শুক্রবার, ১১ মে, ২০১২

বিশ্বকবির ১৫১ তম জন্মবার্ষিকীর সমাপনীতে বনমালী ভৌমিক রবীন্দ্রনাথের মানব দর্শন ও সঙ্গীত বিশ্বাঙ্গনে আজ সার্বজনিন বিদিত

আরিফ মেহমুদ ॥ কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক (যুগ্ম সচিব) বনমালী ভৌমিক বলেছেন, বাংলা সাহিত্য সৌধের কালজয়ী প্রতিভা বিশ্বকবি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মহান সৃষ্টি গান, কবিতা নাটক, উপন্যাস আজ বাংলা ভাষা-ভাষী মানুষই শুধু নয়, বিশ্বের অনেক জাতি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছে। বাংলা সাহিত্যে তিনি প্রথম কবি যিনি তিন দেশের জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা। বাংলা সাহিত্যের এমন কোন শাখা নেই যেখানে তাঁর প্রতিভার স্বাক্ষর নেই। অন্তহীন জীবন,মানবাত্মা এবং প্রকৃতির চিরন্ত সৌন্দর্যের কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আমরা  সত্য বলার সাহস পাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সহিত্যকর্ম থেকে। প্রকৃতিক প্রেমী কবি রবীন্দ্রনাথ প্রকৃতি ও পল্লীকে একসূত্রে গেঁথেছিলেন। তাই প্রকৃতির টানে ছুটে এসেছেন কুষ্টিয়ার শিলাইদহে। জীবনের অনেক সময় তিনি কুষ্টিয়ার শিলাইদহের এই মাটিতে কাটিয়েছেন। রচনা করেচেন গীতাঞ্জলীর মত বিখ্যাত সব সাহিত্য কর্ম। যার পদচিহ্ন আজো কুষ্টিয়ার মাটি বুকে ধারণ করে রয়েছে। তাঁর অমর সেই গান ‘যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে’। এমন অসংখ্য গান। বিশ্ব কবি’র মানব দর্শন ও সঙ্গীত আজ সার্বজনিন বিদিত বিশ্বাঙ্গনে। তিনি এই শিলাইদহের কুঠিবাড়ীতে বসেই নয়া কৃষি আন্দোলনের ডাক দিয়ে ছিলেন। কৃষকের আগামী ভবিষ্যতের কথা, তাদের উন্নয়নে জীবনের সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ন পাওয়া নবেল পুরস্কারের সমুদয় টাকা কৃষি ব্যাংক স্থাপন করে কৃষকের মাঝে বিতরণ করেন। তাঁর এই উদার মানসিকতা চিরকাল স্মরনীয় হয়ে থাকবে। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শিলাইদহ কুঠিবাড়িতে কবিগুরুর সার্ধশত জন্মবার্ষিকী উৎসবের সমাপনী এবং তিন দিনব্যাপী ১৫১ তম জন্মবার্ষিকী উদযাপনের সমাপনী দিনের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন। কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. মহিউদ্দিনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কিশোরগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ডাঃ আব্দুল হাই ও শিলাইদহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সালাহ উদ্দিন খান তারেক। বিশ্বকবির শিলাইদহে অবস্থান, সাহিত্য চর্চ ও তাঁর স্মৃতি নিয়ে প্রধান আলোচক হিসেবে আলোচনা করেন সাপ্তাহিক ইস্পাত পত্রিকার সম্পাদক বিশিষ্ট সাংবাদিক আলহাজ্ব ওয়ালিউল বারী চৌধুরী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রফেসর ড. সরওয়ার মুর্শেদ রতন, কুষ্টিয়া সরকারী মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ড. জমির উদ্দিন, জাতীয় রবীন্দ্র সংগীত সম্মিলন পরিষদের ম মনির উজ জামান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট ড.মল্লিক আনোয়ার হোসেন। এতে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম হান্নান, সাংবাদিক সোহেল রানা, সাংবাদিক আরিফ মেহমুদ ও হাসিবুর রহমান রিজু প্রমুখ। অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রধান অতিথি সহ অন্যান্য অতিথিদের ফুলেল শুভেচ্ছা ও বিশেষ উপহার দিয়ে বরণ করে নেয়া হয়। প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে আরো বলেন, বাংলা সাহিত্যের এই কালজয়ী প্রতিভা একাধারে নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, কথা সাহিত্যিক, প্রাবন্ধীক, দার্শনিক, শিক্ষাবিদ ও সনমাজ সংস্কারক। তিনি শুধু সাহিত্যের মধ্যে ডুবে থাকেননি, মানব কল্যানে ও সমাজ সংস্কারের সময়োচিত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। নোবেল পুরস্কারের টাকা দিয়ে কৃষকের ভাগ্যান্নয়নে সমবায়ের মাধ্যমে চাষ করতে কৃষি খামার চালু করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সূফি সাধক ও বাউলদের প্রভাব ছিল অগাধ অসীম। এক সময় তাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে বাউল শিল্পী গগন হরকরার গানকে অনুসরণ করে আমাদের জাতীয় সঙ্গীত রচনা করেছিলেন। আলোচনানুষ্ঠান শেষে দ্বিতীয় পর্বে অনুষ্ঠিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে কুষ্টিয়া, কুমারখালী, ভেড়ামারা, খোকসা ও মিরপুরের বিভিন্ন গোষ্ঠি এবং সংগঠনের শিল্পীরা কবিতা আবৃত্তি, নাটক ও সঙ্গীত পরিবেশনায় অংশ নোন। গ্রামীণ মেলায় স্টলগুলোতে হস্ত ও কুটির শিল্প ছাড়াও বিভিন্ন সামগ্রীর পসরা সাজিয়ে বসেছে দোকানীরা। এতে গ্রাম-বাংলার নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষপত্র আর হস্ত ও কুটির শিল্পসহ রয়েছে রকমারী পণ্যের সমাহার। বিকিকিনিও হচ্ছে ভালো। শিলাইদহের এসব আয়োজনকে ঘিরে সমাপনী দিন বৃহস্পতিবারেও ছিল মানুষের উপচেপড়া ভিড়। উৎসবের আমেজে দুর-দুরান্ত থেকে আগত এসব নারী-পুরুষের পদচারনায় মুখরিত হয়ে আছে কুঠিবাড়ী চত্বর। কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের আয়োজনে শিলাইদহ কুঠিবাড়িতে কবিগুরুর সার্ধশত জন্মবার্ষিকী উৎসবের সমাপনী এবং তিন দিনব্যাপী ১৫১ তম জন্মবার্ষিকী উদযাপনের মূল অনুষ্ঠান শেষ হলেও কুঠিবাড়ী চত্বরে গ্রামীণ মেলা চলবে আরো ২দিন। তিনদিনব্যাপী অনুষ্ঠানের সার্বিক পরিচালনা ও উপস্থাপনায় ছিলেন কবি শুকদেব সাহা ও বেগম শিরিন আফরোজ শিলা।  



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন