রবিবার, ২০ জানুয়ারী, ২০১৩

অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগে রাজ্জাক চেয়ারম্যানের ৬ মাস সশ্রম কারাদন্ড

আরিফ মেহমুদ ॥ কুষ্টিয়ায় মালয়েশিয়া গমনেচ্ছুক শ্রমিকদের রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রমের দ্বিতীয় দিনে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের দায়ে এক ইউপি চেয়ারম্যানের ৬ মাসের সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেছেন ভ্রাম্যমান আদালত। গতকাল রবিবার দুপুরে সদর উপজেলার বারখাদা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাককে ৬ মাসের সশ্রম কারাদন্ড দিয়েছে আদালত। পুলিশ ও অভিযোগকারী প্রত্যক্ষদর্শী শ্রমিকদের সূত্রে জানা যায়, গতকাল দ্বিতীয় দিনের মত রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম শুরু হলে সরকারী নির্দেশ অমান্য করে সদর উপজেলার বারখাদা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক ৫০ টাকার স্থলে ১৫০ টাকা করে রেজিষ্ট্রেশন ফি গমনেচ্ছুদের কাছ থেকে আদায় করছিলেন। বিষয়টি রেজিস্ট্রেশন করতে আসা শ্রমিক ও স্থানীয়রা জেলা প্রশাসক ও সদর ইউএনও কে জানান। নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য  রেজিস্ট্রেশন করতে আসা শ্রমিক ঘটনার বিস্তারিত বলেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেগম মমতাজ পুলিশ সহ ঘটনাস্থলে পৌছায়। তিনি ঘটনা স্থলে আসার পর দেখতে পান সবার নিকট থেকে অতিরিক্ত অর্থ নেয়া হয়েছে। তিনি আদায় করা অতিরিক্ত টাকা চেয়ারম্যানের নিকট থেকে নিয়ে ভুক্তভোগী শ্রমিকদের মাঝে ফেরত দেন এবং ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাককে গ্রেপ্তার করেন। কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেনের নির্দেশে তাকে জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। পরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এস এম জামাল আহমেদের কক্ষে এক ভ্রাম্যমান আদালত বসানো হয়। চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমানিত হলে আদালত গণ উপদ্রব আইনের ২৯১ ধারায় তাকে ৬মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়ে জেল হাজতে প্রেরণ করে। এব্যাপারে চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক নিজেকে বাচাতে প্রথম পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এই অতিরিক্ত টাকা আদায়ের জন্য বলেছে বলে ভুক্তভোগী শ্রমিকদের জানালেও পরে তিনি অস্বীকার করে। তিনি জানান, আমি এ টাকা আদায় করছিনা। উদ্যোক্তারা তাদের বেতনের জন্য অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে। বারখাদা ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোক্তা গোপাল কুমার রাজবংশী জানান, গত দুদিন আগে চেয়ারম্যান তাদের ৫০ টাকার স্থলে ১৫০টাকা করে আদায় করতে নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা হুকুমের দাস। চেয়ারম্যান যা নির্দেশ দিয়েছেন তা আমরা বাধ্য হয়ে পালন করছি। তবে স্বল্প খরচে মালয়েশিয়া যাবার স্বপ্নে বিভোর ফরম পূরণকারী শ্রমিকরা। প্রত্যেকেরই প্রত্যাশা মালয়েশিয়া যাবে। কিন্তু লটারীর মাধ্যমে বাছাই পর্বে হয়ত বাদ পড়বেন অনেকেই। এজন্য অতিরিক্ত টাকা গুনে আগেভাগে রেজিস্ট্রেশন ফরম পুরণ ও জামাদানের প্রতিযোগীতায়ও রয়েছে অনেকের মধ্যে। এব্যাপারে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেন জানান, গতকাল শনিবার সকাল ৯টা থেকে একযোগে কুষ্টিয়ার ৬টি উপজেলা এবং ৫টি পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয়েছে এই রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম। এই রেজিস্ট্রেশন চলবে আগামীকাল ২১ জানুয়ারী পর্যন্ত। ২২ জানুয়ারী জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে লটারীর মাধ্যমে ফরম পুরণকারীদের মধ্য থেকে প্রার্থী বাছাই করা হবে। রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সরকারী নির্ধারিত ফি নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। কার্যক্রম সুষ্ঠভাবে পরিচালিত হচ্ছে কিনা তা পরিদর্শনের জন্য প্রত্যেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কেউ যদি সরকারের এই মহৎ উদ্যোগকে কোন ভাবে বিশৃংখলা বা নষ্ট করার কিংবা অতিরিক্ত টাকা আদায়ের চেষ্টা করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। তা সে যে দলের মতেরই হোক না কেন।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন