রবিবার, ২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

মহানায়িকার মহাপ্রস্থান

আরিফ মেহমুদ ॥ বাংলা সিনেমার মহানায়িকা বলে খ্যাত সুচিত্রা সেন মারা গেছেন। কলকাতার বেলভিউ হাসপাতালে ২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারী শুক্রবার ভোরে তিনি মারা যান। পঞ্চাশ থেকে সত্তর দশক পর্যন্ত তিনি বাংলা সিনেমার পর্দা কাঁপানো এই অভিনেত্রী দীর্ঘদিন ধরেই লোকচক্ষুর  আড়ালে ছিলেন। মৃত্যুর আগে অনেকদিন ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ১৯৩১ সালের ৬ এপ্রিল বাংলাদেশের পাবনা জেলায় জন্ম নেয়া এই অভিনেত্রীর শারীরিক অবস্থা কয়েকদিন ধরেই স্থিতিশীল ছিল। কিন্তু একটানা ২৪ দিন হাসপাতালে থেকে তিনি বিরক্ত হয়ে ওঠেন। বারবার রক্ত নেয়া, ফিজিওথেরাপি ইত্যাদি বিভিন্ন প্রকার চিকিৎসান পদ্ধতিতে তিনি রীতিমতো বিরক্ত হন। এ কারণে তিনি বাড়িও ফিরতে চেয়েছিলেন।  এ অবস্থায় মহানায়িকার অবসাদ কাটাতে  মিউজিক থেরাপির ব্যবস্থা করেছিলেন চিকিৎসকেরা। অর্থাৎ যতক্ষণ তিনি জেগে থাকতেন, ততক্ষণ তাকে শোনানো হত রামকৃষ্ণ মিশনের প্রার্থনা সঙ্গীত। এই প্রার্থনা সঙ্গীতটি সুচিত্রা সেনের অত্যন্ত প্রিয় ছিল। শারীরিক অবস্থার অবনতি না হলে শনিবারই সুচিত্র সেনকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়া হতে পারে বলেও আভাষ দিয়েছিলেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
সুচিত্রা সেন পাবনার এক সম্ভ্রান্ত হিন্দু পরিবারে জন্ম নেন। বাবা করুণাময় দাশগুপ্ত এব মায়ের নাম ইন্দিরা দাশগুপ্ত। যদিও তিনি আজ সুচিত্রা সেন নামে পরিচিত কিন্তু শৈশবে তার নাম ছিল রমা দাশগুপ্ত। রমা ছিলেন সংসারের পঞ্চম সন্তান এবং তৃতীয় কন্যা।  বিয়ের পর স্বামী দিবানাথ সেনের সেন যুক্ত করে হয়ে যান রমা সেন। পরে অবশ্য সিনেমায় আসেন সুচিত্র সেন নামে। সুচিত্রা সেনই প্রথম ভারতীয় অভিনেত্রী যিনি কোনো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কার পান। ১৯৬৩ সালে তিনি ‘সাত পাকে বাঁধা’ সিনেমার জন্য মস্কো চলচ্চিত্র উৎসবে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার পান।
১৯৫২ সালে শেষ কোথায় ছবির মাধ্যমে তার চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু হয় কিন্তু ছবিটি মুক্তি পায়নি। পরবর্তী বছরে উত্তম কুমারের বিপরীতে ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ ছবিতে তিনি অভিনয় করেন। ছবিটি বক্স-অফিসে সাফল্য লাভ করে এবং উত্তম-সুচিত্রা জুটি উপহারের কারণে আজও স্মরণীয় হয়ে আছে। বাংলা ছবির এই অবিসংবাদিত জুটি পরবর্তী ২০ বছর ছিলেন আইকনস্বরূপ। ১৯৫৫ সালের দেবসাদ সিনেমার জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার জেতেন, যা ছিল তার প্রথম হিন্দি ছবি। ১৯৭৮ সালে সুদীর্ঘ ২৫ বছর অভিনয়ের পর তিনি চলচ্চিত্র থেকে অবসরগ্রহণ করেন। এর পর তিনি লোকচক্ষু থেকে আত্মগোপন করেন এবং রামকৃষ্ণ মিশনের সেবায় ব্রতী হন।
২০০৫ সালে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারের জন্য সুচিত্রা সেন মনোনীত হন, কিন্তু ভারতের প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে সশরীরে পুরস্কার নিতে দিল্লী যাওয়ায় আপত্তি জানানোর কারণে তাকে পুরস্কার দেয়া হয়নি।তার মেয়ে মুনমুন সেন এবং নাতনী রিয়া সেন ও রাইমা সেনও চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। বাড়িতে কিন্ডারগার্টেন ১৯৩১ সালে পাবনা শহরের যে বাড়িতে সুচিত্র সেন জন্ম নেন, সেই বাড়িটিতে এখন একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুল চালু রয়েছে। শহরের দিলালপুর মহল্লায় হেমসাগর লেনে অবস্থিত একতলা ওই বাড়িটি ছিল সুচিত্র সেনের বাবার। ১৯৪৭ সালে, অর্থাৎ যে বছর ভারত-পাকিস্তান ভাগ, ওই বছর সুচিত্রা সেনের বিয়ে হয় এবং স্বামীর সঙ্গে কলকাতায় চলে যান।১৯৬০ সালে সুচিত্রা সেনের বাবাও তার বাড়িটি জেলা প্রশাসনের কাছে ভাড়া দিয়ে পরিবার নিয়ে কলকাতায় চলে যান। এরপর দীর্ঘদিন বাড়িটি সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কোয়ার্টার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল।
১৯৮৩ সালে ইমাম গাযযালী ইন্সটিটিউট নামে একটি প্রতিষ্ঠান অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে বাড়িটি ইজারা নেয় এবং এখানে একটি কিন্ডার গার্টেন স্কুল চালু করে।কিন্তু এর প্রতিবাদে স্থানীয়ভাবে গড়ে তোলা হয় সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ। এক পর্যায়ে প্রশাসন বাড়িটির ইজারা বাতিল করলেও ইমাম গাজ্জালি ইন্সটিটিউটের পক্ষ থেকে উচ্চ আদালতে রিট করা হয়। সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের সম্পাদক রাম দুলাল ভৌমিক বলছেন, “উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে পাবনার জেলা প্রশাসক এই ইজারা বাতিল করেন। কিন্তু তারা হাইকোর্টে রিট করে। তারপর আদালত স্টে অর্ডার দেয় যা ছয় মাস পরপর বাড়াতে থাকে।”


কুষ্টিয়ার তিন উপজেলায় নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা

আরিফ মেহমুদ ॥ কুষ্টিয়ার মিরপুর, কুমারখালি ও খোকসা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের তুলনায় বিএনপি সর্মথক প্রার্থীদের ছড়াছড়ি। তিনটির মধ্যে মিরপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ৪জন চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৬ জন ও সংরক্ষিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেন । রোববার মনোনয়ন পত্র জমাদানের শেষ দিনে ১৪ দল থেকে একক চেয়ারম্যান প্রার্থী উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামারুল আরেফিন, উপজেলা বিএনপি’র সাধারন সম্পাদক হাজী আব্দুল হক, উপজেলা জামায়াতের আমীর হাজী আব্দুল গফুর ও ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন (চরমোনাই) সিরাজুল ইসলাম মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। অন্যদিকে, আওয়ামীলীগ সমর্থিত ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী আওয়ামীলীগ নেতা ও মিরপুর প্রেস ক্লাবের সভাপতি হাজী মহাম্মদ আলী জোয়ার্দ্দার, বিএনপি সমর্থিত আব্দুল আজিজ খান, উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারী অধ্যাপক জুমারত আলী, জাসদ সমর্থিত উপজেলা জাসদের সাবেক প্রচার সম্পাদক বাহাদুর শেখ, স্বতন্ত্র প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা মারফত আলী মাস্টার ও জয়নাল আবেদীন  এবং  সংরক্ষিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগ নেত্রী শারমিন আক্তার (নাসরিন), বিএনপি নেত্রী লতিফা আক্তার রোজি খানম, জামায়াতের নেত্রী সদরপুর ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য গুলশান আরা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মর্জিনা খাতুন মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন।
কুমারখালি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ৫জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭জন এবং সংরক্ষিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫ প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এরা হলেন আ’লীগের জয়নাল আবেদীন, উপজেলা আ’লীগের সভাপতি আব্দুল মান্নান খান, জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক জিয়াউল ইসলাম স্বপন, বিএনপি’র সাবেক মেয়র নুরুল ইসলাম আনসার প্রামানিক, জাকারিয়া মিলন প্রামানিক। ভাইস চেয়ারম্যান পদে আফজাল হোসেন, আব্দুর রাজ্জাক, বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান এ্যড.নিজামূল হক চুন্নু, আল কামাল মোস্তফা, কামাল বিশ্বাস ও মনির হাসান রিন্টু। সংরক্ষিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে সাজেদা পারভীন, মেরিনা খাতুন, সাদিয়া জামিল, আনজুয়ারা জোসনা ও সাজেদা খাতুন।
খোকসা উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ২জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪জন এবং সংরক্ষিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন প্রার্থী মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন। চেয়ারম্যান পদে বর্তমান চেয়ারম্যান আ’লীগ নেতা সদর উদ্দিন খান, বিএনপি নেতা সৈয়দ আমজাদ আলী। ভাইস চেয়ারম্যান পদে আ’লীগের আব্দুল গনি শেখ ও সিরাজুল ইসলাম মুকুল, বিএনপি’র মোতাহার হোসেন, জামায়াতের আবু বকর সিদ্দিকী। সংরক্ষিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে  বিএনপি’র ইসমত জাহান পুনম ও রুবিনা ইয়াসমিন, স্বতন্ত্র শামীমা সুলতানা। এখানে আওয়ামীলীগের কোন প্রার্থী নেই। উলে¬খ্য, আগামী ৪ ফেব্র“য়ারী মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই, ১১ ফেব্র“য়ারী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার, ১২ ফেব্র“য়ারী প্রতীক বরাদ্দ এবং ২৭ ফেব্র“য়ারী উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

সমন্বয় সভায় কাজী আখতার হোসেন উন্নত জাতি গঠনে সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করা হবে

আরিফ মেহমুদ ॥ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয়ের সচিব কাজী আখতার হোসেন বলেছেন, সবার জন্য শিক্ষা এই শ্লোগান বাস্তবায়ন করতে সরকার যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে। একটি সুখি সমৃদ্ধ দেশ তথা শিক্ষিত উন্নত জাতি গঠনে শিক্ষার কোন বিকল্প নাই। এ সরকার শিক্ষাবান্ধব সরকার। এজন্য সরকার শিক্ষার কার্যক্রমের জন্য ১৭হাজার কোটি টাকা বাজেট ধরেরছে। যার মধ্যে ১১হাজার কোটি টাকাই প্রাথমিক শিক্ষা খাতে ব্যায় করার জন্য বরাদ্দ দিয়েছে। সরকার চাই প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি মর্যাদাবান করে গড়ে তুলতে। গতকাল শনিবার সকালে কুষ্টিয়ার পিটিআই মিলনায়তনে খুলনা বিভাগীয় পর্যায়ে ডিপিইও এবং পিটিআই সুপারিনটেন্ডেন্টগণের সমন্বয় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি আরো বলেন,আজকের শিশুদের দেশের শিক্ষিত সুন্দর নাগরিক গড়ে তুলতে শিক্ষকদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ন। শিক্ষাকে অধিক গুরুত্ব দিতে সরকারের পাশাপাশি সমাজের শিক্ষা সচেতন মানুষকেও এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, তাই অতিশীঘ্রই প্রাথমিক শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণীর মর্যাদা দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে বলেও তিনি জানান। তিনি শিক্ষকদের সম্পর্কে বলেন, শিক্ষকের আচরণ ও ভূমিকা এমন হবে যেনো শিক্ষার্থীরা অবিরাম বলবে : আমার শিক্ষক একজন ভালো শিক্ষক। প্রাথমিক শিক্ষা সেক্টরে অনেক সমস্যা আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন এসব সমস্যার সমাধানে আপনাদের এগিয়ে আসতে হবে। এজন্য সকল শিক্ষা কর্মকর্তাদের এগিয়ে আসার জন্য আহবান জানান।
খুলনা বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষার উপ-পরিচালক শেখ রায়হান উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন, পিটিআই কুষ্টিয়ার সুপারিনটেন্ডেন্ট মোহছেনা বেগম ও কুষ্টিয়া জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার গোলাম নবী। জেলার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন, খুলনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার অশোক কুমার সমাদ্দার, নড়াইল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার জেহের আলী, সাতক্ষীরা পিটিআই-এর সুপারিনটেন্ডেন্ট আতিয়ার রহমান,ঝিনাইদহ পিটিআই-এর সুপারিনটেন্ডেন্ট সালমা নাসরীন, ঝিনাইদহ প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার দিলীপ কুমার বণিক। সভায় খুলনা বিভাগের সকল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও পিটিআই এর সুপারিনটেন্ডেন্টসহ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।