আরিফ মেহমুদ ॥ কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট ড.মল্লিক আনোয়ার হোসেন বলেছেন, নারী শিক্ষার প্রসার ছাড়া নারী সমাজের ক্ষমতায়ন ও অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। পৃথিবীতে যা কিছু চিরকল্যাণকর অর্ধেক তার গড়েছে নারী অর্ধেক তার নর। আমাদের দেশে বর্তমানে এমন কোন সেক্টর নেই যেখানে নারী অংশগ্রহণ নাই। নারী সমাজ দেশের মূল জনগোষ্ঠির একটি বিরাট অংশ। সেই মূল জনগোষ্ঠিকে বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। কেবল আইন করে নারীর অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এ জন্য নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। পুরুষের পাশাপাশি নারীদের সকল কাজে যোগদানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। জাতি গঠনের সকল কর্মকাণ্ডে নারীর সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সব শ্রেণী পেশার মানুষের সহযোগিতা করতে হবে। দারিদ্র ও ক্ষুধামুক্ত দেশ গড়তে সকল কর্মকাণ্ডে নারীর সমান অধিকার প্রয়োজন। নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রত্যেক পুরুষ ও নারীকে এগিয়ে আসতে হবে। গতকাল শুক্রবার সকালে জেলা পরিষদের আব্দুল জববার মিলনায়তনে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন ও মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের আয়োজনে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিশ্বের নারী দিবস উদযাপনের প্রধান লক্ষ্য এক এক রকম। কোথাও নারীর প্রতি সাধারণ সম্মান ও শ্রদ্ধা মুখ্য বিষয় হয়, আবার কোথাও নারীদের আর্থিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠা বেশি গুরুত্ব পায়। তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে এবার আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করছে বাংলাদেশ সরকার। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে,‘নারীর তথ্য পাওয়ার অধিকার, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার’। এসব স্লোগান বাস্তবায়নের অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে কুষ্টিয়ায় নানা আয়োজনে দিবসটি পালিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন ও মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের আয়োজনে ওয়েভ ফাউন্ডেশন, নিকুশিমাজ মহিলা কল্যাণ সংস্থা, দাবিক, মুক্তি নারী ও শিশু উন্নয়ন সংস্থা, ব্রাক, দিশা, মহিলা উন্নয়ন সংস্থা কুষ্টিয়া জেলা শাখা, ফেয়ার, তৃষ্ণা, জাগরণী চক্র,সেতু, সরকার ফাউন্ডেশন এডাব ও আলোর দিশা সংস্থার সহযোগীতায় সকাল ১০টায় কুষ্টিয়া পৌরসভা বিজয় উল্ল¬াস চত্বর থেকে বর্ণাঢ্য র্যালী বের করে। র্যালীটি শহরের প্রধান এন এস রোড প্রদক্ষিণ শেষে জেলা পরিষদের আলোচনা সভায় এসে শেষ হয়। কুষ্টিয়া মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা হাসিনা বেগমের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, জেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মুর্শেদ আলম, এডাব কুষ্টিয়ার সহ-সভাপতি ও নিকুশিমাজ মহিলা কল্যাণ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ও সভানেত্রী সালমা সুলতানা। সভায় বক্তব্য রাখেন সফল নারী উদ্দ্যোক্তা এলাচী বেগম, ব্রাক প্রতিনিধি মোতাহার হোসেন, এলজিএডি প্রতিনিধি হাবিবুর রহমান, এডাব কো-অর্ডিনেটর আনোয়ার হোসেন বুলবুল,ওয়েভ ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি ফিরোজ আহমেদ, মহিলা উন্নয়ন সমিতি সভানেত্রী নিলুফা আক্তার নাসরিন, তৃষ্ণা প্রতিবন্ধি নারী পরিষদের প্রতিনিধি প্রীতি খাতুন। প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে আরো বলেন, নারীদের মানসিকতা বিকাশ ও তথ্য জানার জন্য সর্ব প্রথম শিক্ষার প্রয়োজন। তাই সমাজের সর্বস্তর থেকে নারী শিক্ষার প্রতি এগিয়ে আসতে হবে। তবেই দেশকে উন্নয়নের চরম শিখরে পৌছে দিতে পারব। তথ্য পাওয়ার অধিকার ছাড়াও নারীর ক্ষমতায়ন, প্রশাসনে নারীদের অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি ও পারিবারিক সহিংসতা রোধে আইনি পদক্ষেপ সম্পর্কে সচেতন করা হবে নারীদের। বাংলাদেশে নারী উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। যা অনেক উন্নত দেশেও দেখা যায় না। যদিও নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে অর্জিত সাফল্য উন্নত বিশ্বের সমান নয়, কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমাদের অর্জন অনেক উন্নত দেশের চেয়ে কম নয়। আলোচনা শেষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এতে স্থানীয় শিল্পীরা সঙ্গীত পরিবশেন করেন। অনুষ্ঠানটি সার্বিক উপস্থাপনা ও পরিচালনা করে জেলা মহিলা অধিদপ্তরের প্রোগাম অফিসার মর্জিনা খাতুন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন