আরিফ মেহমুদ ॥ বাড়ি বাড়ি গিয়ে হোল্ডিং অ্যাসেসমেন্ট ও নম্বর প্লেট স্থাপনের নামে বৃহত্তর কুষ্টিয়ায়(মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা) ঝিনাইদহের অঙ্কুর সমাজ উন্নয়ন সংস্থা সহ বিভিন্ন ভূয়া এনজিও চক্রের বিরুদ্ধে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের বেআইনি চিঠিকে পুঁজি করে গ্রামাঞ্চলের সহজ-সরল সাধারণ মানুষের পকেট থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে অঙ্কুর সমাজ উন্নয়ন সংস্থা সহ একাধিক ভূয়া এনজিও চক্র। সেচ্ছাসেবার প্রতিশ্র“তি দিয়ে বৃহত্তর কুষ্টিয়া চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলায় দু’বছর ধরে এ অবৈধ কারবার চালিয়ে আসছে। বিষয়টি জেলা প্রশাসক পর্যায়ে জানার পর আপত্তি জানালে মাঝ পথে লোক দেখানো কার্যক্রম বন্ধ করলেও নানান তদবিরের কারণে এভাবে টাকা আদায়ের প্রকল্প বন্ধ করা যায়নি। কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের ম্যানেজ করে ঝিনাইদহের অঙ্কুর সমাজ উন্নয়ন সংস্থা বাড়ি বাড়ি গিয়ে হোল্ডিং অ্যাসেসমেন্ট ও নম্বর প্লেট স্থাপনের কাজ চালায়। প্রতিটি বাড়ি থেকে সর্বনিম্ন ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ২শ’ টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়েছে। কেউ টাকা দিতে অস্বীকার করলে মন্ত্রণালয়ের অনুমতিপত্র দেখিয়ে বলা হয়েছে, এটি আইন। মানতে হবে। অমান্য করলে মামলা হয়ে যাবে। অগত্যা হয়রানির ভয়ে গ্রামের সাধারণ মানুষ টাকা জোগাড় করে দিয়েছে। সে সময় ওই এনজিও’র বিরুদ্ধে গ্রামের সহজ-সরল মানুষের কাছে জোর করে টাকা আদায়ের অভিযোগ তুলে। বিষয়টি উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে গণঅভিযোগের মুখে কুমারখালী উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ জনস্বার্থে মাইকিং করে এধরনের ভূয়া কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। সু-চতুর এনজিও অঙ্কুর সমাজ উন্নয়ন সংস্থা কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই কার্যক্রম গুটিয়ে কুমারখারী ছেড়ে চলে যায় অন্য উপজেলায়। এমন অভিযোগ কুষ্টিয়ার দৌলপুর উপজেলার চরাঞ্চলের রামকৃষ্ণপুর ও চিলমারী ইউনিয়নবাসী, মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার ধানখোল ও কাজীপুর ইউনিয়নবাসীর। এনজিও সংগঠনের একটি বিশস্ত সুত্রে জানা যায়, ২০১০ সালের প্রথমদিকে কয়েকটি এনজিও গ্রামাঞ্চলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে হোল্ডিং অ্যাসেসমেন্ট ও নম্বর প্লেট স্থাপন করার জন্য অনুমতি চেয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবের কাছে আবেদন করে। স্বেচ্ছাপ্রণোদিত ভালো কাজ বিবেচনায় নিয়ে অনুমতি দেয়াসহ এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের ইউপি শাখা থেকে সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসকদের চিঠি দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দেয়ার কারণে বিধিবিধান এবং এর ভালোমন্দ দিক খতিয়ে না দেখে সে সময় বেশিরভাগ জেলা প্রশাসক আপত্তি তোলেননি। প্রথমদিকে কয়েকটি এনজিও কাজ শুরু করলেও পরে সাদা কাগজে দরখাস্ত করে ভুয়া এনজিও’র নাম দিয়ে স্থানীয় সরকারদলীয় লোকজন অনুমোদন নেয়া শুরু করে। গ্রামাঞ্চলে হোল্ডিং অ্যাসেসমেন্ট ও নম্বর পেট সরবরাহ করার নামে যারা আবেদন নিয়ে এসেছিলেন তাদের উদ্দেশ্য ভালো বলে মনে হয়েছিল। এটাকে স্বেচ্ছায় সামাজিক উন্নয়নের কাজ ও ইউনিয়ন পরিষদের জন্য সহায়ক হবে বলে কিছু এনজিওকে অনুমতি দেয়া হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন নিয়ে কেউ এভাবে ব্যবসা করবে, তা মনে করার কোন কারন ছিল না। তবে এ ধরনের অনুমতি নিয়ে রীতিমতো মানুষের কাছ থেকে টাকা আদায় করার অভিযোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পর এ প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বেশকিছু অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১০টি গ্রাম নিয়ে একটি ইউনিয়ন ধরা হলে এবং প্রতিটি গ্রামে গড়ে ১০০টি বাড়ি থাকলে প্রতি ইউনিয়নে অন্তত ১ হাজার বাড়ি থেকে হোল্ডিং নম্বর পেট স্থাপনের টাকা তোলা হয়েছে। বাড়ি প্রতি ১শ’ টাকা করে নিলেও প্রতি ইউনিয়ন থেকে ১ লাখ টাকা আদায় করা হয়েছে। বৃহত্তর কুষ্টিয়ার প্রতিটি উপজেলায় ১০-১২টি করে ইউনিয়ন রয়েছে। এ হিসেবে প্রতিটি উপজেলা থেকে কমপে ৩০ লাখ টাকা উসুল হয়েছে। এভাবে শুরু থেকে এপর্যন্ত বিভিন্ন উপজেলায় কার্যক্রম পরিচালনা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে অঙ্কুর সমাজ উন্নয়ন সংস্থা কোটিপতি বনে যাচ্ছে দেখার দেউ নেই। এমন অবৈধভাবে টাকা আদায়ের অভিযোগের এব্যাপারে অঙ্কুর সমাজ উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক নাজিমুদ্দিন জুলিয়াস বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, এধরনের কার্যক্রম আমার এনজিও অঙ্কুর সমাজ উন্নয়ন সংস্থা পরিচালনা করেনি। টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ মিথ্যা। অথচ মন্ত্রণালয় থেকে যে চিঠির ভিত্তিতে এভাবে টাকা আদায় করা হয়েছে,তার আইনগত কোন ভিত্তি নেই। এব্যাপারে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক বনমালী ভৌমিক ও মেহেরপুর জেলার জেলা প্রশাসক শাহান আরা বানু’র সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন জেলা প্রশাসনের স্থানীয় শাখা অবগত নন। বেশিরভাগ েেত্র এ ধরনের জরিপ কাজের প্রকল্পে বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদ আইনসহ এ সংক্রান্ত সরকারি কোন আইনে এভাবে জরিপ কাজ করার মতা কাউকে দেয়া হয়নি। বড়জোর কর আদায়ের স্বার্থে ইউনিয়ন পরিষদ সিদ্ধান্ত নিয়ে কোন পদ্ধতি বের করতে পারে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের ইউনিয়ন পরিষদ অধিশাখা-১ থেকে চিঠি ইস্যু করে প্রত্যকে জেলার জেলা প্রশাসক এবং সব উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রতিটি গ্রাম থেকে কর সংগ্রহ ও আদায়ের ল্েয বাড়ি বাড়ি হোল্ডিং অ্যাসেসমেন্ট ও নম্বর প্লেট স্থাপনের প্রয়োজন হলে সংশিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। এেেত্র যদি কোন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আদায় কার্যক্রমে ইউনিয়ন পরিষদকে সহযোগিতা করতে চায় তাহলে ইউপি চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করতে হবে। এরপর এ ধরনের আবেদন ইউনিয়ন পরিষদের সভায় পর্যালোচনা করে যথাযথ সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে অন্যথায় এনজিওগুলো কার্যক্রম পরিচালনা করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন