আরিফ মেহমুদ ॥ প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেছেন, বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ সকল ধর্মের সীমাবদ্ধতা ছাড়িয়ে সদা সত্য পথে চলতে মানুষকে মানবতাবাদীর পথে ডাক দিয়ে ছিলেন। তিনি অহিংস মানবতার ব্রত নিয়ে দেহতত্ব, ভাবতত্ব, গুরুতত্বসহ অসংখ্য গান সৃষ্টি করে গেছেন। তাঁর এই অমর সৃষ্টি সঙ্গীত কোন ধর্মের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। সকল ধর্মের উর্ধে থেকে সম্প্রীতির বাধনে আবদ্ধ করতে মরমী সাধক বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ মানব মুক্তির জন্য সৃষ্টি করেছিলেন ফকিরী মতবাদ। তাঁর মানব দর্শন আজ আর কুষ্টিয়ার কুমারখালির ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়ীর মধ্যে আবদ্ধ নেই। লালন ফকিরের জাতহীন মানব দর্শন ও সঙ্গীত সার্বজনিন বিদিত বিশ্বাঙ্গনে। মানবতার ভাবধারাকে প্রতিষ্ঠিত করতে একটি অসাম্প্রদায়ীক সাম্যের সমাজ চেয়ে ছিলেন তিনি। লালন মানুষকে শিখিয়েছিলেন কোন ধর্মের মধ্যে আবদ্ধ থেকে সম্প্রীতি বজায় রাখা যায় না। সকল ধর্মের উপর মানব ধর্ম। এই মরমী সাধকের প্রাতিষ্ঠানিক কোন শিক্ষা না থাকলেও তিনি ছিলেন আধুনিক সমাজ বিন্যাসে স্ব-শিক্ষিত। ধর্ম আর জাতি ভেদাভেদ ভুলে মানুষের কল্যাণে কি অসীম মর্মকথা বলেছেন তিনি। গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮ টায় বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের ছেঁউড়িয়ার আখড়া বাড়ীতে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন ও লালন একাডেমির আয়োজনে বাউল সম্রাটের ১২২ তম মৃত্যুবার্ষিকীর ৫ দিনব্যাপী স্মরণোৎসব অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতেই আগত অতিথিদের কুষ্টিয়া লালন একাডেমীর পক্ষ থেকে ফুলের তোড়া, ক্রেষ্ট ও আত্মসুদ্ধির প্রতীক একতারা উপহার দিয়ে বরণ করে নেন। খুলনা বিভাগীয় কমিশনার আব্দুল জলিলের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়া-৪ (খোকসা-কুমারখালী) আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য বেগম সুলতানা তরুন, কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ, ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক খাজা আব্দুল হান্নান, মেহেরপুর জেলা প্রশাসক দেলোয়ার হোসেন,কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী, কুমারখালী উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ, লালন একাডেমির সাবেক সাধারণ সম্পাদক তাইজাল আলী খান, কুষ্টিয়া শিশু হাসপাতালের সাধারণ সম্পাদক আক্কাস আলী মঞ্জু। স্বাগত বক্তব্য রাখবেন কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক বনমালী ভৌমিক। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখবেন বাংলালিংক খুলনা’র রিজিওনাল কমার্শিয়াল হেড বাবুল হক। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করবেন কুমারখালী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান। প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে আরো বলেন, ধর্মের অন্ধক্বের প্রাচীর ভেঙ্গে বাউল সম্রাট লালন মানুষকে ভালবাসার দিক্ষা দিয়েছেন। তিনি বলেন যারা রামুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে ধর্মের নামে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চান তারা দেশ ও জাতির শত্র“। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ সরকার সকল ধর্ম বর্ণের মানুষের ধর্মীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত ও ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী বলেই বিরোধী দলের হিংসার কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। জাতির মধ্যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধাতে এবং দেশের সম্প্রীতি নষ্ট করেত বিরোধী দল তাদের আশির্বাদপুষ্ট জঙ্গীদের দিয়ে রামুতে হামলা চালিয়েছে। তিনি বলেন এদেশে একমাত্র আওয়ামীলীগ সরকারই পারে সকল ধর্ম বর্ণের মানুষকে নিয়ে একসাথে বসবাস করতে। যারা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধিয়ে সুবিধা আদায় করতে চাই তাদেরকে ঘৃণা জানায়। আলোচনার আগে তিনি লালন উম্মুক্ত চত্বরে বিশালাকারের বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের ভাসকর্য উদ্দোধন করেন। তিনি কুষ্টিয়াতে লালনের সৃষ্টিকে চিরদিন বাঁচিয়ে রাখতে লালন একাডেমিতে এসি ও জেনারেটর সহ একাডেমির প্রস্তাবনা অনুযায়ী এখানে অতিথিশালা, লালন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করার প্রতিশ্র“তি ব্যক্ত করেন। ৫ দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী দিনে গতকাল লালন একাডেমী চত্বরে তিল ধারনের ঠাঁই ছিল না। বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ তাঁর জীবদ্দশায় দোল পূর্ণিমার তিথিতে স্মরণোৎসব পালন করতেন। আয়োজিত অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে কালী নদীর তীরে অবস্থিত উন্মুক্ত মঞ্চে প্রতিদিন লালন বিষয়ক আলোচনা, বিভিন্ন শিল্পী ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সমন্বয়ে লালনগীতি পরিবেশন এবং আখড়া বাড়ির বিশাল এলাকা জুড়ে বসেছে লালন মেলা। মাজারের অভ্যান্তরে আয়না মহলে চলছে সাধু-ভক্তদের লালনগীতি পরিবেশন। আলোচনা শেষে দ্বিতীয় পর্বে লালন মঞ্চে বিভিন্ন শিল্পি ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সমন্বয়ে পরিবেশিত হয় লালন সংগীতি।এতে উদ্বোধনী প্রার্থনা সংগীত পরিবেশন করেন কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক বনমালী ভৌমিকের পতœী রাখী ভৌমিক সহ লালন একাডেমীর স্থানীয় শিল্পিরা। গভীর রাত পর্যন্ত চলে এই সংগীত পরিবেশন। উৎসবকে ঘিরে পুরো একাডেমি চত্ত্বরে খন্ড-খন্ড স্থানে গান পরিবেশনের সময় দর্শক-শ্রোতারাও নেচে-গেয়ে গানের সাথে সাথে তাল দেয়। দর্শক-শ্রোতারা কখনো পিন-পতন নীরবতায় গান শুনছেন আবার কখনো গানের তালের সাথে সাথে করতালি দিয়ে মুখর করে তুলছেন বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ’র আখড়াবাড়ীর আঙ্গীনা। ৫দিনব্যাপী বাউল সম্রাট লালন শাহের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানটি সার্বিক উপস্থাপনা ও পরিচালনা করেন কবি শুকদেব সাহা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন