বৃহস্পতিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০১২

মাদক চোরাচালানের নিরাপদ রুট কুষ্টিয়ার সীমান্ত পথ

আরিফ মেহমুদ ॥ চোরাচালানের অন্যতম রুট কুষ্টিয়ার সীমান্ত পথ। প্রতিদিনই কুষ্টিয়ার বিভিন্ন সীমান্ত পথ দিয়ে আসছে মাদক দ্রব্য। বিভিন্ন যানযোগে সীমান্ত সংলগ্ন হাট-বাজার, বাস ষ্ট্যান্ড, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ মাদক ব্যবসায়ীদের বসতবাড়ি থেকেও মাদকের চালান যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। চলতি বছরের বিভিন্ন সময় স্কুল ব্যাগসহ বিভিন্ন যানবাহন থেকে এবং পরিত্যাক্ত অবস্থায় বিপুল পরিমান মাদক উদ্ধার করেছে পুলিশ, র‌্যাব এবং বিজিবি সদস্যরা। তার পরেও থেমে নেই মাদকের চালান। ঈদ এবং স্বারদীয় দুর্গোৎসবকে সামনে রেখে আরো স্বক্রিয় মাদক পাচারকারীরা। ঈদের আগেই চিলমারী, আবেদের ঘাট, প্রাগপুর এবং নদী পথসহ বেশ কয়েকটি পয়েন্ট দিয়ে মাদক প্রবেশ করতে পারে। সার্বক্ষনিক টহলরত প্রশাসনিক বাহিনীর অনেকের সাথে সখ্যতা রয়েছে তবে ঝামেলা হয় প্রশাসনের বড় কর্মকর্তারা যখন অভিযানে নামে, জানিয়েছে মাদক ব্যবসায়ীদের একটি সুত্র। বিজিবির তথ্যমতে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর অংশে সীমান্ত এলাকার দৈর্ঘ প্রায় ৪৬ কিলোমিটার। সীমান্তে পাহারা দেয়ার জন্য রয়েছে বিজিবি’র ৩ কোম্পানীর অধিনে ১১টি চেকপোষ্ট। দৌলতপুর উপজেলার বেশ কিছু এলাকা একেবারে ভারতের অংশে ঢুকে পড়েছে। আর ওই সব পথ ধরেই আসে মাদকের চালান। সীমান্ত সংলগ্ন চৌকি প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। একটি থেকে অপরটির বেশ দুরত্ব। যার কারনে বিজিবি সদস্যদের চোখ ফাকি দিয়ে সহজেই মাদক পাচারকারীরা অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারে। স্থানীয়রা জানায় জামালপুর, বিলগাথুয়া, ছাতারপাড়া, চল্লি¬শপাড়া, চীলমারির চর, মহিষকুন্ডি, বাগমারি, বাহিরমাঝি, চরবাহির মাঝি, বাংলা বাজার, ভাগজোত, মুন্সিগঞ্জসহ প্রায় ২০ থেকে ২৫টি পয়েন্ট রয়েছে যেখান দিয়ে অবাধে মাদক প্রবেশ করে। ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী ও বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষীদের নজর ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিন ফেন্সিডিল, গাঁজা ও অস্ত্র বাংলাদেশের সীমান্তে ঢুকে পড়ছে। সীমান্ত এলাকার সাধারন জনগণ জানান, যারা মূল ব্যবসায়ী যেমন, চকদিয়ার গ্রামের মাদকের এজেন্ট হাসান, চক সাদিপুর গ্রামের নান্নু, একই গ্রামের মহিবুল, বাশার, সাদিপুরের কাশেম, শাহাপুর গ্রামের এরশাদ, সাদিপুর গ্রামের নাহিদ, ডাঙ্গের বাজার ও পাকুড়িয়া এলাকার লালন, আল্লারদর্গার সাজ্জাদ, যতি, নাঈম, মহিষকুন্ডি এলাকার হাবু, শাহপাড়া এলাকার জাকির, সাদিপুর গ্রামের মিঠুসহ অন্তত ২০/২২ জন মূল ডিলার যারা ভারত থেকে মাদক বাংলাদেশে নিয়ে আসার কাজ করে। এরা সাধারণত দু’দেশের মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যস্থতাকারী বা এজেন্ট হিসেবে কাজ করে থাকে। এজেন্টদের আবার ১০/১২ জনের লেবার গ্র“প রয়েছে। যারা মাদক শ্রমিক হিসেবে কাজ করে তারা প্রত্যেকে এক দিনে ২-৩ হাজার টাকা হাজিরা পায়। তবে পুলিশের কাছে ধরা পড়লে অর্ধৈক খরচ শ্রমিকের আর বাকী অর্ধেক এজেন্ট বহন করে থাকে। ভারতীয় নদীয়া ও মূশিদাবাদ জেলার অভ্যান্তর থেকে গঙ্গা দৌলতপুরের মুন্সিগঞ্জ সীমানায় এসে পদ্মা নামে হয়ে পবেশ করেছে। ভরা জোয়ারে অধিকাংশ মাদক ব্যবসায়ী পেটে বাতাসের বালিশ বানিয়ে কচুরি পানার ঝোপের নিচে নিরাপদে বাংলাদেশ সীমানায় প্রবেশ করে। আর একবার নদী পাড়ি দিতে পারলেই অনায়াসে চলে আসবে ২-৩’শ বোতল ফেন্সিডিল। একই কায়দায় আসছে গাঁজা। দিয়ে পলিথিনের মধ্যে বালিশ বানিয়ে নদীর স্রতে বাংলাদেশের সীমান্তে চলে আসে। মহিলারা পেটের সাথে ফেন্সিডিল ও গাঁজা বেধে নিয়ে তার উপর বোরখা পড়ে নিরাপদে পায়ে হেটে বাংলাদেশের অভ্যান্তরে প্রবেশ করে। নদীতে আসা বেশীর ভাগ ফেন্সিডিল, গাঁজা রায়টা ঘাট দিয়ে প্রবেশ করে এলাকাবাসী জানায়। এছারাও চিলমারির চর এলাকা ফাকা থাকায় পায়ে হেটে, অন্যসব এলাকায় ভারত কাটা তারের সীমানা থাকায় উপারের মাদক ব্যবসায়ীরা তারের উপর দিয়ে ফেলে দেয় আর বাংলাদেশী মাদক ব্যবসায়ীরা তা নিয়ে আসে। এ ভাবেই বেশীর ভাগ মাদক চোরাকারবারিদের দ্বারা এ দেশে প্রবেশ করে। তবে শুধু রাইটার ঘাট নয় সুযোগ বুঝে যে কোন জায়গায় মালনিয়ে ইঠে আসে বহলা তবুওয়াতে। ৩২ বিজিবি’র লেফটেন্ট কর্ণেল আরমান হোসেন জানান, সিমিত লোকবল নিয়ে সীমান্তের সবধরনের অন্যায় মোকাবেলায় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সীমান্ত সুরক্ষিত রাখতে বিজিবি’র সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছে। তবে ঈদ এবং পূজা উপলক্ষে টহল আরো জোরদার করা হয়েছে। কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার মফিজ উদ্দিন বলেন, সীমান্তে বিজিবি’র সাথে পুলিশ সদস্যরাও চোরাকারবারীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলছে। তবে সিমিত জনবল নিয়ে সীমান্ত সুরক্ষার জন্য সাধারণের অংশগ্রহণও প্রয়োজন।


কুষ্টিয়ায় ভিজিএফ’র চাল আত্মসাতের দায়ে ইউপি সদস্য গ্রেফতার

আরিফ মেহমুদ ॥ কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার খলিষাকুন্ডি ইউনিয়নে দুস্থ ও দরিদ্রদের জন্য বরাদ্দ দেয়া ভিজিএফ’র চাল আত্মসাতের দায়ে কোরবান আলী (৩৮) নামে এক ইউপি সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল বুধবার রাতে তাকে খলিষাকুন্ডি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে গ্রেফতার করা হয়। দৌলতপুর থানার ওসি জাহির হোসেন জানান, ওই ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের সদস্য কোরবান আলীকে ভিজিএফ’র ২২০বস্তা চাল উত্তোলনের জন্য সংশি¬ষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান দায়িত্ব দিলে তিনি গতকাল বুধবার বিকেলে ২০৬ বস্তা চাল ইউনিয়ন পরিষদে জমা দেন। ১৪ বস্তা চাল আত্মসাত করার অভিযোগ এনে ওই এলাকার অন্যান্য ইউপি সদস্যগণ দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ইকবাল আখতারের নিকট অভিযোগ দিলে তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে চাল আত্মসাতকারী ইউপি সদস্য কোরবান আলীকে আটক করে দৌলতপুর থানায় সোপর্দ করেন। এঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। তবে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য কোরবান আলী জানান, সে কোন চাল আত্মসাত করেননি। গতকাল বুধবার বিকেলে দৌলতপুর খাদ্য গুদাম থেকে চাল উত্তোলন করার সময় স্থানীয় আ’লীগ দলীয় লোকজন তার কাছ থেকে ১৪ বস্তা চাল কেড়ে নিয়েছে।

দৌলতপুরের মথুরাপুর ইউপিতে ভিজিএফ বিতরণে অনিয়ম

আরিফ মেহমুদ ॥ কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ২নং-মথুরাপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ডে বরাদ্দকৃত ভিজিএফ’র চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। গরীব অসহায় ও সুস্থদের মাঝে পবিত্র ঈদুল আযহার আনন্দ ধরে রাখতে সরকার ভিজিডি প্রোগ্রামের মাধ্যমে প্রতি ইউনিয়নে প্রায় ১৫ হাজার থেকে শুরু করে ২০হাজার কেজি চাউল বরাদ্দ দেয়। এসব চাউল দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের কাছে পৌছে দেয়া হয়েছে।একটি হল-নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকার জাতীয় সংসদ সদস্য এমপি মহোদ্বয়দের ব্যক্তিগত নামের পাওয়া প্রতি ইউনিয়নের জন্য ৫হাজার কেজি এবং দুই হল- উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তর থেকে বরাদ্দকৃত। যা প্রতি ইউনিয়নের প্রায় ১৫শত থেকে ২ হাজার গরীব অসহায় ও সুস্থ পরিবারের মাঝে বিলি-বণ্টন করা যাবে। বরাদ্দকৃত চাউল পরিবার প্রতি ১০ কেজি হারে বিতরণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ভিজিএফ’র চাউল বিতরনের আগে ইউনিয়নের প্রতি ওয়ার্ডের নির্বাচিত ইউপি মেম্বরগণ এলাকার গরীব অসহায়,সুস্থদের নামের তালিকা সংশি¬ষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে জমা দেন। পবিত্র ঈদুল আযহার আনন্দ ধরে রাখতে স্ব স্ব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাগণ ঈদের কয়েকদিন আগে এসব চাউল বিতরণের নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশ মোতাবেক চাউল বিতরণ চলছে দৌলতপুর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে। কেমন চলছে সরকারের ভিজিএফ প্রোগ্রামের চাউল বিতরণ দেখতে গতকাল সরেজমিন উপজেলার ২নং-মথুরাপুর ইউনিয়নের ৬ এবং ৭ নং-ওয়ার্ডে গিয়েছিলাম। এ দুই ৬ নং-ওয়ার্ডের কান্দির পাড়া এবং ৭ নং-ওয়ার্ডেরে গইড়িপাড়া গ্রামে যেয়ে বেশ কিছু মহিলা-পুরুষের জটলা চোখে পড়ে। শোনা যায়,চাউল না পাওয়ার সরগোল। কি হয়েছে প্রশ্ন করতেই দৌলতপুর আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য এমপি মহোদ্বয়ের ব্যক্তিগত ভিজিএফ তালিকার লোকজন। এই দুই ওয়ার্ডে প্রায় ২শত ভিজিএফ তালিকার গরীব অসহায় ও সুস্থ পরিবার রয়েছে। তাদের নামে বরাদ্দকৃত চাউল পায়নি তারা। চালের জন্য মেম্বার সাহেবের বাড়ী পর্যন্ত গিয়েছে কিন্তু কোন লাভ হয়নি। কারো কারো সাথে মেম্বার সাহেবের কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন চাউল বিতরণ হয়ে গেছে। কোথায় কিভাবে এ চাউল বিতরণ হয়েছে তার কিছুই জানেনা এসব গরীব অসহায় ও সুস্থ পরিবারের লোকজন। এক কেজিও চাউল পায়নি তারা। চাউল বিতরণ না হওয়ার ব্যাপারে মোবাইল ফোনে কথা হয় ২নং-মথুরাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলামের সাথে। তিনিও জানান চাউল বিতরণ করা হয়েছে। এসব মিথ্যা অভিযোগ। সরকার দলীয় লোকজন আমার এবং আমার ইউনিয়নের মেম্বার ও ইউনিয়নের সুনাম নষ্ট করতে এধরনের অভিযোগ করছে। প্রয়োজনে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

তত্ত্বাবোধায়ক আমলে কুষ্টিয়ার আলোচিত মামলা স্বাক্ষী প্রমানের অভাবে ফাইনাল শাস্তি হয়নি কারো

আরিফ মেহমুদ ॥ বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের হেভি ওয়েট এমপি ও তাদের কট্টোর সমর্থিত চরম দূর্নীতিবাজ সরকারী কর্মকর্তাদের অবৈধ উপার্জনের কালো টাকা ও অবৈধ সম্পদের পাহাড়ের সন্ধানে তত্ত্বাবোধায়ক সরকার বৃহত্তর কুষ্টিয়ার কয়েকজন এমপি’র বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। সে সময় তত্ত্বাবোধায়ক সরকারের পুলিশ প্রশাসন, টাস্কফোর্স ও দুদক’র বিশেষ টিম এমপিদের বাড়ীতে ঝুটিকা অভিযান চালিয়ে অবৈধ সম্পদের পাহাড়, আয়ের বহির্ভূত কালো টাকা, নামে বে-নামে কোটি কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র, বিদেশী আসবাবপত্র, দামী লগ কাঠসহ রিলিফের হাজার হাজার বান্ডিল ঢেউটিন উদ্ধার করে এবং মামলা দায়ের করে। এই উদ্ধার অভিযান এবং এমপিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরে ঘটনায় তত্ত্ববোধায়ক সরকারের শাসন জনগণের শতভাগ সমর্থন পেলেও সরকার পরিবর্তনে সেই সব আলোচিত মামলাগুলো এখন লাল ফিতায় বন্দি। দুদক ও সংশি¬ষ্টদের মতে এসব মামলা পরিচালনায় প্রয়োজনীয় তথ্য প্রমান ও সময় মত সঠিক স্বাক্ষীর অভাবে বিচারের চুড়ান্ড পর্যায়ের তদন্তে এসে মিথ্য প্রমানীত হওয়ার কারনেই এক পর্যায়ে মামলাগুলো ফাইনাল (খারিজ) হয়ে গেছে,শাস্তি হয়নি কারো। কিন্তু ন্যায় বিচারের স্বার্থে বাস্তবতা ভিন্ন। সে সময় এদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের সবচেয়ে দাপটে ও ক্ষমতাধর নানান দূর্নীতি আর অনিয়ম সেচ্ছাচারিতায় নিমজ্জিত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের হেভি ওয়েট মন্ত্রী, এমপি ও তাদের কট্টোর সমর্থিত চরম দূর্নীতিবাজ সরকারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে এবং মামলা পরিচালনায় সাহস দেখায়নি কেউ। আবার কেউ কেউ অনেকটা চাপের মুখে পড়ে মামলা দায়েরে সম্মতি দিলেও পরে নানান হুমকি এবং সংশি¬ষ্টদের অসহযোগিতার কারনে মামলা পরিচলনায় পিছু হটেছেন, হয়েছেন নিরোৎসাহী। মানা হয়নি মামলা দায়েরের প্রাথমিক শর্তগুলোও। দূর্নীতির অভিযোগে কোন এমপি’র বিরুদ্ধে দুদকের পরিবর্তে পুলিশ,ব্যক্তি বিশেষ কিংবা অন্যকোন ভাবে কেউ না কেউ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছে। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে পুলিশ, দুদক ও টাস্কফোর্সকে বাদ দিয়ে সরসরি কোর্টে এসে মামলা করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে ব্যক্তিগতভাবে। কিন্তু তাতে ফল ভিন্ন। মামলাটি তদন্তের মুখ দেখেনি আজো। এমন সব মামলার সংখ্যা খুব একটা বেশি নয়, হাতে গোনা কয়েকটি। দূর্নীতি দমন কমিশন, সমন্নিত জেলা কার্যালয় (দুদক) কুষ্টিয়া সুত্রে জানা গেছে তত্ত্বাবোধায়ক সরকারের আমলে বৃহত্তর কুষ্টিয়ায় ২০০৭ সালে দুদক কোন মামলা দায়ের করেনি। পুলিশ করেছিল ৮ টি এর সিএস হয়েছে ৩ টি, এফআরটি ৪টি এবং তদন্তের অনুমোদন চেয়ে ঢাকায় কমিশনে পাঠানো হয়েছে ১ টি মামলা। ২০০৮ সালে দুদক মামলা দায়ের করেছে ৩ টি, পুলিশ ৯টি। এর মধ্যে সিএস হয়েছে ৮টি ৩টি এফআরটি এবং ১ বিচারাধীন রয়েছে যশোর কোর্টে। কুষ্টিয়ার এক সাবেক এমপি কুষ্টিয়া বনবিভাগের কয়েক কোটি টাকার দামী মেহগুনি ও সেগুন গাছ বনবিভাগ কিংবা সরকারের কোন প্রকার অনুমোদন ছাড়াই অবৈধভাবে জোর করে কেটে নেন। এই অভিযোগে বনবিভাগের কর্মকর্তা পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে সাবেক এমপি’র বাড়ী অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমান লগ কাঠ, আস্ত কাঠের গুড়ি, কাঠের তকতা উদ্ধার এবং থানায় মামলা দায়ের করে। এঘটনায় জেলা জুড়ে শুধু নয়, পুরো দেশব্যাপী আলোচনার ঝড় উঠে এবং জনগণ এই ক্ষমতাধর এমপি’র কিছু একটা হচ্ছে দেখার জন্য উৎগ্রিব হয়ে উঠে। সে সময় সাবেক এমপি বাড়ীতে উপস্থিত না থাকলেও মুঠোফোনে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও মিডিয়ায় তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা দাবী করে নিজের টাকা দিয়ে কেনা কাঠ বলে বিবৃতি প্রদান করে। মামলাটি বিচারের চুড়ান্ত পর্যায়ে যেয়ে স্বাক্ষী ও প্রমানের অভাবে খারিজ হয়ে যায়। এতে করে সাবেক ওই এমপি’র দাবী অবশেষে সত্য প্রমানিত হয়। মেহেরপুর পৌরচেয়ারম্যান মোত্তাছিম বিল¬াহ মতু’র বিরুদ্ধে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে অডিট আপত্তি তুললে পুলিশ ও দুদক অনুসন্ধ্যান চালিয়ে পৃথকভাবে তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের করে। অপরদিকে ঝিনাইদহ-৩ আসনের সাবেক এমপি মশিউর রহমান রাঙ্গার বিরুদ্ধে রিলিফের ঢেউটিন ও সরকারী উচ্চমুল্যের কয়েক একর জমি অবৈধভাবে দখল করার অভিযোগ উঠে। এব্যাপারে পুলিশ তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। এসব মামলা দায়েরের পর দুদকের কাছে পাঠানো হয়। দুদক মামলাগুলো তদন্তের জন্য চুড়ান্ত অনুমোদন চেয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষ কমিশনে পাঠান। অনুমোদন পেলেও দুদকের বিশেষ টিম তদন্তকালীন এসব মামলার প্রয়োজনীয় তথ্য প্রমান,স্বাক্ষীর অভাব, এবং মামলা দায়েরে সঠিক নিয়ম মানা হয়নি দেখে ফাইনাল (খারিজ) করে দেন। দুদকের দায়ের করা কোন মামলা ফাইনাল বা খারিজ হয়নি। শুধুমাত্র নড়াইলের সাবেক এমপি ধীরেন্দ্রনাথ সাহা’র মামলাটি যশোর কোর্টে বিচারধীন রয়েছে। এসব মামলার বিষয়গুলো তদন্তের সুবিধার্থে প্রতি জেলায় দুদকের অফিস থাকলেও সেগুলো গুটিয়ে বৃহত্তর জেলাগুলো নিয়ে গঠন করা হয় দূর্নীতি দমন কমিশন,সমন্নিত জেলা কার্যালয় (দুদক)। সারা দেশের ন্যায় দূর্নীতি দমন কমিশন,সমন্নিত জেলা কার্যালয় (দুদক) কুষ্টিয়াতেও রয়েছে যথেষ্ট লোকবলের অভাব। ২৫ জন কর্মকর্তার স্থলে মাত্র ১৭ জন কর্মরত আছেন। অবশ্য নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়াও চলছে। ফলে বর্তমানে যে সব মামলা দায়ের হয়েছে সেগুলো দ্রুত তদন্তেও নানান জটিলতা ও কালক্ষেন হচ্ছে। প্রয়োজনীয় তথ্য প্রমান ও স্বাক্ষীর অভাবেই কি এসব আলোচিত মামলাগুলো বিচারের কাঠগড়া পর্যন্ত গড়াইনি নাকি রাজনৈতিক নেতা বিবেচনায় বিচার ছাড়াই অকাল মৃত্যু সেটি খতিয়ে দেখার কেউ নেই।

 

কুষ্টিয়ার একদিনে তিন লাশ উদ্ধার পুলিশ প্রশাসনে তোলপাড়

আরিফ মেহমুদ ॥ কুষ্টিয়ায় পৃথক ঘটনায় মহিলাসহ ৩টি লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। একদিনে ৩টি হত্যার ঘটনায় হঠাৎ করে ভাবিয়ে তুলেছে জেলা পুলিশকে। এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে কুষ্টিয়ার পুলিশ প্রশাসনে। নিহতরা হলো- পাবনা জেলার মন্ডলপাড়ার লিটনের মেয়ে পিয়া (১৯), কুষ্টিয়ার পান্টি গ্রামের ওয়ালিয়ারের ছেলে উজ্জল হোসেন (২৮) ও অজ্ঞাত (৩০)। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সুত্রে জানা যায়, গতকাল বুধবার সকালে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার বারুইপাড়া গ্রামের ছাত্তার আলীর বাড়ির সংলগ্ন ক্যানেলের পাশে জবাই করা একটি লাশ দেখতে পায় স্থানীয়রা। পরে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানা পুলিশকে জানালে পুলিশ নিহতের মস্তক বিহিন দেহ উদ্ধার করে। স্থানীয়দের অপর এক সংবাদে পাশ্ববর্তী সোনাইডাঙ্গা গ্রামের কালভার্ট থেকে ওই ব্যাক্তির মাথা উদ্ধার করে পুলিশ। এখন পর্যন্ত পুলিশ নিহতের পরিচয় জানতে পারেনী। এ ঘটনায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানা পুলিশ হত্যাকারীদের গ্রেফতারে সাড়াশী অভিযান পরিচালনা করছে। দুই একদিনের মধ্যে হত্যাকারীদের গ্রেফতারে আসাবাদী ওসি শেখ আতিয়ার রহমান। কুমারখালী উপজেলার পান্টি দক্ষিণ পাড়া এলাকা থেকে উজ্জ্বল (২৫) নামের এক যুবকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। উজ্জল পান্টির দক্ষিণ পাড়ার ওয়ালিয়ার রহমান শেখের ছেলে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গতকাল সকালে কুমারখালীর পান্টি দক্ষিণ পাড়া এলাকার সোহেল নামে এক ব্যাক্তির বাড়ির দক্ষিণ পাশে আম বাগানে উজ্জলের ঝুলান্ত লাশ দেখতে পায়। পরে উজ্জল হোসেনের পরিবারে লোকজন কুমারখালী থানা পুলিশকে জানালে পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে। এ সময় পুলিশ নিহত উজ্জলের মুখে লাল টেপ ও নির্যাতনের চিহ্ন দেখতে পায়। তবে তার পুরুষ অঙ্গে বীর্যাংশ থাকায় নারী ঘটিত কোন কারনে তাকে হত্যা করা হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। এদিকে কুষ্টিয়া শহরের লাহিনী বটতলা এলাকায় যৌতুকের দাবীতে পিয়া (১৬) নামের এক গৃহবধুকে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত মঙ্গলবার রাতে কুষ্টিয়ার লাহিনী বটতলার খুলাপাড়া এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটে। জানাগেছে, পাবনা জেলার মন্ডলপাড়ার লিটনের মেয়ে পিয়ার বিয়ে হয় কুষ্টিয়ার লাহিনী বটতলার খুলুপাড়ার শামীমের সাথে। বিয়ের মাত্র ৪ মাস না হতেই ৪০ হাজার টাকা দাবী করে শামীমের পরিবার। এক পর্যায়ে শামীম পিয়াকে তার বাবার বাড়ীতে টাকা আনতে বলে। এতে পিয়া অপারগতা প্রকাশ করলে নির্যাতন করা হয়। এক পর্যায়ে পিয়ার মৃত্যু হলে তাকে গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে বলে পরিবারের অভিযোগ। এ ঘটনায় মডেল থানা পুলিশ মৃত পিয়ার লাশ উদ্ধার করেছে। পৃথক তিন ঘটনায় পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত করতে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেছে। এদিকে এ ঘটনার খবর পেয়ে গতকাল সকালে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ কুষ্টিয়া জেলা শাখার নেতৃবৃন্দ হাসপাতালের মর্গে রাখা পিয়ার লাশ দেখতে যায় এবং ঘটনাটির তদন্ত করে। তদন্তকালে উপস্থিত ছিলেন জেলা মহিলা পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক তসলিমা খানম লতা, আন্দোলন সম্পাদক শেফালী আক্তার, সমাজ কল্যাণ সম্পাদক সায়েদা হকসহ মহিলা পরিষদের নেতৃবৃন্দ। কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মফিজ উদ্দিন আহম্মদ জানিয়েছেন খুনিদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে। তবে একদিনে পৃথক তির স্থান থেকে ৩টি লাশ উদ্ধার হওয়ায় কেবল সাধারণের মাঝে নয় পুলিশ প্রশাসনের মাঝেও আলোড়ন সৃষ্টি হয়েঠে।

রবিবার, ২১ অক্টোবর, ২০১২

স্বরণোৎসবের সমাপনী দিনের আলোচনায় বেগম সুলতানা তরুন লালন সাঁই সমাজে শ্রেণী বিভেদের ঘরতর বিরোধী ছিলেন

আরিফ মেহমুদ ॥ কুষ্টিয়া-৪ (খোকসা-কুমারখালী) আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য বেগম সুলতানা তরুন বলেছেন, বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের জীবন ছিল বৈচিত্রময়। এই মরমী সাধকের প্রাতিষ্ঠানিক কোন শিক্ষা না থাকলেও তিনি ছিলেন আধুনিক সমাজ বিন্যাসে স্ব-শিক্ষায় শিক্ষিত। ধর্ম আর জাতি ভেদাভেদ ভুলে মানুষের কল্যাণে কি অসীম মর্মকথা বলেছেন তিনি। একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী সাম্যের সমাজ গড়তে চেয়ে ছিলেন লালন সাঁই । তিনি পথভ্রষ্ট মানুষের মুক্তির জন্য তাঁর বাউলতত্বের মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক অহিংস মানবতার ডাক দিয়েছিলেন। তিনি ধর্মের দোহায় দিয়ে জাতি ভেদাভেদ ও সমাজের শ্রেণী বিভেদের ঘরতর বিরোধী ছিলেন। তাঁর অমর সৃষ্টির বিশালতা অনেক গভীর ও বিশাল। লালন সাঁই সমাজের সকল শ্রেণী ধর্মের মানুষকে আমৃত্যুকাল পর্যন্ত এক করে দেখেছেন। তাঁর জ্ঞানকে কোন ভাবেই দেশের গন্ডির মধ্যে আবদ্ধ রাখা যায়নি। তাঁর অমর সৃষ্টি গান আপন মহিমায় ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বময়। জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই মরমী সাধক লালন সাঁইয়ের অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী হয়ে দেশটাকে সোনার বাংলা ও সকল ধর্মের দেশে পরিণত করতে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট গড়তে চেয়েছিলেন। আজকে বিরোধী দলের নেতা জাতি ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করছে। কক্সবাজারের রামুতে অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে ধ্বংশ করতে দেশের একটি সংখ্যালঘু গোষ্ঠির ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে অপমানিত করেছে। এভাবে সাম্প্রায়ীকতা উসকে দিয়ে বিরোধী দলীয় নেতা জণগণের আস্থা অর্জন করতে পারবেন না। তিনি বলেন প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার্থে বলেছেন ধর্ম যার যার, উৎসব বাঙালী জাতির সবার। গতকাল শনিবার রাতে ছেঁউড়িয়ার আখড়া বাড়ীতে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসন ও লালন একাডেমির আয়োজনে বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের ৫ দিনব্যাপী স্মরণোৎসবের সমাপর্নী দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড.অরবিন্দু সাহা, কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড.মহিউদ্দিন, কুষ্টিয়া সরকারী কলেজের অধ্যাপক স্বপন কুমার রায়, এ্যাড.জহুরুল হক, বীরমুক্তিযোদ্ধা জাহিদুল ইসলাম। আলোচক হিসেবে আলোচনা করেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড.সরোয়ার মুর্শেদ রতন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ড.মল্লিক আনোয়ার হোসেন। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বাংলা লিংকের পি আর এন্ড কমিউনিকেশন এ্যাসিস্টেন্ট ম্যানেজার শিবলী সাদিক। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন লালন একাডেমির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এনডিসি মাসুম আলী বেগ। এবারের স্বরণোৎসবের অনুষ্ঠানে আসা দেশ-বিদেশের লাখ ভক্ত অনুরাগী ও সাধু-গুরুদের চরণ ধূলায় সিক্ত বাউল সম্রাটের ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়ী। সাঁইজির মতাদর্শের ধর্ম আর জাতি ভেদাভেদ ভুলে মানুষের কল্যাণে মানুষ নিবেদিত থাক চিরকাল এবং মানবতার নিগুড় প্রেমের ভাবধারা বর্তমান সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে ভক্তকুলের এই অঙ্গীকার-সভ্যতার এই যুগে মানুষ মানুষে হিংসা বিদ্বেশ ভূলে সাঁইজির ধর্ম দর্শনের চিরাচরিত‘সত্য বল সুপথে চল ওরে আমার মন’ আমার মনেরে বুঝায় কেমনে’ মিলন হবে কত দিনে এই শ্লোগানকে বাস্তবায়নে সদা সত্য ও সঠিক পথে চলে দেশ ও জাতির উন্নয়নে নিজেদেরকে নিয়োজিত রাখবো। মরমী সাধক বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের অহিংস মানবতা ও ফকিরী মতবাদের জাতহীন মানব দর্শন ও সঙ্গীত দেশের সীমানা পেরিয়ে বিশ্বাঙ্গনে নিজের মহিমায় জায়গা করে নিলেও বাংলা ভাষা ব্যাতিত অন্য কোন ভাষায় প্রকাশ, প্রচার ও প্রসার ঘটেনি তেমন একটা। মানবতা মুক্তি ও ভক্তির পথকে প্রতিষ্ঠা করতেই তিনি হাজারো ভাবধারার গান সৃষ্টি করছেন। কিন্তু তা বিশ্ববাসীকে নাড়া দিতে পারেনি যথার্থ একাডেমিক প্রচার আর প্রকাশনার অভাবে। তাঁর সঙ্গীত গতানুগতিক ভাবে প্রচার ও প্রকাশ হলে চলবেনা। বিশ্বের বিশিষ্ট গবেষকেরা লালনের সৃষ্টি আরো নতুন নতুন তথ্য জানতে চাই। আলোচনা শেষে লালন প্রধান অতিথি ও অন্যান্য অতিথিবৃন্দ একাডেমি কর্তৃক জেলার ৬ উপজেলার শিল্পীদের নিয়ে লালন সঙ্গীত প্রতিযোগীতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন। দ্বিতীয় পর্বে লালন মঞ্চে বিভিন্ন শিল্পি ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সমন্বয়ে লালন সংগীতি পরিবেশিত হয়। এতে সংগীত পরিবেশন করেন এদেশের প্রখ্যাত লোক ও লালন সংগীত শিল্পী সমীর বাউল সহ দেশের খ্যাতিনামা শিল্পীবৃন্দ ও লালন একাডেমীর স্থানীয় শিল্পিরা। ৫দিনব্যাপী স্বরণোৎসবের অনুষ্ঠানমালার সার্বিক পরিচালনা ও উপস্থাপনা করেন কবি শুকদেব সাহা, খন্দকার লুৎফর রহমান, সুমাইয়া খানম ইভা ও কনক চৌধুরী।


 

লালন স্মরণোৎসবের উদ্বোধনীতে হানিফ লালন সকল ধর্মের উর্ধে থেকে মানব মুক্তির দিক্ষা দিয়েছেন

আরিফ মেহমুদ ॥ প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেছেন, বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ সকল ধর্মের সীমাবদ্ধতা ছাড়িয়ে সদা সত্য পথে চলতে মানুষকে মানবতাবাদীর পথে ডাক দিয়ে ছিলেন। তিনি অহিংস মানবতার ব্রত নিয়ে দেহতত্ব, ভাবতত্ব, গুরুতত্বসহ অসংখ্য গান সৃষ্টি করে গেছেন। তাঁর এই অমর সৃষ্টি সঙ্গীত কোন ধর্মের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। সকল ধর্মের উর্ধে থেকে সম্প্রীতির বাধনে আবদ্ধ করতে মরমী সাধক বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ মানব মুক্তির জন্য সৃষ্টি করেছিলেন ফকিরী মতবাদ। তাঁর মানব দর্শন আজ আর কুষ্টিয়ার কুমারখালির ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়ীর মধ্যে আবদ্ধ নেই। লালন ফকিরের জাতহীন মানব দর্শন ও সঙ্গীত সার্বজনিন বিদিত বিশ্বাঙ্গনে। মানবতার ভাবধারাকে প্রতিষ্ঠিত করতে একটি অসাম্প্রদায়ীক সাম্যের সমাজ চেয়ে ছিলেন তিনি। লালন মানুষকে শিখিয়েছিলেন কোন ধর্মের মধ্যে আবদ্ধ থেকে সম্প্রীতি বজায় রাখা যায় না। সকল ধর্মের উপর মানব ধর্ম। এই মরমী সাধকের প্রাতিষ্ঠানিক কোন শিক্ষা না থাকলেও তিনি ছিলেন আধুনিক সমাজ বিন্যাসে স্ব-শিক্ষিত। ধর্ম আর জাতি ভেদাভেদ ভুলে মানুষের কল্যাণে কি অসীম মর্মকথা বলেছেন তিনি। গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮ টায় বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের ছেঁউড়িয়ার আখড়া বাড়ীতে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন ও লালন একাডেমির আয়োজনে বাউল সম্রাটের ১২২ তম মৃত্যুবার্ষিকীর ৫ দিনব্যাপী স্মরণোৎসব অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতেই আগত অতিথিদের কুষ্টিয়া লালন একাডেমীর পক্ষ থেকে ফুলের তোড়া, ক্রেষ্ট ও আত্মসুদ্ধির প্রতীক একতারা উপহার দিয়ে বরণ করে নেন। খুলনা বিভাগীয় কমিশনার আব্দুল জলিলের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়া-৪ (খোকসা-কুমারখালী) আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য বেগম সুলতানা তরুন, কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ, ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক খাজা আব্দুল হান্নান, মেহেরপুর জেলা প্রশাসক দেলোয়ার হোসেন,কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী, কুমারখালী উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ, লালন একাডেমির সাবেক সাধারণ সম্পাদক তাইজাল আলী খান, কুষ্টিয়া শিশু হাসপাতালের সাধারণ সম্পাদক আক্কাস আলী মঞ্জু। স্বাগত বক্তব্য রাখবেন কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক বনমালী ভৌমিক। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখবেন বাংলালিংক খুলনা’র রিজিওনাল কমার্শিয়াল হেড বাবুল হক। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করবেন কুমারখালী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান। প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে আরো বলেন, ধর্মের অন্ধক্বের প্রাচীর ভেঙ্গে বাউল সম্রাট লালন মানুষকে ভালবাসার দিক্ষা দিয়েছেন। তিনি বলেন যারা রামুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে ধর্মের নামে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চান তারা দেশ ও জাতির শত্র“। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ সরকার সকল ধর্ম বর্ণের মানুষের ধর্মীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত ও ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী বলেই বিরোধী দলের হিংসার কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। জাতির মধ্যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধাতে  এবং দেশের সম্প্রীতি নষ্ট করেত বিরোধী দল তাদের আশির্বাদপুষ্ট জঙ্গীদের দিয়ে রামুতে হামলা চালিয়েছে। তিনি বলেন এদেশে একমাত্র আওয়ামীলীগ সরকারই পারে সকল ধর্ম বর্ণের মানুষকে নিয়ে একসাথে বসবাস করতে। যারা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধিয়ে সুবিধা আদায় করতে চাই তাদেরকে ঘৃণা জানায়। আলোচনার আগে তিনি লালন উম্মুক্ত চত্বরে বিশালাকারের বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের ভাসকর্য উদ্দোধন করেন। তিনি কুষ্টিয়াতে লালনের সৃষ্টিকে চিরদিন বাঁচিয়ে রাখতে লালন একাডেমিতে এসি ও জেনারেটর সহ একাডেমির প্রস্তাবনা অনুযায়ী এখানে অতিথিশালা, লালন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করার প্রতিশ্র“তি ব্যক্ত করেন। ৫ দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী দিনে গতকাল লালন একাডেমী চত্বরে তিল ধারনের ঠাঁই ছিল না। বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ তাঁর জীবদ্দশায় দোল পূর্ণিমার তিথিতে স্মরণোৎসব পালন করতেন। আয়োজিত অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে কালী নদীর তীরে অবস্থিত উন্মুক্ত মঞ্চে প্রতিদিন লালন বিষয়ক আলোচনা, বিভিন্ন শিল্পী ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সমন্বয়ে লালনগীতি পরিবেশন এবং আখড়া বাড়ির বিশাল এলাকা জুড়ে বসেছে লালন মেলা। মাজারের অভ্যান্তরে আয়না মহলে চলছে সাধু-ভক্তদের লালনগীতি পরিবেশন। আলোচনা শেষে দ্বিতীয় পর্বে লালন মঞ্চে বিভিন্ন শিল্পি ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সমন্বয়ে পরিবেশিত হয় লালন সংগীতি।এতে উদ্বোধনী প্রার্থনা সংগীত পরিবেশন করেন কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক বনমালী ভৌমিকের পতœী রাখী ভৌমিক সহ লালন একাডেমীর স্থানীয় শিল্পিরা। গভীর রাত পর্যন্ত চলে এই সংগীত পরিবেশন। উৎসবকে ঘিরে পুরো একাডেমি চত্ত্বরে খন্ড-খন্ড স্থানে গান পরিবেশনের সময় দর্শক-শ্রোতারাও নেচে-গেয়ে গানের সাথে সাথে তাল দেয়। দর্শক-শ্রোতারা কখনো পিন-পতন নীরবতায় গান শুনছেন আবার কখনো গানের তালের সাথে সাথে করতালি দিয়ে মুখর করে তুলছেন বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ’র আখড়াবাড়ীর আঙ্গীনা। ৫দিনব্যাপী বাউল সম্রাট লালন শাহের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানটি সার্বিক উপস্থাপনা ও পরিচালনা করেন কবি শুকদেব সাহা।

কাল শুরু হচ্ছে ৫ দিনব্যাপী বাউল সম্রাট লালন সাঁইয়ের ১২২তম মৃত্যুবার্ষিকী

আরিফ মেহমুদ ॥ মরমী সাধক বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁই বাঙালির চেতনায় এক অবিস্মরণীয় কালপুরুষ। তাঁর গানের মাঝেই লুকিয়ে আছে সুষ্টির রহস্য। সৃষ্টিকর্তার সাথে আত্মিক সম্পর্ক তাঁর গানের মূলমন্ত্র। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষকে একই স্রোতধারায় আনার জন্য লালন সঙ্গীত আজও আমাদের অনুপ্রানিত করে। এই মহান সাধক বাউল সম্রাট ফকির লালন সাইয়ের ১২২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ার আখড়া বাড়ীতে কাল মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে ৫ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা। দেশের বৃহত মোবাইল ফোন কোম্পানী বাংলা লিংকের পন্সারে, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সার্বিক সহযোগিতায় ও কুষ্টিয়া লালন একাডেমির আয়োজনে এবারের ভিন্ন আমেজের মৃত্যুবার্ষিকী পালন উপলক্ষ্যে ইতোমধ্যেই আখড়া বাড়ীতে সকল প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে। সত্য সু-পথের সন্ধ্যানে মানবতার দিক্ষা নিতে আত্মার টানে দেশ-বিদেশের সাধুগুরু ও ভক্তরা দলে দলে  আসতে শুরু করেছে সাঁইজির মাজারে। প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী প্রতিবার দু’ অথবা তিনদিনের এ উৎসব পালিত হলেও গতবারের স্মরণোৎসব থেকে তা বাড়িয়ে পাঁচদিনের প্রথা চালু করা হয়েছে। এবারো তার ভিন্নতা নেই। বাউল সম্রাটের ১২২ তম মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানমালা সাজানো হয়েছে ৫ দিনব্যাপী। মূল উৎসব শুরু হওয়ার ৭-৮ দিন আগ থেকে আখড়ায় আসা বাউল সাধকরা মাজারের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে গেয়ে চলেছে সাইজির আধ্যাত্মিক মর্মবাণী ও ভেদ তথ্যের গান। জমজমাট এখন লালন শাহের আখড়া বাড়ি। কুষ্টিয়া পরিণত হয়েছে উৎসবের শহরে। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের সহযোগিতায় ও লালন একাডেমীর আয়োজনে কাল ১৬ অক্টোবর (১কার্তিক) থেকে শুরু হয়ে একটানা ২০ অক্টোবর পর্যন্ত ৫ দিনব্যাপী বাউল সম্রাট সাধক ফকির লালন সাইয়ের ১২২ তম মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠান চলবে। আখড়া বাড়ীতে মঞ্চ, গ্রামীণ মেলার স্টল নির্মাণ ও মাজার ধোয়া মোছার কাজ শেষ করা হয়েছে। কালী নদী তীরবর্তী লালন মঞ্চের সামনে আয়োজন করা হয়েছে গ্রামীণ মেলার। বিভিন্ন স্টলের পাশাপাশি থাকছে শিশু বিনোদনেরও ব্যবস্থা। এবারের অনুষ্ঠানে আগত বাউল সাধূদের গোসলের সুব্যবস্থা করতে কুষ্টিয়া জেলার সুযোগ্য জেলা প্রশাসক বনমালী ভৌমিক কালী নদীতে একটি সুন্দর ঘাট ও অনুষ্ঠানে বাড়তী আকর্ষণ যোগাতে বাউল সম্রাট মরমী সাধক ফকির লালন শাহের বিশাল আকৃতির মুরাল ও মুর্তি নির্মাণ করেছেন। প্রতিদিন সন্ধ্যায় উন্মুক্ত মঞ্চে বিশিষ্টজনদের মুক্ত আলোচনা শেষে গভীর রাত অবধি চলবে খ্যাতনামা শিল্পীদের পরিবেশনায় লালন সঙ্গীতানুষ্ঠান। সুষ্ঠুভাবে আয়োজন সম্পন্ন করতে নেয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুলিশের পাশাপাশি অনুষ্ঠানস্থলে থাকবে র‌্যাব ও সাদা পোষাকে গোয়েন্দা পুলিশ। মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে আসা দেশ-বিদেশের লাখ ভক্ত অনুরাগী ও সাধু-গুরুদের চরণ ধূলায় সিক্ত হবে বাউল সম্রাটের ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়ী। সাঁইজির মতাদর্শের ধর্ম আর জাতি ভেদাভেদ ভুলে মানুষের কল্যাণে মানুষ নিবেদিত থাক চিরকাল এবং মানবতার নিগুড় প্রেমের ভাবধারা বর্তমান সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে ভক্তকুলের এই অঙ্গীকার। সভ্যতার এই যুগে মানুষ মানুষে হিংসা বিদ্বেশ ভূলে সাঁইজির ধর্মদর্শনের চিরাচরিত ‘সত্য বল সুপথে চল ওরে আমার মন’ও মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি এই শ্লোগানকে বাস্তবায়নে সদা সত্য ও সঠিক পথে চলে দেশ ও জাতির উন্নয়নে নিজেদেরকে নিয়োজিত রাখতে হবে। খুলনা বিভাগীয় কমিশনার আব্দুল জলিলের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়া-৪ (খোকসা-কুমারখালী) আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য বেগম সুলতানা তরুন, কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ, কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী, কুমারখালী উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ, খোকসা উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সদর উদ্দিন খান, কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি হাজী রবিউল ইসলাম, কুষ্টিয়া পৌরসভার প্যানেল মেয়র মতিয়ার রহমান মজনু, লালন একাডেমির সাবেক সাধারণ সম্পাদক তাইজাল আলী খান, কুষ্টিয়া শিশু হাসপাতালের সাধারণ সম্পাদক আক্কাস আলী মঞ্জু। স্বাগত বক্তব্য রাখবেন কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক বনমালী ভৌমিক। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখবেন বাংলালিংক খুলনা’র রিজিওনাল কমার্শিয়াল হেড বাবুল হক। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করবেন কুমারখালী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান। উল্লেখ্য, বৃটিশ শাসকগোষ্ঠির নির্মম অত্যাচারে গ্রামের সাধারণ মানুষের জীবনকে যখন বিষিয়ে তুলেছিল, ঠিক সেই সময়ই সত্যের পথ ধরে, মানুষ গুরুর দিক্ষা দিতেই সেদিন মানবতার পথ প্রদর্শক হিসাবে বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ’র আবির্ভাব ঘটে কুমারখালির ছেঁউড়িয়াতে। লালনের জন্মস্থান নিয়ে নানা জনের নানা মত থাকলেও আজো অজানায় রয়ে গেছে তাঁর জন্ম রহস্য। তিনি ছিলেন নিঃসন্তান। আর্থিক অসংগতির কারনে তিনি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ করতে পারেননি। তবে তিনি ছিলেন স্বশিক্ষায় শিক্ষিত। যৌবনকালে পূর্ণ লাভের জন্য তীর্থ ভ্রমনে বেরিয়ে তার যৌবনের রূপান্তর ও সাধন জীবনে প্রবেশের ঘটনা ঘটে বলে জানা যায়। তীর্থকালে তিনি বসন্ত রোগে আক্রান্ত হলে তার সঙ্গীরা তাকে প্রত্যাখ্যান করে। পরে মলম শাহ’র আশ্রয়ে জীবন ফিরে পাওয়ার পর সাধক সিরাজ সাঁইয়ের সান্নিধ্যে তিনি সাধক ফকিরী লাভ করেন। প্রথমে তিনি কুমারখালির ছেঁউড়িয়া গ্রামের গভীর বনের একটি আমগাছের নীচে সাধনায় নিযুক্ত হন। পরে স্থানীয় কারিকর সম্প্রদায়ের সাহায্য লাভ করেন। লালন ভক্ত মলম শাহ আখড়া তৈরীর জন্য ষোল বিঘা জমি দান করেন। দানকৃত ওই জমিতে ১৮২৩ সালে লালন আখড়া গড়ে ওঠে। প্রথমে সেখানে লালনের বসবাস ও সাধনার জন্য বড় খড়ের ঘর তৈরী করা হয়। সেই ঘরেই তাঁর সাধন-ভজন বসতো। ছেঁউড়িয়ার আঁখড়া স্থাপনের পর থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত শিষ্যভক্তদের নিয়ে পরিবৃত থাকতেন। তিনি প্রায় এক হাজার গান রচনা করে গেছেন। ১৮৯০ সালের ১৭ অক্টোবর ভোরে এই মরমী সাধক বাউল সম্রাট দেহত্যাগ করেন এবং তাঁর সাধন-ভজনের ঘরের মধ্যেই তাকে সমাহিত করা হয়। আলোচনা শেষে দ্বিতীয় পর্বে লালন মঞ্চে বিভিন্ন শিল্পি ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সমন্বয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পরিবেশিত হবে লালন সঙ্গীত। এতে সঙ্গীত পরিবেশন করবেন দেশের খ্যাতনামা শিল্পীবৃন্দসহ লালন একাডেমীর স্থানীয় শিল্পিরা। উৎসবকে ঘিরে পুরো একাডেমি চত্ত্বরে শুরু হয়েছে খন্ড-খন্ড স্থানে গান পরিবেশন। এসব গান শুনে আগত দর্শক-শ্রোতারাও নেচে-গেয়ে গানের সাথে সাথে তাল মিলাচ্ছে। মৃত্যুবার্ষিকী অনুষ্ঠানটি সার্বিক উপস্থাপনা ও পরিচালনা করবেন কবি শুকদেব সাহা ও সুমাইয়া খানম ইভা।

 

শুক্রবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১২

প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতার কাছে জিম্মি, লালন একাডেমীঃ উপেক্ষিত প্রবীণ বাউলরা

এ.এইচ.এম.আরিফ,কুষ্টিয়া ॥ কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলের গুটিকয়েক নেতার কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে কুষ্টিয়ার লালন একাডেমী ও প্রবীণ বাউল সাধুরা। এ কারণে বাউলদের মধ্যে দেখা দিয়েছে বিভাজন। এক বছর ধরে নির্বাচন না হওয়ায় স্থবির হয়ে পড়েছে একাডেমীর কার্যক্রম। জেলা প্রশাসন সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে অথচ নিয়ন্ত্রণ করার কথা বাউলদের। বিগত বছরগুলোয় যেসব রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে মোটা অঙ্কের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ছিল, ঘুরে ফিরে তারাই আবার সবকিছুর নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠেছেন। ১২২তম লালন স্মরণোৎসবের অনুষ্ঠান নিয়েও নানা অব্যবস্থাপনা আর অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন বাউলরা। লালন আখড়ার পাশের একটি বাড়িতে সাধুসংঘ করছেন বাউল বলাই সাঁই। তাকে ঘিরে রয়েছেন শিষ্য-ভক্তরা। ক্ষণে ক্ষণেই বেজে উঠছিল লালনের ভাবধারী গানের সুর। ছোট্ট জায়গায় অসংখ্য ভক্ত তার গান শুনছেন। তার মতো বহু জনপ্রিয় প্রবীণ বাউল শিল্পী আছেন, মনেপ্রাণে লালন চর্চা করেন। টাকা-পয়সা, ধন-দৌলতের মোহে নয়, সাঁইজির প্রেমে মগ্ন তারা। অথচ লালনের মূল অনুষ্ঠানে উপেক্ষিত তারা। তাই তারা নিজেদের মতো করে লালন স্মরণোৎসব করছেন। কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার ছেঁউড়িয়া মরা কালী নদীর পাড়ে ফকির লালন সাঁইয়ের সমাধি। সাঁইজির সান্নিধ্য পাওয়ার আশায় লালন আখড়ায় প্রতি বছর লাখো শিষ্য-ভক্ত ছুটে আসেন। যুগ যুগ বছর ধরে বাউল-ফকিরদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। তবে ফকির লালনকে পুঁজি করে স্থানীয় বিএনপি-আওয়ামী লীগের অনেক নেতার ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে। অনেকেই বনে গেছেন গাড়ি-বাড়ির মালিক। স্থানীয় বাসিন্দা আবুল হোসেন অভিযোগ করেন, লালনধাম ক্রমশ দুর্নীতিবাজরা দখল করে নিয়েছে। দুই হাতে একাডেমীর টাকা আত্মসাৎ করছে। বিএনপি সরকারের আমলে কুষ্টিয়ার বিএনপি দলীয় এক এমপি ও তার অনুগতদের একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল এখানে। পাঁচ বছরে দুর্নীতি-অনিয়মের মাধ্যমে কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে ওই সময়ের বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর একাডেমীর নির্বাচনে জয়লাভ করে শহর আওয়ামী লীগের নেতা তাইজাল আলী খানের প্যানেল। এরপর লালনের আখড়াবাড়ির পুরোটা করায়ত্ব করে নেন তিনি। তিন বছরে কোটি টাকার বেশি আয় হলেও লালন একাডেমী পরিচালনা কমিটির কাছে কোনো হিসাব দেননি তিনি। অনুষ্ঠান, মেলা, মাছ ধরা, নতুন সদস্য সৃষ্টিসহ আরও কয়েকটি খাত থেকে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে নিজের প্যানেল সদস্যদেরই তোপের মুখে পড়েন ওই নেতা। তার মেয়াদকালে কোনো সাধারণ সভা পর্যন্ত হয়নি। বড় অঙ্কের টাকা দুর্নীতির বিষয়টি মাথায় নিয়ে মেয়াদ পূর্ণ হওয়ায় তাকে সরে যেতে হয়। এ অবস্থায় একাডেমীর হাল ধরেন কুষ্টিয়ার বর্তমান জেলা প্রশাসক বনমালী ভৌমিক। নির্বাচন না দিয়ে জেলা প্রশাসক একটি আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে লালন একাডেমী পরিচালনা করছেন। একাডেমীর পুরো নিয়ন্ত্রণ জেলা প্রশাসকের হাতে। লালন একাডেমীর সাবেক কমিটির কয়েক সদস্য জানান, দীর্ঘদিন ধরেই নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছেন সব সদস্য। জেলা প্রশাসক উদ্যোগ না নেওয়ায় নির্বাচন হচ্ছে না। ওই সদস্যরা জানান, তাইজাল আলী খান দুর্নীতির মাধ্যমে প্রায় ১০ হাজারের বেশি নতুন ভোটার তৈরি করেছেন। আগে যেখানে ভোটার ছিল মাত্র দুই হাজার। জেলা প্রশাসক বনমালী ভৌমিক দায়িত্ব নেওয়ার পর তাইজাল আলী খানের দুর্নীতি তদন্ত করতে একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি বিপুল অঙ্কের আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ পান। দুর্নীতির বিষয়টি ধরা পড়ার পর তাইজাল আলী খান জেলা আওয়ামী লীগের কয়েক প্রভাবশালী নেতাকে দিয়ে তদ্বির শুরু করেন। শেষ পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের ফান্ডে প্রায় ৩ লাখ টাকা জমা দিয়ে পার পেয়ে যান তিনি। তাইজাল আলী খানসহ অনেক বিতর্কিত লোক এখনও জেলা প্রশাসনের কমিটিতে রয়েছে। গত এক বছরে নির্বাচিত কোনো কমিটি না থাকায় সবার মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। লালন একাডেমীর বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল হক মঞ্জু বলেন, একাডেমীতে আগে অনেকে দুর্নীতি করেছেন। তবে জেলা প্রশাসক ভালো চালাচ্ছেন। তারপরও এ মুহূর্তে সবার দাবি, দ্রুত একটি নির্বাচন। ১৬ অক্টোবর শুরু হওয়া পাঁচদিনের লালন স্মরণোৎসবেও নানা অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনার অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে পাঁচদিনের আলোচনা সভায় কুখ্যাত রাজাকারপুত্র থেকে শুরু করে অনেক বিতর্কিত ও অযোগ্য লোককে অতিথি করা, সঙ্গীত অনুষ্ঠানে আত্মীয়করণ ও স্বজনপ্রীতি হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। একাধিক বাউল জানান, স্থানীয় সরকার আমলাদের স্ত্রী-কন্যারা শিল্পী হিসেবে অনেক গুরুত্ব পেয়েছেন। অথচ মূল শিক্ষার্থীরা উপেক্ষিত। প্রবীণ বাউলরা অনেকেই ঠিকমতো সেবাও (খাবার) পাচ্ছেন না। মেহেরপুরের বাউল সাধক রহিম জানান, যেখানে লালন চর্চা হওয়ার কথা, তা না হয়ে এখন সেখানে হচ্ছে ব্যবসা। লালনকে নিয়ে নিত্যনতুন ব্যবসার ফন্দি আঁটা হচ্ছে। ফলে বাউলদের মধ্যে বিভাজনও সৃষ্টি হচ্ছে। স্মরণোৎসবের মূল আয়োজনে কুষ্টিয়ার অনেক প্রবীণ বাউল ও লালন-গবেষক দাওয়াত পাননি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্মরণোৎসবে ১০টি উপ-কমিটি করা হয়েছে। অথচ এ কমিটিতে বাউলদের কর্তৃত্ব নেই। লালন স্মরণোৎসবের চতুর্থ দিন আজ শুক্রবার ছুুটির দিনে উৎসবের মাত্রা আরও কয়েকগুণ বেড়ে যাবে বলে আয়োজকদের আশা। উৎসবের আর্থিক সহায়তা দিয়েছে বাংলালিংক। উৎসব শেষ হচ্ছে আগামীকাল শনিবার।