শনিবার, ২৪ মার্চ, ২০১২

হোল্ডিং অ্যাসেসমেন্ট ও নম্বর প্লেট স্থাপনের নামে প্রতারণা,বৃহত্তর কুষ্টিয়ায় অঙ্কুর সহ ভুয়া এনজিও চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা

আরিফ মেহমুদ ॥ বাড়ি বাড়ি গিয়ে হোল্ডিং অ্যাসেসমেন্ট ও নম্বর প্লেট স্থাপনের নামে বৃহত্তর কুষ্টিয়ায়(মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা) ঝিনাইদহের অঙ্কুর সমাজ উন্নয়ন সংস্থা সহ বিভিন্ন ভূয়া এনজিও চক্রের বিরুদ্ধে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের বেআইনি চিঠিকে পুঁজি করে গ্রামাঞ্চলের সহজ-সরল সাধারণ মানুষের পকেট থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে অঙ্কুর সমাজ উন্নয়ন সংস্থা সহ একাধিক ভূয়া এনজিও চক্র। সেচ্ছাসেবার প্রতিশ্র“তি দিয়ে বৃহত্তর কুষ্টিয়া চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলায় দু’বছর ধরে এ অবৈধ কারবার চালিয়ে আসছে। বিষয়টি জেলা প্রশাসক পর্যায়ে জানার পর আপত্তি জানালে মাঝ পথে লোক দেখানো কার্যক্রম বন্ধ করলেও নানান তদবিরের কারণে এভাবে টাকা আদায়ের প্রকল্প বন্ধ করা যায়নি। কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের ম্যানেজ করে ঝিনাইদহের অঙ্কুর সমাজ উন্নয়ন সংস্থা বাড়ি বাড়ি গিয়ে হোল্ডিং অ্যাসেসমেন্ট ও নম্বর প্লেট স্থাপনের কাজ চালায়। প্রতিটি বাড়ি থেকে সর্বনিম্ন ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ২শ’ টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়েছে। কেউ টাকা দিতে অস্বীকার করলে মন্ত্রণালয়ের অনুমতিপত্র দেখিয়ে বলা হয়েছে, এটি আইন। মানতে হবে। অমান্য করলে মামলা হয়ে যাবে। অগত্যা হয়রানির ভয়ে গ্রামের সাধারণ মানুষ টাকা জোগাড় করে দিয়েছে। সে সময় ওই এনজিও’র বিরুদ্ধে গ্রামের সহজ-সরল মানুষের কাছে জোর করে টাকা আদায়ের অভিযোগ তুলে। বিষয়টি উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে গণঅভিযোগের মুখে কুমারখালী উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ জনস্বার্থে মাইকিং করে এধরনের ভূয়া কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। সু-চতুর এনজিও অঙ্কুর সমাজ উন্নয়ন সংস্থা কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই কার্যক্রম গুটিয়ে কুমারখারী ছেড়ে চলে যায় অন্য উপজেলায়। এমন অভিযোগ কুষ্টিয়ার দৌলপুর উপজেলার চরাঞ্চলের রামকৃষ্ণপুর ও চিলমারী ইউনিয়নবাসী, মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার ধানখোল ও কাজীপুর ইউনিয়নবাসীর। এনজিও সংগঠনের একটি বিশস্ত সুত্রে জানা যায়, ২০১০ সালের প্রথমদিকে কয়েকটি এনজিও গ্রামাঞ্চলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে হোল্ডিং অ্যাসেসমেন্ট ও নম্বর প্লেট স্থাপন করার জন্য অনুমতি চেয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবের কাছে আবেদন করে। স্বেচ্ছাপ্রণোদিত ভালো কাজ বিবেচনায় নিয়ে অনুমতি দেয়াসহ এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের ইউপি শাখা থেকে সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসকদের চিঠি দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দেয়ার কারণে বিধিবিধান এবং এর ভালোমন্দ দিক খতিয়ে না দেখে সে সময় বেশিরভাগ জেলা প্রশাসক আপত্তি তোলেননি। প্রথমদিকে কয়েকটি এনজিও কাজ শুরু করলেও পরে সাদা কাগজে দরখাস্ত করে ভুয়া এনজিও’র নাম দিয়ে স্থানীয় সরকারদলীয় লোকজন অনুমোদন নেয়া শুরু করে। গ্রামাঞ্চলে হোল্ডিং অ্যাসেসমেন্ট ও নম্বর পেট সরবরাহ করার নামে যারা আবেদন নিয়ে এসেছিলেন তাদের উদ্দেশ্য ভালো বলে মনে হয়েছিল। এটাকে স্বেচ্ছায় সামাজিক উন্নয়নের কাজ ও ইউনিয়ন পরিষদের জন্য সহায়ক হবে বলে কিছু এনজিওকে অনুমতি দেয়া হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন নিয়ে কেউ এভাবে ব্যবসা করবে, তা মনে করার কোন কারন ছিল না। তবে এ ধরনের অনুমতি নিয়ে রীতিমতো মানুষের কাছ থেকে টাকা আদায় করার অভিযোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পর এ প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বেশকিছু অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১০টি গ্রাম নিয়ে একটি ইউনিয়ন ধরা হলে এবং প্রতিটি গ্রামে গড়ে ১০০টি বাড়ি থাকলে প্রতি ইউনিয়নে অন্তত ১ হাজার বাড়ি থেকে হোল্ডিং নম্বর পেট স্থাপনের টাকা তোলা হয়েছে। বাড়ি প্রতি ১শ’ টাকা করে নিলেও প্রতি ইউনিয়ন থেকে ১ লাখ টাকা আদায় করা হয়েছে। বৃহত্তর কুষ্টিয়ার প্রতিটি উপজেলায় ১০-১২টি করে ইউনিয়ন রয়েছে। এ হিসেবে প্রতিটি উপজেলা থেকে কমপে ৩০ লাখ টাকা উসুল হয়েছে। এভাবে শুরু থেকে এপর্যন্ত বিভিন্ন উপজেলায় কার্যক্রম পরিচালনা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে অঙ্কুর সমাজ উন্নয়ন সংস্থা কোটিপতি বনে যাচ্ছে দেখার দেউ নেই। এমন অবৈধভাবে টাকা আদায়ের অভিযোগের এব্যাপারে অঙ্কুর সমাজ উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক নাজিমুদ্দিন জুলিয়াস বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, এধরনের কার্যক্রম আমার এনজিও অঙ্কুর সমাজ উন্নয়ন সংস্থা পরিচালনা করেনি। টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ মিথ্যা। অথচ মন্ত্রণালয় থেকে যে চিঠির ভিত্তিতে এভাবে টাকা আদায় করা হয়েছে,তার আইনগত কোন ভিত্তি নেই। এব্যাপারে কুষ্টিয়া  জেলা প্রশাসক বনমালী ভৌমিক ও মেহেরপুর জেলার জেলা প্রশাসক শাহান আরা বানু’র সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন জেলা প্রশাসনের স্থানীয় শাখা অবগত নন। বেশিরভাগ েেত্র এ ধরনের জরিপ কাজের প্রকল্পে বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদ আইনসহ এ সংক্রান্ত সরকারি কোন আইনে এভাবে জরিপ কাজ করার মতা কাউকে দেয়া হয়নি। বড়জোর কর আদায়ের স্বার্থে ইউনিয়ন পরিষদ সিদ্ধান্ত নিয়ে কোন পদ্ধতি বের করতে পারে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের ইউনিয়ন পরিষদ অধিশাখা-১ থেকে চিঠি ইস্যু করে প্রত্যকে জেলার জেলা প্রশাসক এবং সব উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রতিটি গ্রাম থেকে কর সংগ্রহ ও আদায়ের ল্েয বাড়ি বাড়ি হোল্ডিং অ্যাসেসমেন্ট ও নম্বর প্লেট স্থাপনের প্রয়োজন হলে সংশিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। এেেত্র যদি কোন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আদায় কার্যক্রমে ইউনিয়ন পরিষদকে সহযোগিতা করতে চায় তাহলে ইউপি চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করতে হবে। এরপর এ ধরনের আবেদন ইউনিয়ন পরিষদের সভায় পর্যালোচনা করে যথাযথ সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে অন্যথায় এনজিওগুলো কার্যক্রম পরিচালনা করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সোমবার, ১২ মার্চ, ২০১২

স্বরণোৎসবের সমাপনী দিনের আলোচনায় সচিব বরুণ দেব মিত্র, লালনের গান স্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যে এক মহামিলন ঘটিয়েছে

আরিফ মেহমুদ ॥ খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের খাদ্য সচিব বরুণ দেব মিত্র বলেছেন, বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ আধ্যাত্মিক সিদ্ধ পুরুষ হিসেবে সত্য ও জাতহীন সমাজ গড়তে আবির্ভূত হয়েছেন। তিনি এক বিশ্ব মানব। বিজ্ঞান-প্রযুক্তির যুগেও তিনি মানুষের হৃদয়ের মাঝখানটা দখল করে আছেন। তাঁর গানের সুর আর কর্ম হোক আজকের যুগের চলার প্রেরণা। লালন শাহ সকল ধর্মের সীমাবদ্ধতা ছাড়িয়ে সদা সত্য পথে চলতে মানুষকে মানতাবাদীর পথে ডাক দিয়ে ছিলেন। তিনি অহিংস মানবতার ব্রত নিয়ে অসংখ্য গান সৃষ্টি করে গেছেন। তাঁর এই অমর সৃষ্টি সঙ্গীত কোন ধর্মের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। সকল ধর্মের উর্ধে থেকে মরমী সাধক বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ মানব মুক্তির জন্য সৃষ্টি করেছিলেন ফকিরী মতবাদ। বাউল সম্রাটের সার্বজনিন বাউলতত্বের গান স্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যে এক মহামিলন ঘটিয়েছে। তার মানব দর্শন আজ আর কুষ্টিয়ার কুমারখালির ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়ী তথা এদেশের মধ্যে আবদ্ধ নেই। তার সহজিয়া ফকিরী মতবাদের জাতহীন মানব দর্শন ও সঙ্গীত সার্বজনিন বিদিত বিশ্বাঙ্গনে। সভ্যতার এই যুগে মানুষ মানুষে হিংসা বিদ্বেশ ভূলে বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের ধর্ম দর্শনের চিরাচরিত ‘সত্য বল সুপথে চল ওরে আমার মন’ আমার মনেরে বুঝায় কেমনে’ মিলন হবে কত দিনে এই শ্লোগানকে বাস্তবায়নে সদা সত্য ও সঠিক পথে চলে দেশ ও জাতির উন্নয়নে নিজেদেরকে নিয়োজিত রাখতে হবে। গতকাল রবিবার রাতে ছেঁউড়িয়ার আখড়া বাড়ীতে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসন ও লালন একাডেমির আয়োজনে বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের ৫ দিনব্যাপী স্মরণোৎসবের সমাপর্নী দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. মহিউদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক বনমালী ভৌমিক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) খন্দকার আজিম আহমেদ, কুষ্টিয়া সরকারী কলেজের অধ্য প্রফেসর বদরুদ্দোজা, চাপড়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুস। প্রধান আলোচক হিসেবে বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ’র ফকিরীবাদ বাউলতত্বের দর্শন ও আধ্যাত্মিক ভাবসঙ্গীতের বিষয় তুলে ধরে বিস্তারিত আলোচনা করেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রফেসর বিশিষ্ট লালন গবেষক ড.আবুল আহসান চৌধুরী। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মানিকহার রহমান। আলোচনা শেষে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে প্রকাশিত বাউলদের জীবন-বৃত্তান্ত মূলক বইয়ের মোড়ক উম্মোচন ও লালন সঙ্গীত প্রতিযোগীতার বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন প্রধান অতিথি। এবারের স্বরণোৎসবের অনুষ্ঠানে আসা দেশ-বিদেশের লাখ ভক্ত অনুরাগী ও সাধু-গুরুদের চরণ ধূলায় সিক্ত বাউল সম্রাটের ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়ী। সাঁইজির মতাদর্শের ধর্ম আর জাতি ভেদাভেদ ভুলে মানুষের কল্যাণে মানুষ নিবেদিত থাক চিরকাল এবং মানবতার নিগুড় প্রেমের ভাবধারা বর্তমান সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে ভক্তকুলের এই অঙ্গীকার-সভ্যতার এই যুগে মানুষ মানুষে হিংসা বিদ্বেশ ভূলে সাঁইজির ধর্ম দর্শনের চিরাচরিত ‘সত্য বল সুপথে চল ওরে আমার মন’ আমার মনেরে বুঝায় কেমনে’ মিলন হবে কত দিনে এই শ্লোগানকে বাস্তবায়নে সদা সত্য ও সঠিক পথে চলে দেশ ও জাতির উন্নয়নে নিজেদেরকে নিয়োজিত রাখবো। মরমী সাধক বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের অহিংস মানবতা ও ফকিরী মতবাদের জাতহীন মানব দর্শন ও সঙ্গীত দেশের সীমানা পেরিয়ে বিশ্বাঙ্গনে নিজের মহিমায় জায়গা করে নিলেও বাংলা ভাষা ব্যাতিত অন্য কোন ভাষায় প্রকাশ, প্রচার ও প্রসার ঘটেনি তেমন একটা। মানবতা মুক্তি ও ভক্তির পথকে প্রতিষ্ঠা করতেই তিনি হাজারো ভাবধারার গান সৃষ্টি করছেন। কিন্তু তা বিশ্ববাসীকে নাড়া দিতে পারেনি যথার্থ একাডেমিক প্রচার আর প্রকাশনার অভাবে। তিনি অতি কঠিন কথাগুলো খুব সহজ করে তার গানে বলে গেছেন। তাঁর অমর সৃষ্টি সঙ্গীত গতানুগতিক ভাবে প্রচার ও প্রকাশ হলে চলবেনা। বিশ্বের বিশিষ্ট গবেষকেরা লালনের সৃষ্টি আরো নতুন নতুন তথ্য জানতে চাই। প্রধান আলোচক বিশিষ্ট গবেষক প্রফেসর ড. আবুল আহসান চৌধুরী তার বক্তব্যে বলেন, বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ বাঙালী সংস্কৃতির এক মহান প্রতিনিধি। বাংলা সংস্কৃতির মূল ধারা লোকসংস্কৃতি। এই ধারাকে যারা পুষ্ট করেছে ফকির লালন তাদেরই একজন। সম্প্রদায় সম্প্রীতি ও ধর্মান্ধ মৌলবাদের বিরুদ্ধে তাঁর ফকিরীবাদ বাউলতত্ব মানুষের প্রধান দর্শন। বাঙালী সংস্কৃতির মহান প্রতিনিধি লালন ফকির, গানে ও সাধনায় তার দর্শণে সেই মানবিক মূল্যবোধে সেই সামাজিক চেতনায় গভীর, লালন ফকির একই সঙ্গে মরমী এবং দ্রোহী, তার গানের ভেতর দিয়ে বাউল সাধনার নানা প্রসঙ্গ অনুসৃত হয়েছে। তার গানের ভেতর দিযে সমাজের অসঙ্গতি, কুপ্রথা সকল জাতপাতের ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। লালন তার গানের ভেতর দিয়ে এমন এক ভূবন সৃষ্টি করেছেন, খাঁচার ভেতর অচিন পাখি, পাখি কমনে আসে যায় এই গানটি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে সাংঘাতিকভাবে নাড়া দিয়েছিল। সাঁইজির সহজিয়া ফকিরী মতবাদের জাতহীন মানব দর্শন ও সঙ্গীত দেশের সীমানা পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বাঙ্গনে। বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ’র অমরত্বের জন্যই কুষ্টিয়ার ছেউড়িয়া এখন বিশ্ব মরমীর তীর্থ কেন্দ্রে পরিনত হয়েছে। আলোচনা শেষে দ্বিতীয় পর্বে লালন মঞ্চে বিভিন্ন শিল্পি ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সমন্বয়ে লালন সংগীতি পরিবেশিত হয়। এতে সংগীত পরিবেশন করেন কোজআপ তারাকা খ্যাত রিংকু সহ দেশের খ্যাতিনামা শিল্পীবৃন্দসহ লালন একাডেমীর স্থানীয় শিল্পিরা। ৫দিনব্যাপী স্বরণোৎসবের অনুষ্ঠানমালার সার্বিক পরিচালনা ও উপস্থাপনা করেন কবি শুকদেব সাহা, খন্দকার লুৎফর রহমান, সুমাইয়া খানম ইভা ও সৈকত মাহমুদ।


দাওয়াত নেই, পত্র নেই তবুও কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ার লালনধামে মানুষের উপচে পড়া ভীড়

এ.এইচ.এম.আরিফ,কুষ্টিয়া ॥ বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের স্বরণোৎসবকে লালনের বাড়িতে মানুষের ঢল নেমেছে। সব পথ যেন এসে মিশে গেছে মরা কালীর নদীর তীরে আখড়া বাড়িতে। শহর থেকে মাত্র ১০ মিনিটের রাস্তা ছেঁউড়িয়া। কিন্তু এখন সে রাস্তায় যেতে সময় লাগছে ১ ঘন্টার উপরে। সাঁইজির টানে এ ধামে বাউলেরা ছাড়াও সাধারণ দর্শনার্থীদের ভিড়ই বেশি। গতকাল বৃস্পতিবার বাউলের চারণভূমিতে আসা হাজার হাজার লালন-ভক্ত, সাধু-গুরু কর্তৃপরে দেওয়া সকালের অধিবাসে পায়েশ ও মুড়ির বাল্যসেবা গ্রহণ করেন। দুপুরে তাঁরা মরা কালী গঙ্গায় গোসল সেরে ইলিশ মাছ-ভাত ও ত্রিব্যঞ্জন দিয়ে (তিন ধরনের সবজি দিয়ে তৈরি তরকারি) দুপুরের খাবার পুণ্যসেবা গ্রহণ করেন। পুণ্যসেবা গ্রহণ কে কেন্দ্র করে দুপুর ১টা, লালন একাডেমীর প্রধান ফটক তখন বন্ধ। ভিতরে লাইন দিয়ে কলা পাতা সামনে নিয়ে হাজার হাজার সাধু ফকিরের অপো। একটু পরেই একযোগে শুরু হলো খাবার বিতরণ। তবে কোন তাড়াহুড়ো নেই। সবাই খাবার পাবার পর বিশেষ আওয়াজ দিয়ে জানিয়ে দেয়া হলো বিতরণ শেষ। এবার খাওয়া শুরু হলো একযোগে। ইলিশ মাছ,ভাত ও সবজি দিয়ে প্রায় ৫ হাজার বাউল,সাধু ফকির পূর্ণসেবা গ্রহণ করেন। এছাড়া দই মিষ্টি খাওয়ানো হয়। কোন দাওয়াত নেই, পত্র নেই, তবুও মানুষ ছুটে আসে দলে দলে, হাজারে হাজারে। কোন সে উদাসী ডাকে তা কেউ জানে না? মূল গেট থেকে ভিকরে ঢুকে অডিটোরিয়ামের নিচে বসে প্রবীণ বাউল নহির শাহ। বয়স প্রায় ৬৮ বছর। শিষ্যদের নিয়ে গানে মজেছিলেন। এখনো আটা স্বাস্থ্য। দেখে বোঝা যায় না বয়স। গান থামালে কথা হয় এ বাউলের সাথে। গান দিয়েই শুরু করেন কথা। খাচার ভিকর অচিন পাখি কবনে আসে যায়। এই দেশেতে এই সুখ হলো আবার কোথায় যায়না জানি । গানের মর্ম কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন বুঝে নিতে হবে। স্মরণোৎসবে প্রতিবছরের মতো এবারও সাধক লালনের আধ্যাত্মিক দর্শন লাভের আশায় দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ প্রাণের টানে ছুটে আসেন। একতারা, দোতারা, ঢোল ও বাঁশির সুরে মুখরিত হয়ে উঠেছে লালনভূমি ছেঁউড়িয়া। একই সাথে চলছে দীা পর্ব। নব্য শিষ্যরা গুরুদের সেবা করতে উদগ্রীব। যেন কোন কষ্ট না হয় সেদিকে তাদের অটুট ল্য। ঝিনাইদহ থেকে আসা নব্য বাউল ফকির করিম জানান, এ পথে আসা দু’মাস হয়েছে। এখনো কিছুই শিখতে পারিনি। গুরুর সাথেই থাকি দিনরাত। তার খেদমত করায় আমার কাছ। গুরু বলেছে সময় হলে গুরুবাক্য দেয়া হবে। বাউলসাধক ফকির লালন শাহের জীবন-কর্ম, জাতহীন মানবদর্শন, মরমি সংগীত ও চিন্তা-চেতনা এখন আর এই ছেঁউড়িয়ার পলি−তেই সীমাবদ্ধ নেই। দেশের সীমানা পেরিয়ে তা এখন ছড়িয়ে পড়েছে বিশে¡। তাঁর সংগীত ও ধর্ম-দর্শন গবেষণার বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছে।
লালন শাহ তার জীবদ্দশায় দোল পূর্ণিমায় আখড়াবাড়িতে ভক্ত-অনুসারীদের নিয়ে সারা রাত গান-বাজনা ও নানা তত্ত্ব কথা আলোচনা করতেন। সাঁইজির দেহ ত্যাগের পরও এ ধারা অব্যাহত রয়েছে। সারা আঁখড়া বাড়ি ও মাঠই এখন গানের মঞ্চ। ছোট ছোট বাউল পরিবারেই চলছে গান। ‘ধর চোর হাওয়ার ঘরে ফ্দঁ পেতে, বদ হাওয়া লেগেছে পাখির গায়, বাড়ির পাশে আরশী নগর, মানুষ ছাড়া ্যাপা রে তুই কুল হারাবি, মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি, সত্য বল সুপথে চল, এলাহি আলামিন গো আলা বাদশা আলমপনা তুমি’ এ রকম অসংখ্য লালনসংগীতের সুরের মূর্ছনা রাতে লালন একাডেমির শিল্পী ও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা বাউলেরা পরিবেশন করেন। এ ছাড়া লালন মাজারের আশপাশে ও মরা কালী নদীর তীর ধরে বাউলেরা ছোট ছোট আস্তানা গেড়ে সাঁইজিকে স্মরণ করেছেন তাঁর অমর বানী পরিবেশনের মাধ্যমে। লালন উৎসবে অস্থায়ী দোকানগুলোয় উপচে পড়া ভিড়। খাদ্যসহ খেলনার দোকানগুলোয় ভিড় করতে দেখা গেছে দর্শনার্থীদের। প্রতিদিন সন্ধ্যায় মেলার মাঠের স্থায়ী মঞ্চে বসে আলোচনা সভা। এর পরপরই শুরু হয় লালন একাডেমির শিল্পীদের গান। উদ্বোধনী দিনে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক বনমালী ভৌমিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কুষ্টিয়া ৪-কুমারখালী-খোকসা আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য বেগম সুলতানা তরুণ। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ফজলুর রহামন, কুষ্টিয়া পৌরসভার মেয়র আনোয়ার আলী, কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুভাষ চন্দ্র সাহা, জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী, ওয়ালটনের নির্বাহী পরিচালক হুমায়ূন কবির, পঞ্চগড় প্রেসকাবের সভাপতি এ রহমান মুকুল, কুমারখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ, প্রধান আলোচক হিসেবে আলোচনা করবেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও ইস্পাত পত্রিকার সম্পাদক আলহাজ্ব ওয়ালিউল বারী চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্য রাখবেন কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মানিকহার রহমান ।

ছেঁউড়িয়ায় অনুষ্ঠান চলবে আরও দুই দিন ভেঙ্গেছে সাধুর হাট, ফিরছে যে যার আপন ঘরে

এ.এইচ.এম.আরিফ,কুষ্টিয়া ॥ ঘোষনা অনুযায়ী বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের স্বরণোৎসবের ৫দিনের অনুষ্ঠানের আরো দুদিন চললেও সাধুদের হাট ভেঙ্গে গেছে গতকাল শুক্রবার। সাধুরা ফিরছে যে যার আপন ঘরে। গতকাল আখড়া ঘুরে দেখা গেছে, দুর-দূরান্ত থেকে আসা বাউলরা নিজ নিজ আস্তানা ছেড়ে বিছানাপত্র গুছিয়ে রওনা হয়েছে অনেকেই। তবে যাওয়ার আগে আঁখড়া বাড়ির পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। গুরুকে বারবার প্রনাম ও নানা রকম ভক্তি জানিয়ে বিদায় নেন শিষ্যরা। গুরু ভক্তি আর সিদ্ধ মন নিয়ে বিদায় নেয়ার সময় অনেক বাউল তাদের চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি। আবার দেখা হবে সাঁইজির উদাসী ডাকের টানে। গুরু ইসাহক শাহ জানান, সাঁইয়ের জীবদ্দশায় শুধূমাত্র তার ভক্ত আর শিষ্যদের নিয়ে মুলত আড়াই দিনের উৎসব করতেন। সে নিময় মেনেই বাউলরা ভাটাই আসে উজানে ফিরে যায়, যে যার আপন নিবাসে। প্রকৃত ভেকধারী বাউলরা সরকারি অনুষ্ঠানের ব্যাপারে খোঁজখবরও রাখেনা না। তাদেরকে মঞ্চে ডাকলেও তারা আসন ছেড়ে উঠেন না। গতকাল ভোরে সুর্য্য ওঠার আগেই অহিংস মানবতা প্রতিষ্ঠায় আপন মোকামে গুরুর চরণ ছুয়ে দিা নিয়ে ভক্তি নিবেদন করে শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছে অনেক বাউল। লালন আঁখড়ার আশে পাশে ও একাডেমীর নিচে যারা আসন গাড়ে তারা সাঁইকে ভক্তি আর আরাধনায় নিমগ্ন থাকে কখনো স্থান ত্যাগ করেনা। বিছানাপত্র হাতে নিয়ে কথা বলেন গাজীপুরের বাউল গুর ইসাহক শাহ। প্রায় একযুগ বাড়িতে ফেরেন না তিনি। সংসার ধর্ম টানে না তাকে। বাড়ির কোন খবর রাখেন না। সারা বছর  পথেই কেটে যায় এ ফকিরের। তবে মাঝে মধ্যে আসেন সাঁইজির ধামে। মনের তৃষ্ণা মেটাতে। পরিপূর্ণ হৃদয় নিয়ে ফিনের ভবের বাজারে। তবে অনেক বাউল, সাধু আঁখড়া ছাড়লেও অনেকে গুরুর বাড়িতে থেকে যাবেন আরও কদিন। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় আলোচনা অনুষ্ঠানে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর কামাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ আব্দুস শহীদ। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন খোকসা উপজেলা পরিদষদের চেয়ারম্যান সদর উদ্দিন খান বিশিষ্ট সমাজ সেবক হাজী রবিউল ইসলাম, কুষ্টিয়া জেলা আ’লীগের সহ-সভাপতি আক্কাস আলী মঞ্জু, কুষ্টিয়া জেলা আ’লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি খোন্দকার জুলফিকার আলী আরজু, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আঃ সাত্তার। প্রধান আলোচক হিসেবে লালনের অমর গানের মর্মকথা নিয়ে আলোচনা করেন কুষ্টিয়া সরকারী মহিলা কলেজের অধ্য প্রফেসর ড.জমির উদ্দিন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক সুদিন লাহিড়ী। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন লালন একাডেমির সাবেক সাধারণ সম্পাদক তাইজাল আলী খান। প্রধান আলোচক তার বক্তব্যে বলেন, সমাজ-ইতিহাসের ধারায় বিচার করলে বলা যায়, গ্রামবাংলার মানবতাবাদী মুক্তবুদ্ধির আন্দোলনের প্রাণপুরুষ ছিলেন লালন ফকির। সামাজিক ভেদনীতি, শ্রেনী-বৈষম্য, বর্ণ, শোষণ, জাতপাতের কলহ, সামন্ত-নিগ্রহও সাম্প্রদায়িক বিরোধের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন উচ্চকন্ঠ। লালনের নাম আজ দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্বের প্রতিটি দেশে উচ্চারিত হয়। একজন গ্রাম্য নিরর সাধকের এ অর্জন ও প্রতিষ্ঠা স্বভাবতই বিস্ময় জাগায় মনে। মানুষের প্রতি মানুষের শোষন-বঞ্চনা-অবিচারের চির অবসান কামনা করে সমাজমনস্ক সাধক লালন শ্রেনীহীন শোষনমুক্ত এক মানবসমাজের স্বপ্ন দেখেছেন তিনি। আলোচনা শেষে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে দেশের খ্যাতি সম্পন্ন শিল্পী সহ লালন একাডেমির শিল্পীরা সারা রাত সঙ্গীক পরিবেশন করেন। অনুষ্ঠানটি সার্বিক পরিচালনা ও উপস্থাপনা করেন শুকদেব সাহা।

লালন স্মরণোৎসবএকতারা, ঢোল আর বাঁশির সুরে মাতোয়ারা ছেঁউড়িয়া কুষ্টিয়া

লালনের সাধনভূমি কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়া এখন একতারা, ঢোল আর বাঁশির সুরে মাতোয়ারা। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা বাউলরা গেয়ে চলেছেন লালনের আধ্যাত্মিক গান। বাউলসম্রাটের গানের টানে হাজার হাজার মানুষ ছুটে আসছে ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়িতে। ফকির লালন শাহর আখড়াবাড়ি এবং বাড়ির সামনের বিশাল মাঠ এখন ভক্ত, সাধক ও দর্শনার্থীদের পদচারণে মুখরিত।
সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় স্থানীয় লালন একাডেমী পাঁচ দিনব্যাপী বার্ষিক লালন স্মরণোৎসবের আয়োজন করেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ছিল উৎসবের দ্বিতীয় দিন। গত বুধবার রাতে কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনের সংসদ সদস্য বেগম সুলতানা তরুণ প্রধান অতিথি হিসেবে উৎসবের উদ্বোধন করেন।
গতকালের অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক বনমালী ভৌমিকের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের প্রশাসক জাহিদ হোসেন জাফর। লালনের কর্মময় জীবন নিয়ে আলোচনা করেন বিশিষ্ট লালন-গবেষক ও স্থানীয় বরেণ্য ব্যক্তিরা।
লালন একাডেমীর কর্মকর্তারা জানান, এবার উৎসব শুরুর আগেই লালন শাহর মূল আখড়াবাড়ির অডিটরিয়াম চত্বরসহ পুরো এলাকায় হাজার হাজার ভক্ত-অনুসারী আসন গেড়ে বসে। ক্রমে সামনের বিশাল মাঠের সবটুকু ভরে গেছে। পুরো এলাকায় সাধুরা খণ্ড খণ্ড আসর বসিয়ে অবিরাম সাধনা করে চলেছেন লালনসংগীত।
এবারও ভারত, পাকিস্তান, ইংল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশের লালনভক্তদের আখড়াবাড়িতে দেখা গেছে। আমেরিকা থেকে আসা স্যামবোন বলেন, 'আমি অনেক আগে থেকেই লালন সম্পর্কে অনেক তত্ত্বকথা শুনেছি। এখানে এসেছি লালন সম্পর্কে আরো জানতে। আমার খুবই ভালো লাগছে।'
যশোর থেকে আসা লালনভক্ত ওসমান ফারুক বলেন, 'আমি প্রতিবছর বাবার মাজারে আসি। বাবার ধ্যান করি; ধ্যান শেষে পরিবারের কাছে ফিরে যাই।' রাজশাহীর রহনপুর থেকে আসা শাহজাহান ফকির বলেন, 'শুধু সাঁইজির সিদ্ধি লাভ ও আত্মার শান্তির জন্য আমি নিয়মিত এখানে আসি।' মেহেরপুরের লতা বিশ্বাস বলেন, 'লালন মানবতাবাদী কবি ছিলেন এবং তিনি মানবধর্ম পালন করতেন। তাই আমি আমার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে এখানে এসেছি মানবধর্ম সাধন করতে।'
লালন একাডেমীর সাবেক সহকারী সম্পাদক ও বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এনামূল হক মন্জু জানান, স্মরণোৎসবকে কেন্দ্র করে প্রতিরাতে এখানে স্থাপিত লালন-মঞ্চে রাতভর গান গেয়ে শিল্পীরা হাজার হাজার দর্শক-শ্রোতাকে মাতিয়ে রাখছেন। আর এ গানের টানে বিকেল হলেই এলাকার সব রাস্তায় মানুষের ঢল নামছে।
লালন একাডেমীর সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য তাইজাল আলী খান জানান, উৎসবে আসা লালন অনুসারীরা চিরনিদ্রায় শায়িত তাদের ধর্মগুরুর প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধা প্রদর্শন করছে। লালনের মূল মাজারের বাইরে বসেছে বিশাল বাউল মেলা। সেখানে বিভিন্ন পসরা সাজিয়ে বসেছেন নানা এলাকা থেকে আসা দুই শতাধিক ব্যবসায়ী। ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন ধরনের খাবার ও বাউল-বাদ্যসহ হরেক রকমের পণ্যসামগ্রী কিনছেন অভ্যাগতরা।
লালন একাডেমীর সভাপতি কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক বনমালী ভৌমিক জানান, উৎসবকে ঘিরে এবার ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ২৫০ জন র‌্যাব-পুলিশের পাশাপাশি ডিবি ও স্বেচ্ছাসেবকসহ লালন একাডেমীর কর্মকর্তারাও উৎসবে আসা ভক্তদের নিরাপত্তার বিষয়টি তদারকি করছেন। আগামী রবিবার মধ্যরাতে পাঁচ দিনব্যাপী উৎসবের সমাপ্তি হবে।
এদিকে লালন আখড়া-সংলগ্ন লালন মাজার শরিফ ও সেবাসদন কমিটির উদ্যোগে দিনব্যাপী লালন স্মরণোৎসব উদ্যাপিত হয়েছে গতকাল। লালন মাজার শরিফ ও সেবাসদন কমিটির প্রতিষ্ঠাতা ম মনিরুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক বনমালী ভৌমিক, বিশিষ্ট লালন-গবেষক অধ্যাপক ড. আবুল আহসান চৌধুরী, ফকির হাসান হাফিজ শাহ প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, বাউলসম্রাট ফকির লালন শাহর জীবন-কর্ম, মানবদর্শন, মরমি সংগীত, চিন্তা-চেতনা ও ধর্মদর্শন গবেষণার বিষয়ে পরিণত হয়েছে। লালনের প্রতি এক উদাসী টান ও আত্মার শান্তির জন্যই ভক্তরা বারবার ছুটে আসে এখানে।

রবিবার, ৪ মার্চ, ২০১২

কুষ্টিয়ায় পৃথক ঘটনায় যুবক ও মাছ ব্যবসায়ীর মৃত্যু

আরিফ মেহমুদ ॥ কুষ্টিয়ার কুমারখালীর পলীতে সন্ত্রাসীরা শ্বাস রোধ করে জবাই করে হত্যা করেছে আলম শেখ (৪৩) নামে এক কৃষককে। গতকাল শনিবার দিবাগত রাতে কুমারখালী উপজেলার বাগুলাট ইউনিয়নের বাগুলাট হিন্দুপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থানে পুলিশ ও র‌্যাবের উদ্ধতন কর্তৃপ পরিদর্শন করেছে। সে উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের শানপুকুরিয়া গ্রামের মৃত খয়বার শেখের ছেলে বলে জানা যায়। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, গত শনিবার সন্ধায় আলম শেখ তার বাড়ির জন্য বিদ্যৎ’র তার কিনতে বাঁশগ্রাম বাজারে যায়। সেখান থেকে বাড়ি ফেরার পথে তাকে অপহরন করে সন্ত্রাসীরা। পরে তাকে ধরে বাগুলাট হিন্দুপাড়ার রহমান মোলার বাগানে ওই রাতেই শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে জবাই করে মৃত্যু নিশ্চিত করে লাশ ফেলে রেখে চলে যায়। গতকাল রবিবার ভোরে ওই এলাকার স্থানীয়রা একটি লাশ দেখতে পায়। স্থানীয় বাঁশগ্রাম পুলিশ ক্যাম্পে  জানানো পর পুলিশ ঘটনাস্থানে হাজির হয়। পরে ওই এলাকার লাশের সংবাদ ছরিয়ে পড়লে শানপুকুরিয়ার লোকজন লাশটি আলমের বলে সনাক্ত করে। পরে আলমের পরিবারের লোকজন এসে নিশ্চিত হয় লাশটি আলমের। নিহত আলমের লাশটি দেখতে ওই এলাকার হাজার হাজার লোক ভীর জমায় । পরে কুষ্টিয়া থেকে পুলিশের উদ্ধতন কর্তৃপ বাগুলাট হিন্দুপাড়ায় উপস্থিত হয়। পুলিশ লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে। এদিকে গতকাল সকালে সদর উপজেলার কবুরহাট  খাজানগর দোস্তপাড়ায় তুচ্ছ ঘটনায় ইটের আঘাতে আব্দুস সাত্তার (৪০) নামে এক মাছ ব্যবসায়ীকে হত্যা করেছে প্রতিপ। গতকাল সকালে খাজানগর দোস্তপাড়ার আজাদ পিতা জামাল উদ্দিন দোস্তপাড়া, শিপন পিতা আব্দুর রউফ খাজা নগর। প্রেম ঘটিত কারনে এ হত্যা কান্ড সংঘটিত হয়। এতিম রাইচ মিলের চাতালে এ ঘটনা ঘটে।

শনিবার, ৩ মার্চ, ২০১২

আর মাত্র ২ দিন কুষ্টিয়া জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন , চুড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ, ১জনের প্রার্থীতা প্রত্যাহার, ৯ জন বিনা প্রতিদ্বন্দীতায় নির্বাচতি


Avwid †gngy` \ mKj Ríbv-Kíbvi Aemvb, A‡c¶vi cvjv †kl| Avi gvÎ 2 w`b ci 2 wW‡m¤^i AbywôZ n‡”Q Kzwóqv †Rjv AvBbRxex mwgwZi mvaviY wbe©vPb| Gj‡¶¨ MZKvj †mvgevi `ycy‡i Kzwóqv †Rjv AvBbRxex mwgwZi 2010-2011 mv‡ji mvaviY wbe©vP‡bi PzovšÍ cÖv_©x ZvwjKv cÖKvk K‡i‡Q wbe©vPb Kwgkb| wbe©vPb Kwgkb myÎ Rvwb‡q‡Q mfvcwZ c‡` wbe©vP‡b B”QyK cÖv_x© G¨vW.Av m g Av³vi“¾vgvb gvmyg Zvi cÖv_©xZv cÖZ¨vnvi K‡i‡Qb| evKx 17wU c‡`i g‡a¨ mn-mfvcwZ mn 9 cÖv_©x‡K webv cÖwZØ›`xZvq †emiKvixfv‡e wbe©vwPZ †Nvlbv Kiv n‡q‡Q| Giv n‡jb- mn-mfvcwZ c‡` G¨vW. gwZqvi ingvb| †Kvlva¨¶ c‡` G¨vW. Aveyj Kvjvg AvRv` Kgj, jvB‡eªix m¤úv`K c‡` G¨vW. kvgmy¾vgvb gwb, mvs¯‹…wZK m¤úv`K c‡` G¨vW. †Zvdv‡¾j †nv‡mb, `ßi m¤úv`K c‡` G¨vW. Kvgi“j Bmjvg †LvKb I Rywbqi m`m¨ c‡` G¨vW.‡mwjg †mvnive, nvmvb iv¾vK, wc Gg wmivRyj Bmjvg, AvQv`yi ingvb webv cÖwZØ›`xZvq wbe©vwPZ n‡q‡Qb| Rywbqi m`m¨ c‡` wbe©vP‡b B”QyK Gbvg~j nK ‡Kvb c‡` wbe©vP‡b cÖwZØw›`Zv Ki‡Z Pvb D‡j­L bv Kivq Zvi cÖv_©xZv evwZj Ges G¨vW. †mv‡njx cvifxb Szgyi wbe©vPb Kwgk‡bi †`qv wba©vwiZ mg‡qi g‡a¨ g‡bvbqbcÎ Rgv †`bwb e‡j Rvbv †M‡Q| mfvcwZ, wmwbqi mn-mfvcwZ I m¤úv`K, hyM¥ m¤úv`Kmn 8 wU ¸i“Z¡c~Y© c‡` wbe©vP‡b jo‡Qb mfvcwZ c‡` jo‡Qb 3 Rb| Giv n‡jb-G¨vW. Aa¨¶ Avwgi“j Bmjvg, wRj­yi ingvb I nvi“b-Ai-ikx`| wmwbqi mn-mfvcwZ 1 wU c‡`i Rb¨ jo‡Qb 3 Rb| Giv n‡jb-G¨vW. kªx m~axi Kzgvi kg©v, Avnv¤§` Avjx I KvRx Kvgvjyj AvRg| m¤úv`K c‡` jo‡Qb 3 Rb, Giv n‡jb-eZ©gvb m¤úv`K G¨vW. b~i“j Bmjvg `yjvj, Avey mv‡jn †gvnv¤§` gymv I gvnvZve DwÏb| wmwbqi m`m¨ 4 wU c‡`i Rb¨ jo‡Qb 6 Rb, Giv n‡jb-G¨vW.†gv¯Ídv kvgmy¾vgvb, BKevj †nv‡mb, nvwmbv gvngy`v wmwÏKv, Lv‡`g~j Bmjvg, Avãyj Lv‡jK I Avãyi iwk` ivbv| D‡j­L¨,mwgwZi MVbZš¿ Abyhvqx wbe©vwPZ wbe©vnx cwi‡l‡`i 1 eQi †gqv`xi KwgwU mwgwZi myô KvR cwiPvjbvq A‡bKvs‡k B”Qv _vKv m‡Z¡I m¤ú~Y© Ki‡Z cv‡ibv| AvBbRxex‡`i mvwe©K Kj¨v‡Y I mwgwZi Dbœq‡bi K_v we‡ePbvq G‡b eZ©gvb KwgwU 1 eQ‡ii cwie‡Z© GKwU mvaviY wgwUs‡qi gva¨‡g 2 eQ‡i †gqv`Kvj DbœxZ K‡i| GB †gqv` evov‡bvi welq wb‡q wKQyUv m„ó RwUZv †`Lv †`q| welqwU Av`vjZ ch©šÍ MovB| MVbZš¿ ms‡kva‡b we‡ivaxZvKvix c‡¶i AvBbRxexiv ev`x gnvgvb¨ nvB‡KvU© wefv‡Mi wmwfj wiwfkb 1790/10 bs-†gvKvÏgv `v‡qi K‡ib| G wbe©vP‡b gvgjvi ev`x 5 Rb AvBbRxex ¯^ZtùzZ©fv‡e wewfbœ c‡` cÖv_©x n‡q wbe©vP‡b Ask MÖnY Ki‡Qb| †fvU wRZ‡jB fvj Avi nvi‡jB we‡ivaxZv bxwZ cwinvi K‡i GeviB cÖ_g `yc¶B mn Ae¯’v‡b †_‡K wbe©vP‡b Ask wb‡”Qb| †m mgq gvgjv wb‡q gZ‰bK¨ mvgvb¨ †`Lv w`‡jI gnvgvb¨ nvB‡KvU© wefv‡Mi wb‡`©kbvi cÖwZ kª×v Rvwb‡q Ges AvBbRxex‡`i ‡ckvMZ gvb m¤§bœZ ivL‡Z Kzwóqv †Rjv AvBbRxex mwgwZi eZ©gvb wbe©vnx cwil` wbe©vP‡bi Zckxj †Nvlbv K‡i GKwU bwRiwenxb `„óvšÍ ¯’vcb K‡i‡Q| wbe©vPb wb‡q Kzwóqv †Rjv AvBbRxex feb A‡bK w`b wb‡ivËvc _vK‡jI Avev‡iv wbe©vPbx DËv‡ci Av‡gR eB‡Q GLv‡b| cÖv_©xiv gv‡V †b‡g‡Qb †fvU PvB‡Z| Lye †Rv‡i-m‡iB †b‡g‡Qb wbe©vPbx gv‡V| wbe©vPb‡K †K›`ª AvBbRxex‡`i g‡a¨ wbe©vPbx B‡gR bv _vK‡jI cÖPvi wKš‘ †_‡K †bB| Pj‡Q wbR wbR †m‡i¯Ívi AvBbRxex‡`i wbqš¿‡Yi †Rvi †Póv| †ckvMZ nvRv‡iv e¨¯ÍZvi g‡a¨I †fvU‡K †K›`ª G‡K Ac‡ii mv‡_ †`Lv Ki‡Q Ges †fvUvi‡`i Kv‡Q †fvU cÖv_©bv Ki‡Qb cÖv_©xiv| Zckxj Abyhvqx AvMvgx 2 wW‡m¤^i e„n¯úwZevi 2010-11 mv‡ji †gqv`x KwgwUi wbe©vPb mwgwZi wbR¯^ fe‡b AbywôZ n‡e| mKvj 9 Uv †_‡K ïi“ n‡q weiwZnxbfv‡e †fvU MÖnY Pj‡e GKUvbv `ycyi 2 Uv ch©šÍ| Gev‡ii wbe©vP‡b wbe©vPb Kwgk‡bi `vwq‡Z¡ i‡q‡Qb- wmwbqi AvBbRxex G¨vW.AvmgZ Avjx miKvi, Avjg RvKvwiqv wUcy I G¨vW. AvKivg †nv‡mb `yjvj|