এ.এইচ.এম.আরিফ,কুষ্টিয়া ॥ কুষ্টিয়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ অফিসের কর্মকর্তা ও সরকারী দলের কয়েকজন প্রভাবশালী নেতার যোগসাজশে চলতি ধান চাল সংগ্রহ অভিযান ব্যর্থ হতে চলেছে। ধান চাল সংগ্রহে কোটি কোটি টাকার ঘুষ বাণিজ্য হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কুষ্টিয়া জেলায় ধান চাউল ক্রয়ের অভিযানে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও মিল-মালিকদের ভাগাভাগির কোন্দলের ফলে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে।এতে ব্যর্থ হতে বসেছে ধান চাল সংগ্রহ অভিযান। জেলার উপজেলাগুলোতে এবার বোরো ধান চালের লক্ষ্যমাত্রা কুষ্টিয়া সদরে ধান ৩৯৪ মেট্রিক টন, চাল ১২১৩১ মেট্রিক টন, মিরপুরে ধান ৩৩০ মেঃ টন, চাল ২৫৩৬ মেঃ টন। ভেড়ামারা উপজেলায় ধান ৫৪ মেঃ টন, চাল ৫৯০ মেঃ টন, দৌলতপুরে ধান ১৩৬ মেঃ টন, চাল ৫৫৬ মেঃ টন, কুমারখালীতে ধান ১৭০ মেঃ টন, চাল ১১৭১ মেঃ টন এবং খোকসায় ধান ৬৩ মেঃ টন, চাল ৫১৬ মেঃ টন নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলার সর্বমোট ধান ১হাজার ১ শত ৪৭ মেঃ টন এবং চাল ১৭ হাজার ৫ শত ২৭ মেঃ টন। সরকার ধানের সংগ্রহ মূল্য প্রতি কেজি ১৮ টাকা, চালের প্রতি কেজির মূল্য ২৮ টাকা নির্ধারণ করেছেন। কিন্তু বর্তমান বাজারে ধান প্রতি কেজি ১২ টাকা, চাল প্রতি কেজি ২৩ টাকা বিক্রি হচ্ছে। সরকারী নিয়ম অনুযায়ী ধান কৃষকের কাছ থেকে এবং চাল মিলারদের কাছ থেকে ক্রয় করার নিয়ম রয়েছে। কৃষকদের নিকট থেকে ধান ক্রয়ের নিয়ম থাকলেও তা মধ্যস্বত্ত্বভোগী ব্যবসায়ীদের নিকট ক্রয় করা হচ্ছে বলে কৃষকরা অভিযোগ করেছে। ফলে কৃষকগণ তাদের ফসলের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সুত্রে জানা গেছে, কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় চালের লক্ষ্যমাত্রা ১২হাজার ১শত ৩১ মেঃ টন। এরমধ্যে কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি হাজী রবিউল ইসলামসহ দলের ৩জন প্রভাবশালী নেতা ৫০০০ মেঃ টন চাল ক্রয়ের আদেশ তাদের হেফাজতে রেখে তা মিলারদের মধ্যে টন প্রতি ২ হাজার ৫ শত টাকা হিসাবে আগাম নগদ নিয়ে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক এর সহায়তায় বন্টন করে দেওয়া হয়েছে। এতে প্রায় ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা তারা হাতিয়ে নিয়েছেন সংশি¬ষ্ট একটি মহল। অপরদিকে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ সুজা আলম সদর উপজেলা থেকে টন প্রতি ১ হাজার টাকা হিসাবে ৭ হাজার ১ শত ৩১ মেঃ টন চালের বিপরীতে ৭০ লাখ টাকা এবং অন্যান্য ৫টি উপজেলা থেকে ৫ হাজার ৩ শত ৯৬ মেঃ টন চালের বিপরীতে ৫৪ লাখ টাকা অত্র জেলা থেকে সর্বসাকুল্যে ১ কোটি ২৪ লাখ টাকা উৎকোচ হিসাবে তার দপ্তরের সহকারীর মাধ্যমে সংগ্রহ করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মিলাররা সরকারের কাছে চাল বিক্রয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হতে গেলে তখনই ওই দপ্তরের সহকারীর কাছে টন প্রতি ১ হাজার টাকা জমা দিয়ে চুক্তিবদ্ধ হতে হচ্ছে। তা না দিলে তাদেরকে নানা রকম হুমকী, ধামকী ও হয়রানী করা হচ্ছে। ফলে মিলাররা টাকা পরিশোধে বাধ্য হচ্ছে। সদর গুদামের কর্মকর্তাগণও টন প্রতি ৫শত টাকা হারে উৎকোচ নেয়ার পর গুদামে চাল সংগ্রহ করছে। অন্যথায় বিভিন্ন রকম ওজর আপত্তি করে মিলারদের হয়রানী করছে। ফলে মিলাররা তাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। জেলার বিভিন্ন গুদামগুলিতে নিয়ম বহির্ভূতভাবে গম সংগ্রহ করা হয়েছে। কৃষকদের কাছ থেকে গম ক্রয় এর নীতিমালা থাকলেও তা না মেনে গম ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে নিম্নমানের গম ক্রয় করা হয়েছে। ফলে কৃষকরা তাদের ফসলের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়েছে। গত ১৯ জুন কুষ্টিয়া জেলার অসুস্থ ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা তাদের রেশন চাল অত্যান্ত নিম্নমানের ও পঁচা দুর্গন্ধযুক্ত পাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে কুষ্টিয়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রন দপ্তর ঘেরাও করেন এবং অফিস চত্বরে অবস্থান ধর্মঘট পালন করেন। এ ঘটনায় কুষ্টিয়ার সর্ব মহলে আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুজা উদ্দিন জানান, ধান চাল সংগ্রহ অভিযানে কোন অনিয়ম করা হচ্ছেনা। উৎকোচের বিনিময়ে ধান-চাল সংগ্রহের অভিযোগও মিথ্যা বলে তিনি জানান। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য খাদ্যমন্ত্রনালয় ও দূর্নীতি দমন কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে ভুক্তভোগী মহল।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন