বুধবার, ১৩ জুন, ২০১২

ছেঁউড়িয়ায় অনুষ্ঠান চলবে আরও দুই দিন ভেঙ্গেছে সাধুর হাট, ফিরছে যে যার আপন ঘরে

এ.এইচ.এম.আরিফ,কুষ্টিয়া ॥ ঘোষনা অনুযায়ী বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের স্বরণোৎসবের ৫দিনের অনুষ্ঠানের আরো দুদিন চললেও সাধুদের হাট ভেঙ্গে গেছে গতকাল শুক্রবার। সাধুরা ফিরছে যে যার আপন ঘরে। গতকাল আখড়া ঘুরে দেখা গেছে, দুর-দূরান্ত থেকে আসা বাউলরা নিজ নিজ আস্তানা ছেড়ে বিছানাপত্র গুছিয়ে রওনা হয়েছে অনেকেই। তবে যাওয়ার আগে আঁখড়া বাড়ির পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। গুরুকে বারবার প্রনাম ও নানা রকম ভক্তি জানিয়ে বিদায় নেন শিষ্যরা। গুরু ভক্তি আর সিদ্ধ মন নিয়ে বিদায় নেয়ার সময় অনেক বাউল তাদের চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি। আবার দেখা হবে সাঁইজির উদাসী ডাকের টানে। গুরু ইসাহক শাহ জানান, সাঁইয়ের জীবদ্দশায় শুধূমাত্র তার ভক্ত আর শিষ্যদের নিয়ে মুলত আড়াই দিনের উৎসব করতেন। সে নিময় মেনেই বাউলরা ভাটাই আসে উজানে ফিরে যায়, যে যার আপন নিবাসে। প্রকৃত ভেকধারী বাউলরা সরকারি অনুষ্ঠানের ব্যাপারে খোঁজখবরও রাখেনা না। তাদেরকে মঞ্চে ডাকলেও তারা আসন ছেড়ে উঠেন না। গতকাল ভোরে সুর্য্য ওঠার আগেই অহিংস মানবতা প্রতিষ্ঠায় আপন মোকামে গুরুর চরণ ছুয়ে দিক্ষা নিয়ে ভক্তি নিবেদন করে শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছে অনেক বাউল। লালন আঁখড়ার আশে পাশে ও একাডেমীর নিচে যারা আসন গাড়ে তারা সাঁইকে ভক্তি আর আরাধনায় নিমগ্ন থাকে কখনো স্থান ত্যাগ করেনা। বিছানাপত্র হাতে নিয়ে কথা বলেন গাজীপুরের বাউল গুর ইসাহক শাহ। প্রায় একযুগ বাড়িতে ফেরেন না তিনি। সংসার ধর্ম টানে না তাকে। বাড়ির কোন খবর রাখেন না। সারা বছর  পথেই কেটে যায় এ ফকিরের। তবে মাঝে মধ্যে আসেন সাঁইজির ধামে। মনের তৃষ্ণা মেটাতে। পরিপূর্ণ হৃদয় নিয়ে ফিনের ভবের বাজারে। তবে অনেক বাউল, সাধু আঁখড়া ছাড়লেও অনেকে গুরুর বাড়িতে থেকে যাবেন আরও কদিন। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় আলোচনা অনুষ্ঠানে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর কামাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ আব্দুস শহীদ। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন খোকসা উপজেলা পরিদষদের চেয়ারম্যান সদর উদ্দিন খান বিশিষ্ট সমাজ সেবক হাজী রবিউল ইসলাম, কুষ্টিয়া জেলা আ’লীগের সহ-সভাপতি আক্কাস আলী মঞ্জু, কুষ্টিয়া জেলা আ’লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি খোন্দকার জুলফিকার আলী আরজু, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আঃ সাত্তার। প্রধান আলোচক হিসেবে লালনের অমর গানের মর্মকথা নিয়ে আলোচনা করেন কুষ্টিয়া সরকারী মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড.জমির উদ্দিন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক সুদিন লাহিড়ী। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন লালন একাডেমির সাবেক সাধারণ সম্পাদক তাইজাল আলী খান। প্রধান আলোচক তার বক্তব্যে বলেন, সমাজ-ইতিহাসের ধারায় বিচার করলে বলা যায়, গ্রামবাংলার মানবতাবাদী মুক্তবুদ্ধির আন্দোলনের প্রাণপুরুষ ছিলেন লালন ফকির। সামাজিক ভেদনীতি, শ্রেনী-বৈষম্য, বর্ণ, শোষণ, জাতপাতের কলহ, সামন্ত-নিগ্রহও সাম্প্রদায়িক বিরোধের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন উচ্চকন্ঠ। লালনের নাম আজ দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্বের প্রতিটি দেশে উচ্চারিত হয়। একজন গ্রাম্য নিরক্ষর সাধকের এ অর্জন ও প্রতিষ্ঠা স্বভাবতই বিস্ময় জাগায় মনে। মানুষের প্রতি মানুষের শোষন-বঞ্চনা-অবিচারের চির অবসান কামনা করে সমাজমনস্ক সাধক লালন শ্রেনীহীন শোষনমুক্ত এক মানবসমাজের স্বপ্ন দেখেছেন তিনি। আলোচনা শেষে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে দেশের খ্যাতি সম্পন্ন শিল্পী সহ লালন একাডেমির শিল্পীরা সারা রাত সঙ্গীক পরিবেশন করেন। অনুষ্ঠানটি সার্বিক পরিচালনা ও উপস্থাপনা করেন শুকদেব সাহা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন