কুষ্টিয়া প্রতিনিধি ॥ কুষ্টিয়ায় চাল সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু না হলেও সরকারি খাদ্যগুদামে চাল কেনা নিয়ে আওয়ামীলীগ নেতাদের চালবাজী শুরু হয়েছে। চাল সরবরাহকারীদের কাছে মোটা অংকের কমিশন চাওয়ার অভিযোগ উঠেছে চাল সংগ্রহ কমিটির সদস্য স্থানীয় আওয়ামীলীগের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে। কেজিতে ২ টাকা হিসাবে প্রায় সাড়ে ৪কোটি টাকার কমিশন বাণিজ্য হচ্ছে! কমিশন নিয়ে দফারফা না হওয়ায় সরকারী ঘোষনা অনুযায়ী জেলায় রবিবারও চাল সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু করা যায়নি।
সুষ্ঠ ও সুন্দরভাবে চাল সংগ্রহ অভিযান পরিচালনার জন্য জেলায় ১০ সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেন। সদস্য সচিব জেলা খাদ্য কর্মকর্তা স্বপন কুমার কুন্ডু জেলার চারজন সাংসদ কমিটির উপদেষ্টা।
জেলা খাদ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে কুষ্টিয়া জেলায় ২৩ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন বা ২ কোটি ৩০ লাখ কেজি চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। ১মে থেকে চাল সংগ্রহ শুরু হওয়ার কথা ছিল।
খাদ্য বিভাগ সূত্র জানায়, সরকার ৩২ টাকা কেজি দরে মিলারদের কাছ থেকে চাল সংগ্রহ করবে। আওয়ামী লীগ নেতারা প্রতি কেজিতে ২ টাকা করে প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা দাবি করেন। শুধু কুষ্টিয়া সদর উপজেলা থেকেই ১৮ হাজার ৭৫ টন চাল সংগ্রহ করার কথা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ক্ষমতাসীন দলের যে নেতাদের বিরুদ্ধে চাঁদা চাওয়ার অভিযোগ উঠেছে, তাঁরা শুরুতে নিজেরাই পাঁচ হাজার টন চাল সরবরাহের অনুমতি দিতে জেলা প্রশাসককে চাপ দেন। জেলা প্রশাসক সরকারি নিয়মের বাইরে গিয়ে নেতাদের চাল সরবরাহের সুযোগ দিতে অপারগতা জানান। এরপর নেতারা চাল সরবরাহ করতে হলে প্রতি কেজিতে তাঁদের ২ টাকা দিতে হবে বলে চালকল মালিকদের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চালের মোকাম কুষ্টিয়া সদর উপজেলার খাজানগর এলাকা। এখানকার মিল মালিকেরা জানান, এ পরিস্থিতিতে জেলা চালকল মালিক সমিতির নেতারা মিলারদের ডেকে কয়েক দফা বৈঠক করেন। বৈঠকে ৪০-৫০ জন মিলার অংশ নেন। সেখানে মিলাররা কেজিপ্রতি ১ টাকা ২৫ পয়সা করে দিতে একমত হন। কিন্তু কমিটির রাজনৈতিক সদস্যরা এই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় মিল মালিক সমিতির নেতারা ক্ষমতাসীন দলের এক নেতার অফিসে আবাােরা বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে অনেক দেনদরবার শেষে মিল মালিকেরা কেজিপ্রতি ২ টাকা করে দিতে রাজি হন।
এব্যাপারে চাল ক্রয় কমিটির সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদর উদ্দীন খান জানান ‘চাল কেনা নিয়ে প্রতিদিনই মিটিং হচ্ছে। এখানে কোনো অনিয়ম করা হবে না।’ জেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি আবদুল মজিদ বাবলু ও সাধারণ সম্পাদক জামসেদ হোসেন মিলাদের সঙ্গে বৈঠকের কথা স্বীকার করলেও এর বেশি কিছু বলতে রাজি হননি তাঁরা। ১৪-দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জেলা জাসদের সভাপতি গোলাম মহসিন বলেন, চাল কেনা নিয়ে কমিশন বাণিজ্যের সঙ্গে তাঁদের কোনো সম্পর্ক নেই। যাঁরা এসব করছেন তাঁরা শেখ হাসিনা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও চাল সংগ্রহ কমিটির সদস্য আজগর আলী জানান, চাল সংগ্রহ যাতে আইন মেনে ভালোমতো হয়, সে জন্য আমরা চালকল মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। আমাদের নেতা হানিফ ভাই বলে দিয়েছেন, কোনো অনিয়ম করা যাবে না। আমরা তা মেনে চলছি। রবিবার থেকে চালকল মালিকেরা সরকারি গুদামে চাল দেওয়া শুরু করবেন বলে জানান তিনি।