আরিফ মেহমুদ ॥ কুষ্টিয়ার দর্জি দোকানগুলো এখন মহাব্যস্ত। ঈদ সামনে রেখে গভীর রাত পর্যন্ত ঘুরছে দর্জি ঘরের চাকা। নাওয়া-খাওয়ার সময় নেই দর্জিদের। কারণ পছন্দ মতো পোশাক বানাতে তরুণ-তরুণীরা ভিড় করছে দর্জি দোকানগুলোতে। ইতোমধ্যে অনেক দর্জি ব্যবসায়ী অর্ডার নেয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। আজ শুক্রবার ২১ রমজানের পর আর অর্ডার গ্রহণ করা হবে না বলেও অনেক দোকানে নোটিস টানানো হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে পোশাক তৈরির মজুরি। এ নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে কিছুটা অসন্তুষ্টি থাকলেও পছন্দ মতো পোশাক বানাতে তাঁরা ছুটে যাচ্ছেন দর্জি দোকান বা টেইলার্সে। এবার লং কামিজ মেয়েদের সবচেয়ে বেশি পছন্দ। আর এ ক্ষেত্রে তরুণীদের বেশি পছন্দ ক্যাটরিনা, কারিনা, অকশরা ও মান্নেতা স্টাইলের বিভিন্ন পোশাক। আর তরুণরা ফলো করছেন শাহরুখ খান, সাইফ আলী খান, সালমান, অক্ষয় কুমার ও রনবির কাপুর স্টাইলের বিভিন্ন শার্ট-প্যান্ট। এছাড়া অনেকে এসব নায়ক-নায়িকার ছবির ক্যাটালগ নিয়ে দর্জি দোকানে পছন্দ মতো পোশাক তৈরির অর্ডার দিচ্ছেন তারা। টেইলার্স মালিকরা বলছেন, পছন্দের পোশাকের জন্য রেডিমেড থ্রি-পিস ও থানকাপড় কিনে ক্রেতারা পাড়ি জমাচ্ছেন দর্জিপাড়ায়। সম্পূর্ণ রেডিমেড পোশাকে অনেকের শরীরে ম্যাচিং হয় না। মন ভরে না পোশাক ব্যবহারকারীদের। ফলে নিজেদের পছন্দ মতো পোশাক বানাতে তাঁদের আসতে হচ্ছে টেইলার্সে। দর্জিরা ক্রেতাদের পছন্দ মতো পোশাক বানাতে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা দোকান খোলা রেখে কাজ করছেন। শব-ই-বরাতের আগে থেকে দর্জি কারিগরদের ছুটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কোন কোন টেইলার্স কাজের চাপ সামলাতে মৌসুমী কারিগর এনেছেন বিভিন্ন এলাকা থেকে। সরেজমিনে দেখা যায় দর্জি পাড়া হিসেবে খ্যাত কুষ্টিয়া পাঁচ রাস্তার মোড়ের নীডস টেইলার্স, ডলফিন টেইলার্স, এনএস রোড এলাকার ফারুক টেইলার্স, মৌসুমী টেইলার্স, কুষ্টিয়া টেইলার্স, আমিরুল টেইলার্স সহ বিভিন্ন টেইলার্সের কারিগরদের এক মুহূর্তের জন্য অবসর নেই। এছাড়া পাড়া-মহল¬ার টেনলার্সও চলছে সমান তালে। দিনরাত নতুন নতুন পোশাক বানাচ্ছেন তাঁরা। এ প্রসঙ্গে এনএস রোডের ফারুক টেইলার্সের মালিক ফারুক হোসেন বলেন, ঈদ সামনে রেখে তাঁদের ব্যস্ততা খুব বেড়েছে। শব-ই-বরাতের আগে থেকে ক্রেতারা ঈদের পোশাকের অর্ডার দিচ্ছেন। আজ শুক্রবার ২১রমজানের পর তাঁদের পক্ষে আর অর্ডার নেয়া সম্ভব নয়। যারা রেগুলার কাস্টমার তাদের বিশেষ সুবিধার্থে কিছু অর্ডার নেয়া হবে। তবে এ সুবিধা নতুন কাস্টমারদের জন্য নয়। তিনি বলেন, ঈদকে সামনে রেখে প্রতিবছরই টেইলার্স মালিকরা নতুন কারিগর নিয়োগ দিয়ে থাকেন। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ইতোমধ্যে অধিকাংশ টেইলার্সই নতুন কারিগর নিয়োগ দিয়েছেন। কিন্তু তারপরও অর্ডার যেভাবে আসছে তাতে ২০ রমজানের পরে এখানে আর কারো পক্ষে অর্ডার গ্রহণ করা সম্ভবপর নয়। তিনি বলেন, এ বছর পোশাক বানানোর মজুরি কিছু বাড়ানো হয়েছে। কারিগরদের মজুরি, দোকান ভাড়া, সুতা ও বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাওয়ায় অর্ডারের মজুরি বাড়ানো হয়েছে। কিছু টেইলার্স আবার কাজের চাপের কারণে অতিরিক্ত মজুরি হাতিয়ে নিতেও তৎপর রয়েছে। ছেলেদের প্যান্ট-শার্টের অর্ডার নীলক্ষেতের টেইলার্সগুলো এখনও নিচ্ছে। তিনি বলেন, কাপড় অনুযায়ী জামা বানানোর মজুরি নেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে সিল্ক জর্জেট, কাতান ও বেনারসি কাপড়ের মজুরি অনেক বেশি। এক সেট থ্রি-পিস বানাতে মজুরি লাগছে ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত। বিভিন্ন মার্কেট ও স্থান ভেদে এসব দর্জির মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে। শার্ট-প্যান্ট বানানোর মজুরি সামান্য বাড়িয়েছে জেন্টস দর্জিরা। পোশাক বানানোর মজুরি বাড়ানো হয়েছে বিভিন্ন কারণে। গত কয়েক বছরে বিদ্যুতের ও দোকানভাড়া কয়েকগুণ বেড়েছে। বেড়েছে কারিগরদের মজুরি। স্যুয়িং মেশিন, বোতাম, সুতাসহ অন্যান্য সামগ্রীর দাম বেড়েছে। এছাড়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভ্যাট বাড়িয়েছে। ফলে পোশাক বানানোর মজুরি না বাড়িয়ে ব্যবসায়ীদের সামনে আর কোন পথ ছিল না। মজুরি বাড়ানো নিয়ে মধ্যবিত্ত ঘরের তরুণ-তরুণীদের অভিযোগ রয়েছে। তাঁরা বলছে, ঈদ সামনে রেখে আরেক দফা মজুরি বাড়ানো সঠিক হয়নি। ঈদে কাপড়ের দাম বেড়েছে। এছাড়া অন্য সবকিছুর দাম উর্ধমুখী। এ অবস্থায় টেইলার্সের মজুরি বাড়ানো মানে মধ্যবিত্তদের বাড়তি কষ্ট।

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন