বুধবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১২

শ্রদ্ধা ও দোয়া মাহফিলের মধ্যদিয়ে বংশীতলা দিবস পালিত

আরিফ মেহমুদ ॥ যথাযোগ্য মর্যাদা ও দোয়া মাহফিলের মধ্যদিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের কুষ্টিয়ার ইতিহাসে বীরত্বে গাঁথা বংশীতলা দিবস পালিত হয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুরে কুষ্টিয়া জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড ইউনিটের উদ্দ্যোগে, শহীদ পরিবার ও স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের আয়োজনে বংশীতলায় শহীদদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধ চত্বরে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। মিলাদ মাহফিলের আগে শহীদদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ও মাগফেরাত কামনা করে দূর্বাচারায় শহীদদের কবরে এবং বংশীতলায় শহীদদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধে কুষ্টিয়া জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নাছিম উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হয়। এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা সহকারী কমান্ডার আব্দুল হালিম, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মোমিন, সদর থানা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবু তৈয়ব ডেপুটি কমান্ডার মোশারফ হোসেন, স্থানীয় জিয়ারখী-দূর্বাচারা কমান্ডের বীর মুক্তিযোদ্ধা কসের আলী, হাবিবুর রহমান, ইউনূস আলী, বাহাদুর, আজিবর রহমান, আব্দুল মজিদ,মধু মিয়া,শহিদুল ইসলাম ও মোকাদ্দেস আলী। শহীদ পরিবারের পক্ষে শহীদ মোবারক আলী মোল্লার ছেলে আলতাফ হোসেন মোল্লা, শহীদ কিয়ামুদ্দিনের ছেলে আরব আলী সহ এ এলাকার রণাঙ্গনের সাথী মুক্তিযোদ্ধা ও এলাকাবাসী। দূর্বাচারায় থেকে ফিরে এসে বংশীতলায় স্মৃতিসৌধ চত্বরে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধে কুষ্টিয়ার ইতিহাসের এই বীরত্বে গাঁথা দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে বার বার স্থানীয়ভাবে শহীদ পরিবারের পক্ষে শহীদদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ও মাগফেরাত কামনা করে প্রতি বছর স্মৃতিসৌধ চত্বরে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল করলেও গত দু’বছর ধরে জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডের উদ্দ্যোগে এধরনের কর্মসূচী পালিত হয়ে আসছে। উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার বংশীতলায় পাকবাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরদের সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ যুদ্ধ সংঘঠিত হয়। জীবনের মায়া ত্যাগ করে মা মাটি ও দেশের মানুষকে সেদিন মুক্ত করতে কুষ্টিয়ার দামাল ছেলেরা লড়েছিল চির শত্র“ পাকবাহিনীর সাথে। কয়েক ঘন্টা ধরে চলে পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ যুদ্ধ।মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল আক্রমনের মুখে পাকহানাদাররা তাদের বিশাল সৈন্যবাহিনী নিয়েও অপ্রত্যাশিতভাবে পরাজিত হয়। বংশীতলার এ যুদ্ধে ১৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ৮ জনের লাশের দাফন স্থানীয়রা করেন দূর্বাচারা সহ বিভিন্ন জায়গায়। ৩ জনের লাশ নিয়ে যায় পাকহানাদাররা। পর দিন আরো ২ জনের লাশ পাওয়া যায় এখানকার মাঠের জঙ্গলে।

কুষ্টিয়ার গড়াই নদী থেকে অজ্ঞাত ব্যাক্তির লাশ উদ্ধার

আরিফ মেহমুদ ॥ কুষ্টিয়ার গড়াই নদীর বারখাদা-জুগিয়া ভাটাপাড়া থেকে অজ্ঞাত ব্যাক্তির মৃত দেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।গতকাল বুধবার সকালে কুষ্টিয়ার শহরতলীর বারখাদা-জুগিয়া ভাটাপাড়ার সাচ্ছুর ইট ভাটা সংলগ্ন গড়াই নদীর চর থেকে এ লাশ উদ্ধার করে। পুলিশ ও স্থানীয় সুত্রে জানা যায়,বুধবার সকালে বারখাদা-জুগিয়া ভাটাপাড়া থেকে হরিপুর পারপারের খেয়া ঘাট এলাকায় মাঝি শহিদুল একটি লাশ দেখতে পেয়ে মডেল থানা পুলিশকে জানায়। পুলিশ সেখান থেকে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত করতে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেছে। মডেল থানার সেকেন্ড অফিসার এস আই আজিজ জানায়, ভোরে ওই ব্যাক্তিকে হত্যাকারীরা মেরে তাকে পানিতে ভাসিয়ে দেয়। তবে পুলিশ হত্যাকারীদের গ্রেফতারে চেষ্টা করে যাচ্ছে।

কুষ্টিয়ায় ভাতিজার হাতে চাচা খুন ॥ আটক ৪

আরিফ মেহমুদ ॥ কুষ্টিয়ার মিরপুরে ভাতিজার হাতে চাচা সেন্টু মন্ডল (৩৫) খুন হয়েছে। সে উপজেলার আমবাড়ীয়া ইউনিয়নের নানদিয়া গ্রামের মৃত ইসমাইল হোসেন মন্ডলের ছেলে। এ ঘটনায় জড়িত থাকায় পুলিশ ৪ জনকে আটক করেছে। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টায় মৃত ইসমাইল হোসেন মন্ডলের ছেলে আনোয়ার হোসেনের সাথে তার স্ত্রী আসমা খাতুনের ঝগড়া-বিবাদ শুরু হয়। এ সময়ে সেন্টু মন্ডল তাদেকে নিবৃত্ত চেষ্টা করলে। শান্তিপূর্ন পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে তাদেকে অন্যত্র গিয়ে বসবাসের কথা বললে আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী আসমা খাতুন ও ছেলে আশিক মন্ডলসহ ৭/৮ জন সংবদ্ধ হয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে তাকে রক্তাক্ত জখম করে। পরর্বতীতে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে আলমডাঙ্গা স্বাস্থ্য করূপ্লক্স নিয়ে আসে। সেখানে তার অবস্থার অবনতি ঘটলে উন্নত চিকিৎসার জন্য চুয়াডাঙ্গা জেনারেল হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকায় পুলিশ আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী আসমা খাতুন (৪০), চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার নতিডাঙ্গা গ্রামের খলিলুর রহমানের স্ত্রী বেলী খাতুন(৪৫)মেয়ে রেখা(২৫)এনায়েতপুর গ্রামের মসলেমের স্ত্রী আদুরী খাতুনকে(৫৫)আটক করেছে। হত্যাকান্ডের মূলহোতা আশিক পালাতক রয়েছে। বিকেলে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সোহেল রেজা, সহকারী পুলিশ সুপার(ভেড়ামারা সার্কেল)সি এ হালিম, মিরপুর থানা অফিসার ইনচার্জ সিকদার মশিউর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ ব্যাপারে মিরপুর  থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে।

মঙ্গলবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১২

আজ কুষ্টিয়ার বংশীতলা দিবস ॥শহীদ পরিবারের খোঁজ রাখেনা কেউ

আরিফ মেহমুদ ॥ আজ ৫ সেপ্টেম্বর, কুষ্টিয়ার বংশীতলা দিবস। মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে বীরত্বে গাঁথা এক ইতিহাসের দিন আজ। ১৯৭১ সালের এই দিনে কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার বংশীতলায় পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ যুদ্ধ সংঘঠিত হয়। জীবনের মায়া ত্যাগ করে মা মাটি ও দেশের মানুষকে সেদিন মুক্ত করতে কুষ্টিয়ার দামাল ছেলেরা লড়েছিল চির শত্র“ পাকবাহিনীর সাথে। কয়েক ঘন্টা ধরে চলে পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ যুদ্ধ। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল আক্রমনের মুখে পাকহানাদাররা তাদের বিশাল সৈন্যবাহিনী নিয়েও অপ্রত্যাশিতভাবে পরাজিত হয়। বংশীতলার এ যুদ্ধে ১৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন, ৮ জনের লাশের দাফন স্থানীয়রা করেন দূর্বাচারা সহ বিভিন্ন জায়গায়। ৩ জনের লাশ নিয়ে যায় পাকহানাদাররা। পর দিন আরো ২ জনের লাশ পাওয়া যায় এখানকার মাঠের জঙ্গলে। কারো কারো মতে আরো বেশি। স্বাধীনতার ৪১ বছর অতিবাহিত হলেও এই যুদ্ধে নিহত শহীদ মোবারক আলী মোল্লা রাষ্ট্রীয়ভাবে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পায়নি আজো। ১৩ শহীদ পরিবারের খোঁজ রাখেনি কেউ। নাম মাত্র ভাতা আর বিজয় দিবসে কিছু উপঢোকন ছাড়া কিছুই পায়নি শহীদ পরিবারগুলো। নানানভাবে ইতিহাস বিকৃতি হয়েছে এ যুদ্ধে শহীদদের নিয়ে। যুদ্ধের পরের দিন বংশিতলা থেকে উদ্ধারকৃত শহীদ মেজবার আলীর লাশ এবং দাফনকৃত কবরের জায়গা দখল নিয়ে হয়েছে নানা নাটকীয়তা। পাকবাহিনীর ভয়ে ও ঝড়-বৃষ্টির কারনে পিয়ারপুর মাঠের মধ্যে দাফন করা কবরটি এক সময় অজ্ঞাত দেখানো হলেও উপযুক্ত দাবীদার না থাকায় কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে শহীদ মেজবার আলীর কবর আবিস্কার কাহিনী। এমন স্বাক্ষ্যই দিয়েছেন লাশ উদ্ধার এবং আত্মীয় স্বজনের কাছে হস্তান্তরকারী শহীদ মোবারক আলী মোল্লার ছেলে লিয়াকত আলী মোল্লা ও কুষ্টিয়া জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নাছিম উদ্দিন আহমেদ। শহীদদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে নির্মিত স্মৃতি সৌধে বরাবরই ১১ জনের নামের তালিকা থাকলেও গত বছর কুষ্টিয়া জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডা নতুন করে মেজবার আলী, সুরুজ লাল ও চাঁদ আলী সহ ১৪ জন শহীদের নামের তালিকা ঠাই পেয়েছে। এজন্য শহীদ পরিবার, যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধা ও এলাকাবাসী বর্তমান কুষ্টিয়া জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নাছিম উদ্দিন আহমেদ সহ সকল কমান্ডারকে সাধুবাদ কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধে কুষ্টিয়ার ইতিহাসের এই বীরত্বে গাঁথা দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে কোন বড় ধরনের কর্মসূচী না থাকলেও স্থানীয়ভাবে শহীদ পরিবারের পক্ষে শহীদ মোবারক আলী মোল্লার ছেলে আলতাফ হোসেন মোল্লা, জেলা ও স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডাসহ এলাকাবাসী শহীদদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা ও মাগফেরাত কামনা করে প্রতি বছরই এই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে স্মৃতিসৌধ চত্বরে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল করে থাকেন। এবারও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। বাদ জহুর বংশীতলা স্মৃতিসৌধ চত্বরে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। ইতিহাস অনুসন্ধ্যানে জানা যায়, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মাচ ভাষণের পর ৬ দফা ও ১১ দফা দাবী আদায়ের সংগ্রামকে চাঙ্গা করার উদ্দেশ্যে সারা দেশের ন্যায় বৃহত্তর কুষ্টিয়াতেও সর্বদলীয় সংগ্রাাম কমিটি গঠন করে প্রতিবাদ সভা, মিছিল, অসহযোগ আন্দোলন, প্রতিতরোধ যুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। প্রতিরোধ যুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের সময় বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুরের বৈদ্যনাথ তলায়(মুজিবনগরে) অস্থায়ী রাজধানী থাকায় এ জেলা প্রতিরোধ যুদ্ধে ও মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। ২৫ মার্চ রাতে ২৫০ জন পাক সৈন্য আকষ্মিকভাবে কুষ্টিয়ায় প্রবেশ করে। তারা শহরে প্রবেশ করেই কারফিউ জারী, ধর পাকড়, অত্যাচার, নির্যাতন ও যুবতী মেয়েদের ধরে নিয়ে ধর্ষণ শুরু করে। এ সংবাদ সর্বত্রই ছড়িয়ে পড়ে রাজনৈতিক নেতা, কর্মী জনসাধারণ সবার মধ্যে চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। প্রতিকার ও প্রতিরোধের আগুন জ্বলে ওঠে সবার মধ্যে। এ কারনে পাকহানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে পড়ে। ফলে ১ সেপ্টেম্বর ভারত থেকে ৪০ জন মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণ নিয়ে কুষ্টিয়া জেলার সীমান্ত এলাকায় প্রবেশ করে। এ দলের বেশির ভাগ মুক্তিযোদ্ধাই ছিলেন কুষ্টিয়া সদর থানার দামাল ছেলেরা। কুষ্টিয়া শহরের আশপাশ ছিল এদের গন্তব্যস্থল। ১ সেপ্টেম্বর বিকেলের দিকে কুষ্টিয়া সদর থানার বৃত্তিপাড়া হতে পাক সৈন্য ও মিলিশিয়া পুলিশ বাহিনীর একটি দল দহকুলা গ্রামের মধ্যে দিয়ে আলামপুর গ্রামে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধাদের উপর হামলার জন্য আসে। পরদিন অনেক পাক সৈন্য ও মিলিশিয়া পুলিশ আলামপুর গ্রামে আসে। তারা এ গ্রামের অনেক বাড়ীঘর পুড়িয়ে দেয় এবং আলামপুর গ্রামে আসে। পাকবাহিনী এ গ্রামের অনেক বাড়ীঘর পুড়িয়ে দেয় এবং আলামপুর গ্রামের কয়েকজন সাধারণ মানুষকে ধরে নিয়ে যায়। এ ঘটনার প্রতিশোধ নিতেই ৫ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়া সদর থানার বংশীতলা ও দূর্বাচারা গ্রামে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধারা পাক সৈন্যের হামলা প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে খুব সকালে প্রস্তুতি গ্রহণ করে এবং বিভিন্ন স্থানে সুবিধামত জায়গায় অবস্থান নিয়ে পাক সৈন্যের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। কিন্তু সকাল ১০ টা পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধারা কোন পাক সৈন্যে দেখতে না পেয়ে তারা মনে করেন আজ আর পাক সৈন্য আসবে না। তাই তখন মুক্তিযোদ্ধারা অনেকেই যে যার মত নাস্তা খেতে যান এবং কেউ কেউ এদিক সেদিক ঘোরাফেরার মধ্যে ছিলেন। আর এ দলের মুক্তিযোদ্ধা ও লাইট মেশিন গানম্যান আব্দুল কুদ্দুস তার সহকারী সেকেম আলীকে নিয়ে বংশীতলা গ্রামের চৌরাস্তার মোড়ে গিয়ে আমগাছের গুড়ির পাশে অবস্থান নেয়। এমন সময় তারা দেখতে পান যে পাক সৈন্যরা পায়ে হেটে দূর্বাচারার দিকে আসছে। পাক সেনারা যখন আব্দুল কুদ্দুসের খুব কাছাকাছি চলে আসে তখন আব্দুল কুদ্দুস লাইট মেশিনগান দিয়ে তাদের উপর বিরামহীনভাবে ব্রাশ ফায়ার করতে শুরু করে। হটাৎ করে খুব কাছ থেকে পাক সৈন্যের উপর লাইট মেশিন গানের ব্রাশ ফায়ার শুরু হওয়ায় তারা তাৎক্ষণিকভাবে পাল্টা আক্রমনের সুযোগ পায়নি। রাস্তার দু‘ধারে অথৈ পানি থাকায় অবস্থান নিতে ও পালাতে পারেনি। আব্দুল কুদ্দুসের ব্রাশ ফায়ারে ঘটনাস্থলেই অনেক পাক সৈন্য আহত ও নিহত হয়। বিরামহীনভাবে গুলিবর্ষণের ফলে লাইট মেশিনগানের ব্যারেল গরম হয়ে ফায়ার বন্ধ হয়ে যায় এবং এ সময়ে পাক সৈন্যের একটি গুলি এসে আব্দুল কুদ্দুসের পায়ে লাগে। এ ফাঁকেই পাক সৈন্যরা সামনের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে। অবস্থা বুঝে আব্দুল কুদ্দুস ও সেকেম আলী পাক সৈন্যের নাগালের বাইরে চলে যায়। এ সময় দূর্বাচারা গ্রামে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধারা গোলাগুলির শব্দ শুনে অগ্রসর হয়ে বংশীতলা গ্রামের কাছে চলে যায়। পাক সৈন্যরা বংশীতলা গ্রাম হতে দূর্বাচারা গ্রামের দিকে অগ্রসর হবার প্রাক্কালে মুক্তিযোদ্ধা ও পাক সৈন্যের মধ্যে সম্মুখ যুদ্ধ শুরু হয়। এখানেও বেশ কিছু পাক সৈন্য আহত ও নিহত হয়। পাকিস্তান বাহিনী পিছন থেকে তাদের আর্টিলারি গ্র“প ২ ও ৩ মর্টার এবং রকেট ল্যান্সারের গোলা মুক্তিযোদ্ধাদের উপর  নিক্ষেপ করতে শুরু করে এবং বংশীতলায় হতে অনুমান ৩ মাইল দুরে কুষ্টিয়া টেক্সটাইল মিলে স্থাপিত পাক সৈন্যের ক্যাম্প হতেও যুদ্ধক্ষেত্রের দিকে লক্ষ্যহীনভাবে হেভিগানের গোলা নিক্ষেপ করতে থাকে। এ সময় দূর্বাচারার মুক্তিযোদ্ধা তাজুল ইসলাম অত্যান্ত সাহসিকতার সাথে পাক সৈন্যের অফিসার ক্যাপ্টেন জামিলকে হত্যা করেন। তাজুল ইসলাম এখান থেকে তার দলের মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে ফেরার সময় অন্য গোলার মুখে টিকতে না পেরে পিছু হটতে বাধ্য হয়। পাক সৈন্যও চলে যায়। কয়েক ঘন্টা ধরে যুদ্ধ হয়। বংশীতলার যুদ্ধে ৮ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং ১০ জন মুক্তিযোদ্ধা কম-বেশি আহত হন এবং ৫ জন মুক্তিযোদ্ধা পাক সৈন্যের হাতে ধরা পড়েন। এ ৫ জনের মধ্যে ৩ জনের বাড়ী ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা থানায়। বাকী ২ জনের বাড়ী হরিণাকুন্ড থানায়। বংশীতলার যুদ্ধে পাক সৈন্যের সঙ্গে ১২ জন রাজাকার এসেছিল। তার মধ্যে ৬ জন যুদ্ধ ক্ষেত্র হতে পালিয়ে যায়। বাকী ৬ জন রাজাকার পাক সৈন্যের সঙ্গে ক্যাম্পে ফিরে যায়। পাকিস্তানী সৈন্যবাহিনী বংশীতলা যুদ্ধে অপ্রত্যাশিতভাবে চরম ভাবে পরাজিত হয়। বংশীতলার এ যুদ্ধে ১৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন, ৮ জনের লাশের দাফন স্থানীয়রা করেন দূর্বাচারা সহ বিভিন্ন জায়গায়। ৩ জনের লাশ নিয়ে পাকহানাদাররা। পর দিন আরো ২ জনের লাশ পাওয়া যায় এখানকার মাঠে জঙ্গলে। কারো কারো মতে আরো বেশি। শহীদরা হলেন-তাজুল ইসলাম, খোরশেদ আলম দীল, সেখ দিদার আলী (বীরপ্রতিক), ইয়াকুব আলী, গোলাম মোস্তফা রাজ্জাক, চাঁদ আলী মোল্লা, মোবারক আলী মোল্লা, আব্দুল মান্নান, মিরাজুল ইসলাম, সুরুজ লাল, মেজবার আলী, সাবান আলী ও কিয়মুদ্দিন। এখানে ১০ জন মুক্তিযোদ্ধা গুরুতর আহত হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধে দূর্বাচারা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে কয়েকজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধাকে দাফন করা হয়। এখানে তাদের কবর রয়েছে। শহীদদের পরিবারের লোকজন অভিযোগ করে জানিয়েছে, প্রতিবছর বংশীতলা দিবস ও বিজয় দিবস ও স্বাধীনতা দিবসে শহীদদের কবরে সম্মান জাননো হয়। বিশেষ দিনেই শহীদরা শ্রদ্ধা পায়, তাছাড়া অন্য কোন সময় তাদের কথা কেউই মনে রাখেনা। কবরগুলোকে আরও সংস্কার করার জন্য প্রায় প্রতিবছরই অনুদান আসে কিন্তু একশ্রেণীর মানুষ তা আত্মসাত করায় শুধু মাত্র পাকা নির্মাণেই কোন ভাবে আটকে আছে শহীদের কবর। শহীদদের পরিবারের লোকজন আক্ষেপ করে বলেন, যাদের বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে এ স্বাধীন দেশ, অথচ তাদের প্রতি অবহেলা আর অবজ্ঞা ছাড়া কিছুই জোটেনা।






কুষ্টিয়ায় বন্দুক যুদ্ধে চরমপন্থী নিহত

আরিফ মেহমুদ ॥ কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের কুলাপাড়ার একটি ইট ভাটায় পুলিশের সাথে চরমপন্থীদের বন্দুকযুদ্ধে চরমপন্থী সংগঠন পূর্ব বাংলা কমিউনিষ্ট পার্টি এমএল লাল পতাকার আঞ্চলিক নেতা ৫টি হত্যা মামলার আসামী ও অস্ত্র মামলার ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আব্দুল জলিল (৪৩) নিহত হয়েছেন। সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার সিএ হালিম জানান, মিরপুর উপজেলার কুলাপাড়া গ্রামের আজিজের ইটভাটায় সশস্ত্র চরমপন্থীরা বড় ধরনের অপরাধ কর্মকান্ড ঘটানোর লক্ষ্যে গোপন বৈঠক করছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টায় মিরপুর থানা ও কুষ্টিয়া গোয়েন্দা পুলিশের যৌথ টিম সেখানে অভিযান চালায়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে চরমপন্থীরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। পুলিশও পাল্টা গুলি ছুড়লে দু-পক্ষের বন্দুকযুদ্ধে চরমপন্থী নেতা আব্দুল জলিল গুলিবিদ্ধ হয়। তাকে আশঙ্খাজনক অবস্থায় মিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষনা করেন। এসময় অন্যরা পালিয়ে গেলে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ২টি এলজি, ৬ রাউন্ড গুলি ও ২টি বোমা উদ্ধার করে। নিহত আব্দুল জলিল কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর উপজেলার ইশালমারী গ্রামের মৃত মফিজ উদ্দিনের ছেলে। পুলিশের দাবী জলিল পূর্ব বাংলা কমিউনিষ্ট পার্টি এমএল লাল পতাকার কুষ্টিয়ার মিরপুর, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানা, মেহেরপুরের গাংনী ও চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা এলাকার আঞ্চলিক নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। সে চাঞ্চল্যকর জাফরসহ ৫টি হত্যা মামলা ও ১টি অস্ত্র মামলায় ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী।

সোমবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১২

জোড়াতালি দিয়ে চলছে কুষ্টিয়ার ডাক বিভাগ,আধুনিকায়নের সুফল পাচ্ছে না সাধারন মানুষ

আরিফ মেহমুদ ॥ কুষ্টিয়া জেলায় ডাক বিভাগের সেবা চলছে জোড়াতালি দিয়ে। অচল যাবনাহন, লোকবল ও বাজেট সংকটের কারনে কাঙ্খিত সেবা দিতে পারছে না কুষ্টিয়ার ডাক বিভাগ। অনেক ক্ষেত্রে সুবিধা বাড়লেও সাধারন সেবা গ্রহীতাদের অসুবিধায় পড়তে হয় বেশি। যার কারনে আধুনিকায়নের সুফল পাচ্ছে না লোকজন। গ্রামের ব্রাঞ্চ পোষ্ট অফিস গুলো চলছে কাচারি বাড়ি, মুদি দোকান সহ বাসা বাড়ীর বারান্দায়। কোন কোন ক্ষেত্রে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার ছোট্ট কামরায়। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, জেলা ও উপজেলা পোষ্ট অফিস গুলোতে কিছুটা কাজকর্ম হলেও ইউনিয়ন পর্যায়ের ব্রাঞ্চ পোষ্ট অফিস গুলো খুঁজে পাওয়া মুসিকল। চুরি হয়ে গেছে অধিকাংশ পোষ্ট বক্স। চাউলের দোকান, মুদিখানাসহ কোথাও কোথাও কাচারি বাড়িতে ব্রাঞ্চ পোষ্ট অফিসের কাজ চলছে। বাইরে থেকে মাঝে মধ্যে চিঠি আসলেও পোষ্ট করলে তা আর পৌঁছায় না। কুষ্টিয়া শহরের ৬ রাস্তার মোড়ের পোষ্ট অফিসে এক সময় সরগরম থাকলেও এখন প্রতি মাসেও কয়েকটি চিঠি পোষ্ট হয় বলে জানা গেছে। এ পোষ্ট অফিসটি এক রকম বন্ধ হওয়ার পথে। কুষ্টিয়া প্রধান ডাকঘরের এক কর্মকর্তা জানান, কিছু কিছু সেবা বাড়লেও লোকবলের অভাবে সাধারান মানুষের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি বলেন কুষ্টিয়া পোষ্টাল ডিভিশনে ৪টি জেলা রয়েছে। পাকিস্থান আমলের পরিবহন দিয়ে কাজ চালাতে হয়। বেশির ভাগ পরিবহন অকোজ। রাস্তার মাঝেও অনেক সময় নষ্ট হয়ে পড়ে থাকে। কুষ্টিয়া পোষ্টালে সব মিলিয়ে সাড়ে ৩০০ বেশি পোষ্ট অফিস রয়েছে সব অফিসে লোক সংকট রয়েছে। খোকসা উপজেলার ৯৯টি গ্রামের মানুষের সেবা নিশ্চিত করতে কাগজে কলমে ২টি পোষ্ট অফিস ও ১২ টি ব্র্ঞ্চা পোষ্ট অফিস চালু থাকলেও কয়েকটি ব্র্ঞ্চা অফিসের অস্তিত্ব নেই। উপজেলা সদর থেকে তিন কিলোমিটার দুরের গ্রাম শিমুলিয়াতে একটি চিঠি বিলি হতে সময় লাগে এক মাস। ২/১ টি ব্র্ঞ্চা পোষ্ট অফিস ছাড়া বেশীর ভাগ অফিসেরই নিজস্ব ভবন নেই। পোষ্ট মাষ্টার অফিস করে নিজের বাড়ির বৈঠক খানা অথবা নিকটবর্তী কোন মুদি দোকানে। উপজেলা সদর থেকে ৫ কিলোমিটার দুরে একতারপুর বাজার। প্রায় ৩০ বছর আগে এ বাজারে ব্র্ঞ্চা পোষ্ট অফিস খোলা হয়। প্রথম দিকে পোষ্ট মাষ্টার কিংকর বিশ্বাস সরকারী জমিতে খড়ের ঘরে তুলে অফিস করতো। কিন্তু ঘর ও জমি বেদখলে চলে যাওয়ার পর থেকে তিনি অফিস করেছেন বাঞ্চা রামের মুদি দোকানে। ডাক পরিদর্শক (প্রশাসন) মতিউর রহমান জানান, লোকবল সংকট প্রকট। গ্রামীন পোষ্ট অফিস উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ব্র্ঞ্চা পোষ্ট অফিস গুলো ঠিক করার ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে । তবে জমি পাওয়া যাচ্ছে না। তবে এতকিছুর পরও পোষ্ট অফিসের কয়েকটি সেবা দারুণ সাড়া ফেলেছে ব্যবসায়ী ও সাধারন লোকজেনর মাঝে। বিশেষ করে পোষ্ট অফিসের মোবাইল মানি অর্ডার, পোষ্টাল ক্যাশকার্ড সিস্টেম। এছাড়া সঞ্চয়পত্র, পেনশন সঞ্চয়পত্র, পরিবার সঞ্চয়পত্র, ৩ মাস অন্তর মুনাফা বৃদ্ধি সঞ্চয় পত্র কার্যক্রম পূর্বের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে পুরানো যানবাহন এখন গলার কাটা। পোষ্ট অফিসারদের গাড়ী গুলোও সেকেলে। একজন কর্মকর্তা আক্ষেপ করে বলেন, ডেপুটি পোষ্ট মাষ্টারের ব্যবহৃত জিপটি পাকিস্থান আমলের লক্কড়-ঝক্কড়। যা আধুনিকায়কে কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিক বার লেখা হয়েছে। ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী না থাকায় সেবা দিতে বিপাকে পড়ছে  ডাক বিভাগ। তারপরেও সেবা দিতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। পোষ্ট অফিসের কার্যক্রম বৃদ্ধি ও ডিজিটাল হলেও অফিসের আসবাবপত্র সে আমলেরই রয়ে গেছে।
রানার ইয়ার আলী জানান, পোষ্ট অফিসে পর্যাপ্ত রানার না থাকায় তাকে একাই ৩টি কখনও ৪টি লাইনের কাজ করতে হচ্ছে। পোষ্টম্যান দেলোয়ার হোসেন জানান,পূর্বের তুলনায় কাজের চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। সে তুলনায় কর্মচারী সংকট থাকায় গ্রাহকদের যথাসময়ে সঠিক ভাবে সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তারপরেও সেবা দিতে কোনরকম কারপূর্ণ করা হচ্ছে না। এক কথায় ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী নেই বললেই চলে। ফলে অল্প সময়ের কাজ বেশী সময় লেগে যাচ্ছে। ভেড়ামারা উপজেলা পোষ্ট মাষ্টার মনিরুজ্জামান জানান, লোকবল সংকট থাকায় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।  দ্রুত লোকবল নিয়োগ না দিলে ডাক বিভাগ থেকে গ্রাহকদের সেবা দিতে বিড়ম্বনার মধ্যে পড়তে হবে বলে জানান। কুষ্টিয়া পোষ্টাল ডিভিশনের ডেপুটি পোষ্ট মাষ্টার জেনারেল মো: আমান উল্যাহ মজুমদার জানান, যানবাহন, লোকবল ও বাজেট না বাড়ালে পোষ্ট অফিস থেকে মানুষ পুরো সেবা পাবে না। তারপরও জোড়াতালি দিয়ে আগের তুলনায় বেশি কাজ করা হচ্ছে। পোষ্ট অফিসের অনেক সেবার কথা সাধারন মানুষ জানে না। কাজও বেড়েছে। নতুন কিছু সেবা চালু করায় আবারও পোষ্ট মুখী হচ্ছে লোকজন।