আরিফ মেহমুদ ॥ কুষ্টিয়া-৪ (খোকসা-কুমারখালী) আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য বেগম সুলতানা তরুন বলেছেন, বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের জীবন ছিল বৈচিত্রময়। এই মরমী সাধকের প্রাতিষ্ঠানিক কোন শিক্ষা না থাকলেও তিনি ছিলেন আধুনিক সমাজ বিন্যাসে স্ব-শিক্ষায় শিক্ষিত। ধর্ম আর জাতি ভেদাভেদ ভুলে মানুষের কল্যাণে কি অসীম মর্মকথা বলেছেন তিনি। একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী সাম্যের সমাজ গড়তে চেয়ে ছিলেন লালন সাঁই । তিনি পথভ্রষ্ট মানুষের মুক্তির জন্য তাঁর বাউলতত্বের মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক অহিংস মানবতার ডাক দিয়েছিলেন। তিনি ধর্মের দোহায় দিয়ে জাতি ভেদাভেদ ও সমাজের শ্রেণী বিভেদের ঘরতর বিরোধী ছিলেন। তাঁর অমর সৃষ্টির বিশালতা অনেক গভীর ও বিশাল। লালন সাঁই সমাজের সকল শ্রেণী ধর্মের মানুষকে আমৃত্যুকাল পর্যন্ত এক করে দেখেছেন। তাঁর জ্ঞানকে কোন ভাবেই দেশের গন্ডির মধ্যে আবদ্ধ রাখা যায়নি। তাঁর অমর সৃষ্টি গান আপন মহিমায় ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বময়। জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই মরমী সাধক লালন সাঁইয়ের অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী হয়ে দেশটাকে সোনার বাংলা ও সকল ধর্মের দেশে পরিণত করতে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট গড়তে চেয়েছিলেন। আজকে বিরোধী দলের নেতা জাতি ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করছে। কক্সবাজারের রামুতে অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে ধ্বংশ করতে দেশের একটি সংখ্যালঘু গোষ্ঠির ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে অপমানিত করেছে। এভাবে সাম্প্রায়ীকতা উসকে দিয়ে বিরোধী দলীয় নেতা জণগণের আস্থা অর্জন করতে পারবেন না। তিনি বলেন প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার্থে বলেছেন ধর্ম যার যার, উৎসব বাঙালী জাতির সবার। গতকাল শনিবার রাতে ছেঁউড়িয়ার আখড়া বাড়ীতে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসন ও লালন একাডেমির আয়োজনে বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের ৫ দিনব্যাপী স্মরণোৎসবের সমাপর্নী দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড.অরবিন্দু সাহা, কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড.মহিউদ্দিন, কুষ্টিয়া সরকারী কলেজের অধ্যাপক স্বপন কুমার রায়, এ্যাড.জহুরুল হক, বীরমুক্তিযোদ্ধা জাহিদুল ইসলাম। আলোচক হিসেবে আলোচনা করেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড.সরোয়ার মুর্শেদ রতন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ড.মল্লিক আনোয়ার হোসেন। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বাংলা লিংকের পি আর এন্ড কমিউনিকেশন এ্যাসিস্টেন্ট ম্যানেজার শিবলী সাদিক। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন লালন একাডেমির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এনডিসি মাসুম আলী বেগ। এবারের স্বরণোৎসবের অনুষ্ঠানে আসা দেশ-বিদেশের লাখ ভক্ত অনুরাগী ও সাধু-গুরুদের চরণ ধূলায় সিক্ত বাউল সম্রাটের ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়ী। সাঁইজির মতাদর্শের ধর্ম আর জাতি ভেদাভেদ ভুলে মানুষের কল্যাণে মানুষ নিবেদিত থাক চিরকাল এবং মানবতার নিগুড় প্রেমের ভাবধারা বর্তমান সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে ভক্তকুলের এই অঙ্গীকার-সভ্যতার এই যুগে মানুষ মানুষে হিংসা বিদ্বেশ ভূলে সাঁইজির ধর্ম দর্শনের চিরাচরিত‘সত্য বল সুপথে চল ওরে আমার মন’ আমার মনেরে বুঝায় কেমনে’ মিলন হবে কত দিনে এই শ্লোগানকে বাস্তবায়নে সদা সত্য ও সঠিক পথে চলে দেশ ও জাতির উন্নয়নে নিজেদেরকে নিয়োজিত রাখবো। মরমী সাধক বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের অহিংস মানবতা ও ফকিরী মতবাদের জাতহীন মানব দর্শন ও সঙ্গীত দেশের সীমানা পেরিয়ে বিশ্বাঙ্গনে নিজের মহিমায় জায়গা করে নিলেও বাংলা ভাষা ব্যাতিত অন্য কোন ভাষায় প্রকাশ, প্রচার ও প্রসার ঘটেনি তেমন একটা। মানবতা মুক্তি ও ভক্তির পথকে প্রতিষ্ঠা করতেই তিনি হাজারো ভাবধারার গান সৃষ্টি করছেন। কিন্তু তা বিশ্ববাসীকে নাড়া দিতে পারেনি যথার্থ একাডেমিক প্রচার আর প্রকাশনার অভাবে। তাঁর সঙ্গীত গতানুগতিক ভাবে প্রচার ও প্রকাশ হলে চলবেনা। বিশ্বের বিশিষ্ট গবেষকেরা লালনের সৃষ্টি আরো নতুন নতুন তথ্য জানতে চাই। আলোচনা শেষে লালন প্রধান অতিথি ও অন্যান্য অতিথিবৃন্দ একাডেমি কর্তৃক জেলার ৬ উপজেলার শিল্পীদের নিয়ে লালন সঙ্গীত প্রতিযোগীতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন। দ্বিতীয় পর্বে লালন মঞ্চে বিভিন্ন শিল্পি ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সমন্বয়ে লালন সংগীতি পরিবেশিত হয়। এতে সংগীত পরিবেশন করেন এদেশের প্রখ্যাত লোক ও লালন সংগীত শিল্পী সমীর বাউল সহ দেশের খ্যাতিনামা শিল্পীবৃন্দ ও লালন একাডেমীর স্থানীয় শিল্পিরা। ৫দিনব্যাপী স্বরণোৎসবের অনুষ্ঠানমালার সার্বিক পরিচালনা ও উপস্থাপনা করেন কবি শুকদেব সাহা, খন্দকার লুৎফর রহমান, সুমাইয়া খানম ইভা ও কনক চৌধুরী।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন