আরিফ মেহমুদ ॥ মাছ চাষের উপযোগী কতটি পুকুর, হাওর-বাঁওড় ও বিলে কিংবা জলাশয়ের কোন হিসেব নেই কুষ্টিয়ার জেলা মৎস্য অফিসে। সরকারি পুকুরগুলোতে মাছ চাষে মৎস্যচাষীদের নামে একাধিক সংগঠন গড়ে উঠলেও এর পেছনে রয়েছে প্রভাবশালীদের একক নিয়ন্ত্রণ। বছরের পর বছর মাছ চাষ করলেও পুকুরগুলোর স্বাভাবিক গভীরতা বজায় রাখতে ওই সকল প্রভাবশালীমহল খননের ব্যবস্থা করেনি দীর্ঘ দিন ধরে। মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর জাতীয় পুকুর ব্যবস্থাপনা নীতিমালা তৈরির উদ্যোগ নিলেও আজোবধী একটি খসড়াও দাঁড় করাতে পারেনি। এদিকে নিজস্ব মালিকানায় রেখে সরকারি পুকুরগুলোতে মাছ চাষ করে দেশে আমিষের যোগান দিতে চরমভাবে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে মৎস্য অফিসগুলো। সরকারী নিয়ন্ত্রণাধীন কুষ্টিয়া সহ দেশে সরকারি পুকুর ব্যবস্থাপনায় নির্দিষ্ট কোন নীতিমালা বিগত ৪০ বছরেও তৈরি করা হয়নি। ভূমি স্থানীয় সরকার ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের টানা-টানিতে সরকারী জলমহল ও পুকুরগুলোর অবস্থা মাছ চাষে অনুপযোগী হলেও মাথা ব্যাথা নেই কারোর। মাছ চাষ করছে অন্যরা অথচ পুকুরগুলোর স্বাভাবিক গভীরতা বজায় রাখতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে বরাদ্দ নিয়ে তা খনন কাজ করা হচ্ছে। এসব পুকুর খননে কিংবা লিজ প্রদানে মৎস্যচাষী অথবা সুফলভোগী পুকুর পাইয়ে দিতে জেলা মৎস্য কর্মকর্তার মোটা অংকের টাকা উৎকোচ নেয়ার অভিযোগ এখন ওপেন সিক্রেট। গতকাল মঙ্গলবার জেলা মৎস্য অফিসে লিজ প্রদান ও পুকুরের সংখ্যা এসংক্রান্ত খোঁজ-খবর নিতে গেলে কয়েকজন ভুক্তভোগী প্রকৃত সুফলভোগী মৎস্যচাষী এমন অভিযোগ করলেন। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এমদাদ হোসেনের নিকট জেলায় মাছ চাষের উপযোগী কতটি পুকুর, হাওর-বাঁওড় ও বিলে কিংবা জলাশয়ের সংখ্যা কত, লিজ প্রদানে অনিয়ম ও উৎকোচ নেয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন লিজ প্রদানে কোন অনিয়ম ও টাকা উৎকোচ নেয়ার অভিযোগ মিথ্যা। পুকুর কিংবা জলাশয় নিন্তান্ত্রিকভাবে লিজ প্রদান করেন জেলা প্রশাসক। আমরা শুধুমাত্র ওই পুকুর কিংবা জলাশয়ের আশ-পাশের সুফলভোগী মৎস্যচাষীদের তালিকা প্রদান করি। জেলার ৬ উপজেলার সরকারী লিজ প্রদানকারী পুকুর, হাওর, বাওর কিংবা জলাশয় ৬/৭টি। কালী গঙ্গা বাদল বাসা বাওর, কালী নদী, তালবাড়িয়া বিল, মুচিদহ বিল, মিরপুরের ঝুটিয়াডঙ্গা বিল।এর মধ্যে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে কুমারখালীর জগন্নাথপুর কোল মৎস্য চাষীদের নিকট থেকে নিয়ে নেয়া হয়েছে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তার দেয়া হিসেব বাস্তবে কোন মিল নেই। কুষ্টিয়া সদর উপজেলার চাপাইগাছী বিল, নান্দীয়া বিল, সাইবাড়ীয়া বিল, দৌলতপুরের বিল বোয়ালিয়ার বড়গাংদিয়া বিল। এসব বিল এক একটি প্রকল্পের আওতায় দীর্ঘ মেয়াদী ও সল্প মেয়াদী লিজ প্রদান করা হয়। বাউল সম্র্ট ফকির লালন শাহের স্মৃতিধন্য কালী গঙ্গা বাদল বাসা বাওর জলমহাল আইন উপেক্ষা করে অপেশাজীবী মৎস্য চাষীদের মাঝে লিজ দিয়েছেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এমদাদ হোসেন। যারা লিজ নেয়ার পর পরই বহমান কালী গঙ্গা বাদল বাসা বাওরের মাঝ খানে বাঁধ দিয়ে জলধারার গতি রোধ করেছেন। এই বাঁধ তুলে দিতে ইতোমধ্যে এলাকাবাসী সোচ্চার হয়ে উঠেছেন। জেলা মৎস্য অফিস থেকে মাছ চাষীদের আগ্রহী করে তুলতে মাছ চাষীদের প্রযুক্তিগত আধুনিক চাষাবাদ সম্পর্কে প্রশিক্ষণ সহ আর্থিক সহযোগিতা করা হয়ে থাকে। কালী নদীতে মাছ চাষে উৎসাহ দিতে মাছ চাষীদের মাঝে জেলা মৎস্য অফিস ৩ লাখ টাকা ঋণ প্রদান করেন। কিন্তু ঋণ আদায় সন্তোষজনক নয়। সংশ্লিষ্ট সুত্র জানিয়েছে, নদী, পাহাড়ের মালিক ভূমি মন্ত্রণালয়। কিন্তু সবকিছু এককভাবে ভূমি মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে কাজ ভাগ করে দেয়া আছে। বণ্টন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে পুকুর ও হাওর-বাঁওড়ে মাছ চাষ দেখভাল করবে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এটা ভূমি মন্ত্রণালয়ের কাজ নয়। দেড় বছর ধরে সরকারি পুকুরের মালিকানা ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে দুই মন্ত্রণালয়ে ৪টি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে অনেক বার। কিন্তু একাধিক বৈঠক করেও নির্দিষ্ট কোন সমাধানে পৌঁছতে পারেনি দুই মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকরা।
এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, জেলায় মোট পুকুরের সংখ্যা ১৬ হাজার ৫৪৩ টি। এর মধ্যে বর্তমানে চাষকৃত পুকুরের সংখ্যা ৯ হাজার ৮০২ টি, চাষ উপযোগী পুকুরের সংখ্যা ৩ হাজার ১৯২টি, অচাষকৃত পুকুরের সংখ্যা ৩ হাজার ৫৪৯টি। জেলা সরকারী মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারের সংখ্যা ৪টি হলেও বেসরকারী মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারের সংখ্যা ৪৭টি। এসব পুকুরে মাছ চাষও হচ্ছে। মৎস্যজীবী সমিতির নামে এগুলোর আয় ভোগ করছেন সমাজের প্রভাবশালীরা। চাষ উপযোগী পুকুরের সংখ্যা ৩ হাজার ১৯২টি, অচাষকৃত পুকুরের সংখ্যা ৩ হাজার ৫৪৯টি পুকুর জেলা মৎস্য অধিদপ্তর নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় নিয়ে পুকুরগুলো খনন করে মাছ চাষ ও পুকুর পাড়ে গাছ চাষ করে রক্ষণাবেক্ষণ করা হলে হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় দাঁড়াবে বলে তারা মনে করছেন। অথচ সুষ্ঠু নীতিমালা, উদ্যোগের অভাব, আইনের ফাঁকফোকর ও জেলা মৎস্য অফিসের সহায়তায় একশ্রেণীর সমাজপতি পুকুরগুলোতে মাছ চাষ করে এরই মধ্যে কোটিপতি বনে গেছেন। এই সরকারি পুকুরগুলোর ব্যবস্থাপনায় নির্দিষ্ট কোন নীতিমালা গত ৪০ বছরেও তৈরি করা যায়নি। গত আড়াই বছরে একাধিক বৈঠক করেও তার কোন খসড়া প্রস্তুত করা সম্ভব হয়নি। এতে কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছার যথেষ্ট অভাব রয়েছে।
এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, জেলায় মোট পুকুরের সংখ্যা ১৬ হাজার ৫৪৩ টি। এর মধ্যে বর্তমানে চাষকৃত পুকুরের সংখ্যা ৯ হাজার ৮০২ টি, চাষ উপযোগী পুকুরের সংখ্যা ৩ হাজার ১৯২টি, অচাষকৃত পুকুরের সংখ্যা ৩ হাজার ৫৪৯টি। জেলা সরকারী মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারের সংখ্যা ৪টি হলেও বেসরকারী মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারের সংখ্যা ৪৭টি। এসব পুকুরে মাছ চাষও হচ্ছে। মৎস্যজীবী সমিতির নামে এগুলোর আয় ভোগ করছেন সমাজের প্রভাবশালীরা। চাষ উপযোগী পুকুরের সংখ্যা ৩ হাজার ১৯২টি, অচাষকৃত পুকুরের সংখ্যা ৩ হাজার ৫৪৯টি পুকুর জেলা মৎস্য অধিদপ্তর নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় নিয়ে পুকুরগুলো খনন করে মাছ চাষ ও পুকুর পাড়ে গাছ চাষ করে রক্ষণাবেক্ষণ করা হলে হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় দাঁড়াবে বলে তারা মনে করছেন। অথচ সুষ্ঠু নীতিমালা, উদ্যোগের অভাব, আইনের ফাঁকফোকর ও জেলা মৎস্য অফিসের সহায়তায় একশ্রেণীর সমাজপতি পুকুরগুলোতে মাছ চাষ করে এরই মধ্যে কোটিপতি বনে গেছেন। এই সরকারি পুকুরগুলোর ব্যবস্থাপনায় নির্দিষ্ট কোন নীতিমালা গত ৪০ বছরেও তৈরি করা যায়নি। গত আড়াই বছরে একাধিক বৈঠক করেও তার কোন খসড়া প্রস্তুত করা সম্ভব হয়নি। এতে কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছার যথেষ্ট অভাব রয়েছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন