বুধবার, ৬ জুন, ২০১২

কুষ্টিয়া সদরে চাল সংগ্রহে তোড়জোড় থাকলেও উপজেলা পর্যায়ে চুক্তিবদ্ধ হয়নি মিল মালিকরা ॥ ধান-চাল সংগ্রহ হুমকিতে

আরিফ মেহমুদ ॥ কুষ্টিয়া সদরে সরকারিভাবে ধান ও চাল সংগ্রহ অভিযানে তোড়জোড় থাকলেও উপজেলা পর্যায়ে চুক্তিবদ্ধ হয়নি মিল মালিকরা। ধান ও চাল সংগ্রহ অভিযান হুমকির মুখে। গত ৩১ মে বৃহস্পতিবার থেকে কুষ্টিয়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে ধান ও চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হলেও এ পর্যন্ত আশানুরূপ সংগ্রহ শুরু হয়নি। তবে শীঘ্রই অভিযান চালুর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সরকারি দামের চেয়ে বাজারমূল্য বেশি হওয়া সত্বেও সরকারি খাদ্য গুদামে ধান ও চাল বিক্রির জন্য কুষ্টিয়া সদরের মিলারদের মধ্যে আগ্রহ দেখা গেলেও এক্ষেত্রে গুদামে জায়গা সংকটে পিছিয়ে রয়েছে উপজেলা খাদ্য অফিসগুলো। বাজারমূল্যের ব্যবধানে চুক্তিবদ্ধ না হওয়ায় এ দশা হয়েছে। এদিকে প্রান্তিক কৃষকরাও ধান চাল বিক্রি করছে না গুদামগুলোতে। ফলে প্রায় ১ সপ্তাহে মাত্র ২শ মেট্রিক টন ধান নয় শুধুমাত্র চাল সংগ্রহ হয়েছে। আবার কুষ্টিয়ায় সরকারিভাবে চাল ক্রয়ের প্রথম দিনেই খাদ্য গুদামে নিন্মমানের চাল সরবরাহের অভিযোগ উঠায় খাদ্য বিভাগ পচা ও দুর্গন্ধযুক্ত চাল সরবরাহ যাতে না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে চাল সংগ্রহ করছে। শেষ পর্যন্ত খাদ্য বিভাগের এই দৃঢ় মনোবল বজায় রাখতে পারবে কি না সে বিষয় নিয়েও সন্দেহের প্রশ্ন তুলেছেন অভিজ্ঞ মহল। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা সুজা আলম জানান, চলতি বোরো মৌসুমে সর্বাধিক ১৪ শতকরা ময়েশ্চার বিশিষ্ট চাল সংগ্রহ করা হবে। জেলার ছয়টি উপজেলার ২৯টি খাদ্য গুদামের জন্য সরকারিভাবে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ১৪৭ মেট্রিক টন ও চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৭ হাজার ৫২৭ মেট্রিক টন। প্রতি কেজি ধান কৃষকদের কাছ থেকে ক্রয় করা হবে ১৮ টাকায় ও প্রতি কেজি চাল ক্রয় করা হবে ২৮ টাকায়। এরমধ্যে কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় ১২ হাজার মেট্রিক টন, মিরপুর উপজেলায় ২হাজার ৫৬৩মেট্রিক টন, কুমারখালী উপজেলায় ১হাজার ১৭১ মেট্রিক টন, ভেড়ামারা উপজেলায় ৫৯০ মেট্রিক টন, দৌলতপুর উপজেলায় ৫৫৬ মেট্রিক টন ও খোকসা উপজেলায় মাত্র ৫১৬ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করা হবে। ধানের বিষয়ে এখনো কৃষক কিংবা ব্যবসায়ীরা সরকারী দরে বিক্রি করার আগ্রহ তেমন একটা দেখায়নি। ফলে কোন উপজেলায় কতটুকু ধান ক্রয় করা হবে সেটি নির্ধারণ করা হয়নি। এদিকে ২৯টি খাদ্য গুদামের ধারন ক্ষমতা রয়েছে ১৫ হাজার মেট্রিক টন। এসবখাদ্য গুদামে  ধান-চাল রাখা যাবে সর্বচ্চ ১৯ হাজার মেট্রিক টন। বর্তমানে এসব গুদামে ১২ হাজার মেট্রিক টন চাল ও গম মজুদ রয়েছে। সর্বচ্চ ৮ মেট্রিক টন ধান-চাল রাখার জায়গায় ১৭ হাজার ৫২৭ মেট্রিক টন চাল এবং ১ হাজার ১৪৭ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই অতিরিক্ত ধান-চাল রাখার জায়গা সংকুলান হবে কিভাবে জানতে চাইলে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা সুজা আলম জানান,ভবিষ্যৎ খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য জেলায় আরো খাদ্য গুদাম বা গোডাউনের প্রয়োজন। তিনি আরও জানান, চলতি বোরো মৌসুমে কৃষকরা সরাসরি নিজ নিজ এলাকার খাদ্য গুদামগুলোতে ধান ও চাল বিক্রয় করতে পারবেন। ধান ও চাল সংগ্রহের সময় কৃষকরা যাতে কোন ঝামেলায় না পড়ে সে বিষয়ে কড়া নজর রাখা হচ্ছে। জেলার ৬টি উপজেলায় ৩১ মে থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ধান ও চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে। অভিযান শেষ হবে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর। এই কর্মসূচী বাবস্তবায়নে গত ২৮ মে কৃষক ও মিল মালিকরা সরকারি খাদ্য গুদামে তাদের উৎপাদিত ধান কিংবা চাল বিক্রির জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। এদিকে বাজারে ধান-চালের দাম কম হওয়ায় কৃষক পড়েছেন মহাবিপাকে। তারা ধান বিক্রি করে তাদের উৎপাদন খরচ তুলতে পারছেন না। অতি প্রয়োজনীয় ঋণের টাকা পরিশোধ করা ছাড়া কৃষকরা ধান বিক্রি করছেন না। উৎপাদন খরচের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট খরচ তুলতে প্রয়োজনমতো ধান বিক্রি করে বাকিটা দাম বাড়ার আশায় রেখে দিচ্ছেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন