আরিফ মেহমুদ ॥ খুলনা বিভাগীয় কমিশনার আব্দুল জলিল বলেছেন,প্রজাতন্ত্রের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর দায়িত্ব জনগণের সেবা নিশ্চিত করা। জেলা প্রশাসন সহ জনগণের দোরগড়ায় সকল উপজেলা প্রশাসন সার্বক্ষনিক জনকল্যাণে নিবেদিত। প্রত্যেক অফিস জনগণকে কি কি সেবা দিবে তার সর্বস্তরের বিবরণ দিয়ে অফিসের সামনে সিটিজেন চার্টার টাঙ্গিয়ে দিয়েছেন। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দেশ ও জাতির কল্যাণে নিজেদেরকে সব সময় সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করতে হবে। মনে রাখতে হবে সততায় সর্বকৃষ্ট পন্থা। অন্যের কাজের সমালোচনা না করে আমরা নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যেন নিষ্ঠার সাথে পালন করি। কর্মক্ষেত্রে একে অপরের প্রতিদ্বন্দী না হয়ে পরস্পর সহযোগি হয়ে উঠতে হবে। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক বনমালী ভৌমিক। সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড.মহিউদ্দিন,কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক)খন্দকার আজিম আহমেদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব)ফজলুর রহমান, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নবী নেওয়াজ, এসএম জামাল উদ্দিন, জেলা ত্রাণ ও পূনর্বাসন কর্মকর্তা বিশ্বনাথ পাল সহ কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ। আলোচনা শুরুর আগে প্রধান অতিথি খুলনা বিভাগীয় কমিশনার আব্দুল জলিল কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে কুশল বিনিময় করেন। তিনি জেলার উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সংশ্লিষ্ট যে সকল দপ্তর অধিদপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ অংশীদারিত্ব করছেন তাদের আরো সক্রিয় ভূমিকা রাখার আহবান জানান।
রবিবার, ২৬ আগস্ট, ২০১২
কুষ্টিয়ায় অটোবাইক চালক খুন
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি ॥ কুষ্টিয়ার পল্লীতে আসাদুল হক নামের এক অটোবাইক চালকের জবাই করা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বংশীতলা মাঠের মধ্যে এ জবাইয়ের ঘটনা ঘটে। গতকাল রবিবার সকাল ৭টার দিকে স্থানীয়রা আসাদুলের লাশ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তার লাশ উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। নিহত আসাদুল কুষ্টিয়া সদর উপজেলার খাজানগর উত্তরপাড়া এলাকার মৃত খলিল শেখ’র ছেলে। পুলিশ ও পারিবারিক সুত্র জানিয়েছে,আসাদুল গত শনিবার সন্ধ্যায় অটোবাইক নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়। পরে রাতে আর বাড়ি ফিরে আসেনি সে। সকালে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বংশীতলা-ভাদালিয়া সড়কের পাশের একটি মাঠ থেকে এলাকাবাসী তার জবাই করা লাশ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশকে খবর দেয়। কুষ্টিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ আসাদুজ্জামান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, আসাদুল ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার সাথে জড়িত কাউকে আটক করা যায়নি। উদ্ধার হয়নি আসাদুলের অটোবাইক। এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
শুক্রবার, ২৪ আগস্ট, ২০১২
সাংবাদিক নির্যাতন কুষ্টিয়া স্টাইল
॥ সাংবাদিক নির্যাতনের নতুন স্টাইল চালু হয়েছে কুষ্টিয়ায়। সংবাদ প্রকাশিত হলে বা সংবাদ প্রকাশ করার উদ্যোগ নিলেই মামলা, হামলা হচ্ছে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, প্রশাসনকে ব্যবহার করে পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ, পত্রিকা বন্ধের জন্য নোটিশ দেয়া হচ্ছে। চলতি মাসেই কুষ্টিয়াতে চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৫ সাংবাদিককে। প্রকাশনা বাতিল করা হয়েছে একটি স্থানীয় দৈনিকের। কুষ্টিয়া থেকে প্রকাশিত আরেকটি ইংরেজি দৈনিকের সম্পাদককে নোটিশ দেয়া হয়েছে পত্রিকার প্রকাশনা বাতিল করতে। সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে থানার ভেতরে ওসি’র সামনে। এখানকার সাধারণ মানুষ এটাকে আখ্যা দিয়েছে সাংবাদিক নির্যাতনের কুষ্টিয়া স্টাইল হিসেবে। ১৪ আগষ্ট। রাত সাড়ে ন’টায় ভেড়ামারা থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করে দৈনিক মানবজমিনের ভেড়ামারা প্রতিনিধি শাহজামালকে। গ্রেপ্তারের সময় তাকে জানানো হয়, তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা দায়ের হয়েছে থানায়। ১২ আগষ্ট দুপুর বেলায় শাহজামাল ও কুষ্টিয়া থেকে প্রকাশিত দৈনিক দিনের খবর পত্রিকার ভেড়ামারা প্রতিনিধি ওয়ালিউল ইসলাম একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের তথ্য সংগ্রহ করতে যান। ওই তথ্য সংগ্রহের বিষয়টি মনঃপূত হয়নি কর্তাব্যক্তিদের। ১৩ আগষ্ট ওই প্রকল্পের ভেড়ামারা উপজেলা কর্মকর্তা তহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে ভেড়ামারা থানায় সাংবাদিক শাহজামাল ও ওলিউল ইসলামের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করলে পুলিশ শাহজামালকে গ্রেপ্তার করে। ওলিউল ইসলাম এখন ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। ঈদুল ফিতরের আগের দিন ১৯ আগষ্ট রাতের বেলা কুষ্টিয়া সদর থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করে কুষ্টিয়া থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক কুষ্টিয়ার খবর পত্রিকার সম্পাদক এম যোবায়ের রিপন ও ওই পত্রিকার প্রধান সম্পাদক লুৎফর রহমান কুমারকে। পুলিশ তাদেরকে গ্রেপ্তার করার পর থানায় মামলা রেকর্ড করে বলে অভিযোগ আছে। ওই দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে চাঁদা দাবির মামলা করেছেন কুষ্টিয়ার আওয়ামী লীগ নেতা হাজী রবিউল ইসলাম। মামলা দায়ের করার একদিন আগে আওয়ামী লীগ নেতা হাজী রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে দুর্নীতি সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় তাদের সম্পাদিত পত্রিকায়। ওই দুই সাংবাদিক এখন কারাগারে দিন কাটাচ্ছেন। কেবল তাদেরকে কারাগারে পাঠিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, সাংবাদিক যোবায়ের রিপনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনার সাত দিন আগে চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে এখনও হাজতবাসে আছেন মোহনা টিভির কুষ্টিয়া প্রতিনিধি মওদুদ রানা ও কুষ্টিয়া থেকে প্রকাশিত দৈনিক দিনের খবরের সম্পাদক ফেরদৌস রিয়াজ জিল্লু। তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেছেন হাসিবুর রহমান রিজু। দৈনিক দিনের খবরের সম্পাদক ফেরদৌসকে কেবল গ্রেপ্তার করেই ক্ষান্ত হননি কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক, দৈনিক দিনের খবর পত্রিকাটির প্রকাশনাও বাতিল করেছেন। জেলা প্রশাসক পত্রিকার প্রকাশনা বাতিল করতে নোটিশ দিয়েছেন ড.আমানুর রহমানকে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই শিক্ষক কুষ্টিয়া থেকে ডেইলি কুষ্টিয়া নামে একটি ইংরেজি দৈনিক প্রকাশ করে আসছিলেন। এর আগে কুষ্টিয়া সদর থানার অভ্যন্তরে একজন ম্যাজিস্ট্রেট ও ওসি’র সামনে সন্ত্রাসীরা হামলা করে মারধর করে দৈনিক সমকাল পত্রিকার কুষ্টিয়া প্রতিনিধি সাজ্জাদ রানা ও বাংলা বাজার পত্রিকার কুষ্টিয়া প্রতিনিধি এ.এইচ.এম.আরিফকে। গত শবেবরাতে কুষ্টিয়া সদর থানায় ৪ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন কুষ্টিয়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন সবুজ। ওই মামলার শিকার হন বাংলাদেশ প্রতিদিনের কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জহুরুল ইসলাম, সমকালের কুষ্টিয়া প্রতিনিধি সাজ্জাদ রানা, স্থানীয় দৈনিক দেশ তথ্যের সম্পাদক হালিমুজ্জামান এবং ওই পত্রিকার সাংবাদিক মোমেসুর রহমান। হাজী রবিউল ইসলামের ও হাসিবুর রহমান রিজুর দায়ের করা মামলায় নাম উল্লেখ না করে আরও অজ্ঞাত কয়েক জনের নাম উল্লেখ থাকায় আতঙ্কে আছেন কুষ্টিয়ার সাংবাদিকরা। অনেকই জানিয়েছেন, তারা রাতে বাড়িতে ঘুমান না। দিনের বেলায় চলেন সতর্ক হয়ে শহরের অলি-গলি দিয়ে। তাদের আশঙ্কা- যে কোন সময় চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেপ্তার হতে পারেন তারা। তাদের ওপর নেমে আসতে পারে নির্যাতন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক বনমালী ভৌমিক মানবজমিনকে বলেন, আমার জানা মতে চাঁদাবাজি মামলায় মাত্র একজন সাংবাদিক জেলে আছে। অন্য চার জনের কথা আমি জানি না। তাছাড়া আমি তো মামলা করি না, পাবলিকে মামলা করলে আমি কি করতে পারি? মানবজমিনের ভেড়ামারা প্রতিনিধি শাহজামালের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা করেছেন একজন সরকারি কর্মকর্তা। তার নাম তহিদুল ইসলাম। একজন সরকারি কর্মকর্তাকে মামলা করতে হলে তো বিভাগীয় অনুমতি নেয়ার বিধান আছে। জেলা প্রশাসক বলেন, আমি ওই তহিদুল ইসলামকে চিনিই না। তিনি বলেন, দৈনিক দিনের খবরের প্রকাশনা বাতিল করা হয়েছে তার কাগজপত্র জাল বলে। এখানে সাংবাদিকদের ওপর কোন নির্যাতন হচ্ছে না। সাংবাদিকরা ভাল আছে। কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মফিজ উদ্দিন আহাম্মদের কাছে জানতে চাওয়া হয়, চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশি তদন্ত শেষে মামলা গ্রহণ করার কথা? কিন্তু কুষ্টিয়াতে তদন্ত ছাড়াই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা নেয়া হচ্ছে? জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, আমরা তদন্ত করেই মামলা নিচ্ছি। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, মামলার বাদী আওয়ামী লীগ নেতা বলে রাজনৈতিক চাপে মামলা নিয়েছেন কিনা? এসপি বলেন, ঠিক তা নয়। আমরা আমাদের গতিতেই কাজ করছি। তবে আমি বিষয়গুলো আরও খতিয়ে দেখবো।
বৃহস্পতিবার, ৯ আগস্ট, ২০১২
কুষ্টিয়ায় গভীর রাতেও দর্জির দোকান মহাব্যস্ত
আরিফ মেহমুদ ॥ কুষ্টিয়ার দর্জি দোকানগুলো এখন মহাব্যস্ত। ঈদ সামনে রেখে গভীর রাত পর্যন্ত ঘুরছে দর্জি ঘরের চাকা। নাওয়া-খাওয়ার সময় নেই দর্জিদের। কারণ পছন্দ মতো পোশাক বানাতে তরুণ-তরুণীরা ভিড় করছে দর্জি দোকানগুলোতে। ইতোমধ্যে অনেক দর্জি ব্যবসায়ী অর্ডার নেয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। আজ শুক্রবার ২১ রমজানের পর আর অর্ডার গ্রহণ করা হবে না বলেও অনেক দোকানে নোটিস টানানো হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে পোশাক তৈরির মজুরি। এ নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে কিছুটা অসন্তুষ্টি থাকলেও পছন্দ মতো পোশাক বানাতে তাঁরা ছুটে যাচ্ছেন দর্জি দোকান বা টেইলার্সে। এবার লং কামিজ মেয়েদের সবচেয়ে বেশি পছন্দ। আর এ ক্ষেত্রে তরুণীদের বেশি পছন্দ ক্যাটরিনা, কারিনা, অকশরা ও মান্নেতা স্টাইলের বিভিন্ন পোশাক। আর তরুণরা ফলো করছেন শাহরুখ খান, সাইফ আলী খান, সালমান, অক্ষয় কুমার ও রনবির কাপুর স্টাইলের বিভিন্ন শার্ট-প্যান্ট। এছাড়া অনেকে এসব নায়ক-নায়িকার ছবির ক্যাটালগ নিয়ে দর্জি দোকানে পছন্দ মতো পোশাক তৈরির অর্ডার দিচ্ছেন তারা। টেইলার্স মালিকরা বলছেন, পছন্দের পোশাকের জন্য রেডিমেড থ্রি-পিস ও থানকাপড় কিনে ক্রেতারা পাড়ি জমাচ্ছেন দর্জিপাড়ায়। সম্পূর্ণ রেডিমেড পোশাকে অনেকের শরীরে ম্যাচিং হয় না। মন ভরে না পোশাক ব্যবহারকারীদের। ফলে নিজেদের পছন্দ মতো পোশাক বানাতে তাঁদের আসতে হচ্ছে টেইলার্সে। দর্জিরা ক্রেতাদের পছন্দ মতো পোশাক বানাতে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা দোকান খোলা রেখে কাজ করছেন। শব-ই-বরাতের আগে থেকে দর্জি কারিগরদের ছুটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কোন কোন টেইলার্স কাজের চাপ সামলাতে মৌসুমী কারিগর এনেছেন বিভিন্ন এলাকা থেকে। সরেজমিনে দেখা যায় দর্জি পাড়া হিসেবে খ্যাত কুষ্টিয়া পাঁচ রাস্তার মোড়ের নীডস টেইলার্স, ডলফিন টেইলার্স, এনএস রোড এলাকার ফারুক টেইলার্স, মৌসুমী টেইলার্স, কুষ্টিয়া টেইলার্স, আমিরুল টেইলার্স সহ বিভিন্ন টেইলার্সের কারিগরদের এক মুহূর্তের জন্য অবসর নেই। এছাড়া পাড়া-মহল¬ার টেনলার্সও চলছে সমান তালে। দিনরাত নতুন নতুন পোশাক বানাচ্ছেন তাঁরা। এ প্রসঙ্গে এনএস রোডের ফারুক টেইলার্সের মালিক ফারুক হোসেন বলেন, ঈদ সামনে রেখে তাঁদের ব্যস্ততা খুব বেড়েছে। শব-ই-বরাতের আগে থেকে ক্রেতারা ঈদের পোশাকের অর্ডার দিচ্ছেন। আজ শুক্রবার ২১রমজানের পর তাঁদের পক্ষে আর অর্ডার নেয়া সম্ভব নয়। যারা রেগুলার কাস্টমার তাদের বিশেষ সুবিধার্থে কিছু অর্ডার নেয়া হবে। তবে এ সুবিধা নতুন কাস্টমারদের জন্য নয়। তিনি বলেন, ঈদকে সামনে রেখে প্রতিবছরই টেইলার্স মালিকরা নতুন কারিগর নিয়োগ দিয়ে থাকেন। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ইতোমধ্যে অধিকাংশ টেইলার্সই নতুন কারিগর নিয়োগ দিয়েছেন। কিন্তু তারপরও অর্ডার যেভাবে আসছে তাতে ২০ রমজানের পরে এখানে আর কারো পক্ষে অর্ডার গ্রহণ করা সম্ভবপর নয়। তিনি বলেন, এ বছর পোশাক বানানোর মজুরি কিছু বাড়ানো হয়েছে। কারিগরদের মজুরি, দোকান ভাড়া, সুতা ও বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাওয়ায় অর্ডারের মজুরি বাড়ানো হয়েছে। কিছু টেইলার্স আবার কাজের চাপের কারণে অতিরিক্ত মজুরি হাতিয়ে নিতেও তৎপর রয়েছে। ছেলেদের প্যান্ট-শার্টের অর্ডার নীলক্ষেতের টেইলার্সগুলো এখনও নিচ্ছে। তিনি বলেন, কাপড় অনুযায়ী জামা বানানোর মজুরি নেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে সিল্ক জর্জেট, কাতান ও বেনারসি কাপড়ের মজুরি অনেক বেশি। এক সেট থ্রি-পিস বানাতে মজুরি লাগছে ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত। বিভিন্ন মার্কেট ও স্থান ভেদে এসব দর্জির মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে। শার্ট-প্যান্ট বানানোর মজুরি সামান্য বাড়িয়েছে জেন্টস দর্জিরা। পোশাক বানানোর মজুরি বাড়ানো হয়েছে বিভিন্ন কারণে। গত কয়েক বছরে বিদ্যুতের ও দোকানভাড়া কয়েকগুণ বেড়েছে। বেড়েছে কারিগরদের মজুরি। স্যুয়িং মেশিন, বোতাম, সুতাসহ অন্যান্য সামগ্রীর দাম বেড়েছে। এছাড়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভ্যাট বাড়িয়েছে। ফলে পোশাক বানানোর মজুরি না বাড়িয়ে ব্যবসায়ীদের সামনে আর কোন পথ ছিল না। মজুরি বাড়ানো নিয়ে মধ্যবিত্ত ঘরের তরুণ-তরুণীদের অভিযোগ রয়েছে। তাঁরা বলছে, ঈদ সামনে রেখে আরেক দফা মজুরি বাড়ানো সঠিক হয়নি। ঈদে কাপড়ের দাম বেড়েছে। এছাড়া অন্য সবকিছুর দাম উর্ধমুখী। এ অবস্থায় টেইলার্সের মজুরি বাড়ানো মানে মধ্যবিত্তদের বাড়তি কষ্ট।
কুষ্টিয়ায় ধান চাল সংগ্রহে কোটি টাকার ঘুষ বাণিজ্যে, ব্যর্থ হতে বসেছে ধান চাল সংগ্রহ অভিযান
এ.এইচ.এম.আরিফ,কুষ্টিয়া ॥ কুষ্টিয়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ অফিসের কর্মকর্তা ও সরকারী দলের কয়েকজন প্রভাবশালী নেতার যোগসাজশে চলতি ধান চাল সংগ্রহ অভিযান ব্যর্থ হতে চলেছে। ধান চাল সংগ্রহে কোটি কোটি টাকার ঘুষ বাণিজ্য হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কুষ্টিয়া জেলায় ধান চাউল ক্রয়ের অভিযানে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও মিল-মালিকদের ভাগাভাগির কোন্দলের ফলে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে।এতে ব্যর্থ হতে বসেছে ধান চাল সংগ্রহ অভিযান। জেলার উপজেলাগুলোতে এবার বোরো ধান চালের লক্ষ্যমাত্রা কুষ্টিয়া সদরে ধান ৩৯৪ মেট্রিক টন, চাল ১২১৩১ মেট্রিক টন, মিরপুরে ধান ৩৩০ মেঃ টন, চাল ২৫৩৬ মেঃ টন। ভেড়ামারা উপজেলায় ধান ৫৪ মেঃ টন, চাল ৫৯০ মেঃ টন, দৌলতপুরে ধান ১৩৬ মেঃ টন, চাল ৫৫৬ মেঃ টন, কুমারখালীতে ধান ১৭০ মেঃ টন, চাল ১১৭১ মেঃ টন এবং খোকসায় ধান ৬৩ মেঃ টন, চাল ৫১৬ মেঃ টন নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলার সর্বমোট ধান ১হাজার ১ শত ৪৭ মেঃ টন এবং চাল ১৭ হাজার ৫ শত ২৭ মেঃ টন। সরকার ধানের সংগ্রহ মূল্য প্রতি কেজি ১৮ টাকা, চালের প্রতি কেজির মূল্য ২৮ টাকা নির্ধারণ করেছেন। কিন্তু বর্তমান বাজারে ধান প্রতি কেজি ১২ টাকা, চাল প্রতি কেজি ২৩ টাকা বিক্রি হচ্ছে। সরকারী নিয়ম অনুযায়ী ধান কৃষকের কাছ থেকে এবং চাল মিলারদের কাছ থেকে ক্রয় করার নিয়ম রয়েছে। কৃষকদের নিকট থেকে ধান ক্রয়ের নিয়ম থাকলেও তা মধ্যস্বত্ত্বভোগী ব্যবসায়ীদের নিকট ক্রয় করা হচ্ছে বলে কৃষকরা অভিযোগ করেছে। ফলে কৃষকগণ তাদের ফসলের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সুত্রে জানা গেছে, কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় চালের লক্ষ্যমাত্রা ১২হাজার ১শত ৩১ মেঃ টন। এরমধ্যে কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি হাজী রবিউল ইসলামসহ দলের ৩জন প্রভাবশালী নেতা ৫০০০ মেঃ টন চাল ক্রয়ের আদেশ তাদের হেফাজতে রেখে তা মিলারদের মধ্যে টন প্রতি ২ হাজার ৫ শত টাকা হিসাবে আগাম নগদ নিয়ে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক এর সহায়তায় বন্টন করে দেওয়া হয়েছে। এতে প্রায় ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা তারা হাতিয়ে নিয়েছেন সংশি¬ষ্ট একটি মহল। অপরদিকে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ সুজা আলম সদর উপজেলা থেকে টন প্রতি ১ হাজার টাকা হিসাবে ৭ হাজার ১ শত ৩১ মেঃ টন চালের বিপরীতে ৭০ লাখ টাকা এবং অন্যান্য ৫টি উপজেলা থেকে ৫ হাজার ৩ শত ৯৬ মেঃ টন চালের বিপরীতে ৫৪ লাখ টাকা অত্র জেলা থেকে সর্বসাকুল্যে ১ কোটি ২৪ লাখ টাকা উৎকোচ হিসাবে তার দপ্তরের সহকারীর মাধ্যমে সংগ্রহ করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মিলাররা সরকারের কাছে চাল বিক্রয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হতে গেলে তখনই ওই দপ্তরের সহকারীর কাছে টন প্রতি ১ হাজার টাকা জমা দিয়ে চুক্তিবদ্ধ হতে হচ্ছে। তা না দিলে তাদেরকে নানা রকম হুমকী, ধামকী ও হয়রানী করা হচ্ছে। ফলে মিলাররা টাকা পরিশোধে বাধ্য হচ্ছে। সদর গুদামের কর্মকর্তাগণও টন প্রতি ৫শত টাকা হারে উৎকোচ নেয়ার পর গুদামে চাল সংগ্রহ করছে। অন্যথায় বিভিন্ন রকম ওজর আপত্তি করে মিলারদের হয়রানী করছে। ফলে মিলাররা তাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। জেলার বিভিন্ন গুদামগুলিতে নিয়ম বহির্ভূতভাবে গম সংগ্রহ করা হয়েছে। কৃষকদের কাছ থেকে গম ক্রয় এর নীতিমালা থাকলেও তা না মেনে গম ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে নিম্নমানের গম ক্রয় করা হয়েছে। ফলে কৃষকরা তাদের ফসলের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়েছে। গত ১৯ জুন কুষ্টিয়া জেলার অসুস্থ ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা তাদের রেশন চাল অত্যান্ত নিম্নমানের ও পঁচা দুর্গন্ধযুক্ত পাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে কুষ্টিয়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রন দপ্তর ঘেরাও করেন এবং অফিস চত্বরে অবস্থান ধর্মঘট পালন করেন। এ ঘটনায় কুষ্টিয়ার সর্ব মহলে আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুজা উদ্দিন জানান, ধান চাল সংগ্রহ অভিযানে কোন অনিয়ম করা হচ্ছেনা। উৎকোচের বিনিময়ে ধান-চাল সংগ্রহের অভিযোগও মিথ্যা বলে তিনি জানান। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য খাদ্যমন্ত্রনালয় ও দূর্নীতি দমন কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে ভুক্তভোগী মহল।
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)