বুধবার, ৩ এপ্রিল, ২০১৩

দহকুলা মহম্মদ শাহী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪৭বছর পূর্তিতে ডিমিস সমাজ পরিবর্তনে যুব সমাজের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ


আরিফ মেহমুদ ॥ কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেন বলেছেন, সংস্কৃতির পাশা পাশি ক্রীড়াঙ্গন ও শিক্ষাতেও কুষ্টিয়া জেলার ঐতিহ্যবাহী ইতিহাস রয়েছে। সেই ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা আমাদের পূণঃজীবিত করতে যুবকদের এগিয়ে আসতে হবে। এ জন্য জেলার সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। পারিবারিকভাবেই আপনার ছেলেকে যেমন বিদ্যালয়ে পাঠাচ্ছেন। তেমনি তাদের ক্রীড়ামুখি করে গড়ে তোলার দায়িত্বও আপনাদের। ভাল খেলোয়াড় তৈরী করতে হলে প্রয়োজন নিয়মিত অনুশীলন করা। লেখাপড়া শিখলেই কেবল দেশের সুনাম বয়ে আনা সম্ভব হয় না। খেলাধুলার মাধ্যমে দেশের সুনাম বয়ে আনা সম্ভব।খেলাধুলা একদিকে যেমন শারীরকে সুস্থ রাখে,অপর দিকে সন্ত্রাস ও মাদকাসক্ত থেকে যুব সমাজকে রক্ষা করে। লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলা করলে শরীর ও মন দুই-ই ভালো থাকে। তাই পড়ালেখার পাশাপাশি খেলাধুলার গুরুত্ব অপরিসীম। আজ যারা ছাত্র-ছাত্রী তারাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। সমাজের আমূল পরিবর্তন আনতে যুব সমাজের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে দহকুলা মহম্মদ শাহী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪৭বছর পূর্তি উপলক্ষে আলোচনা সভা ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিদ্যালয়ের ৪৭বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত দিনব্যাপী কর্মসূচীর মধ্যে সকলা ৭টায় বিদ্যালয় প্রাঙ্গন থেকে এক বর্ণাঢ্য র‌্যালী বের করা হয়। র‌্যালীটি দহকুল বাজার প্রদক্ষিণ করে বিদ্যালয়ে এসে মিলিত হয়। এরপর সকাল ১০টায় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। বিকেলে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও ৫ নং আলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আ’লীগ নেতা আখতারুজ্জামান বিশ্বাসের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলীমুন রাজীব ও বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কাজী আফছারুল হক। আলোচনা শেষে প্রধান অতিথি সহ অন্যান্য অতিথিবৃন্দ ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ কেেরন। পরে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এতে স্থানীয় সহ বেতার ও টেলিভিশনের খ্যাতমান শিল্পীবৃন্দ সঙ্গীত পরিবেশন করেন।   

বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবসে সিভিল সার্জন ডাঃ তরুণ কান্তি প্রতিবন্ধী শিশুদের কল্যাণে বিত্তবানদের এগিয়ে আসতে হবে

আরিফ মেহমুদ ॥ কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন ডাঃ তরুণ কান্তি হালদার বলেছেন, প্রতিকন্ধীরা আমাদের সমাজের বোঝা নয়, তারা আমাদের সম্পদ ও অহংকার। তাদের অবহেলা নয় বরং সহায়তা করতে হবে। অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতি সমাজের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করতে হবে। অটিজম বিষয়ে এবং প্রতিবন্ধীদের অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং পরিবার ও সমাজের দৃষ্টিভঙ্গী বদলাতে হবে। একটি বৈষম্যহীন একীভূত সমাজ তৈরির লক্ষ্যে উন্নয়নের মূলস্রোতধারায় সকলকে সম্পৃক্তকরণের মাধ্যমে আমরা একটি সুন্দর, সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারি। প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে ও তাদের কাঙ্খিত লক্ষ্য পূরণে সরকারের পাশাপাশি দেশি বিদেশি সংস্থা, সুশীল সমাজ এবং বিত্তবানদের এগিয়ে আসতে হবে। ভিন্ন মানববৈচিত্রের অধিকারী এ জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নের মূলধারায় সম্পৃক্ত করতে বর্তমান সরকার ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা উপবৃত্তি প্রদান, বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্কুল স্থাপন, সরকারি চাকুরিতে কোটা সংরক্ষণ, প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র এবং অটিজম রির্সোস সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিবন্ধিতা সনাক্তকরণ জরিপের পাইলট প্রকল্পের কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ক্রীড়া, সংস্কৃতিসহ সকল ক্ষেত্রে তাদের সমঅধিকার নিশ্চিত করতে সরকার বদ্ধপরিকর। গতকাল মঙ্গলবার সকালে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন ও জেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তর আয়োজিত বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতেই প্রতিবন্ধীদের হৃদয়ের অব্যক্ত নীল বেদনার বহিপ্রকাশের প্রতীক হিসেবে নীল বাতি জ্বালিয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি। প্রতি বছরের মতো এবারও সারা বিশ্বের ন্যায় কুষ্টিয়াতেও যথাযোগ্য কর্মসূচীর মাধ্যমে ‘৬ষ্ঠ বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস’ পালিত হয়েছে। যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে র‌্যালী, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। কুষ্টিয়া জেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুল গনির সভাপতিত্বে এবারের প্রদিপাদ্য বিষয়-অটিজম জীবনের সাহসী যাত্রা’ এর উপর আলোকপাত করে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডাঃ আজিজুন নাহার, সমাজ সেবা অধিদপ্তরের সাবেক উপ-পরিচালক নজরুল ইসলাম ও দি কুষ্টিয়া চেম্বার অব কমার্সের সহ-সভাপতি এস এম কাদেরী শাকিল। আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন প্রতিবন্ধী সংগঠন কম্পনের নির্বাহী পরিচালক জেদ আলী, প্রতিবন্ধী সংগঠনের নেতা নওশের আলী, কুষ্টিয়া বুদ্ধি প্রদিবন্ধী স্কুলের প্রধান শিক্ষক আসমা আনসারী মিরু,প্রতিবন্ধী সংগঠনের নেতা আখতার হোসেন ও বাবুলার রহমান প্রমুখ। বক্তারা তাদের বক্তব্যে বলেন,আগে সংক্রামক রোগের ওপর গুরুত্ব দেয়া হলেও মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা ও ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅ্যাবিলিটিজের মতো অসংক্রামক ব্যাধিগুলো চিকিৎসার বাইরে থেকে গেছে এবং তার ফলে ধীরে ধীরে সমাজে অনেক জীবন নষ্ট হয়েছে-যাতে সংশি¬ষ্টদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষতির পাশাপাশি মানসিক যন্ত্রণার শিকার হতে হয়েছে। গত শতকে শিশুদের মানসিক বিকাশ পরীক্ষা-নিরীক্ষার অভূতপূর্ব অগ্রগতি হলেও দুর্ভাগ্যজনকভাবে তাদের ও তাদের পরিবারের চাহিদা পূরণের সেবাগুলো সেভাবে বাড়েনি। তারপর আমাদের এখানে যেসব সেবা দেয়া হয় সেগুলোর বেশিরভাগই হয়ে থাকে নগরভিত্তিক। তাই গ্রাম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসকারী এবং দরিদ্ররা সেগুলো পায় না। কী কারণে অটিজম হয় তা আমাদের জানা নাও থাকতে পারে, কিন্তু অটিস্টিকদের নিজেদের সার্মথ অনুধাবনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। আলোচনা শেষে একজন প্রতিবন্ধীকে প্রধান অতিথি সহ অন্যান্য অতিথিবৃন্দ একটি হুইল চেয়ার তুলে দেন। পরে জেলার বিভিন্ন প্রতিবন্ধী সংগঠনের ছেলে-মেয়েদের অংশগ্রহনে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানটি সার্বিক উপস্থাপনা ও পরিচালনা করেন খন্দকার লুৎফর রহমান।

কুষ্টিয়া প্রথম মুক্ত দিবসে ডিসি-মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান, আমাদের অহংকার

আরিফ মেহমুদ ॥ কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেন বলেছেন, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান ও দেশের সূর্য্য সৈনিক মুক্তিযোদ্ধারা যে আশা ও প্রত্যাশা নিয়ে এদেশ স্বাধীন করেছিল তা পুরণ হয়নি আজো। স্বাধীনতার ৪২ বছর অতিবাহিত হলেও আমরা এখনো স্বাধীনতার পূর্ণাঙ্গ স্বাদ পায়নি। দেশের স্থপতি জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিবক ৭ মার্চের আহবানে সাড়া দিয়ে বাংলার দামাল ছেলেরা মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গণে যারা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে এদেশ থেকে চিরশুত্র“ পাকিস্তানী হানাদারদের উৎখাত করে প্রিয় মাতৃভূমিকে মুক্ত করেছিল তাদের মধ্যে কোন বিভেদ অনৈক্য থাকতে পারেনা। মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান, আমাদের অহংকার। মুক্তিযোদ্ধারা মহান স্বাধীনতার জন্য অমিত তেজে ও অসীম সাহসিকতা নিয়ে পাকহানাদারদের সাথে রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র যুদ্ধ করে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। তাঁরা বাঙালী জাতিকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র উপহার দিয়েছেন। যুদ্ধচলাকালিন সময়ে আজকের দিনে কুষ্টিয়ার মুক্তিযোদ্ধারা পাকহানাদারদের সাথে মরণপন যুদ্ধ করেই প্রথম কুষ্টিয়াকে মুক্ত করেছিল। গতকাল রবিবার সকালে কালেক্টরেট চত্বরে কুষ্টিয়া প্রথম মুক্তদিবস উদযাপন উপলক্ষে মুক্তিযোদ্ধাদের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সমাবেশের আগে প্রধান অতিথির নেতৃত্বে কালেক্টরেট ভবন থেকে এক বর্ণাাঢ্য র‌্যালী বের করা হয়। র‌্যালীটি শহরে প্রদক্ষিণ শেষে কালেক্টরেট চত্বরের শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে এসে শেষ হয়। জাতীয় ও মুক্তিযুদ্ধের পতাকা উত্তোলনের মধ্যে দিয়ে সমাবেশের শুরুতেই আমাদের মহান স্বাধীনতার মুক্তিযুদ্ধে নিহত সকল শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের বিদেহী আত্মার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে ও মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। সকল শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে প্রথমে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেন ও পুলিশ সুপার মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ পুষ্প মাল্য অর্পণ করেন। পর পর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পক্ষে কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা নাছিম উদ্দিন আহমেদ,ডেপুডি কমান্ডার আলহাজ্ব রফিকুল আলম টুকু, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাংগঠনিক কমান্ডের পক্ষে কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী ও সাংগঠনিক কমান্ডের আহবায়ক মানিক কুমার ঘোষ সহ সর্বস্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ শহীদ বেদিতে পুষ্প মাল্য অর্পণ করেন। সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ, কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ড.মল্লিক আনোয়ার হোসেন, কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ইউনিটের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা নাছিম উদ্দিন আহমেদ ডেপুডি কমান্ডার আলহাজ্ব রফিকুল আলম টুকু, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাংগঠনিক কমান্ডের আহবায়ক মানিক কুমার ঘোষ সহ জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও সর্বস্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ উপস্থিত ছিলেন।

স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস-বাঙালি জাতির গৌরবের ও অহংকারের দিন স্বাধীনতা দিবস

আরিফ মেহমুদ ॥ কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেন বলেছেন, জাতীয় জীবনের সবচেয়ে আলোচিত, সবচেয়ে গৌরবের স্মৃতি নিয়ে আবারও ফিরে এসেছে চির অম­ান, আনন্দ-বেদনায় মিশ্রিত আমাদের মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসটি। মৃত্যুপণ লড়াই ও রক্তসমুদ্র পাড়ি দিয়ে বীর বাঙালি জাতি ছিনিয়ে এনেছে জাতীয় ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন-স্বাধীনতা। আজ থেকে ৪২ বছর আগের এই দিনে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর দমন অভিযানের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বাংলার সাড়ে সাত কোটি বাঙালি। বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অমোঘ আহবানে সর্বাত্বক লড়াই শুরু করে তারা। ২৫ মার্চের কালরাত্রিতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ঢাকার গণহত্যাই মরণপণ যুদ্ধে ঠেলে দেয় এ জনপদের মানুষকে। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে ১৬ ডিসেম্বর লড়াকু এ জাতি চূড়ান্ত বিজয়ের মধ্য দিয়ে ছিনিয়ে আনে তার অনিবার্য বিজয়। সেই থেকে ২৬ মার্চ এ জাতির জন্য এক আলোকোজ্জ্বল গৌরবের ও অহংকারের দিন। গতকাল কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন আয়োজিত মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বেলা ১১টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে জেলার শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা ও মুক্তিযোদ্ধাদের ক্রেষ্ট প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি আরো বলেন স্বাধীনতার গৌরবময় ইতিহাস ধরে রাখতে বর্তমানে প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। অসত্য ও বিকৃত ইতিহাস থেকে নতুন প্রজন্মকে মুক্ত করা এবং যুদ্ধাপরাধী, রাজাকারমুক্ত দেশ গড়ার। বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধু, রাষ্ট্র এবং ব্যক্তি আজ এক বিন্দুতে মিলিত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের স্ব-পক্ষের সকল শক্তিকে নিজের ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করতে। স্বাধীনতার ৪২ বছরে অনেকেই হতাশা প্রকাশ করেন, দেশ আমাকে কি দিয়েছে! দেশ আমাকে কি দিয়েছে সেটি বড় কথা নয়, বড় কথা হচ্ছে আমি দেশকে কি দিয়েছি সেটিই প্রধান বিবেচ্য বিষয় মেনে নিয়ে দেশ ও জাতির উন্নয়নে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।
কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কেএম রাহাতুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ, জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের কমান্ডার নাছিম উদ্দিন আহমেদ, ডেপুটি কমান্ডার হাজী রফিকুল আলম টুকু, বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দিন মৃধা, আব্দুল মোমিন ও সানোয়ার উদ্দিন রিন্টু প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন আরডিসি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জাহিদুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে নিহত সকল শহীদের আত্মার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে ১মিনিট দাড়িয়ে নিরবতা পালন করা হয়। পরিশেষে জেলার শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা ও বিশেষ উপহার সামগ্রী প্রদান করা হয়।
এদিকে স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে সন্ধ্যায় কুষ্টিয়া কালেক্টরেট ভবন চত্বরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন আয়োজিত মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ড.মল্লিক আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানেও তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন। তিনি তার বক্তব্যে আরো বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে সুখি সমৃদ্ধ ও দারিদ্রমুক্ত দেশ গঠনে ও জাতীয় উন্নয়নে ডিজিটাল প্রযুক্তির অবদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ডিজিটাল প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার, দিক নির্দেশনা ও সম্পৃক্ততায় কঠিনতর কাজ অতি সহজে সম্পন্ন করা সম্ভব। অবহেলিত উন্নয়ন বঞ্চিত এলাকায় যুব সমাজের মাঝে প্রযুক্তির অংশ গ্রহনে সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করে উন্নয়নের দ্বার উম্মোচন করতে পারে। আসুন মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে অঙ্গীকার করি সুখি সমৃদ্ধ, ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার সর্বজনীন ও অপরিহার্য করে তুলি। এবারের আলোচ্য বিষয় ছিল-সুখি সমৃদ্ধ, ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ গঠনের লক্ষে ডিজিটাল প্রযুক্তির সর্বজনীন ব্যবহার। কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ড.মল্লিক আনোয়ার হোসেনের  সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা পুলিশ সুপার মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ, জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী, কুষ্টিয়া সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর বদরুদ্দোজা, স্বাচিব নেতা ডাঃ আমিনুল হক রতন, জেলা জাসদের সভাপতি গোলাম মহসীন, হাজী সেলিনুর রহমান। প্রধান আলোচক হিসেবে আলোচনায় অংশ নেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রফেসর ড.সরোয়ার মুর্শেদ রতন, বিশিষ্ট লেখক ও কলামিষ্ট শেখ গিয়াস উদ্দিন আহমেদ মিন্টু। যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালনে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন দিনব্যাপী নানান কর্মসুচীর আয়োজন করে। সকালে কুষ্টিয়া ষ্টেডিয়ামের এক সংক্ষিপ্ত আলোচনা সমাবেশে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্বর্ধিত করা হয়। এ সময় সম্বর্ধিত মুক্তিযোদ্ধারা নিজ জন্মভূমিতে সম্বর্ধিত হওয়ায় আবেগ-আপ্লুত হয়ে পড়ে। তারা বলেন, যে জাতি সম্মানীয়দের সম্মান দিতে পারে সে জাতি বিশ্বমন্ডলীর কাছেও সম্মানিত হয়। নিজের মাটিতে এই বিরল সম্মান শুধু আমাদের একার নয়। এটা পুরো কুষ্টিয়াবাসীর সম্মান। আমরা গর্বিত ও চির কৃতজ্ঞ কুষ্টিয়াবাসির কাছে। আলোচনা শেষে রাতে কালেক্টরেটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পাদদেশে জেলা শিশু একাডেমি ও শিল্পকলা একাডেমির পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণ করা হয়। এতে বিভিন্ন গণজাগনের ও দেশের গানের তালে তালে নেচেছে জেলা শিশু একাডেমির ক্ষুদে নাচিয়া ও শিল্পী কলা কৌশলীরা। সঙ্গীত পরিবেশন করে জেজলা শিশু একাডেমি ও জেলা শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীবৃন্দ সহ বেতার ও টেলিভিশনের শিল্পীবৃন্দ। সঙ্গীত পরিবেশন ও নাচ চলে গভীর রাত পর্যন্ত। পরে জেলা শিশু একাডেমি আয়োজিত বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী বিজয়ীদের হাতে প্রধান অতিথি সহ অন্যান্য অতিথিবৃন্দ পুরস্কার তুলে দেন। অনুষ্ঠানটি  উপস্থাপনা ও সার্বিক পরিচালনা করেন কবি শুকদেব সাহা।



লালন স্বরণোৎসবের সমাপনী, ভেঙ্গেছে সাধুর হাট, ফিরছে যে যার আপন ঘরে

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি ॥ ঘোষনা অনুযায়ী বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের স্বরণোৎসবের ৫দিনের অনুষ্ঠানমালার সমাপনী দিনে সাধুদের হাট ভেঙ্গে গেছে গতকাল শনিবার। সাধুরা ফিরছে যে যার আপন ঘরে। আজ আখড়া ঘুরে দেখা গেছে, দুর-দূরান্ত থেকে আসা বাউলরা নিজ নিজ আস্তানা ছেড়ে বিছানাপত্র গুছিয়ে রওনা হয়েছে অনেকেই। তবে যাওয়ার আগে আঁখড়া বাড়ির পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। গুরুকে বারবার প্রনাম ও নানা রকম ভক্তি জানিয়ে বিদায় নেন শিষ্যরা। গুরু ভক্তি আর সিদ্ধ মন নিয়ে বিদায় নেয়ার সময় অনেক বাউল তাদের চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি। আবার দেখা হবে সাঁইজির উদাসী ডাকের টানে। গুরু ইসাহক শাহ জানান, সাঁইয়ের জীবদ্দশায় শুধূমাত্র তার ভক্ত আর শিষ্যদের নিয়ে মুলত আড়াই দিনের উৎসব করতেন। সে নিময় মেনেই বাউলরা ভাটাই আসে উজানে ফিরে যায়, যে যার আপন নিবাসে। প্রকৃত ভেকধারী বাউলরা সরকারি অনুষ্ঠানের ব্যাপারে খোঁজখবরও রাখেনা না। তাদেরকে মঞ্চে ডাকলেও তারা আসন ছেড়ে উঠেন না। গতকাল ভোরে সুর্য্য ওঠার আগেই অহিংস মানবতা প্রতিষ্ঠায় আপন মোকামে গুরুর চরণ ছুয়ে দিক্ষা নিয়ে ভক্তি নিবেদন করে শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছে অনেক বাউল। লালন আঁখড়ার আশে পাশে ও একাডেমীর নিচে যারা আসন গাড়ে তারা সাঁইকে ভক্তি আর আরাধনায় নিমগ্ন থাকে কখনো স্থান ত্যাগ করেনা। বিছানাপত্র হাতে নিয়ে কথা বলেন গাজীপুরের বাউল গুর ইসাহক শাহ। প্রায় একযুগ বাড়িতে ফেরেন না তিনি। সংসার ধর্ম টানে না তাকে। বাড়ির কোন খবর রাখেন না। সারা বছর পথেই কেটে যায় এ ফকিরের। তবে মাঝে মধ্যে আসেন সাঁইজির ধামে। মনের তৃষ্ণা মেটাতে। পরিপূর্ণ হৃদয় নিয়ে ফিনের ভবের বাজারে। তবে অনেক বাউল, সাধু আঁখড়া ছাড়লেও অনেকে গুরুর বাড়িতে থেকে যাবেন আরও কদিন। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় সমাপনী দিনে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন খোকসা-কুমারখালি আসনের সাংসদ বেগম সুলতানা তরুণ,কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ, জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী, খোকসা উপজেলা চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য আলহাজ্ব সদর উদ্দিন খান, কুমারখালি উপজেলা চেয়ারম্যান আ’লীগ নেতা আব্দুর রউফ, জেলা আ’লীগের সহ-সভপাতি হাজী রবিউল ইসলাম। প্রধান আলোচক হিসেবে আলোচনা করবেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপচার্য প্রফেসর ড.শাহিনুর রহমান। এবারের স্বরণোৎসবের অনুষ্ঠানে আসা দেশ-বিদেশের লাখ ভক্ত অনুরাগী ও সাধু-গুরুদের চরণ ধূলায় সিক্ত বাউল সম্রাটের ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়ী। সাঁইজির মতাদর্শের ধর্ম আর জাতি ভেদাভেদ ভুলে মানুষের কল্যাণে মানুষ নিবেদিত থাক চিরকাল এবং মানবতার নিগুড় প্রেমের ভাবধারা বর্তমান সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে ভক্তকুলের অঙ্গীকার। সভ্যতার এই যুগে মানুষ মানুষে হিংসা বিদ্বেশ ভূলে সাঁইজির জাতহীন মানব দর্শনের ‘সত্য বল সুপথে চল ওরে আমার মন’ এই শ্লোগানকে বাস্তবায়নে সদা সত্য ও সঠিক পথে চলে দেশ ও জাতির উন্নয়নে নিজেদেরকে নিয়োজিত রাখতে হবে। মরমী সাধক বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের অহিংস মানবতা ও ফকিরী মতবাদের জাতহীন মানব দর্শন ও সঙ্গীত দেশের সীমানা পেরিয়ে বিশ্বাঙ্গনে নিজের মহিমায় জায়গা করে নিলেও বাংলা ভাষা ব্যাতিত অন্য কোন ভাষায় প্রকাশ, প্রচার ও প্রসার ঘটেনি তেমন একটা। মানবতা মুক্তি ও ভক্তির পথকে প্রতিষ্ঠা করতেই তিনি হাজারো ভাবধারার গান সৃষ্টি করছেন। কিন্তু তা বিশ্ববাসীকে নাড়া দিতে পারেনি যথার্থ একাডেমিক প্রচার আর প্রকাশনার অভাবে। তিনি অতি কঠিন কথাগুলো খুব সহজ করে তার গানে বলে গেছেন। তাঁর অমর সৃষ্টি সঙ্গীত গতানুগতিক ভাবে প্রচার ও প্রকাশ হলে চলবেনা। বিশ্বের বিশিষ্ট গবেষকেরা লালনের সৃষ্টি আরো নতুন নতুন তথ্য জানতে চাই।

কুষ্টিয়ায় শুরু হয়েছে ৫ দিনব্যাপী লালন সাঁইয়ের ১২৩তম স্মরণোৎসব

এ.এইচ.এম.আরিফ,কুষ্টিয়া ॥ মরমী সাধক বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁই বাঙালির চেতনায় এক অবিস্মরণীয় কালপুরুষ। তাঁর গানের মাঝেই লুকিয়ে আছে সৃষ্টির রহস্য। সৃষ্টিকর্তার সাথে আত্মিক সম্পর্ক তাঁর গানের মূলমন্ত্র। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষকে একই স্রোতধারায় আনার জন্য আমরণ কাজ করেছেন এই মরমী সাধক। বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের সঙ্গীত আজও আমাদের অনুপ্রানিত করে। এই মহান সাধক বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের ১২৩ তম স্মরণোৎসব উপলক্ষ্যে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ার আখড়া বাড়ীতে গতকাল মঙ্গলবার ২৬ মাচ থেকে শুরু হয়েছে ৫ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা। এবার স্মরণোৎসব আর ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস একই দিনে হওয়ায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। ২৬ মার্চ সন্ধ্যা ৭টায় আলোচনা সভা বাদেই সরাসরি সাংস্কৃতি অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়েই শেষ হবে শুরুর দিনের অনুষ্ঠানমালা। তবে দ্বিতীয় দিনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে থাকছে পূর্নাজ্ঞতা। যথারিতী উদ্বোধনী আলোচনা সভা ও নির্ধারিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সাঁইজীর জীবদ্দশায় তার ভক্ত অনুরাগী শিষ্যরা স্মরণোৎসবের অনুষ্ঠান খুব জাকজমক ভাবে উৎযাপিত করতেন। এবারো তার কোন ব্যতিক্রম হচ্ছে না। স্মরণোৎসবের অনুষ্ঠানকে ঘিরে ইতোমধ্যে লালন একাডেমি ও কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন নানান উদ্যোগ গ্রহণ সহ সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন। লালন সাঁইয়ের মাজারের সাজসজ্জা ও ধোয়া-মোছার কাজ শেষ করে সাঁইজীর পছন্দের সাদা ধূসর রং দিয়ে রাঙিয়ে দিয়েছে তাঁর মাজার। স্মরণোৎসবের অনুষ্ঠানে এবার কোন পন্সারের নাম শোনা না গেলেও যথারিতী সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সার্বিক সহযোগিতায় কুষ্টিয়া লালন একাডেমি নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সম্পন্ন করবে স্মরণোৎসবের অনুষ্ঠান। সত্য সু-পথের সন্ধ্যানে মানবতার দিক্ষা নিতে আত্মার টানে দেশ-বিদেশের সাধু-গুরু ও ভক্তরা দলে দলে আসতে শুরু করেছে সাঁইজির মাজারে। প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী প্রতিবার দুই অথবা তিনদিনের এ উৎসব পালিত হলেও গতবারের স্মরণোৎসব থেকে এবং আগত বাউলদের অনুরোধেই তা বাড়িয়ে পাঁচদিনের প্রথা চালু করা হয়েছে। এবারো তার ভিন্নতা নেই। বাউল সম্রাটের ১২৩ তম স্মরণোৎসবের অনুষ্ঠানমালা সাজানো হয়েছে ৫ দিনব্যাপী। মূল উৎসব শুরু হওয়ার ৭-৮ দিন আগ থেকে আখড়ায় আসা বাউল সাধকরা মাজারের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে আসন গেড়ে গেয়ে চলেছে সাঁইজির আধ্যাত্মিক মর্মবাণী ও ভেদ তথ্যের গান। জমজমাট এখন লালন শাহের আখড়া বাড়ি। কুষ্টিয়া পরিণত হয়েছে উৎসবের শহরে। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের সহযোগিতায় ও লালন একাডেমীর আয়োজনে আজ মঙ্গলবার ২৬ মার্চ থেকে শুরু হয়ে একটানা ৩০ মার্চ পর্যন্ত ৫ দিনব্যাপী বাউল সম্রাট সাধক ফকির লালন সাইয়ের ১২৩ তম স্মরণোৎসবের অনুষ্ঠান চলবে। কালী নদী তীরবর্তী লালন মঞ্চের সামনে আয়োজন করা হয়েছে গ্রামীণ মেলার। বিভিন্ন স্টলের পাশাপাশি থাকছে শিশু বিনোদনেরও ব্যবস্থা। অনুষ্ঠানে আগত বাউল সাধুদের গোসলের সুব্যবস্থা করতে ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসক কালী নদীতে একটি সুন্দর ঘাট ও অনুষ্ঠানে বাড়তী আকর্ষণ যোগাতে বাউল সম্রাট মরমী সাধক ফকির লালন শাহের বিশাল আকৃতির মুরাল ও মুর্তি নির্মাণ করেছেন। প্রতিদিন সন্ধ্যায় উন্মুক্ত মঞ্চে বিশিষ্টজনদের মুক্ত আলোচনা শেষে গভীর রাত অবধি চলবে খ্যাতনামা শিল্পীদের পরিবেশনায় লালন সঙ্গীতানুষ্ঠান। সুষ্ঠুভাবে আয়োজন সম্পন্ন করতে নেয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুলিশের পাশাপাশি অনুষ্ঠানস্থলে থাকছে র‌্যাব ও সাদা পোষাকে গোয়েন্দা পুলিশ। স্মরণোৎসবের অনুষ্ঠানে আসা দেশ-বিদেশের লাখ ভক্ত অনুরাগী ও সাধু-গুরুদের চরণ ধূলায় সিক্ত হবে বাউল সম্রাটের ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়ী। সাঁইজির মতাদর্শের ধর্ম আর জাতি ভেদাভেদ ভুলে মানুষের কল্যাণে মানুষ নিবেদিত থাক চিরকাল এবং মানবতার নিগুড় প্রেমের ভাবধারা বর্তমান সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে ভক্তকুলের এই অঙ্গীকার। সভ্যতার এই যুগে মানুষ মানুষে হিংসা বিদ্বেশ ভূলে সাঁইজির ধর্মদর্শনের চিরাচরিত‘সত্য বল সুপথে চল ওরে আমার মন’ ও মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি এই শে¬াগানকে বাস্তবায়নে সদা সত্য ও সঠিক পথে চলে দেশ ও জাতির উন্নয়নে নিজেদেরকে নিয়োজিত রাখতে হবে। উদ্বোধনী দিনে ২৭মার্চ কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন কুষ্টিয়া-৪ (খোকসা-কুমারখালী) আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য বেগম সুলতানা তরুন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ, কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের প্রশাসক বীর মুক্তিযোদ্ধা জাহিদ হোসেন জাফর, কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ ইফতেখার মাহমুদ, ই’বির উপ-রেজিষ্টার শামসুর রহমান বাবু, আলোচক হিসেবে থাকছেন বিশিষ্ট গবেষক ম.মনির-উজ-জামান, স্বাগত বক্তব্য রাখবেন কুমারখালী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখবেন লালন একাডেমির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক মঞ্জু। উলে¬খ্য,বৃটিশ শাসকগোষ্ঠির নির্মম অত্যাচারে গ্রামের সাধারণ মানুষের জীবনকে যখন বিষিয়ে তুলেছিল, ঠিক সেই সময়ই সত্যের পথ ধরে, মানুষ গুরুর দিক্ষা দিতেই সেদিন মানবতার পথ প্রদর্শক হিসাবে বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ’র আবির্ভাব ঘটে কুমারখালির ছেঁউড়িয়াতে। লালনের জন্মস্থান নিয়ে নানা জনের নানা মত থাকলেও আজো অজানায় রয়ে গেছে তাঁর জন্ম রহস্য। তিনি ছিলেন নিঃসন্তান। আর্থিক অসংগতির কারনে তিনি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ করতে পারেননি। তবে তিনি ছিলেন স্ব-শিক্ষায় শিক্ষিত। যৌবনকালে পূর্ণ লাভের জন্য তীর্থ ভ্রমনে বেরিয়ে তার যৌবনের রূপান্তর ও সাধন জীবনে প্রবেশের ঘটনা ঘটে বলে জানা যায়। তীর্থকালে তিনি বসন্ত রোগে আক্রান্ত হলে তার সঙ্গীরা তাকে প্রত্যাখ্যান করে। পরে মলম শাহ’র আশ্রয়ে জীবন ফিরে পাওয়ার পর সাধক সিরাজ সাঁইয়ের সান্নিধ্যে তিনি সাধক ফকিরী লাভ করেন। প্রথমে তিনি কুমারখালির ছেঁউড়িয়া গ্রামের গভীর বনের একটি আমগাছের নীচে সাধনায় নিযুক্ত হন। পরে স্থানীয় কারিকর সম্প্রদায়ের সাহায্য লাভ করেন। লালন ভক্ত মলম শাহ আখড়া তৈরীর জন্য ষোল বিঘা জমি দান করেন। দানকৃত ওই জমিতে ১৮২৩ সালে লালন আখড়া গড়ে ওঠে। প্রথমে সেখানে লালনের বসবাস ও সাধনার জন্য বড় খড়ের ঘর তৈরী করা হয়। সেই ঘরেই তাঁর সাধন-ভজন বসতো। ছেঁউড়িয়ার আঁখড়া স্থাপনের পর থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত শিষ্যভক্তদের নিয়ে পরিবৃত থাকতেন। তিনি প্রায় এক হাজার গান রচনা করে গেছেন। ১৮৯০ সালের ১৭ অক্টোবর ভোরে এই মরমী সাধক বাউল সম্রাট দেহত্যাগ করেন এবং তাঁর সাধন-ভজনের ঘরের মধ্যেই তাকে সমাহিত করা হয়। আলোচনা শেষে দ্বিতীয় পর্বে লালন মঞ্চে বিভিন্ন শিল্পি ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সমন্বয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পরিবেশিত হবে লালন সঙ্গীত। এতে সঙ্গীত পরিবেশন করবেন দেশের খ্যাতনামা শিল্পীবৃন্দসহ লালন একাডেমীর স্থানীয় শিল্পিরা। উৎসবকে ঘিরে পুরো একাডেমি চত্ত্বরে শুরু হয়েছে খন্ড-খন্ড স্থানে গানের আসর। এসব গান শুনে আগত দর্শক-শ্রোতারাও নেচে-গেয়ে গানের সাথে সাথে তাল মিলাচ্ছে। স্মরণোৎসবের ৫দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের সার্বিক উপস্থাপনা ও পরিচালনা করবেন কবি শুকদেব সাহা ও সুমাইয়া খানম ইভা।