আরিফ মেহমুদ ॥ গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী আব্দুল মান্নান খান বলেছেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এমন একজন চিন্তাবিদ যিনি বাঙালীর প্রেরণার জায়গা সুষ্টি করতে পেরেছেন। বাঙালী জাতি বড় ভাগ্যবান যাদের সঠিক পথের দিশারী হিসেবে পেয়েছেন রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল, লালন সাঁইজি ও গগন হরকরার মত অসাধারণ চিন্তা গুরু। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন সাহিত্য সংস্কৃতির মান্যতার প্রতীক। বাংলা সাহিত্যের এই কালজয়ী প্রতিভা একাধারে নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, কথা সাহিত্যিক, প্রাবন্ধীক, দার্শনিক, শিক্ষাবিদ ও সনমাজ সংস্কারক। তিনি শুধু সাহিত্যের মধ্যে ডুবে থাকেননি, মানব কল্যানে ও সমাজ সংস্কারের সময়োচিত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। নোবেল পুরস্কারের টাকা দিয়ে কৃষকের ভাগ্যান্নয়নে সমবায়ের মাধ্যমে চাষ করতে কৃষি খামার চালু করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সূফি সাধক ও বাউলদের প্রভাব ছিল অগাধ অসীম। এক সময় তাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে বাউল শিল্পী গগন হরকরার গানকে অনুসরণ করে আমাদের জাতীয় সঙ্গীক রচনা করেছিলেন। গতকাল বুধবার সন্ধায় শিলাইদহ কুঠিবাড়িতে কবিগুরুর সার্ধশত জন্মবার্ষিকী উৎসবের সমাপনী এবং ১৫১ তম জন্মবার্ষিকী উদযাপনের ২য় দিনের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ সব কথা বলেন। কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক বনমালী ভৌমিকের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়া পৌরসভার মেয়র আনোয়ার আলী, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য ও খোকসা উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব সদর উদ্দিন খান, মন্ত্রী পতœী সৈয়দা হাসিনা সুলতানা, কিশোরগঞ্জ সরকারী মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর আশরাফ ও জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম। বিশ্বকবির শিলাইদহে অবস্থান, সাহিত্য চর্চ ও তাঁর স্মৃতি নিয়ে প্রধান আলোচক হিসেবে আলোচনা করেন বিশিষ্ট গবেষক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রফেসর ড.আবুল আহসান চৌধুরী, খোকসা ডিগ্রী কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস, কুমারখালী প্রেসক্লাবের সভাপতি বাবলু জোয়ার্দ্দার। স্বাগত বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) খন্দকার আজিম আহমেদ। অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রধান অতিথি সহ অন্যান্য অতিথিদের ফুলেল শুভেচ্ছা ও বিশেষ উপহার দিয়ে বরণ করে নেয়া হয়। প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে আরো বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ জাতির স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অপার সৃষ্টিকে প্রেরণা হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। তাই কবির অমর সৃষ্টি আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসী গানটিকে স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গীতের গভীর মাধূর্যতা আমাদের অহরনিশি প্লাবিত করে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিশালতা এবং তাঁর অপূর্ব সৃষ্টিকে আত্মা দিয়ে উপলব্ধি করতে হলে আমাদের রবঅন্দ্র চর্চা আরো বাড়াতে হবে। আমি আশা করবো জগৎ সংসারকে পুরোপুরি জানতে নতুন প্রজন্ম রবীন্দ্র সৃষ্টিতে অবগাহন করবে। ঙ্গবঙ্গবন্ধু শেখ মুুজিবুর রহমানকে বাংলা সাহিত্য ও সাংস্কৃতির এক মহানায়ক এবং রাজনীতির মাহকবি হিসেবে উল্লে¬খ করে অনুষ্ঠানের প্রধান আলোচক বিশিষ্ট হগেষক ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রফেসর ড.আবুল আহসান চৌধুরী বলেন, তিনি রবীন্দ্রনাথকে ভালোবাসতেন। তাঁর গান তাঁকে উদ্ধুদ্ধ করেছিল। যারা ৬০ এর দশকে বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতা শুনেছেন। তারা নিশ্চয় জানেন যে, ওই সময় বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠে বার বার ধ্বনিত হয়েছে,‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে, অথবা ‘উদয়ের পথে শুনি তার বাণী, ভয় নাই ওরে ভয় নাই’ রবীন্দ্রনাথের এসব গান ও কবিতা। তিনি বলেন, রবীন্দ্রনাথ তার গানের মধ্যেই তাঁকে খুজে পাওয়ার কথা বলে গেছেন তোমার পানে চাহিয়া তোমাকেই খুজি। রবীন্দ্রনাথ একজনমে কি বিচিত্রগামী ছিলেন সাহিত্যের এমন কোন শাখা নেই যেকানে তাঁর প্রতিভার স্বাক্ষর নেই। জমিদারী দেখতে এসে স্বভাগত স্বতন্ত্র ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তিনি জাত-পাত ও মানুষে মানুষের বিভেদ ঘোচালেন। জাতের বৈষম্য ভুলে সবাইকে এক কাতারে দাঁড় করিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ তাঁর ছোট গল্পের রসদ পেয়েছিলেন কুষ্টিয়ার নিভৃত পল্লী শিলাইদহে এসে। তাই আমাদের প্রত্যাশা ও দাবি, বাংলা ভাষা ও সাহিত্য-সাংস্কৃতির মহানায়ক এবং রাজনীতির মহাকবি এই দুই এর সম্মিলিত আকাংখা পূর্ণ হবে যদি শিলাইদহে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়। আলোচনানুষ্ঠান শেষে দ্বিতীয় পর্বে অনুষ্ঠিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে কুষ্টিয়া, কুমারখালী, ভেড়ামারা, খোকসা ও মিরপুরের বিভিন্ন গোষ্ঠি এবং সংগঠনের শিল্পীরা কবিতা আবৃত্তি, নাটক ও সঙ্গীত পরিবেশনায় অংশ নোন। গ্রামীণ মেলায় স্টলগুলোতে হস্ত ও কুটির শিল্প ছাড়াও বিভিন্ন সামগ্রীর পসরা সাজিয়ে বসেছে দোকানীরা। এতে গ্রাম-বাংলার নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষপত্র আর হস্ত ও কুটির শিল্পসহ রয়েছে রকমারী পণ্যের সমাহার। বিকিকিনিও হচ্ছে ভালো। শিলাইদহের এসব আয়োজনকে ঘিরে দ্বিতীয় দিন বুধবারও ছিল মানুষের উপচেপড়া ভিড়। উৎসবের আমেজে দুর-দুরান্ত থেকে আগত এসব নারী-পুরুষের পদচারনায় মুখরিত হয়ে আছে কুঠিবাড়ী চত্বর।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন