আরিফ মেহমুদ ॥ কুষ্টিয়া-৪ কুমারখালী-খোকসা আসনের সংসদ সদস্য বেগম সুলতানা তরুন বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে রবীন্দ্রনাথ ছিলেন আমাদের প্রেরণা। রবীন্দ্রনাথের প্রতি বঙ্গবন্ধুর ভক্তির কারণে ১৯৬৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের প্রথিতযশা কয়েকজন শিল্পীর গাওয়া রবীন্দ্রসঙ্গীতের রেকর্ড তাঁকে উপহার দেয়া হয়। সেই অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, রবীন্দ্রনাথের কর্মে বাঙালির আশা-আকাক্ষা প্রতিফলিত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ছাড়া বাংলা ভাষা অসম্পূর্ণ।’ রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে জাতির পিতার এই দর্শন বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত নির্ধারণে ভূমিকা রেখেছে এবং কবিগুরু এভাবেই বাঙালির আবেগ-অনুভূতি, চিন্তা-চেতনায় মিশে গেছেন। গতকাল মঙ্গলবার শিলাইদহ কুঠিবাড়িতে কবিগুরুর সার্ধশত জন্মবার্ষিকী উৎসবের সমাপনী এবং ১৫১ তম জন্মবার্ষিকী উদযাপনের উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ সব কথা বলেন। কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক বনমালী ভৌমিকের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডঃ মহিউদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুভাষ চন্দ্র সাহা, কুষ্টিয়া জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী, সহ-সভাপতি হাজী রবিউল ইসলাম, তাইজাল আলী খান, ওয়াল্টনের নির্বাহী পরিচালক হুমায়ুন কবির, শিলাইদহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সালাহ উদ্দিন খান তারেক, জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম। বিশ্বকবির শিলাইদহে অবস্থান ও তাঁর স্মৃতি নিয়ে আলোচক হিসেবে আলোচনা করেন বিশিষ্ট লেখক ও কলামিষ্ট শেখ গিয়াসউদ্দিন আহমেদ মিন্ট্,ু কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ বদরুদ্দোজা, এস এম আফজাল হোসেন, বিশিষ্ট উপস্থাপক ক্যামিলিয়া মোস্তফা। শুরুতেই ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে স্বাগত কুমারখালি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান। আলোচনা শুরুর আগে কুষ্টিয়ার শিল্পকলা একাডেমী ও জাতীয় রবীন্দ্র সংগীত সম্মিলন পরিষদের যৌথ অংশগ্রহনে অনুষ্ঠানের উদ্ধোধনী সংগীত পরিবেশিত হয়। মূল অনুষ্ঠান শুরুর আগে কুঠিবাড়িতে জেলা পরিষদের ব্যবস্থাপনায় নির্মিত গীতাঞ্জলী নামের দ্বিতল ডাকবাংলো ভবনের উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি বেগম সুলতানা তরুন এমপি। প্রধান অতিথির বক্তব্যে বেগম সুলতানা তরুন আরো বলেন, বাংলা সাহিত্যকে আমাদের কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সর্ব প্রথম বিশ্ব সভায় উপস্থাপন ও পরিচিত করেন। বাঙালি হয়েও তিনি ছিলেন বিশ্ব মানবতার সন্তান। এ যাবতকাল সারা বিশ্বে যারা সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন, তাদের কেউ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো বিশ্বব্যাপী জননন্দিত হতে পারেননি। তাঁর গান,কবিতা আজও মানুষকে বিমোহিত করে। তাঁর অসাধারন সৃষ্টি “সোনার তরী” আজও কবিতা প্রেমিদের কাছে অবাক বিস্ময়! আজও সাহিত্য সমালোচকেরা তাঁর “সোনার তরী” নিয়ে বহুমুখী ব্যাখ্যায় ব্যাপৃত। তিনি বলেন, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জমিদার হয়েও অত্যন্ত প্রজা হিতৈষী ছিলেন। তার স্বাক্ষর রেখে গেছেন আমাদের এই ঐতিহ্যবাহি শিলাইদহ জমিদারীতে। সেকারনে জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভারতের শান্তি নিকেতনের আদলে শিলাইদহে দ্বিতীয় শান্তি নিকেতন প্রতিষ্টার প্রতিশ্র“তি দিয়েছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ঘোষনা দিয়েছেন শিলাইদহে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে। তিনি বলেন, আমার বিশ্বাস কবি গুরুর অত্যন্ত প্রিয় এই শিলাইদহতেই অল্প সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক কাজ শুরু হবে। পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে বাঙালির স্বাধিকারের লড়াই থেকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ হয়ে উঠেছিলেন আমাদের চেতনার ভিত্তি, প্রেরণার বাতিঘর। জাতীয় মুক্তির লড়াইয়ের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ আমাদের আপন হয়ে উঠেছেন। তাঁর গান আমাদের দেশ সহ তিনটি দেশের জাতীয় সংগীত। তাঁর প্রতি আমাদের আবেগ ও ভালোবাসা তীব্র ও গভীর। মহান স্বাধীনতা উত্তর আমার শ্রদ্ধেয় শ্বশুর মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, এই আসনের সাবেক এমপি শহীদ গোলাম কিবরিয়া রবীন্দ্রনাথের শিলাইদহকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার ভেতর দিয়ে জাতির সামনে তুলে ধরতে চেয়েছিলেন। আমার স্বামী এই আসনের সাবেক এমপি,আপনাদের সবার প্রিয় জননেতা প্রয়াত আবুল হোসেন তরুন তাঁর জীবদ্দশায় আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন বিশ্বকবির স্মৃতি বিজড়িত শিলাইদহের কুঠিবাড়ি তার সমহিমায় উদ্ভাসিত হোক। তাদের স্বপ্ন আজ স্বার্থক হয়েছে। রবীন্দ্র নাথের জীবনের অর্ধেক সময় যেখানে কেটেছে সেই শিলাইদহে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন শুধু রবীন্দ্রনাথের স্বপ্ন পুরণ নয় বঙ্গবন্ধুর ঘোষণারও স্বার্থকতা পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার সত্যতা পাবে এ অঞ্চলের মানুষ। এদিকে তিনদিন ব্যাপী অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে শিলাইদহ কুঠিবাড়ি হয়ে উঠেছে অসংখ্য রবীন্দ্রপ্রেমী পদচারণায় মুখর। কুঠিবাড়ির আঙ্গীনা পরিণত হয়েছে মিলন মেলায়। অনুষ্ঠান শুরুর অনেক আগেই কুঠিবাড়ির পুকুর ঘাট, বকুলতলা, আম্রকাননে রবীন্দ্রপ্রেমীরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আসন পেতে বসেছে। কুঠিবাড়ির বাইরে বিস্তৃর্ণ জায়গা জুড়ে বসেছে ৫দিন ব্যাপী রবীন্দ্র মেলা। মেলায় রবীন্দ্রনাথের গানের ক্যাসেট, গেঞ্জি, কাঠের তৈরি রবীন্দ্র ভাষ্কর্য, ছবি, পোষ্টার, শিশুদের নানা রকম খেলনা, ঘর সাজানো আসবাব পত্র ও নানা রকম খাবারের পসরা বসেছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন