শনিবার, ২৮ জুলাই, ২০১২

গড়াই নদীতে ডুবে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের ২ ছাত্রের করুণ মৃত্যু

আরিফ মেহমুদ ॥ চিসিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করার সাধ অপূরণই থেকে গেল মেধাবী ছাত্র মিলন ও রিফাতের । স্বপ্ন পুরুণ হলো না তাদের। তার আগেই গড়াই নদী কেড়ে নিল তাদের সব স্বপ্ন। বন্ধুদের সাথে গোসল করতে গিয়ে গড়াই নদীতে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের ১ম বর্ষের এ দুই মেধাবী শিক্ষার্থীর করুণ মৃত্যু হয়েছে। রিফাতের বাড়ি কুমিল্লা ও মিলনের বাড়ি দিনাজপুর জেলায়। সন্ধ্যার পর ডুবুরিরা দুই ছাত্রের লাশ গড়াই নদী থেকে উদ্ধার করে। পানিতে ডুবে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছে তিন ছাত্রী। এ সময় এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারনা হয় গড়াই নদীপাড়ে। গতকাল শুক্রবার বেলা ১২টার দিকে গড়াই নদীর রেণউইক ঘাট এলাকায় মর্মান্তিক এ ঘটনা ঘটেছে। কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী মিলনের বন্ধু বাঁধন ও উজ্জল জানান, গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ৫ বান্ধবীকে নিয়ে তারা ৫ বন্ধু গড়াই নদীর রেণউইক ঘাট এলাকায় গোসল করতে যান। ঘাটে যাওয়ার পর প্রথমে তাদের ৫ বান্ধবী নুসরাত আলভী, শারমিন কাকলী, মনামী, বুশরা ও মাসুমা পানিতে নামে। এরপর পরই মিলন ও রিফাত, অমল বোসসহ তারা ৫ বন্ধু পানিতে নামেন। কোমর পানিতে নামার পরই তাদের সবার পা’র নিচ থেকে মাটি সরে যায়। এ সময় সবাই চিৎকার শুরু করে। পানিতে হাবুডুবু খেতে থাকে সব বন্ধুরা। সাঁতার জানা রিফাত ও উজ্জল সাঁতরে উপরে উঠে আসে এবং তাদের তিন বান্ধবীকে টেনে তীরে নিয়ে আসে। এ সময় ফরিদুল হাসান মিলন ও শাহজালাল মজুমদার রিফাত ছাড়া সবাই উপরে উঠে আসতে সক্ষম হয়। গুরুতর অসুস্থ তিন শিক্ষার্থীকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসীন আহত নুসরাত, শারমিন ও মনামী জানান, পানিতে নেমে কিছুদূর যাওয়ার পর তারা বড় গর্তে পড়ে যায়। এ সময় সবাই ভয়ে একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে। তাদের বান্ধবীদের কেউ সাঁতার জানে না। অন্য বন্ধুরা তাদের উপরে টেনে তোলে। গর্তে পড়ে যাওয়ার পর পানির গভীরে তলিয়ে যায় মিলন ও রিফাত। সংবাদ পেয়ে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা নদীর ঘাটে ভীড় করে। এ সময় এক হৃদয় বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন মিলন ও রিফাতের সহপাঠিরা। নদীর ঘাটে আসেন কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আলহাজ্ব ফজলুর রহমান, কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ ইফতেখার মাহমুদ, পুলিশ সুপার মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ, কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ জামাল হোসেন মোল¬া, ডাঃ নওয়াব আলী ও স্বাচিপ নেতা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ডাঃ আমিনুল হক রতন। কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মফিজ উদ্দিন বলেন, নিখোজ দু’ছাত্র উদ্ধারে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। যার ফলে সন্ধ্যার আগেই লাশ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের অফিস সহকারি সেলিম হোসেন জানান, ঘটনার পর থেকে একাধিক ট্রলারে করে স্থানীয় মাঝি ও জেলেরা মিলন ও রিফাতের খোঁজে নদীতে নামে।  স্থানীয় বাসিন্দা আতিয়ার জানান, শিক্ষার্থীদের চিৎকার শুনে তিনি এগিয়ে আসেন। এসে দেখেন কয়েকজন উপরে উঠে এসেছে। তিনি বলেন, যেখানে তারা গোসলে নেমেছে সেই স্থানে গভীর গর্ত রয়েছে। যার কারনে তারা পা ফঁসকে নিচে পড়ে যায়। খবর পেয়ে এলাকার লোকজন নদীর ঘাটে ভীড় জমায়। অধ্যক্ষ ডাঃ ইফতেখার মাহমুদ জানান, দুই ছাত্রের লাশ রাতে উদ্ধার করা হয়েছে। খুলনা থেকে ফায়ার ব্রিগেডের দুই ডুবুরি এসে বিকেল ৬টার দিকে গড়াই নদীতে নেমে নিখোঁজ রিফাত ও মিলনকে উদ্ধারে অভিযান শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে রেনউইক বাঁধের পূর্ব অংশ থেকে প্রথমে রিফাতের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। প্রায় ৩০ ফুট গভীরে তার লাশ পাওয়া যায়। এর ১৫ মিনিট পর ডুবুরিরা উদ্ধার করে মিলনের মৃতদেহ। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের এ্যাম্বুলেন্স এসে রিফাত ও মিলনের মৃতদেহ পোষ্টমোর্টেম ঘরে নিয়ে যায়। মৃতদেহ দুটি নদী থেকে তোলার পর কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন রিফাত ও মিলনের বন্ধুরা। এ সময় চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি কেউ। মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ ইফতেখার মাহমুদ জানান, আগামীকাল শনিবার ময়না তদন্ত শেষে মিলন ও রিফাতের লাশ নিজ নিজ জেলায় পাঠিয়ে দেয়া হবে।তিনি জানান সকলেই অত্যান্ত মেধাবী এবং ভাল মনের মানুষ। তাদের সাথে অল্প দিন মিশতে পেরে আমরা পরস্পর আপন হয়ে গেছি। তাদের অকাল মুত্যুতে সকলে মুষড়ে পড়েছে। গতকাল উভয়ের বাড়িতে মোবাইলে তাদের মুত্যুর খবর জানানো হয়েছে। ইতিমধ্যে তারা কুষ্টিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে। ফরিদুল হাসান মিলন (২২) দিনাজপুর জেলার বিরল উপজেলার মঙ্গলপুর গ্রামের স্কুল শিক্ষক আব্দুল খালেকের একমাত্র পুত্র এবং রিফাত মজুমদার (২৩) কুমিল্লা শহরের ফৌজদার মোড়ের সরকারী চাকুরীজীবি শাজাহান মজুমদারের একমাত্র পুত্র। ঘটনার পর কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাসে গিয়ে দেখা যায় সেখানে সুনশান নিরবতা। সবাই নদীর ঘাটে গেছে দুই বন্ধুর খোঁজে। গোসল করতে গিয়ে বেঁচে আসা দুই শিক্ষার্থী বাঁধন উজ্বল ঘুমিয়ে আছে একটি রুমে। তারা ঠিক মত কথা বলতে পারছে না। এদিকে, গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজে ছাত্র-ছাত্রীসহ শিক্ষকদের ইফতার মাহফিলের আয়োজন ছিল। এ ঘটনার পর সেটি স্থগিত করা হয়। মেডিকেলের সকলের মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। রেনউইক বাঁধ এলাকায় নিখোঁজ ছাত্রদের সহপাঠীরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়তে দেখা যায়। গত বছরের ৭ জানুয়ারি ৩২জন ছাত্রী ও ২০ জন ছাত্র নিয়ে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের যাত্রা শুরু হয়।

মঙ্গলবার, ২৪ জুলাই, ২০১২

জেলা এনজিও সমন্বয় কমিটির সভায় বনমালি ভৌমিক দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে এনজিওদের ভুমিকা গুরুত্বপূর্ণ

আরিফ মেহমুদ ॥ কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক বনমালী ভৌমিক বলেছেন, জিও এবং এনজিওদের মধ্যে ভাল সমন্বয় থাকলে দেশের সার্বিক উন্নয়ন এগিয়ে নেয়া সম্ভব। ব্যক্তি স্বার্থের কথা চিন্তা না করে বৃহত্তর স্বার্থের জন্য দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে জিওদের পাশাপাশি এনজিওদের সমন্বয় খুবই জরুরী। দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করতে পারার মধ্যে মজাই আলাদা। দেশের উন্নয়নের জন্য সকলকে নিরলস ভাবে কাজ করতে হবে। বেসরকারী সংস্থা এনজিও দেশের অনেক উন্নয়ন মুলক কাজে সরাসরী অংশীদারিত্ব করছে। দেশের সার্বিক উন্নয়নে এনজিওদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। দেশব্যাপী ব্যাপক সংখ্যক এনজিও থাকায় বেকার সমস্যারও অনেকটা সমাধান হচ্ছে। সঠিক ভাবে দেখভাল করলে এনজিও’র মাধ্যমে অনেক ভাল কাজ করা সম্ভব। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা এনজিও সমন্বয় কমিটির সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সভাটি পরিচালনা ও গত মাসের বিস্তারিত প্রতিকেদন তুলে ধরেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) খন্দকার আজিম আহমেদ। তাকে সার্বিক সহযোগিতা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আরডিসি সিরাজাম মুনিরা। এসময় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জেলা তথ্য অফিসার তৌহিদুজ্জামান। এনজিও সংগঠনের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন নিকুশিমাজের নির্বাহী পরিচালক সালমা সুলতানা, জ্যোতি এনজিও’র নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা হাবিবা, নারী মুক্তির প্রোগ্রাম কো-অডিনেটর আব্দুল মতিন, আশা এনজিও’র ডিষ্ট্রিক্ট ম্যানেজার শরিফুল ইসলাম, এইড সংস্থার পিও মিজান পারভেজ, এডাবের সভাপতি এনামুল হক, এডাব চ্যাপ্টার কো-অডিনেটর আনোয়ার হোসেন বুলবুল, সেতু সংস্থার নাজমুল প্রমুখ। তিনি বৃক্ষরোপনে এনজিওদের করনীয় সম্পর্কে বলেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য প্রচুর পরিমানে গাছ গালান। গাছ বিক্রি করে প্রচুর পরিমান টাকা উপার্জন করা সম্ভব। গাছ ভবিষ্যতের কান্ডারি। গাছ কাউকে ফাঁকি দেয় না এবং বেঈমানি করে  না। এ জন্য বেশী বেশী করে গাছ লাগাতে হবে। বেঁচে থাকার জন্য যেমন অক্সিজের বিকল্প নেই। ঠিক তদ্রুপ গাছ ছাড়া বেঁচে থাকার কথা চিন্তা করা অবাস্তব। মাছ আমাদের কাছে এখন অনেক লোভনীয় জিনিষ। ইচ্ছা করলেই ভাতের সাথে মাছ খেতে পারছি না। কারণ চাহিদার তুলনায় মাছের বেশ অভাব। তিনি মৎস সপ্তাহ পালনে এনজিওদের ভূমিকার ভূয়ষী প্রশংসা করে বলেন মাছ আমাদের পুষ্টির অভাব পুরন করে থাকে। এ জন্য প্রচুর পরিমানে মাছ খাওয়া প্রয়োজন। চাহিদার তুলনায় মাছের উৎপাদন কম হওয়ায় আমরা প্রয়োজন অনুযায়ী মাছ খেতে পারছিনা। এ জন্য মাছের উৎপাদন বাড়াতে হবে। আমাদের দেশে পর্যাপ্ত পরিমানে পুকুর ও জলাশয় রয়েছে। এগুলোকে কাজে লাগাতে হবে। মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে। বৃক্ষ রোপন ও মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে এনজিওদের কে এগিয়ে আসতে হবে। দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে এনজিওদের গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করতে হবে। দেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে সার্বিক ভাবে সহায়তা করতে হবে। তিনি আরো বলেন, কুষ্টিয়া জেলাকে সবুজ নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এ জন্য প্রচুর পরিমানে বৃক্ষ রোপন করতে হবে। সভায় সিদ্ধান্ত হয় আগামী ৩ আগষ্ট পদ্মা নদীর ধারে রেনউইক বাঁধে এনজিওদের উদ্যোগে ফলজ ও বনজ বৃক্ষ রোপন করতে হবে। এ বৃক্ষ রোপন কর্মসূচীতে প্রত্যেকটি এনজিও একটি করে গাছ লাগবে এবং গাছটিকে ভাল বেড়া দিয়ে ঘিরে দিতে হবে। রোপনের সময় প্রত্যেকটি গর্তে রাসায়নিক সার দিতে হবে। সভায় অন্যান্যের মধ্যে মাশউক, ব্র্যাক, ওয়েভ ফাউন্ডেশন, প্রসেস, পদ্মা গড়াই মানবিক উন্নয়ন সংস্থা, উদ্দিপনসহ একাধিক সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

শুক্রবার, ২০ জুলাই, ২০১২

আইনশৃংখলা কমিটির সভায় জেলা প্রশাসক বনমালী ভৌমিক রমজানে দ্রব্যমুল্য নিয়ন্ত্রণ রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে

আরিফ মেহমুদ ॥ কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক (যুগ্ম সচিব) বনমালী ভৌমিক বলেছেন, জেলার আইনশৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, মাহে রমজানে দ্রব্যমুল্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখতে নিয়মিত বাজার মনিটোরিং করা হবে। রমজানকে পূজি করে যাতে একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষপত্রের দাম বাড়িয়ে অধিক মুনাফা অর্জন করতে না পারে। মাহে রমজানকে কেন্দ্র করে বাজারে কোন ভাবেই মূল্য সন্ত্রাস করতে দেয়া হবেনা। কিছু বিছিন্ন বিশৃংখল ঘটনা ছাড়া জেলাবাসী বর্তমানে একটা ভাল সময় পার করছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ বিভিন্ন এলাকায় যুব সমাজের বিশৃংখল দমন করতে ওই সব এলাকায় পুলিশ-র‌্যাব টহল নিয়মিত করা হবে। আইন শৃংখলা বিঘœকারী, মাদক বিক্রেতা, অপরাধী যে দলের কিংবা যতই শক্তিশালি হোক না কেন মাদকদ্রব্য বিক্রির স্পটগুলো বন্ধে তালিকা তৈরী করে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে। যে কোন মুল্যে জেলার আইনশৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও মাদকদ্রব্যের ভয়াবহতা নিয়ন্ত্রণ এবং দমন করা হবে। কুষ্টিয়াকে সম্পূর্ন মাদকমুক্ত ও আইনশৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, অন্যান্য আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী ও জনপ্রতিনিধি সহ সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।   প্রতিরোধে জেলার বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্টগুলোতে কঠোর হস্তে চোরাচালান বন্ধে র‌্যাব-পুলিশ প্রশাসনসহ বিজিবি ও মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরকে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। জেলার আইনশৃংখলা পরিস্থিতি শান্ত ও নিয়ন্ত্রণ রাখতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে জেলা আইনশৃংখলা কমিটির সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। প্রজেক্টরের মাধ্যমে বিগত মাসের প্রতিবেদন তুলে ধরেন কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট ড.মলি¬ক আনোয়ার হোসেন। তাকে সার্বিক সহযোগিতা করেন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট শিহাব রায়হান। সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) খন্দকার আজিম আহমেদ,বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য খোকসা উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব সদর উদ্দিন খান, জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ তরুন কান্তি হালদার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জয়নুল আবেদীন, কুষ্টিয়া সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর বদরুদ্দোজা, কুষ্টিয়ার সরকারী মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড.জমির উদ্দিন, কুষ্টিয়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ বেগম, দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অরুণ কুমার মন্ডল, ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজিবুল ইসলাম, মিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মঞ্জুর হাফিজ, খোকসা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ, সোহেল হাসান, কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান, কুমারখালী উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ, কুষ্টিয়া সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মোশাররফ হুসাইন, মিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর, সহকারী পুলিশ সুপার ফখরুজ্জামান জুয়েল, র‌্যাব-১২ প্রতিনিধি অশোক কুমার পাল, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নাছিম উদ্দিন আহমেদ, কুষ্টিয়া চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডানিট্রজ’র সহ-সভাপতি এসএম কাদেরী শাকিল, বড় বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন মোকাররম, খোকসা পৌরসভার মেয়র আনোয়ার আহমেদ খান তাঁতারী, কুমারখালী উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান এ্যাড.নিজামূল হক চন্নু, কুষ্টিয়া সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ইসমাইল হোসেন মুরাদ, কুষ্টিয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জিএম মুখলেছ গনি, কুষ্টিয়ার জেল সুপার নুরুল ইসলাম, বিআরটিএ’র ইন্সপেক্টর হুমায়ূন কবির, মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আইউব আলী, জেলা যুব উন্নয়নের উপ-পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান, সমাজ সেবার ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক আব্দুল গনি, জেলা তথ্য অফিসার তৌহিদুজ্জামান, সিআইডি প্রতিনিধি আকিদুল ইসলাম, এনএসআই’র সহকারী পরিচালক শহিদুল ইসলাম, নবাব সিরাজ-উদ্দৌলা কলেজের অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দিন, সাংবাদিক রাশেদুল ইসলাম বিপ্ল¬ব, জেলা আনসার ভিডিপি প্রতিনিধি আবুল কাশেম, কুষ্টিয়া সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ফরিদা হুসাইন, খোকসা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ইসরাত জাহান, মিরপুর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রোজি খান, দেব দুলাল প্র্রমুখ। সভায় কমিটির সদস্যরা হঠাৎ করেই শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন স্পটে মোটর সাইকেল চুরি ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্দ্যেগ প্রকাশ করেন। জেলার আইনশৃংখলার উন্নতি হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করলেও সামনে মাহে রমজানে দ্রব্যমুল্য নিয়ন্ত্রণ রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া,বাজার মনিটরিং অফিসারের বাজারের বর্তমান দরের তুলনায় মনগড়া গরমিল রিপোর্ট, লাগাতার চুরি ও ছিনতাই, কিছুটা বৃদ্ধি এবং শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন স্পটে প্রকাশ্যে মাদকদ্রব্যে বিক্রি ও মাদকদ্রব্যের ভয়াবহতা নিয়ে উদ্দ্যেগ প্রকাশ করেন। জেলাকে মাদকমুক্ত ও মাদকদ্রব্যের ভয়াবহতা নিয়ন্ত্রনে মাদকদ্রব্য অধিদপ্তর, র‌্যাব-পুলিশ ও বিজিবি অভিযান নিয়ে কড়া সমালোচনা করে বলেন আমাদের যুব সমাজকে মরণ নেশা মাদকদ্রব্যের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করতে না পারলে দেশ আগামীতে নেতৃত্ব ও মেধা শুন্য হয়ে যাবে। সভায় চলতি বছরের মে-জুন মাসের জেলার ৬ টি উপজেলায় সংঘঠিত ডাকাতী, দস্যুতা, খুন, দাংগা, দাংগাসহ খুন, নারী নির্যাতন, অপহরণ, পুলিশের কাজে বাধাদান, সিঁদেল, পশু, ও তার চুরি, অস্ত্র আইন, চোরাচালান ও অন্যান্য অপরাধের পরিসংখ্যান প্রজেক্টরের মাধ্যমে দেখানো হয়। এতে চলতি বছরের মে মাসে ১৭৯ টি এবং জুন মাসে ১৫২ টি এবং অপরাধের পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়।

সোমবার, ১৬ জুলাই, ২০১২

আদমশুমারি ও গৃহগণনা ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে বনমালী ভৌমিক দেশের পরিকল্পনা প্রনোয়নে আদমশুমারির গুরুত্ব অপরিসীম

আরিফ মেহমুদ ॥ কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক (যুগ্ম সচিব) বনমালী ভৌমিক বলেছেন দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আদমশুমারির গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। খাদ্য,শিক্ষা,চিকিৎসা,জনপ্রশাসন,সরকারি নিয়োগ ও জাতীয় নির্বাচনসহ সকল ক্ষেত্রে আদমশুমারির তথ্য ব্যবহার হয়ে থাকে। আদমশুমারির রির্পোটে একটি দেশের আর্থ সামাজিক সার্বিক চিত্র প্রকাশিত হয়। তাই আদমশুমারি একটি দেশের জন্য অপরিহার্য। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালে প্রথম আদমশুমারি ও গৃহ গণনা অনুষ্ঠিত হয়। জাতি সংঘের সদস্য রাষ্ট্র  হিসেবে মন্ত্রিপরিষদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক বাংলাদেশে ৫ম আদমশুমারি ও গৃহগণনা ২০১১ সালের মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত হয়। ২০১১ সালের ১৫-১৯ মার্চ পর্যন্ত দেশের সকল সাধারণ থানা , প্রতিষ্ঠানিক থানা, হোটেল, হাসপাতালও অনান্য আবাস স্থালে অবস্থানকারী লোকজনকে গণনাভুক্ত করা হয়। রেলওয়ে স্টেশন, বাস স্টেশন,ফেরীঘাটও ফুটপাথ ইত্যাদি স্থানে অবস্থানকারী ভাসমান লোকজনকেও  গণনাভুক্ত করা হয়েছে। সফলভাবে এই আদমশুমারি অনুষ্ঠানের লক্ষে এবং শুমারি তথ্যের মান নিশ্চিত করার লক্ষে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে গঠিত জেলা শুমারি কমিটি অত্যান্ত দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করে। গতকাল কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে দুপুরে কুষ্টিয়ার আদমশুমারি ও গৃহগণনা ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড.মহিউদ্দিনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মুহঃ ফজলুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) খন্দকার আজিম আহমেদ, জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ তরুণ কান্তি হালদার, কুষ্টিয়া সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ বদরুদ্দোজা, কুষ্টিয়া সরকারী মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ড.প্রফেসর জমির উদ্দিন, সোনালী ব্যাংকের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার স্বপন কুমার সাহা, সদর  উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ বেগম, খোকসা পৌরসভার মেয়র আনোয়ার আহম্মেদ খান তাতারী, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জাহিদুল ইসলাম, মিরপুর উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা আবুল হোসেন। প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে আরো বলেন, সিটি কর্পোরেশন ,পৌরসভা,উপজেলা এবং  ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিদের নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট শুমারি কমিটি দক্ষতার সাথে কার্যক্রম পরিচালনা করে। তিনি জেলা শুমারি কমিটির সকল সদস্যসহ অনান্য শুমারি কমিটির সদস্যগণকে তাদের উপর অপিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের জন্য ধন্যবাদ জানান। সংবাদ মাধ্যম সমুহের গঠনমুলক ভূমিকা ও অত্র জেলার জন সাধারণের সক্রিয় অংশগ্রণে শুমারি সুষ্ঠভাবে সম্পাদনা সম্ভব হয়েছে। এজন্য সকলকে নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আদমশুমারি ও গৃহগণনার ফলাফল ৩ টি পর্যায়ে প্রকাশ করা হয়েছে। ১ম পর্যায়: টালিশীটের উপর ভিক্তি করে প্রাথমিক ফলাফল ২য় পর্যায়: প্রশ্নপত্র হতে কম্পিউটারে তথ্য ধারনের পরে গণনাকৃত জনসংখ্যা ৩য় পর্যায়: গণনাকৃত জনসংখ্যার সাথে গণনা পরবর্তী যাচাই জরিপ এ প্রাপ্ত তথ্য সমন্বয়পূর্র্বক চূড়ান্ত জনসংখ্যা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো কর্তৃক শুমারি অনুষ্ঠানের পর সরকারের আন্য একটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা (বিআইডিএস) কর্তৃক স্বাধীনভাবে গণনা পরবর্তী যাচাই জরিপ পরিচালনা করা হয়।বিআইডিএস এর হিসাব অনুযায়ী গণনা হতে বাদ পড়ার হার (ঁহফবৎ পড়ঁহঃ) ৩.৯৭%। অত্যাধুুনিক প্রযুুক্তি ব্যবহার করে দ্রুততম সময়ে বাংলাদেশে পরিসংখ্যান  ব্যুরো  শুমারির এ সকল রির্পোট প্রস্তুত করা হয়। এছাড়া  এ শুমারি কাজে প্রথমবারের মত জিআইএস (এওঝ) ডিজি ম্যাপ ব্যবহার করা হয় এবং প্রায় চার লক্ষ গণনাকারী ও সুপারভাইজারগণের মধ্যে শতকরা ৫০ ভাগের বেশী ছিল মহিলা যা প্রশংসনীয়। আদমশুমারি ও গৃহগণনা ২০১২ সালের ১৬ জুলাই পর্যন্ত কুষ্টিয়া জেলার লোকসংখ্যা ২০,৪৬,১৮৪ জন। তন্মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ১০,২৩,১৮৪জন এবং মহিলার সংখ্যা ১০২২৯৩৬ জন। সে হিসবে পুরুষ ও মহিলার অনুপাত ১০০:১০০। জেলার মোট খানার সংখ্যা ৪৭৭২৮৯ এবং খানা প্রতি গড় জনসংখ্য ৪.০৬ জন। আদমসুমারি ও গৃহগণনা আনুযায়ী ১৫ মার্চ ২০১১ তারিখে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ছিল ১৪,৯৭,৭২,৩৬৪ জন এর মধ্যে পুরুষ ৭,৪৯,৮০,৩৮৬ জন ও মহিলা ৭,৪৭,৯১,৯৭৮ জন। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.৩৭%। প্রজেক্টরের মাধ্যমে এই ফলাফল প্রকাশ করা হয়। অনুষ্ঠানটি সার্বিক পরিচালনা ও উপস্থাপনা করেন জেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা ইফতেখাইরুল করিম।

শুক্রবার, ১৩ জুলাই, ২০১২

বার কাউন্সিল নির্বাচনী মতবিনিময় সভায়-ব্যারিষ্টার এম.আমীর-উল ইসলাম আপনাদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা আমাদের নিরঙ্কুশ বিজয় নিশ্চিত করবে

আরিফ মেহমুদ ॥ দেশ বরেণ্য আইনজীবী, বাংলাদেশ সংবিধানের প্রনেতা, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের আহবায়ক, ব্যারিষ্টার এম.আমীর-উল ইসলাম বলেছেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সংবিধানের সার্বভৌমত্ব নিরঙ্কুশ রাখা এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় আইনজীবীদের দায়িত্ব অপরিসীম। দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে। যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে ও তাদের বিচার বন্ধে একটি গোষ্ঠি যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষের শক্তিতে পরিণত হয়েছে। একারনে এদেশ এখনো বিপদমুক্ত আছে বলে মনে হয় না। আইনকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে দেয়া হচ্ছে না। বাংলাদেশের আইন যে শুধু আইন বলে চলে এমনটি নয়। এর পিছনে রাজনৈতিক প্রভাবের বলয় কাজ করছে। এমন পরিস্থিতি মোকাবেলায় গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের আইনজীবীদের ঐক্য অটুট রাখতে বলিষ্ট ভূমিকা পালন করতে হবে। স্বাধীনতার পক্ষের শাক্তিকে এক হতে হবে। বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের আসন্ন নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তিকে নির্বাচিত করার কোন বিকল্প নেই। আপনাদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা আমাদের নিরঙ্কুশ বিজয় নিশ্চিত করবে।আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও বিচারের মান সমুন্নত রাখার পাশাপাশি নিষ্কলুষ বিচারঙ্গন প্রতিষ্ঠায় আইনজীবীদের ভূমিকা অপরিহার্য। তাই দলবল নির্বিশেষে এই মৌলিক বিষয়ে আইনজীবীদের ঐক্যমত ও নিষ্ঠাবান থাকার কোন বিকল্প নেই। গতকাল শুক্রবার দুপুরে কুষ্টিয়া জেলা আইনজীবী সমিতি ভবনে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নির্বাচন উপলক্ষে কুষ্টিয়া জেলা বারের আইজীবীদের সাথে সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ প্যানেলের মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ প্যানেলের প্রার্থী দেশ বরেণ্য আইনজীবীগন কুষ্টিয়া জেলা আইনজীবী সমিতি ভবনে এসে পৌছালে প্রধান অতিথি সহ অন্যান্য অতিথিদের ফুলের তোড়া দিয়ে বরণ করে নেন কুষ্টিয়া বারের আইনজীবীরা। কুষ্টিয়া জেলা আইনজীবী সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জলিলের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এ্যাড.সৈয়দ রেজাউর রহমান, সাবেক আইনমন্ত্রী এ্যাড.আব্দুল মতিন খসরু এমপি, সার্ক ল’-এর সাবেক সেক্রেটারী জেনারেল,বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের সিনিয়র এ্যাড.ব্যারিষ্টার তানিয়া আমীর, সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের সদস্য সচিব সুব্রত চৌধুরী, বাংলাদেশ আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আবু, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ্যাড.জাহেদুল বারী, সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক এ্যাড.মাহবুব আলী ও ঢাকা ল কলেজের অধ্যক্ষ, কুষ্টিয়া জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ্যাড.সিরাজ-উল ইসলাম। সভায় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়া পৌরসভার মেয়র আনোয়ার আলী, কুষ্টিয়া জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক এ্যাড.মিয়া মোঃ রেজাউল হক, সাবেক সম্পাদক এ্যাড.জহুরুল ইসলাম ও এ্যাড.আ স ম আক্তারুজ্জামান মাসুম প্রমুখ। প্রধান অতিথি ব্যারিষ্টার এম আমীর-উল ইসলাম তার বক্তব্যে আরো বলেন, একাধিক বারের সদস্যরা আগে শুধু একটি বারে ভোট দিতে পারতো। সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ এই সীমাবদ্ধতা দূর করে একাধিক বারের সদস্যদের ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ার দাবী প্রতিষ্ঠিত করেছে। আগামীতে বার কাউন্সিলকে আরো গণতান্ত্রিক করতে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে বার কাউন্সিলের সভাপতি ও সহ-সভাপতি নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে। আপনাদের অকৃত্রিম ও সার্বিক সমর্থন এবং সহায়তা সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের সফলতার মূল ভিত্তি। এবারো সফলতার সুবাতাস বয়ে আনবে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ব্যারিষ্টার তানিয়া আমীর বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করতে এবং যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষের শক্তিকে প্রতিহত করতে সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের হাতকে শক্তিশালী করুন। হত্যা সন্ত্রাস ও মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া পুনঃস্থাপনের মাধমে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও মানবাধিকার সমুন্নত রাখার প্রয়াসে আইনজীবীদের সুদৃঢ় ঐক্য ও মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠতে পারে সন্ত্রাস ও দূর্নীতিমুক্ত একটি গণতান্ত্রিক সমাজ। এমন একটি কল্যাণমুখী ন্যায়ানুগ সমাজ গঠনে আইনজীবীদের ঐক্য, সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদকে বারংবার বিজয়ী করেছে। এ জন্য আপনাদের সকলের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। আইন শিক্ষার মান উন্নয়ন এবং পেশার পরিধি বিস্তৃত করার জন্য বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দান ও মানবাধিকার বাস্তবায়নে বার কাউন্সিলের ভূমিকা সুদৃঢ় করতে সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ প্রতিশ্র“তিবদ্ধ। আপনাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও সংকল্পের উপর রয়েছে আমাদের সুদৃঢ় বিশ্বাস ও আস্থা। বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের আসন্ন নির্বাচনে আপনাদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা আমাদের নিরঙ্কুশ বিজয় নিশ্চিত করবে। মতবিনিময় সভাটি সার্বিক উপস্থাপনা ও পরিচালনা করেন কুষ্টিয়া জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও পাবলিক প্রসিকিউটর(পিপি) এ্যাড.নূরুল ইসলাম দুলাল। 

বৃহস্পতিবার, ১২ জুলাই, ২০১২

সরকারী নির্দেশ উপেক্ষিত,হুমকির মুখে মাতৃস্বাস্থ্য কর্মস্থলে থাকে না উপজেলার পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কর্মকর্তারা

আরিফ মেহমুদ ॥ দীর্ঘদিন ধরে সরকারী নির্দেশ উপেক্ষা করে কুষ্টিয়ার পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপজেলা কর্মকর্তারা কর্মস্থলের বাইরে অবস্থান করছেন। বিভাগটির উপজেলা পর্যায়ের মোট ১২জন কর্মকর্তার মধ্যে বর্তমানে কর্মস্থলে অবস্থান করেন মাত্র ৪ কর্মকর্তা। বাকি ৮জন কর্মকর্তাই থাকেন কর্মস্থলের বাইরে। বছরের পর বছর ধরে উপজেলা কর্মকর্তারা কর্মস্থলের বাইরে অবস্থান করলেও জেনেশুনেও কোন ব্যবস্থা নেন না কুষ্টিয়ার পরিবার পরিকল্পনা বিভোগের সংশিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তা। দায়িত্বশীল পদে থাকা উপজেলার মাঠ পর্যায়ে এসব কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক কর্মস্থলে অবস্থান না করায় হুমকির মুখে মাতৃস্বাস্থ্য। ঝিমিয়ে পড়ছে জেলার পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম। অকার্যকর হয়ে উঠছে অধীক জন্ম নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশ অনুসারে উপজেলা কর্মকর্তাদের কর্মস্থলে অবস্থান করা বাধ্যতামূলক হলেও এ নির্দেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ইচ্ছামাফিক চলছেন কুষ্টিয়া জেলার পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে কর্মরত উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তারা। কুষ্টিয়া জেলার ৬ উপজেলায় পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে উপজেলা পর্যায়ে বর্তমানে মোট ১১জন কর্মকর্তা রয়েছেন। এর মধ্যে কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় কর্মরত মেডিকেল অফিসার (এমসিএইচএফপি) ডা. ফেরদৌসি সুলতানা, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের (মাতৃসদন) মেডিকেল অফিসার (ক্লিনিক) ডা. আযম খান এবং পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রেজাউল করিম ছাড়া অন্য উপজেলা কর্মকর্তারা কর্মস্থলে অবস্থান করেন না। কর্মকর্তাদের বেশিরভাগই থাকেন জেলা শহরে। দু’একজন অবস্থান করেন পাশ্ববর্তী উপজেলায়। সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, খোকসা উপজেলায় মেডিকেল অফিসার নাই। ভারপ্রাপ্ত মেডিকেল অফিসারের দায়িত্বে রয়েছেন উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোজাম্মেল করিম। তিনি ২০০৬ সালের অক্টোবর থেকে প্রায় ছয় বছর যাবত জেলার খোকসায় কর্মরত। তবে তিনি তার কর্মস্থলে অবস্থান করেন না। তার বাসা কুষ্টিয়া শহরের ঈদগাহপাড়া সংলগ্ন নারিকেল তলায়। খোকসাতে যোগদানের পর থেকেই তিনি কুষ্টিয়া শহরে বাসা নিয়ে আছেন। কুমারখালী উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সাজেদুল হক ২০০৯ সালের জুলাই মাসে যোগ দেন কুমারখালীতে। তিনি প্রায় ৩ বছর ভারপ্রাপ্ত মেডিকেল অফিসারের দায়িত্বও পালন করেছেন। পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সাজেদুল হক অবস্থান করেন কুষ্টিয়া শহরের থানাপাড়া এলাকায় নিজের বাড়িতে। বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত মেডিকেল অফিসার হিসেবে ডাঃ মাসুদ-উজ-জামান দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি মেডিকেল অফিসার (এমসিএইচএফপি) হিসেবে ২০০৮ সালের জুলাইতে যোগ দেন মিরপুর উপজেলায়। তখন থেকেই তিনি বাস করেন কুষ্টিয়া শহরের থানাপাড়ার আদদ্বীন হাসপাতাল এলাকায়। জানা গেছে, তিনি সপ্তাহে মাত্র দু’দিন বন্ধ্যাকরণ অপারেশন ক্যাম্প পরিচালনার জন্য মিরপুর ও কুমারখালী যান। তার পূর্বের কর্মস্থল ভেড়ামারায় নিয়মিত প্রাইভেট প্রাকটিস করেন তিনি। ভেড়ামারা থানার সামনে একটি ফার্মেসীতে বসেন তিনি। কামরুল ইসলাম মিরপুর উপজেলায় পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন ২০০৯ সালের মাঝা মাঝিতে। তিনি থাকেন কুষ্টিয়া শহরের কোর্টপাড়া এলাকায়। তবে ঝামেলা এড়াতে তিনি মিরপুর উপজেলা ডরমিটরীতে সিট বরাদ্দ নিয়ে রেখেছেন। ডাঃ নওয়াব আলী ভেড়ামারা উপজেলা মেডিকেল অফিসার (এমসিএইচএফপি) এবং ভারপ্রাপ্ত উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। তিনি মাঝে মধ্যে নিজের স্টেশনে অবস্থান করেন। তবে নিয়মিত প্রাইভেট প্রাকটিস করেন কুষ্টিয়া শহরের হাসপাতাল রোডের একটি ক্লিনিকে। তিনি থাকেন কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল কোয়ার্টারে। ডাঃ আবু সাঈদ মেডিকেল অফিসার (এমসিএইচএফপি) হিসেবে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে যোগ দেন ২০০৯ সালের মে মাসে। এরপর থেকেই তিনি বাস করেন ভেড়ামারায় নিজের বাড়িতে। সেখানে তার নিজের নামে ক্লিনিক রয়েছে। জানা যায়, তিনিও সপ্তাহে দুই দিন কর্মস্থলে যেয়ে শুধু বন্ধ্যাকরণ অপারেশন ক্যাম্প পরিচালনা করেন। উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নাসিরা খাতুন ২০০৭ সালের এপ্রিলে দৌলতপুরে যোগ দেন। তিনি থাকেন শহরের হাউজিং এস্টেট সি ব¬কের সম্প্রসারণ এলাকায় নিজের বাড়িতে। একটি সুত্র জানিয়েছে কুষ্টিয়ার পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক ডাঃ জেসমিন আখতার নিজের প্রাইভেট প্রাকটিসের সুবিধার্থে এবং নিজের অনুগত রাখতে কোন কর্মকর্তাকেই কর্মস্থলে থাকতে নির্দেশ দেন না বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। জেলার এসব কর্মকর্তাদের কর্মস্থলের বাইরে অবস্থান করায় হুমকির মুখে মাতৃস্বাস্থ্য। ঝিমিয়ে পড়ছে জেলার পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম। এধরনের অভিযোগের বিষয়ে কুষ্টিয়ার পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক জেসমিন আখতারের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, গত রবিবার মাসিক মিটিংয়ে প্রত্যেক উপজেলা মেডিকেল অফিসার ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাবে নিজের কর্মস্থলে অবস্থান করার জন্য জরুরীভাবে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এরপরও যদি কোন কর্মকর্তা কর্মস্থলের বাইরে অবস্থান করে তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।   

মঙ্গলবার, ১০ জুলাই, ২০১২

কুষ্টিয়ায় সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে ঘুষ ছাড়া কাজ হয় না, অবৈধ সমিতির নিকট জিম্মি ক্রেতা-বিক্রেতারা

এ.এইচ.এম.আরিফ ॥ কুষ্টিয়ার রেজিষ্ট্রি অফিস গুটিকয়েক দলিল লেখকদের নিকট জিম্মি হয়ে পড়েছে। অবৈধ সমিতির নামে প্রতিদিন আদায় করা হচ্ছে হাজার হাজার টাকা। অতিরিক্ত টাকা ছাড়া কোন কাজ হয়না কুষ্টিয়া রেজিষ্ট্রি অফিসে। ক্ষমতাসীন সহযোগী সংগঠনের কয়েকজন নেতা ও পুলিশকে ম্যানেজ করে ক্রেতা-বিক্রেতা সাধারন লোকজনের পকেট কাটছে কথিত সমিতির নেতারা। এর আগে একাধিক বার পুলিশ অভিযান চালিয়ে আটক করে কয়েকজনকে। বন্ধ হয়ে যায় সমিতির কার্যক্রম। সরেজমিন কুষ্টিয়া রেজিষ্ট্রি অফিস ঘুরে ভুক্তভোগীদের সাথে কথা হলে তারা নানা অনিয়ম দূর্নীতির চিত্র তুলে ধরেন। কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বিত্তিপাড়া থেকে জমি রেজিষ্ট্রি করতে আসা আতাহার মিয়া জানান, কোন জমি রেজিষ্ট্রি করতে হলে সমিতির নামে লাখে ৪ হাজার টাকা জমা দেয়া লাগে। এক টাকা কমেও জমি রেজিষ্ট্রি হয়না। সমিতির নেতাদেও দাপটে সাধারন দলিল লেখকরা অসহায় বলে জানান তিনি। প্রতিদিন জমি রেজিষ্ট্রি করতে আসা শত শত মানুষ এখানে এসে নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। সরকারী নিয়মনীতিকে উপক্ষো করে মনগড়া ভাবে অতিরিক্ত ২ থেকে ৪ গুন ফি গ্রাহকদের কাছ থেকে আদায় করা হয়।  ওই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে গেলে তাদের থানাপাড়া এলাকার ক্যাডার বাহিনী দিয়ে হুমকিও দেয়া হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক সাধারন দলিল লেখক জানান, জমি রেজিষ্ট্রি করার জন্য সরকার নির্ধারিত ফিস থাকলেও তা অনেকেই মানেন না।  সাধারন দলিলে সরকারী ফিস সর্বসাকুল্যে ১২৫ টাকা নির্ধারন করা হলেও এখানে আদায় করা হয় ৪৩৫ টাকা। হেবা দলিলে সরকারী ফিস ২২৫ টাকা হলেও আদায় করা হচ্ছে বিঘাপ্রতি এক হাজার টাকা। খারিজ পচড়া না থাকলে অতিরিক্ত আরও ৫’শ টাকা নেয়া হয়। সার্টিফাই কপির জন্য ৭০ টাকা ফি ধার্য করা থাকলেও নেয়া হচ্ছে ৮’শ থেকে দেড় হাজার টাকা। কপিষ্টদের কাছ থেকেও উৎকোচ আদায় করা হচ্ছে। জমি রেজিষ্ট্রি করার সময় দাতা উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও টাকার বিনিময়ে দাতার অনুপস্থিতিতে রেজিষ্ট্রি করা হচ্ছে দলিল। এক্ষেত্রে ঘুষ নেয়া হয় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। অফিসের কয়েকজন দূর্ণীতিবাজ কর্মকর্তা সমিতির নেতাদের যোগসাজসে এসব অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছে। কুষ্টিয়া রেজিষ্ট্রি অফিসের কথিত সমিতির সাথে বেশির ভাগ সাধারন দলিল লেখকদের কোন সম্পর্ক নেই। তবে ভয়ে তারা মুখ খুলতে সাহস পান না। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের এক নেতার ভাইসহ তিন জনের সিন্ডিকেট এখানকার নিয়ন্ত্রক। কথিত সমিতির সভাপতি জয়নাল ও কোষাধাক্ষ্য নাসির উদ্দিন ও নেতার ভাই সমিতি পরিচালনা করেন। গত তত্বাবধায়ক সরকার আমলে সেনাবাহিনী অভিযান চালিয়ে সমিতির কার্যক্রম স্থগিত করে দেন। এরপর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসলে নেতাদের সহযোগীতায় ফের চালু হয় অবৈধ সমিতি। বিগত সময়কার পুলিশ সুপার শাহাবুদ্দিন খান অভিযান চালিয়ে কয়েকজন আটক করেন। ফের বন্ধ করে দেন সমিতির কার্যক্রম। তবে তিনি বদলি হওয়ার পর আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠে সমিতির নেতারা। দলিল লেখক সমিরি নেতারা সরকারি নিয়ম মানেন না। তাদের আলাদা তালিকা রয়েছে। সেই তালিকা অনুযায়ী তারা টাকা আদায় করেন। দলিল লেখকরা সরকারী ফিস ছাড়াও ৫০ হাজার টাকা দলিলে ৩ হাজার টাকা, ১ লক্ষ টাকার দলিলে ৬ হাজার টাকা, ২ লক্ষ টাকার দলিলে ১৫ হাজার টাকা হারে সমিতির চাঁদার নামে অতিরিক্ত টাকা আদায় করেন। কোন কোন ক্ষেত্রে সুযোগ বুঝে আরও বেশি টাকা হাকছেন তারা। দলিল লেখক সমিতির সীলযুক্ত টোকেন ছাড়া কোন দলিল রেজিষ্ট্রি করতে দেয়া হয় না। ফলে সাধারন ক্রেতা-বিক্রেতা জমি রেজিষ্ট্রি করতে এসে পড়ছেন মহা বিপাকে। দলিল লেখক সমিতির নিয়োগকৃত দালালদের দাপটে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পান না।
কয়েকজন দলিল লেখক জানান, এখানে দিনে-দুপুরে ডাকাতি করা হচ্ছে। দলিল লেখক সমিতির নেতারা মনগড়া একটি ফিসের তালিকা তৈরী করে সকল দলিল লেখকদের হাতে ধরিয়ে দিয়েছেন। এতে সাধারন দলিল লেখকদের কোন লাভ হচ্ছে না। কয়েকজন দলিল লেখক কাজ না করেও হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। অবৈধ দলিল লেখক সমিতির সভাপতি জয়নাল জয়নালের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। সাধারন সম্পাদক লাইজুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে সভাপতি ভাল বলতে পারবে। কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ এর সাখে মোবাইলে কথা হলে জানান, কেউ যদি অবৈধ সমিতির নামে চাঁদা আদায় করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সোমবার, ৯ জুলাই, ২০১২

কুষ্টিয়ায় মোটরসাইকেল রেজিষ্ট্রেশনে বিড়ম্বনা, শো’রুমের কাগজপত্র না পেয়ে বিব্রত গ্রাহক

আরিফ মেহমুদ ॥ কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের সরোয়ার কয়েক মাস আগে নতুন মোটর সাইকেল কিনে গতকাল কুষ্টিয়া শহরে ঢোকার সময় পুলিশ হঠাৎই বাধ সাধে তার গাড়ীর গতিতে। থামুন, গাড়ীর কাগজপত্র দেখান, ড্রাইভিং লাইসেন্স, আর ইন্স্যুরেন্স দেখান। এমন অনেক প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে তাকে অনেকটা বিব্রতকর অবস্থায়। কিছুই নেই তার, আগামীতে কাগজপত্র করবে শর্তে কোন রকম কাছে থাকা শিক্ষা নবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখিয়ে এ যাত্রায় পার। এমনই চিত্র গত কয়েক দিনের পুলিশী অভিযানে রেজিষ্ট্রেশন বিহীন মটর সাইকেল চালকদের। গ্রাম কিংবা শহরের মধ্যবিত্ত ও উচ্চমধ্যবিত্ত পরিবারের দ্রুতযান খ্যাত মোটর সাইকেল কেউ শখ করে আবার কেউ কেউ ব্যবসায়ী ও অতি প্রয়োজনে নগদ মুল্যে কিনেও শো’রুমের কাগজপত্র বিলম্বে পাওয়ায় পড়ছেন বিপাকে। নগদ মূল্যে গাড়ী কিনেও শো’রুমের কাগজপত্র না পেয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হচ্ছে গ্রাহকদের। পুলিশী তৎপরতায় এ যেন গলার কাটা, সমস্যার অন্ত নেই, পাহাড়সম। এরপর তো রয়েছে কিস্তিতে মোটর সাইকেল কেনার আরেক তিক্ত অভিজ্ঞতা। কিস্তি, নগদ মূল্যে আর কিছু বাকীতে বেচা-বিক্রি সব মিলিয়ে কুষ্টিয়া শহরের ও শহরতলীর ৮টি মোটর সাইকেল শো’রুমের ব্যবসা জমজমাট। বিভিন্ন শো’রুমের বিক্রয় তালিকার পরিসংখ্যানে জানা যায়, প্রতিদিন ৭/৮টি মোটর সাইকেল বেচা-বিক্রি হচ্ছে। একারনে কুষ্টিয়ার অর্থনৈতিক অবস্থার কিছুটা হলেও পরিবর্তন এসেছে। পরিবর্তন এসেছে মোটর সাইকেল রেজিষ্ট্রেশন প্রদান পদ্ধতিতেও। আগে যেখানে শো’রুমের কাগজপত্র সহ প্রয়োজনীয় তথ্যাদি দিয়ে আবেদন করে ১-৩ মাসেও বিআরটিএ কুষ্টিয়া অঞ্চল অফিস থেকে মোটর সাইকেল রেজিষ্ট্রেশন নম্বর পাওয়া সহজ সাধ্য ছিল না। বর্তমানে সহকারী পরিচালক শেখ আশরাকুর রহমান বিআরটিএ কুষ্টিয়া অঞ্চল অফিসে যোগদানের পর থেকে শো’রুমের কাগজপত্র সহ প্রয়োজনীয় তথ্যাদি দিয়ে আবেদন করলেই ৪৮ ঘন্টার মধ্যেই রেজিষ্ট্রেশন নম্বর পাওয়া যাচ্ছে। বিলম্বে শো’রুমের কাগজপত্র পাওয়ায় গ্রাহকরা এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত ও বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে। কুষ্টিয়া জিলা স্কুলের সামনে নিউ কুষ্টিয়া মোটরস’র চাইনা ডাউন, জনসন, টিভিএস অটো’র টিভিএস আইটেমের সব গাড়ী, ডিসকভারী, ডিসকভারী পালসার, হিরো হোন্ডা, হনসন, জনসন ও ইয়ালিন, রয়েল অটো, ভেনাস ও নিউ মোটর সাইকেল মাঠ শো’রুমের ডায়াং, জনসন, টিভিএস, পাঁচ রাস্তার মোড় আজমেরী মটরস ও স্বস্তি অটো’র বাজাজ, ডিসকভারী, পালসার, ও জনসন ব্যান্ডের আকর্ষণীয় মডেলের ৫০ সিসি থেকে শুরু করে ২৫০ সিসি পর্যন্ত মটর সাইকেল পাওয়া যাচ্ছে। এগুলোর মূল্য ৬৫ হাজার থেকে ২ লাখ ২৫ হাজার পর্যন্ত। এসব শো’রুমের রকমারী ও আকষর্ণীয় ডিজাইনের নতুন নতুন মডেলের মটর সাইকেল হরহামাসায় ক্রেতা সাধারণকে কাছে টানছেই প্রতিনিয়ত। এদের মধ্যে বেশি বিক্রি হচ্ছে হিরো হোন্ডা ও বাজাজের বিভিন্ন মডেলের মোটর সাইকেলগুলো। আবার অনেক সৌখিন ক্রেতাদের নতুন মডেলের মোটর সাইকেলের প্রতি ঝোক বেশি। তাদের গাড়ী বদলানো যেন নেশায় পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে এক শ্রেণীর ঠকবাজ ক্রেতাও রয়েছে। তারা বিভিন্ন শো’রুম থেকে অল্প টাকায় কিস্তিতে গাড়ী কিনে টাকা পরিশোধে বিপাকে ফেলে বিক্রয় প্রতিনিধিদের। এদের সংখ্যা একেবারে কম নয়। নগদ মূল্যে মোটর সাইকেল কিনে ৫/৬ মাস পর্যন্ত গাড়ীর কাগজপত্র না পাওয়ায় বিড়ম্বনার শিকার হওয়া কয়েকজন অন টেষ্ট লেখা অথবা অন্যকিছু সংকেত লেখা মোটর সাইকেল আরোহীর সাথে কথা হলে মোটর সাইকেলের উপজেলা খ্যাত দৌলতপুরের ডাংমড়কা বাজারের শাজাহান জানান, নগদ টাকা পরিশোধ করেও শো’রুম থেকে নানান অজুহাতে গাড়ীর কাগজ আজ দিচ্ছি কাল দিচ্ছি করে প্রায় ৬/৭ মাস লেগেছে কাগজপত্র দিতে। অভিযোগ আছে শো’রুমের নিজেদের লোক দিয়ে ক্রেতাদের গাড়ীর রেজিষ্ট্রেশন করে দেয়ার জন্য ইচ্ছে করেই কাগজপত্র দিতে এই বিলম্ব করে। না এ ধরনের অভিযোগ সত্যি না। বিভিন্ন বড় বড় কোম্পানী’র এজেন্ট রানার, এটলাস, টিভিএস ও উত্তরা মটরস’র মত এজেন্সী থেকে বিক্রয় শো’রুম গুলোতে মশুক-১১ ফরম ও গেট পাশ দিয়ে মোটর সাইকেল পাঠিয়ে দেয়। বিক্রির অনেক পরে পাঠায় চালানের কপিসহ মূল কাজগপত্র ফলে দু’এক মাস গাড়ীর কাগজপত্র ডেলিভারী দিতে বিলম্ব হয়। আমরা ইচ্ছে করে বিলম্ব করি না,এমন তথ্যই জানালো বেশ কয়েকটি মোটর সাইকেল শো’রুমের সত্বাধিকারীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শো’রুমের বিক্রয় প্রতিনিধিরা জানান, এক শ্রেণীর ঠকবাজ ক্রেতা বিভিন্ন শো’রুম থেকে অল্প টাকায় কিস্তিতে গাড়ী কিনে টাকা পরিশোধে বিপাকে ফেলে আমাদের। এজন্য একটি চাবী রেখে দেয়া হয়। কিস্তি পরিশোধ হলে ওই চাবী ও গাড়ীর মূল কাগজপত্র দেয়া হয় তাদের। যদি কিস্তি ফেল করে সে ক্ষেত্রে কিভাবে টাকা পরিশোধ হয় জানতে চাইলে বলে, এক কিস্তি ফেল করলে ক্রেতাকে সতর্ক করে দিয়ে ২য় কিস্তি ফেল করলে মোটর সাইকেল শো’রুমে এনে রাখা হয় এবং ওই গাড়ী বিক্রয় না হওয়া পর্যন্ত তাকে জমাকৃত টাকা ফেরত দেয়া হয় না। 

রবিবার, ৮ জুলাই, ২০১২

কুষ্টিয়ায় সেচ্ছাসেবক লীগ ক্যাডারদের সশস্ত্র হামলায় সাংবাদিক সমাবেশ পন্ড

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি ॥ কুষ্টিয়ায় সাংবাদিকদের মানববন্ধন সমাবেশে হামলা চালিয়ে তা পন্ড করে দিয়েছে সেচ্ছাসেবক লীগের ক্যাডাররা। গতকাল) বেলা১১ টায় শহরের মজুমপুর গেটে মানববন্ধন চলাকালে হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় জিডি করেছে সাংবাদিকরা। ৬ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন সবুজের দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার,সাগর-রুনী হত্যাকারীদের গ্রেফতারসহ সারা দেশে সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধের দাবী জানিয়ে মানববন্ধন ও সমাবেশের ডাক দেয় জেলার সর্বস্তুরের সাংবাদিকবৃন্দ। বেলা ১১ টায় শহরের মজমপুর গেটে মানববন্ধন চলাকালে বক্তৃতা করছিলেন চ্যানেল টুয়েন্টি ফোরের স্টাফ রিপোর্টার শরীফ বিশ্বাস। সে সময় উপস্থিত ছিলেন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া সাংবাদিক এবং স্থানীয় পত্রিকার সম্পাদকরা। এমন সময় কুষ্টিয়া ডিএসবি পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন সবুজসহ প্রায় ২০ থেকে ২৫জন সন্ত্রাসী আগ্নোস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সাংবাদিকদের উপর হামলা করে।  ভয়ে এ সময় উপস্থিত সাংবাদিকরা দৌড়ে আশেপাশে আশ্রয় নেয়ায় পন্ড হয়ে যায় মানববন্ধন কর্মসূচী। এসময় শহরের ব্যস্ত তম ওই ঐ এলাকায় চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে খবর পেয়ে কুষ্টিয়া সদর থানার এসআই আব্দুল আজিজসহ পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে আসলে শহরের এনএস রোডে মহড়া দিতে দিতে চলে যায় সেচ্ছাসেবক লীগের ক্যাডাররা। এ সময় তারা সাংবাদিক দেখা মাত্র তাদের হাত পা কেটে নেয়া হবে বলে শ্লোগান দেয়। এদিকে এ ঘটনার পর সাংবাদিকরা জরুরী প্রতিবাদ সভা ডেকে ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে অবিলম্বে সাংবাদিকদের নামে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ মানববন্ধন কর্মসূচীর উপর হামলা কারী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছে।
উল্লেখ্য,সাজ্জাদ হোসেন সবুজের নামে একডজন মামলা রয়েছে। দুটি মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকলেও দাপটের সাথে শহরে ঘুরে বেড়ায় সে। জেলা পুলিশের শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকায় তার অবস্থান ৬ নম্বরে। এ সন্ত্রাসীর ভয়ে শহরের সাধারন লোকজন থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা পর্যন্ত মুখে খুলতে সাহস পান না। তবে একাধিক সুত্র জানিয়েছে, জেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার চাপে স্থানীয় প্রশাসন সবুজের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থ্ াগ্রহণ করতে পারেনি। এসব নেতারা সবুজকে ক্যাডর হিসেবে ব্যবহার করে টেন্ডারবাজী হাট-ঘাট দখল সহ প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক নেতাদের দমন করছে। 

কুষ্টিয়ায় ৩টি আগ্নেয়াস্ত্রসহ ২ অস্ত্র ব্যবসায়ী আটক

কুষ্টিয়ার প্রতিনিধি ॥ কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে র‌্যাব-১২ অভিযান চালিয়ে ৩টি বিদেশী পিস্তল ৬টি ম্যাগজিন ও ১৪ রাউন্ড গুলিসহ ওহিদুল এবং জহুরুল নামের দুই ব্যবসায়ীকে আটক বরেছে। ওই সময় র‌্যাবের উপস্থিতি আগেই বুঝতে পেরে আমিরুল ও রাজ্জাক নামের আরো দুই অস্ত্র ব্যাবসায়ী পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। গত শুক্রবার রাতে কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলার মথুরাপুর গ্রামের পাকা রাস্তার উপর অভিযান চালিয়ে ওই দুই ব্যবসায়ীকে আটক করে র‌্যাব। র‌্যাব জানায়, তারা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, দৌলতপুর উপজেলার হোসনেবাদ এলাকার  কয়েকজন ব্যক্তি বেশ কিছুদিন ধরে অস্ত্রের ব্যাবসা করছে। এমন সংবাদের ভিত্তিতে উক্ত অস্ত্র ব্যাবসায়ী চক্রকে হাতেনাতে ধরার জন্য র‌্যাবের একটি দল ছদ্দবেশে অস্ত্রের ক্রেতা সেজে ওই চক্রের সাথে যোগাযোগ করে।  পরে তাদের কথা মত অস্ত্রের ডেলিভারি নেওয়ার জন্য ওই চক্রের সদস্যরা দৌলতপুর উপজেলার মথুরাপুর গ্রামের পাকা রাস্তার পাশের পাইকড় গাছের নিচে আসতে বলে। ওই তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব-১২, সিপিসি-১ কুষ্টিয়া ক্যাম্পের কমন্ডার মাসুদুর রহমানের নেতৃত্বে র‌্যাবের একটি দল সাদা পোশাকে মথুরাপুর গ্রামের পাকা রাস্তার আশে পাশে আগের থেকে অবস্থান নেয়। রাত সাড়ে ৮ টার দিকে অস্ত্র ব্যাবসায়ী ওহিদুল, জহুরুল, আমিরুল ও রাজ্জাক ঘটনাস্থলে পৌছলে র‌্যাব অভিযান চালায়। এসময় কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলার হোসনেবাদ এলাকার আবুল মন্ডলের ছেলে ওহিদুল ইসলাম (৪৫)একই উপজেলার সোনাইকান্দি এলাকার ফয়েজের ছেলে জহুরুল (৩৫)কে আটক করলেও দৌলতপুর উপজেলার সোনাইকান্দি এলাকার আবুল মন্ডলের ছেলে আমিরুল (৩৫) এবং একই উপজেলার বেজপুর গ্রামের রাজ্জাক(২৫) পালিয়ে যায়। র‌্যাব আটককৃতদের দেহ তল¬াশী করে ৩টি অত্যাধুনিক স্বয়ংক্রিয় বিদেশী পিস্তল, ৬টি ম্যাগজিন ও ১৪ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে। এ ব্যপারে দৌলতপুর থানায় অস্ত্র আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

শনিবার, ৭ জুলাই, ২০১২

৬ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার ঘটনায় সাংবাদিকদের জরুরী সভা

কুষ্টিয়ায় চাঁদাবাজির সংবাদ প্রকাশ করায় সেচ্ছাসেবক লীগের নেতা সাজ্জাদ হোসেন সবুজ বাদী হয়ে ৬ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে যে মামলা করেছেন তার প্রতিবাদ জানিয়েছেন সর্বস্তুরের সাংবাদিকবৃন্দ। গতকাল শনিবার বিকেলে দেশতথ্য পত্রিকা কার্যালয়ে এক জরুরী সভায় বক্তারা অবিলম্বে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে কর্মসূচী ঘোষণা করেন। কুষ্টিয়ার কাগজের সম্পাদক সংবাদ সংস্থা বাসস, বাংলাভিশন ও ভোরের কাগজের জেলা প্রতিনিধি নুর আলম দুলাল জরুরী সভায় সভাপতিত্ব করেন। জরুরী সভায় কুষ্টিয়া ইলেকট্রনিক জার্নালিষ্ট এসোসিয়েশন, ফটো জার্নালিষ্ট এসোসিয়েশন, ক্রাইম জার্নালিষ্ট এসোসিয়েশনের নের্তৃবৃন্দ একাতত্বা ঘোষণা করেন ।
জরুরী সভায় বক্তৃতা কালে কুষ্টিয়া ইলেকট্রনিক জার্নালিষ্ট এসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক এনটিভির স্টাফ রিপোর্টার ফারুক আহমেদ পিনু বলেন, সাংবাদিকরা ঐক্যবন্ধ রয়েছে। কোন ষড়যন্ত্র সা্বংাদিকদের ঐক্যে ফাটল ধরাতে পারবে না। সন্ত্রাসীরা যা ইচ্ছা তাই করবে এটা চলতে পারে না। প্রয়োজনে ঢাকায় সাংবাদিক নেতাদের সাথে আলাপ করে কর্মসূচী দিতে হবে।
ফটো সাংবাদিক এসোসিয়েশনের সভাপতি সাংবাদিক আবুল কাশেম বলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলা হয়েছে তা রুখে দাড়াতে হবে। প্রয়োজনে লাগাতার কর্মসূচী দিতে হবে। সন্ত্রাসীদের মদদদাতাদের অপকর্মের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করতে হবে।
আইএনবির স্টাফ রিপোর্টার সিনিয়র সাংবাদিক মজিবুল শেখ বলেন, পুলিশের তালিকাভুক্ত একজন সন্ত্রাসী মানহানি মামলা দিয়েছে এটা হাস্যকর। নানা অপকর্মের হোতা সবুজ ওয়ারেন্টের আসামী হয়েও পুলিশের সাথে সখ্যতা গড়ে তার অবৈধ কাজ অব্যাহত রেখেছে। আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি। কেউ যদি মনে করেন ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করব তা হলে তা হবে তার জন্য আত্মঘাতি।
বার্তা সংস্থা এনএনবির জেলা প্রতিনিধি সাংবাদিক নেতা রেজাউল করিম বলেন, অতীতে শহিদুল ইসলামের মত নেতারাও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হামলা মামলা দিয়ে হয়রানী করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সাংবাদিকরা ঐক্যবদ্ধ থাকায় তা ব্যার্থ হয়। অনেক আন্দোলন সংগ্রাম করার ইতিহাস আমাদের রয়েছে। সবুজের সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা করে নিজের বিপদ নিজেই ডেকে এনেছে।
কুষ্টিয়ার কাগজের সম্পাদক সিনিয়র সাংবাদিক নুর আলম দুলাল বলেন, আমদেরকে আগে ঠিক হতে হ্েব। চরিত্র বদল বরতে হবে। কেউ এসে আমাকে মেরে যাবে আমি চুপ হয়ে বসে থাকব সে দিন পাল্টে গেছে। সকল অপকর্মের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে হবে।
চ্যানেল টুয়েন্টি ফোরের স্টাফ রিপোর্টার শরীফ বিশ্বাস বলেন, মামলা হামলা করে সাংবাদিকদের লেখনি বন্ধ করা যাবে না। একজন সন্ত্রাসী সবুজের কারনে সাংবাদিকরা ভয় পেতে পারে না। তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী সবুজ যে মানহানি মামলা করেছে তা সাংবাদিকদের জন্য লজ্জাজনক। আমাদের হাত পা কেটে নেয়ার হুমকি দিয়েছে সবুজের ক্যাডাররা। এ অবস্থায় যে কোন সময় ক্ষতি করতে পারে তারা।
দিনের খবর সম্পাদব ফেরদৌস রিয়াজ জিল্লু বলেন, বোন অন্যায়ের নিকট মাথা নত করা চলবে না। গুটি কয়েক অপরাধির নিকট আমরা জিম্মি থাকতে পারি না। হয় তারা থাকবে না হয় আমরা থাকব। পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।
আরটিভির জেলা প্রতিনিধি শেখ হাসান বেলাল বলেন, ৬ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে মানে সকল সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তাই ঐক্যবদ্ধ জয়ে অপশক্তির মোকাবেলা করতে হবে। প্রয়োজনে ঢাকায় গিয়ে স্বরামন্ত্রণালয়ে গিয়ে নিরাপত্তা চাইতে হবে।
আন্দোলনের বাজার পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক আনিসুজ্জামান ডাবলূ বলেন, সত্য প্রকাশ করতে হবে। সামান্য টাকার নিকট অনেকেই বিক্রি হয়ে যায়। এ কারনে অপরাধীরা সুযোগ নিয়ে আমাদের ক্ষতি করে।
কুষ্টিয়া প্রতিদিনের সম্পাদক গাজী টিভির প্রতিনিধি সোহেল রানা বলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে সেই মামলায় আমাদের সাক্ষী করে বির্তকের মধ্যে ফেলেছে। আমাদের না জানিয়ে সাক্ষী করা হয়েছে। আমি সব সময় সাংবাদিকদের সাথে ছিলাম এখনো আছি।
একুশে টিভি প্রতিনিধি জহরুল ইসলাম বলেন, সত্য সাংবাদ প্রকাশের কারনে মামলা করেছে সবুজ। এটা মেনে নেয়া যায় না।
প্রথম আলো প্রতিনিধি তৌহিদী হাসান বলেন, বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশের জন্য মামলা হতে পারে না। এ সংবাদ প্রকাশ করার আগে দুই পক্ষের বক্তব্য নেয়া হয়েছে।
সমকাল প্রতিনিধি সাজ্জাদ রানা বলে, সবুজের ক্যাডারদের হুমকির কারনে আমাদের নিরাপত্তা নেই। পরিবার পরিজন নিয়ে আতংকের মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে। এ অবস্থায় সাংবাদিকতা করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
এ সময় উপস্থিত থেকে আরও বক্তব্য রাখেন, সময়ের কাগজের সম্পাদক নরুন্নবী বাবু, মানবজমিন প্রতিনিধি দেলোয়ার রহমান মানিক,,ডেসটিনি প্রতিনিধি ও কুষ্টিয়অর খবরের সম্পাদক এএম জুবায়েদ রিপন, বাংলাবাজারের জেলা প্রতিনিধি আরিফ মেহমুদ, দেশতথ্য পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক মোমেছুর রহমান, দিনের শেষ পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি নিজাম উদ্দিন, দৈনিক আজকের আলোর বার্তা সম্পাদক দেবাশীষ দত্ত, নির্বাহী সম্পাদক লিটন-উজ জামান, দেশতথ্যের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক এনামূল হক, সাংবাদিক মিলন খন্দকার, শফিউর রহমান, সময়ের কাগজের সাংবাদিক বখতিয়ার হোসেন, শাহিনুল ইসলাম শাহিন, আজকের আলোর বিশেষ প্রতিনিধি আকরামুজ্জামান আরিফ, সাংবাদিক সোহেল টাণু, মাহবুবুর রহমান, সেলিম আহম্মেদ তাক্কু প্রমুখ।


কুষ্টিয়ায় ১০ দিনব্যাপী বৃক্ষ মেলার উদ্বোধন

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি ॥ সবুজ নগর সবুজ দেশ, লাল সবুজের বাংলাদেশ প্রতিপাদ্যের আলোকে গত বৃহস্পতিবার কুষ্টিয়া কালেক্টরেট চত্বরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার’র পাদদেশে দশ দিনব্যাপী বৃক্ষ মেলার উদ্বোধন করা হয়েছে। কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড.মহিউদ্দিনের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক (যুগ্ম সচিব) বনমালী ভৌমিক। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিপ্তরের উপ-পরিচালক লুৎফর রহমান, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা হুসাইন মোহাম্মাদ নিশাদ, দৈনিক বাংলাদেশ বার্তা পত্রিকার সম্পাদক ও নজরুল একাডেমীর সভাপতি আব্দুর রশীদ চৌধুরী এবং লালন একাডেমীর সাবেক সাধারণ সম্পাদক তাইজাল আলী খান। এর আগে সকাল ৯টায় বৃক্ষ মেলা উপলক্ষে কুষ্টিয়া পাবিলক লাইব্রেরী চত্বর থেকে এক বর্ণাঢ্য র‌্যালী বের হয়। শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে র‌্যালীটি মেলাস্থলে এসে শেষ হয়। বৃক্ষ মেলা উদ্বোধন শেষে অতিথিবৃন্দ কালেক্টরেট চত্বরে বৃক্ষ চারা রোপণ করেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, আমাদের দেহে রক্তের স্্েরাতধারার সাথে মিশে আছে বন। কেননা বৃক্ষহীন পরিবেশে জীবের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। পরিবেশ স্বাভাবিক থাকলে জীবন স্বাভাবিক থাকবে। আর পরিবেশের প্রধান শর্ত বৃক্ষ সমৃদ্ধ দেশ। আমাদের দেহের গঠন ও মেধাসমৃদ্ধ জাতি গঠনে ফলের ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বের। এই বর্ষায় তিনি প্রতি হাতে একটি গাছের চারা রোপণের আহবান জানান। তিনি বলেন, প্রতিটি মানুষ তার দু’টি হাতে দু’টি বৃক্ষ চারা রোপণ করলে বাংলাদেশ সবুজের নগরীতে পরিণত হবে।

সামনে রোজা, বাজার নিয়ন্ত্রণে অকার্য্যকর টিসিবি, অধিকাংশ ডিলারেরই পণ্য বিক্রির দোকান নেই

আরিফ মেহমুদ ॥ পণ্যের অস্থিতিশীল বাজারদর নিয়ন্ত্রণে রাখা সহ সমানে রোজাতে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখতে সরকারের নেয়া টিসিবি (ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ) কুষ্টিয়ায় অকার্য্যকর হয়ে পড়েছে। জেলায় ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) অধিকাংশ ডিলারেরই পন্য বিক্রি করার কোন দোকান নেই। হাতে গোনা কয়েকজন ডিলারের দোকান থাকলেও তাতে ‘টিসিবির পণ্য বিক্রির কোনো সাইনবোর্ড টানানো নেই। কোথাও চোখেও পড়েনি। বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য টিসিবি যেসব পণ্য ডিলারের মাধ্যমে বিক্রি করে থাকে সেগুলো সাধারণ ক্রেতারা কোথায়, কার কাছ থেকে কিনবে তা খুঁজে পায় না। তাদের পণ্য বিক্রির স্থানও ক্রেতারা খুঁজে পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় রমজানে যাতে বাজার অস্থিতিশীল না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক অবস্থা গ্রহন করলেও কুষ্টিয়ার এক শ্রেণীর ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে অধিক মুনাফা অর্জনে বাজারগুলোতে বাজারদর অস্থিতিশীল করেই চলেছে দেখার কেউ নেই। ব্যবসায়ীদের নানান ফন্দি ফিকির ও কুট চালে সরকারের নেয়া ব্যবস্থা কোন কাজেই আসছেনা এ জেলায়। বড় এলাকার স্থানীয় ক্রেতা আব্দুল মান্নান ও চাকুরিজীবী মিজানুর রহমান বাজার করতে যেয়ে জানান, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষপত্রের বাজারের অগ্নি মূল্যের হাত থেকে কিছুটা সাশ্রয় পেতে সরকারের টিসিবি’র দোকান খুজছি। কিন্তু ‘টিসিবির পণ্য বিক্রির কোনো সাইনবোর্ড কোথাও চোখে পড়েনি। আমরা কার কাছ থেকে মাল কিনব তাও জানি না। উপজেলাগুলোর বাজারের টিসিবির পণ্য বিক্রির চিত্র তো আরো ভয়াবহ। উপজেলার ক্রেতা সাধারণ টিসিবি কর্তৃক সরকারের এধরণের ন্যায্য মুল্যে পণ্য বিক্রির উদ্যোগের খবর জানেও না। কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের টিসিবি সংশ্লিষ্ট বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, জেলার ৬ উপজেলায় ৩২ জন ডিলার রয়েছেন। কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় আছেন ১৪ জন। এর মধ্যে পৌরসভা ও শহরেই রয়েছেন আছেন ১২ জন। কুমারখালী উপজেলায় ২, খোকসা উপজেলায় ৩, দৌলতপুরে ২, ভেড়ামারায় ৩, মিরপুর উপজেলায় ৮ জন সর্বমোট ৩২ জন টিসিবি ডিলার রয়েছেন। গত মে থেকে অষ্টম দফায় পণ্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ দফায় প্রতি ডিলারের জন্য দুই টন চিনি, ৬০০ লিটার সয়াবিন তেল ও ২০০ কেজি মসুর ডাল বরাদ্দ রয়েছে। তবে এ মাসে ডাল সরবরাহ কিছুটা কম। ডিলাররা প্রতি কেজি চিনি ৫০ টাকা, সয়াবিন লুজ প্রতিকেজি ১১৫, বোতলজাত প্রতিলিটার ১২১ ও মসুর ডাল ৭০ টাকায় ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করার কথা। শহরের ডিলাররা কেজি ও লিটার প্রতি কমিশন পান তিন টাকা। আর উপজেলার ডিলাররা পান চার টাকা। গতকাল বুধবার সরেজমিনে শহরের রাজারহাট, কবি আজিজুর রহমান সড়ক, আড়–য়াপাড়া, কেনি রোড, এনএস রোড, চেম্বার মার্কেট, স্টেশন রোড, চৌড়হাস ফুলতলা, ও হাউজিং সহ বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ১০টির অধিক টিসিবির ডিলারের কোনো দোকান কিংবা বিক্রয় প্রতিষ্ঠান বা বন্ধ দোকানের সাইন বোর্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এলাকায় যে টিসিবির পণ্য বিক্রির দোকান রয়েছে তা এসব এলাকার লোকজনও তেমন একটা জানেন না। ডিলারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, টিসিবির পণ্য বিক্রি করে তেমন কোনো লাভ হয় না। তাই তারা পণ্য উত্তোলন করে তা পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দেন। এক্ষেত্রে দৌলতপুরের বড়গাংদিয়া বাজারের ব্যবসায়ী মেসার্স ছাদেকুজ্জামান’র স্বত্ত্বাধিকারী ছাদেকুজ্জামান কোন দিনই টিসিবির পণ্য বিক্রির জন্য বড়গাংদিয়া বাজারের নিয়ে আসেনি।    পণ্য উত্তোলন করে তা পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে মোটা মুনাফার জন্য বিক্রি বরে দেন। এব্যাপারে ছাদেকুজ্জামানের সাথে মুঠোফোনে কয়েকবার যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি। এনএস রোডের চেম্বার মার্কেটের আরেক ডিলার মেসার্স মোকাররম ষ্টোরের স্বত্ত্বাধিকারী বড় বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোকাররম হোসেন মোয়াজ্জেম জানান, বাজারের পন্য থেকে টিসিবি পণ্যের তেমন কোনো পার্থক্য নেই। লাভ হয় কম। তা ছাড়া পণ্যের গুণগতমান খুব একটা ভালনা তাই তিনি এখন আর পণ্য উত্তোলন করেন না। আসন্ন রমজানে ভাল মালামলা সরবরাহ করবে বলে টিসিবি কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে। তবে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে গুনগত পন্য বিক্রির যোগ্য মালামাল সরবরাহ করলে বাজার দর নিয়ন্ত্রণ রাখতে অবশ্যই পণ্য উত্তোলন করে সরকারের এই মহৎ উদ্যোগকে সহযোগিতা করবো। টিসিবি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানান, অধিকাংশ ডিলার পণ্য উত্তোলন করেন। লোকজন খোলাবাজার থেকে এসব পণ্য কিনলেও টিসিবির দোকান থেকে কিনেন না। টিসিবির পণ্য বিক্রির প্রচারণা কম বলে বাজারের এমন চিত্র দেখা যায়। দ্রব্যমূল্যের লেলিহান শিখা দেশের জেলা শহর থেকে শুরু করে উপজেলা পর্যায়ের ছোট-বড় বাজারগুলোতে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য দিনের পর দিন লাগামহীন পাগলা ঘোড়ার মত বেড়ে চললে, সরকার আমদানীকৃত,স্থানীয় ভাবে ক্রয়কৃত পণ্যাদি ন্যায্য মূল্যে,সাশ্রয়ীমুলে বিক্রি করতে এবং বাজারদর নিয়ন্ত্রণ রাখতে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত টিসিবি ডিলার নিয়োগ করলেও কুষ্টিয়ার এক শ্রেণীর ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে অধিক মুনাফা অর্জনে বাজারগুলোতে বাজারদর অস্থিতিশীল করেই চলেছে দেখার কেউ নেই। ব্যবসায়ীদের নানান ফন্দি ফিকির ও কুট চালে সরকারের নেয়া ব্যবস্থা কোন কাজেই আসছেনা এ জেলায়।