আরিফ মেহমুদ ॥ কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেন বলেছেন, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান ও দেশের সূর্য্য সৈনিক মুক্তিযোদ্ধারা যে আশা ও প্রত্যাশা নিয়ে এদেশ স্বাধীন করেছিল তা পুরণ হয়নি আজো। দেশের স্বাধীন হওয়ার ৪১ বছর অতিবাহিত হলেও আমরা এখনো স্বাধীনতার পূর্ণাঙ্গ স্বাদ পায়নি। দেশের স্থপতি জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিবক ৭ মার্চের আহবানে সাড়া দিয়ে বাংলার দামাল ছেলেরা মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গণে যারা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে এদেশ থেকে চিরশুত্র“ পাকিস্তানী হানাদারদের উৎখাত করে প্রিয় মাতৃভূমিকে মুক্ত করেছিল তাদের মধ্যে কোন বিভেদ অনৈক্য থাকতে পারেনা। আমাদের স্বাধীনতার মহান মুক্তিযুদ্ধকে যারা অস্বীকার করেছিল সেই সকল যুদ্ধাপরাধীরা এখনো আস্ফালন দেখায় এবং দেশকে ধ্বংশের দিকে ঠেলে দেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে এরা মানবতা বিরোধী সব ধরনের অপরাধসহ জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে ছিনিয়ে নিয়েছে মুক্তিকামী মানুষের সর্বস্ব। সেই সব যুদ্ধাপরাধীদের গ্রেপ্তার করে বর্তমান সরকার যুগান্তকারী দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এসময় জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। এখন সময় এসেছে তাদের বিচার সম্পন্ন করার মধ্য দিয়ে জাতিকে কলঙ্ক ও দায়মুক্ত করার। গতকাল মঙ্গলবার সকালে কুষ্টিয়া কালেক্টরেট চত্বরে কেন্দ্রীয় শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে কুষ্টিয়া মুক্তদিবস উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। দিবসটি উপলক্ষে সকাল ৯টায় কুষ্টিয়া জেলা প্রশপ্রন, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড ইউনিট, মুক্তিযোদ্ধা সাংগঠনিক কমান্ডের আয়োজনে পুলিশ প্রশাসনসহ জেলার সকল শ্রেণী পেশার মানুষ স্বাধীনতার মহান মুক্তিযুদ্ধে নিহত শহীদদের আত্মার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে কুষ্টিয়া কালেক্টরেট চত্বরে কেন্দ্রীয় শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন। এর পর পরই জাতীয় সঙ্গীতের মধ্যদিয়ে জাতীয় পতাকা জেলা প্রশাসক ও মুক্তিযোদ্ধার পতাকা পুলিশ সুপারসহ জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড ইউনিট সদস্যগন উত্তোলন করেন। এর পর সকাল সাড়ে ৯ টায় কুষ্টিয়া কালেক্টরেট ভবনে শহীদস্মৃতিস্তম্ভে চত্বর থেকে একটি বর্ণাঢ্য র্যালী বের করা হয়। র্যালীতে নেতৃত্ব দেন কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেন, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী, কুষ্টিয়া মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ইউনিট কমান্ডার নাছিমউদ্দিন আহমেদ, মুক্তিযোদ্ধা সাংগঠনিক কমান্ডের কমান্ডার বাবু মানিক কুমার ঘোষ ও জেলার বীর মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দসহ অন্যান্য সংগঠন। র্যালীটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে শহীদস্মৃতিস্তম্ভের আলোচনা সভায় এসে মিলিত হয়। পবিত্র কোরআন তেলওয়াত, গীতাপাঠ ও বাইবেল পাঠের মধ্য দিয়ে আলোচনা সভা শুরু হয়। এর পর আমাদের মহান স্বাধীনতার মুক্তিযুদ্ধে নিহত সকল শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে ১ মিনিট দাড়িয়ে নিরাবতা পালন করা হয়। মুক্ত দিবস উপলক্ষে কুষ্টিয়া কালেক্টরেট ভবন সেজেছিল এক বর্ণাঢ্য সাজে। মুক্তিযুদ্ধের ও জাতীয় পতাকার পত পত শব্দে মুখরিত হয়ে উঠে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ এলাকা। কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ড.মোল্লা মাহমুদ হাসানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়া জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী,বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য ও খোকসা উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সদর উদ্দিন খান, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নাছিম উদ্দিন আহমেদ ও মুক্তিযোদ্ধা সাংগঠনিক কমান্ডের কমান্ডার বাবু মানিক কুমার ঘোষ। এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মোমেন, জেলা ডেপুটি কমান্ডার আলহাজ্ব গেরিলা নজরুল ইসলাম, আলহাজ্ব রফিকুল ইসলাম টুকু, খোকসা উপজেলা কমান্ডার ফজলুল হক, কুমারখালী উপজেলা কমান্ডার আমিরুল ইসলাম, দৌলতপুর উপজেলা কমান্ডার আনারুল ইসলাম, ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সংগঠনের আহবায়ক মীর জাহিদ প্রমুখ। প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে আরো বলেন, মুক্তিযুদ্ধাদের সঠিকভাবে কোন সরকারই মূল্যায়ন করেনি কিংবা রাষ্ট্রকর্তৃক মূল্যায়িত হয়নি। স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্যা কন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা’র সরকার সূর্যসৈনিক মুক্তিযুদ্ধাদের যথাযথ মর্যাদার সাথে মূল্যায়ন করে চলেছেন এবং আগামীতে তাদের উত্তরসূরী পরিবারকে মূল্যায়নের ঘোষনা দিয়েছেন। দেশের সূর্য্যসন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের আজীবন সম্মানিতা করা হবে। বিশেষ অতিথি মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, একদিকে জেলাকে মুক্ত করার আনন্দ যেমন ছিল সবার মাঝে তেমন অন্য দিকে বুকের মধ্যে ছিল সব হারানো মুমুর্ষ ব্যথা। আজকের এই দিনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দ্রুত কার্যকর হলেই সব ভূলে স্বাধীনতার স্বাদ পাবো। শহীদ ভাই বোনের আত্মার শান্তি আসবে। আলোচনা শেষে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দ্রুত কার্যকর ও ফাসীসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবীতে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড ইউনিট কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কে বিশাল মানববন্ধন করে। দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানমালার সার্বিক উপস্থপনা করেন কবি শুকদেব সাহা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন