শহর বড় হয়। ইতিমধ্যে নদী খননের সময় স্থানীয় মাস্তানরা বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে চরের জমি বিক্রি করে হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা। এখন বেড়িবাঁধ হবার পর বাঁধের রাস্তার উপরের জায়গাতেও দখলদারদের কালো থাবা চলছে। এব্যাপারে সরকার পদক্ষেপ না নিলে হয়ত বাঁধের রাস্তাটি অবৈধ দখলদারদের দখলে চলে যেতে পারে। তাই অচিরের কুষ্টিয়ার শহর রক্ষা প্রায় ৩ কিমি বেরিবাঁধের রাস্তাটি পাঁকা করে শহরকে যানজট নিরসনের হাত থেকে রক্ষা করা অতি জরুরী হয়ে পড়েছে। এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুস সাত্তার জানান, বেড়িবাঁধের রাস্তাটি পাঁকা করা হলে কুষ্টিয়া শহরের যানজট অনেকটা কমে আসতে পারে। এ রাস্তাটি ২০ফুট চওড়া হতে পারে। যা কুষ্টিয়ার অন্যতম একটা সড়ক হতে পারে। এটা কুষ্টিয়ার জন্য খুবই জরুরী। তিনি জানান, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে বেড়িবাঁধের সড়কটি পাঁকা করনের জন্য কোন অর্থ বাজেট নাই। অপরদিকে বেড়িবাঁধের রাস্তাটি পাঁকা করার বিষয়ে, এল জি ই ডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম কবির জানান, এলজিইডি’র পক্ষে বেড়িবাঁধের সড়কটি পাঁকা করা সম্ভব। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে নো অবজেকশন দিতে হবে। অর্থাৎ বেড়িবাঁধের সড়কটি পাঁকা করলে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে কোন আপত্তি থাকবে না মর্মে লিখিত প্রদান করতে হবে। তাহলে তারা সড়কটি পাঁকা করার জন্য টেন্ডার আহবান করবেন। তাই যত দ্রুত সম্ভব বিষয়টি নিয়ে সরকারের প্রতিনিধি যদি এগিয়ে আসে তাহলে কুষ্টিয়ার শহর রক্ষা প্রায় ৩ কিঃ মিঃ বেড়িবাঁধ যানজট নিরসন ও অবৈধ দখলদারদের দখল থেকে বাঁধের জায়গা রক্ষা করতে সরকারের পদক্ষেপ নেয়া অতি জরুরী।
কুষ্টিযায় পুলিশের উপর জামায়াত শিবিরের হামলা, আহত-১০ আটক-২০
আরিফ মেহমুদ ॥ কুষ্টিয়ায় জামায়াত-শিবির কর্মীরা পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচী থেকে পুলিশের উপর কমান্ডো স্টাইলে হামলা চালিয়েছে। এসময় পুলিশের সাথে তাদের সংঘর্ষে শহরের মজমপুর গেট থেকে থানা মোড় পর্যন্ত রণক্ষেত্রে পরিনত হয়। এ ঘটনায় ৭ পুলিশসহ কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছে। পুলিশ ২০ জামায়াত শিবির কর্মীকে আটক করেছে। জানা যায়, কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচীর অংশ হিসেবে গতকাল সোমবার বাদ আসর কুষ্টিয়া শহরের মজমপুর গেটে জড়ো হয় ৪/৫শ’ জামায়াত শিবির কর্মী। কিছুক্ষণ পর জেলা জামায়াতের আমীর আব্দুল ওয়াহিদের নেতৃত্বে তারা মিছিল বের করার চেষ্টা করলে সেখানে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এ সময় পুলিশের এ্যাকশনে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর জামায়াতের কয়েকশ’ কর্মী সংগঠিত একটি জঙ্গী মিছিল বের করে। এ মিছিল থেকে পুলিশের উপর হামলা চালানো হয়। এসময় শহরের এনএস রোডের বিভিন্ন দোকানে লুকিয়ে থাকা জামায়াত শিবির কর্মীরা ওই মিছিলে যোগ দেয়। এ সময় তারা চারদিক থেকে পুলিশের উপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে । এতে মজমপুর গেট, পাঁচ রাস্তার মোড় ও থানার মোড় এলাকা রণক্ষেত্রে পরিনত হয়। এতে ২ এসআইসহ ৭ পুলিশ সদস্য আহত হন। এক পর্যায়ে পুলিশ কোনঠাসা হয়ে বিভ্নি দোকানে আশ্রয় নেয়। তবে আধা ঘন্টা পর পুলিশ শক্তি বৃদ্ধি করে শহরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ২০ জন জামায়াত শিবির কর্মীকে আটক করেছে।
রবিবার, ৪ নভেম্বর, ২০১২
কুষ্টিয়ায় বিষাক্ত স্পিরিট পানে ১০বছরে ৩৮ জনের মৃত্যু ড্রাগ আর মাদকের টানাটানিতে নিয়ন্ত্রণহীন বিষাক্ত স্পিরিট ট্রাজেডী
আরিফ মেহমুদ ॥ কুষ্টিয়ায় একের পর এক বিষাক্ত স্পিরিট ট্রাজেডীতে অনাকাংখিত মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও একেবারে নিশ্চুপ রয়েছে স্পিরিট ও মাদকের ভয়াবহতা নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধকারী সরকারের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও পুলিশ প্রশাসনের অধিকর্তারা। মাদকদ্রব্যে ভয়াবহতা প্রতিরোধ ও দমনে এদের আবার কারোর রয়েছে প্রয়োজনীয় লোকবলের অভাব আবার কারো যানবাহন লোকবল দুটোরই অভাব। অধিকর্তা দের অভ্যান্তরিন সমস্যা যাই হোক না কেন অবৈধ মাদকদ্রব্য বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে প্রয়োনীয় অভিযানের অভাবেই বিষাক্ত স্পিরিট পানে অনাকাংখিত মৃত্যুর খবর কুষ্টিয়ার জন্য নতুন কোন খবর নয়। এদের কাছে এসব মৃত্যু যেন মৃত্যুই নয়। এটি অতি পরিচিত চিত্র। কোন স্বজনহারা নিকট জনের হৃদয় বিদারক হাহাকার। সারা দিনের কর্মব্যস্ত যে মানুষটি হাজারো লোকের ভিড়ে যার পদাচারণা, নিজের অভ্যেসগত কারনেই বিষাক্ত স্পিরিট পান, তার পর রাতেই সেই মানুষটির অস্বাভাবিক ও অনাকাংক্ষিত মৃত্যুর সংবাদ যেন গোটা পরিবারকে ভাবিয়ে তুলছে নিত্যদিন। চলতি ২০১২ সালের ২৭ অক্টোবর ঈদের দিন থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত কুষ্টিয়ার কুমারখালি, দৌলতপুর ও কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় ৩জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। কুষ্টিয়ার কুমারখালি উপজেলার পল্লীতে ঈদের দিন বিষাক্ত মদ পান করে একজনের মৃত্যু হয়। মৃত্যের অপর সঙ্গী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল। উপজেলার বাগুলাট ইউনিয়নের মধুপুর পশ্চিমপাড়া গ্রামের কেরামত আলি শেখের ছেলে লিয়াকত (৩৮) ও একই গ্রামের মৃত জলিল শেখের ছেলে মহম্মদ (৪০) ঈদের দিন বিষাক্ত মদ পান করলে চরম অসুস্থ হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে পরের দিন রবিবার ভোরে লিয়াকত মারা যায়। অন্যদিকে সংকটাপন্ন মহম্মদকে তার আত্মীয়-স্বজন কুমারখালি উপজেলা স্বাস্থ্য-কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। উল্লেখ্য, কুমারখালি শহরে সরকারি লাইসেন্সকৃত মদ বিক্রির দোকানে অবাধে যার-তার কাছে মদ বিক্রি হয়ে আসছে। সরকারি নিয়মানুযায়ি লাইসেন্সকৃত খোরদের নিকট মদবিক্রির নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছেনা। গত এক বছরের কুমারখালিতে বিষাক্ত মদ পানে ৪জনের মৃত্যু হয়। গত ৩০ অক্টোবর সদর উপজেলার হরিণারয়ণপুর এলাকার গোবিন্দর ছেলে গৌতম বিশ্বাস (৩২) বিষাক্ত স্পিরিট পানে মারা যায়। কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে বিষাক্ত স্পিরিট পান করে রেজাউল মল্লিক (৩৫) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও একই ঘটনায় কামাল নামে এক ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। গত ৩১ অক্টোবর বুধবার রাতে আল্লারদর্গা বাজারে তারা দু’জনে স্পিরিট পান করে বাড়ি ফেরার পর অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় রেজাউল মল্লিককে কুষ্টিয়া হাসপাতালে ভর্তি করা হলে রাত ১২টার দিকে তিনি মারা যান। রেজাউল মল্লিক পুরাতন আমদহ গ্রামের রহিম মল্লিকের ছেলে। উল্লেখ্য ২০০১ সালে রমজান মাসে কুষ্টিয়া শহরের কুঠিপাড়ায় বিষাক্ত স্পিরিট পানে ১৬ জনের অস্বাভাবিক মৃত্যু দিয়ে শুরু হয়ে গত ১০ বছরের কুষ্টিয়ার ৬ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় উপজেলায় ৩৮ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। গত ২০১১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়ার দৌলত পুরে ৩ দিনে ৩ জনের মৃত্যু ঘটে এবং শহরের চর আমলা পাড়ায় মারা যায় আরো ১ জন। এছাড়াও আরো ৭ জন স্পিরিটের বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়। অপর দিকে দৌলতপুর কলেজ পাড়ার খবির উদ্দিন ওরফে ভ্যাগল (৫২) নামের এক ব্যাক্তি ঈদের দিন রাতে উপজেলার তারাগুনিয়া বাজার থেকে বিষাক্ত মদ পান করেন। এর পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে ওই দিন তাকে দৌলতপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হলে ১৪ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার বেলা সোয়া ১১ টায় তার মৃত্যু হয়। সংসার তথা তার পরিবারের একমাত্র উপার্জনাক্ষম মানুষটির এভাবে অসময়ে অনাকাংখিত মৃত্যুর দায়িত্ব নেবে কে? এমন প্রশ্ন অতিসম্প্রতি কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে ঘটে যাওয়া বিষাক্ত স্পিরিট ট্রাজেডীতে মৃত্যু বরণকারী যুবলীগ কর্মী পিনু সরদারের পরিবারসহ একাধিক পরিবারের স্বজনদের। এসব ঘটনায় অভিযুক্ত করে পুলিশ অভিযান চালিয়ে অবৈধ বিষাক্ত স্পিরিট বিক্রেতাদের মাঝে মধ্যে গ্রেফতার করলেও প্রত্যক্ষ স্বাক্ষীর অভাবে তারা খুব তাড়াতাড়ী বেরিয়েও আসছে আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে। কুষ্টিয়া মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আইউব আলী মিয়া জানান,এ্যালকোহল বা স্পিরিট অবাধে বিক্রির কোন লাইসেন্স দেয়া হয়না বা নেই। তবে ওষুধ প্রতিষ্ঠান সহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে স্পিরিট ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়েছে। হোমিও চিকিৎসকদের ৭জন, শিল্পে ২ এবং ল্যাবরেটরি’র জন্য ২টি করে সর্বমোট জেলায় ১১টি প্রতিষ্ঠানকে স্পিরিট ব্যবহারের জন্য লাইসেন্স প্রদান করেছেন। বৈধ লাইসেন্সপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছে-কুষ্টিয়া শহরের ন্যাশনাল হোমিও হল, বেঙ্গল ল্যাবরেটরি, ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি, কুষ্টিয়া চিনিকল, শিলাইদহ ডেইরী ফ্যাক্টরী, কুষ্টিয়ার এন এস রোডের হানিম্যান হোমিও হল, ভেড়ামারার বাবর হোমিও ক্লিনিক, খালেদ হোমিও হল, কুমারখালীর কেণ্ট হোমিও ক্লিনিক, সান্দিয়ারার হানিম্যান হোমিও ফার্মেসী ও তন্নী হোমিও ফার্মেসী। এসব প্রতিষ্ঠান বছরে সর্বোচ্চ ৭৭২ লিটার ও সর্বনিম্ন ১১ লিটার রেক্টিফাইড স্পিরিট উত্তোলন করতে পারবে। ওই সুত্রের দাবী এসব বৈধ লাইসেন্সপ্রাপ্তরা মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বরাদ্দ বাদেও এখতিয়ার বহির্ভুতভাবে কোন প্রকার অনুমোদন ছাড়াই বাংলাদেশ ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর (ড্রাগ)-এর অনুমোদনে প্রয়োজনের অতিরিক্ত হাজার হাজার লিটার হোমিও ওষুধের কাচামাল (ইথানল) হিসেবে রেক্টিফাইড স্পিরিট উত্তোলণ করে নামমাত্র হোমিও চিকিৎসক এবং অবৈধ স্পিরিট, মদ বিক্রেতাদের কাছে দিয়ে মাদকের ভয়াবহতা ছড়াচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এদিকে রেক্টিফাইড স্পিরিট উত্তোলন বা বরাদ্দ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর (ড্রাগ) ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ক্ষমতা ও অগ্রাধিকারের টানাটানিতে বিপর্যস্ত ও নিয়ন্ত্রণহী হয়ে পড়েছে জেলার বিষাক্ত স্পিরিট ট্রাজেডি দমন কার্যক্রম। কোন প্রকার অনুমোদন ছাড়াই এসব প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনের অতিরিক্ত হাজার হাজার লিটার রেক্টিফাইড স্পিরিট উত্তোলণ বন্ধে বা নিয়ন্ত্রণ নিতে অধিকার ও ক্ষমতা নিয়ে এ দুই অধিদপ্তরের মধ্যে মামলা পর্যন্ত গড়িয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। অতিরিক্ত রেক্টিফাইড স্পিরিট উত্তোলণ চলছে অবাধে দেখার কেউ নেই। অপরদিকে প্রায় প্রতিদিনই সীমান্ত দিয়ে চোরাই পথে দেশে শত শত লিটার স্পিরিট ও ভারতীয় মদ প্রবেশ হচ্ছে বলে জানা যায়। এসব স্পিরিট পানে অকালে ঝড়ে পড়ছে যুব সমাজসহ পরিবারের একমাত্র উপার্জনাক্ষম মানুষটি। মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক জানায়, মাদক দ্রব্য অফিস কর্মকর্তা মাদক নিয়ন্ত্রণে কঠোর ভাবে প্রস্তুতি নিয়েছে। যত্র তত্র মাদক বিক্রি যাতে না হয় সে ব্যাপারে টহল দেয়া হবে। এব্যাপারে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মফিজ উদ্দিন আহাম্মেদ জানিয়েছেন যারাই স্পিরিট কিংবা মদ ব্যাবসার সাথে জরিত থাকেন না কেন লাইসেন্সধারীদের বাদ দিয়ে যার-তার কাছে মদ বিক্রি করলে তাদেরকে ছাড় দেয়া হবে না। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে আয়োজিত জেলা আইনশৃংখলা কমিটির সাধারণ সভায় সভাপতির বক্তব্যে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক বনমালী ভৌমিক বলেন, কুষ্টিয়া জেলাকে সম্পূর্ন মাদক মুক্ত রাখতে ও মাদকদ্রব্যের ভয়াবহতা প্রতিরোধে জেলার বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্টগুলোতে কঠোর হস্তে চোরাচালান বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। মাদকদ্রব্যের ভয়াবহতা প্রতিরোধে সমাজের সব শ্রেণী -পেশার মানুষকে সম্মিলিতভাবে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি আগামী দিনের নেতৃত্বদানকারী যুব সমাজ যাতে মরণ নেশা মাদকদ্রব্যে আসক্ত না হয়, সেদিকে গুরুত্ব দিয়ে পুলিশ প্রশাসনসহ মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরকে অভিযান অব্যাহত রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন। সচেতন মহলের দাবী এখনই সময় মরণ নেশা মাদকদ্রব্যের ভয়াবহতার প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও পুলিশ প্রশাসনের কার্যকরী অভিযান চালানো। মাদকের এ ভয়াল গ্রাস ও এর ভয়াবহতা থেকে যুব সমাজকে রক্ষা করতে না পারলে দেশ এক সময় মেধা শূন্যতায় পড়তে পারে বলে তারা মনে করেন।
কুষ্টিয়ায় অজ্ঞাত শিশুর লাশ উদ্ধার
আরিফ মেহমুদ ॥ কুষ্টিয়ার শহরতলীর লাহিনী পশ্চিমপাড়ার সরকারী হ্যাচারী সংলগ্ন পানের বোরজ থেকে অজ্ঞাত কন্যা শিশুর গলায় ফাঁস দেয়া লাশ উদ্ধার করেছে মডেল থানা পুলিশ। আজ রবিবার দুপুরে কুষ্টিয়ার লাহিনীর পশ্চিমপাড়া সরকারী হ্যাচারী সংলগ্ন ঢাকা রোডের পাশে একটি পানের বোরজে গলায় ফাঁস লাগানো লাশ দেখতে পায় স্থানীয়রা। পরে মডেল থানা পুলিশে খবর দিলে সেখান থেকে লাশ উদ্ধার করে। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত লাশের পরিচয় জানতে পারেনি পুলিশ। পুলিশ ও প্রতক্ষদর্শী সুত্রে জানা গেছে, আজ দুপুরে কুষ্টিয়ার লাহিনীর পশ্চিমপাড়া সরকারী হ্যাচারী সংলগ্ন ঢাকা রোডের পাশে একটি পানের বোরজে গলায় ফাঁস লাগানো লাশ দেখতে পায় স্থানীয়রা। এ সময় স্থানীয়রা পাশ্ববর্তী হাউজিং পুলিশ ফাঁড়িতে সংবাদ দিলে পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত করতে কুষ্টিয়া জেনারে হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। লাশের সংবাদ শুনে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জয়নূল আবেদীন, সহকারী পুলিশ সুপার (হেডকোয়াটার) মনিরুজ্জামান মিঠুসহ পুলিশের উদ্ধত্বন কর্তৃপক্ষ। হাউজিং পুলিশ ক্যাম্প আইসি এএসআই দিদার জানান,কন্যা শিশুটিকে দু®কৃতিকারীরা গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করে সেখানে রেখে গেছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
কুষ্টিয়ায় অজ্ঞাত মহিলার লাশ উদ্ধার
আরিফ মেহমুদ ॥ কুষ্টিয়ায় অজ্ঞাত এক মহিলার লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ শনিবার সকালে স্থানীয়রা কুষ্টিয়ার কুমারখালীর লাহিনীর বটতলা এলাকার জিকে ক্যানেলের মধ্যে ভাঁসমান লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয়। বাঁধবাজার পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত করতে কুষ্টিয়া জেনারে হসাপাতালের মর্গে প্ররে করেছে। তবে পুলিশ নিহতের লাশের পরিচয় মেলাতে পারেনী। পুলিশ ও প্রতক্ষদর্শী সুত্রে জানা গেছে, আজ শনিবার সকালে কুষ্টিয়া কুমারখালী উপজেলার বাঁধবাজার এলাকার জোড়া পুকুর সংলগ্ন জিকের মেইন ক্যানেলের পানিতে ভাঁসমান লাশ দেখতে পায়। স্থানীয়রা পাশ্ববর্তী বাঁধবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে সংবাদ দিলে পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত করতে কুষ্টিয়া জেনারে হসাপাতালের মর্গে প্ররে করে। বাঁধবাজার পুলিশ ক্যাম্পের আইসি মিজানুর রহমান জানান, অজ্ঞাত মহিলাকে দু®কৃতিকারীরা হত্যা করে ক্যানেলের পানিতে ফেলে দেয়। পরে লাশটি ভাঁসতে ভাঁসতে জোড়া পুকুর এলাকায় স্থানীয়রা দেখতে পায়। কুমারখালী থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল রাজ্জাক বলেন, নিহতের লাশের ময়নাতদন্ত করার পরই প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে। সে মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে। শেষ খবর পর্যন্ত পুলিশ নিহতের পরিচয় মেলাতে পারেনী।
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)