এ.এইচ.এম.আরিফ ॥ কুষ্টিয়া শহরের বসবাসরত জনসাধারণের আবাসন সমস্যা দূর করতে কুষ্টিয়া হাউজিং এস্টেটের সম্প্রসারিত নতুন এফ ব¬কের উন্নয়ন কাজ দ্রুত গতিতে চললেও উন্নয়ন কাজে চরমভাবে ব্যাহত করছে কুষ্টিয়ার পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাধের জন্য তৈরী সিসি ব¬ক। এ যে গোঁদের উপর বিষ ফোড়া। পেশাগত অথবা ব্যবসায়ীক কারন কিংবা ছেলে-মেয়ের উচ্চ শিক্ষার লেখাপড়া সহ নানান কারনে কুষ্টিয়া শহেরর জনবসতি গড়ে তুলছে গ্রামের শহরমুখি মানুষেরা। ফলে দিনের পর দিন শহরের আবাসন সমস্যা বেড়েই চলেছে। জাতীয় গৃহায়ণ অধিদপ্তরের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কুষ্টিয়ার হাউজিং এস্টেটের এলাকা সম্প্রসারিত করে নতুন ভাবে এফ ব¬ক ঘোষনা করে লটারীর মাধ্যমে প¬ট বরাদ্দ দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। শহরবাসীর স্বপ্নের আবাসন বরাদ্দকৃত প¬ট বুঝে দেয়ার আলোকে সম্প্রসারিত নতুন এফ ব¬কের উন্নয়ন কাজ হাতে নেয়। শহরের বসবাসরত জনসাধারণের আবাসন সমস্যা দূর করতে কুষ্টিয়া হাউজিং এস্টেটের সম্প্রসারিত নতুন এফ ব¬কের উন্নয়ন কাজ দ্রুত গতিতে চললেও চরমভাবে উন্নয়ন কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কুষ্টিয়া শহর রক্ষা বাধ নিমার্ণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড সিসি ব¬ক নির্মানের জন্য ট্রেন্ডার দিলে কাজ পান নূরু কন্সট্রাকশন নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। নিয়ম অনুযায়ী পাউবোর সিসি ব¬ক নির্মাণ কাজ পাউবোর নিজস্ব জায়গায় অথবা নদীর নিকটবর্তী কিংবা শহর রক্ষা বাধ উন্নয়নের কাজ থেকে অনতি দূরে। কিন্তু এ নিয়মের চরম ব্যাত্যয় ঘটেছে কুষ্টিয়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ড সিসি ব¬ক নির্মানের ক্ষেত্রে। ঠিকারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী তার কাজের সুবিধার জন্য বেছে নেয় কুষ্টিয়া হাউজিং এস্টেটের সম্প্রসারিত নতুন এফ ব¬কের খোলা জায়গা। কুষ্টিয়া হাউজিং এস্টেটের এসও বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত এসডিই হামিদুর রহমানের সাথে ১বছরের জন্য ৩ লাখ টাকায় গোপন যুক্তি করে কোটি টাকার উন্নয়ন কাজের উপর এসও বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত এসডিই হামিদুর রহমানের নির্দেশে শুরু করে সিসি ব¬কের নির্মাণ কাজ। একের পর এক সিসি ব¬ক তৈরী করে সম্প্রসারিত নতুন এফ ব¬কের খোলা জায়গা দখল করেই চলেছে। কুষ্টিয়া হাউজিং এস্টেটের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা জানান, ভারপ্রাপ্ত এসডিই হামিদুর রহমানের সাথে ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের গোপন যুক্তি অনুযায়ী সিসি ব¬ক নির্মাণের এক সপ্তাহের মধ্যে ব¬কগুলো সরিয়ে হাউজিংয়ের সম্প্রসারিত নতুন এফ ব¬কের খোলা জায়গা ফাকা করে দেয়ার কথা। কিন্তু পরে তার নির্দেশের তোয়াক্কা না করেই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সিসি ব¬ক একের পর এক নতুন এলাকা দখল করলেও ভারপ্রাপ্ত এসডিই হামিদুর রহমান অজ্ঞাত কারনে মুখে কুলুপ এটেছেন। কুষ্টিয়া শহরবাসীর স্বপ্নের আবাসন বরাদ্দকৃত প¬টপ্রাপ্তদের দাবী কুষ্টিয়া হাউজিং এস্টেটের ভারপ্রাপ্ত এসডিই হামিদুর রহমানের সাথে গোপন যুক্তি হোক বা না হোক অনতিবিলম্বে সম্প্রসারিত নতুন এফ ব¬কের উন্নয়ন কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে সিসি ব¬ক অন্যত্র সরিয়ে নিতে হবে।
শুক্রবার, ১১ মে, ২০১২
প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্র“তির দুই বছর পার হলেও কুষ্টিয়ার শিলাইদহে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে কোন উদ্যোগ নেই
আরিফ মেহমুদ ॥ বাংলা সাহিত্য সৌধের কালজয়ী প্রতিভা কবিগুরুর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিমাখা কুষ্টিয়ার শিলাইদহে ভারতের শান্তি নিকেতনের আদলে রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে কোন প্রক্রিয়াই শুরু হয়নি আজো। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার দুই বছর পার হলেও ঘোষণা শুধু কাগজে-কলমেই রয়ে গেছে। অন্য দিকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিলাইদহের কুঠিবাড়িকে দ্বিতীয় শান্তিনিকেতন হিসেবে গড়ে তোলার যে স্বপ্ন দেখে ছিলেন সে স্বপ্নও বাস্তবায়িত হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা সত্বেও রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে কোন প্রক্রিয়া শুরু না হওয়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর পরই বঙ্গবন্ধুর সেই ঘোষণার কথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তুলে ধরা হলে বিষয়টি তিনি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনার আশ্বাস দেন। পরবর্তীতে গত ২০১০ সালের ৮ মে ওসমানী মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত কবির জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী কুষ্টিয়ায় রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের স্পষ্ট ঘোষণা দেন। প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষনাকে বাস্তবায়নে ঢাকাস্থ্য কুষ্টিয়া জেলা সমিতির মহাসচিব আব্দুর রাজ্জাক সহ সমিতির নেতৃবৃন্দ তথ্যমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী মহাদ্বোয়ের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রাখে এবং কুষ্টিয়ার শিলাইদহের কুষ্টিয়ার সামনে সমিতির পক্ষে একটি সাইনকোর্ড টানিয়ে দেয়। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ কুষ্টিয়া সফরকালে কুষ্টিয়ায় রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রতিশ্র“তি দেন। সেই প্রতিশ্র“তি বাস্তবায়নে তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ শিক্ষা মন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদকে একটি ডিও লেটার ও চিঠি লিখেন। ওই চিঠিতে তিনি উল্লে¬খ করেন যে, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ এক মহান যুগ স্রষ্টা পুরুষ। তার নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির মাধ্যমে বাংলা ভাষা ও বাঙালি জাতি বিশ্ব দরবারে বিপুল পরিচিতি লাভ করে এবং তারই ধারাবাহিকতায় বাঙালির স্বতন্ত্র জাতি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এই মহান কবির স্মৃতি ও কর্মের যোগ্য মর্যাদা দানের জন্যই জাতির জনক শিলাইদহে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের স্বপ্ন দেখেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কবিগুরুর ১৫০তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন কিংবা তদপূর্বে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করলে আমাদের জ্ঞান, ভাষা ও সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক যুক্ত হবে। তথ্যমন্ত্রী আরো উল্লে¬খ করেন, প্রধানমন্ত্রী আমাকে আপনার সাথে পরামর্শ করে এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সদয় নির্দেশনা দেন। চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয় যে, বর্ণিত প্রেক্ষিতে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য আপনাকে অনুরোধ করছি। এখবর কুষ্টিয়ার সাহিত্য-সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ছড়িয়ে পড়লে বিশিষ্ট গবেষক ড. আবুল আহসান চৌধুরী বলেন, 'সংশ্লি¬ষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর প্রয়োজনীয় উদ্যোগের অভাবে শিলাইদহের কুঠিবাড়ি আজও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারেনি। অথচ এই শিলাইদহেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর সাহিত্যকর্মের উল্লে¬খযোগ্য অংশ রচনা করেছিলেন। এমন কী নোবেল-জয়ী কাব্য 'গীতাঞ্জলী'র মূল-সুর তিনি শিলাইদহেই পেয়েছিলেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়নে এবং রবীন্দ্রনাথের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই কুষ্টিয়ার শিলাইদহেই রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন জরুরী। গবেষক ম. মনিরুজ্জামান বলেন, 'রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সাহিত্যের রস অন্বেষণের জন্য বারবার শিলাইদহে এসেছেন। অথচ ঐতিহাসিক এই কুঠিবাড়িকে কেন্দ্র করে সরকারের কোনো আগ্রহ নেই। বঙ্গবন্ধুর সময় কুঠিবাড়িকে দ্বিতীয় শান্তিনিকেতন করার যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, সেটি এখন আর আলোচনায় আসে না।' কুষ্টিয়ার কবি মতিউল আলম জানান, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা বর্তমান সরকারের নৈতিক দায়িত্ব। এখানে অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য তিনি সরকারের কাছে দাবি জানান। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা এবং এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বরাত দিয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য তথ্যমন্ত্রী শিক্ষামন্ত্রীকে চিঠি দেয়ার পরও বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন প্রক্রিয়া ও প্রকল্পটি অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। কোন উদ্যোগ গ্রহণ না করায় এলাকার মানুষের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে শিলাইদহে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পটি সিরাজগঞ্জের শাহাজাদপুরের কাছারিবাড়িতে স্থানান্তরের জন্য সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট একটি মহল পাঁয়তারা চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। জমিদারী পরিচালনার জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৯১ সালে কুঠিবাড়িতে আসেন। কবির নানা সাহিত্য কর্ম সৃষ্টিতে শিলাইদহ গ্রাম ও কুঠিবাড়ির বিশেষ অবদান ও পটভূমিকা রয়েছে। শিলাইদহের নিভৃত পল্লীতে বসে কবি প্রবন্ধ, কবিতা, গল্পসহ অসংখ্য গান রচনা করেছেন। এরমধ্যে গীতাঞ্জলী, চিত্রা, ক্ষণিকা, উর্বশী ও দুই বিঘা কবিতাসহ অসংখ্য গান লিখেছেন তিনি। রবীন্দ্র কুঠিবাড়ীর কাস্টোডিয়ান বিভাগের ইনচার্জ মহিদুল ইসলাম বলেন, এ বিভাগের কোনো আপৎকালীন ফান্ড নেই। কুঠিবাড়ির সামান্যতম উন্নয়নের জন্যও খুলনা প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের দিকে চেয়ে থাকতে হয়। সরকারিভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করলে কবিগুরুর শিলাইদহের কুঠিবাড়ি হতে পারে একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটনকেন্দ্র।
কুষ্টিয়া মটরসাইকেল চোর চক্রের ৪ সদস্য আটক
আরিফ মেহমুদ ॥ কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনের সামনে ফয়সাল টাওয়ার থেকে ৫টি মটসাইকেল চুরি হয়ে যাওয়া ঘটনার ২৪ দিন পর গতকাল শুক্রবার ৪ চোরকে আটক করে কুষ্টিয়া পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করে পুলিশ। সংবাদ সম্মেলনে মটরসাইকেল চোর চক্রের ৪ সদস্য আটক দেখানো হয়। ৫টি মটসাইকেল চুরি হয়ে যাওয়া ঘটনায় ৪ চোর আটক করলেও মোটরসাইকেল উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। আটকতৃরা হল-দৌলতপুর উপজেলার দৌলতখালী গ্রামের মৃত হামেদ আলীর ছেলে চোর চক্রের সদস্য মিরাজ (৩৫), মিরপুর থানার খাদেমপুর গ্রামের মৃত আয়েন উদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে আবুল হোসেন (৪২), একই উপজেলার মৃত আপেল উদ্দিনের ছেলে গেদা (৪৫), বাড়াদী মৃত নফছের আলীর ছেলে আনোয়ার হোসেন (৩২)। পুলিশ সুপার মফিজ উদ্দিন জানান, গত ১৮ এপ্রিল বুধবার ফয়সাল টাওয়ার থেকে একে একে ৫টি মটরসাইকেল চুরির ঘটনায় পুলিশের কাছে স্বিকারোক্তি করেছে আটকৃত চোর চক্রের ৪সদস্য। আটকৃতরা জানায়, ঘটনার ৪দিন আগে অথ্যাৎ ১৪ এপ্রিল শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে উদিবাড়ী মনসুর শাহর মাজারের পুকুরের ধারে আন্তজেলা মটরসাইকেল চোর চক্রের নেতা শাহাবুল, মিরাজ, আবুল হোসেন, গেদা, আনোয়ার হোসেন , কুদ্দুস ও আশরাফ মিলে জরুরী মিটিং করে। সেখানে কিভাবে চুরি হবে সমস্থ্য বিষয়ে প্লান তৈরি করা হয়। কথা মত কাজ ঘটনার দিন রাত ১০ টার পর একে একে সবাই হাজির হয় মনসুর শাহর মাজারের পুকুর ঘাটে। সেখানে কে কি দায়িয়ক্ত পালন করবে তা বুঝিয়ে দেন দল নেতা শাহাবুল। এর পর রাত গভীর হলে শুরু হয় অভিযান। প্রথমে ফয়সাল টাওয়ারের গেটে আসেন আবুল হোসেন নাইটগার্ড কি করছে তা দেখতে। দেখে ঘুমিয়েছে। পরে তারা ফয়সাল টাওয়ারের পিছন দিক যেয়ে একে একে মটরসাইকেলের তালা কাটার দিয়ে কেটে রশি দিয়ে বাঁশের সাহায্যে কাঁধে করে সীমানা প্রাচীর ডিঙ্গিয়ে রাস্তায় আনে একেএকে ৪টি মটরসাইকেল । সেখান থেকে মনসুর শাহ মাজারের ঝোপের মধ্যে লুকিয়ে রাখে হয় মটরসাইকেল গুলো। শাহাবুল ও মিরাজ মিলে পরে শেষে মটরসাইকেলটি টাকিমারার দিকে নিয়ে যায়। যা পরে পুলিশ উদ্ধার করে। শাহাবুল ও মিরাজ দূর্ঘটনার কবলে পড়লে মটরসাইকেলটি ফেলে পালিয়ে যা বলে মিরাজ স্বীকার করে। বাঁকী ৪টি মটরসাইকেল শাহাবুল নিয়ে যায়। ঘটনার ৩ দিন পর শুক্রবার রাতে মিরাজ, আবুল হোসেন, গেদা, আনোয়ার হোসেন কে বিক্রি হওয়া মটরসাইকেলের ভাগ দেন ৫/৬ হাজার টাকা করে। তবে ঘটনার পর একটি উদ্ধার হলেও বাকী মটরসাইকেল গুলো এখনো উদ্ধার হয়নি। পুলিশ সুপার মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ জানান, মটরসাইকেল চোর চক্রের মূল হোতা শাহাবুলকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে। তাকে পাওয়া গেলে সব মটরসাইকেল উদ্ধার করা সম্ভব হবে। পুলিশ হারিয়ে যাওয়া মটরসাইকেল উদ্ধারে চেষ্টা চালাচ্ছে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুভাষ চন্দ্র সাহা, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার জয়নূল আবেদীন, সহকারী পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামান মিঠু, সদর সার্কল মোস্তফা কামাল, মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ কাজী জালাল উদ্দিনসহ পুলিশের উদ্ধতন কর্মকর্তারা। হারিয়ে যাওয়া মটরসাইকেল গুলো হল-টিভিএস এ্যাপাচি, হিরোহোন্ডা, প্যালসার, ডিকভারী, হিরোহোন্ডা স্পেলিন্ডার প্লাস। তবে পুলিশ মটরসাইকেল উদ্ধার করলে স্বাধুবাদ জানাবে কুষ্টিয়া মানুষ।
বিশ্বকবির ১৫১ তম জন্মবার্ষিকীর সমাপনীতে বনমালী ভৌমিক রবীন্দ্রনাথের মানব দর্শন ও সঙ্গীত বিশ্বাঙ্গনে আজ সার্বজনিন বিদিত
আরিফ মেহমুদ ॥ কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক (যুগ্ম সচিব) বনমালী ভৌমিক বলেছেন, বাংলা সাহিত্য সৌধের কালজয়ী প্রতিভা বিশ্বকবি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মহান সৃষ্টি গান, কবিতা নাটক, উপন্যাস আজ বাংলা ভাষা-ভাষী মানুষই শুধু নয়, বিশ্বের অনেক জাতি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছে। বাংলা সাহিত্যে তিনি প্রথম কবি যিনি তিন দেশের জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা। বাংলা সাহিত্যের এমন কোন শাখা নেই যেখানে তাঁর প্রতিভার স্বাক্ষর নেই। অন্তহীন জীবন,মানবাত্মা এবং প্রকৃতির চিরন্ত সৌন্দর্যের কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আমরা সত্য বলার সাহস পাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সহিত্যকর্ম থেকে। প্রকৃতিক প্রেমী কবি রবীন্দ্রনাথ প্রকৃতি ও পল্লীকে একসূত্রে গেঁথেছিলেন। তাই প্রকৃতির টানে ছুটে এসেছেন কুষ্টিয়ার শিলাইদহে। জীবনের অনেক সময় তিনি কুষ্টিয়ার শিলাইদহের এই মাটিতে কাটিয়েছেন। রচনা করেচেন গীতাঞ্জলীর মত বিখ্যাত সব সাহিত্য কর্ম। যার পদচিহ্ন আজো কুষ্টিয়ার মাটি বুকে ধারণ করে রয়েছে। তাঁর অমর সেই গান ‘যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে’। এমন অসংখ্য গান। বিশ্ব কবি’র মানব দর্শন ও সঙ্গীত আজ সার্বজনিন বিদিত বিশ্বাঙ্গনে। তিনি এই শিলাইদহের কুঠিবাড়ীতে বসেই নয়া কৃষি আন্দোলনের ডাক দিয়ে ছিলেন। কৃষকের আগামী ভবিষ্যতের কথা, তাদের উন্নয়নে জীবনের সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ন পাওয়া নবেল পুরস্কারের সমুদয় টাকা কৃষি ব্যাংক স্থাপন করে কৃষকের মাঝে বিতরণ করেন। তাঁর এই উদার মানসিকতা চিরকাল স্মরনীয় হয়ে থাকবে। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শিলাইদহ কুঠিবাড়িতে কবিগুরুর সার্ধশত জন্মবার্ষিকী উৎসবের সমাপনী এবং তিন দিনব্যাপী ১৫১ তম জন্মবার্ষিকী উদযাপনের সমাপনী দিনের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন। কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. মহিউদ্দিনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কিশোরগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ডাঃ আব্দুল হাই ও শিলাইদহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সালাহ উদ্দিন খান তারেক। বিশ্বকবির শিলাইদহে অবস্থান, সাহিত্য চর্চ ও তাঁর স্মৃতি নিয়ে প্রধান আলোচক হিসেবে আলোচনা করেন সাপ্তাহিক ইস্পাত পত্রিকার সম্পাদক বিশিষ্ট সাংবাদিক আলহাজ্ব ওয়ালিউল বারী চৌধুরী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রফেসর ড. সরওয়ার মুর্শেদ রতন, কুষ্টিয়া সরকারী মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ড. জমির উদ্দিন, জাতীয় রবীন্দ্র সংগীত সম্মিলন পরিষদের ম মনির উজ জামান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট ড.মল্লিক আনোয়ার হোসেন। এতে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম হান্নান, সাংবাদিক সোহেল রানা, সাংবাদিক আরিফ মেহমুদ ও হাসিবুর রহমান রিজু প্রমুখ। অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রধান অতিথি সহ অন্যান্য অতিথিদের ফুলেল শুভেচ্ছা ও বিশেষ উপহার দিয়ে বরণ করে নেয়া হয়। প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে আরো বলেন, বাংলা সাহিত্যের এই কালজয়ী প্রতিভা একাধারে নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, কথা সাহিত্যিক, প্রাবন্ধীক, দার্শনিক, শিক্ষাবিদ ও সনমাজ সংস্কারক। তিনি শুধু সাহিত্যের মধ্যে ডুবে থাকেননি, মানব কল্যানে ও সমাজ সংস্কারের সময়োচিত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। নোবেল পুরস্কারের টাকা দিয়ে কৃষকের ভাগ্যান্নয়নে সমবায়ের মাধ্যমে চাষ করতে কৃষি খামার চালু করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সূফি সাধক ও বাউলদের প্রভাব ছিল অগাধ অসীম। এক সময় তাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে বাউল শিল্পী গগন হরকরার গানকে অনুসরণ করে আমাদের জাতীয় সঙ্গীত রচনা করেছিলেন। আলোচনানুষ্ঠান শেষে দ্বিতীয় পর্বে অনুষ্ঠিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে কুষ্টিয়া, কুমারখালী, ভেড়ামারা, খোকসা ও মিরপুরের বিভিন্ন গোষ্ঠি এবং সংগঠনের শিল্পীরা কবিতা আবৃত্তি, নাটক ও সঙ্গীত পরিবেশনায় অংশ নোন। গ্রামীণ মেলায় স্টলগুলোতে হস্ত ও কুটির শিল্প ছাড়াও বিভিন্ন সামগ্রীর পসরা সাজিয়ে বসেছে দোকানীরা। এতে গ্রাম-বাংলার নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষপত্র আর হস্ত ও কুটির শিল্পসহ রয়েছে রকমারী পণ্যের সমাহার। বিকিকিনিও হচ্ছে ভালো। শিলাইদহের এসব আয়োজনকে ঘিরে সমাপনী দিন বৃহস্পতিবারেও ছিল মানুষের উপচেপড়া ভিড়। উৎসবের আমেজে দুর-দুরান্ত থেকে আগত এসব নারী-পুরুষের পদচারনায় মুখরিত হয়ে আছে কুঠিবাড়ী চত্বর। কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের আয়োজনে শিলাইদহ কুঠিবাড়িতে কবিগুরুর সার্ধশত জন্মবার্ষিকী উৎসবের সমাপনী এবং তিন দিনব্যাপী ১৫১ তম জন্মবার্ষিকী উদযাপনের মূল অনুষ্ঠান শেষ হলেও কুঠিবাড়ী চত্বরে গ্রামীণ মেলা চলবে আরো ২দিন। তিনদিনব্যাপী অনুষ্ঠানের সার্বিক পরিচালনা ও উপস্থাপনায় ছিলেন কবি শুকদেব সাহা ও বেগম শিরিন আফরোজ শিলা।
বিশ্বকবির জন্মবার্ষিকীর ২য় দিনের আলোচনায় আব্দুল মান্নান খান রবীন্দ্রনাথ ছিলেন বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতির মান্যতার প্রতীক
আরিফ মেহমুদ ॥ গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী আব্দুল মান্নান খান বলেছেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এমন একজন চিন্তাবিদ যিনি বাঙালীর প্রেরণার জায়গা সুষ্টি করতে পেরেছেন। বাঙালী জাতি বড় ভাগ্যবান যাদের সঠিক পথের দিশারী হিসেবে পেয়েছেন রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল, লালন সাঁইজি ও গগন হরকরার মত অসাধারণ চিন্তা গুরু। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন সাহিত্য সংস্কৃতির মান্যতার প্রতীক। বাংলা সাহিত্যের এই কালজয়ী প্রতিভা একাধারে নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, কথা সাহিত্যিক, প্রাবন্ধীক, দার্শনিক, শিক্ষাবিদ ও সনমাজ সংস্কারক। তিনি শুধু সাহিত্যের মধ্যে ডুবে থাকেননি, মানব কল্যানে ও সমাজ সংস্কারের সময়োচিত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। নোবেল পুরস্কারের টাকা দিয়ে কৃষকের ভাগ্যান্নয়নে সমবায়ের মাধ্যমে চাষ করতে কৃষি খামার চালু করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সূফি সাধক ও বাউলদের প্রভাব ছিল অগাধ অসীম। এক সময় তাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে বাউল শিল্পী গগন হরকরার গানকে অনুসরণ করে আমাদের জাতীয় সঙ্গীক রচনা করেছিলেন। গতকাল বুধবার সন্ধায় শিলাইদহ কুঠিবাড়িতে কবিগুরুর সার্ধশত জন্মবার্ষিকী উৎসবের সমাপনী এবং ১৫১ তম জন্মবার্ষিকী উদযাপনের ২য় দিনের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ সব কথা বলেন। কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক বনমালী ভৌমিকের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়া পৌরসভার মেয়র আনোয়ার আলী, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য ও খোকসা উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব সদর উদ্দিন খান, মন্ত্রী পতœী সৈয়দা হাসিনা সুলতানা, কিশোরগঞ্জ সরকারী মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর আশরাফ ও জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম। বিশ্বকবির শিলাইদহে অবস্থান, সাহিত্য চর্চ ও তাঁর স্মৃতি নিয়ে প্রধান আলোচক হিসেবে আলোচনা করেন বিশিষ্ট গবেষক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রফেসর ড.আবুল আহসান চৌধুরী, খোকসা ডিগ্রী কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস, কুমারখালী প্রেসক্লাবের সভাপতি বাবলু জোয়ার্দ্দার। স্বাগত বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) খন্দকার আজিম আহমেদ। অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রধান অতিথি সহ অন্যান্য অতিথিদের ফুলেল শুভেচ্ছা ও বিশেষ উপহার দিয়ে বরণ করে নেয়া হয়। প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে আরো বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ জাতির স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অপার সৃষ্টিকে প্রেরণা হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। তাই কবির অমর সৃষ্টি আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসী গানটিকে স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গীতের গভীর মাধূর্যতা আমাদের অহরনিশি প্লাবিত করে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিশালতা এবং তাঁর অপূর্ব সৃষ্টিকে আত্মা দিয়ে উপলব্ধি করতে হলে আমাদের রবঅন্দ্র চর্চা আরো বাড়াতে হবে। আমি আশা করবো জগৎ সংসারকে পুরোপুরি জানতে নতুন প্রজন্ম রবীন্দ্র সৃষ্টিতে অবগাহন করবে। ঙ্গবঙ্গবন্ধু শেখ মুুজিবুর রহমানকে বাংলা সাহিত্য ও সাংস্কৃতির এক মহানায়ক এবং রাজনীতির মাহকবি হিসেবে উল্লে¬খ করে অনুষ্ঠানের প্রধান আলোচক বিশিষ্ট হগেষক ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রফেসর ড.আবুল আহসান চৌধুরী বলেন, তিনি রবীন্দ্রনাথকে ভালোবাসতেন। তাঁর গান তাঁকে উদ্ধুদ্ধ করেছিল। যারা ৬০ এর দশকে বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতা শুনেছেন। তারা নিশ্চয় জানেন যে, ওই সময় বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠে বার বার ধ্বনিত হয়েছে,‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে, অথবা ‘উদয়ের পথে শুনি তার বাণী, ভয় নাই ওরে ভয় নাই’ রবীন্দ্রনাথের এসব গান ও কবিতা। তিনি বলেন, রবীন্দ্রনাথ তার গানের মধ্যেই তাঁকে খুজে পাওয়ার কথা বলে গেছেন তোমার পানে চাহিয়া তোমাকেই খুজি। রবীন্দ্রনাথ একজনমে কি বিচিত্রগামী ছিলেন সাহিত্যের এমন কোন শাখা নেই যেকানে তাঁর প্রতিভার স্বাক্ষর নেই। জমিদারী দেখতে এসে স্বভাগত স্বতন্ত্র ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তিনি জাত-পাত ও মানুষে মানুষের বিভেদ ঘোচালেন। জাতের বৈষম্য ভুলে সবাইকে এক কাতারে দাঁড় করিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ তাঁর ছোট গল্পের রসদ পেয়েছিলেন কুষ্টিয়ার নিভৃত পল্লী শিলাইদহে এসে। তাই আমাদের প্রত্যাশা ও দাবি, বাংলা ভাষা ও সাহিত্য-সাংস্কৃতির মহানায়ক এবং রাজনীতির মহাকবি এই দুই এর সম্মিলিত আকাংখা পূর্ণ হবে যদি শিলাইদহে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়। আলোচনানুষ্ঠান শেষে দ্বিতীয় পর্বে অনুষ্ঠিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে কুষ্টিয়া, কুমারখালী, ভেড়ামারা, খোকসা ও মিরপুরের বিভিন্ন গোষ্ঠি এবং সংগঠনের শিল্পীরা কবিতা আবৃত্তি, নাটক ও সঙ্গীত পরিবেশনায় অংশ নোন। গ্রামীণ মেলায় স্টলগুলোতে হস্ত ও কুটির শিল্প ছাড়াও বিভিন্ন সামগ্রীর পসরা সাজিয়ে বসেছে দোকানীরা। এতে গ্রাম-বাংলার নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষপত্র আর হস্ত ও কুটির শিল্পসহ রয়েছে রকমারী পণ্যের সমাহার। বিকিকিনিও হচ্ছে ভালো। শিলাইদহের এসব আয়োজনকে ঘিরে দ্বিতীয় দিন বুধবারও ছিল মানুষের উপচেপড়া ভিড়। উৎসবের আমেজে দুর-দুরান্ত থেকে আগত এসব নারী-পুরুষের পদচারনায় মুখরিত হয়ে আছে কুঠিবাড়ী চত্বর।
কবি গুরুর ১৫১তম জন্মবার্ষিকীর উদ্বোধনীতে সুলতানা তরুন
আরিফ মেহমুদ ॥ কুষ্টিয়া-৪ কুমারখালী-খোকসা আসনের সংসদ সদস্য বেগম সুলতানা তরুন বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে রবীন্দ্রনাথ ছিলেন আমাদের প্রেরণা। রবীন্দ্রনাথের প্রতি বঙ্গবন্ধুর ভক্তির কারণে ১৯৬৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের প্রথিতযশা কয়েকজন শিল্পীর গাওয়া রবীন্দ্রসঙ্গীতের রেকর্ড তাঁকে উপহার দেয়া হয়। সেই অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, রবীন্দ্রনাথের কর্মে বাঙালির আশা-আকাক্ষা প্রতিফলিত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ছাড়া বাংলা ভাষা অসম্পূর্ণ।’ রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে জাতির পিতার এই দর্শন বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত নির্ধারণে ভূমিকা রেখেছে এবং কবিগুরু এভাবেই বাঙালির আবেগ-অনুভূতি, চিন্তা-চেতনায় মিশে গেছেন। গতকাল মঙ্গলবার শিলাইদহ কুঠিবাড়িতে কবিগুরুর সার্ধশত জন্মবার্ষিকী উৎসবের সমাপনী এবং ১৫১ তম জন্মবার্ষিকী উদযাপনের উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ সব কথা বলেন। কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক বনমালী ভৌমিকের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডঃ মহিউদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুভাষ চন্দ্র সাহা, কুষ্টিয়া জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী, সহ-সভাপতি হাজী রবিউল ইসলাম, তাইজাল আলী খান, ওয়াল্টনের নির্বাহী পরিচালক হুমায়ুন কবির, শিলাইদহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সালাহ উদ্দিন খান তারেক, জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম। বিশ্বকবির শিলাইদহে অবস্থান ও তাঁর স্মৃতি নিয়ে আলোচক হিসেবে আলোচনা করেন বিশিষ্ট লেখক ও কলামিষ্ট শেখ গিয়াসউদ্দিন আহমেদ মিন্ট্,ু কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ বদরুদ্দোজা, এস এম আফজাল হোসেন, বিশিষ্ট উপস্থাপক ক্যামিলিয়া মোস্তফা। শুরুতেই ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে স্বাগত কুমারখালি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান। আলোচনা শুরুর আগে কুষ্টিয়ার শিল্পকলা একাডেমী ও জাতীয় রবীন্দ্র সংগীত সম্মিলন পরিষদের যৌথ অংশগ্রহনে অনুষ্ঠানের উদ্ধোধনী সংগীত পরিবেশিত হয়। মূল অনুষ্ঠান শুরুর আগে কুঠিবাড়িতে জেলা পরিষদের ব্যবস্থাপনায় নির্মিত গীতাঞ্জলী নামের দ্বিতল ডাকবাংলো ভবনের উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি বেগম সুলতানা তরুন এমপি। প্রধান অতিথির বক্তব্যে বেগম সুলতানা তরুন আরো বলেন, বাংলা সাহিত্যকে আমাদের কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সর্ব প্রথম বিশ্ব সভায় উপস্থাপন ও পরিচিত করেন। বাঙালি হয়েও তিনি ছিলেন বিশ্ব মানবতার সন্তান। এ যাবতকাল সারা বিশ্বে যারা সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন, তাদের কেউ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো বিশ্বব্যাপী জননন্দিত হতে পারেননি। তাঁর গান,কবিতা আজও মানুষকে বিমোহিত করে। তাঁর অসাধারন সৃষ্টি “সোনার তরী” আজও কবিতা প্রেমিদের কাছে অবাক বিস্ময়! আজও সাহিত্য সমালোচকেরা তাঁর “সোনার তরী” নিয়ে বহুমুখী ব্যাখ্যায় ব্যাপৃত। তিনি বলেন, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জমিদার হয়েও অত্যন্ত প্রজা হিতৈষী ছিলেন। তার স্বাক্ষর রেখে গেছেন আমাদের এই ঐতিহ্যবাহি শিলাইদহ জমিদারীতে। সেকারনে জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভারতের শান্তি নিকেতনের আদলে শিলাইদহে দ্বিতীয় শান্তি নিকেতন প্রতিষ্টার প্রতিশ্র“তি দিয়েছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ঘোষনা দিয়েছেন শিলাইদহে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে। তিনি বলেন, আমার বিশ্বাস কবি গুরুর অত্যন্ত প্রিয় এই শিলাইদহতেই অল্প সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক কাজ শুরু হবে। পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে বাঙালির স্বাধিকারের লড়াই থেকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ হয়ে উঠেছিলেন আমাদের চেতনার ভিত্তি, প্রেরণার বাতিঘর। জাতীয় মুক্তির লড়াইয়ের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ আমাদের আপন হয়ে উঠেছেন। তাঁর গান আমাদের দেশ সহ তিনটি দেশের জাতীয় সংগীত। তাঁর প্রতি আমাদের আবেগ ও ভালোবাসা তীব্র ও গভীর। মহান স্বাধীনতা উত্তর আমার শ্রদ্ধেয় শ্বশুর মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, এই আসনের সাবেক এমপি শহীদ গোলাম কিবরিয়া রবীন্দ্রনাথের শিলাইদহকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার ভেতর দিয়ে জাতির সামনে তুলে ধরতে চেয়েছিলেন। আমার স্বামী এই আসনের সাবেক এমপি,আপনাদের সবার প্রিয় জননেতা প্রয়াত আবুল হোসেন তরুন তাঁর জীবদ্দশায় আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন বিশ্বকবির স্মৃতি বিজড়িত শিলাইদহের কুঠিবাড়ি তার সমহিমায় উদ্ভাসিত হোক। তাদের স্বপ্ন আজ স্বার্থক হয়েছে। রবীন্দ্র নাথের জীবনের অর্ধেক সময় যেখানে কেটেছে সেই শিলাইদহে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন শুধু রবীন্দ্রনাথের স্বপ্ন পুরণ নয় বঙ্গবন্ধুর ঘোষণারও স্বার্থকতা পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার সত্যতা পাবে এ অঞ্চলের মানুষ। এদিকে তিনদিন ব্যাপী অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে শিলাইদহ কুঠিবাড়ি হয়ে উঠেছে অসংখ্য রবীন্দ্রপ্রেমী পদচারণায় মুখর। কুঠিবাড়ির আঙ্গীনা পরিণত হয়েছে মিলন মেলায়। অনুষ্ঠান শুরুর অনেক আগেই কুঠিবাড়ির পুকুর ঘাট, বকুলতলা, আম্রকাননে রবীন্দ্রপ্রেমীরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আসন পেতে বসেছে। কুঠিবাড়ির বাইরে বিস্তৃর্ণ জায়গা জুড়ে বসেছে ৫দিন ব্যাপী রবীন্দ্র মেলা। মেলায় রবীন্দ্রনাথের গানের ক্যাসেট, গেঞ্জি, কাঠের তৈরি রবীন্দ্র ভাষ্কর্য, ছবি, পোষ্টার, শিশুদের নানা রকম খেলনা, ঘর সাজানো আসবাব পত্র ও নানা রকম খাবারের পসরা বসেছে।
আজ ৩ দিনব্যাপী শিলাইদহে শুরু হচ্ছে কবি গুরুর ১৫১তম জন্মবার্ষিকী
আরিফ মেহমুদ ॥ আজ মঙ্গলবার পঁচিশে বৈশাখ বাংলা সাহিত্য সৌধের কালজয়ী প্রতিভা কবিগুরুর কুষ্টিয়ার শিলাইদহ কুঠিবাড়ীতে বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সার্ধশত জন্মজয়ন্তীর সমপানী ও ১৫১ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন আয়োজন করেছে নানান অনুষ্ঠানমালা। মূল আয়োজন দু’দেশের রাজধানী ভিত্তিক হলেও কুষ্টিয়ার শিলাইদহকে সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। ঢাকার বাইরে কুষ্টিয়ার শিলাইদহেই অনুষ্ঠিত হবে মূল অনুষ্ঠান। জেলা প্রশাসনের আয়োজনে অনুষ্ঠানমালার বাইরেও এখানে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে বসেছে গ্রামীণ মেলা। ৫দিন ব্যাপী চলবে এই গ্রামীণ মেলা। কবি পদধুলির শিলাইদহ কুঠিবাড়ীতে হাজার-হাজার মানুষের ঢল নামবে। লাখো মানুষের মিলন মেলায় পরিনত হবে ঠাকুর বাড়ীর চত্বর। খোড়া অজুহাত দেখিয়ে ঠাকুর বাড়ীর ঐতিহ্যবাহী রং বদলে দেয়া হয়েছে। এ বছর আগের রং ফিরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। যার কারনে কুঠিবাড়ির দেয়ালের আস্তরন উঠে গেছে। ভেঙ্গে গেছে অনেক স্থান। অনুষ্ঠান আজ মঙ্গলবার শুরু হলেও রাস্তার কাজ এখনো শেষ হয়নি। আজ মঙ্গলবার ২৫ বৈশাখ সকাল সাড়ে ১০ টায় ত্রাণ ও পূণর্বাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচলাক অতিরিক্ত সচিব জহিরুল হকের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উৎসব উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারি মাহবুব-উল-আলম হানিফ। স্বাগত বক্তব্য রাখবেন কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক (যুগ্ম সচিব) বনমালী ভৌমিক। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন কুষ্টিয়া-৪কুমারখালী-খোকসা আসনের এমপি বেগম সুলতানা তরুন, পুলিশ সুপার মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ, কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের প্রশাসক জাহিদ হোসেন জাফর, জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী, কুমারখালী উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ, জেলা আ’লীগের সহ-সভাপতি হাজী রবিউল ইসলাম,তাইজাল আলী খান,আলোচক হিসেবে থাকছেন বিশিষ্ট কলামিষ্ট শেখ গিয়াস উদ্দিন আহমেদ মিন্টু,এস এম আফজাল হোসেন। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করবেন কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান। বিকেল ৪টা থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। এতে দেশের খ্যাতনামা রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী ও স্থানীয় শিল্পীবৃন্দ সঙ্গীত পরিবেশন করবেন। এছাড়াও রবীন্দ্র জম্মউৎসব উপলক্ষে কুষ্টিয়া পৌরসভার উদ্যোগে কাল মঙ্গলবার সকালে কুষ্টিয়া শহরের মিলপাড়ায় অবস্থিত কুঠিবাড়িতে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)