বৃহস্পতিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০১২

তত্ত্বাবোধায়ক আমলে কুষ্টিয়ার আলোচিত মামলা স্বাক্ষী প্রমানের অভাবে ফাইনাল শাস্তি হয়নি কারো

আরিফ মেহমুদ ॥ বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের হেভি ওয়েট এমপি ও তাদের কট্টোর সমর্থিত চরম দূর্নীতিবাজ সরকারী কর্মকর্তাদের অবৈধ উপার্জনের কালো টাকা ও অবৈধ সম্পদের পাহাড়ের সন্ধানে তত্ত্বাবোধায়ক সরকার বৃহত্তর কুষ্টিয়ার কয়েকজন এমপি’র বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। সে সময় তত্ত্বাবোধায়ক সরকারের পুলিশ প্রশাসন, টাস্কফোর্স ও দুদক’র বিশেষ টিম এমপিদের বাড়ীতে ঝুটিকা অভিযান চালিয়ে অবৈধ সম্পদের পাহাড়, আয়ের বহির্ভূত কালো টাকা, নামে বে-নামে কোটি কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র, বিদেশী আসবাবপত্র, দামী লগ কাঠসহ রিলিফের হাজার হাজার বান্ডিল ঢেউটিন উদ্ধার করে এবং মামলা দায়ের করে। এই উদ্ধার অভিযান এবং এমপিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরে ঘটনায় তত্ত্ববোধায়ক সরকারের শাসন জনগণের শতভাগ সমর্থন পেলেও সরকার পরিবর্তনে সেই সব আলোচিত মামলাগুলো এখন লাল ফিতায় বন্দি। দুদক ও সংশি¬ষ্টদের মতে এসব মামলা পরিচালনায় প্রয়োজনীয় তথ্য প্রমান ও সময় মত সঠিক স্বাক্ষীর অভাবে বিচারের চুড়ান্ড পর্যায়ের তদন্তে এসে মিথ্য প্রমানীত হওয়ার কারনেই এক পর্যায়ে মামলাগুলো ফাইনাল (খারিজ) হয়ে গেছে,শাস্তি হয়নি কারো। কিন্তু ন্যায় বিচারের স্বার্থে বাস্তবতা ভিন্ন। সে সময় এদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের সবচেয়ে দাপটে ও ক্ষমতাধর নানান দূর্নীতি আর অনিয়ম সেচ্ছাচারিতায় নিমজ্জিত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের হেভি ওয়েট মন্ত্রী, এমপি ও তাদের কট্টোর সমর্থিত চরম দূর্নীতিবাজ সরকারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে এবং মামলা পরিচালনায় সাহস দেখায়নি কেউ। আবার কেউ কেউ অনেকটা চাপের মুখে পড়ে মামলা দায়েরে সম্মতি দিলেও পরে নানান হুমকি এবং সংশি¬ষ্টদের অসহযোগিতার কারনে মামলা পরিচলনায় পিছু হটেছেন, হয়েছেন নিরোৎসাহী। মানা হয়নি মামলা দায়েরের প্রাথমিক শর্তগুলোও। দূর্নীতির অভিযোগে কোন এমপি’র বিরুদ্ধে দুদকের পরিবর্তে পুলিশ,ব্যক্তি বিশেষ কিংবা অন্যকোন ভাবে কেউ না কেউ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছে। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে পুলিশ, দুদক ও টাস্কফোর্সকে বাদ দিয়ে সরসরি কোর্টে এসে মামলা করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে ব্যক্তিগতভাবে। কিন্তু তাতে ফল ভিন্ন। মামলাটি তদন্তের মুখ দেখেনি আজো। এমন সব মামলার সংখ্যা খুব একটা বেশি নয়, হাতে গোনা কয়েকটি। দূর্নীতি দমন কমিশন, সমন্নিত জেলা কার্যালয় (দুদক) কুষ্টিয়া সুত্রে জানা গেছে তত্ত্বাবোধায়ক সরকারের আমলে বৃহত্তর কুষ্টিয়ায় ২০০৭ সালে দুদক কোন মামলা দায়ের করেনি। পুলিশ করেছিল ৮ টি এর সিএস হয়েছে ৩ টি, এফআরটি ৪টি এবং তদন্তের অনুমোদন চেয়ে ঢাকায় কমিশনে পাঠানো হয়েছে ১ টি মামলা। ২০০৮ সালে দুদক মামলা দায়ের করেছে ৩ টি, পুলিশ ৯টি। এর মধ্যে সিএস হয়েছে ৮টি ৩টি এফআরটি এবং ১ বিচারাধীন রয়েছে যশোর কোর্টে। কুষ্টিয়ার এক সাবেক এমপি কুষ্টিয়া বনবিভাগের কয়েক কোটি টাকার দামী মেহগুনি ও সেগুন গাছ বনবিভাগ কিংবা সরকারের কোন প্রকার অনুমোদন ছাড়াই অবৈধভাবে জোর করে কেটে নেন। এই অভিযোগে বনবিভাগের কর্মকর্তা পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে সাবেক এমপি’র বাড়ী অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমান লগ কাঠ, আস্ত কাঠের গুড়ি, কাঠের তকতা উদ্ধার এবং থানায় মামলা দায়ের করে। এঘটনায় জেলা জুড়ে শুধু নয়, পুরো দেশব্যাপী আলোচনার ঝড় উঠে এবং জনগণ এই ক্ষমতাধর এমপি’র কিছু একটা হচ্ছে দেখার জন্য উৎগ্রিব হয়ে উঠে। সে সময় সাবেক এমপি বাড়ীতে উপস্থিত না থাকলেও মুঠোফোনে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও মিডিয়ায় তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা দাবী করে নিজের টাকা দিয়ে কেনা কাঠ বলে বিবৃতি প্রদান করে। মামলাটি বিচারের চুড়ান্ত পর্যায়ে যেয়ে স্বাক্ষী ও প্রমানের অভাবে খারিজ হয়ে যায়। এতে করে সাবেক ওই এমপি’র দাবী অবশেষে সত্য প্রমানিত হয়। মেহেরপুর পৌরচেয়ারম্যান মোত্তাছিম বিল¬াহ মতু’র বিরুদ্ধে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে অডিট আপত্তি তুললে পুলিশ ও দুদক অনুসন্ধ্যান চালিয়ে পৃথকভাবে তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের করে। অপরদিকে ঝিনাইদহ-৩ আসনের সাবেক এমপি মশিউর রহমান রাঙ্গার বিরুদ্ধে রিলিফের ঢেউটিন ও সরকারী উচ্চমুল্যের কয়েক একর জমি অবৈধভাবে দখল করার অভিযোগ উঠে। এব্যাপারে পুলিশ তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। এসব মামলা দায়েরের পর দুদকের কাছে পাঠানো হয়। দুদক মামলাগুলো তদন্তের জন্য চুড়ান্ত অনুমোদন চেয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষ কমিশনে পাঠান। অনুমোদন পেলেও দুদকের বিশেষ টিম তদন্তকালীন এসব মামলার প্রয়োজনীয় তথ্য প্রমান,স্বাক্ষীর অভাব, এবং মামলা দায়েরে সঠিক নিয়ম মানা হয়নি দেখে ফাইনাল (খারিজ) করে দেন। দুদকের দায়ের করা কোন মামলা ফাইনাল বা খারিজ হয়নি। শুধুমাত্র নড়াইলের সাবেক এমপি ধীরেন্দ্রনাথ সাহা’র মামলাটি যশোর কোর্টে বিচারধীন রয়েছে। এসব মামলার বিষয়গুলো তদন্তের সুবিধার্থে প্রতি জেলায় দুদকের অফিস থাকলেও সেগুলো গুটিয়ে বৃহত্তর জেলাগুলো নিয়ে গঠন করা হয় দূর্নীতি দমন কমিশন,সমন্নিত জেলা কার্যালয় (দুদক)। সারা দেশের ন্যায় দূর্নীতি দমন কমিশন,সমন্নিত জেলা কার্যালয় (দুদক) কুষ্টিয়াতেও রয়েছে যথেষ্ট লোকবলের অভাব। ২৫ জন কর্মকর্তার স্থলে মাত্র ১৭ জন কর্মরত আছেন। অবশ্য নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়াও চলছে। ফলে বর্তমানে যে সব মামলা দায়ের হয়েছে সেগুলো দ্রুত তদন্তেও নানান জটিলতা ও কালক্ষেন হচ্ছে। প্রয়োজনীয় তথ্য প্রমান ও স্বাক্ষীর অভাবেই কি এসব আলোচিত মামলাগুলো বিচারের কাঠগড়া পর্যন্ত গড়াইনি নাকি রাজনৈতিক নেতা বিবেচনায় বিচার ছাড়াই অকাল মৃত্যু সেটি খতিয়ে দেখার কেউ নেই।

 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন