বৃহস্পতিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০১২

মাদক চোরাচালানের নিরাপদ রুট কুষ্টিয়ার সীমান্ত পথ

আরিফ মেহমুদ ॥ চোরাচালানের অন্যতম রুট কুষ্টিয়ার সীমান্ত পথ। প্রতিদিনই কুষ্টিয়ার বিভিন্ন সীমান্ত পথ দিয়ে আসছে মাদক দ্রব্য। বিভিন্ন যানযোগে সীমান্ত সংলগ্ন হাট-বাজার, বাস ষ্ট্যান্ড, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ মাদক ব্যবসায়ীদের বসতবাড়ি থেকেও মাদকের চালান যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। চলতি বছরের বিভিন্ন সময় স্কুল ব্যাগসহ বিভিন্ন যানবাহন থেকে এবং পরিত্যাক্ত অবস্থায় বিপুল পরিমান মাদক উদ্ধার করেছে পুলিশ, র‌্যাব এবং বিজিবি সদস্যরা। তার পরেও থেমে নেই মাদকের চালান। ঈদ এবং স্বারদীয় দুর্গোৎসবকে সামনে রেখে আরো স্বক্রিয় মাদক পাচারকারীরা। ঈদের আগেই চিলমারী, আবেদের ঘাট, প্রাগপুর এবং নদী পথসহ বেশ কয়েকটি পয়েন্ট দিয়ে মাদক প্রবেশ করতে পারে। সার্বক্ষনিক টহলরত প্রশাসনিক বাহিনীর অনেকের সাথে সখ্যতা রয়েছে তবে ঝামেলা হয় প্রশাসনের বড় কর্মকর্তারা যখন অভিযানে নামে, জানিয়েছে মাদক ব্যবসায়ীদের একটি সুত্র। বিজিবির তথ্যমতে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর অংশে সীমান্ত এলাকার দৈর্ঘ প্রায় ৪৬ কিলোমিটার। সীমান্তে পাহারা দেয়ার জন্য রয়েছে বিজিবি’র ৩ কোম্পানীর অধিনে ১১টি চেকপোষ্ট। দৌলতপুর উপজেলার বেশ কিছু এলাকা একেবারে ভারতের অংশে ঢুকে পড়েছে। আর ওই সব পথ ধরেই আসে মাদকের চালান। সীমান্ত সংলগ্ন চৌকি প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। একটি থেকে অপরটির বেশ দুরত্ব। যার কারনে বিজিবি সদস্যদের চোখ ফাকি দিয়ে সহজেই মাদক পাচারকারীরা অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারে। স্থানীয়রা জানায় জামালপুর, বিলগাথুয়া, ছাতারপাড়া, চল্লি¬শপাড়া, চীলমারির চর, মহিষকুন্ডি, বাগমারি, বাহিরমাঝি, চরবাহির মাঝি, বাংলা বাজার, ভাগজোত, মুন্সিগঞ্জসহ প্রায় ২০ থেকে ২৫টি পয়েন্ট রয়েছে যেখান দিয়ে অবাধে মাদক প্রবেশ করে। ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী ও বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষীদের নজর ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিন ফেন্সিডিল, গাঁজা ও অস্ত্র বাংলাদেশের সীমান্তে ঢুকে পড়ছে। সীমান্ত এলাকার সাধারন জনগণ জানান, যারা মূল ব্যবসায়ী যেমন, চকদিয়ার গ্রামের মাদকের এজেন্ট হাসান, চক সাদিপুর গ্রামের নান্নু, একই গ্রামের মহিবুল, বাশার, সাদিপুরের কাশেম, শাহাপুর গ্রামের এরশাদ, সাদিপুর গ্রামের নাহিদ, ডাঙ্গের বাজার ও পাকুড়িয়া এলাকার লালন, আল্লারদর্গার সাজ্জাদ, যতি, নাঈম, মহিষকুন্ডি এলাকার হাবু, শাহপাড়া এলাকার জাকির, সাদিপুর গ্রামের মিঠুসহ অন্তত ২০/২২ জন মূল ডিলার যারা ভারত থেকে মাদক বাংলাদেশে নিয়ে আসার কাজ করে। এরা সাধারণত দু’দেশের মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যস্থতাকারী বা এজেন্ট হিসেবে কাজ করে থাকে। এজেন্টদের আবার ১০/১২ জনের লেবার গ্র“প রয়েছে। যারা মাদক শ্রমিক হিসেবে কাজ করে তারা প্রত্যেকে এক দিনে ২-৩ হাজার টাকা হাজিরা পায়। তবে পুলিশের কাছে ধরা পড়লে অর্ধৈক খরচ শ্রমিকের আর বাকী অর্ধেক এজেন্ট বহন করে থাকে। ভারতীয় নদীয়া ও মূশিদাবাদ জেলার অভ্যান্তর থেকে গঙ্গা দৌলতপুরের মুন্সিগঞ্জ সীমানায় এসে পদ্মা নামে হয়ে পবেশ করেছে। ভরা জোয়ারে অধিকাংশ মাদক ব্যবসায়ী পেটে বাতাসের বালিশ বানিয়ে কচুরি পানার ঝোপের নিচে নিরাপদে বাংলাদেশ সীমানায় প্রবেশ করে। আর একবার নদী পাড়ি দিতে পারলেই অনায়াসে চলে আসবে ২-৩’শ বোতল ফেন্সিডিল। একই কায়দায় আসছে গাঁজা। দিয়ে পলিথিনের মধ্যে বালিশ বানিয়ে নদীর স্রতে বাংলাদেশের সীমান্তে চলে আসে। মহিলারা পেটের সাথে ফেন্সিডিল ও গাঁজা বেধে নিয়ে তার উপর বোরখা পড়ে নিরাপদে পায়ে হেটে বাংলাদেশের অভ্যান্তরে প্রবেশ করে। নদীতে আসা বেশীর ভাগ ফেন্সিডিল, গাঁজা রায়টা ঘাট দিয়ে প্রবেশ করে এলাকাবাসী জানায়। এছারাও চিলমারির চর এলাকা ফাকা থাকায় পায়ে হেটে, অন্যসব এলাকায় ভারত কাটা তারের সীমানা থাকায় উপারের মাদক ব্যবসায়ীরা তারের উপর দিয়ে ফেলে দেয় আর বাংলাদেশী মাদক ব্যবসায়ীরা তা নিয়ে আসে। এ ভাবেই বেশীর ভাগ মাদক চোরাকারবারিদের দ্বারা এ দেশে প্রবেশ করে। তবে শুধু রাইটার ঘাট নয় সুযোগ বুঝে যে কোন জায়গায় মালনিয়ে ইঠে আসে বহলা তবুওয়াতে। ৩২ বিজিবি’র লেফটেন্ট কর্ণেল আরমান হোসেন জানান, সিমিত লোকবল নিয়ে সীমান্তের সবধরনের অন্যায় মোকাবেলায় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সীমান্ত সুরক্ষিত রাখতে বিজিবি’র সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছে। তবে ঈদ এবং পূজা উপলক্ষে টহল আরো জোরদার করা হয়েছে। কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার মফিজ উদ্দিন বলেন, সীমান্তে বিজিবি’র সাথে পুলিশ সদস্যরাও চোরাকারবারীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলছে। তবে সিমিত জনবল নিয়ে সীমান্ত সুরক্ষার জন্য সাধারণের অংশগ্রহণও প্রয়োজন।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন