আরিফ মেহমুদ ॥ সরকারী বিধি নিষেধ উপেক্ষা ও এনজিও ব্যুরোর মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরী অথরিটির সনদ ছাড়াই কুষ্টিয়ার নিবন্ধন বাতিলকৃত ৩টি এনজিও’র বিরুদ্ধে ক্ষুদ্র ঋণের নামে অবৈধ আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে। তালিকায় রয়েছে আরো ১৩টি এনজিও প্রতিষ্ঠান। সমাজসেবা অধিদপ্তর নিবন্ধ বাতিলকৃত বিলুপ্ত এনজিওগুলোর তালিকায় নাম থাকলেও নানা অনিয়ম দুর্নীতি সহ ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণের মাধ্যমে অবৈধ লেনদেন চালিয়ে যাচ্ছে জেলার সুরমা সেচ্ছাসেবী সংস্থা, নিউ জনউন্নয়ন সংস্থা ও সোসাল এন্টিগ্রেট সংস্থা সহ অনেক এনজিও। তাদের দেয়া অধিক সুদের ঋণের জালে প্রতিনিয়ত গ্রামাঞ্চলের খেটে খাওয়া মানুষ নিঃস্ব হলেও দেখার কেউ নেই। এসব এনজিওগুলোর বিরুদ্ধে একাধিক বার ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণের নামে অবৈধ লেনদেনের মাধমে অধিক সুদ আদায় ও সরকারের নিয়মনীতি উপেক্ষা করে ঋণ কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগ উঠায় কুষ্টিয়ার ২৬১ এনজিও’র নিবন্ধন বাতিল করেছে সমাজসেবা অধিদপ্তর। এসব এনজিও’র পরিচালকরা দীর্ঘদিন ধরে ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণের মাধ্যমে অবৈধ লেনদেন চালিয়ে অধিক সুদ আদায় করে ফুলে ফেঁপে উঠছে। সরকারী বিধি নিষেধ উপেক্ষা ও এনজিও ব্যুরোর মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরী অথরিটির সনদ ছাড়াই ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ বন্ধে জেলা প্রশাসক নির্দেশ নিদের্শ দিলেও তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনে সমাজসেবা অধিদপ্তরের রয়েছে ধীর গতি। বিলুপ্ত ঘোষণাকৃত এনজিওগুলো কোন প্রকার আইনের তোয়াক্কা না করেই দাপটের সাথে মাঠকর্মী, হিসাব রক্ষক ও ফিল্ড সুপারভাইজার নিয়োগ দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের কার্যক্রম। খোজ নিয়ে জানা যায় এসব এনজিও’র নির্বাহী পরিচালকের স্থায়ী ঠিকানার সাথে কার্যালয়ের ঠিকানার কোন মিল নেই। এক ঠিকানা দেখিয়ে জেলা সমাজসেবা দফতর থেকে ক্ষুদ্র ঋণ বা মাইক্রোক্রেডিট কার্যক্রম পরিচালনা করবো না মর্মে নিবন্ধন গ্রহণ করলেও বাস্তবে ওই ঠিকানায় কার্যালয়ের কোন অস্তিত্ব নেই। আইনের তোয়াক্কা না করেই নিবন্ধন শর্ত ভঙ্গ করে সেচ্ছায় সেবা দান ভুলে গিয়ে মোটা অংকের সুদে ক্ষুদ্র ঋণ বা মাইক্রোক্রেডিট কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। জেলা এনজিও সমন্বয় পরিষদের মাসিক সভা কিংবা জরুরী কোন সভায় ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করবো না বলে নির্বাহী পরিচালকরা একাধিকবার প্রতিশ্র“তি দিলেও বাস্তবে কোন দিন তা বাস্তবায়ন করেননি তারা। বরং তাদের এই মোটা অংকের সুদের কারবার চালিয়ে যেতে বেছে নিচ্ছে নতুন নতুন পদ্ধতি। পুরুষ কর্ম ব্যস্ত থাকার অজুহাতে জেলার বিভিন্ন এলাকায় মহিলাদের নিয়ে সমিতি গঠন করে সদস্যদের সঞ্চয় জমা নেয়ার নামে কেউ কেউ হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এছাড়াও এসব এনজিও তাদের দেয়া ঋণের মূলধন পরিশোধ করতে সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের নামে ১৫/২০ পার্সেন্ট সুদ হারে সাপ্তাহিক ৪৬ কিংবা ৪৮ কিস্তিতে কালেকশন করছেন। ঋণ প্রদানের সময় সদস্যদের জমানো সঞ্চয় থেকে ৬ পার্সেন্ট হারে ঋণের মূল টাকা থেকে কেটে রাখা হয়। যা পাশ বইয়ে সঞ্চয় হিসেবে জমা থাকে ওই এনজিও’র তহবিলেই। আর এসব কালেকশন আদায়ে পুরুষ কর্মীর চেয়ে মহিলা কর্মীদের বেশি করে নিয়োগ দিচ্ছে তারা। এদিকে এসব এনজিও’র কার্যক্রম বন্ধে জেলা এনজিও সমন্বয় পরিষদ বার বার সতর্ক করলেও কোন এক অজানা শক্তির দাপটে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে তারা। জেলা এনজিও সমন্বয় পরিষদ সভাপতি জেলা প্রশাসক বনমালী ভৌমিক জানান, এধরনের অপরাধে কুষ্টিয়ার ২৬১ এনজিও’র নিবন্ধন বাতিল করেছে সমাজসেবা অধিদপ্তর, প্রয়োজনে এসব এনজিও’র এসব এনজিও’র নিবন্ধন বাতিলের জন্য জেলা সমাজসেবা দফতর থেকে সমাজসেবা অধিদফতরের পরিচালক (কার্যক্রম) বরাবর চিঠি পাঠানো হবে।সেকেলে এনজিও নিয়ন্ত্রণ আইন দিয়ে তাদের কার্যক্রম কোন ভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে অবশেষে পুরাতন আইন সংশোধন করে বৈদেশিক সহায়তাপুষ্ট এনজিও নিয়ন্ত্রণে নতুন আইন তৈরি করছে সরকার। এব্যাপারে মুঠোফনে কথা বলার জন্য সুরমা সেচ্ছাসেবী সংস্থা, নিউ জনউন্নয়ন সংস্থা ও সোসাল এন্টিগ্রেট সংস্থার নির্বাহী পরিচালকদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাদের অনেকের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। কথা হয় নিউ জনউন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী রায়হান আলীর সাথে ক্ষুদ্র ঋণ বা মাইক্রোক্রেডিট কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এনজিও ব্যুরোর মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরী অথরিটির সনদ বা অনুমতি আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান কোন সনদ বা অনুমতি নাই। কেন এ মোটা সুদের কারবার চালাচ্ছেন, তিনি বলেন আমার মত অনেক এনজিও শুরু থেকেই ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। দৌলতপুর, ভেড়ামারা ,মিরপুর কুষ্টিয়া সদর উপজেলা সহ জেলার সব উপজেলায় এমন অনেক এনজিও আছে যারা শুধুমাত্র ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম চালিয়ে অল্প দিনেই কোটিপতি হয়ে উঠছে। আমরা তো মানুষের উপকার করছি, ক্ষতির কিছু নেই। সংশি¬ষ্ট সূত্র জানায়, অবৈধ লেনদেন বিশেষ করে ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণের মাধ্যমে অধিক সুদ আদায় করে এ জেলার বেশ কয়েকটি এনজিও ফুলেফেঁপে উঠেছে। সরকারের নিয়মনীতি উপেক্ষা করে ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য সমাজসেবা দফতর থেকে জেলায় আবারো নিবন্ধিত ১৩টি এনজিওকে তালিকাভুক্ত করেছে। সূত্রমতে শহর সমাজসেবা কর্মকর্তা তদন্ত করে প্রতিবেদন তৈরি করেছেন। প্রতিবেদনে ১৩ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে মর্মে উলে¬খ করা হয়েছে। এদিকে নিবন্ধন বাতিল করা ঠেকাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে সংশ্লিষ্ট এনজিওগুলো। বিশেষ সূত্রমতে প্রায় ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে এসব প্রতিষ্ঠান। এ ধরনের ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য সরকারি কোন অনুমোদন তাদের নেই বলে সমাজসেবা দফতর দাবি করেছে।
বুধবার, ২৫ এপ্রিল, ২০১২
সোমবার, ১৬ এপ্রিল, ২০১২
কুষ্টিয়ার জনসভায় হানিফ, ষড়যন্ত্র করে দেশের উন্নয়ন দাবিয়ে রাখা যাবেনা
আরিফ মেহমুদ ॥ বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর একান্ত বিশেষ সহকারী মাহাবুব-উল-আলম হানিফ বলেছেন, বিশ্বের দরবারে যখন এদেশ স্বমহিমায় মাথা উচু করে দাড়াতে সক্ষম হচ্ছে। বাঙালীর প্রাণের দাবী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্য যখন সম্পন্ন করতে যাচ্ছে সরকার, তখন দেশের বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্থ্য করতে এবং স্বাধীনতার বিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় মরিয়া হয়ে উছেঠে। স্বাধীনতার সূতিকাগার এই কুষ্টিয়ার মাটি থেকে বিরোধী দলের সেই সব নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলতে চাই, যতই ষড়যন্ত্র করুন না কেন, সরকার বাংলার জনগণকে সাথে নিয়ে তার অভিষ্ট লক্ষে পৌছাবেই। ষড়যন্ত্র করে দেশের উন্নযনকে দাবিয়ে রাখতে পারবেন না। স্বাধীনতার বিরোধী যুদ্ধাপরাধীদেরকে যতই রক্ষার চেষ্টা করুন বাংলার মাটিতেই তাদের বিচার সম্পন্ন করবে এ সরকার। সম্ভাবনাময়ী একটি সন্ত্রনালয়কে চক্রান্ত করে অর্থ কেলেঙ্কারীর দায় চাপিয়ে জনগণের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা সফল করতে দেয়া হবে না। রেলপথ মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের অর্থ কেলেংকারীর বিষয়ে বলেছেন, ইতোমধ্যে এ ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এর সাথে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। গতকাল সোমবার বিকেলে ভেড়ামারা পাইলট হাইস্কুল মাঠে উপজেলা আ’লীগ আয়োজিত সমুদ্র বিজয় উপলক্ষ্যে এক জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ভেড়ামারা উপজেলা আওয়ামীলীগের আহবায়ক আবু বক্কর সিদ্দীকের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাংসদ বিএম মোজাম্মেল হক, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের তথ্য ও গবেষনা বিষয়ক সম্পাদক আবজাল হোসেন, প্রমুখ। এতে স্থানীয়দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ভেড়াামরা পৌরসভার মেয়র হাজী শামিমুল ইসলাম ছানা, ধরমপুর ইউপি চেয়ারম্যান শাহাবুল আলম লালুৃ, বাহাদুরপুর ইউপি চেয়ারম্যান সোহেল রানা পবন, অধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাক রাজা, আবু হেনা মোস্তফা কামাল ও আ’লী নেতা আবু দাউদ। প্রধান অতিথি মাহাবুব-উল-আলম হানিফ দীর্ঘ সোয়া তিন বছর পর নিজ জন্মভূমি কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার কোন অনুষ্ঠানে যোগ দিলেন। জনসভার আগে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে মাহবুব-উল- আলম হানিফ লালন শাহ সেতু অতিক্রম করে ভেড়ামারায় পা রাখেন। সেখানে ভেড়ামারার প্রবেশ মুখে লালন শাহ সেতুর দক্ষিন প্রান্তে বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান ও ফকির লালন শাহের মুর্যাল উন্মোচন করেন। এসময় অন্যান্যদের মধ্যে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক বনমালি ভৌমিক, পুলিশ সুপার মফিজ উদ্দীন, কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের প্রশাসক জাহিদ হোসেন জাফর, ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ রাজিবুল ইসলাম, সহকারী কমিশনার (ভূমি) আজাদ তাকে স্বাগত জানান। এরপর তিনি দুপুর ১২টা ১৫ মিনিটের সময় ভেড়ামারা মডেল থানার নতুন ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন। দুপুরে মাহাবুব উল আলম হানিফ’র বাবা এবং মায়ের নামে প্রতিষ্ঠিত রহিমা আফছার নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন। প্রধান অতিথি মাহাবুব-উল-আলম হানিফ আরো বলেন,কুষ্টিয়া একটি অবহেলিত জেলা। স্বাধীনতার পর অনেক সরকারের পালা বদল হলেও কুষ্টিয়া ছিল অবহেলিত। আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর এ জেলার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবী পূরন হতে শুরু করেছে। বাস্তবায়ন হয়েছে কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজ, হরিপুর সংযোগ সেতু, কুষ্টিয়া হাইওয়ে, মডেল থানার নতুন ভবন সহ বহু দাবী। তিনি বলেন, ভিশন ২০২১ বাস্তবায়ন করতে হলে দলমর্তের উর্দ্ধে অবস্থান করে এক সাথে কাজ করতে হবে। দেশ কে বিশ্বের দরবারে মাথাউঁচু করে দাঁড় করাতে হবে। নিজেদের সম্পদের নির্ভরশীল হয়ে দেশকে পরিচালনা করতে হবে।
ফাস্ট স্যালুট, মুজিবনগরের সেই ১২ আনসারের মধ্যে বেঁচে আছে ৪জন
আরিফ মেহমুদ ॥ জীবনের মায়া ত্যাগ করে আর বুক ভরা আশা নিয়ে ১৯৭১’র এ দিনে মেহেরপুর মহাকুমার (বৌদ্যনাথতলা) মুজিবনগর আম্রকাননে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকারকে দূর্জয় সাহস নিয়ে ১২ জন আনসার গার্ড অব অনার প্রদান করলেও ইতোমধ্যেই নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে, অনাহারে-অর্ধাহারে ৮ জন নিরাশায় প্রস্থান করেছেন পরপারে। নিরাশার দোলা চেপে বেঁচে আছেন মাত্র ৪জন। সেই অকুতভয় ১২ জন আনসারের পরিবার পরিজন আজ ভালো নেই। তারা কোনমতে খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছেন। শাসক গোষ্টির হাত থেকে রক্তিম সুর্য্য ছিনিয়ে আনার আমরণ লড়াইয়ে যারা রণাঙ্গনে পিছপা না হয়ে অকুতভয় সৈনিকের মত নির্ভিক দায়িত্ব পালন করেছেন আজ তারা এক প্রকার নিরাশায় নিরবে চোখের জল ফেলছেন। স্বাধীনতার পর দেশের অনেক পরিবর্তনের সাথে ১৪ কোটি মানুষ স্বাধীনতার সুফল ভোগ করলেও তাদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয়নি আজো। মুজিবনগর অস্থায়ী সরকারের গার্ড অব অনার প্রদানকারী (ফাস্ট স্যালুট) সেই ১২ জন আনসার ও তাদের পরিবারের খোঁজ খবর নিতে গেলে এমন চিত্রই পরিলক্ষিত হয়েছে।
৭১-এর রনাঙ্গণের অকুতভয় সূর্য্য সৈনিক ১২ জন আনসার পরিবারের দিন চলে এখন অনাহারে-অর্ধহারে স্বাধীনতার ৪০ বছরেও তাদের খোঁজ রাখেনি কেউ। ১২ জন সূর্য্য সৈনিক আনসারদের মধ্যে থেকে ইতোমধ্যে নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে এক রকম বিনা চিকিৎসায় দিনের পর দিন ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যু বরণ করেছেন ৮ জন। ১৯৭০ সালের নির্বাচিত আওয়ামীলীগ সরকারকে স্বীকৃতি দেয়ার বিষয় নিয়ে ৭১-এর ১০ এপ্রিল কুষ্টিয়া জেলার চুয়াডাঙ্গায় এক সমাবেশে মিলিত হন তৎকালীন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। সেখানে সিদ্ধান্ত গৃহিত হয় অপেক্ষাকৃত নিরাপদ স্থান হিসাবে ১৭ এপ্রিল তৎকালীন মেহেরপুর মহাকুমার বৈদ্যনাথতলা ভবেরপাড়া (মুজিবনগর) আম্রকাননে স্বাধীন স্বার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকার আনুষ্ঠানিক ভাবে আত্ম প্রকাশ করবে এবং শপথ গ্রহন করবেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রস্তুতি। চারিদিকে স্বাধীনতা যুদ্ধের ডামাডোল। মা মাটি মানুষের মুক্তির জন্য বাংলার দামাল ছেলেরা শত্র“ সেনাদের বিরুদ্ধে লড়ে যাচ্ছে। দেশব্যাপী চলছে পাকসেনাদের বাংলার মানুষের উপর নির্মম অত্যাচার, অগ্নিসংযোগ, লুট-পাট, হত্যা ও গণধর্ষনের মত মানবতা বিরোধী অপরাধের কর্মকান্ড। এরই মধ্যে উপর মহল থেকে তৎকালীন মেহেরপুর মহাকুমার এসডিও তৌফিক এলাহী চৌধুরী ও মুক্তিযুদ্ধের ৮ নং সেক্টর কমান্ডার আবু ওসমান চৌধুরী’র কাছে নির্দেশ আসে অস্থায়ী সরকারের মন্ত্রী পরিষদের সদস্যদের বরণ করে নেয়ার। সেক্টর কমান্ডার আবু ওসমান চৌধুরী গার্ড অব অনার দেয়ার জন্য মেহেরপুরের পুলিশ, ইপিআর ও আনসারদের সাথে আলাপ করে। দেশের এই ভয়াবহ পস্থিতিতে পুলিশ ও ইপিআর গার্ড অব অনার প্রদানে অপারোগতা জানায়। সেদিন মা মাটি আর মানুষের মুক্তির কথা ভেবে একটি স্বাধীন দেশের স্বপ্নে স্বাধীনতার অকুতভয় সূর্য্য সৈনিক ১২ জন আনসার জীবনের মায়া ত্যাগ করে মন্ত্রী পরিষদকে গার্ড অব অনার প্রদানে রাজি হয়েছিলেন। তৎকালীন মেহেরপুরের পুলিশ অফিসার মাহবুবুর রহমানের (এসপি মাহবুব) নেতৃত্বে পিসি ইয়াদ আলী, আনসার সদস্য আজিমুদ্দিন শেখ, সিরাজুল ইসলাম, অস্থির মল্লিক, হামিদুল ইসলাম, সাহেব আলী, লিয়াকত আলী, নজরুল ইসলাম, ফকির মোহাম্মদ, মহিউদ্দিন, কেসমত আলী ও মফিজ উদ্দিন অস্থায়ী সরকারের মন্ত্রী পরিষদের সদস্যদের গার্ড অব অনার প্রদান করেন। দেশে ভয়াবহ অবস্থার মধ্যেও যারা নিজের জীবনকে বাজী রেখে ৭১-এর ১৭ এপ্রিল প্রথম সরকার প্রধানকে গার্ড অব অনার প্রদান করেছিলেন সেসব সূর্য্য সৈনিকরা কেমন আছে, কিভাবেই বা কাটছে তাদের জীবন-সংসার, দেখতে সরজমিন মুজিবনগরের ভবেরপাড়া গ্রামে পৌছালে দেখা যায় তাদের নানা দুর্দশার চিত্র। ৭১-এর ১৭ এপ্রিল’র পুরো দিন, পুরো পরিবেশটিকে যে অস্থির করে রেখেছিল, কথা হয় সে সময়ের তরুন সিরাজুল ইসলাম ও আজিমুদ্দিন শেখের সাথে। তারা জানান, যে উদ্দেশ্যে যুদ্ধে গিয়েছিলাম তা আজো পুরন হয়নি। মনে করেছিলাম মা, মাটির মানুষের জন্য যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করে সুখে থাকবো। কিন্তু যুদ্ধের পর কেউ কারো কোন খবর রাখেনি। আমরা এখন বৃদ্ধ হয়েছি, হাপানী ও অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত রোগী। চিকিৎসার জন্য কোন টাকা নেই। দুটো গরু বিক্রি করে সেই টাকা দিয়ে কিছু চিকিৎসা এবং খেয়ে পরে বেঁচে আছি। সরকার বদল হয় আর আমাদের অনেক কিছু দেবে বলে প্রতিশ্র“তি ও আশ্বাস দিলেও স্বাধীনতার ৪০ বছরে বাস্তবে কিছুই পাইনি। কথা হয় আরেক অকুতভয় সূর্য্য সৈনিক মৃত মফিজ উদ্দিনের স্ত্রী সকিনা বেগমের সাথে, তিনি জানান, স্বাধীনতার পর অভাবের টানা-টানি সংসারের কারনে ছেলে মেয়েদের লেখা পড়া করাতে পারেনি। সংসারে এতই অভাব ছিল যে, টাকার অভাবে নিজের বাড়ীর জমির খাজনা না দিতে পারায় জমি খাস হয়ে যায়। ২ ছেলে ও ১ মেয়ে রেখে তিনি ২০০৬ সালের ৪ অক্টোবর মৃত্যু বরণ করেন। বর্তমানে বড় ছেলের ভ্যান চালানো আয়ের টাকা দিয়ে সংসার চলে। সেদিনকার ঘটনার জন্য সে ১৯৯৫ সালে স্বাধীনতা পুরুস্কার হিসাবে রুপার একটি মেডেল পেয়েছিলেন। স্ত্রী সকিনা বেগম আক্ষেপ করে বলেন, যে মানুষটি সংসার ছেলে-মেয়ের কথা চিন্তা না করে জীবনের বাজী রেখে স্বাধীনতা যুদ্ধে গিয়েছিল। অথচ সেই যুদ্ধের পর টাকার অভাবে ঠিক মত সংসার চলাতে পারনি। এ জন্যই কি যুদ্ধ করেছিল? সরকারী অনুদান তেমন একটা পায়নি। তার মৃত্যুর পর পরিবারের লোকজন একটি দু’রুম বিশিষ্ট ঘর অল্প দিনে বুঝে পেয়েছেন। কাগজে কলমে ৫০ শতক খাস জমি বরাদ্দ পেলেও দখল পায়নি আজো। আজ সেই ভয়াবহ স্মৃতিময় ১৭ এপ্রিল। গার্ড অব অনার প্রদারকারী দলের আজিমুদ্দিন শেখ, সিরাজুল ইসলাম, হামিদুল ইসলাম ও লিয়াকত আলী বেঁচে থাকলেও আমাদের মাঝে বেঁচে নেই মহিউদ্দিন (মৃত্যু-১৯৮৬ সালের ২০ ডিসেম্বর) পিসি ইয়াদ আলী (মৃত্যু-১৯৯৩) কেসমত আলী (মৃত্যু-১৯৯৩ সালের ৭ নভেম্বর) নজরুল ইসলাম (মৃত্যু-২০০৪ সালের ২ ফেব্র“য়ারী) ফকির মোহাম্মদ (মৃত্যু-২০০৪ সালের ৯ জুন) মফিজ উদ্দিন(মৃত্যু-২০০৬ সালের ৪ অক্টোবর) সাহেব আলী (মৃত্যু-২০০৮ সালের ২৯ আগষ্ট) ও সে সময়ের অস্থির টগবগে যুবক অস্থির মল্লিক অনেকটাই অনাদরে ও বিনা চিকিৎসায় ২০১০ সালের ২৪ মার্চ মৃত্যু বরণ করেন। স্বাধীন স্বার্বভৌম দেশ পাওয়ার সুবাদে ও রাজনৈতিক পালা বদলের সাথে সাথে অনেকের ভাগ্যের চাকা ঘুরেছে ঠিকি কিন্তু রাজনৈতিক পালা বদলের এই খেলায় ও ক্ষমতাসীন দলের আদর্শের সাথে মত পার্থক্য অথবা পছন্দের না হওয়ায়,স্বাধীন স্বার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতিকে গার্ড অব অনার প্রদানকারী ১২ জন সূর্য্য সৈনিক আনসারের ভাগ্যের চাকা আজো ঘুরেনি। কেবল অনাদরে আর অবহেলায় দিন কাটছে তাদের বেঁচে থাকা ৪ জন সহ তাদের পরিবারের লোকজনের। স্বাধীনতার ৪০ বছরে তারা সরকারী অনুদান তেমন একটা পায়নি বললেই চলে। সরকার যায় সরকার আসে হয়তোবা কিছু অনুদান পাবো এ ধরনের আশায় বুক বেঁধে দিনের পর দিন কত যে অপেক্ষায় থেকেছে তারা তার কোন হিসেব নেই আমাদের সভ্য দেশের ইতহাসে। যারা জীবনের মায়া ত্যাগ করে মা,মাটির মানুষের মুক্তির জন্য যুদ্ধ করে এ দেশকে স্বাধীন করেছিল, জাতি তাদের অবদানের কথা কোন দিন ভূলতে পারবেনা। শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে তাদের। স্বাধীনতা যুদ্ধে এই ১২ জন সূর্য্য সৈনিক আনসার যুদ্ধ করলেও বিনিময়ে নিজেদের অবদানের জন্য স্বাধীনতার ৪০ বছরেও পায়নি তেমন একটা স্বীকৃতি। আজকের দিনে তাদের ও রেখে যাওয়া পরিবারের দাবী,অন্তত মহান স্বাধীনতায় তাদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে যথাযোগ্য মর্যাদা দেয়া হোক। ব্যবস্থা করা হোক তাদের সু-চিকিৎসা এবং বাড়ানো হোক তাদের মাসিক সম্মানী ভাতা। বেঁচে থাকা ৪ সূর্য সৈনিক আনসার সদস্যরা দাবী জানিয়েছে, তাদের মৃত্যুর পর অন্তত তাদের পরিবারকে সরকারী সাহায্য সহযোগীতা করলে আত্মা প্রশান্তি পাবে। এই ক্ষুদ্র প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছে সেদিনের ১২ সৈনিকের পরিবার ও বেঁচে থাকা ৪ সূর্য সৈনিক আনসার। আজকের এই দিনে তাদের সে আশা যেন পুরণ হয় সে প্রত্যাশাই করেছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে।
৭১-এর রনাঙ্গণের অকুতভয় সূর্য্য সৈনিক ১২ জন আনসার পরিবারের দিন চলে এখন অনাহারে-অর্ধহারে স্বাধীনতার ৪০ বছরেও তাদের খোঁজ রাখেনি কেউ। ১২ জন সূর্য্য সৈনিক আনসারদের মধ্যে থেকে ইতোমধ্যে নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে এক রকম বিনা চিকিৎসায় দিনের পর দিন ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যু বরণ করেছেন ৮ জন। ১৯৭০ সালের নির্বাচিত আওয়ামীলীগ সরকারকে স্বীকৃতি দেয়ার বিষয় নিয়ে ৭১-এর ১০ এপ্রিল কুষ্টিয়া জেলার চুয়াডাঙ্গায় এক সমাবেশে মিলিত হন তৎকালীন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। সেখানে সিদ্ধান্ত গৃহিত হয় অপেক্ষাকৃত নিরাপদ স্থান হিসাবে ১৭ এপ্রিল তৎকালীন মেহেরপুর মহাকুমার বৈদ্যনাথতলা ভবেরপাড়া (মুজিবনগর) আম্রকাননে স্বাধীন স্বার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকার আনুষ্ঠানিক ভাবে আত্ম প্রকাশ করবে এবং শপথ গ্রহন করবেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রস্তুতি। চারিদিকে স্বাধীনতা যুদ্ধের ডামাডোল। মা মাটি মানুষের মুক্তির জন্য বাংলার দামাল ছেলেরা শত্র“ সেনাদের বিরুদ্ধে লড়ে যাচ্ছে। দেশব্যাপী চলছে পাকসেনাদের বাংলার মানুষের উপর নির্মম অত্যাচার, অগ্নিসংযোগ, লুট-পাট, হত্যা ও গণধর্ষনের মত মানবতা বিরোধী অপরাধের কর্মকান্ড। এরই মধ্যে উপর মহল থেকে তৎকালীন মেহেরপুর মহাকুমার এসডিও তৌফিক এলাহী চৌধুরী ও মুক্তিযুদ্ধের ৮ নং সেক্টর কমান্ডার আবু ওসমান চৌধুরী’র কাছে নির্দেশ আসে অস্থায়ী সরকারের মন্ত্রী পরিষদের সদস্যদের বরণ করে নেয়ার। সেক্টর কমান্ডার আবু ওসমান চৌধুরী গার্ড অব অনার দেয়ার জন্য মেহেরপুরের পুলিশ, ইপিআর ও আনসারদের সাথে আলাপ করে। দেশের এই ভয়াবহ পস্থিতিতে পুলিশ ও ইপিআর গার্ড অব অনার প্রদানে অপারোগতা জানায়। সেদিন মা মাটি আর মানুষের মুক্তির কথা ভেবে একটি স্বাধীন দেশের স্বপ্নে স্বাধীনতার অকুতভয় সূর্য্য সৈনিক ১২ জন আনসার জীবনের মায়া ত্যাগ করে মন্ত্রী পরিষদকে গার্ড অব অনার প্রদানে রাজি হয়েছিলেন। তৎকালীন মেহেরপুরের পুলিশ অফিসার মাহবুবুর রহমানের (এসপি মাহবুব) নেতৃত্বে পিসি ইয়াদ আলী, আনসার সদস্য আজিমুদ্দিন শেখ, সিরাজুল ইসলাম, অস্থির মল্লিক, হামিদুল ইসলাম, সাহেব আলী, লিয়াকত আলী, নজরুল ইসলাম, ফকির মোহাম্মদ, মহিউদ্দিন, কেসমত আলী ও মফিজ উদ্দিন অস্থায়ী সরকারের মন্ত্রী পরিষদের সদস্যদের গার্ড অব অনার প্রদান করেন। দেশে ভয়াবহ অবস্থার মধ্যেও যারা নিজের জীবনকে বাজী রেখে ৭১-এর ১৭ এপ্রিল প্রথম সরকার প্রধানকে গার্ড অব অনার প্রদান করেছিলেন সেসব সূর্য্য সৈনিকরা কেমন আছে, কিভাবেই বা কাটছে তাদের জীবন-সংসার, দেখতে সরজমিন মুজিবনগরের ভবেরপাড়া গ্রামে পৌছালে দেখা যায় তাদের নানা দুর্দশার চিত্র। ৭১-এর ১৭ এপ্রিল’র পুরো দিন, পুরো পরিবেশটিকে যে অস্থির করে রেখেছিল, কথা হয় সে সময়ের তরুন সিরাজুল ইসলাম ও আজিমুদ্দিন শেখের সাথে। তারা জানান, যে উদ্দেশ্যে যুদ্ধে গিয়েছিলাম তা আজো পুরন হয়নি। মনে করেছিলাম মা, মাটির মানুষের জন্য যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করে সুখে থাকবো। কিন্তু যুদ্ধের পর কেউ কারো কোন খবর রাখেনি। আমরা এখন বৃদ্ধ হয়েছি, হাপানী ও অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত রোগী। চিকিৎসার জন্য কোন টাকা নেই। দুটো গরু বিক্রি করে সেই টাকা দিয়ে কিছু চিকিৎসা এবং খেয়ে পরে বেঁচে আছি। সরকার বদল হয় আর আমাদের অনেক কিছু দেবে বলে প্রতিশ্র“তি ও আশ্বাস দিলেও স্বাধীনতার ৪০ বছরে বাস্তবে কিছুই পাইনি। কথা হয় আরেক অকুতভয় সূর্য্য সৈনিক মৃত মফিজ উদ্দিনের স্ত্রী সকিনা বেগমের সাথে, তিনি জানান, স্বাধীনতার পর অভাবের টানা-টানি সংসারের কারনে ছেলে মেয়েদের লেখা পড়া করাতে পারেনি। সংসারে এতই অভাব ছিল যে, টাকার অভাবে নিজের বাড়ীর জমির খাজনা না দিতে পারায় জমি খাস হয়ে যায়। ২ ছেলে ও ১ মেয়ে রেখে তিনি ২০০৬ সালের ৪ অক্টোবর মৃত্যু বরণ করেন। বর্তমানে বড় ছেলের ভ্যান চালানো আয়ের টাকা দিয়ে সংসার চলে। সেদিনকার ঘটনার জন্য সে ১৯৯৫ সালে স্বাধীনতা পুরুস্কার হিসাবে রুপার একটি মেডেল পেয়েছিলেন। স্ত্রী সকিনা বেগম আক্ষেপ করে বলেন, যে মানুষটি সংসার ছেলে-মেয়ের কথা চিন্তা না করে জীবনের বাজী রেখে স্বাধীনতা যুদ্ধে গিয়েছিল। অথচ সেই যুদ্ধের পর টাকার অভাবে ঠিক মত সংসার চলাতে পারনি। এ জন্যই কি যুদ্ধ করেছিল? সরকারী অনুদান তেমন একটা পায়নি। তার মৃত্যুর পর পরিবারের লোকজন একটি দু’রুম বিশিষ্ট ঘর অল্প দিনে বুঝে পেয়েছেন। কাগজে কলমে ৫০ শতক খাস জমি বরাদ্দ পেলেও দখল পায়নি আজো। আজ সেই ভয়াবহ স্মৃতিময় ১৭ এপ্রিল। গার্ড অব অনার প্রদারকারী দলের আজিমুদ্দিন শেখ, সিরাজুল ইসলাম, হামিদুল ইসলাম ও লিয়াকত আলী বেঁচে থাকলেও আমাদের মাঝে বেঁচে নেই মহিউদ্দিন (মৃত্যু-১৯৮৬ সালের ২০ ডিসেম্বর) পিসি ইয়াদ আলী (মৃত্যু-১৯৯৩) কেসমত আলী (মৃত্যু-১৯৯৩ সালের ৭ নভেম্বর) নজরুল ইসলাম (মৃত্যু-২০০৪ সালের ২ ফেব্র“য়ারী) ফকির মোহাম্মদ (মৃত্যু-২০০৪ সালের ৯ জুন) মফিজ উদ্দিন(মৃত্যু-২০০৬ সালের ৪ অক্টোবর) সাহেব আলী (মৃত্যু-২০০৮ সালের ২৯ আগষ্ট) ও সে সময়ের অস্থির টগবগে যুবক অস্থির মল্লিক অনেকটাই অনাদরে ও বিনা চিকিৎসায় ২০১০ সালের ২৪ মার্চ মৃত্যু বরণ করেন। স্বাধীন স্বার্বভৌম দেশ পাওয়ার সুবাদে ও রাজনৈতিক পালা বদলের সাথে সাথে অনেকের ভাগ্যের চাকা ঘুরেছে ঠিকি কিন্তু রাজনৈতিক পালা বদলের এই খেলায় ও ক্ষমতাসীন দলের আদর্শের সাথে মত পার্থক্য অথবা পছন্দের না হওয়ায়,স্বাধীন স্বার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতিকে গার্ড অব অনার প্রদানকারী ১২ জন সূর্য্য সৈনিক আনসারের ভাগ্যের চাকা আজো ঘুরেনি। কেবল অনাদরে আর অবহেলায় দিন কাটছে তাদের বেঁচে থাকা ৪ জন সহ তাদের পরিবারের লোকজনের। স্বাধীনতার ৪০ বছরে তারা সরকারী অনুদান তেমন একটা পায়নি বললেই চলে। সরকার যায় সরকার আসে হয়তোবা কিছু অনুদান পাবো এ ধরনের আশায় বুক বেঁধে দিনের পর দিন কত যে অপেক্ষায় থেকেছে তারা তার কোন হিসেব নেই আমাদের সভ্য দেশের ইতহাসে। যারা জীবনের মায়া ত্যাগ করে মা,মাটির মানুষের মুক্তির জন্য যুদ্ধ করে এ দেশকে স্বাধীন করেছিল, জাতি তাদের অবদানের কথা কোন দিন ভূলতে পারবেনা। শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে তাদের। স্বাধীনতা যুদ্ধে এই ১২ জন সূর্য্য সৈনিক আনসার যুদ্ধ করলেও বিনিময়ে নিজেদের অবদানের জন্য স্বাধীনতার ৪০ বছরেও পায়নি তেমন একটা স্বীকৃতি। আজকের দিনে তাদের ও রেখে যাওয়া পরিবারের দাবী,অন্তত মহান স্বাধীনতায় তাদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে যথাযোগ্য মর্যাদা দেয়া হোক। ব্যবস্থা করা হোক তাদের সু-চিকিৎসা এবং বাড়ানো হোক তাদের মাসিক সম্মানী ভাতা। বেঁচে থাকা ৪ সূর্য সৈনিক আনসার সদস্যরা দাবী জানিয়েছে, তাদের মৃত্যুর পর অন্তত তাদের পরিবারকে সরকারী সাহায্য সহযোগীতা করলে আত্মা প্রশান্তি পাবে। এই ক্ষুদ্র প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছে সেদিনের ১২ সৈনিকের পরিবার ও বেঁচে থাকা ৪ সূর্য সৈনিক আনসার। আজকের এই দিনে তাদের সে আশা যেন পুরণ হয় সে প্রত্যাশাই করেছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে।
বুধবার, ১১ এপ্রিল, ২০১২
স্থাপত্য নিদর্শনের এক অপুর্ব সৃষ্টি কুষ্টিয়ার শিলাইদহ শ্রী শ্রী গোপীনাথ মন্দির
আরিফ মেহমুদ ॥ নির্মাণ আর স্থাপত্য নির্দশনের এক অপুর্ব সৃষ্টি কুষ্টিয়া কুমারখালী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শ্রী শ্রী গোপীনাথ দেব বিগ্রহ মন্দিরটি আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। সম্পত্তি দখল করতে ভূমি দশ্যু কর্তৃক সেক্রেটারীকে অপহরণের চেষ্টা করা হয়েছে। চেষ্টা ব্যর্থ হলে মন্দির কমিটির সেক্রেটারী শংকর কুমার বিশ্বাসকে বেদম প্রহার করে মন্দিরের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় কুমারখালী থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলা নম্বর ১৯১। মামলার এজাহার সূত্রে জানাগেছে, মন্দিরের সম্পত্তি অবৈধভাবে ভোগদখল করার উদ্দেশ্যে ওই এলাকার জালাল (২৬), বাবু (২৬), জব্বার মন্ডল (৫০), নওয়াব আলী (৪৫)সহ বেশ কয়েকজন মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক শংকর কুমার বিশ্বাসকে অস্ত্রের মুখে মটরসাইকেলে করে তুলে নিয়ে যেতে চায়। ধস্তাধস্তি আর চিৎকারে লোকজন ছুটে আসলে অপহরণকারীরা পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ কুষ্টিয়া জেলা শাখার সভাপতি ও শ্রী শ্রী গোপীনাথ দেব বিগ্রহ মন্দির কমিটির সহ-সভাপতি এ্যাডঃ অনুপ কুমার নন্দী। তিনি অবিলম্বে আসামীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টিান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান। শিলাইদহ কুঠিবাড়ি থেকে মাত্র এক কিঃ মিঃ পুর্ব-দক্ষিণে এক ছায়া ঢাকা পাখি ডাকা পরিবেশে অবস্থিত এ মন্দিরটি। প্রায় ৫শ বছর পুর্বে নির্মিত এ মন্দিরটি নিয়ে এলাকায় নানা কল্প কাহিনী প্রচলিত রয়েছে।
সরজমিনে কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের খোরশেদপুর গ্রামে অবস্থিত গোপীনাথ মন্দিরে যেয়ে দেখা যায় নানা চিত্র। এর স্থাপত্য কারুকার্য কাছে যেয়ে না দেখলে বোঝার উপায় নেই এর শিল্পনৈপূর্ণ কত মাধুর্যময়। পুরাতন ফাটকের কাছে যেয়ে দেখা যায় চুন-সুড়কির গাঁথুনিতে নির্মিত এ ৫শ বছরের ভবনটি। এর স্থাপত্য-নির্দশন দেখে মনে হয় এটি মুঘল সম্রাটের আমলে নির্মিত। এর গায়ে বিভিন্ন পশু-পাখি, ফুলসহ বিভিন্ন ডিজাইনের কারুকার্য। এর মধ্যে হাতি, ঘোড়া, গরু, পাখি, গোল আকৃতির বিভিন্ন ডিজাইনের ফুলসহ নানা কারুকার্য দৃষ্টি কাড়ে। এই প্রাসাদ সম বাড়িটির ভেতরে প্রবেশ করে কয়েক মিনিটের মধ্যে পুরো ঘুরে আসা সম্ভব নয়। লাগবে বেশ সময়। ফাটকের ভেতরে প্রবেশ করতেই বামে কয়েকটি ছাদবিহীন পরিত্যক্ত ঘর নজরে পড়লো। মূল ভবনের প্রবেশদ্বারেই রয়েছে একটি বিশাল মঠ। অন্ধকার রাতে দুর থেকে এটি দেখলে মনে হয় এ যেন কোন দানব। প্রধান ফাটক দিয়ে প্রবেশ শেষে ডান পাশে ঘুরে ডান দিকে রয়েছে একটি অতিথিশালা। এর সামনে নারকেল গাছ, তাল গাছ, জবা ফুল গাছ ও ডালিম গাছ রয়েছে। অতিথি শালাটি ৬ রুম বিশিষ্ট। ১ টি বড় হল রুম ও ৫ টি বেড রুম রয়েছে এ অতিথি শালায়। বর্তমানে এ মন্দিরের দেখা শুনাই নিয়োজিত পুরোহিত দিপক চক্রবর্তী ও তার পরিবারসহ হল রুমে থাকেন। প্রধান গেট দিয়ে প্রবেশ করে এর সামনে রয়েছে সীতারামের মঠটি।
ভবনের অধিকাংশ জায়গায় ইটগুলির কিছু কিছু ক্ষয় হয়ে গেছে। মঠের উপরে নিম গাছসহ বিভিন্ন গাছ জন্মে গেছে। মঠের পূর্বদিকে মঠে প্রবেশের গেট রয়েছে। মঠের প্রবেশ মুখটি প্রায় ভেঙ্গে পড়ার মত হয়েছে। মঠের ভিতরে প্রবেশ করে দেখা যায় মঠের নিচে কিছু পুরাতন ইট পড়ে আছে। পূর্ব-উত্তর দিকে মঠের সাথে বিগ্রহ রাখার ছোট প্রায় প্রদীপ আকৃতির স্থান রয়েছে। মঠের ভিতরে উপরের দিকে মিনারের দিকে তাকালে মনে হচ্ছে নিচের দিকে ইট খুলে পড়তে পারে। সীতারাম রায়ের মঠটি অযতœ আর অবহেলার কারণে প্রায় ধ্বংসের পথে। প্রাচীন এ মঠটি অত্যন্ত জরাজীর্ন অবস্থায় রয়েছে। এর চুড়া, কোণ, সম্মুখ ভাগ ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ। কয়েক যুগ ধরে পরিত্যক্ত থাকায় এর উপরিভাগ গাছ, লতাপাতায় আচ্ছাদিত হয়ে এবং মানুষের উপদ্রুপে ধবংস অবস্থায় উপণিত হয়েছে। শিলাইদহের মন্দিরটির প্রায় পশ্চিম দিকে গোপীনাথ দেব বিগ্রহর মন্দির। এ মন্দিরে প্রবেশের মাঝখানে ফুলের দৃশ্য। পাশে ২টা পরীর ভাষ্কর্য। মাঝে লোহার গ্রীল। গ্রীল পেরুলে বাম পাশে কাঠের রথ রয়েছে। আর ডান পাশে রয়েছে কাঠের সিংহাসন। ভিতরে রয়েছে গোপীনাথের মূল বিগ্রহটি। এর পশ্চিম পাশে বেশ উচু ঢিপ রয়েছে। এখানকার বাসিন্দা করুণা রাণী অধিকারী জানায়, এখানে দৌল পূজায় আবির খেলা হত। আবির খেলার মন্দিরটি মাটির তলায় গেড়ে গেছে। মাঝ খানে রয়েছে নাট মন্দির। এটি অবশ্য ঘোল ঢালা মন্দির নামে পরিচিত। আষাঢ়ের মাসে এখানে এ পুজাকে কেন্দ্র করে মেলা বসে। শত শত নারী-পুরুষেরা ঘট ভর্তি ঘোল আর নানা রকম প্রসাদ নিয়ে হাজির হয় এখানে। মন্দিরের প্রায় পূর্ব দিকে রয়েছে দূর্গা মন্দির। ১০ সেপ্টেম্বর ২০০৪ সালে তৎকালীন কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক সৈয়দ আহসানুল হক শ্রী শ্রী দুর্গা মাতার মন্দিরের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। এ ভবনে দূর্গা মন্দিরসহ কালী মন্দির, শীব লিঙ্গও রয়েছে।
মূল মন্দিরের বাহিরে পশ্চিম দিকে রয়েছে শ্রী শ্রী গোপীনাথ দেবের স্নান বেদী। পাশে শিলাইদহ প্রতীমা সরকারী বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয়। স্নান বেদীতে বিগ্রহ রেখে ঘোল ঢালা হয়। এ বেদীতে হাতির শুর’র ভাস্কর্য্য রয়েছে। উপরে মাঝখানে বিগ্রহ রেখে চারপাশে ঘুরে ঘোল ঢালা হয়। শিলাইদহের গোপীনাথ মন্দির নিয়ে এলাকায় অনেক কিংবদন্তী রয়েছে। এলাকায় প্রচলিত রয়েছে, খোরশেদ পুরের তাঁতী কল্যাণী রায় একদিন স্বপ্নে দেখতে পান, তার বাড়ির আঙ্গিনায় শ্রী কৃষ্ণ এসে বাঁশি বাজাচ্ছেন। হটাৎ তার ঘুম ভেঙ্গে যায়। পরদিন সকালে এ কথা তার মাকে বলে। মা তাকে পরামর্শ দেন এই কথা বলে, ভগবান শ্রী কৃষ্ণ তোমার কল্যাণ চায়। তুমি তার জন্য বাড়ির আঙ্গিনায় একটি মন্দির নির্মাণ কর। সে কথা শুনে তিনি বাড়ির আঙ্গিনায় কল্যাণ চন্দ্র রায় বাড়ির আঙ্গিনায় একটি মন্দির নির্মাণ করেন নাম রাখেন গোপীনাথ মন্দির। এ প্রসঙ্গে বোধদয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক এ্যাডঃ লালিম হক জানায়, কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের খোরশেদপুর গ্রাম। খোরসেদ-উল-মূলক নামে এক পীরদরবেশের নাম থেকে এই স্থানের নামকরণ করা হয়। এখানে আছে এই পীরের আস্তানা ও মাজার। মাজারের পাশে নাটোরের রাণী ভবানী খনিত জলাশয়। এখানকার হাটের কাছে দক্ষিণ দিকে প্রাচীর বেষ্টিত অঙ্গনে একটি পোড়ামাটির ভাস্কর্য মন্ডিত বাংলা চালারীতির চারচালা মন্দির এখন ভগ্ন, বিধ্বস্ত ও পরিত্যক্ত। মন্দিরটির আকার দৈর্ঘে-প্রস্থে ২০ ফুট ও উচ্চতায় প্রায় ৩০ ফুট। লালিম হক আরও জানায়, প্রবেশ দ্বারের উপরে বাঁকানো কার্ণিশের নিচে দুই সারিতে ও দুই পাশে দুই সারিতে মোট ৬২টি কুলুঙ্গিতে পোড়ামাটির মূর্তি-ভাস্কর্য ছিল, যার অধিকাংশই কুষ্ণলীলা বিষয়ক। এ ছাড়া, তিন দিকে নানা অলঙ্করণ। মূর্তি-ভাস্কর্য অধিকাংশই বিনষ্ট। মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত ছিল গোপীনাথ বিগ্রহ। এ মন্দিরটি বিধ্বস্ত হলে পাশেই পাঁচটি ফুলকাটা খিলানের দুটি সারি সংযুক্ত প্রশস্ত পঙ্খ-অলঙ্কত দালান মন্দির নাটোরের রাণী ভবানী কর্তৃক নির্মিত হয়, সেখানেই গোপীনাথ বিগ্রহ ছিলেন। ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতাযুদ্ধকালে পাক-সেনারা নাকি বিগ্রহটিকে ধবংস করে।
এদিকে আরও জানাগেছে, রাণী ভবানী এ সময় কুষ্টিয়া অঞ্চলে বেশকিছু মন্দির ও পুকুর খনন করে। শিলাইদহ গোপীনাথ মন্দির এর মধ্যে অন্যতম। জানাগেছে পরবর্তীতে বিক্রমপুরের ভাগ্যকুলের মান্ডু জমিদার মন্দিরটি ক্রয় করেন। এরপর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দাদা প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর জমিদারী কেনার কারণে মন্দিরের মালিকানা লাভ করে। তারপর সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গোপীনাথ বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ করেন। জানাগেছে, ঠাকুর বাড়ি জমিদারী বিলুপ্তির পর কালী কৃষ্ণ অধিকারী মন্দিরটির দেখাশোনা করে।
তবে ৫শ বছরের এই ঐতিহ্যবাহী গোপীনাথ মন্দিরটিতে শুধু প্রাচীন বাঙ্গালী কৃষ্টি, সংস্কৃতিই বহন করে না। এর স্থাপত্য-নিদর্শনও মনে করিয়ে দেয় আমাদের হাজার বছরের বাঙ্গালী ঐতিহ্য। এটি সংস্কার করে যথাযথ ভাবে সংরক্ষিত করা খুবই জরুরী। তবে ভূমি দশ্যূসহ নানা কারণে মন্দিরের সম্পত্তি আজ হুমকির সম্মুখীন। এব্যাপারে প্রশাসনের পক্ষে পদক্ষেপ নেয়া জরুরী। নয়লে এ ঐতিহ্যবাহী মন্দিরটি বিলুপ্তি হওয়ার আশংকা রয়েছে।
সরজমিনে কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের খোরশেদপুর গ্রামে অবস্থিত গোপীনাথ মন্দিরে যেয়ে দেখা যায় নানা চিত্র। এর স্থাপত্য কারুকার্য কাছে যেয়ে না দেখলে বোঝার উপায় নেই এর শিল্পনৈপূর্ণ কত মাধুর্যময়। পুরাতন ফাটকের কাছে যেয়ে দেখা যায় চুন-সুড়কির গাঁথুনিতে নির্মিত এ ৫শ বছরের ভবনটি। এর স্থাপত্য-নির্দশন দেখে মনে হয় এটি মুঘল সম্রাটের আমলে নির্মিত। এর গায়ে বিভিন্ন পশু-পাখি, ফুলসহ বিভিন্ন ডিজাইনের কারুকার্য। এর মধ্যে হাতি, ঘোড়া, গরু, পাখি, গোল আকৃতির বিভিন্ন ডিজাইনের ফুলসহ নানা কারুকার্য দৃষ্টি কাড়ে। এই প্রাসাদ সম বাড়িটির ভেতরে প্রবেশ করে কয়েক মিনিটের মধ্যে পুরো ঘুরে আসা সম্ভব নয়। লাগবে বেশ সময়। ফাটকের ভেতরে প্রবেশ করতেই বামে কয়েকটি ছাদবিহীন পরিত্যক্ত ঘর নজরে পড়লো। মূল ভবনের প্রবেশদ্বারেই রয়েছে একটি বিশাল মঠ। অন্ধকার রাতে দুর থেকে এটি দেখলে মনে হয় এ যেন কোন দানব। প্রধান ফাটক দিয়ে প্রবেশ শেষে ডান পাশে ঘুরে ডান দিকে রয়েছে একটি অতিথিশালা। এর সামনে নারকেল গাছ, তাল গাছ, জবা ফুল গাছ ও ডালিম গাছ রয়েছে। অতিথি শালাটি ৬ রুম বিশিষ্ট। ১ টি বড় হল রুম ও ৫ টি বেড রুম রয়েছে এ অতিথি শালায়। বর্তমানে এ মন্দিরের দেখা শুনাই নিয়োজিত পুরোহিত দিপক চক্রবর্তী ও তার পরিবারসহ হল রুমে থাকেন। প্রধান গেট দিয়ে প্রবেশ করে এর সামনে রয়েছে সীতারামের মঠটি।
ভবনের অধিকাংশ জায়গায় ইটগুলির কিছু কিছু ক্ষয় হয়ে গেছে। মঠের উপরে নিম গাছসহ বিভিন্ন গাছ জন্মে গেছে। মঠের পূর্বদিকে মঠে প্রবেশের গেট রয়েছে। মঠের প্রবেশ মুখটি প্রায় ভেঙ্গে পড়ার মত হয়েছে। মঠের ভিতরে প্রবেশ করে দেখা যায় মঠের নিচে কিছু পুরাতন ইট পড়ে আছে। পূর্ব-উত্তর দিকে মঠের সাথে বিগ্রহ রাখার ছোট প্রায় প্রদীপ আকৃতির স্থান রয়েছে। মঠের ভিতরে উপরের দিকে মিনারের দিকে তাকালে মনে হচ্ছে নিচের দিকে ইট খুলে পড়তে পারে। সীতারাম রায়ের মঠটি অযতœ আর অবহেলার কারণে প্রায় ধ্বংসের পথে। প্রাচীন এ মঠটি অত্যন্ত জরাজীর্ন অবস্থায় রয়েছে। এর চুড়া, কোণ, সম্মুখ ভাগ ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ। কয়েক যুগ ধরে পরিত্যক্ত থাকায় এর উপরিভাগ গাছ, লতাপাতায় আচ্ছাদিত হয়ে এবং মানুষের উপদ্রুপে ধবংস অবস্থায় উপণিত হয়েছে। শিলাইদহের মন্দিরটির প্রায় পশ্চিম দিকে গোপীনাথ দেব বিগ্রহর মন্দির। এ মন্দিরে প্রবেশের মাঝখানে ফুলের দৃশ্য। পাশে ২টা পরীর ভাষ্কর্য। মাঝে লোহার গ্রীল। গ্রীল পেরুলে বাম পাশে কাঠের রথ রয়েছে। আর ডান পাশে রয়েছে কাঠের সিংহাসন। ভিতরে রয়েছে গোপীনাথের মূল বিগ্রহটি। এর পশ্চিম পাশে বেশ উচু ঢিপ রয়েছে। এখানকার বাসিন্দা করুণা রাণী অধিকারী জানায়, এখানে দৌল পূজায় আবির খেলা হত। আবির খেলার মন্দিরটি মাটির তলায় গেড়ে গেছে। মাঝ খানে রয়েছে নাট মন্দির। এটি অবশ্য ঘোল ঢালা মন্দির নামে পরিচিত। আষাঢ়ের মাসে এখানে এ পুজাকে কেন্দ্র করে মেলা বসে। শত শত নারী-পুরুষেরা ঘট ভর্তি ঘোল আর নানা রকম প্রসাদ নিয়ে হাজির হয় এখানে। মন্দিরের প্রায় পূর্ব দিকে রয়েছে দূর্গা মন্দির। ১০ সেপ্টেম্বর ২০০৪ সালে তৎকালীন কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক সৈয়দ আহসানুল হক শ্রী শ্রী দুর্গা মাতার মন্দিরের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। এ ভবনে দূর্গা মন্দিরসহ কালী মন্দির, শীব লিঙ্গও রয়েছে।
মূল মন্দিরের বাহিরে পশ্চিম দিকে রয়েছে শ্রী শ্রী গোপীনাথ দেবের স্নান বেদী। পাশে শিলাইদহ প্রতীমা সরকারী বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয়। স্নান বেদীতে বিগ্রহ রেখে ঘোল ঢালা হয়। এ বেদীতে হাতির শুর’র ভাস্কর্য্য রয়েছে। উপরে মাঝখানে বিগ্রহ রেখে চারপাশে ঘুরে ঘোল ঢালা হয়। শিলাইদহের গোপীনাথ মন্দির নিয়ে এলাকায় অনেক কিংবদন্তী রয়েছে। এলাকায় প্রচলিত রয়েছে, খোরশেদ পুরের তাঁতী কল্যাণী রায় একদিন স্বপ্নে দেখতে পান, তার বাড়ির আঙ্গিনায় শ্রী কৃষ্ণ এসে বাঁশি বাজাচ্ছেন। হটাৎ তার ঘুম ভেঙ্গে যায়। পরদিন সকালে এ কথা তার মাকে বলে। মা তাকে পরামর্শ দেন এই কথা বলে, ভগবান শ্রী কৃষ্ণ তোমার কল্যাণ চায়। তুমি তার জন্য বাড়ির আঙ্গিনায় একটি মন্দির নির্মাণ কর। সে কথা শুনে তিনি বাড়ির আঙ্গিনায় কল্যাণ চন্দ্র রায় বাড়ির আঙ্গিনায় একটি মন্দির নির্মাণ করেন নাম রাখেন গোপীনাথ মন্দির। এ প্রসঙ্গে বোধদয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক এ্যাডঃ লালিম হক জানায়, কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের খোরশেদপুর গ্রাম। খোরসেদ-উল-মূলক নামে এক পীরদরবেশের নাম থেকে এই স্থানের নামকরণ করা হয়। এখানে আছে এই পীরের আস্তানা ও মাজার। মাজারের পাশে নাটোরের রাণী ভবানী খনিত জলাশয়। এখানকার হাটের কাছে দক্ষিণ দিকে প্রাচীর বেষ্টিত অঙ্গনে একটি পোড়ামাটির ভাস্কর্য মন্ডিত বাংলা চালারীতির চারচালা মন্দির এখন ভগ্ন, বিধ্বস্ত ও পরিত্যক্ত। মন্দিরটির আকার দৈর্ঘে-প্রস্থে ২০ ফুট ও উচ্চতায় প্রায় ৩০ ফুট। লালিম হক আরও জানায়, প্রবেশ দ্বারের উপরে বাঁকানো কার্ণিশের নিচে দুই সারিতে ও দুই পাশে দুই সারিতে মোট ৬২টি কুলুঙ্গিতে পোড়ামাটির মূর্তি-ভাস্কর্য ছিল, যার অধিকাংশই কুষ্ণলীলা বিষয়ক। এ ছাড়া, তিন দিকে নানা অলঙ্করণ। মূর্তি-ভাস্কর্য অধিকাংশই বিনষ্ট। মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত ছিল গোপীনাথ বিগ্রহ। এ মন্দিরটি বিধ্বস্ত হলে পাশেই পাঁচটি ফুলকাটা খিলানের দুটি সারি সংযুক্ত প্রশস্ত পঙ্খ-অলঙ্কত দালান মন্দির নাটোরের রাণী ভবানী কর্তৃক নির্মিত হয়, সেখানেই গোপীনাথ বিগ্রহ ছিলেন। ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতাযুদ্ধকালে পাক-সেনারা নাকি বিগ্রহটিকে ধবংস করে।
এদিকে আরও জানাগেছে, রাণী ভবানী এ সময় কুষ্টিয়া অঞ্চলে বেশকিছু মন্দির ও পুকুর খনন করে। শিলাইদহ গোপীনাথ মন্দির এর মধ্যে অন্যতম। জানাগেছে পরবর্তীতে বিক্রমপুরের ভাগ্যকুলের মান্ডু জমিদার মন্দিরটি ক্রয় করেন। এরপর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দাদা প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর জমিদারী কেনার কারণে মন্দিরের মালিকানা লাভ করে। তারপর সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গোপীনাথ বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ করেন। জানাগেছে, ঠাকুর বাড়ি জমিদারী বিলুপ্তির পর কালী কৃষ্ণ অধিকারী মন্দিরটির দেখাশোনা করে।
তবে ৫শ বছরের এই ঐতিহ্যবাহী গোপীনাথ মন্দিরটিতে শুধু প্রাচীন বাঙ্গালী কৃষ্টি, সংস্কৃতিই বহন করে না। এর স্থাপত্য-নিদর্শনও মনে করিয়ে দেয় আমাদের হাজার বছরের বাঙ্গালী ঐতিহ্য। এটি সংস্কার করে যথাযথ ভাবে সংরক্ষিত করা খুবই জরুরী। তবে ভূমি দশ্যূসহ নানা কারণে মন্দিরের সম্পত্তি আজ হুমকির সম্মুখীন। এব্যাপারে প্রশাসনের পক্ষে পদক্ষেপ নেয়া জরুরী। নয়লে এ ঐতিহ্যবাহী মন্দিরটি বিলুপ্তি হওয়ার আশংকা রয়েছে।
শনিবার, ৭ এপ্রিল, ২০১২
কুষ্টিয়া শহরে ৫২টি ঝুঁকিপুর্ণ ভবন,যে কোন মূহুর্তে ধ্বসে পড়ে প্রাণহানীর আশংকা : দেখার কেউ নেই !
এ.এইচ.এম.আরিফ ॥ কুষ্টিয়ায় ঝুঁিকপূর্ণ ভবনের সংখ্যা দিনের পর দিন বাড়ছে। শতর্বষ পুর্বে গড়া সেকেলী ঝুঁকিপুর্ণ প্রাচীন এসব ভবনে জীবন-মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে দীর্ঘদিন মানুষ বসবাস করে আসছে। জেলা গণপূর্ত অধিদপ্তরের দেয়া তথ্যনুযায়ী কুষ্টিয়া শহরে প্রায় ৫২ টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন রয়েছে। কুষ্টিয়া শহরের মিলপাড়া আড়ুয়াপাড়া বড় বাজার থানাপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় জরাজীর্ণ এসব ভবনে যে কোন মুহুর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশংকা রয়েছে। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ভবনগুলোর ছাদ ধ্বসে পড়ছে। ফাটল দেখা দিয়েছে, সিলিং জুড়ে স্যাঁত স্যাঁতে ব্যাঙের ছাতা ও বটগাছ জন্মেছে, কোথাও কোথাও ইটের আস্তরন খসে ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে । বসবাসের অনুপযোগী এ সকল ভবনে মৃত্যুর ঝুঁকি মাথায় নিয়ে সংগঠনের অফিস, কোথাও বাসভবন কিংবা নীচতলায় বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে । শহরের আমলাপাড়ার উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর ভবনটি মারাত্বক ঝুঁকিপুণর্। তার পরেও এখানে কমিউনিষ্ট পার্টির অফিস, আমলা পাড়া স্পোটিং কাব, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রতিদিন এই ভবনে শত শত লোক যাতায়াত করে। কথিত আছে এই ভবনটির একটি ছাঁদ একবার ধ্বসে পড়েছিলো। শহরের ২৮ মেছুয়া বাজারের তিন তলা বিশিষ্ট পিয়ার খাঁন আব্দুস সাত্তারের পরিত্যাক্ত বাড়িটির একেবারে ভগ্নদশা। নীচ তলার দোকানদার কুষ্টিয়া হার্ডওয়ারের স্বত্ত্বাধিকারী মজনুর রহমানের জানান, আমরা মৃত্যু ঝুঁকি মাথায় নিয়ে এই ভবনের নীচতলায় ব্যবসা পরিচালনা করে যাচ্ছি। ভবনটি ভেঙ্গে নতুন করে গড়বার তাগিদে বড় বাজার দোকানদার কল্যান সমিতির সভাপতি শফি উদ্দিনের নেতৃত্বে বাজার এলাকার সকল দোকানদারদের স্বার সংগ্রহ করে এ্যাবানন্ডেন্ট প্রোপার্টি কমিটির প্রধান জেলা প্রশাসক বরাবর ভবনটি ভেঙ্গে নতুন করে গড়বার আহবান জানিয়ে আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। শহরের ৪৬ লীচাঁদ আগওয়ালা ষ্ট্রীট বড় বাজার এলাকার সদর পুলিশ ফাঁড়ি যেখানে রয়েছে সেই কুম্ভু মাঝি বিবির পরিত্যক্ত বাড়িটি খুবই জরাজীর্ণ। শহরের থানাপাড়া এলাকায় ২৬/১ আর এন সরকার রোডে অবস্থিত নেছার আহম্মেদের পরিত্যাক্ত বাড়িটি বিধ্বস্ত বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়েছে। শহরের আড়–য়াপাড়া এলাকার পিসি রায় রোডের কসাই‘র পরিত্যাক্ত বাড়িটির একই অবস্থা। এছাড়া শহরের মিলপাড়া এলাকার কুষ্টিয়া বড় ষ্টেশনের পাশ্ববর্তি মহিদ পোল্ট্রি ফিডের পুরানো ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ। জেলার এ সকল ঝুঁকিপুর্ন ভবনগুলো ভেঙ্গে নতুন করে নির্মাণ করা জরুরী। এ ব্যাপারে গণপূর্ত অধিদপ্তরের এ্যাবানডেন্ট প্রোপার্টি, দেখাশোনা ও ভাড়া আদায়কারী আব্দুর রশিদ শিকদারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এ পর্যন্ত মোট ৫২ টি ঝুকি পুর্ন ভবনের তালিকা আমরা করেছি। কিন্তু এ ভবনগুলো ভেঙ্গে নতুন করে গড়বার উদ্যোগ বাধাগ্রস্থ হয়ে পড়ছে। ভবনগুলো ভেঙ্গে নতুন করে গড়তে অনেক টাকার প্রয়োজন। অপরদিকে, সরকার এ সকল পরিত্যাক্ত বাড়ি বেসরকারী মালিকানাধীন বিক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ঝুঁকির্পুণ এ সকল বাড়ি দীর্ঘদিন যাবত কুঁজো হয়ে কোন রকম দাঁড়িয়ে থাকার কারণে এবং বাড়ির অভ্যন্তরে মানুষের বসবাস মারাত্মক দৃষ্টিকটু হিসেবেই পরিলতি হচ্ছে। পরিত্যক্ত বিধ্বস্ত বিপর্যস্ত বাড়িগুলো বিক্রয়ের সিদ্ধান্ত দীর্ঘায়িত হওয়ার কারনে দূর্ঘটনার আশংকা ক্রমেই বাড়ছে।
শুক্রবার, ৬ এপ্রিল, ২০১২
কুষ্টিয়ার গণপূর্ত বিভাগের বাসা টাইপ কোয়ার্টারগুলো কার?আবাসন সংঙ্কটেও রি-মডেলিং প্রকল্প স্বপ্নই রয়ে গেল
আরিফ মেহমুদ ॥ সরকারী ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের আবাসন সমস্যা সমাধানে জন্য নির্মিত কুষ্টিয়ার গণপূর্ত বিভাগের বাসা টাইপ কোয়ার্টারগুলোতে বসবাস করছে এরা কারা? এসব কোয়ার্টারে সরকারী বে-সরকারী মিলে লোকজন বসবাস করলেও সন্ধার পর এখানে নেমে আসে এক অজানা ভূতুড়ে পরিবেশ। একটু রাত বাড়লেই কোয়ার্টারগুলো থেকে বেরিয়ে আসা অতি পরিচিত সুগন্ধি আর ঝাঝালো ধূয়ায় জনসাধারণের চলাচল দায় হয়ে ওঠে। তবুও পথ চলা। আমার ঘরে বসত করে কয়জনা,মন জানো না। এগুলোকে ঘিরেই নতুন করে গড়ে উঠেছে মাদকদ্রব্য বেচাকেনার স্পট। এমন কিছু নেই যা মিলে না এখানে। এমনই তথ্য মিলেছে গতকাল সরেনজমিন কুষ্টিয়া সরকারী কলেজের পিছনের ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের জন্য বরাদ্দকৃত বাসা টাইপ কোয়ার্টারগুলোর খোজ-খবর নিতে যেয়ে। কুষ্টিয়ার গণপূর্ত বিভাগের দায়িত্বশীল সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, সেই দেশ ভাগের কয়েক বছর পর ১৯৫৪ সালে তৎকালীন মহাজের জণগোষ্ঠির ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের আবাসন সমস্যা সমাধানে ও পূনর্বাসনের জন্য কুষ্টিয়া কোর্ট ষ্টেশন ভিত্তিক কোর্টপাড়ায় প্রায় সাড়ে তিন একর জমির উপর গড়ে উঠে ৩৪ টি বাসা টাইপ কোয়ার্টার। সেকেলের নির্মানাধীণ টিনসেডের এই আধা-পাকা বিল্ডিংগুলো সংস্কারের অভাবে বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠলেও সে দিকে খেয়াল নেই কর্তপরে। দেশ স্বাধীন হবার পরে সামান্য রিপেয়ারিং করে বসবাস শুরু করে ৩৪ টি পরিবার। সামান্য বৃষ্টি হলেই ঘরের মধ্যে থাকা দায়। পুরাতন টিনসেড মরিচার জং ধরে অসংখ্য ফুটো আর বড় ছিদ্র হয়ে ঘরের চালার ছাউনির অবস্থা এতটাই দূরাবস্থা যে মনে কোন কৃত্রিম ঝর্না। বাসা টাইপে বসবাসকারীদের মধ্যে নাম প্রকাশে অনুচ্ছিক অনেকেই জানিয়েছেন, আমাদের বেতন বেসিকের ৫০ ভাগ দিতে হয় এই বাসা ভাড়া বাবদ। বর্তমান বেসিক অনুসারে এসব কোয়ার্টার প্রতি প্রায় ২ হাজার টাকা কাটে ভাড়া হিসেবে। ভাড়ার তুলনায় বাসা টাইপ কোয়ার্টারগুলো একেবারেই বসবাসের অযোগ্য। অল্প বেতনের কর্মচারী হিসেবে আমাদের জন্য এই ভাড়া দেয়া কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘ দিন থেকে এই কোয়ার্টারগুলো ভেঙ্গে আধুনিক মান সম্পন্ন রি-মডেলিং কোয়ার্টার নির্মানের জন্য শুধু ঘোষনায় শুনে আসছি, বাস্তবে এর কোন দিক নির্দেশনা বা নির্দেশ আদো হবে কি না জানি না। ফলে বাসা টাইপ কোয়ার্টারগুলোর আবাসন রি-মডেলিং প্রকল্প স্বপ্নই রয়ে গেলো, আলোর মুখ দেখবে কবে কে জানে। গণপূর্ত বিভাগের সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায় আবাসন বোর্ডের সভাপতি জেলা প্রশাসক আর সাধারণ সম্পাদক গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী। জেলা আবাসন কমিটির সভায় এসব কোয়ার্টারগুলো ভেঙ্গে রি-মডেলিং প্রকল্প হিসেবে বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত বার বার গ্রহণ করা হলেও এর কোন বরাদ্দ পাওয়া যায়নি আজো। বাসা টাইপ কোয়ার্টারগুলোকে রি-মডেলিং করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপরে কাছে অনেকবার বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করেও কোন কাজ হয়নি। সুতরাং বাসা টাইপ কোয়ার্টারগুলোকে রি-মডেলিং করার প্রকল্প বাস্তবায়ন সুদূরপ্রসারী রয়ে গেল। কুষ্টিয়ার কৃতি সন্তান এলজিইডি’র সাবেক প্রধান প্রকৌশলী প্রয়াত কামরুল ইসলাম সিদ্দিক সেকেলের নির্মানাধীণ টিনসেডের কোয়ার্টারগুলো ভেঙ্গে আধুনিক মান সম্পন্ন রি-মডেলিং কোয়ার্টার নির্মানের উদ্দ্যোগ গ্রহণ করেন। সে সময় কোয়ার্টারগুলোর মধ্যে পূর্ব দিকের ৩টি এবং পশ্চিম পাশের ২টি ভেঙ্গে মসজিদ ও মাদ্রাসা নির্মাণ করেন। বর্তমানে ২৯ টি বাসা টাইপ কোয়ার্টারের প্রতিটিই সরকারী ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের নামে বরাদ্দ থাকলেও কয়েকজন কর্মচারী পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করলেও অধিকাংশই দখল করে রেখেছে বে-সরকারী লোকজন। অভিযোগ রয়েছে কতিপয় সরকারী কর্মচারী তাদের নিজের নামে কোয়ার্টার বরাদ্দ নিয়ে অন্যকে ভাড়া দিয়েছে। আবার কেউ কেউ স্থানীয় ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের কাছে জিম্মি হয়ে সেচ্ছায় বাসা ছেড়ে দিয়েছে এদের কাছে। এব্যাপারে গণপূর্ত বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম জিয়াউদ্দিন হায়দর অনেকটা দায় স্বীকার করে জানান, বরাদ্দপ্রাপ্ত কর্মচারীরা যদি তার বাসায় বসবাস না করে তাহলে নিরাপত্তার কারনেও অনেক সময় বাইরের লোক এখানে বসবাসের সুযোগ করে নিচ্ছে। তবে এদের তালিকা তৈরী করে খুব শীঘ্রই কোয়ার্টার থেকে এদের দখলমুক্ত করা হবে।
আজ কুষ্টিয়ার শিলাইদহে শুরু হচ্ছে কবি গুরুর সার্ধশত জন্মজয়ন্তী
এ.এইচ.এম.আরিফ,কুষ্টিয়া ॥ সাহিত্য সৌধের কালজয়ী প্রতিভা কবিগুরুর কুষ্টিয়ার শিলাইদহ কুঠিবাড়ী জমে উঠবে আজ পঁচিশে বৈশাখ। এবারই প্রথম বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সার্ধশত জন্মজয়ন্তী উপলে দু’বাংলা(ভারত-বাংলাদেশ)যৌথভাবে আয়োজন করেছে নানান অনুষ্ঠানমালা। মূল আয়োজন দু’দেশের রাজধানী ভিত্তিক হলেও কুষ্টিয়ার শিলাইদহকে সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। প্রতিবছরের মতো শিলাইদহ, শাহাজাদপুর, পতিসর, দনিডিহি একই সঙ্গে পৃথক-পৃথকভাবে বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সার্ধশত জন্মজয়ন্তী উদযাপন হচ্ছে। ঢাকার বাইরে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে সাজানো হয়েছে মূল অনুষ্ঠান। সরকারী অনুষ্ঠানমালার বাইরেও এখানে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে বসবে গ্রামীণ মেলা। প্রায় সপ্তাহ ব্যাপী এ মেলার আয়োজক ও দোকানীদের এখনই শুরু হয়েছে দৌড়-ঝাপ। হরেক রকমের পণ্য সামগ্রীর সাথে মেলায় বৈচিত্র আনবে লোকজ পসরার। কবি পদধুলির শিলাইদহ কুঠিবাড়ীতে হাজার-হাজার মানুষের ঢল নামবে। তবে মূল অনুষ্ঠান পঁচিশে বৈশাখ লাখো মানুষের মিলন মেলায় পরিনত হবে ঠাকুর বাড়ী চত্তর। কবি আঙিনার সব দিক টুইটুম্বর হয়ে উঠবে উৎসুকদের পদভারে। এই অনুষ্ঠানের সময় ঠাকুর বাড়ী বন্ধ থাকলেও দর্শকরা আসে মূলত: কবিকে স্মরণ করতে। দেশ-বিদেশের শত-শত দর্শনার্থী ও পর্যটকরা আসবেন শিলাইদহের এই কবি পাদপীঠে। কুমারখালীর নিভৃত পল্লীর এই শিলাইদহে কুঠিবাড়ী শুধু গ্রামকে শহর সাদৃশ্যই করেনি, পাল্টে দেবে মানুষের জীবন যাত্রা। এখানে স্থানীয়দের চেয়ে এখন বাইরের মানুষেরই বেশী আনাগোনা থাকে। তবে এখনও সেভাবে ভাল পর্যটক আকর্ষণয়ী হোটেল ও রেস্তুুরা গড়ে ওঠেনি। যেখানে দিন বদলের সাথে-সাথে ব্যাপক পরিসরে উন্নয়ন কর্মকান্ড হওয়ার কথা ছিল। সেখানে নানা রাজনৈতিক কারনে দিন-দিন আরো শ্রীহীন হচ্ছে। এক সময় ঠাকুর বাড়ীতে অসংখ্য পুরাতন গাছ ছিল, সেগুলো মারা গেছে, মারা গেছে সেই ঐতিহাসিক বকুল গাছটিও। তবু কর্তৃপরে টনক নড়েনি। নতুন কোনো গাছও লাগানো হচ্ছে না। এখন শুধু টাকা রোজগারের পথ খোঁজা হচ্ছে এখানে। ইতিমধ্যে খোড়া অজুহাত দেখিয়ে ঠাকুর বাড়ীর ঐতিহ্যবাহী রং বদলে দেয়া হয়েছে। দু’টি গেট করা হয়েছে ঠাকুর বাড়ীর আঙিনায় প্রবেশ পথে। এরমধ্যে একটি ভিআইপিদের, অন্যটি সাধারনের জন্য।এসব কারণে রবীন্দ্র গবেষকদের মাঝে রয়েছে ব্যাপক ােভ। এছাড়াও রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর আলোচক নির্বাচনেও প্রতিবছর সু রাজনৈতিক দৃষ্টি ভঙ্গি ল্য করা যায়। যার কারণে স্থানীয় গবেষকদের কয়েকজন আলোচনা থেকে বাদ পড়েন। ২৫ বৈশাখ সকাল সাড়ে ৯ টায় কুষ্টিয়ার জেলা প্রশসক আব্দুল মান্ননের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উৎসব উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারি মাহবুব-উল-আলম হানিফ। প্রধান আলোচক হিসেবে থাকছেন বিশিষ্ট নাট্যকার ও গবেষক এ্যাড. লালিম হক। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখবেন কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী পরিচালক মানিকহার রহমান। এছাড়া দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনে উৎসবে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন কুষ্টিয়া-৪ কুমারখালি-খোকসা আসনের এমপি বেগম সুলতানা তরুন ও তথ্য সচিব হেদায়েতুলাহ আল মামুন এনডিসি। এছাড়া রবীন্দ্র জম্ম উৎসব উপলে কুষ্টিয়া পৌরসভার উদ্যোগে ২৫বৈশাখ সকালে কুষ্টিয়া শহরের মিলপাড়ায় অবস্থিত কুঠিবাড়িতে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
আজ কুষ্টিয়ার বংশীতলা দিবস,পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ যুদ্ধ সংঘঠিত ॥ ৮ শহীদের পরিবারের খোঁজ রাখেনা কেউ
এ.এইচ.এম.আরিফ ঃ আজ ৫ সেপ্টেম্বর,কুষ্টিয়ার বংশীতলা দিবস। মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে বীরত্বে গাঁথা এক ইতিহাসের দিন আজ। ১৯৭১ সালের এই দিনে কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার বংশীতলায় পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ যুদ্ধ সংঘঠিত হয়। জীবনের মায়া ত্যাগ করে মা মাটি ও দেশের মানুষকে সেদিন মুক্ত করতে কুষ্টিয়ার দামাল ছেলে লড়েছিল চির শুত্র“ পাকবাহিনীর সাথে। কয়েক ঘন্টা ধরে চলে পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ যুদ্ধ। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল আত্রমনের মুখে পাকহানাদাররা তাদের বিশাল সৈন্যবাহিনী নিয়েও অপ্রত্যাশিতভাবে পরাজিত হয়। বংশীতলার এ যুদ্ধে ৮ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। স্বাধীনতার ৩৬ বছর অতিবাহিত হলেও ৮ শহীদ পরিবারের খোঁজ রাখেনি কেউ। নাম মাত্র ভাতা আর বিজয় দিবসে কিছু উপঢোকন ছাড়া কিছুই পায়নি তারা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মাচ ভাষণের পর ৬ দফা ও ১১ দফা দাবী আদায়ের সংগ্রামকে চাঙ্গা করার উদ্দেশ্যে সারা দেশের ন্যায় বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলাও সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটি গঠন করে প্রতিবাদ সভা, মিছিল, অসহযোগ আন্দোলন, প্রতিরোধ যুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। প্রতিরোধ যুদ্ধের সময় বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলার চুয়াডাঙ্গাতে অস্থায়ী রাজধানী এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় মেহেরপুরের বৈদ্যনাথ তলায় (মুজিবনগরে) অস্থায়ী রাজধানী থাকায় এ জেলা প্রতিরোধ যুদ্ধে ও মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। ২৫ মার্চ রাতে ২৫০ জন পাক সৈন্য আকষ্মিকভাবে কুষ্টিয়ায় প্রবেশ করে। তারা শহরে প্রবেশ করেই কারফিউ জারী, ধর পাকড়, অত্যাচার, নির্যাতন ও যুবতী মেয়েদের ধরে নিয়ে ধর্ষণ শুরু করে। এ সংবাদ সর্বত্রই ছড়িয়ে পড়ে রাজনৈতিক নেতা, কর্মী জনসাধারণ সবার মধ্যে চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। প্রতিকার ও প্রতিরোধের আগুন জ্বলে ওঠে সবার মধ্যে। এ কারনে পাকহানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে পড়ে। ফলে ১ সেপ্টেম্বর ভারত থেকে ৪০ জন মুক্তিযোদ্ধা প্রশিণ নিয়ে কুষ্টিয়া জেলার সীমান্ত এলাকায় প্রবেশ করে। এ দলের বেশির ভাগ মুক্তিযোদ্ধাই ছিলেন কুষ্টিয়া সদর থানার দামাল ছেলেরা। কুষ্টিয়া শহরের আশপাশ ছিল এদের গন্তব্যস্থল। ১ সেপ্টেম্বর বিকেলের দিকে কুষ্টিয়া সদর থানার বৃত্তিপাড়া হতে পাক সৈন্য ও মিলিশিয়া পুলিশ বাহিনীর একটি দল দহকুলা গ্রামের মধ্যে দিয়ে আলামপুর গ্রামে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধাদের উপর হামলার জন্য আসে। পরদিন অনেক পাক সৈন্য ও মিলিশিয়া পুলিশ আলামপুর গ্রামে আসে। তারা এ গ্রামের অনেক বাড়ীঘর পুড়িয়ে দেয় এবং আলামপুর গ্রামে আসে। পাকবাহিনী এ গ্রামের অনেক বাড়ীঘর পুড়িয়ে দেয় এবং আলামপুর গ্রামের কয়েকজন সাধারণ মানুষকে ধরে নিয়ে যায়। এ ঘটনার প্রতিশোধ নিতেই ৫ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়া সদর থানার বংশীতলা ও দূর্বাচারা গ্রামে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধারা পাক সৈন্যের হামলা প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে খুব সকালে প্রস্তুতি গ্রহণ করে এবং বিভিন্ন স্থানে সুবিধামত জায়গায় অবস্থান নিয়ে পাক সৈন্যের জন্য অপো করতে থাকেন। কিন্ত সকাল ১০ টা পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধারা কোন পাক সৈন্যে দেখতে না পেয়ে তারা মনে করেন আজ আর পাক সৈন্য আসবে না। তাই তখন মুক্তিযোদ্ধারা অনেকেই যে যার মত নাস্তা খেতে যান এবং কেউ কেউ এদিক সেদিক ঘোরাফেরার মধ্যে ছিলেন। আর এ দলের মুক্তিযোদ্ধা ও লাইট মেশিন গানম্যান আব্দুল কুদ্দুস, আব্দুল কুদ্দুস তার সহকারী সেকম আলীকে নিয়ে বংশীতলা গ্রামের চৌরাস্তার মোড়ে গিয়ে আমগাছের গুড়ির পাশে অবস্থান নেয়। এমন সময় তারা দেখতে পান যে পাক সৈন্যরা পায়ে হেটে দূর্বাচারার দিকে আসছে। পাক সেনারা যখন আব্দুল কুদ্দুসের খুব কাছাকাছি চলে আসে তখন আব্দুল কুদ্দুস লাইট মেশিন গান দিয়ে তাদের উপর বিরামহীনভাবে ব্রাশ ফায়ার করতে শুরু করে। হটাৎ করে খুব কাছ থেকে পাক সৈন্যের উপর লাইট মেশিন গানের ব্রাশ ফায়ার শুরু হওয়ায় তারা তাৎণিকভাবে পাল্টা আক্রমনের সুযোগ পায়নি। রাস্তার দু‘ধারে অথৈ পানি থাকায় অবস্থান নিতে ও পালাতে পারেনি। আব্দুল কুদ্দুসের ব্রাশ ফায়ারেই ঘটনাস্থলেই অনেক পাক সৈন্য আহত ও নিহত হয়। বিরামহীনভাবে গুলিবর্ষণের ফলে লাইট মেশিন গানের ব্যারেল গরম হয়ে ফায়ার বন্ধ হয়ে যায় এবং এ সময়ে পাক সৈন্যের একটি গুলি এসে আব্দুল কুদ্দুসের পায়ে লাগে। এ ফাঁকেই পাক সৈন্যরা সামনের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে। অবস্থা বুঝে আব্দুল কুদ্দুছ ও সেকেমআলী পাক সৈন্যের নাগালের বাইরে চলে যায়। এ সময় দূর্বাচারা গ্রামে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধারা গোলাগুলির শব্দ শুনে অগ্রসর হয়ে বংশীতলা গ্রামের কাছে চলে যায়। পাক সৈন্যরা বংশীতলা গ্রাম হতে দূর্বাচারা গ্রামের দিকে অগ্রসর হবার প্রাক্কালে মুক্তিযোদ্ধা ও পাক সৈন্যের মধ্যে সম্মুখ যুদ্ধ শুরু হয়। এখানেও বেশ কিছু পাক সৈন্য আহত ও নিহত হয়। পাকিস্তান বাহিনী পিছন থেকে তাদের আর্টিলারি গ্র“প ২” ও ৩ ” মর্টার এবং রকেট ল্যান্সারের গোলা মুক্তিযোদ্ধাদের উপর নিপে করতে শুরু করে এবং বংশীতলায় হতে অনুমান ৩ মাইল দুরে কুষ্টিয়া টেক্সটাইল মিলে স্থাপিত পাক সৈন্যের ক্যাম্প হতেও যুদ্ধেেত্রর দিকে লহীনভাবে হেভি গানের গোলা নিপে করতে থাকে। এ সময় দূর্বাচারার মুক্তিযোদ্ধা তাজুল ইসলাম অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে পাক সৈন্যের অফিসার ক্যাপ্টেন জামিলকে হত্যা করেন। তাজুল ইসলাম এখান থেকে তার দলের মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে ফেরার সময় অন্য গোলার মুখে টিকতে না পেরে পিছু হটতে বাধ্য হয়। পাক সৈন্যও চলে যায়। কয়েক ঘন্টা ধরে যুদ্ধ হয়। বংশীতলার যুদ্ধে ৮ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং ১০ জন মুক্তিযোদ্ধা কম-বেশি আহত হন এবং ৫ জন মুক্তিযোদ্ধা পাক সৈন্যের হাতে ধরা পড়েন। এ ৫ জনের মধ্যে ৩ জনের বাড়ী ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা থানার। বাকী ২ জনের বাড়ী হরিণাকুন্ড থানায়। বংশীতলার যুদ্ধে পাক সৈন্যের সঙ্গে ১২ জন রাজাকার এসেছিল। তার মধ্যে ৬ জন যুদ্ধ ত্রে হতে পালিয়ে যায়। বাকী ৬ জন রাজাকার পাক সৈন্যের সঙ্গে ক্যাম্পে ফিরে যায়। পাকিস্তান বাহিনী সৈন্যবাহিনী বংশীতলা যুদ্ধে অপ্রত্যাশিতভাবে চরম ভাবে পরাজিত হয়। এ যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ছিল প্রায় এক হাজারেরও বেশি। বংশীতলার যুদ্ধের ৮ জন শহীদ হলেন- তাজুল ইসলাম,পিতা আব্দুল করিম সেখ, গ্রাম দূর্বাচারা, খোরশেদ আলম দীল, পিতা-শাদ আহম্মদ, গ্রাম গোপালপুর, সেখ দিদার আলী, পিতা, নুরুল ইসলাম, সাং- আড়–য়াপাড়া, ইয়াকুব আলী, পিতা কুদরত আলী, সাং কালীশংকরপুর, গোলাম মোস্তফা রাজ্জাক, পিতা মোহাম্মদ আলী, সাং আড়–য়াপাড়া, আবু দাউদ, পিতা ইয়াদ আলী মুন্সী, সাং দেশওয়ালীপাড়া, চান্দআলী মোলা, গ্রাম বংশীতলা, আব্দুল মান্নান, পিতা মোজাহার মোল্লা ,গ্রাম-বানিয়া খোড়ী। এখানে ১০ জন মুক্তিযোদ্ধা গরুতর আহত হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধে দূর্বাচারা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে শহীদ ৮ মুক্তিযোদ্ধাকে দাফন করা হয়। এখনও তাদের কবর রয়েছে। শহীদদের পরিবারের লোকজন অভিযোগ করে জানিয়েছে, প্রতিবছর বংশীতলা দিবস ও বিজয় দিবস ও স্বাধীনতা দিবসে শহীদদের কবরে সম্মান জাননো হয়। বিশেষ দিনেই শহীদরা শ্রদ্ধা পায়,তাছাড়া অন্য কোন সময় তাদের কথা কেউই মনে রাখেনা। কবরগুলোকে আরও সংস্কার করার জন্য প্রতিবছরই অনুদান আসে কিন্ত একশ্রেণীন মানুষ তা আত্মসাত করায় শুধু মাত্র পাকা নির্মাণেই কোন ভাবে আটকে আছে ৮ শহীদের কবর। শহীদদের পরিবারের লোকজন আপে করে বলেন, যাদের বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে এ স্বাধীন দেশ,অথচ তাদের প্রতি অবহেলা আর অবজ্ঞা ছাড়া কিছুই জোটেনা।
২দিন ব্যাপী শিশু মেলার আলোচনা সভায় বনমালী ভৌমিক,আজকের শিশুই আগামী দিনের আদর্শবান নাগরিক
আরিফ মেহমুদ ॥ কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক (যুগ্ম সচিব) বনমালী ভৌমিক বলেছেন, দেশের প্রতিটি শিশুর অধিকার নিশ্চিত করতে সবাইকে অধীক সচেতন হতে হবে। প্রযুক্তির এই যুগে শিশুদের মধো বিকাশে তাদের পাশে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। শিশুদের প্রতি কোন প্রকার অবহেলার সুযোগ নেই। অভিভাবকদের মনে রাখতে মেয়ে শিশু আর ছেলে শিশুর মধ্যে কোন বৈষম্য আর ভেদাভেদ ভুলে যতেœর সাথে তাদের সমঅধিকার দিতে হবে। তাদের মত প্রকাশের অবাধ সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। প্রতিটি শিশুর বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে। সরকার সমাজের ঝরে পড়া শিশুদের প্রাথমিক শিা বাধ্যতামূলক ও বিনা খরচে শিা লাভের সুযোগ নিশ্চিত করেছে। আজকের শিশুই আগামী দিনের আদর্শবান নাগরিক ও দেশ পরিচালনার নেতৃত্বদারকারী নেতা। তিনি শিশুদের উদ্দেশ্যে বলেন, যা প্রকাশ্যে করা যায় না তা মন্দ কাজ। নিজেদের কখনো মন্দ কাজের সাথে জড়াবে না। যত বেশি পড়বে তত বেশি লিখতে পারবে, সুশিায় শিতি হতে পারবে। গতকাল বুধবার সকালে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন ও জেলা তথ্য অফিসের উদ্যোগে কুষ্টিয়া কালেক্টর চত্বরে শিশু অধিকার বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির ল্েয আয়োজিত দুই দিনব্যাপী শিশু মেলার উদ্বোধনী দিনের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এ উপল্েয সকাল ৯ টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমি থেকে এক বর্ণাঢ্য র্যালী বের করা হয়। র্যালীতে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন, জেলা তথ্য অফিস, বিভিন্ন এনজিও এবং স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা অংশ নেয়। রে্যালীটি কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়ক প্রদণি শেষে কুষ্টিয়া কালেক্টর চত্বরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পাদদেশে আলোচনা সভায় এসে মিলিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট ড.মল্লিক আনোয়ার হোসেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন জেলা তথ্য কর্মকর্তা তৌহিদুজ্জামান। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন চাঁদ সুলতানা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক নাসিরা নাসরিন, জেলা শিা অফিসের পরিদর্শক ওয়াহিদুজ্জামান, এডাব প্রতিনিধি আনোয়ার হোসেন বুলবুল, মেরিট মডেল স্কুলের শিক নুরুন নাহার শেফা ও আন্দোলনের বাজার পত্রিকার ফটো সাংবাদিক জালাল উদ্দিন খোকন। ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে সরকারী বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী সুমনা আখতার তিথি। আলোচনা শেষে প্রধান অতিথিসহ অন্যান্য অতিথিবৃন্দ শিশু মেলার বিভিন্ন ষ্টল ঘুরে ঘুরে দেখেন। সকাল সাড়ে ১০ টায় বিভিন্ন স্কুলের ছাত্র-ছাক্রীদের অংশ গ্রহনে কবিতা আবৃত্তি ও রচনা প্রতিযোগীতা শুরু হয়ে শেষ হয় সাড়ে ১১টায়। এর পর আবৃত্তি ও চিত্রাঙ্কণ প্রতিযোগীতা শুরু হয় শেষ হয় দুপুর ১টায়। বিকেলে উম্মুক্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টায় অবুজ মন চলচ্চিত্র প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে দিনের অনুষ্ঠান মালা শেষ হয়।
কুষ্টিয়ায় সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে ঘুষ ছাড়া কাজ হয় না,অবৈধ সমিতির নিকট জিম্মি ক্রেতা-বিক্রেতারা
এ.এইচ.এম.আরিফ ॥ কুষ্টিয়ার রেজিষ্ট্রি অফিস গুটিকয়েক দলিল লেখকদের নিকট জিম্মি হয়ে পড়েছে। অবৈধ সমিতির নামে প্রতিদিন আদায় করা হচ্ছে হাজার হাজার টাকা। অতিরিক্ত টাকা ছাড়া কোন কাজ হয়না কুষ্টিয়া রেজিষ্ট্রি অফিসে। মতাসীন সহযোগী সংগঠনের কয়েকজন নেতা ও পুলিশকে ম্যানেজ করে ক্রেতা-বিক্রেতা সাধারন লোকজনের পকেট কাটছে কথিত সমিতির নেতারা। এর আগে একাধিক বার পুলিশ অভিযান চালিয়ে আটক করে কয়েকজনকে। বন্ধ হয়ে যায় সমিতির কার্যক্রম। সরেজমিন কুষ্টিয়া রেজিষ্ট্রি অফিস ঘুরে ভুক্তভোগীদের সাথে কথা হলে তারা নানা অনিয়ম দূর্নীতির চিত্র তুলে ধরেন। কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বিত্তিপাড়া থেকে জমি রেজিষ্ট্রি করতে আসা আতাহার মিয়া জানান, কোন জমি রেজিষ্ট্রি করতে হলে সমিতির নামে লাখে ৪ হাজার টাকা জমা দেয়া লাগে। এক টাকা কমেও জমি রেজিষ্ট্রি হয়না। সমিতির নেতাদেও দাপটে সাধারন দলিল লেখকরা অসহায় বলে জানান তিনি। প্রতিদিন জমি রেজিষ্ট্রি করতে আসা শত শত মানুষ এখানে এসে নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। সরকারী নিয়মনীতিকে উপাে করে মনগড়া ভাবে অতিরিক্ত ২ থেকে ৪ গুন ফি গ্রাহকদের কাছ থেকে আদায় করা হয়। ওই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে গেলে তাদের থানাপাড়া এলাকার ক্যাডার বাহিনী দিয়ে হুমকিও দেয়া হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক সাধারন দলিল লেখক জানান, জমি রেজিষ্ট্রি করার জন্য সরকার নির্ধারিত ফিস থাকলেও তা অনেকেই মানেন না। সাধারন দলিলে সরকারী ফিস সর্বসাকুল্যে ১২৫ টাকা নির্ধারন করা হলেও এখানে আদায় করা হয় ৪৩৫ টাকা। হেবা দলিলে সরকারী ফিস ২২৫ টাকা হলেও আদায় করা হচ্ছে বিঘাপ্রতি এক হাজার টাকা। খারিজ পচড়া না থাকলে অতিরিক্ত আরও ৫’শ টাকা নেয়া হয়। সার্টিফাই কপির জন্য ৭০ টাকা ফি ধার্য করা থাকলেও নেয়া হচ্ছে ৮’শ থেকে দেড় হাজার টাকা। কপিষ্টদের কাছ থেকেও উৎকোচ আদায় করা হচ্ছে। জমি রেজিষ্ট্রি করার সময় দাতা উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও টাকার বিনিময়ে দাতার অনুপস্থিতিতে রেজিষ্ট্রি করা হচ্ছে দলিল। এেেত্র ঘুষ নেয়া হয় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। অফিসের কয়েকজন দূর্ণীতিবাজ কর্মকর্তা সমিতির নেতাদের যোগসাজসে এসব অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছে। কুষ্টিয়া রেজিষ্ট্রি অফিসের কথিত সমিতির সাথে বেশির ভাগ সাধারন দলিল লেখকদের কোন সম্পর্ক নেই। তবে ভয়ে তারা মুখ খুলতে সাহস পান না। মতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের এক নেতার ভাইসহ তিন জনের সিন্ডিকেট এখানকার নিয়ন্ত্রক। কথিত সমিতির সভাপতি জয়নাল ও কোষাধ্যা নাসির উদ্দিন ও নেতার ভাই সমিতি পরিচালনা করেন। গত তত্বাবধায়ক সরকার আমলে সেনাবাহিনী অভিযান চালিয়ে সমিতির কার্যক্রম স্থগিত করে দেন। এরপর আওয়ামী লীগ সরকার মতায় আসলে নেতাদের সহযোগীতায় ফের চালু হয় অবৈধ সমিতি। বিগত সময়কার পুলিশ সুপার শাহাবুদ্দিন খান অভিযান চালিয়ে কয়েকজন আটক করেন। ফের বন্ধ করে দেন সমিতির কার্যক্রম। তবে তিনি বদলি হওয়ার পর আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠে সমিতির নেতারা। দলিল লেখক সমিরি নেতারা সরকারি নিয়ম মানেন না। তাদের আলাদা তালিকা রয়েছে। সেই তালিকা অনুযায়ী তারা টাকা আদায় করেন। দলিল লেখকরা সরকারী ফিস ছাড়াও ৫০ হাজার টাকা দলিলে ৩ হাজার টাকা, ১ ল টাকার দলিলে ৬ হাজার টাকা, ২ ল টাকার দলিলে ১৫ হাজার টাকা হারে সমিতির চাঁদার নামে অতিরিক্ত টাকা আদায় করেন। কোন কোন েেত্র সুযোগ বুঝে আরও বেশি টাকা হাকছেন তারা। দলিল লেখক সমিতির সীলযুক্ত টোকেন ছাড়া কোন দলিল রেজিষ্ট্রি করতে দেয়া হয় না। ফলে সাধারন ক্রেতা-বিক্রেতা জমি রেজিষ্ট্রি করতে এসে পড়ছেন মহা বিপাকে। দলিল লেখক সমিতির নিয়োগকৃত দালালদের দাপটে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পান না।
কয়েকজন দলিল লেখক জানান, এখানে দিনে-দুপুরে ডাকাতি করা হচ্ছে। দলিল লেখক সমিতির নেতারা মনগড়া একটি ফিসের তালিকা তৈরী করে সকল দলিল লেখকদের হাতে ধরিয়ে দিয়েছেন। এতে সাধারন দলিল লেখকদের কোন লাভ হচ্ছে না। কয়েকজন দলিল লেখক কাজ না করেও হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। অবৈধ দলিল লেখক সমিতির সভাপতি জয়নাল জয়নালের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। সাধারন সম্পাদক লাইজুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে সভাপতি ভাল বলতে পারবে। কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ এর সাখে মোবাইলে কথা হলে জানান, কেউ যদি অবৈধ সমিতির নামে চাঁদা আদায় করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক সাধারন দলিল লেখক জানান, জমি রেজিষ্ট্রি করার জন্য সরকার নির্ধারিত ফিস থাকলেও তা অনেকেই মানেন না। সাধারন দলিলে সরকারী ফিস সর্বসাকুল্যে ১২৫ টাকা নির্ধারন করা হলেও এখানে আদায় করা হয় ৪৩৫ টাকা। হেবা দলিলে সরকারী ফিস ২২৫ টাকা হলেও আদায় করা হচ্ছে বিঘাপ্রতি এক হাজার টাকা। খারিজ পচড়া না থাকলে অতিরিক্ত আরও ৫’শ টাকা নেয়া হয়। সার্টিফাই কপির জন্য ৭০ টাকা ফি ধার্য করা থাকলেও নেয়া হচ্ছে ৮’শ থেকে দেড় হাজার টাকা। কপিষ্টদের কাছ থেকেও উৎকোচ আদায় করা হচ্ছে। জমি রেজিষ্ট্রি করার সময় দাতা উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও টাকার বিনিময়ে দাতার অনুপস্থিতিতে রেজিষ্ট্রি করা হচ্ছে দলিল। এেেত্র ঘুষ নেয়া হয় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। অফিসের কয়েকজন দূর্ণীতিবাজ কর্মকর্তা সমিতির নেতাদের যোগসাজসে এসব অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছে। কুষ্টিয়া রেজিষ্ট্রি অফিসের কথিত সমিতির সাথে বেশির ভাগ সাধারন দলিল লেখকদের কোন সম্পর্ক নেই। তবে ভয়ে তারা মুখ খুলতে সাহস পান না। মতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের এক নেতার ভাইসহ তিন জনের সিন্ডিকেট এখানকার নিয়ন্ত্রক। কথিত সমিতির সভাপতি জয়নাল ও কোষাধ্যা নাসির উদ্দিন ও নেতার ভাই সমিতি পরিচালনা করেন। গত তত্বাবধায়ক সরকার আমলে সেনাবাহিনী অভিযান চালিয়ে সমিতির কার্যক্রম স্থগিত করে দেন। এরপর আওয়ামী লীগ সরকার মতায় আসলে নেতাদের সহযোগীতায় ফের চালু হয় অবৈধ সমিতি। বিগত সময়কার পুলিশ সুপার শাহাবুদ্দিন খান অভিযান চালিয়ে কয়েকজন আটক করেন। ফের বন্ধ করে দেন সমিতির কার্যক্রম। তবে তিনি বদলি হওয়ার পর আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠে সমিতির নেতারা। দলিল লেখক সমিরি নেতারা সরকারি নিয়ম মানেন না। তাদের আলাদা তালিকা রয়েছে। সেই তালিকা অনুযায়ী তারা টাকা আদায় করেন। দলিল লেখকরা সরকারী ফিস ছাড়াও ৫০ হাজার টাকা দলিলে ৩ হাজার টাকা, ১ ল টাকার দলিলে ৬ হাজার টাকা, ২ ল টাকার দলিলে ১৫ হাজার টাকা হারে সমিতির চাঁদার নামে অতিরিক্ত টাকা আদায় করেন। কোন কোন েেত্র সুযোগ বুঝে আরও বেশি টাকা হাকছেন তারা। দলিল লেখক সমিতির সীলযুক্ত টোকেন ছাড়া কোন দলিল রেজিষ্ট্রি করতে দেয়া হয় না। ফলে সাধারন ক্রেতা-বিক্রেতা জমি রেজিষ্ট্রি করতে এসে পড়ছেন মহা বিপাকে। দলিল লেখক সমিতির নিয়োগকৃত দালালদের দাপটে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পান না।
কয়েকজন দলিল লেখক জানান, এখানে দিনে-দুপুরে ডাকাতি করা হচ্ছে। দলিল লেখক সমিতির নেতারা মনগড়া একটি ফিসের তালিকা তৈরী করে সকল দলিল লেখকদের হাতে ধরিয়ে দিয়েছেন। এতে সাধারন দলিল লেখকদের কোন লাভ হচ্ছে না। কয়েকজন দলিল লেখক কাজ না করেও হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। অবৈধ দলিল লেখক সমিতির সভাপতি জয়নাল জয়নালের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। সাধারন সম্পাদক লাইজুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে সভাপতি ভাল বলতে পারবে। কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ এর সাখে মোবাইলে কথা হলে জানান, কেউ যদি অবৈধ সমিতির নামে চাঁদা আদায় করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কুষ্টিয়ায় তিন মাসে ১৫টি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরি ,জনতার অভিযোগের আঙ্গুল বিভাগের দিকে!
এ.এইচ.এম.আরিফ ॥ সম্প্রতি জেলা জুড়ে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা যেহারে বেড়েছে তা অতিতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়েছে। একদিকে লোডশেডিং, অন্যদিকে ট্রান্সফরমার চুরির হিড়িক। এসব ঘটনায় একেবারেই দিশেহারা ও বেসামাল হয়ে পড়েছেন জেলার সাধারণ মানুষ ও দেশের উৎপাদনের রূপকার কৃষককুল। এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, গত ৩ মাসে কুষ্টিয়ায় প্রায় ১৫টিরও অধিক ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা ঘটেছে। যার অধিকাংশই কুষ্টিয়া পলী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের অধিভূক্ত। রাতে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের ভেতর এ চুরির ঘটনাগুলো ঘটছে। প্রায় প্রতিদিনই জেলার কোন না কোন স্থানে এমন ঘটনার খবর পাওয়া যাচ্ছে অহরহ। এসব ঘটায় সাধারণ মানুষ ও কৃষককুলে দিশেহারা হয়ে পড়লেও চরম বিব্রত বিদ্যুৎ বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। রাতে লোডশেডিং সময় ট্রান্সফরমার চুরির সাথে বিদ্যুৎ বিভাগের কেউ জড়িত বলে জনতার অভিযোগের আঙ্গুল বিদ্যুৎ বিভাগের দিকে। জনতার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা। কুষ্টিয়া পলী বিদ্যুৎ সমিতির জিএম মুখলেছ গনি জানিয়েছেন, গত ৩মাসে কুষ্টিয়া পলী বিদ্যুৎ সমিতির আওতাধীন প্রায় ১৫টির অধিক ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা ঘটেছে। যার একটিও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তবে ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনায় সমিতির কোন কর্মকর্তা কর্মচারী যুক্ত নয় বলে দাবী করেছেন তিনি। তিনি বলেন,বিদ্যুৎ সংযোগ লাইন মেরামত কাজ করে থাকেন ঠিকাদার। আর আমরা শুধু সংযোগ দিয়ে থাকি। যদি কোন চুরির ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে ঠিকাদারের লোকদের দ্বারাই হয়ে থাকতে পারে। কারণ তারা অভিজ্ঞ। শুধু ট্রান্সফরমারই নয়, বিপুল পরিমান বৈদ্যুতিক তারও খোয়া যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। পলী বিদ্যুতের পাশাপাশি পিডিবিতেও রয়েছে একই সমস্যা। ট্রান্সফরমার চুরির সাথে সাথে তারও খোয়া যাচ্ছে।
কুষ্টিয়া পিডিবি’র তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শরীফুল ইসলাম জানিয়েছেন, গত ১০দিনে পিডিবি কুষ্টিয়া অঞ্চলে ৫টি ট্রান্সফরমা চুরি গেছে। যা বিগত কয়েক বছরেও ঘটেনি। লোডশেডিং প্রসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, কুষ্টিয়া গ্রীডে বিদ্যুতের চাহিদা ৮০ মেগাওয়াট (গড়)। সেখানে পাচ্ছি ৩০ থেকে ৩৫ মেগাওয়াট। যা অর্ধেকেরও কম। ফলে কুষ্টিয়া গ্রীডের আওতাধীন মেহেরপুর, খোকসা ও রাজবাড়ী জেলার পাংশা এলাকার মানুষ সীমাহীন দূর্ভোগে পড়েছেন। বিশেষ করে চাষীদের অবস্থা খুবই খারাপ। ঠিকমত বিদ্যুৎ না পাওয়ায় বোরো আবাদ মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। পিডিবি যেমন তেমন পলী বিদ্যুতের অবস্থা আরো খারাপ। পলী বিদ্যুৎ কর্তৃপ এবিষয়ে কোন তথ্য প্রদানে অপরাগত প্রকাশ করলেও গ্রাহকরা জানিয়েছেন, ২৪ ঘন্টায় ১৮ ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকেনা। ফলে চাষীকুলের অবস্থা ভয়াবহ পর্যায়ে পৌছেছে। এদিকে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমা চুরি বিষয়ে পুলিশের বেশ কয়েকটি অভিযোগ জমা পড়েছে জানিয়েছেন কুষ্টিয়ার পুলিশ মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ। তিনি জানিয়েছেন বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে আমরা বেশ কয়েকটি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমা ও তার চুরির অভিযোগ পেয়েছি। কারা এ চুরির সঙ্গে জড়িত তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।
ক্যাপশনঃ- বিদ্যুৎ লাইনের পোলের সাথে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার।
কুষ্টিয়া পিডিবি’র তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শরীফুল ইসলাম জানিয়েছেন, গত ১০দিনে পিডিবি কুষ্টিয়া অঞ্চলে ৫টি ট্রান্সফরমা চুরি গেছে। যা বিগত কয়েক বছরেও ঘটেনি। লোডশেডিং প্রসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, কুষ্টিয়া গ্রীডে বিদ্যুতের চাহিদা ৮০ মেগাওয়াট (গড়)। সেখানে পাচ্ছি ৩০ থেকে ৩৫ মেগাওয়াট। যা অর্ধেকেরও কম। ফলে কুষ্টিয়া গ্রীডের আওতাধীন মেহেরপুর, খোকসা ও রাজবাড়ী জেলার পাংশা এলাকার মানুষ সীমাহীন দূর্ভোগে পড়েছেন। বিশেষ করে চাষীদের অবস্থা খুবই খারাপ। ঠিকমত বিদ্যুৎ না পাওয়ায় বোরো আবাদ মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। পিডিবি যেমন তেমন পলী বিদ্যুতের অবস্থা আরো খারাপ। পলী বিদ্যুৎ কর্তৃপ এবিষয়ে কোন তথ্য প্রদানে অপরাগত প্রকাশ করলেও গ্রাহকরা জানিয়েছেন, ২৪ ঘন্টায় ১৮ ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকেনা। ফলে চাষীকুলের অবস্থা ভয়াবহ পর্যায়ে পৌছেছে। এদিকে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমা চুরি বিষয়ে পুলিশের বেশ কয়েকটি অভিযোগ জমা পড়েছে জানিয়েছেন কুষ্টিয়ার পুলিশ মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ। তিনি জানিয়েছেন বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে আমরা বেশ কয়েকটি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমা ও তার চুরির অভিযোগ পেয়েছি। কারা এ চুরির সঙ্গে জড়িত তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।
ক্যাপশনঃ- বিদ্যুৎ লাইনের পোলের সাথে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার।
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)