শনিবার, ৩০ জুন, ২০১২

খুলনা বিভাগীয় রবীন্দ্র নাট্যোৎসবের সমাপনী দিনে কুষ্টিয়ার নন্দন থিয়েটারের পোষ্ট মাষ্টার মঞ্চস্থ

আরিফ মেহমুদ ॥ ৬ দিনব্যাপী খুলনা বিভাগীয় রবীন্দ্র নাট্যোৎসবের সমাপনী দিনে গতকাল শনিবার কুষ্টিয়া জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে কুষ্টিয়ার নন্দন থিয়েটারের নির্দেশনায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোট গল্প অবলম্বনে নাটক পোষ্ট মাষ্টার মঞ্চায়িত হয়েছে। নন্দন থিয়েটারের সভাপতি বিশিষ্ট নাট্যকার নজরুল ইসলাম খোকন ও বিশিষ্ট নাট্যকার সুনীল দত্তের নাট্যরূপ ও নির্দেশনায় নাটকটিতে অভিনয়ন করেছে একঝাক শিশু অভিনেতা ও নন্দন থিয়েটারের শক্তিশালি অভিনেতারা। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোট গল্প পোষ্ট মাষ্টার নাটকের বিশেষ ও মুখ্য ভূমিকায় রতন চরিত্রটি অনাবদ্য ফুটিয়ে তুলেছেন নতুন মুখ তামান্না আফরিন মৌ। কুষ্টিয়া নাটক ও সাংস্কৃতিক জগতে মৌ এক পরিচিত মুখ। কণ্ঠশিল্পী সুজন রহমানের ছোট বোন। মা বাবা ও ভাইয়ের সানিধ্যে খুব ছোট থেকেই মৌ কুষ্টিয়া নাটক ও সাংস্কৃতিক জগতে অংশ নিয়ে বেড়ে উঠেছে। সেই থেকেই তার অভিনয় জগতের পথ চলা শুরু। পোষ্ট মাষ্টার চরিত্রে অভিনয় করেছেন ইমরান হোসেন। অভিনয়ে ইমরান একেবারেই নতুন। নন্দন থিয়েটারে মাধ্যমে তার অভিনয় জগতে আসা। নাটকটির মুল চরিত্র পোষ্ট মাষ্টার ও রতন চরিত্রটি দারুনভাবে মঞ্চায়ন করেছে দুজনই। তাদের অভিনয়ে পুরো হল ছিল নিস্তব্ধ। অভিনয় দর্শক শ্রোতাদের হৃদয়ে নাড়া দিয়েছে বার বার। দর্শক শ্রোতারা করতালী দিয়ে তাদের অভিনয়ে মুগ্ধ হয়ে চরম উৎসাহ যুগিয়েছে। নাটক শুরু হওয়ার আগে প্রতিদিনের মত সমাপনী দিনেও অনুষ্ঠিত হয় সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা। বাংলাদেশ গ্র“প থিয়েটার ফেডারেশন কেন্দ্রীয় পরিষদের সদস্য ও খুলনা বিভাগীয় রবীন্দ্র নাট্যোৎসবের সদস্য সচিব বিশিষ্ট নাট্যাভিনেতা মকলেছুর আলম বাবুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট নাট্যকার,নির্দেশক ও অভিনেতা জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম। অনুষ্ঠানের শুরুতেই কুষ্টিয়ার নাটক থিয়েটার জগতে অনন্য অবদান রাখার জন্য কুষ্টিয়ার ৯টি নাটক ও থিয়েটার থিয়েটার গ্র“পকে ফুলের তোড়া দিয়ে অভিনন্দিত করা হয়। পরে অনুষ্ঠানে আগত অতিথিদের ফুলের তোড়া ও উত্তোরিয় পরিয়ে বরণ করে নেয়া হয়। সাংস্কুতিক বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইন্সিটিটিউট, বাংলাদেশ গ্র“প থিয়েটার ফেডারেশন ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সার্বিক সহযোগিতায় কুষ্টিয়া জেলা শিল্পকলা একাডেমি মঞ্চে ৬ দিনব্যাপী খুলনা বিভাগীয় রবীন্দ্র নাট্যোৎসবের আয়োজন মহাড়াম্বর ও জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হল। সভাপতি মকলেছুর আলম বাবু ৬ দিনব্যাপী খুলনা বিভাগীয় রবীন্দ্র নাট্যোৎসবে যারা সার্বিক সহযোগিতা করেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে। প্রধান অতিথি তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃষ্ট সাহিত্য কর্ম সাংস্কৃতিক অঙ্গনের এমন কোন জায়গা নেই, যেখানে প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেনি। প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁর অবদান চিরদিন মনে রাখার মত। আমাদের মত অল্প জানার মানুষের পক্ষে তাঁর প্রতিভার বিশে¬ষণ করা সম্ভব নয়। শুধু এটুকু বলতে চাই, শিল্প সাংস্কৃতিক অঙগনে যতগুলো খারাপ দিক আছে নাটক মঞ্চায়নের মধ্য দিয়ে সেগুলো তুলে ধরা হয়। নাটক সমাজের অপ্রকাশিত সত্যকে তুলে ধরে এবং নাটক সমাজ পরিবর্তনের মুখ্য ভূমিকা পালন করে। নাটক সুস্থ সমাজের প্রতিচ্ছবি। বর্তমানে নিয়মিত সাংস্কৃতিক ও নাটক চর্চার অভাবে ভাল অভিনেতা পাওয়া যাচ্ছে না। মনে হয় কুষ্টিয়ার মানুষ নাটক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে এবং নাটক থেকে দিন দিন দূরে সরে যাচ্ছে। কুষ্টিয়ার নাটক পাড়ায় অতীতে এমন অবস্থা ছিলনা। দর্শক শ্রোতাদের নাটক মুখি করতে নিয়মিত নাট্য চর্চার মাধ্যমে নতুনদের জায়গা করে দিতে হবে। আলোচনা শেষে কুষ্টিয়ার নন্দন থিয়েটারের নির্দেশনায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোট গল্প অবলম্বনে নাটক পোষ্ট মাষ্টার মঞ্চায়িত হয়। ৬ দিনব্যাপী খুলনা বিভাগীয় রবীন্দ্র নাট্যোৎসবের অনুষ্ঠানটি সার্বিক পরিচালনা ও উপস্থাপনা করেন বিশিষ্ট অভিনেতা পরিমল থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান মতি। 

   


কুষ্টিয়ায় ৩০০ টন পচা চাল নিয়ে বেকায়দায় জেলা খাদ্য অফিস

আরিফ মেহমুদ ॥ থাইল্যান্ড থেকে আমদানি করা ৩০০ টনের অধিক খাওয়ার অযোগ্য পচা চাল নিয়ে বেকায়দায় পড়েছে কুষ্টিয়া জেলা খাদ্য অফিস। এ চাল কি করা হবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। গত মঙ্গলবার রেশনে পচা এ চাল পেয়ে বিক্ষোভ করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছর থাইল্যান্ড থেকে বিপুল পরিমান চাল আমদানি করা হয়। আমদানি করা এসব চাউলের বড় একটি অংশ পচা। খাওয়ার অযোগ্য ৩০০টনের অধিক চাল কুষ্টিয়ার খাদ্য গুদাম গুলোতে পড়ে আছে। এসব চাল কেউ নিচ্ছে না। সরকারী ক্রয় করা প্রায় নিম্নমানের চাল গুদামজাত করা হয়েছিল গত মে মাসের ১২ ও ১৩ তারিখে। এ সমুদয় চাল খাওয়ার অনুপযোগী হলেও তা বর্তমানে বিতরনের চেষ্টা করছে খাদ্য কর্মকর্তারা। শহরের বড় বাজারের খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহ নেওয়াজ জানান, আমদানি করা ৬০টন চাল তার গুদামে রয়েছে। এ চালের মান খুব খারাপ। বেশি দামে এসব চাল দেশের বাইরে থেকে আনা হলে এখন ১৫ টাকা কেজিতেও কেউ নেবে না বলে মনে করেন তিনি। আমদানি করা এসব চাল নিয়ে তারা বেকায়দায় আছেন বলে জানান।
গত মে মাসে কুষ্টিয়া জেলার খাদ্য গুদামগুলোতে নিম্নমানের চাল গুদামজাত করার পর তা টের পান জনপ্রতিনিধিরা। তারা মিরপুর গুদামে গিয়ে নিম্নমানের চাল রাখার বিরোধিতা করেন। পরে জেলা প্রশাসকসহ খাদ্য অফিসের কর্মকর্তারা গুদাম পরিদর্শন করে বিষয়টি সুরাহার আশ্বাস দেন। এসব নিম্নমানের চাল বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিতরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। জেলার প্রতিটি গুদামে ভাল চাল থাকলেও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে খাওয়ার অযোগ্য পচা চাল বিরতন করা নিয়ে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম জানান, গরু ছাগলেও যে চাল খেতে পারবে না সে চাল আমাদের দিয়ে অপমান করা হয়েছে। এ চাল সরিয়ে ফেলার দাবি জানান তিনি। জেলা খাদ্য অফিসের একটি সুত্র জানিয়েছে, পচা এ চাল নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় এ চাল বিলি না করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তারপরও এ চাল কি করে বিলি করা হলো তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এ চালের ব্যাপারে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুজা আলম জানান, আমদানি করা চাল নিয়ে তারা বিপাকে আছেন। বিষয়টি উচ্চ পর্যায়ে জানানো হয়েছে।

বৃহস্পতিবার, ২৮ জুন, ২০১২

কুষ্টিয়ায় ওএমএসের আটা নিয়ে নয় ছয় মিল মালিক ও ফুড কর্মকর্তাদের পোয়াবারো

আরিফ মেহমুদ ॥ বৃহত্তর কুষ্টিয়ায় ওএমএসের আটা দিয়ে চলছে চরম অরাজকতা। ন্যায্যে মুল্যে সাধারন মানুষের মাঝে আটা বিক্রির কথা থাকলেও বাসত্মবে তা হচ্ছে না। আটা বিক্রির নামে পকেট ফুলে কলা হচ্ছেন ফুড অফিসের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে ডিলার ও মিল মালিকরা। ডিলার ও ফুড অফিসের কর্তারা অনিয়মের বিষয়টি স্বীকারও করেছেন। অনুসন্ধানে ওএমএসের আটা বিক্রির নানা অনিয়ম দূর্ণীতির চিত্র পাওয়া গেছে। সাধারন মানুষের নামে বরাদ্দকৃত আটা প্রতিদিন চলে যাচ্ছে কালোবাজারে। ওএমএসের আটা বিক্রি চালু থাকায় সবচেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছে মিল মালিকরা। কুষ্টিয়া শহরে ওএমএসের আটা বিক্রির জন্য ১৭জন ডিলার রয়েছে। ১৭জন ডিলারকে প্রতি সপ্তাহে ৭০০ কেজি আটা সরবরাহ করা হয়। একই ভাবে কুষ্টিয়া থেকে মেহেরপুর-ঝিনাইদহ ও রাজবাড়ি জেলাতেও ওএমএসের আটা সরবরাহ করছে মিলাররা। জেলা ফুড অফিস জানিয়েছে, ৫জন মিলার কুষ্টিয়াসহ আশেপাশের কয়েকটি জেলায় আটা সরবরাহ করছে। এরমধ্যে রয়েছে চিত্ত রঞ্জন পালের মালিকানাধীন মিনকো ফ্লাওয়ার ১, ২, সাবিবর গাফ্ফারের মালিকানাধীন কুষ্টিয়া ফ্লাওয়ার মিল, মিজানুর রহমানের মালিকানাধীন গড়াই ফ্লাওয়ার মিল, খোকসায় আব্দুল মজিদের মালিকানাধীন খোকসা ফ্লাওয়ার মিল ও হাজী আশরাফের মালিকানাধীন আশরাফ ফ্লাওয়ার মিল। খাদ্য অফিসের কর্মকর্তারা জানান. প্রতিমাসে মিলের উৎপাদন ক্ষমতা অনুযায়ী গম বরাদ্দ পান মিল মালিকরা। আড়াইশ টন থেকে শুরু করে ৭০টন পর্যমত্ম বরাদ্দ পান মালিকরা। গম গোডাউন থেকে নেয়া থেকে শুরু করে আটায় রূপামত্মর করা পর্যমত্ম সকল খরচ মিল মালিকদের। সরকারের সাথে শর্ত অনুযায়ী মিল মালিকরা ১০০টন গম থেকে আটা তৈরি করে সরবরাহ করেন ৭৭টন। বাকি ২৩টন আটা তারা রেখে দেন। তাদের ব্যায় মেটাতে বিপুল পরিমান আটা তারা রেখে দিচ্ছেন। যার মুল্যে ৩ লাখ ৯১ হাজার টাকা। তবে এ টাকার অর্ধেক তাদের খরচ হয়না। গড়াই ফ্লাওয়ার মিলের মালিক মিজানুর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি জানান, গোডাউন থেকে গম এনে আটা তৈরি করে পৌঁছে দেয়া পর্যমত্ম তাদের কাজ। গম আনার পর প্রসেস করার সময় কিছু ঘাটতি হয়। তবে কি পরিমান খরচ হয় সে হিসাব তাদের নিকট নেই। তবে খুব বেশি লাভ থাকে না বলে দাবী করেন তিনি। এদিকে প্রতিদিন বিকেল সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকেল ৯টা পর্যমত্ম নিদিষ্ট ১৭টি পয়েন্টে আটা বিক্রির কথা । অথচ দু’একটি পয়েন্ট ছাড়া সারাদিনেও কোন ডিলার তাদের দোকান খোলেন না। গত সোমবার দুপুর ১২টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের কোর্ট ষ্টেশন রোডের জোনাকি বীজ ভান্ডার নামের একটি ওএমএস পয়েন্টে গিয়ে দেখা গেছে দোকানের ঝাপ বন্ধ। ডিলারসহ তার কোন লোকজন নেই। ষ্টেশন রোডের ডিলার আজমল হোসেনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, আটা শেষ তাই দোকান বন্ধ। একই দিন শহরের আমলাপাড়ায় এক ফুড কর্মকর্তার আত্মীয় ডিলার কাজি নজরুল ইসলাম, লাহিনী বটতলায় শাহাদৎ হোসেন, মিলবাজার এলাকায় আনোয়ার হোসেন, হাউজিং এলাকায় শেখ টিপু সুলতান ও শহরের ৬ রাসত্মার মোড়ের ডিলার পিন্টু খন্দকারের দোকানে গিয়ে আটা বিক্রির দৃশ্য চোখে পড়েনি। সকালের দিকে দু’একটি দোকান খুললেও ঘন্টা খানেকের মধ্যে বন্ধ হয়ে যায় বলে এলাকার লোকজন জানান। ৬ রাসত্মার মোড়ে বাড়ি ভ্যান চালক রেজাউল জানান, মাঝে মধ্যে আটা পাওয়া যায়। দুপুরের পর পয়েন্ট আর খোলা থাকে না। পৌর বাজারের ওএমএস ডিলার আকবর আলী জানান, গম ও আটার বাজার দর এখন কম। তাই সাধারন লোকজন পয়েন্ট থেকে আটা কম নেয়। তাই তাদের বিক্রিও কম। তিনি বলেন, অন্য কোথাও অনিয়ম হতে পাওে, তবে তার এখানে কোন অনিয়ম হয় না। রাত্রি বেলা আসলেও লোকে আটা পায় বলে দাবী করেন তিনি। নাম না প্রকাশ করার শর্তে এক খাদ্য ব্যবসায়ী জানান, প্রতিটি ডিলারকে এক সপ্তাহে ৭০০কেজি আটা নেয়া বাধ্যতামূলক। ১৯ টাকা কিনে তারা ২০ টাকায় বিক্রি করেন। তবে বাজার পড়ে যাওয়ায় সারাদিন দোকান খুলে রেখে শ্রমিক দিয়ে আটা বিক্রি করে ডিলাররা তেমন লাভ পান না। প্রতি সপ্তাহে দুই দিন আটা তোলেন ডিলররা। ৫০ কেজির ৪২ বসত্মা আটা মিলারদের জন্য বরাদ্দ থাকলেও তারা তা নিচ্ছেন না। ১০ থেকে ১৫ বসত্মা পর্যমত্ম তুলছেন ডিলাররা। খাদ্য পরিদর্শকরা প্রতিদিন ১০০ টাকা ঘুষ নেন প্রতিটি পয়েন্ট থেকে। তাই সারা দিন কি হচ্ছে সেটি তারা দেখেন না। অন্য একটি সুত্র জানায় ডিলাররা অতিরিক্ত ২০০ টাকা লাভে মিলারদের নিকট ওএমএসের আটা বিক্রি করে দিচ্ছেন। এ থেকে প্রতি ডিলার মাসে অতিরিক্ত ১২ হাজার টাকা আয় করছেন। আর আটা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারন মানুষ। মিল মালিকরা ডিলারদের নিকট থেকে আটা নিয়ে প্যাকেট করে তা চড়া দামে বাজারে বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এভাবে প্রতি মাসে বিপুল পরিমান আটা মিল মালিকরা ডিলারদের নিকট থেকে অল্প মুল্যে কিনে নিচ্ছেন। খাদ্য পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আব্দুল ওয়াহেসহ আরও কয়েকজন কর্মকর্তা এ অনিয়মের সাথে জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতিটি পয়েন্ট তদারকির জন্য খাদ্য পরিদর্শক আছেন। একজন কর্মকর্তাকে ৩টির অধিক পয়েন্টও দেখতে হয়। কুষ্টিয়া জেলা খাদ্য অফিসের সহকারি খাদ্য পরিদর্শক ইকবাল হোসেন জানান, প্রতিদিন তাকে ৩টি পয়েন্ট দেখতে হয়। দু’টি পয়েন্টে গেলেও অন্য পয়েন্টে যাওয়ার সময় পান না। অনেক ডিলার ঠিক মত আটা বিক্রি করতে চান না বলে তিনি জানান। এ আটা যায় কোথায় সে প্রশ্ন তারও। ডিলারদের বেশির ভাগই ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতা হওয়ায় কেউ মুখ খুলতে সাহস পান না। ডিলাররা ঠিক মত আটা বিক্রি করছে কি-না তা খতিয়ে দেখার জন্য একটি মনিটরিং টিম আছে। সে টিমে জেলা প্রশাসন, ইউএনও ও ফুড কর্মকর্তারা যুক্ত আছেন। তবে তারা এক দিনও পরিদর্শনে যান না। ওএমএসের আটা নিয়ে নয় ছয়ের জন্য ফুড কর্মকর্তারা দায়ী বলে সাধারন লোকজন অভিযোগ করেছেন। প্রতি মাসে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও খাদ্য পরিদর্শকরা মিল মালিক ও ডিলারদের নিকট থেকে মাসোহারা নিচ্ছেন। তাই আটা কোথায় যায় সেটি তারা দেখেন না। কুষ্টিয়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুজা আলমের সাথে কথা হলে তিনি জানান, ওএমএসের আটা নিয়ে কোন অনিয়ম হয়ে থাকলে তা খতিয়ে দেখা হবে। তার অফিসের কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আন্তর্জাতিক মাদক বিরোধী দিবসে বনমালী ভৌমিক মাদকদ্রব্যের ভয়াবহতা প্রতিরোধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে

আরিফ মেহমুদ ॥ কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক (যুগ্ম সচিব) বনমালী ভৌমিক বলেছেন, মাদক বিক্রেতা যতই শক্তিশালি হোক না কেন তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। জেলায় মাদকদ্রব্যের ভয়াবহতা বিস্তারের জন্য আমরা কেউই নিজ দায়িত্ববোধ এড়াতে পারি না। কুষ্টিয়াকে সম্পূর্ন মাদকমুক্ত রাখতে ও প্রতিরোধে জেলার বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্টগুলোতে কঠোর হস্তে চোরাচালান বন্ধে র‌্যাব-পুলিশ প্রশাসনসহ বিজিবি ও মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরকে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। মাদকদ্রব্যে আসক্তের কারনে সমাজের শান্তিপূর্ন পরিবারগুলোতে নিত্যদিন নেমে আসছে অশান্তির কালো ছায়া। মাদকসেবী সন্তানকে নিয়ে ঘরে ঘরে মা-বাবার নীরব কান্না। সন্তানকে ঘিরে তাদের রঙিন স্বপ্নে বিচ্ছেদের দেয়াল তৈরি করছে ভয়ঙ্কর নেশা। অনেক ক্ষেত্রে মাদকাসক্ত সন্তানকে অভিভাবকরাই আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দিচ্ছেন। মাদকের নীলদংশনে নষ্ট হচ্ছে দেশের যুব সমাজ। যুব সমাজ মেধা শূন্য হয়ে যাচ্ছে দিন দিন। নেশার টাকা জোগাতে ভয়ঙ্কর সব অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে মাদকসেবীরা। মাদক একটি সামাজিক সমস্যা। এ সমস্যা সমাধানে শুধু পুলিশ নয়, এর বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। জেলাবাসী তথা দেশ ও জাতির উন্নয়নে যাদের কাছে থেকে অনেক কিছু পাওয়ার আশা করছে মরন নেশা মাদকদ্রব্য সেবনে দিনে দিনে তারা নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। মেধাশূন্য জাতিতে পরিনত হচ্ছি আমরা। এমন অবস্থা চলতে দেয়া যায়না। আসুন অঙ্গীকার করি মাদকদ্রব্যের ভয়াবহতা প্রতিরোধে সমাজের সব শ্রেণী-পেশার মানুষকে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসতে হবে। গতকাল মঙ্গলবার কালেক্টরেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কুষ্টিয়ার আয়োজনে মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচার বিরোধী আন্তর্জাতিক দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল যুব সমাজ ও স্বাস্থ্য মাদক পরিহার করুন স্বাস্থ্য নিয়ে ভাবুন। মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচার বিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস উদযাপন উপলক্ষে সকাল ৯টায় কুষ্টিয়া পাবলিক লাইব্রেরী চত্বর থেকে একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালী বের করা হয়। র‌্যালীটি শহরের এনএস রোড হয়ে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়ক হয়ে কালেক্টরেটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরের আলোচনা সভায় এসে শেষ হয়। র‌্যালীতে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, বিজিবি, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, প্রাথমিক শিক্ষা পরিবার, এনজিও সংগঠন সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরা অংশ গ্রহণ করেন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) খোন্দকার আজিম আহমেদের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কুষ্টিয়ার সহকারী পরিচালক আইউব আলী মিয়া, বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়া সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর বদরুদ্দোজা, ৩২ বিজিবি মিরপুর সেক্টরের মেজর মেহেদী ও ব্লাস্ট কুষ্টিয়া ইউনিটের সমন্বয়কারী এ্যাড.শংকর মজুমদার। বক্তারা তাদের বক্তব্যে বলেন, আমাদের যুব সমাজকে মরণ নেশা মাদকদ্রব্যের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করতে না পারলে দেশ আগামীতে নেতৃত্ব ও মেধা শুন্য হয়ে যাবে। তাই যে কোন মুল্যে জেলাকে মাদকমুক্ত ও মাদকদ্রব্যের ভয়াবহতা প্রতিরোধ করতে হবে। অনুষ্ঠানটি সার্বিক সঞ্চালন করেন খন্দকার লুৎফর রহমান।

খুলনা বিভাগীয় রবীন্দ্র নাট্যোৎসবে বনমালী ভৌমিক নাটক সমাজ পরিবর্তনের মুখ্য হাতিয়ার ও দর্পন

আরিফ মেহমুদ ॥ কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক (যুগ্ম সচিব) বনমালী ভৌমিক বলেছেন,সমাজের কুসংস্কারকে আলোর মত পরিস্কার করতে সকল বাধা উপেক্ষা করে সাংস্কৃতিক অঙ্গনের পথ চলা আজো সুদৃঢ। অনেক কিছু আছে যা সহজে প্রকাশ করা যায় না। নাটক সমাজের সেই অপ্রকাশিত সত্যকে তুলে ধরে। নাটক সমাজ পরিবর্তনের মুখ্য হাতিয়ার ও সমাজের দর্পন। আমাদের মহান স্বাধীনতার মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন নাটক মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস ও অনুপ্রেরণা যুহিয়েছে। এদেশের মুক্তিকামী সাধারণ মানুষকে দেখিয়েছে স্বাধীনতার স্বপ্ন। নাটকই পারে মানুষের জীবন যাত্রার মোড় ঘুরাতে। নাটকের প্রতি মানুষের আকর্ষণ বাড়াতে হবে। নাট্যকর্মীরা খুব শক্তিশালী। তাদের অভিনয় দেখে মনেই হয়না যে তারা অভিনয় করছে। মনে সমাজে ঘটে যাওয়া ওই চরিত্রটি তার জীবনেরই প্রতিচ্ছবি। নাটকে নতুন মুখের আগমন কম। স্কুল কলেজে নিয়মিত নাট্য চর্চার মাধ্যমে নতুনদের জায়গা করে দিতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত নাটক মঞ্চস্থ হলেই ভাল অভিনেতা পাওয়া যাবে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সার্ধশত জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল সোমবার কুষ্টিয়া জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে ৬দিনব্যাপী খুলনা বিভাগীয় রবীন্দ্র নাট্যোৎসবের উদ্বোধনীতে উদ্বোধকের বক্তব্যে তিনি এসব। সাংস্কুতিক বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইন্সিটিটিউট, বাংলাদেশ গ্র“প থিয়েটার ফেডারেশন ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সার্বিক সহযোগিতায় ৬দিনব্যাপী খুলনা বিভাগীয় রবীন্দ্র নাট্যোৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানের শুরুতেই অতিথিদের ফুলের তোড়া ও উত্তোরিয় পরিয়ে বরণ করে নেয়া হয়। খুলনা বিভাগীয় রবীন্দ্র নাট্যোৎসবের সদস্য সচিব বিশিষ্ট নাট্যাভিনেতা মকলেছুর রহমান বাবুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়ার পৌরসভার মেয়র আনোয়ার আলী। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ গ্র“প থিয়েটার ফেডারেশন সেক্রেটারী জেনারেল বিশিষ্ট নাট্যাভিনেতা ঝুনা চৌধুরী, দপ্তর সম্পাদক খোরশেদুল আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক নাজিম উদ্দিন জুলিয়াস, কুষ্টিয়া জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক বিশিষ্ট নাট্যাভিনেতা আমিরুল ইসলাম, বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব জিন্না হক ও খন্দকার জুলফিকার আলী আরজু প্রমুখ। আলোচনা শেষে ঝিনাইদহের অংকুর নাট্য একাডেমি মঞ্চস্থ করে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক মুকুট। অনুষ্ঠানটি সার্বিক পরিচালনা ও উপস্থাপনা করেন কবি শুকদেব সাহা। 

রবিবার, ২৪ জুন, ২০১২

আন্তর্জাতিক জনসেবা দিবসে বনমালী ভৌমিক সেবা পাওয়া মানুষের অধিকার তা নিশ্চিত করতে হবে

আরিফ মেহমুদ ॥ কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক (যুগ্ম সচিব) বনমালী ভৌমিক বলেছেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে সবার আগে অনগ্রসর জনগনের মাঝে সরকারী সেবা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। দেশের তৃণমূল পর্যায়ের প্রান্তিক জনগোষ্ঠির মাঝে সেবা প্রদান নিশ্চিত করার মাধ্যমে তাদের জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভম। প্রযুক্তির যুগে অবাধ সরকারী সেবা প্রদান জনগনের ক্ষমতায়নের অন্যতম পূর্বশর্ত। সরকার যে সেবা দেয় তা পাওয়া মানুষের অধিকার। মানুষের কল্যানে ও দেশকে এগিয়ে নিতে সেবা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। এ অধিকার তখনই বাস্তবায়িত হবে, যখন জনগণ সরকারের কোন কার্যালয়ের কী কাজ তা জানতে পারবে। সরকারী কর্মকর্তাদের মনে রাখতে হবে, দেশ ও জাতির কল্যাণে জনগনের দরগোড়ায় সেবা পৌছে দিয়ে তাদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের মূল দায়িত্ব হল জনগণকে সেবা দেয়া। কোনভাবেই যেন মানুষ সেবা পেতে দিনের পর দিন হয়রানি না হয় সেদিকে গুরুত্ব দিতে হবে। পৃথিবীর সভ্যদেশগুলোতে জনগণকে অফিসে যেয়ে সেবা নিতে হয়না,সরকারীই জনগনের দরগোড়ায় সেবা পৌছে দেয়। কিন্তু আমরা দেখছি মানুষ সেবা পাচ্ছে না। যেখানেই যাবেন সেবা নেই। থাকলেও দেয়া হচ্ছে। বিভিন্ন মিথ্যা অজুহাতে জনগণকে হয়রানি করা হচ্ছে। আসুন আমরা অঙ্গীকার করি সমস্ত সুন্দরের পেছনে যে মানুষগুলো সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছে সেই দেশের মূল শক্তি জনগনের সেবা প্রদান নিশ্চিত করি। গতকাল শনিবার কুষ্টিয়া কালেক্টরেটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন আয়োজিত আন্তর্জাতিক জনসেবা দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আন্তর্জাতিক জনসেবা দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য বিষয়-ওহহড়াধঃরড়হ রহ ঈরঃরুবহং ঊহমধমবসবহঃ ভড়ৎ ঊভভবপঃরাব এড়াবৎহধহপব। সরকারী দপ্তর থেকে আপনার সেবা বুঝে নিন। দিবসটিকে যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে উদযাপনের জন্য কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বিকেল সাড়ে পাঁচটায় পাবলিক লাইব্রেরি মাঠ হতে এক বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের করা হবে। র‌্যালিটি প্রধান  সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে আলোচনা সভায় এসে মিলিত হয়। আলোচনা সভার আগে প্রধান অতিথি কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক (যুগ্ম সচিব) বনমালী ভৌমিক সহ অন্যান্য অতিথিবৃন্দ ঘুরে ঘুরে মেলার স্টোলগুলো পরিদর্শন করেন। কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড.মহিউদ্দিনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আলহাজ্ব ফজলুর রহমান ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুভাষ চন্দ্র সাহা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) খোন্দকার আজিম আহমেদ। আন্তর্জাতিক জনসেবা দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠানকে সুন্দর ও সাফল্যমিন্ডত করার জন্য কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ প্রশাসন, কুষ্টিয়া আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, বিআরটিএ কুষ্টিয়া অঞ্চল, জেলা তথ্য অফিস, সেচ্ছাসেবি প্রতিষ্ঠান দিশা, ফেয়ার ও মানুষ মানুষের জন্য প্রতিষ্ঠান নিজ নিজ দপ্তরের সেবা প্রদান ও কার্যক্রম প্রদর্শন বিষয়গুলো নিয়ে মেলায় স্টোল দেন। আলোচনা সভা শেষে  সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এতে জেলা শিল্পকলা একাডেমি, লালন একাডেমি সহ স্থানীয় শিল্পীবৃন্দ সঙ্গীত পরিবেশন করবেন। অনুষ্ঠানটি সার্বিক পরিচালনা ও উপস্থাপনা করেন কবি শুকদেব সাহা।

বৃহস্পতিবার, ২১ জুন, ২০১২

মাল্টিপারপাস ও সমবায় সমিতির অন্তরালে কুষ্টিয়ায় অবৈধ ব্যাংকিং ব্যবসা জমজমাট

আরিফ মেহমুদ ॥ কুষ্টিয়ায় মাল্টিপারপাসসহ বিভিন্ন সমবায় সমিতির অন্তরালে অবৈধ বেপরোয়া ব্যংকিং ব্যবসা চলছে জমজমাট। সমবায় ও জয়েন্ট স্টকের রেজিস্ট্রেশনকে পুঁজি করে অবাধে এই অবৈধ ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালিত হলেও দেখার কেউ নেই। সরকারী বিধি নিষেধ উপেক্ষা করে মোটা অংকের মুনাফার লোভ দেখিয়ে মূলধন সংগ্রহ ও সুদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। মাল্টিপারপাসসহ বিভিন্ন সমবায় সমিতি ব্যাংকিংয়ের নামে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। সমাজ পরিবর্তনের লক্ষ্যে বাংলাদেশে সমবায়ের অগ্রযাত্রা শুরু হলেও সমবায় সেক্টর নিয়ে প্রতিবছর কাগজে-কলমে অডিট ছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে কোন তদারকি নেই। ফলে এ সেক্টরে চলছে অনেকটা অরাজক পরিস্থিতি। জেলার ৬ উপজেলায় বর্তমানে ২২৫৮টি  মাল্টিপারপাস ও বিভিন্ন সমবায় সমিতির কার্যক্রম চলছে। এর মধ্যে সমবায় সমিতির ১০৬৯টি এবং বিআরডিবি’র ১১৮৯টি। এদের মধ্যে প্রায় ৫ শতাধিক মাল্টিপারপাস ও সমিতিই অবৈধ ব্যাংকিং কার্যক্রম চালানোর পাশাপাশি মূলধন সংগ্রহ ও সুদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠান দেখভালের জন্য প্রতিটি উপজেলা সদরে সমবায় অফিস দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি জেলার ৬টি সমবায় অফিসে ২৪ জন পরিদর্শক কাজ করলেও অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার কারণে সংশি¬ষ্ট সমবায় সমিতিকে শোকজ নোটিশ ছাড়া কোন সমিতির বিরুদ্ধে বড় ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। জেলা সমবায় অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলার ৬ উপজেলায় এক হাজার ৬৯টি মাল্টিপারপাস ও বিভিন্ন নামের সমবায় সমিতির নিবন্ধন দেয়া হলেও বর্তমানে এ জেলায় ৫০ ভাগ সমিতির কার্যক্রম রয়েছে। প্রায় ৩৪৩টি সমিতির কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। সূত্র জানায়, নিবন্ধন লাভের প্রতিবছরই অডিটের নামে বড় ধরনের অনিয়ম করে সমবায় সমিতিগুলো সব কিছু জায়েজ করে নিচ্ছে। জেলা ও উপজেলা সদরের সমিতিগুলো দেখভালের জন্য জেলা সদরের ১৪ জন সমবায় পরিদর্শককে নির্দিষ্ট উপজেলা ও সমিতি চিহ্নিত করে দেয়া হলেও কোন কাজ হচ্ছে না। উপজেলাওয়ারি নিবন্ধিত মাল্টিপারপাস ও বিভিন্ন ক্যাটাগরির সমবায় সমিতির সংখ্যা হচ্ছে কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় ২২৪টি, ভেড়ামারা উপজেলায় ১১৬টি, দৌলতপুর উপজেলায় ২৮৫টি, মিরপুর উপজেলায় ২৪১টি, কুমারখালী উপজেলায় ১৪১টি ও খোকসা উপজেলায় ৬২টি মোট ১ হাজার ৬৯টি মাল্টিপারপাস ও সমবায় সমিতির নিবন্ধন রয়েছে। এসব সমিতিতে ১ লাখ ২৫ হাজার ৪৬৯ জন সদস্য বা উপকারভোগী সম্পৃক্ত রয়েছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, অধিকাংশ সমবায় সমিতিতে ৩০ থেকে ৪৫ শতাংশ হারে সুদের ব্যবসা চালানো হচ্ছে। কারণ ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে মূল টাকা ও বার্ষিক লভ্যাংশ একত্রিত করে মাসিক কিস্তিতে ভাগ করে চক্র বৃদ্ধি হারে দ্বিতীয় মাস থেকে সুদ ও আসল টাকার কিস্তি আদায় করা হচ্ছে। কিছু কিছু সমিতি ইসলামী ও শরিয়া মোতাবেক ব্যবসা চালানোর নামে মাসিক লাখ প্রতি এক হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত সুদ দিয়ে আমানত সংগ্রহ করছে। এছাড়া কিছু সমিতি বিভিন্ন লাভজনক প্রকল্পে বিনিয়োগ দেখিয়ে বিভিন্ন মেয়াদে আমানত সংগ্রহ করে মাস শেষে সুদ প্রদান করলেও বছরান্তে বিনিয়োগকৃত প্রকল্পের আয়-ব্যয়ের হিসাব না করেই সুদ জায়েজ করার কৌশল হিসেবে আমানতকারীকে প্রতারণার মাধ্যমে বছর শেষে মাসিক আরও ৪০০-৫০০ টাকা পরিশোধ করে। অবৈধ ব্যাংকিংয়ের নামে ডিপিএস ও মধ্য মেয়াদী ফিক্সড ডিপোজিট পদ্ধতি চালিয়ে একদিকে যেমন মাল্টিপারপাস ও সমবায় সমিতির কর্নধররা কোটিপতি বনে যাচ্ছে। অন্য দিকে এসব ব্যাংকিং চালুর ফলে সরকার মোটা অংকের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এখনই এদের এসব অবৈধ ব্যাংকিংয়ের লাগাম টেনে না ধরলে এক সময় জনগণ মোটা অংকের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হবে এর দায়-দায়িত্ব নেবে কে? এব্যাপারে কুষ্টিয়া জেলা সমবায় কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, সমবায় সমিতির নামে নিবন্ধন নিয়ে কোন সমিতি যদি অবৈধ ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালিত করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তাছাড়াও জেলা সমবায় অফিস থেকে ১৪ জন পরিদর্শক নিয়মিত সমবায় সমিতির কার্যক্রম তদারকি করে আসছে। কার্যক্রম কিংবা বার্ষিক অডিট রিপোর্টে কোন অনিয়ম পেলে সংশি¬ষ্ট সমবায় সমিতিকে শোকজ নোটিশ প্রদান করা হয়। মাল্টিপারপাস ও সমবায় সমিতির উপকারভোগি সদস্যরা আইন ও বিধি মোতাবেক তাদের মূলধন বৃদ্ধির জন্য আমানত গ্রহণ ও শেয়ার বিক্রি করতে পারবে। সদস্য ছাড়াও যে কেউ সমিতির কার্যক্রমের উপর আস্থা রেখে আমানত জমা রাখতে পারবে। তবে এদের ব্যাংকিং ব্যবস্থা বন্ধের আগে সুনিদৃষ্টভাবে জানতে হবে তারা সমিতির কার্যক্রমের সাথে কত টুকু ব্যাংকিং চালু রেখেছে। সুনিদৃষ্ট অভিযোগ পেলে নিবন্ধন বাতিল সহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সমবায় সমিতির সঙ্গে সংশ্লি¬ষ্ট কর্মকর্তারা জানান, জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মস কিংবা সমবায় থেকে নিবন্ধন লাভের সময় সংঘ স্মারক ও গঠনতন্ত্র অনুমোদন লাভের জন্য নির্ধারিত হারে মাসোয়ারা দিলে তাতে সমবায় আইন বহির্ভূত ধারা-উপধারা যা-ই থাকুক না কেন কোন পরিবর্তন ছাড়াই সব কিছু অনুমোদন করে দেয়া হয়। জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মস কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলে সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায় কুষ্টিয়ায় ব্যাংক পরিচালনা কিংবা সমিতির নামে আর্থিক লেন-দেনের কোন অনুমোতি দেয়া হয়নি। নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের এ ধরনের দুর্নীতির কারণেই কুষ্টিয়ায় সম্ভাবনাময় সমবায় সেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়াও নিবন্ধন প্রদানের পর এসব সমবায় সমিতির তদারকি করার জন্য সমবায় অফিস, সমবায় অধিদফতর ও সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে কঠোর কোন পদেক্ষপ না থাকায় সারা দেশের মতো কুষ্টিয়াতেও সমবায়ের কার্যক্রমে চলছে হ-য-ব-র-ল অবস্থা।



বুধবার, ২০ জুন, ২০১২

কুষ্টিয়ায় সাংবাদিকদের সমাবেশ ও মানব বন্ধন

আরিফ মেহমুদ ॥ হত্যা নির্যাতন চালিয়ে সাংবাদিকদের কণ্ঠ রোধ করা যাবে না। একের পর এক সাংবাদিক হত্যাকান্ড ঘটলেও আইন শৃংখলা বাহিনী কাউকে গ্রেফতার করতে পারছে না। দেশের সাংবাদিকরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। তারপরও তারা জনগনের অধিকার রক্ষায় নিরলস ভাবে দায়িত্ব পালন করছে।
যশোরে গ্রামের কাগজের সাংবাদিক জামালসহ সারা দেশে সাংবাদিক নির্যাতনের প্রতিবাদে গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ১১ টায় শহরের থানা মোড়ে ডাকা এক মানববন্ধন সমাবেশে সাংবাদিক নেতারা এ কথা বলেন। সমাবেশে জেলার সর্বসস্তরের সাংবাদিকরা অংশ গ্রহণ করেন। বক্তারা কর্মসুচী থেকে আরও বলেন, বর্তমান সময়ে একের পর এক সাংবাদিকরা হামলার শিকার হচ্ছেন। কোন হামলারই সঠিক বিচার হচ্ছে না। যার কারনে খুনীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে। আইএনবির স্টাফ রিপোর্টার সিনিয়র সাংবাদিক মজিবুল শেখের সভাপতিত্বে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে অংশ নেন এনএনবির জেলা প্রতিনিধি রেজাউল করিম, টিভি জার্নালিষ্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এনটিভির স্টাফ রিপোর্টার ফারুক আহমেদ পিনু, সংবাদের জেলা প্রতিনিধি মিজানুর রহমান লাকী, আন্দোলনের বাজার পত্রিকার প্রধান নির্বাহী সম্পাদক আনিসুজ্জামান ডাবলু,সময়ের কাগজের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক নরুন্নবী বাবু, দিনের খবর পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক লুৎফর রহমান কুমার, দিনের খবর সম্পাদক ফেরদৌস রিয়াজ জিল্লু, মাটির পৃথিবী সম্পাদক এমএ জিহাদ, ইত্তেফাকের জেলা প্রতিনিধি মোস্তাফিজুর রহমান মঞ্জু, কালের কন্ঠের স্টাফ রিপোটার্র তারিকুল হক তারিক, চ্যানেল টুয়েন্টি ফোরের স্টাফ রিপোর্টার শরীফ বিশ্বাস, সমকালের জেলা প্রতিনিধি সাজ্জাদ রানা, একুশে টিভি প্রতিনিধি জহুরুল ইসলাম, প্রথম আলো প্রতিনিধি তৌহিদী হাসান শিপলু, সময় টিভি প্রতিনিধি এস এম রাশেদ, আরটিভির স্টাফ রিপোর্টার শেখ হাসান বেলাল,কুষ্টিয়া খবরের সম্পাদক এএম জুবায়েদ রিপন, মানবজমিন প্রতিনিধি দেলোয়ার রহমান মানিক, মোহনা টিভি প্রতিনিধি মওদুদ রানা, ইন্ডিপেনডেন্ট টিভি প্রতিনিধি হাসান আলী, বাংলাবাজার পত্রিকা প্রতিনিধি আরিফ মেহমুদ, দৈনিক আজকের সুত্রপাতের সম্পাদক আক্তার হোসেন ফিরোজ, দৈনিক দেশতথ্য ব্যবস্থাপনা সম্পাদক এনামুল হক, দৈনিক দিনের খবরের সহকারী সম্পাদক আবু হায়দার লিপু,এম,জি কিবরিয়া, দৈনিক স্বাধীনমতের কুষ্টিয়া প্রতিনিধি রাজু আহমেদ, দিনের শেষে পত্রিকা প্রতিনিধি নিজাম উদ্দিন, কুষ্টিয়ার কাগজের চীফ রিপোর্টার মাহমুদ হাসান মিলন, দৈনিক নবরাজ প্রতিনিধি শামীম রানা, দৈনিক আজকের আলোর বার্তা সম্পাদক দেবাশীষ, দৈনিক আজকের আলোর স্টাফ রিপোর্টার জামান আরিফ, দৈনিক আন্দোলনের বাজার পত্রিকার ফটো সাংবাদিক জালাল উদ্দিন খোকন, সবুজ দেশের জেলা প্রতিনিধি এনামূল হক, দৈনিক সময়ের কাগজের স্টাফ রিপোর্টার শাহিনুল ইসলাম, এস এম মাহিন, টিভি ক্যামেরাম্যান এসোসিয়েশনের সভাপতি চ্যানেল আই’র ক্যামেরাম্যান নিয়ামূল হক, সাধারণ সম্পাদক এনটিভির ক্যমেরাম্যান আশিফুজ্জামান সারফু। এছাড়া মানববন্ধনে অংশ নেন ছাত্রদল কুষ্টিয়া সদর উপজেলা শাখার আহবায়ক আব্দুল আওয়াল বাদশা, সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান সুমন, ছাত্রদল নেতা সিপন প্রমুখ।

বাংলাদেশ সরকারী কর্মচারী সমন্বয় পরিষদের সভা

নিজ সংবাদ ॥ বর্তমানে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষপত্রের দাম বৃদ্ধির কারনে নিম্ন বেতনভূক্ত কর্মচারীদের জীবিকা নির্বাহে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আউট সোর্সসিংপদ বাতিল, মাষ্টাররোল, ক্যাজুয়েলকর্মচারীদের নিয়মিত করন, ৬০ ভাগ মহার্ঘ ভাতার দাবী সহ পরিষদের ৫ দফা দাবী বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সরকারী কর্মচারী সমন্বয় পরিষদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। দশে মিলে করি কাজ হারি জিতি নাহি লাজ। যে কোন সমস্যা সমাধানে ঐক্যের কোন বিকল্প নাই। নিজেদের দাবী আদায়ের লক্ষ্যে সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। গতকাল বুধবার বিকেলে কুষ্টিয়া কালেক্টরেট ভবনে বাংলাদেশ সরকারী কর্মচারী সমন্বয় পরিষদের অস্থায়ী কার্যালয়ে কার্যনির্বাহী পরিষদের সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতেই কোরআন তেলোওয়াত করেন পরিষদের সদস্য আবদুল মান্নান। বাংলাদেশ সরকারী কর্মচারী সমন্বয় পরিষদ কুষ্টিয়া জেলা শাখার সভাপতি এস এম আকরাম হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্যা রাখেন বাংলাদেশ সরকারী কর্মচারী সমন্বয় পরিষদ কুষ্টিয়া জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শাহাবুদ্দিন শেখ, সহ-সভাপতি আখতারুল হক, জেনারেল হাসপাতাল শাখার শেখ রবিউল ইসলাম, ডিসি অফিস শাখার মনোয়ার হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক আবু বকর, সাংগঠনিক আব্দুর রহিম, পিয়ার আলী, ক্রীড়া সম্পাদক শাহাদৎ হোসেন, মহিলা সম্পাদিকা হাজেরা খাতুন, কার্যনির্বাহী সদস্য গোলাম রসুল, আব্দুল বারিক শহিদুল ইসলাম ও আব্দুল মান্নান প্রমুখ। সাধারণ সম্পাদক শাহাবুদ্দিন শেখ পরিষদের ৫ দফা দাবী বাস্তবায়ন সফল করার লক্ষ্যে জেলা সকল দপ্তরের কর্মচারীদের উদ্বাত্ত আহবান জানান। তিনি আগামী ২৪ জুন সকাল ১১টায় বাংলাদেশ সরকারী কর্মচারী সমন্বয় পরিষদের বিক্ষোভ সমাবেশ সফল করতে সকল ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের সময় মত উপস্থিত হয়ে কর্মসূচীতে অংশ গ্রহনেরও আহবান জানান।      

মঙ্গলবার, ১৯ জুন, ২০১২

রেশনে পঁচা চাল পেয়ে ক্ষুব্ধ কুষ্টিয়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের খাদ্য অফিস ঘেরাও

আরিফ মেহমুদ ॥ কুষ্টিয়ায় যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে নিম্নমানের চাল সরবরাহ করায় বিক্ষোভ প্রদর্শন ও শহীদ মিনারে অবস্থান ধর্মঘট পালন করেছে মুক্তিযোদ্ধারা। একই সাথে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ও ঘেরাও করেন তারা। গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় মুক্তিযোদ্ধারা তাদের মাসিক রেশন ওঠাতে গেলে পুলিশ লাইন রেশনিং কর্তৃপক্ষ তাদেরকে পঁচা, দূর্গন্ধযুক্ত নিম্নমানের চাল প্রদান করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা কুষ্টিয়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তাদের দেয়া নিম্নমানের চাল প্রদর্শন করেন। প্রায় দুই ঘন্টা অবস্থান ধর্মঘট শেষে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে অবস্থান ধর্মঘট পালন করেন তারা। সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আব্দুল ওয়াহেদ জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নিম্নমানের চাল দেয়ার কথা নয়। কিভাবে এবং কোথা থেকে ওই চাল মুক্তিযোদ্ধাদের দেয়া হয়েছে তা আমার জানা নেই। ওসি রেশন বিষয়টি বলতে পারবেন। তিনি বলেন ইতোপূর্বে মুক্তিযোদ্ধাদের নিম্নমানের চাল দেয়া হচ্ছে বলে তারা অভিযোগ করায় তাদেরকে ভাল চাল দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ১৭জুন মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৬টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু সেই চাল তো খারাপ নয়, কিভাবে খারাপ চাল আসল তা আমার বোধগম্য নয়। তবে যে চাল মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে দেয়া হচ্ছে তা থাইল্যান্ড থেকে আমদানীকৃত বলে জানিয়েছেন তিনি। কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ভাল মানের চাল সরবরাহের জন্য খাদ্য বিভাগকে বারবার তাগিদ দেয়া হলেও তারা কোন কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে খাদ্য বিভাগ আমাদেরকে যে চাল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বরাদ্দ দিয়েছে তাই নিতে হয়েছে। শুধু মুক্তিযোদ্ধারাই নয়, আমার পুলিশ সদস্যরাও একই চাল গ্রহণ করছেন। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ উদ্দিন জানিয়েছেন, বঙ্গবন্ধুর ডাকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছিলাম। কিন্তু আজ আমরা সেই সুফল ভোগ করতে পারছিনা। সুফল তো দুরের কথা, আমাদেরকে নিয়ে রিতিমত তামাশা করা হচ্ছে। আমাদের মত মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসনের নামে উপহাস করা হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য রেশনিং পদ্ধতি চালু করে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সন্মান প্রদর্শন করলেও সরকারী অফিস আদালতে এখনো রাজাকার, আল বদর, আল শামসদের দৌরাত্ম তুঙ্গে। তারা আমাদেরকে নিয়ে রিতিমত উপহাস করছে। আমরা কি তাহলে এজন্যই দেশকে স্বাধীন করেছিলেন? মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ উদ্দিন অশ্র“সিক্ত কন্ঠে এভাবেই আক্ষেপ চিত্তে নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করলেন গতকাল রেশনের চাল নিতে এসে। শুধু চালই নয়, আটার ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে যে আটা সরবরাহ করা হচ্ছে তাও অতি নিম্নমানের। সাবেক কমান্ডার সানোয়ার উদ্দিন রিন্টু জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য যে চাল দেয়া হচ্ছে তা কোন মানুষের খাবারের মধ্যে পড়ে না। ওই চাল গরু-ছাগলেরও রুচিতে আসবেনা। অথচ সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রতি কেজি ২৯ টাকা ৪২পয়সা দরের চাল নির্ধারণ করেছেন। নির্ধারিত অর্থ দিয়ে বাজারের সবচেয়ে ভাল চাল পাওয়া সম্ভব। তিনি জানান মুক্তিযোদ্ধাদের রেশনের চাল-আটা নিয়ে যারা তামাশা করছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া দরকার। বর্তমান সরকার শহীদ ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য রেশনিং পদ্ধতি চালু করে প্রতি মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ইউনিট প্রতি নির্দিষ্ট পরিমান বরাদ্দ দেয়। যা থেকে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা পরিবার কোনমতে খেয়ে পরে বাঁচতে পারেন।

সোমবার, ১৮ জুন, ২০১২

যক্ষ্মা'য় আক্রান্ত কুষ্টিয়ার যক্ষ্মা হাসপাতাল! দীর্ঘদিন চিঠি দিয়েও এক্স-রে মেশিন মেলেনি

আরিফ মেহমুদ ॥‘যার হই যক্ষ্মা তার নাই রক্ষা’ এই শ্লোগানকে এসময় সত্য বলে প্রমানিত করলেও আজ চিকিৎসা বিজ্ঞানের বদৌলতে শ্লোগানটিকে মিথ্যে প্রমান করেছে। চিকিৎসা করলেই যক্ষ্মারোগ সম্পূর্ন ভাল হয়। সরকারী ও বেসরকারীভাবে বিনা খরচায় যক্ষ্মারোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ১৯৬০ সালে যক্ষ্মারোগ চিকিৎসার জন্য কুষ্টিয়ার কাটাইখানা মোড়ে স্থাপিত হয় কুষ্টিয়া বক্ষব্যাধি ক্লিনিক তথা টিবি ক্লিনিকটির। কালের আবর্তে বক্ষব্যাধি ক্লিনিকটির অবস্থা এতই নাজুক হয়ে পড়েছে যে, এটিকে চিকিৎসাকেন্দ্র না বলে রোগ সংরক্ষণকেন্দ্র বলা যায়। জেলায় যক্ষ্মারোগের রোগী নির্ণয়ে ও চিকিৎসা দেয়া নিয়ে নানান অনিয়ম, সেচ্ছাচারিতা ও দূর্নীতি অবহেলার অভিযোগ রয়েছে। বর্তমানে জেলায় রোগীর সংখ্যা কত রোগীর ধরণ কি এবং চিকিৎসা ব্যবস্থায় প্রয়োজনীয় পরীক্ষা সহ কি পদ্ধতি প্রয়োগ করা হচ্ছে সেটিরও কোন সদোত্তর পাওয়া যায়নি। এযাবৎ পর্যন্ত কতজন রোগীকে স্থায়ী ও অস্থীয় পদ্ধতিতে চিকিৎসা দেয়া হয়েয়ে এবং কতজন রোগী চিকিৎসা নিয়ে সম্পূর্ন সুস্থ হয়েছে তার কোন সঠিক পরিসংখ্যান নেই। বক্ষব্যাধি ক্লিনিক বলছে হিসেব রয়েছে ব্র্যাকের কাছে। ব্র্যাক বলছে আমরা শুধু ওষুধ সরবরাহ করি চিকিৎসা দেন বক্ষব্যাধি ক্লিনিকের চিকিৎসকগণ। কুষ্টিয়া বক্ষব্যাধি ক্লিনিকের মেডিকেল অফিসার ডাঃ সেলিনা বানু ছুটিতে থাকায় এমন সব নানান নানান অনিয়ম, সেচ্ছাচারিতা ও দূর্নীতি অবহেলার অভিযোগ নিয়ে কথা হয় জুনিয়র কনসালটেন্ট ডাঃ হালিমা খাতুনের সাথে। তিনি জানান এসব অভিযোগ সম্পূর্ন মিথ্যা। এখানে রোগী চিকিৎসার জন্যই আসে এবং তাদের এক্স-রে বাদে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করে ওষুধ ও ব্যবস্থাপত্র দেয়া হয়। রোগীদের কফ-কাঁশি পরীক্ষা ব্যবস্থা থাকলেও বুক এক্স-রে করার মেশিন নেই সেই ১৯৯৬ সাল থেকে। অকেজো এক্স-রে মেশিনটি সরিয়ে ২০০৭ সালে নতুন মেশিন লাগালেও সেটিও অপারেটিংয়ের অভাবে অকেজো হয়ে পড়ে আছে দীর্ঘ দিন ধরে। ফলে এক্স-রে ছাড়াই রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এখানে গত ১৬ বছর ধরে অকেজো এক্স-রে মেশিনটি পরিবর্তন করার জন্য অনবরত চিঠি দিয়েও কোন কাজ হচ্ছে না। কথা হয় চিকিৎসা নিতে আসা শহরের সুখনগর এলাকার জনৈক এক রোগীর সাথে। তিনি জানালেন সেই সকালে এসেছি,এখানো কোন চিকিৎসা পায়নি। ডাক্তার সাহেব থাকলেও বিদ্যুৎ নাই থাকায় রোগী দেখছেন না। ঠিকমত ওষুধ-পত্র পান তো জানতে চাইলে তিনি হ্যাঁ সুচক মাথা নেড়ে উত্তর দেন। 
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, অর্ধশত বছরের পুরনো টিনসেডের যক্ষ্মা ক্লিনিক ভবনটি প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ভবনটিতে পানির কোন ব্যবস্থা নেই। ঘরের চালার টিনে মরিচা ধরে জাগায় জাগায় ফুটো হয়েগেছে। মূল ভবনের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও উন্নতমানের এক্স-রে মেশিনের জন্য সিএমএসডিতে বার বার চিঠি লেখেও কোন কাজ হয়নি আজো। স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, কফ-কাঁশির উন্নত ও নির্ভরযোগ্য পরীক্ষার জন্য এই টিবি ক্লিকিনটির একসময় সুনাম থাকলেও এটির ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের এখন কোনই সুদৃষ্টি নেই। এলাকার মানুষের ধারণা ছিল নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর, হাসপাতালটির কিছুটা হলেও উন্নতি হবে। অথচ এই পুরনো বক্ষব্যাধি হাসপাতালটি রয়েগেল সেই তিমিরেই। কারোর সুদৃষ্টি পড়েনি একদিনের জন্যও এই বক্ষব্যাধি হাসপাতালটির দিকে। উলে¬খ্য, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক গোলটেবিল বৈঠকে এসব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু কোন প্রয়োজনীয় উদ্যোগের কথা আসেনি। এদিন নানান প্রশ্নের জবাবে জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ তরুণ কান্তি হালদার বক্ষব্যাধি হাসপাতালে এক্স-রে মেশিন না থাকায় দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, কুষ্টিয়া বক্ষব্যাধি ক্লিনিকের জন্য ৩০০ এম এ এক্স-রে মেশিন চেয়ে সংশ্লি¬ষ্ট দফতরে এ পর্যন্ত ৯টি চিঠি দেয়া হলেও এ যাবৎ এর কোন সদোত্তর পাওয়া যায়নি। সর্বশেষ গত ২৯ মে চিঠি দেয়া হয়েছে এখনো তার জবাব মেলেনি। জেলার যক্ষ্মা রোগীদের সঠিক চিকিৎসা প্রদানে এক্স-রে মেশিনটি অতীব জরুরী হয়ে পড়েছে। 


বুধবার, ১৩ জুন, ২০১২

লালন স্মরণোৎসবএকতারা, ঢোল আর বাঁশির সুরে মাতোয়ারা ছেঁউড়িয়া

আরিফ মেহমুদ ॥ লালনের সাধনভূমি কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়া এখন একতারা, ঢোল আর বাঁশির সুরে মাতোয়ারা। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা বাউলরা গেয়ে চলেছেন লালনের আধ্যাত্মিক গান। বাউলসম্রাটের গানের টানে হাজার হাজার মানুষ ছুটে আসছে ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়িতে। ফকির লালন শাহর আখড়াবাড়ি এবং বাড়ির সামনের বিশাল মাঠ এখন ভক্ত, সাধক ও দর্শনার্থীদের পদচারণে মুখরিত।
সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় স্থানীয় লালন একাডেমী পাঁচ দিনব্যাপী বার্ষিক লালন স্মরণোৎসবের আয়োজন করেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ছিল উৎসবের দ্বিতীয় দিন। গত বুধবার রাতে কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনের সংসদ সদস্য বেগম সুলতানা তরুণ প্রধান অতিথি হিসেবে উৎসবের উদ্বোধন করেন।
গতকালের অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক বনমালী ভৌমিকের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের প্রশাসক জাহিদ হোসেন জাফর। লালনের কর্মময় জীবন নিয়ে আলোচনা করেন বিশিষ্ট লালন-গবেষক ও স্থানীয় বরেণ্য ব্যক্তিরা।
লালন একাডেমীর কর্মকর্তারা জানান, এবার উৎসব শুরুর আগেই লালন শাহর মূল আখড়াবাড়ির অডিটরিয়াম চত্বরসহ পুরো এলাকায় হাজার হাজার ভক্ত-অনুসারী আসন গেড়ে বসে। ক্রমে সামনের বিশাল মাঠের সবটুকু ভরে গেছে। পুরো এলাকায় সাধুরা খণ্ড খণ্ড আসর বসিয়ে অবিরাম সাধনা করে চলেছেন লালনসংগীত।
এবারও ভারত, পাকিস্তান, ইংল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশের লালনভক্তদের আখড়াবাড়িতে দেখা গেছে। আমেরিকা থেকে আসা স্যামবোন বলেন, 'আমি অনেক আগে থেকেই লালন সম্পর্কে অনেক তত্ত্বকথা শুনেছি। এখানে এসেছি লালন সম্পর্কে আরো জানতে। আমার খুবই ভালো লাগছে।'
যশোর থেকে আসা লালনভক্ত ওসমান ফারুক বলেন, 'আমি প্রতিবছর বাবার মাজারে আসি। বাবার ধ্যান করি; ধ্যান শেষে পরিবারের কাছে ফিরে যাই।' রাজশাহীর রহনপুর থেকে আসা শাহজাহান ফকির বলেন, 'শুধু সাঁইজির সিদ্ধি লাভ ও আত্মার শান্তির জন্য আমি নিয়মিত এখানে আসি।' মেহেরপুরের লতা বিশ্বাস বলেন, 'লালন মানবতাবাদী কবি ছিলেন এবং তিনি মানবধর্ম পালন করতেন। তাই আমি আমার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে এখানে এসেছি মানবধর্ম সাধন করতে।'
লালন একাডেমীর সাবেক সহকারী সম্পাদক ও বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এনামূল হক মন্জু জানান, স্মরণোৎসবকে কেন্দ্র করে প্রতিরাতে এখানে স্থাপিত লালন-মঞ্চে রাতভর গান গেয়ে শিল্পীরা হাজার হাজার দর্শক-শ্রোতাকে মাতিয়ে রাখছেন। আর এ গানের টানে বিকেল হলেই এলাকার সব রাস্তায় মানুষের ঢল নামছে।
লালন একাডেমীর সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য তাইজাল আলী খান জানান, উৎসবে আসা লালন অনুসারীরা চিরনিদ্রায় শায়িত তাদের ধর্মগুরুর প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধা প্রদর্শন করছে। লালনের মূল মাজারের বাইরে বসেছে বিশাল বাউল মেলা। সেখানে বিভিন্ন পসরা সাজিয়ে বসেছেন নানা এলাকা থেকে আসা দুই শতাধিক ব্যবসায়ী। ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন ধরনের খাবার ও বাউল-বাদ্যসহ হরেক রকমের পণ্যসামগ্রী কিনছেন অভ্যাগতরা।
লালন একাডেমীর সভাপতি কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক বনমালী ভৌমিক জানান, উৎসবকে ঘিরে এবার ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ২৫০ জন র‌্যাব-পুলিশের পাশাপাশি ডিবি ও স্বেচ্ছাসেবকসহ লালন একাডেমীর কর্মকর্তারাও উৎসবে আসা ভক্তদের নিরাপত্তার বিষয়টি তদারকি করছেন। আগামী রবিবার মধ্যরাতে পাঁচ দিনব্যাপী উৎসবের সমাপ্তি হবে।
এদিকে লালন আখড়া-সংলগ্ন লালন মাজার শরিফ ও সেবাসদন কমিটির উদ্যোগে দিনব্যাপী লালন স্মরণোৎসব উদ্যাপিত হয়েছে গতকাল। লালন মাজার শরিফ ও সেবাসদন কমিটির প্রতিষ্ঠাতা ম মনিরুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক বনমালী ভৌমিক, বিশিষ্ট লালন-গবেষক অধ্যাপক ড. আবুল আহসান চৌধুরী, ফকির হাসান হাফিজ শাহ প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, বাউলসম্রাট ফকির লালন শাহর জীবন-কর্ম, মানবদর্শন, মরমি সংগীত, চিন্তা-চেতনা ও ধর্মদর্শন গবেষণার বিষয়ে পরিণত হয়েছে। লালনের প্রতি এক উদাসী টান ও আত্মার শান্তির জন্যই ভক্তরা বারবার ছুটে আসে এখানে।

ছেঁউড়িয়ায় অনুষ্ঠান চলবে আরও দুই দিন ভেঙ্গেছে সাধুর হাট, ফিরছে যে যার আপন ঘরে

এ.এইচ.এম.আরিফ,কুষ্টিয়া ॥ ঘোষনা অনুযায়ী বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের স্বরণোৎসবের ৫দিনের অনুষ্ঠানের আরো দুদিন চললেও সাধুদের হাট ভেঙ্গে গেছে গতকাল শুক্রবার। সাধুরা ফিরছে যে যার আপন ঘরে। গতকাল আখড়া ঘুরে দেখা গেছে, দুর-দূরান্ত থেকে আসা বাউলরা নিজ নিজ আস্তানা ছেড়ে বিছানাপত্র গুছিয়ে রওনা হয়েছে অনেকেই। তবে যাওয়ার আগে আঁখড়া বাড়ির পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। গুরুকে বারবার প্রনাম ও নানা রকম ভক্তি জানিয়ে বিদায় নেন শিষ্যরা। গুরু ভক্তি আর সিদ্ধ মন নিয়ে বিদায় নেয়ার সময় অনেক বাউল তাদের চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি। আবার দেখা হবে সাঁইজির উদাসী ডাকের টানে। গুরু ইসাহক শাহ জানান, সাঁইয়ের জীবদ্দশায় শুধূমাত্র তার ভক্ত আর শিষ্যদের নিয়ে মুলত আড়াই দিনের উৎসব করতেন। সে নিময় মেনেই বাউলরা ভাটাই আসে উজানে ফিরে যায়, যে যার আপন নিবাসে। প্রকৃত ভেকধারী বাউলরা সরকারি অনুষ্ঠানের ব্যাপারে খোঁজখবরও রাখেনা না। তাদেরকে মঞ্চে ডাকলেও তারা আসন ছেড়ে উঠেন না। গতকাল ভোরে সুর্য্য ওঠার আগেই অহিংস মানবতা প্রতিষ্ঠায় আপন মোকামে গুরুর চরণ ছুয়ে দিক্ষা নিয়ে ভক্তি নিবেদন করে শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছে অনেক বাউল। লালন আঁখড়ার আশে পাশে ও একাডেমীর নিচে যারা আসন গাড়ে তারা সাঁইকে ভক্তি আর আরাধনায় নিমগ্ন থাকে কখনো স্থান ত্যাগ করেনা। বিছানাপত্র হাতে নিয়ে কথা বলেন গাজীপুরের বাউল গুর ইসাহক শাহ। প্রায় একযুগ বাড়িতে ফেরেন না তিনি। সংসার ধর্ম টানে না তাকে। বাড়ির কোন খবর রাখেন না। সারা বছর  পথেই কেটে যায় এ ফকিরের। তবে মাঝে মধ্যে আসেন সাঁইজির ধামে। মনের তৃষ্ণা মেটাতে। পরিপূর্ণ হৃদয় নিয়ে ফিনের ভবের বাজারে। তবে অনেক বাউল, সাধু আঁখড়া ছাড়লেও অনেকে গুরুর বাড়িতে থেকে যাবেন আরও কদিন। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় আলোচনা অনুষ্ঠানে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর কামাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ আব্দুস শহীদ। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন খোকসা উপজেলা পরিদষদের চেয়ারম্যান সদর উদ্দিন খান বিশিষ্ট সমাজ সেবক হাজী রবিউল ইসলাম, কুষ্টিয়া জেলা আ’লীগের সহ-সভাপতি আক্কাস আলী মঞ্জু, কুষ্টিয়া জেলা আ’লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি খোন্দকার জুলফিকার আলী আরজু, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আঃ সাত্তার। প্রধান আলোচক হিসেবে লালনের অমর গানের মর্মকথা নিয়ে আলোচনা করেন কুষ্টিয়া সরকারী মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড.জমির উদ্দিন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক সুদিন লাহিড়ী। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন লালন একাডেমির সাবেক সাধারণ সম্পাদক তাইজাল আলী খান। প্রধান আলোচক তার বক্তব্যে বলেন, সমাজ-ইতিহাসের ধারায় বিচার করলে বলা যায়, গ্রামবাংলার মানবতাবাদী মুক্তবুদ্ধির আন্দোলনের প্রাণপুরুষ ছিলেন লালন ফকির। সামাজিক ভেদনীতি, শ্রেনী-বৈষম্য, বর্ণ, শোষণ, জাতপাতের কলহ, সামন্ত-নিগ্রহও সাম্প্রদায়িক বিরোধের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন উচ্চকন্ঠ। লালনের নাম আজ দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্বের প্রতিটি দেশে উচ্চারিত হয়। একজন গ্রাম্য নিরক্ষর সাধকের এ অর্জন ও প্রতিষ্ঠা স্বভাবতই বিস্ময় জাগায় মনে। মানুষের প্রতি মানুষের শোষন-বঞ্চনা-অবিচারের চির অবসান কামনা করে সমাজমনস্ক সাধক লালন শ্রেনীহীন শোষনমুক্ত এক মানবসমাজের স্বপ্ন দেখেছেন তিনি। আলোচনা শেষে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে দেশের খ্যাতি সম্পন্ন শিল্পী সহ লালন একাডেমির শিল্পীরা সারা রাত সঙ্গীক পরিবেশন করেন। অনুষ্ঠানটি সার্বিক পরিচালনা ও উপস্থাপনা করেন শুকদেব সাহা।

দাওয়াত নেই, পত্র নেই তবুও কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ার লালনধামে মানুষের উপচে পড়া ভীড়

এ.এইচ.এম.আরিফ,কুষ্টিয়া ॥ বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের স্বরণোৎসবকে লালনের বাড়িতে মানুষের ঢল নেমেছে। সব পথ যেন এসে মিশে গেছে মরা কালীর নদীর তীরে আখড়া বাড়িতে। শহর থেকে মাত্র ১০ মিনিটের রাস্তা ছেঁউড়িয়া। কিন্তু এখন সে রাস্তায় যেতে সময় লাগছে ১ ঘন্টার উপরে। সাঁইজির টানে এ ধামে বাউলেরা ছাড়াও সাধারণ দর্শনার্থীদের ভিড়ই বেশি। গতকাল বৃস্পতিবার বাউলের চারণভূমিতে আসা হাজার হাজার লালন-ভক্ত, সাধু-গুরু কর্তৃপক্ষের দেওয়া সকালের অধিবাসে পায়েশ ও মুড়ির বাল্যসেবা গ্রহণ করেন। দুপুরে তাঁরা মরা কালী গঙ্গায় গোসল সেরে ইলিশ মাছ-ভাত ও ত্রিব্যঞ্জন দিয়ে (তিন ধরনের সবজি দিয়ে তৈরি তরকারি) দুপুরের খাবার পুণ্যসেবা গ্রহণ করেন। পুণ্যসেবা গ্রহণ কে কেন্দ্র করে দুপুর ১টা, লালন একাডেমীর প্রধান ফটক তখন বন্ধ। ভিতরে লাইন দিয়ে কলা পাতা সামনে নিয়ে হাজার হাজার সাধু ফকিরের অপেক্ষা। একটু পরেই একযোগে শুরু হলো খাবার বিতরণ। তবে কোন তাড়াহুড়ো নেই। সবাই খাবার পাবার পর বিশেষ আওয়াজ দিয়ে জানিয়ে দেয়া হলো বিতরণ শেষ। এবার খাওয়া শুরু হলো একযোগে। ইলিশ মাছ,ভাত ও সবজি দিয়ে প্রায় ৫ হাজার বাউল,সাধু ফকির পূর্ণসেবা গ্রহণ করেন। এছাড়া দই মিষ্টি খাওয়ানো হয়। কোন দাওয়াত নেই, পত্র নেই, তবুও মানুষ ছুটে আসে দলে দলে, হাজারে হাজারে। কোন সে উদাসী ডাকে তা কেউ জানে না? মূল গেট থেকে ভিকরে ঢুকে অডিটোরিয়ামের নিচে বসে প্রবীণ বাউল নহির শাহ। বয়স প্রায় ৬৮ বছর। শিষ্যদের নিয়ে গানে মজেছিলেন। এখনো আটা স্বাস্থ্য। দেখে বোঝা যায় না বয়স। গান থামালে কথা হয় এ বাউলের সাথে। গান দিয়েই শুরু করেন কথা। খাচার ভিকর অচিন পাখি কবনে আসে যায়। এই দেশেতে এই সুখ হলো আবার কোথায় যায়না জানি । গানের মর্ম কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন বুঝে নিতে হবে। স্মরণোৎসবে প্রতিবছরের মতো এবারও সাধক লালনের আধ্যাত্মিক দর্শন লাভের আশায় দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ প্রাণের টানে ছুটে আসেন। একতারা, দোতারা, ঢোল ও বাঁশির সুরে মুখরিত হয়ে উঠেছে লালনভূমি ছেঁউড়িয়া। একই সাথে চলছে দীক্ষা পর্ব। নব্য শিষ্যরা গুরুদের সেবা করতে উদগ্রীব। যেন কোন কষ্ট না হয় সেদিকে তাদের অটুট লক্ষ্য। ঝিনাইদহ থেকে আসা নব্য বাউল ফকির করিম জানান, এ পথে আসা দু’মাস হয়েছে। এখনো কিছুই শিখতে পারিনি। গুরুর সাথেই থাকি দিনরাত। তার খেদমত করায় আমার কাছ। গুরু বলেছে সময় হলে গুরুবাক্য দেয়া হবে। বাউলসাধক ফকির লালন শাহের জীবন-কর্ম, জাতহীন মানবদর্শন, মরমি সংগীত ও চিন্তা-চেতনা এখন আর এই ছেঁউড়িয়ার পলি−তেই সীমাবদ্ধ নেই। দেশের সীমানা পেরিয়ে তা এখন ছড়িয়ে পড়েছে বিশে¡। তাঁর সংগীত ও ধর্ম-দর্শন গবেষণার বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছে।
লালন শাহ তার জীবদ্দশায় দোল পূর্ণিমায় আখড়াবাড়িতে ভক্ত-অনুসারীদের নিয়ে সারা রাত গান-বাজনা ও নানা তত্ত্ব কথা আলোচনা করতেন। সাঁইজির দেহ ত্যাগের পরও এ ধারা অব্যাহত রয়েছে। সারা আঁখড়া বাড়ি ও মাঠই এখন গানের মঞ্চ। ছোট ছোট বাউল পরিবারেই চলছে গান। ‘ধর চোর হাওয়ার ঘরে ফ্দঁ পেতে, বদ হাওয়া লেগেছে পাখির গায়, বাড়ির পাশে আরশী নগর, মানুষ ছাড়া ক্ষ্যাপা রে তুই কুল হারাবি, মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি, সত্য বল সুপথে চল, এলাহি আলামিন গো আলা বাদশা আলমপনা তুমি’ এ রকম অসংখ্য লালনসংগীতের সুরের মূর্ছনা রাতে লালন একাডেমির শিল্পী ও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা বাউলেরা পরিবেশন করেন। এ ছাড়া লালন মাজারের আশপাশে ও মরা কালী নদীর তীর ধরে বাউলেরা ছোট ছোট আস্তানা গেড়ে সাঁইজিকে স্মরণ করেছেন তাঁর অমর বানী পরিবেশনের মাধ্যমে। লালন উৎসবে অস্থায়ী দোকানগুলোয় উপচে পড়া ভিড়। খাদ্যসহ খেলনার দোকানগুলোয় ভিড় করতে দেখা গেছে দর্শনার্থীদের। প্রতিদিন সন্ধ্যায় মেলার মাঠের স্থায়ী মঞ্চে বসে আলোচনা সভা। এর পরপরই শুরু হয় লালন একাডেমির শিল্পীদের গান। উদ্বোধনী দিনে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক বনমালী ভৌমিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কুষ্টিয়া ৪-কুমারখালী-খোকসা আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য বেগম সুলতানা তরুণ। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ফজলুর রহামন, কুষ্টিয়া পৌরসভার মেয়র আনোয়ার আলী, কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুভাষ চন্দ্র সাহা, জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী, ওয়ালটনের নির্বাহী পরিচালক হুমায়ূন কবির, পঞ্চগড় প্রেসক্লাবের সভাপতি এ রহমান মুকুল, কুমারখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ, প্রধান আলোচক হিসেবে আলোচনা করবেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও ইস্পাত পত্রিকার সম্পাদক আলহাজ্ব ওয়ালিউল বারী চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্য রাখবেন কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মানিকহার রহমান ।

মঙ্গলবার, ১২ জুন, ২০১২

কুষ্টিয়ায় জবাই করে হত্যা প্রবণতা বৃদ্ধি! তিন মাসে ২২ জন খুন

আরিফ মেহমুদ ॥ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চরমপন্থী অধ্যুষিত রক্তাক্ত জনপদ কুষ্টিয়ায় হঠাৎ করে জবাই করে খুনের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আবারো সেই আগের মত ঘুম ভাঙ্গলেই খুনের ঘটনার সংবাদ ভেসে আসছে কানে। মাত্র তিন মাসে আধিপত্য বিস্তার, সামাজিক বিরোধসহ নানা কারণে প্রতিপক্ষের গুলিতে ও দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে ও জবাই করে খুন হয়েছেন মহিলাসহ ২২ জনেরও বেশি মানুষ। আহত হয়েছেন কয়েক শতাধিক নারী, পুরুষ, ও শিশু। এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশ বেশ কয়েকজনকে আটক করতে পারলেও অধিকাংশ মামলারই চুড়ান্ত রিপোর্ট আদালতে দাখিল করতে পারেনি। এলাকাবাসী ও নিহতদের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গত মার্চ ২০১২ থেকে চলতি জুন মাস পর্যন্ত কুষ্টিয়ার সদর, কুমারখালী, দৌলতপুর, মিরপুর, ভেড়ামারা ও খোকসা উপজেলার সাতটি থানা এলাকায় মহিলাসহ ২২জনেরও বেশি ব্যক্তি খুন হয়েছেন। এদের মধ্যে অপহরণের পর খুনের ঘটনাও রয়েছে একাধিক। তবে অধিকাংশ খুনের ঘটনা ঘটেছে সামাজিক, মাদক ব্যবসাকে কেন্দ্র করে ও পারিবারিক বিরোধের জের ধরে।
গত ১ জুন সন্ধ্যায় কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের বানিয়াপাড়ায় জমি সংক্রান্ত পারিবারিক বিরোধের জের ধরে মামাতো ভাইয়ের উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে খুন হয়েছেন কলেজ ছাত্র তুহিন (২৬)। সে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হাটশ হরিপুর ইউনিয়নের নতুন বোয়ালদাহ গ্রামের শহীদ মোল্লার ছেলে। গত ৯ জুন শনিবার দুপুরে কুষ্টিয়া শহরের ডিসি কোর্টের পাশে মাঠপাড়ার একটি বাসায় পূর্ব মজমপুরের মৃত সদর উদ্দিনের ছেলে ইব্রাহিম ওরফে কালুকে বটি ও চাকু দিয়ে জবাই করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই গত ১১ জুন সোমবার দিবাগত রাতে সদর উপজেলার জোতপাড়া-শৈলগাড়ি মাঠে আবু বক্কর সিদ্দিক (৩২) নামের এক কৃষককে জবাই করে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, গত রবিবার রাত দশটার দিকে জোতপাড়া দক্ষিনপাড়ার চায়ের দোকানে চা পান করার পর দু’জন লোক ওই এলাকার আব্দুল জলিলের ছেলে আবু বক্কর সিদ্দিককে কৌশলে ডেকে নিয়ে যায়। রাতে অনেক খোঁজাখুজি করেও তার সন্ধান পায়নি পরিবারের স্বজনরা। গত সোমবার ভোরে স্থানীয় কৃষকরা মাঠে কাজ করতে গেলে জোতপাড়া গোরস্থান মাঠের নির্জন এলাকায় তার লাশ দেখতে পায়। পরে পুলিশকে সংবাদ দিলে পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়। ২৮ মে রাতে জেলার খোকসা উপজেলা শহরে একটি পাট ক্রয়কেন্দ্রে ইছাহক আলী (৫৫) নামের এক শ্রমিককে গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। তিনি ফরিদপুরের বোয়ালিয়া থানার তেতুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা। খালিশপুর জুটমিলের কর্মচারী হিসেবে খোকসায় অবস্থানকালে তাকে হত্যা করা হয়। এদিকে গত ২২ মে কুষ্টিয়া কুমারখালীর পৃথক স্থানে মহিলাসহ দু’জন খুনের শিকার হন। ওইদিন সন্ধ্যায় উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের গবরা গ্রামে পূর্ব শত্র“তার জের ধরে নাজমা (৩৫) নামের এক মহিলা নিহত ও অন্তত ২০জন আহত হন। একই দিনে কুমারখালীর কয়া ইউনিয়নের রায়ডাঙ্গা গ্রামের গড়াই নদীর চর থেকে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ৯ মে রাতে কুষ্টয়া শহরের গোসালা এলাকায় শাহিদা খাতুন (৪৫) নামের এক মহিলাকে গলায় ফাঁস দিয়ে ও মাথায় আঘাত করে খুন করে সন্ত্রাসীরা। ৮ মে রাতে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার উজানগ্রাম ইউনিয়নের দুর্বাচারা গ্রামের শেখপাড়ায় এক রিক্সা-ভ্যান চালককে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে খুন করে সন্ত্রাসীরা। ১মে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের খলিষাকুন্ডির পাঁচপীরতলা রাস্তার পাশ থেকে গুলিবিদ্ধ যুবক কারিবুলের (৪০) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতের পরিবারের দাবি তাকে অপহরণের পর পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। ১৯ এপ্রিল কুষ্টিয়া মিরপুর উপজেলার মালিহাদ ইউনিয়নের ঝুটিয়াডাঙ্গা গ্রামের মাঠ থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত চরমপন্থী সংগঠন পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টির (লাল পতাকা) আঞ্চলিক নেতা মোতালেব হোসেনের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের চরমপন্থীরা তাকে হত্যা করতে পারে বলে পুলিশের আশংকা। ১৩ এপ্রিল তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কুষ্টিয়া কুমারখালীর পান্টি গ্রামের দু’দলের সংঘর্ষে মঞ্জু নামের এক যুবক নিহত ও অন্তত ২০জন আহত হন। ২১মার্চ রাতে কুষ্টিয়ার মিরপুরের নওপাড়া মাঠে জামাল ডাকাতকে (৫২) গুলি করে হত্যা করা হয়। পরদিন সকালে লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ১৫ মার্চ রাতে কুষ্টিয়া শহরের আমলাপাড়াস্থ নিজ বাড়িতে স্কুল ছাত্র সানিম (১৬) সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে নিহত হন। ১০ মার্চ কুষ্টিয়া শহরের ট্রিপল ভেনচার ডট কম লিমিটেড’র ব্রাঞ্চ অফিসের বাথরুম থেকে স্বপন (২৩) নামের এক যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এছাড়াও কুষ্টিয়া শহরে মহিলাসহ ভেড়ামারা ও মিরপুরে একাধিক খুনের ঘটনা ঘটেছে। এসব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত কতিপয় সন্ত্রাসীকে পুলিশ আটক করতে পারলেও এখনও পর্যন্ত অধিকাংশ মামলার চার্জশিট দিতে পারেনি পুলিশ। অন্যদিকে এ তিনমাসে জেলার বিভিন্ন এলাকায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে চার শতাধিক নারী-পুরুষ আহত হন। কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ জানান, সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয়ের কারণে এসব হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এর পাশাপাশি রয়েছে স্বার্থজনিত বিরোধ। তবে কুষ্টিয়ার চরমপন্থীদের দৌরাত্ম আগের তুলনায় অনেক কমেছে বলে দাবি করেন তিনি। জেলার এসব সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের মোটিভ উদঘাটনের পাশাপাশি খুনিদের অধিকাংশ সদস্যকেই পুলিশ ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে। জেলার আইনশৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আগামীতে অপরাধীদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত থাকবে। অপরাধী সে যতই শক্তিশালী হোক না কেন তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।

কুষ্টিয়ায় গৃহপরিচারিকা নির্যাতনের শিকার

আরিফ মেহমুদ ॥ কুষ্টিয়ায় বন কর্মকর্তার বাসার কাজের মেয়ে নির্যাতনের শিকার হয়েছে। প্রতিদিন নির্যাতনের বর্ননাগোপন রাখলেও আজ মঙ্গলবার সকালে নির্যাতন সইতে না পেরে বাসা থেকে বের হয়ে রাস্তায় চলে আসে আফরোজা খাতুন। আফরোজার সারা শরীরে আঘাতের চিহৃ রয়েছে। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রাঙ্গামাটি জেলার মাইনিমু বাজার এলাকার রতন আলীর মেয়ে আফরোজা খাতুনকে ৪ বছর আগে গৃহপরিচারিকার কাজ নেয় বন কর্মকর্তা নিশাদের বাসায়। এ বাসায় আসার পর দিন থেকেই তার উপর চালানো হয় নির্যাতন। কারনে অকারনে বন কর্মকর্তা নিশাদের স্ত্রী মুনমুন প্রতিদিন আফরোজার উপর নির্যাতন চালিয়ে আসছে বলে পুলিশ জানায়। নির্যাতিত গৃহপরিচারিকা আফরোজা জানান, এ বাসায় কাজ নেয়ার পর ঠিকমত খেতে দেয় না। প্রতিদিন ম্যাডাম মারধর করেন। হাতের কাছে যা পায় তা দিয়ে হামলে পড়ে আমার উপর। ঝাটা, লাঠি, খুনতি সব ব্যবহার করেন তিনি। ঘরের ভিতর আটকে মুখে বেধে অত্যাচার চালাত বলে সে পুলিশকে জানায়। আজ ম্যাডামের মেয়ে একটি ফুলদানি ভাঙ্গলে সে আমাকে পেটাতে থাকে। মার সহ্য না করতে পেরে ঘর থেকে বাইরে বের হয়ে যায়। পুলিশ আহত অবস্থায় আফরোজাকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে এসে ভর্তি করে। কুষ্টিয়া বিভাগীয় বন কর্মকর্তা হোসাইন মো: নিশাদের বাসায় গৃহপরিচারিকার কাজ করছে গত ৪ বছর ধরে। একটু ভাল থাকার আসায় নিশাদের বাসায় আসলেও গত ৪ বছরে তার কপালে জুটেছে শুধু অত্যাচার নির্যাতন। ঠিক মত খেতে না পেয়ে শুকিয়ে কঙ্কাল হয়ে গেছে শরীর। আফরোজা আরো জানান, নিশাদ স্যার আমার পক্ষ নিয়ে কিছু বললে ম্যাডাম তাকেও মারধর করত। তাই ভয়ে তিনি কিছু বলতে সাহস পেতেন না। বন কর্মকর্তা নিশাদের নিকট ঘটনা জানতে চাইলে কোন কথা না বলে নিশ্চুপ থাকেন। আফরোজা এ সময় সাংবাদিকদের নিকট অনুরোধ করে বলে, ভাই আমি আর এ বাড়িতে কাজ করব না। আপনারা আমাকে বাড়ি পৌঁছে দেন। পুলিশ আফরোজাকে উদ্ধার করলেও নিযাৃতনকারী মুনমুন বেগমকে আটক না করেই চলে আসে। মুনমুন বেগমের সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি কোন কথা বলতে রাজী হননি। কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুভাষ চন্দ্র সাহা জানান, এ ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শুক্রবার, ৮ জুন, ২০১২

কুষ্টিয়ায় প্রতিহিংসার শিকার গাছ!

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি ॥ কুষ্টিয়ায় প্রতিহিংসার শিকার হয়েছে বাগান ভর্তি সারিসারি গাছ। তবে কোন গাছই আর সোজা নেই। প্রতিপক্ষের আঘাতে সবুজ গাছগুলো নুয়ে পড়েছে। প্রতিপক্ষের উপর প্রতিশোধ নিতে রাতের আধাঁরে এক দল সন্ত্রাসী বাগানভর্তি মেহগনি গাছ কেটে দিয়েছে। গতবৃহস্পতিবার ভোরে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ইবি থানার গোপালপুর গ্রামে গাছ কাটার এই ঘটনাটি ঘটেছে। এতে সন্ত্রাসীরা প্রায় ১ হাজার ৪০০ গাছ কেটে দিয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানিয়েছে, আব্দালপুর ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের মৃত আলফাজ উদ্দিনের ছেলে রেফাজ উদ্দিনের সাড়ে ৪ বিঘা জমির ১২ বছর আগে মেহগনির গাছ লাগায়। তার লাগানো ১ হাজার ৪০০ মেহগনি গাছ রাতের আধারে কেটে দিয়েছে প্রতিপক্ষের লোকজন।
গাছের মালিক রেফাজ উদ্দিন জানান, তার প্রতিপক্ষ একই গ্রামের আইনাল মোল¬ার ছেলে হালিম ও মন্টুর নেতৃত্বে একই গ্রামের খবিরের ছেলে সাইফুল, ইয়াছিনের ছেলে আবু সাত্তার, মৃত কুদ্দুসের ছেলে রাশিদুল সিদ্দিক, মনজের আলীর ছেলে টুটুল, আবুল বিশ্বাসের ছেলে বকুল, জমিরের ছেলে শিপন, সবান মন্ডলের ছেলে রিয়াজুলসহ প্রায় ৬০/৭০ জনের একটি দল এ কাজ করেছে।
এ ঘটনার পর র‌্যাব ও পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ইবি থানার অফিসার ইনচার্জ মনির উদ্দিনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, গাছ কাটা তেমন কোন বড় ঘটনা নয়। এ নিয়ে মাতামাতির কিছূ নেই। এ ঘটনায় মামলা হয় না বলে জানান তিনি। তবে কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ জানান, গাছ কাটা অন্যায়। আর এ কাজে যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় এনে বিচার করা হবে।

বুধবার, ৬ জুন, ২০১২

কুষ্টিয়ায় কাল বৈশাখী ঝড়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি

আরিফ মেহমুদ ॥ কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে কাল বৈশাখী ঝড়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ ৩’শতাধিক ঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। গত রাতে উপজেলার মরিচা ইউপি’র হাটখোলা পাড়া, কোলদিয়াড়, বালিরদিয়াড়, ভুরকা পাড়া, নতুনচর, টলটলিপাড়া, বাঁধের বাজারসহ বিভিন্ন গ্রামের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া আকষ্মিক কাল বৈশাখী ঝড়ে কাঁচা ও কাঁচা-পাকা ঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত হয়। ঝড়ের কবলে পড়ে ভুরকা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ভুরকাপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভবন বিধ্বস্তসহ উড়ে গেছে ভবনের টিন। মরিচা ইউপি চেয়ারম্যান মাহাবুল হক জানান, সন্ধ্যা রাতে হঠাৎ করেই কাল বৈশাখী হানা দিলে ৩’শতাধিক পরিবারের বাড়ি ঘর বিধ্বস্ত হয়। ঘরের টিনের চালা উড়ে যায়, গাছের ডাল পালা ভেংগে ও উপড়ে পড়ে। বৈদ্যুতিক খুটি ভেংগে তার ছিড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ওই এলাকার পানচাষীদের প্রায় ৭ হাজার পিলে পানক্ষেত ঝড়ে ভূমিষ্মাৎ হয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়। সেই সাথে আম ও কাঠালসহ বিভিন্ন প্রকার ফল ও ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়। এদিকে ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবাররা খোলা আকাশের নীচে অবস্থানের খবর পেয়ে দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অরুন কুমার মন্ডল আজ দুপুরে ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ ওই সকল এলকা পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্থদের দ্রুত সরকারী ত্রান সরবরাহের আশ্বাস দেন।

কুষ্টিয়ায় উপজেলা চেয়ারম্যান শাজাহান আলী গ্রেফতার

আরিফ মেহমুদ ॥ কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলা পরিষদ’র চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা শাজাহান আলীকে পুলিশ আটক করেছে। আজ বুধবার রাত আড়াইটার দিকে মোকারিমপুর ইউপির ফকিরাবাদ গ্রামের নিজ বাসভবন থেকে তাকে আটক করা হয়। সরকারী কাজে বাধা, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে লাঞ্চিত এবং জোর পূর্বক পল¬ী বিদ্যুতের কিছু কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে নেওয়ার অপরাধে তাকে আটক করা হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে। এসময় জব্দ করা হয় তার ব্যাবহৃত লাইসেন্সকৃত একটি শর্টগান সহ ১৯ রাউন্ড তাজাগুলি। এরপর তাকে কুষ্টিয়া সদর থানার হেফাজতে নেওয়া হয়। শাজাহান আলী ভেড়ামারা উপজেলা পরিষদ’র নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান। তিনি ২০০৯ সালের জুন মাস থেকে ভেড়ামারা উপজেলা পরিষদ’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তিনি মোকারিমপুর ইউপির চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম শ্যামলের ছোট ভাই।
জানা গেছে, ভেড়ামারা উপজেলা পরিষদ’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শাজাহান আলী গত ২ রা জুন কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার তারাগুনিয়াস্থ পল¬ী বিদ্যুৎ সমিতির কার্য্যালয়ে যান। অভিযোগ রয়েছে, এ সময় পল¬ী বিদ্যুতের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু ওমাম মোহাম্মদ মাহমদুল হক কে লাঞ্চিত করে জোর পূর্বক পল¬ী বিদ্যুতের কিছু সংযোগ লাইনের আবেদনপত্র এবং পল¬ী বিদ্যুৎের গুরুত্বপূর্ন কিছু কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে ওই কর্মকর্তা উপজেলা চেয়ারম্যানের কাগজপত্রে স্বাক্ষর করেন। এ ঘটনার পর থেকেই তোলপাড় শুরু হয় পল¬ী বিদ্যুৎ বিভাগে। এরপর গত ৫ জুন পল¬ী বিদ্যুৎের দায়িত্বপ্রাপ্ত এজিএম আব্দুল বারী বাদী হয়ে দৌলতপুর থানায় মামলা করেন। এরপ্রেক্ষিতে আজ বুধবার রাত আড়াইটার দিকে ভেড়ামারা থানার ওসি রিয়াজুল ইসলাম এবং দৌলতপুর থানার ওসি লুৎফর রহমান সঙ্গীয় র্র্ফোস সহ অভিযান চালিয়ে ভেড়ামারা উপজেলা পরিষদ’র চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা শাজাহান আলীকে আটক করে।
আটককৃত চেয়ারম্যান শাজাহান আলী’র ছোট ভাই ঢাকা জজ কোর্টের এ্যাড.বুলবুল আবু সাঈদ শামীম জানিয়েছেন, রাত আড়াইটার দিকে ভেড়ামারা থানার অফিসার ইনচার্জ সঙ্গীয় র্ফোস সহ ফকিরাবাদস্থ নিজ বাড়ি থেকে চেয়ারম্যানকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। কোন অভিযোগে বা কোন মামলায় উপজেলা চেয়ারম্যান শাজাহান কে আটক করা হচ্ছে এসময় ওসি বলতে পারেন নি। এ ব্যাপারে ভেড়ামারা থানার অফিসার ইনচার্জ রিয়াজুল ইসলাম জানিয়েছেন, আমি এবং ভেড়ামারা থানা পুলিশ অভিযানে ছিলাম কিন্তু তাকে গ্রেফতার করেছে দৌলতপুর থানা পুলিশ’র অফিসার ইনচার্জ লুৎফর রহমান। ভেড়ামারা থানা পুলিশ তাদের কে সহযোগিতা করেছে মাত্র। কি অভিযোগে চেয়ারম্যানকে গ্রেফতার করা হয়েছে তা তিনি জানেন না বলে জানিয়েছেন।
দৌলতপুর থানার অফিসার ইনচার্জ লুৎফর রহমান জানিয়েছেন, দৌলতপুর উপজেলার তারাগুনিয়াস্থ পল¬ী বিদ্যুৎ সমিতির কার্য্যালয়ে এসে তান্ডব চালানোর অভিযোগে অভিযুক্ত ছিল ভেড়ামারা উপজেলা পরিষদ’র চেয়ারম্যান শাজাহান আলী। এ বিষয়ে পল¬ী বিদ্যুৎের এজিএম আব্দুল বারী সরকারী কাজে বাধা, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে লাঞ্চিত এবং জোর পূর্বক স্বাক্ষর করিয়ে নেওয়ার অভিযোগ এনে ১৪৩/১৮৯/৩৫২/৩৮৪/৫০৬ দঃবিঃ ধারায় একটি মামলাও করেছে। যার নং ০৭/ তাং ০৫/০৬/২০১২ইং। এরপরই অভিযুক্ত চেয়ারম্যান কে আটক করে কুষ্টিয়া আদালতে প্রেরন করা হয়েছে।

কুষ্টিয়া সদরে চাল সংগ্রহে তোড়জোড় থাকলেও উপজেলা পর্যায়ে চুক্তিবদ্ধ হয়নি মিল মালিকরা ॥ ধান-চাল সংগ্রহ হুমকিতে

আরিফ মেহমুদ ॥ কুষ্টিয়া সদরে সরকারিভাবে ধান ও চাল সংগ্রহ অভিযানে তোড়জোড় থাকলেও উপজেলা পর্যায়ে চুক্তিবদ্ধ হয়নি মিল মালিকরা। ধান ও চাল সংগ্রহ অভিযান হুমকির মুখে। গত ৩১ মে বৃহস্পতিবার থেকে কুষ্টিয়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে ধান ও চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হলেও এ পর্যন্ত আশানুরূপ সংগ্রহ শুরু হয়নি। তবে শীঘ্রই অভিযান চালুর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সরকারি দামের চেয়ে বাজারমূল্য বেশি হওয়া সত্বেও সরকারি খাদ্য গুদামে ধান ও চাল বিক্রির জন্য কুষ্টিয়া সদরের মিলারদের মধ্যে আগ্রহ দেখা গেলেও এক্ষেত্রে গুদামে জায়গা সংকটে পিছিয়ে রয়েছে উপজেলা খাদ্য অফিসগুলো। বাজারমূল্যের ব্যবধানে চুক্তিবদ্ধ না হওয়ায় এ দশা হয়েছে। এদিকে প্রান্তিক কৃষকরাও ধান চাল বিক্রি করছে না গুদামগুলোতে। ফলে প্রায় ১ সপ্তাহে মাত্র ২শ মেট্রিক টন ধান নয় শুধুমাত্র চাল সংগ্রহ হয়েছে। আবার কুষ্টিয়ায় সরকারিভাবে চাল ক্রয়ের প্রথম দিনেই খাদ্য গুদামে নিন্মমানের চাল সরবরাহের অভিযোগ উঠায় খাদ্য বিভাগ পচা ও দুর্গন্ধযুক্ত চাল সরবরাহ যাতে না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে চাল সংগ্রহ করছে। শেষ পর্যন্ত খাদ্য বিভাগের এই দৃঢ় মনোবল বজায় রাখতে পারবে কি না সে বিষয় নিয়েও সন্দেহের প্রশ্ন তুলেছেন অভিজ্ঞ মহল। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা সুজা আলম জানান, চলতি বোরো মৌসুমে সর্বাধিক ১৪ শতকরা ময়েশ্চার বিশিষ্ট চাল সংগ্রহ করা হবে। জেলার ছয়টি উপজেলার ২৯টি খাদ্য গুদামের জন্য সরকারিভাবে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ১৪৭ মেট্রিক টন ও চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৭ হাজার ৫২৭ মেট্রিক টন। প্রতি কেজি ধান কৃষকদের কাছ থেকে ক্রয় করা হবে ১৮ টাকায় ও প্রতি কেজি চাল ক্রয় করা হবে ২৮ টাকায়। এরমধ্যে কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় ১২ হাজার মেট্রিক টন, মিরপুর উপজেলায় ২হাজার ৫৬৩মেট্রিক টন, কুমারখালী উপজেলায় ১হাজার ১৭১ মেট্রিক টন, ভেড়ামারা উপজেলায় ৫৯০ মেট্রিক টন, দৌলতপুর উপজেলায় ৫৫৬ মেট্রিক টন ও খোকসা উপজেলায় মাত্র ৫১৬ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করা হবে। ধানের বিষয়ে এখনো কৃষক কিংবা ব্যবসায়ীরা সরকারী দরে বিক্রি করার আগ্রহ তেমন একটা দেখায়নি। ফলে কোন উপজেলায় কতটুকু ধান ক্রয় করা হবে সেটি নির্ধারণ করা হয়নি। এদিকে ২৯টি খাদ্য গুদামের ধারন ক্ষমতা রয়েছে ১৫ হাজার মেট্রিক টন। এসবখাদ্য গুদামে  ধান-চাল রাখা যাবে সর্বচ্চ ১৯ হাজার মেট্রিক টন। বর্তমানে এসব গুদামে ১২ হাজার মেট্রিক টন চাল ও গম মজুদ রয়েছে। সর্বচ্চ ৮ মেট্রিক টন ধান-চাল রাখার জায়গায় ১৭ হাজার ৫২৭ মেট্রিক টন চাল এবং ১ হাজার ১৪৭ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই অতিরিক্ত ধান-চাল রাখার জায়গা সংকুলান হবে কিভাবে জানতে চাইলে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা সুজা আলম জানান,ভবিষ্যৎ খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য জেলায় আরো খাদ্য গুদাম বা গোডাউনের প্রয়োজন। তিনি আরও জানান, চলতি বোরো মৌসুমে কৃষকরা সরাসরি নিজ নিজ এলাকার খাদ্য গুদামগুলোতে ধান ও চাল বিক্রয় করতে পারবেন। ধান ও চাল সংগ্রহের সময় কৃষকরা যাতে কোন ঝামেলায় না পড়ে সে বিষয়ে কড়া নজর রাখা হচ্ছে। জেলার ৬টি উপজেলায় ৩১ মে থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ধান ও চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে। অভিযান শেষ হবে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর। এই কর্মসূচী বাবস্তবায়নে গত ২৮ মে কৃষক ও মিল মালিকরা সরকারি খাদ্য গুদামে তাদের উৎপাদিত ধান কিংবা চাল বিক্রির জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। এদিকে বাজারে ধান-চালের দাম কম হওয়ায় কৃষক পড়েছেন মহাবিপাকে। তারা ধান বিক্রি করে তাদের উৎপাদন খরচ তুলতে পারছেন না। অতি প্রয়োজনীয় ঋণের টাকা পরিশোধ করা ছাড়া কৃষকরা ধান বিক্রি করছেন না। উৎপাদন খরচের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট খরচ তুলতে প্রয়োজনমতো ধান বিক্রি করে বাকিটা দাম বাড়ার আশায় রেখে দিচ্ছেন।

মঙ্গলবার, ৫ জুন, ২০১২

কুষ্টিয়ার জেলা মৎস্য অফিসে পুকুরের হিসেব নেই মৎস্যচাষীদের নামে পুকুরগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে সমাজপতিরা

আরিফ মেহমুদ ॥ মাছ চাষের উপযোগী কতটি পুকুর, হাওর-বাঁওড় ও বিলে কিংবা জলাশয়ের কোন হিসেব নেই কুষ্টিয়ার জেলা মৎস্য অফিসে। সরকারি পুকুরগুলোতে মাছ চাষে মৎস্যচাষীদের নামে একাধিক সংগঠন গড়ে উঠলেও এর পেছনে রয়েছে প্রভাবশালীদের একক নিয়ন্ত্রণ। বছরের পর বছর মাছ চাষ করলেও পুকুরগুলোর স্বাভাবিক গভীরতা বজায় রাখতে ওই সকল প্রভাবশালীমহল খননের ব্যবস্থা করেনি দীর্ঘ দিন ধরে। মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর জাতীয় পুকুর ব্যবস্থাপনা নীতিমালা তৈরির উদ্যোগ নিলেও আজোবধী একটি খসড়াও দাঁড় করাতে পারেনি। এদিকে নিজস্ব মালিকানায় রেখে সরকারি পুকুরগুলোতে মাছ চাষ করে দেশে আমিষের যোগান দিতে চরমভাবে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে মৎস্য অফিসগুলো। সরকারী নিয়ন্ত্রণাধীন কুষ্টিয়া সহ দেশে সরকারি পুকুর ব্যবস্থাপনায় নির্দিষ্ট কোন নীতিমালা বিগত ৪০ বছরেও তৈরি করা হয়নি। ভূমি স্থানীয় সরকার ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের টানা-টানিতে সরকারী জলমহল ও পুকুরগুলোর অবস্থা মাছ চাষে অনুপযোগী হলেও মাথা ব্যাথা নেই কারোর। মাছ চাষ করছে অন্যরা অথচ পুকুরগুলোর স্বাভাবিক গভীরতা বজায় রাখতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে বরাদ্দ নিয়ে তা খনন কাজ করা হচ্ছে। এসব পুকুর খননে কিংবা লিজ প্রদানে মৎস্যচাষী অথবা সুফলভোগী পুকুর পাইয়ে দিতে জেলা মৎস্য কর্মকর্তার মোটা অংকের টাকা উৎকোচ নেয়ার অভিযোগ এখন ওপেন সিক্রেট। গতকাল মঙ্গলবার জেলা মৎস্য অফিসে লিজ প্রদান ও পুকুরের সংখ্যা এসংক্রান্ত খোঁজ-খবর নিতে গেলে কয়েকজন ভুক্তভোগী প্রকৃত সুফলভোগী মৎস্যচাষী এমন অভিযোগ করলেন। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এমদাদ হোসেনের নিকট জেলায় মাছ চাষের উপযোগী কতটি পুকুর, হাওর-বাঁওড় ও বিলে কিংবা জলাশয়ের সংখ্যা কত, লিজ প্রদানে অনিয়ম ও উৎকোচ নেয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন লিজ প্রদানে কোন অনিয়ম ও টাকা উৎকোচ নেয়ার অভিযোগ মিথ্যা। পুকুর কিংবা জলাশয় নিন্তান্ত্রিকভাবে লিজ প্রদান করেন জেলা প্রশাসক। আমরা শুধুমাত্র ওই পুকুর কিংবা জলাশয়ের আশ-পাশের সুফলভোগী মৎস্যচাষীদের তালিকা প্রদান করি। জেলার ৬ উপজেলার সরকারী লিজ প্রদানকারী পুকুর, হাওর, বাওর কিংবা জলাশয় ৬/৭টি। কালী গঙ্গা বাদল বাসা বাওর, কালী নদী, তালবাড়িয়া বিল, মুচিদহ বিল, মিরপুরের ঝুটিয়াডঙ্গা বিল।এর মধ্যে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে কুমারখালীর জগন্নাথপুর কোল মৎস্য চাষীদের নিকট থেকে নিয়ে নেয়া হয়েছে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তার দেয়া হিসেব বাস্তবে কোন মিল নেই। কুষ্টিয়া সদর উপজেলার চাপাইগাছী বিল, নান্দীয়া বিল, সাইবাড়ীয়া বিল, দৌলতপুরের বিল বোয়ালিয়ার বড়গাংদিয়া বিল। এসব বিল এক একটি প্রকল্পের আওতায় দীর্ঘ মেয়াদী ও সল্প মেয়াদী লিজ প্রদান করা হয়। বাউল সম্র্ট ফকির লালন শাহের স্মৃতিধন্য কালী গঙ্গা বাদল বাসা বাওর জলমহাল আইন উপেক্ষা করে অপেশাজীবী মৎস্য চাষীদের মাঝে লিজ দিয়েছেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এমদাদ হোসেন। যারা লিজ নেয়ার পর পরই বহমান কালী গঙ্গা বাদল বাসা বাওরের মাঝ খানে বাঁধ দিয়ে জলধারার গতি রোধ করেছেন। এই বাঁধ তুলে দিতে ইতোমধ্যে এলাকাবাসী সোচ্চার হয়ে উঠেছেন। জেলা মৎস্য অফিস থেকে মাছ চাষীদের আগ্রহী করে তুলতে মাছ চাষীদের প্রযুক্তিগত আধুনিক চাষাবাদ সম্পর্কে প্রশিক্ষণ সহ আর্থিক সহযোগিতা করা হয়ে থাকে। কালী নদীতে মাছ চাষে উৎসাহ দিতে মাছ চাষীদের মাঝে জেলা মৎস্য অফিস ৩ লাখ টাকা ঋণ প্রদান করেন। কিন্তু ঋণ আদায় সন্তোষজনক নয়। সংশ্লিষ্ট সুত্র জানিয়েছে, নদী, পাহাড়ের মালিক ভূমি মন্ত্রণালয়। কিন্তু সবকিছু এককভাবে ভূমি মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে কাজ ভাগ করে দেয়া আছে। বণ্টন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে পুকুর ও হাওর-বাঁওড়ে মাছ চাষ দেখভাল করবে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এটা ভূমি মন্ত্রণালয়ের কাজ নয়। দেড় বছর ধরে সরকারি পুকুরের মালিকানা ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে দুই মন্ত্রণালয়ে ৪টি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে অনেক বার। কিন্তু  একাধিক বৈঠক করেও নির্দিষ্ট কোন সমাধানে পৌঁছতে পারেনি দুই মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকরা।
এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, জেলায় মোট পুকুরের সংখ্যা ১৬ হাজার ৫৪৩ টি। এর মধ্যে বর্তমানে চাষকৃত পুকুরের সংখ্যা ৯ হাজার ৮০২ টি, চাষ উপযোগী পুকুরের সংখ্যা ৩ হাজার ১৯২টি, অচাষকৃত পুকুরের সংখ্যা ৩ হাজার ৫৪৯টি। জেলা সরকারী মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারের সংখ্যা ৪টি হলেও বেসরকারী মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারের সংখ্যা ৪৭টি।  এসব পুকুরে মাছ চাষও হচ্ছে। মৎস্যজীবী সমিতির নামে এগুলোর আয় ভোগ করছেন সমাজের প্রভাবশালীরা। চাষ উপযোগী পুকুরের সংখ্যা ৩ হাজার ১৯২টি, অচাষকৃত পুকুরের সংখ্যা ৩ হাজার ৫৪৯টি পুকুর জেলা মৎস্য অধিদপ্তর নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় নিয়ে পুকুরগুলো খনন করে মাছ চাষ ও পুকুর পাড়ে গাছ চাষ করে রক্ষণাবেক্ষণ করা হলে হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় দাঁড়াবে বলে তারা মনে করছেন। অথচ সুষ্ঠু নীতিমালা, উদ্যোগের অভাব, আইনের ফাঁকফোকর ও জেলা মৎস্য অফিসের সহায়তায় একশ্রেণীর সমাজপতি পুকুরগুলোতে মাছ চাষ করে এরই মধ্যে কোটিপতি বনে গেছেন। এই সরকারি পুকুরগুলোর ব্যবস্থাপনায় নির্দিষ্ট কোন নীতিমালা গত ৪০ বছরেও তৈরি করা যায়নি। গত আড়াই বছরে একাধিক বৈঠক করেও তার কোন খসড়া প্রস্তুত করা সম্ভব হয়নি। এতে কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছার যথেষ্ট অভাব রয়েছে।


এস.এম.ই.বিষয়ক মতবিনিময় সভায় সুকোমল সিংহ চৌধুরী ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাত ছাড়া দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়

আরিফ মেহমুদ ॥ বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের মহাব্যবস্থাপক বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ সুকোমল সিংহ চৌধুরী বলেছেন, দেশের সার্বিক উন্নয়নের কাজে বেশি বেশি করে নারী উদ্যোক্তাদের অংশ গ্রহন নিশ্চিত করতে হবে। উদ্যোক্তাদের অভাবে ও অনাগ্রহ শিল্পের বিকাশ না ঘটে ব্যাংকে অলস টাকা পড়ে থাকলে দেশ এগিয়ে যাবে কিভাবে। এজন্য দেশের প্রতিটি ব্যাংকের প্রধান কাজই হবে শিল্প উদ্যোক্তাদের খুজে বের করে তাদের বিনিয়োগে আগ্রহী করে তোলা। যত দ্রুত সাধারণ মানুষের কাছে আর্থিক সেবা পৌছে দেয়া যাবে তত দ্রুত দেশের সার্বিক অবস্থার পরিবর্তন হবে। মনে রাখতে হবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের উন্নয়ন ছাড়া দেশের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। দিন বদলের দিচ্ছে ডাক দেশের উন্নয়নে নারী-পুরুষ মেলাও হাত। নারী উদ্যোক্তাদের শিল্পের বিকাশ ঘটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক এস.এম.ই.সুবিধা স্কিম চালু করেছে। নারী উদ্যোক্তারা ব্যাংকগুলোর কাছে আর্থিক সুবিধা বঞ্চিত। এ জন্য তাদের ভাগ্যান্নয়নে এস.এম.ই.স্কিম পদ্ধতি বিরল দৃষ্টান্ত। জনকল্যাণমুখি কাজে ব্যাংকগুলোকে সব সময় সহায়তার হাত বাড়িয়ে উদ্যোক্তাদের পাশে থাকতে হবে। গতকাল সোমবার বিকেলে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসকরে সভাকক্ষে কুষ্টিয়া জেলাস্থ বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী ব্যাংক সমুহ এবং চেম্বার অব কমার্সের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে এস.এম.ই.বিষয়ক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠান শুরুর আগে প্রধান অতিথিকে ফুলেল শুভেচ্ছা দিয়ে বরণ করে নেন জেলার বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী ব্যাংকের প্রতিনিধিগণ। কুষ্টিয়ার চালচিত্র নিয়ে নির্মিত কুষ্টিয়া ডকুমেন্টারী প্রদর্শন করে প্রধান অতিথিকে দেখানো হয়। কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক (যুগ্মসচিব) বনমালী ভৌমিকের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ড.মল্লিক আনোয়ার হোসেন, সোনালী ব্যাংক কুষ্টিয়া অঞ্চলের ডিজিএম স্বপন কুমার সাহা। উম্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন কুষ্টিয়ার চেম্বার অব কমার্সের সহ-সভাপতি এসএম কাদেরী শাকিল, অগ্রণী ব্যাংকের ডিজিএম অহিদুজ্জামান, জনতা ব্যাংকের ডিজিএম আব্দুল জব্বার, এবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপক, ইসলামী ব্যাংকের এসভিপি আব্দুস সালাম, সাংবাদিক রাশেদুল ইসলাম বিপ্লব, নারী উদ্যোক্তা দিনা লায়লা ও সৈয়দা হাবিবা প্রমুখ। প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে আরো বলেন, দেশের আর্থিক সুবিধা বঞ্চিত মানুষের কল্যাণে যে ব্যাংক যত কাজ করবে সে ব্যাংক তত উন্নতি করবে। দেশের প্রতিটি ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে যুক্ত রয়েছে। এস.এম.ই সম্পর্কে যারা জানতে আগ্রহী তাদের সার্বিক সহযোগিতা করা হবে। ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী তাদের কাজের পরিধি বাড়াতে হবে। মনে রাখতে হবে দেশের উন্নয়ণে এক একটি ব্যাংক কর্মকর্তা এক একটি সুনিয়ন্ত্রীত সংগঠক। সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক (যুগ্ম সচিব) বনমালী ভৌমিক বলেন ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করতে এবং দেশকে এগিয়ে নিতে হলে এস.এম.ই পদ্ধতিকে সর্বস্তরে চালু করতে হবে। যৌথ উদ্যোগ ছাড়া এস.এম.ই পদ্ধতিকে এগিয়ে নেয়া সম্ভব নয়। দেশের মানুষের ভাগ্যান্নয়নে ব্যাংকগুলোকে সহজ শর্তে কাজ করতে হবে। প্রতিটি ব্যাংকের উচিৎ তৃণমুল পর্যায়ে ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের শিল্প উদ্যোক্তাদের খুজে বের করে উৎপাদরে তাদের আগ্রহী করে তোলা। আলোচনা শেষে প্রধান অতিথিকে প্রীতি উপহার তুলে দেন ব্যাংক কর্মকর্তারা। প্রায় এক ঘন্টার এই প্রাণবন্ত মতবিনিময় সভায় কুষ্টিয়া জেলাস্থ বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী ব্যাংক সমুহ এবং চেম্বার অব কমার্সের প্রতিনিধি ও উদ্যোক্তারা অংশ গ্রহণ করে।     

হাউজিং এষ্টেটের আবাসিক প্লট বরাদ্দের ড্র অনিশ্চিত! ১৪৯ প্লটের বিপরীতে ৬ হাজার আবেদন ॥ জামানত প্রায় ১৮ কোটি টাকা

আরিফ মেহমুদ ॥ স্বল্প ও মধ্যম আয়ের সরকারী, বেসরকারী চাকুরীজীবিসহ সাধারণ মানুষের নি®কণ্টক স্বপ্নের হাউজিং এষ্টেটের আবাসন প্লট প্রাপ্তিতে এখন অনেক দুর। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ (সাবেক গৃহ সংস্থান অধিদপ্তর)’র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সেচ্ছাচারিতা, অনিহা ও দক্ষ লোকবলের অভাবের কারনে আবেদনের সাড়ে ৪ মাসেও হাউজিং এষ্টেট প্রকল্পের আবাসিক প্লট বরাদ্দের ড্রয়ের কোন দিনক্ষন কিংবা তারিখ ঘোষনা নিশ্চিত করতে পারেনি আজও। স্বল্প ও মধ্যম আয়ের  মানুষের স্বপ্নের আবাসন প্রাপ্তি নিয়ে দেখা দিয়েছে চরম অনিশ্চিয়তা! গত ২০১০ সালের ১ অক্টোবর সংশোধিত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ (সাবেক গৃহ সংস্থান অধিদপ্তর)’র অধীনে কুষ্টিয়া সহ দেশের ৮ টি ডিভিশনের হাউজিং এষ্টেটের আবাসিক প্লট বরাদ্দ দেয়ার জন্য কিছু শর্ত সাপেক্ষে আবেদনপত্র আহবানের ঘোষনা দেন। এ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর স্বল্প ও মধ্যম আয়ের সরকারী, বেসরকারী চাকুরীজীবিসহ সাধারণ মানুষ শহরে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য এক খন্ড জমির নিশ্চিত ব্যবস্থা করতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে দেশের ৮ টি ডিভিশনের হাউজিং এষ্টেট অফিসগুলোতে। আবেদনকারীদের অতিরিক্ত ভীড় সামলাতে তপশিলী ব্যাংকগুলোকে সে সময় হিমশিম খেতে হয়েছে রীতিমত। অফিসগুলোতে বিশেষ করে কুষ্টিয়া হাউজিং এষ্টেট অফিসে প্রসপেক্টাস ও আবেদন ফরমের সংকট দেখা চরম। আবেদনকারীদের সামলাতে সরবরাহকৃত প্রসপেক্টাস ও আবেদন ফরম ফুরিয়ে গেলে ফটোকপি দিয়ে পরিস্থিত নিয়ন্ত্রণ করা হয়। আবাসিক প্লট বরাদ্দ পাওয়ার জন্য প্রত্যেক আবেদনকারীকে প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেটের সামনে উপস্থিত হয়ে নির্ধারিত ছকে ১৫০ টাকার নন জুডিশিয়াল ষ্টেম্পে হলফনামা করে আবেদনপত্রের সাথে জমা দিতে হয়েছে। এই হলফনামা নিতেও সরকারী অফিসগুলোতে আবেদনকারীদের দীর্ঘ লাইনে ঠাঁই দাড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয়েছে। ঢাকা ডিভিশন-১ এর অধীনে সেকশন-২ মিরপুর, ঢাকা ডিভিশন-২এর অধীনে মোহাম্মদপুর, চট্টগ্রাম ডিভিশন এর অধীনে নাসিরাবাদ, সিলেট ডিভিশনের অধীনে শিবগঞ্জ, রাজশাহী ডিভিশনের অধীনে সপুরা, খুলনা ডিভিশনের অধীনে খালিশপুর, দিনাজপুর ডিভিশনের অধীনে নিউটাউন ও কুষ্টিয়া উপ-বিভাগের অধীনে কুষ্টিয়া হাউজিং এষ্টেটের আওতায় ৫ কাঠার প্লট ১টি, ৪ কাঠার প্লট ৩টি, সাড়ে ৩ কাঠার প্লট ১৩৭টি, আড়াই কাঠার প্লট ২টি ও ২.০৮ কাঠার প্লট ৬টি সহ মোট ১৪৯টি প্লটের বিপরীতে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার আবেদনপত্র জমা পড়েছে। এর মধ্যে কুষ্টিয়া উপ-বিভাগের অধীনে কুষ্টিয়া হাউজিং এষ্টেটের প্লটের জন্য আবেদন পড়েছে প্রায় ৫ হাজার ৪শত। ২.০৮ ও ২.৫০ (আড়াই) কাঠার প্লটের অনুকুলে ২৫ হাজার, ৩.৫০ কাঠার প্লটের অনুকুলে ৩৫ হাজার, ৪ কাঠার প্লটের অনুকুলে ৪০ হাজার ও ৫ কাঠার প্লটের অনুকুলে ৫০ হাজার টাকার জামানত বাবদ আবেদনকারীরা ব্যাংক ড্রাফট অথবা পে-অর্ডারের মাধ্যমে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ, গৃহায়ন ভবন সেগুনবাগিচা চেয়ারম্যানের অনুকুলে প্রায় ১৮ কোটি টাকা জমা দিয়েছেন। আবেদনপত্র নেয়া শুরু (০১-১০-১০ইং) ও শেষ সময় (৩১-১২-২০১০ইং) নির্ধারিত থাকলেও কত দিন কিংবা মাস, বছর পর আবাসিক প্লট বরাদ্দের ড্র অনুষ্ঠিত হবে তা কিন্তু উল্লেখ ছিলনা। প্লট বরাদ্দের ড্রয়ের ব্যাপারে কুষ্টিয়া উপ-বিভাগের দায়িত্বশীল প্রকৌশলী হামিদুর রহমান জানান, অনেক আবেদনপত্র জমা পড়েছে। ৮ডিভিশনের আবেদনকারীদের ডাটা এন্ট্রির কাজ দ্রুত চলছে রাজশাহী ডিভিশনাল অফিসে।এসব আবেদনকারীদের ডাটা এন্ট্রি করা সম্পন্ন হলেই খুব শীঘ্রই প্লট বরাদ্দের ড্রয়ের তারিখ ঘোষানা করা হবে বলে জানালেও একদিকে যেমন কোন দিন, কখন, প্লট বরাদ্দের ড্রয়ের মাহিন্দ্রক্ষণ আসবে সেই অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় রয়েছে আবেদনকারীরা। তেমনি অন্যদিকে ড্র হওয়ার পর জামানতের টাকা ফেরতের নিশ্চয়তা নিয়েও রয়েছে অমানিষা অন্ধকারে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে জানান, জামানতের টাকা ফেরত নিয়ে কান সংসয় নেই। যারা প্লটের বরাদ্দ পাবেন না অথবা যারা প্লট নিতে আগ্রহী নন তাদের জামানতের টাকা বরাদ্দ প্রাপ্তদের নামের তালিকা প্রকাশের অনধিক ৬০ দিন পর জামানতের টাকার কোন প্রকার সুদ ছাড়াই নির্বাহী প্রকৌশলী রাজশাহী ডিভিশন জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ, সপুরা রাজশাহী অফিস থেকে ফেরত নিতে পারবেন। ডাটা এন্ট্রিতে বিলম্ব কিংবা অন্য কোন অভ্যান্তরিণ কারন অথবা আমলাত্রান্ত্রিক জটিলতা, সে যে কারনেই প্লট বরাদ্দের ড্রয়ের বিলম্ব হোক না কেন আবেদনকারীরা চাই শহরে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য তাদের নি®কণ্টক স্বপ্নের একখন্ড প্লট প্রাপ্তির নিশ্চয়তা।