এ.এইচ.এম.আরিফ,কুষ্টিয়া ॥ জেল সুপারের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে কুষ্টিয়া জেলা কারাগারে হ-জ-ব-র-ল অবস্থা বিরাজ করছে। চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে তিনি কারারক্ষি জনৈক তসরিকুলের মাধ্যমে বিভিন্ন অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন। জেল সুপারের খুব কাছের লোক বলে এই তসরিকুলের দাপটে তার থেকে সিনিয়র কর্মকর্তারাও মুখ খোলার সাহস পান না। বর্তমান জেল সুপার মখলেচুর রহমান কুষ্টিয়া কারাগারে সাত মাস আগে যোগ দেওয়ার পর থেকেই তিনি নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছেন।
৩০.০২ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত কুষ্টিয়া কারাগারটি দীর্ঘদিন ধরে সুনামের সাথে আসামীদের সংশোধনের দায়িত্ব পালন করে আসছিল। ৫৯০জন পুরুষ এবং ১০জন মহিলাসহ মোট ৬০০জন আসামীর ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন এ কারাগারে বরাবরই প্রায় দ্বিগুন বন্দি অবস্থান করে। এখানে কারা তত্বাবধায়, সহকারী সার্জন, জেলার, ডিপুটি জেলার, ফার্মাসিস্ট, কারাসহকারী, সর্বপ্রধান কারারক্ষি, প্রধান কারারক্ষি, কারারক্ষি ও মহিলা কারারক্ষিসহ মোট মোট ২০২ জন কর্মকর্তা কারাগারটি দেখভালের দায়িত্বে আছেন। এসব কর্মচারি ও কর্মকর্তাদের জেলাখানার মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় পোস্টিং দেয়ার ক্ষমতা রয়েছে জেল সুপারের উপর। তিনি সুবিধা ও লাভজনক স্থানে কোন কর্মীকে পোস্টিং দিলে সেখান থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে থাকেন।
কারাগারের মধ্যে আসামীদের সাক্ষাত, পিসির টাকা জমা নেওয়া ও ক্যান্টিনে পোস্টিং নেয়া সব থেকে লাভজনক জায়গা। এসব জায়গায় কেউ পোস্টিং নিতে চাইলে তাকে কারারক্ষি তসরিকুলের মাধ্যমে জেল সুপারকে টাকা দিয়ে সেখানে যেতে হয়। মোবাইলে রেকর্ডকৃত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, কিছু দিন পূর্বে কারারক্ষি জনৈক মনির হোসেন ক্যান্টিনের ম্যানেজার হিসাবে পোস্টিং পেয়েছেন। তিনি এ পোস্টিং পেতে তসরিকুলের মাধ্যমে জেল সুপারকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা প্রদান করেছেন। জেল সুপার এসব অনিয়মের সাথে জড়িত থাকার কারনে তার নিজের পোস্টিংকৃত লোকেরা কাউকে তোয়াক্কা করে না। তারা প্রকাশ্যে বলে থাকেন, মোটা অংকের টাকা দিয়ে পোস্টিং নিয়েছে, অনিয়মের বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করলে লাভ হবে না। সম্প্রতি দেখা গেছে, ক্যান্টিনে চলছে ব্যাপক অরাজকতা ও অনিয়ম। জেলখানার নীতিমালা অনুসারে বন্দিদের নিকট থেকে প্রত্যেক জিনিসের উপর শতকরা সর্বোচ্চ ২০ ভাগ লাভ করার কথা থাকলেও সেখানে প্রায় দ্বিগুন থেকে তিনগুন নেয়া হচ্ছে। বর্তমানে বাজারে গরুর মাংস কেজি প্রতি ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা হলেও জেলখানার ক্যান্টিনে তা দেখানো হচ্ছে ৫৫০ টাকা। তেলাপিয়া মাছ বাজারে ১৬০ টাকা থেকে ১৭০ টাকার মধ্যে পাওয়া গেলেও তা জেলখানার ক্যান্টিনে হয়ে গেছে ৩৮০ টাকা।
এভাবে প্রত্যেকটি খাতেই রয়েছে চোখে পড়ার মত অনিয়ম। কুষ্টিয়া জেলা কারাগার থেকে জামিনপ্রাপ্ত আসামীর নিকট থেকে জানা যায়, সব পর্যায়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে কুষ্টিয়া জেলা কারাগার। তিনি বলেন, বন্দিদের জন্য যে খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয় তার তিন ভাগের এক ভাগও দেয়া হয় না। এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কারারক্ষি। তার মাধ্যমে জানা গেছে, বন্দিদের জন্য বরাদ্দ খাবার কম প্রদান করে তা স্টোরে জমা রাখা হয়েছে। বিশেষ করে স্টোরে জমা রাখা তেল, ডাল ও মসলার হিসাব করলেই বোঝা যাবে এখানে কি পরিমান দুর্নীতি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে কারারক্ষি তসরিকুলের মুঠো ফোনে কথা বললে তিনি জানান, তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সত্য নয়। কেউ শত্র“তা করে এ মিথ্যা তথ্য দিচ্ছে। কুষ্টিয়া ডেপুটি জেলার সিরাজুস সালেহীনের কাছে মোবাইলে তথ্য জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে পারবেন না বলে জানান। জেল সুপার মখলেচুর রহমানকে মোবাইল করে এবং কারা ফটকে ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়ি
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন