সোমবার, ১৮ জুন, ২০১২

যক্ষ্মা'য় আক্রান্ত কুষ্টিয়ার যক্ষ্মা হাসপাতাল! দীর্ঘদিন চিঠি দিয়েও এক্স-রে মেশিন মেলেনি

আরিফ মেহমুদ ॥‘যার হই যক্ষ্মা তার নাই রক্ষা’ এই শ্লোগানকে এসময় সত্য বলে প্রমানিত করলেও আজ চিকিৎসা বিজ্ঞানের বদৌলতে শ্লোগানটিকে মিথ্যে প্রমান করেছে। চিকিৎসা করলেই যক্ষ্মারোগ সম্পূর্ন ভাল হয়। সরকারী ও বেসরকারীভাবে বিনা খরচায় যক্ষ্মারোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ১৯৬০ সালে যক্ষ্মারোগ চিকিৎসার জন্য কুষ্টিয়ার কাটাইখানা মোড়ে স্থাপিত হয় কুষ্টিয়া বক্ষব্যাধি ক্লিনিক তথা টিবি ক্লিনিকটির। কালের আবর্তে বক্ষব্যাধি ক্লিনিকটির অবস্থা এতই নাজুক হয়ে পড়েছে যে, এটিকে চিকিৎসাকেন্দ্র না বলে রোগ সংরক্ষণকেন্দ্র বলা যায়। জেলায় যক্ষ্মারোগের রোগী নির্ণয়ে ও চিকিৎসা দেয়া নিয়ে নানান অনিয়ম, সেচ্ছাচারিতা ও দূর্নীতি অবহেলার অভিযোগ রয়েছে। বর্তমানে জেলায় রোগীর সংখ্যা কত রোগীর ধরণ কি এবং চিকিৎসা ব্যবস্থায় প্রয়োজনীয় পরীক্ষা সহ কি পদ্ধতি প্রয়োগ করা হচ্ছে সেটিরও কোন সদোত্তর পাওয়া যায়নি। এযাবৎ পর্যন্ত কতজন রোগীকে স্থায়ী ও অস্থীয় পদ্ধতিতে চিকিৎসা দেয়া হয়েয়ে এবং কতজন রোগী চিকিৎসা নিয়ে সম্পূর্ন সুস্থ হয়েছে তার কোন সঠিক পরিসংখ্যান নেই। বক্ষব্যাধি ক্লিনিক বলছে হিসেব রয়েছে ব্র্যাকের কাছে। ব্র্যাক বলছে আমরা শুধু ওষুধ সরবরাহ করি চিকিৎসা দেন বক্ষব্যাধি ক্লিনিকের চিকিৎসকগণ। কুষ্টিয়া বক্ষব্যাধি ক্লিনিকের মেডিকেল অফিসার ডাঃ সেলিনা বানু ছুটিতে থাকায় এমন সব নানান নানান অনিয়ম, সেচ্ছাচারিতা ও দূর্নীতি অবহেলার অভিযোগ নিয়ে কথা হয় জুনিয়র কনসালটেন্ট ডাঃ হালিমা খাতুনের সাথে। তিনি জানান এসব অভিযোগ সম্পূর্ন মিথ্যা। এখানে রোগী চিকিৎসার জন্যই আসে এবং তাদের এক্স-রে বাদে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করে ওষুধ ও ব্যবস্থাপত্র দেয়া হয়। রোগীদের কফ-কাঁশি পরীক্ষা ব্যবস্থা থাকলেও বুক এক্স-রে করার মেশিন নেই সেই ১৯৯৬ সাল থেকে। অকেজো এক্স-রে মেশিনটি সরিয়ে ২০০৭ সালে নতুন মেশিন লাগালেও সেটিও অপারেটিংয়ের অভাবে অকেজো হয়ে পড়ে আছে দীর্ঘ দিন ধরে। ফলে এক্স-রে ছাড়াই রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এখানে গত ১৬ বছর ধরে অকেজো এক্স-রে মেশিনটি পরিবর্তন করার জন্য অনবরত চিঠি দিয়েও কোন কাজ হচ্ছে না। কথা হয় চিকিৎসা নিতে আসা শহরের সুখনগর এলাকার জনৈক এক রোগীর সাথে। তিনি জানালেন সেই সকালে এসেছি,এখানো কোন চিকিৎসা পায়নি। ডাক্তার সাহেব থাকলেও বিদ্যুৎ নাই থাকায় রোগী দেখছেন না। ঠিকমত ওষুধ-পত্র পান তো জানতে চাইলে তিনি হ্যাঁ সুচক মাথা নেড়ে উত্তর দেন। 
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, অর্ধশত বছরের পুরনো টিনসেডের যক্ষ্মা ক্লিনিক ভবনটি প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ভবনটিতে পানির কোন ব্যবস্থা নেই। ঘরের চালার টিনে মরিচা ধরে জাগায় জাগায় ফুটো হয়েগেছে। মূল ভবনের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও উন্নতমানের এক্স-রে মেশিনের জন্য সিএমএসডিতে বার বার চিঠি লেখেও কোন কাজ হয়নি আজো। স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, কফ-কাঁশির উন্নত ও নির্ভরযোগ্য পরীক্ষার জন্য এই টিবি ক্লিকিনটির একসময় সুনাম থাকলেও এটির ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের এখন কোনই সুদৃষ্টি নেই। এলাকার মানুষের ধারণা ছিল নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর, হাসপাতালটির কিছুটা হলেও উন্নতি হবে। অথচ এই পুরনো বক্ষব্যাধি হাসপাতালটি রয়েগেল সেই তিমিরেই। কারোর সুদৃষ্টি পড়েনি একদিনের জন্যও এই বক্ষব্যাধি হাসপাতালটির দিকে। উলে¬খ্য, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক গোলটেবিল বৈঠকে এসব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু কোন প্রয়োজনীয় উদ্যোগের কথা আসেনি। এদিন নানান প্রশ্নের জবাবে জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ তরুণ কান্তি হালদার বক্ষব্যাধি হাসপাতালে এক্স-রে মেশিন না থাকায় দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, কুষ্টিয়া বক্ষব্যাধি ক্লিনিকের জন্য ৩০০ এম এ এক্স-রে মেশিন চেয়ে সংশ্লি¬ষ্ট দফতরে এ পর্যন্ত ৯টি চিঠি দেয়া হলেও এ যাবৎ এর কোন সদোত্তর পাওয়া যায়নি। সর্বশেষ গত ২৯ মে চিঠি দেয়া হয়েছে এখনো তার জবাব মেলেনি। জেলার যক্ষ্মা রোগীদের সঠিক চিকিৎসা প্রদানে এক্স-রে মেশিনটি অতীব জরুরী হয়ে পড়েছে। 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন