বুধবার, ৩ এপ্রিল, ২০১৩

বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবসে সিভিল সার্জন ডাঃ তরুণ কান্তি প্রতিবন্ধী শিশুদের কল্যাণে বিত্তবানদের এগিয়ে আসতে হবে

আরিফ মেহমুদ ॥ কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন ডাঃ তরুণ কান্তি হালদার বলেছেন, প্রতিকন্ধীরা আমাদের সমাজের বোঝা নয়, তারা আমাদের সম্পদ ও অহংকার। তাদের অবহেলা নয় বরং সহায়তা করতে হবে। অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতি সমাজের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করতে হবে। অটিজম বিষয়ে এবং প্রতিবন্ধীদের অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং পরিবার ও সমাজের দৃষ্টিভঙ্গী বদলাতে হবে। একটি বৈষম্যহীন একীভূত সমাজ তৈরির লক্ষ্যে উন্নয়নের মূলস্রোতধারায় সকলকে সম্পৃক্তকরণের মাধ্যমে আমরা একটি সুন্দর, সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারি। প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে ও তাদের কাঙ্খিত লক্ষ্য পূরণে সরকারের পাশাপাশি দেশি বিদেশি সংস্থা, সুশীল সমাজ এবং বিত্তবানদের এগিয়ে আসতে হবে। ভিন্ন মানববৈচিত্রের অধিকারী এ জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নের মূলধারায় সম্পৃক্ত করতে বর্তমান সরকার ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা উপবৃত্তি প্রদান, বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্কুল স্থাপন, সরকারি চাকুরিতে কোটা সংরক্ষণ, প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র এবং অটিজম রির্সোস সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিবন্ধিতা সনাক্তকরণ জরিপের পাইলট প্রকল্পের কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ক্রীড়া, সংস্কৃতিসহ সকল ক্ষেত্রে তাদের সমঅধিকার নিশ্চিত করতে সরকার বদ্ধপরিকর। গতকাল মঙ্গলবার সকালে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন ও জেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তর আয়োজিত বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতেই প্রতিবন্ধীদের হৃদয়ের অব্যক্ত নীল বেদনার বহিপ্রকাশের প্রতীক হিসেবে নীল বাতি জ্বালিয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি। প্রতি বছরের মতো এবারও সারা বিশ্বের ন্যায় কুষ্টিয়াতেও যথাযোগ্য কর্মসূচীর মাধ্যমে ‘৬ষ্ঠ বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস’ পালিত হয়েছে। যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে র‌্যালী, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। কুষ্টিয়া জেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুল গনির সভাপতিত্বে এবারের প্রদিপাদ্য বিষয়-অটিজম জীবনের সাহসী যাত্রা’ এর উপর আলোকপাত করে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডাঃ আজিজুন নাহার, সমাজ সেবা অধিদপ্তরের সাবেক উপ-পরিচালক নজরুল ইসলাম ও দি কুষ্টিয়া চেম্বার অব কমার্সের সহ-সভাপতি এস এম কাদেরী শাকিল। আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন প্রতিবন্ধী সংগঠন কম্পনের নির্বাহী পরিচালক জেদ আলী, প্রতিবন্ধী সংগঠনের নেতা নওশের আলী, কুষ্টিয়া বুদ্ধি প্রদিবন্ধী স্কুলের প্রধান শিক্ষক আসমা আনসারী মিরু,প্রতিবন্ধী সংগঠনের নেতা আখতার হোসেন ও বাবুলার রহমান প্রমুখ। বক্তারা তাদের বক্তব্যে বলেন,আগে সংক্রামক রোগের ওপর গুরুত্ব দেয়া হলেও মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা ও ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅ্যাবিলিটিজের মতো অসংক্রামক ব্যাধিগুলো চিকিৎসার বাইরে থেকে গেছে এবং তার ফলে ধীরে ধীরে সমাজে অনেক জীবন নষ্ট হয়েছে-যাতে সংশি¬ষ্টদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষতির পাশাপাশি মানসিক যন্ত্রণার শিকার হতে হয়েছে। গত শতকে শিশুদের মানসিক বিকাশ পরীক্ষা-নিরীক্ষার অভূতপূর্ব অগ্রগতি হলেও দুর্ভাগ্যজনকভাবে তাদের ও তাদের পরিবারের চাহিদা পূরণের সেবাগুলো সেভাবে বাড়েনি। তারপর আমাদের এখানে যেসব সেবা দেয়া হয় সেগুলোর বেশিরভাগই হয়ে থাকে নগরভিত্তিক। তাই গ্রাম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসকারী এবং দরিদ্ররা সেগুলো পায় না। কী কারণে অটিজম হয় তা আমাদের জানা নাও থাকতে পারে, কিন্তু অটিস্টিকদের নিজেদের সার্মথ অনুধাবনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। আলোচনা শেষে একজন প্রতিবন্ধীকে প্রধান অতিথি সহ অন্যান্য অতিথিবৃন্দ একটি হুইল চেয়ার তুলে দেন। পরে জেলার বিভিন্ন প্রতিবন্ধী সংগঠনের ছেলে-মেয়েদের অংশগ্রহনে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানটি সার্বিক উপস্থাপনা ও পরিচালনা করেন খন্দকার লুৎফর রহমান।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন